লীলাবালি পর্ব-৭০+৭১+৭২

0
399

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭০
আফনান লারা
.
‘অর্ণব ঠিক বলেছিল।তোমার মতন চালাক একটা মেয়েকে আমি ফাঁদে ফেলতে পারবোনা উল্টে নিজেই ফাঁদে পড়ে গেলাম।হায়রে আমার ছিদ্র কপাল!”

‘আমার অগোচরে মিঃঅর্ণব আমায় নিয়ে আলোচনা করে?’

‘আলোচনা নয়।তবে সে তোমার স্বভাবের সাথে পরিচিত।আমাকে সাবধান করে দিলো আর কি’

‘পরিচিত হয়ে আর কি লাভ হলো।যাই হোক,রাখছি।আমার কাজ আছে’

জুথি লাইন কেটে দেওয়ার পর মৃদুল গিয়ে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্টেটাসটা ডিলেট করে দিলো চুপিসারে।ভেবেছিল এরকম একটা চালে জুথি পাগলের মতন ছুটে এসে বলবে,’মৃদুল ভাইয়া আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি।কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টা সব হয়ে গেলো।
আমি বোকা নাকি আমার করা কাজটা বোকামি ছিল বুঝতে পারিনা।শক্তপোক্ত চাল চেলেও হেরে যেতে হলো।এখন যে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম সবাই তো সত্যি ধরে নিয়েছে।এখন শুরু হবে সবার এক ডায়ালগ,’ট্রিট দে’
—-
খুব সকালে কুসুম উঠেছিল আজ।অর্ণব ঘুমে,মোট কথা বাড়ির সবাই ঘুমে এখন।
সুলতান শাহ, মিজুয়ানা নামাজ পড়ে পুনরায় ঘুমোতে যান।তাই এ সময়টাতে তারাও নিদ্রায় তলিত।
কুসুম একা একা দরজা খুলে বাগানে এসে জবা ফুল গাছটার তলায় বসে আছে।সবুজ ঘাসের উপর।সকালের শিশির জমে ঘাসগুলোর তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে।
ছুঁলেই শীত শীত করে খুব।আঁচল টেনে দু কাঁধ ঢেকে সে নিজের চির চেনা গানটা গাইতে গাইতে ঘাসে হাত বুলাচ্ছিল।নিচে পড়ে আছে জবা ফুলের শুকনো রুপ।যেগুলো শুকিয়ে যায় সেগুলো বাতাসের সাথে যুদ্ধে হেরে বোটা থেকে নিচে পড়ে যায়।
ডায়রিতে ফুল রাখলে মাসের পর মাস শেষ হবার পর যে হাল হয় ঠিক সেই হালে ফুলগুলো নিচে পড়ে আছে।
কুুসুম ফুলগুলোর দিকে চেয়ে ছিল গান গাওয়ার সময়।
মমর পাশের রুমটা মৃদুলের।সেহেতু জবা ফুলগাছটার পাশেই মৃদুলের বারান্দা।কুসুমের মৃদু আওয়াজের গান তার কানে পৌঁছাতেই জেগে গিয়েছিল সে।
উঠে এসেছিল পর্দা টেনে দিতে।কারণ সে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিল।আজ সারাদিন বালিশ চেপে ধরে ঘুম দেবে।এত ভোরে ওঠার প্রশ্নই জাগেনা।বারান্দার কাছে এসে সামনের দরজার পর্দা টানবার সময় তার চোখ গেলো শুরুতে তার কাছে মনে হওয়া সেই সুন্দরী রমনির এক জোড়া চোখের দিকে।ঘাসের দৃশ্য একসাথ সেগুলোর রুপ যেন বেয়ে বেয়ে পড়ছিল।অর্ণব যদি এখন এই দৃশ্য দেখতো, নির্ঘাত প্রেমে পড়ে যেতো।আমার তো নেহাত মনে জুথি গেঁথে আছে তা নাহলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়ে যেতাম।’

এতসব ভেবে চোখ নামিয়ে নিলো সে।তারপর আবার কি ভেবে পর্দাটা আর টেনে দিলোনা।কুসুমের গানের গলার সুর আসুক।
এমন মিষ্টি সুর শুনলে দিনটা খুব ভাল যাবে।

অর্ণব বাম পাশে হাত দিয়ে খালি বিছানা টের পেয়ে হকচকিয়ে গেছে।উঠে বসেই কুসুমের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বিছানা ছাড়লো সে।
শীতল ফ্লোরে পা রেখে চোখদুটোকে ব্যস্ত করে তুললো কুসুমকে খুঁজতে গিয়ে।
এ রুম,সেরুম করে বারান্দার দিকে চলে এসেছে।সে ভাবলো ওকে আর কোথাও পাওয়া না গেলেও এই জায়গায় নিশ্চয় পাওয়া যাবে।ধারণা সম্পূর্ণ না মিললেও একেবারে বেঠিক হয়নি।বারান্দার নিচেই কুসুমের দেখা মিললো।ঘাসে হাত রেখে কিসব বিড়বিড় করছিল।অর্ণব একটা জবা ছিঁড়ে ওর গায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে লুকিয়ে পড়েছে।কুসুমের গায়ে গিয়ে ফুলটা পড়তেই সে মাথা তুলে উপরে তাকিয়েছে।কোথাও কাউকে না দেখে পুনরায় গণনায় মন দিলো।
অর্ণব এবার কোমড়ে হাত রেখে ভাবছে এরপর কি করা যায়।অনেক ভেবে গাছটাকে ধরে এক ঝাঁকুনি দিয়ে আবার লুকিয়ে পড়েছে সে।
কুসুমের গায়ে সমস্ত শিশির এসে বৃষ্টির পানির মতন ঝরে পড়েছে।
সে এবার উঠে দাঁড়িয়ে ভাল করে দোতোলার বারান্দা দেখে নিলো।এটা অর্ণবের কাজ হতে পারতো কিন্তু ওর তো দেখা মিললোনা কোথাও।কেমন ভূতুড়ে কারবার মনে হলো তার কাছে।তাজা ফুলটা তুলে কানে দিয়ে উপরে চলে আসলো সে।অর্ণব দৌড়ে গিয়ে ঘুমানের ভান ধরে শুয়ে পড়েছে।কুসুম আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজাটা লাগালো।অর্ণবকে শুয়ে থাকতে দেখে সে ধরে নিলো এতক্ষণের জ্বালাতনে অর্ণব জড়িত নেই।
তাই সে রান্নাঘরে এসে হাঁড়ি পাতিল ধোয়া শুরু করেছে সকালের নাস্তা বানানোর জন্য।অর্ণবের কানে আওয়াজ আসতেই এবার সে আর শুয়ে থাকতে পারলোনা।এদিকে এসে ওকে কাজ করতে মানা করেছে।

‘আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন?’

‘হুম উঠলাম এখন।এসব ছাড়ো,আমি করবো।’

‘অনেকদিন হাত লাগাইনা।আমি পারবো,আপনি আরেকটু ঘুমান।এখনও অনেক দেরি পুরোপুরি সকাল হতে’

“তুমি সরবে নাকি শেয়াল ডেকে আনবো?’

কুসুম পাতিল রেখে গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে আসলো ওখান থেকে।
অর্ণব গালে হাত দিয়ে ভাবছিল ঠিক কি রান্না করা যায়।
সেসময়ে কলিংবেল বাজার আওয়াজ পেয়ে কুসুম গিয়ে দরজা খুলে দেখলো মৃদুল বালিশ নিয়ে এসে হাজির।
কুুসুমকে পেরিয়ে নিচে বেছানো তোষকে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে সে।অর্ণব রান্নাঘর থেকে এসে বললো,”কিরে?তুই এখানে?ওখানে শুয়েছিস কেন,খালি রুম পড়ে আছে কত’

‘আর বলিস না বাবা উদ্ভট নাস্তার ব্যবস্থা করেছে।ভয়ের চোটে চলে এলাম।একটু শান্তি চাই’

‘কিসের উদ্ভট নাস্তা?’

‘তুলসি পাতার চা দিয়ে পাউরুটি’

‘হাহাহাহা!’

কুসুম হাসলোনা।বরং বললো,’তাতে কি?তুলসি চা তো অনেক ভালো স্বাস্থ্যের জন্য’

‘তুমি খাও।আমার নিজের শরীরকে এত অত্যাচার করার সাহস নাই মনে।’

অর্ণব নিচে বসে বললো,’তুই এসেছিস না?জাহানকে দিয়ে এবার তুলসি চা পাউরুটি আমাদের তিনজনের জন্য একসাথে পাঠাবে তোর বাবা।’

তথাকথিত জাহান ট্রে হাতে হাজির হয়েছে তখনই।কুসুমের হাতে ট্রে দিয়ে সে বললো,’এই পাউরুটিটা আর চা উনারে দিয়েন।আর এগুলা আপনারা খাবেন ‘

অর্ণব ট্রেটা দেখে বললো,’সব তো সেমই দিছে।আলাদা করে বলার কি আছে?’

মৃদুল বালিশ দিয়ে মুখ ঢাকতে ঢাকতে বললো,’আমার পাউরুটিতে কালোজিরার গুড়ি আর লবঙ্গ দিছে। এই অখাদ্য তোরা খেতে পারবিনা তাই তোদের নরমাল পাউরুটি দিয়েছে’

অর্ণবের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে।তার পক্ষে আর হাসা যাচ্ছেনা।কুসুম ট্রে নিচে রেখে চলে গেছে রান্নাঘরের দিকে।মৃদুলের জন্য দুটো রুটি,ডিম বানিয়ে দেবে।অর্ণব ওকে হেল্প করতে সেও চলে এসেছে।
কুসুম হাত লাগানোর আগেই অর্ণব আটায় হাত দিয়ে বললো,’রুটি আমি বানাবো’

জোর করে কাজ সে নিজে করতে চাইছে তা বুঝতে পেরে কুসুম আর বাড়াবাড়ি করেনি।সে তার মত করে বাকি কাজটা সারছিল।মৃদুল জুথিকে এক্টিভ দেখে ভিডিও কল দিয়ে বসেছে।জুথি সে সময়ে ঘুমাচ্ছিলনা।গোটা একদিন অনেক ঘুমিয়ে এখন আর তার কোনো ঘুম নেই।
কল দেখে রিসিভ করেছে সে।
মৃদুল শুয়ে থেকে বললো,’জানো আমি কোথায়?’

‘মেস তো মনে হচ্ছেনা’

‘রাইট।আমি আমার বাসায় আছি।’

অর্ণব দেয়ালের কিণারায় দাঁড়িয়ে মৃদুলকে দেখছিল এতক্ষণ।ফিসফিস করে বললো,’এই দেখে যাও,মৃদুল প্রেম করছে’

কুসুম পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বললো,’মিননয়ি আপুর সাথে’

অর্ণব চট করে ওখান থেকে সরে এসে রুটি বেলায় মন দিলো আবার।
‘মাঝে মাঝে কুসুমের কিছু কথায় বেশ ভয় লাগে।যেন সে ওয়াইফ টাইপ ব্যবহার করে।
স্বামীর অতীত তার ওছন্দ না,সেই অতীত বর্তমানে ঘোরাফেরা করছে তাও ওর পছন্দ না।নরমাল ভাবে কথা বললেও গায়ে কাঁটা দেয়।মনে হয় সে রেগে আছে।
আচ্ছা কুসুম একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’

‘হুম’

‘মৃন্ময়ীকে নিয়ে আমার সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?’

‘এবার আমি একটা প্রশ্ন করি?’

‘আমারটার উত্তর তো পেলাম না’

‘আগে আমার প্রশ্ন শুনে নেন তারপর।আপনি আমাকে খোলসা করে বলে দিয়েছেন আপনার সাথে মিননয়ি আপুর কোনো সম্পর্ক নেই।আমিও তা মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছি।তাহলে আপনার কেন মনে হয় আমি এখনও আপনাদের নিয়ে ভাবি?’

‘না তা নয়।আমি চাইনা তুমি আমাকে নিয়ে ভুল ধারণা মনে পোষাও’

কুসুম ঘুরে দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে বললো,’আমি যাই ভাবিনা কেন, আপনি মনে মনে সংকোচ কেন ধরে রাখবেন?আমার ভাবনাতে আপনার কি বা যায় আসে?’

অর্ণব আর কিছু বলেনি।কুসুম তার মুখ থেকে কি শুনতে চায় তা সে বেশ বুঝতে পেরেছে।
‘মেয়েটার চাওয়া বৈধ তবে আমার মনে এখনও ঐ অনুভূতি আসেনি।ভালবাসতে পারিনি এখনও।
যদি কোনোদিন বাসিও তবে আমি নিশ্চয় সেটা প্রকাশ করবো।সময় হোক।’

কুসুম মাথা নিচু করে নিজের কাজ করছিল।অর্ণব কি বুঝতে পেরেছে যে সে কি শুনতে চায় ওর থেকে।
এটা ভেবে জিভে কামড় দিল সে।লজ্জা লাগলো খুব।চোখ বন্ধ করে মরিচ, নুন আর পেঁয়াজ কচলাতে কচলাতে মুচকি হাসছিল অনবরত।অর্ণব এমন দৃশ্য দেখে নিজেও হাসছে।কাউকে লজ্জা পেতে দেখার মূহুর্তটা ঠিক কতটা সুন্দর এবং আবেগপূর্ণ তা বুঝতে পারে যে লজ্জা দেয় একমাত্র সে।
অর্ণবের হয়েছে তাই।কুসুমের লজ্জা পাবার দৃশ্যটা সে প্রাণভরে উপভোগ করছে এখন।
চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭১
আফনান লারা
.
আজকের পর্বের দৃশ্যটা শুরু হয়েছিলো হাসপাতাল থেকে।
ভেতরে গুনে গুনে তিনজন সার্জন।আর বাহিরে দুটি পরিবার।
একটি মৃদুলদের আর অন্যটি মৃদুলদের পাশের বাসার পরিবার।
প্রায় এক ঘন্টা হলো তারা এখানে এসেছে।
অর্ণবের সারা শরীর ঘেমে গেছে।মৃদুল মুখটা ফ্যাকাসে করে একটা শক্ত ম্যাগাজিন দিয়ে ওকে বাতাস করছিল।এসি চালু করা তার পরেও অর্ণব টেনসনে ঘামছে কেবল।
এই তো সকাল সকাল কত ভাল ছিল কুসুম।কিন্তু হুট করে তার শরীরটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে নিয়ে সবাই এখানে চলে আসতে বাধ্য হলো।
তার এখনও জ্ঞানটা ফেরেনি।অর্ণবের চেনা ডাক্তার ওকে বলেছেন দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে।এই ব্যাপারে বাবার সাথে আলাপ হবার পর বাবা বললেন টাকার ব্যবস্থা হলে জানাবে।চিন্তার কিছু নেই।দরকার হলে জমি বিক্রি করবে তাও কুসুমের কিছু হতে দেবেননা।
এতসব চিন্তাকে দূরে হটিয়ে কুসুমের ভাবনা তাকে গ্রাস করছে।সকালেই তো কত মিষ্টিভাবে লজ্জা পাচ্ছিল।কি থেকে কি হয়ে গেলো।মৃদুলকে বাতাস করতে মানা করে উঠে দাঁড়িয়ে রুমটার কাছাকাছি গেলো।কুুসুমকে একবার দেখতে ইচ্ছে হয়,কেমন আছে চোখ খুলেছে কিনা সেসব জানতে ইচ্ছে হয়।মৃদুল ওর অবস্থাটা বুঝতে পারছে।কিন্তু তার হাতে করার মত কিছু নেই।ওকে একা থাকতে দেওয়া ঠিক মনে করে সরে আছে।
হঠাৎ এমন কেন হলো তা কেউ বুঝে উঠতে পারেনি।ডাক্তার এসে বললেন জ্ঞান ফিরেছে।কথাটা উনি এমন ভাবে বললেন যেন জ্ঞান ফিরে কোনো ভাল কিছু হয়নি।মুখটা গোমড়া করে চলে গেলেন কথাটা বলেই।অর্ণব দিশেহারা হয়ে ছিল,ডাক্তার যাবার পরপরই ছুটে ওর কাছে চলে এসেছে সে।কুুসুম ওকে দেখেই কান্না করে ফেললো।
অর্ণব ওর মুখে দুহাত দিয়ে ধরে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’বোকা মেয়ে!কাঁদছো কেন?আমি সামনে তো তোমার।
আমরা আজই বাসায় ফিরে যাব।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে’

কুসুমের এক হাতে আগের মতন ক্যানোলা লাগানো ছিল, অন্য হাতে চোখ মুছে সে বললো,’আমি জানি,আমি বাঁচবোনা’

‘এসব বলতে নেই।কান্না বন্ধ করো।এখনই কান্না বন্ধ করবে তুমি নাহলে ধমক দেবো’

‘ডাক্তার বলেছে আমি আর বাঁচবোনা,আমি শুনেছি।ডাক্তার মিথ্যে কেন বলবেন?’

অর্ণবের চোখে পানি চলে আসলো।বুকের ভেতর আগের মতন সব পুড়ে যাচ্ছে। কুসুমের মাথা থেকে হাত সরিয়ে সে বেরিয়ে আসলো।সোজা ডাক্তারের কাছে এসে জানতে চাইছে কুসুম যা বলেছে তা সত্যি কিনা।ডাক্তার প্রথমে বলতে চাননি।পরে জোরাজুরিতে বললেন,’যদিও দেরি হয়ে গেছে তার পরেও বাহিরের চিকিৎসায় সমস্যার সমাধান মিলতে পারে।’

মিজুয়ানা কুসুমের পাশেই বসেছিলেন।ওর দিকে চেয়ে পান চিবোচ্ছিলেন।চিবোতে চিবোতে বললেন,’তুমি বুঝি তোমার স্বামীর খুব প্রিয়?প্রথম যেদিন বলেছিলে অশিক্ষিত,কম বয়সী হবার পরেও তোমায় এই ছেলে বিয়ে করেছে তখনই বুঝেছি সে তোমায় মন দিয়ে ভালোবাসে।
আহারে!এমন একটা ছেলের সংসারে এই বিপদ আসতে হলো?
দোয়া করি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।জানো? ছেলেটা সকাল থেকে কিছু মুখে তোলেনি।এখন বিকাল হতে চললো।ভয়ে খাওয়ার কথাও বলিনি আমরা কেউ।কারণ তার অবস্থা ছিল অনেক খারাপ।হাজার বার উঁকি দিয়ে দেখেছে তুমি চোখ খুললে কিনা,তোমার ভাল খবর এলো কিনা।তোমার হাতে এই যে এই সিরিঞ্জ লাগানোর সময় তার কি যে দশা হয়েছিল।দূর থেকে দেখে বারবার হাত মুঠো করছিল।তুমি তো অজ্ঞান ছিলে।কিন্তু সে এমন ভাব করছিল যেন সুই তার হাতে ফোটানো হচ্ছে।
ছেলেটা তোমায় বড্ড ভালোবাসে।বলেনি বুঝি??’

কুসুম কাঁপা স্বরে বললো,’আপনি জানলেন কি করে?’

‘ভালবাসার কথা না বললে সেটা প্রকাশ পায় অনেক বেশি।বললে সেটা প্রকাশ হবার ধরণ বদলে যায়।অর্ণবের আজকের অবস্থা দেখে মনে হলো সে এখনও তোমায় বলেনি তার অনুভূতির কথা।কেমন পাগলাটে আচরণ করে বেড়ায় সারাক্ষণ। বলে ফেললে আজ তার আচরণে অন্য কিছু ফলিত হতো।যাই হোক,ছেলে মানুষ তো।তার উপর শিক্ষিত।বুঝে শুনে বলে দেবে একদিন।ধরেই বলা হয়ত সে পছন্দ করেনা।আর বললেও কি!
তোমায় যে পরিমাণ ভালবাসে সে, এটাতে তোমার তো ওর মুখ থেকে কথা না শুনলেও চলবে’

মিজুয়ানা চলে যাবার পর কুসুম দরজার দিকে চেয়ে রইলো।
‘উনি হয়ত জানেন না, এসব আমার তিনি কেন করছেন।
দায়িত্ব হই কিনা!!’
—-
অর্ণব মৃদুলকে ধরে কাঁদছে।তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সব কিছু।এত জলদি কেন হলো এসব।মৃদুল ওকে বোঝানোর যত যুক্তি লাগে সেসব যুক্তি পেশ করবার পরেও হেরে বসে আছে।অর্ণব ভাবছে আজই কুসুমকে হারিয়ে ফেলবে।

‘তুই তো ওরে ভালবাসিস না,দু চোখে দেখতে পারিস না,তবে এখন এত পাগল হয়ে যাচ্ছিস কেন?’

‘বাসিনা তো কি কাঁদা যাবেনা?মা বাবা কেউ আসছেনা।আমি একা আর কত সহ্য করবো?’

‘আসবে।শান্ত হ।তোকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখতে পারছিনা।আয় বোস’

মৃদুল ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে।তারপর ওর চোখ মুছে দিয়ে বললো,’বয়স কম ওর।এত জলদি কছু হবেনা দেখিস।ভাল হয়ে যাবে’

‘ভাল হতে টাকার বৃষ্টি ঝরাতে হবে।’
—-
‘আসবো?’

মৃদুলের কণ্ঠস্বর শুনে কুসুম জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকিয়েছে।
মৃদুল মুচকি হেসে টুল টেনে বসলো পাশে।কুসুম বললো,’উনি কোথায়?’

‘ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে করিডোরে।দেখবে?’

‘নাহ’

‘তোমার সাথে একজনের কথা বলিয়ে দেবো।বলবে?’

‘কে?’

‘অপেক্ষা করো।

মৃদুল ফোনে কিছুক্ষণ টিপাটিপি করে ফোনটা কুসুমের দিকে ধরেছে।ওপারে জুথি বসে আছে।টেবিলে ফোন রেখে চেয়ারে বসা।গায়ে লেডিস টি -শার্ট আর চুলগুলোকে খোঁপা করে রাখা।কুসুমকে দেখে হাত নাড়িয়ে সে বললো,’হাই!!কেমন আছো?’

‘ভাল।আপনি মিননয়ি আপু না?’

‘হ্যাঁ।চিনতে পেরেছো?’

‘ভুললাম কবে?’

‘জানো হাসপাতালে যেতে আমার অনেক ভাল লাগে।তোমার ভাল লাগছে?
কেন ভাল লাগে জানো?কারণ আমার পরিবারের সবাই কত কত সেবা করে আমার।আরাম আয়াশে দিন কাটে।শুয়ে থাকা যায় সারাটাদিন।এসবে তোমার অনূভূতি কেমন?’

‘আমার কোনো অনুভূতি নেই’

‘আচ্ছা ওসব ছাড়ো।আমি, তুমি আর মৃদুল ভাইয়া এখন একটা খেলা খেলবো।রাজি?’

‘কি খেলা?’

‘সবাই সবার একটা করে ইচ্ছে বলবে।তারপর সেই ইচ্ছেটা পূরণ না হবার কারণ বলবে।
এরপর বলবে ইচ্ছে আদৌ পূরণ হবার কোন উপায় আছে কিনা।ঠিক আছে?’

‘আচ্ছা’

‘তো আগে মৃদুল ভাইয়া বলেন।আপনাকে দিয়ে শুরু করি’

‘আমার ইচ্ছে পুলিশ হবো।তারপর যাকে ভালবাসি তাকে গুলির ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে নেবো।হাহা!!
এই ইচ্ছে পূরণ হবেনা জানি।অনামিকার জন্য হাত কেটেছিলাম অনেকবার।ঐ দাগ দেখলে আমায় পুলিশে নেবেনা।বাদ দিয়ে দিবে ট্রেনিংয়েই।
তো আমার ইচ্ছে অন্য ভাবে পূরণ হতে পারে।যেমন ধরো যাকে ভালবাসি সে যদি নিজে থেকে এসে ধরা দেয় আর কি।’

‘স্টুপিড! আচ্ছা এবার আমি বলি।আমার ইচ্ছে হলো জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখবো।কটাদিন ধরে নিজের খেয়াল রাখা হয় না।আগে আমি আমাকে অনেক ভালবাসতাম।এখন আর বাসা হয়না।তাই চাই বোধ থাকা অবধি নিজেকে ভালবেসে যাব।এখন আমার ইচ্ছে পূরণ হবে কিনা জানিনা।তবে জীবনসঙ্গী হলে যদি সে আমার খেয়াল রাখে তবে আমার ইচ্ছেটা আমার স্পর্শ ছাড়াই পূরণ হয়ে যাবে ‘

‘আমার ইচ্ছে যিনি আমার জন্য কাঁদছেন তাকে যেন আর কাঁদতে না হয়।
জানিনা এই ইচ্ছে পূরণ হবে কিনা।পূরণ হতো হয়ত যদি আমার অসুখ সেরে যেতো অথবা আমি মরে যেতাম।একদিন কেঁদে আর কাঁদতেন না তিনি তাহলে।ইচ্ছের সমাপ্তি ঘটতো তখন’

‘এসব বলেনা কুুসুম।তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে।তবে পজিটিভলি।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে,অর্ণব ভাইয়া ও আর কাঁদবেননা তাহলে।তোমাদের একটা হ্যাপি ফ্যামিলি হবে,ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চায় ভরে উঠবে গোটা পরিবার’

মৃদুল ভেংচি কেটে বললো,’বাচ্চাকাচ্চা ছোটই হয়।যেভাবে বললে যেন বড় ও হয়’

‘বিশ্বাস করেন!আপনার মতন ত্যাড়া মানুষটাকে আমি বিয়ে করবোনা,কোনোদিন ও না।’

‘সারাজীবনের জন্য একদিন আমি তোমার হয়ে যাবো🙈চেয়েও আমাকে পাশ থেকে সরাতে পারবেনা।’

চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭২
আফনান লারা
.
জুথির সাথে কথা বলে মনের অনেকাংশ জায়গা ভাল হয়ে গিয়েছিল কুসুমের।প্রথম প্রথম মুখে হাসি ফুটে ছিল।মনে মনে ভাবছিল উনি খুব ভাল মানুষ।যদি তার সঙ্গে আমার উনার বিয়ে হতো তবে উনি খুবই সুখী হতেন।
সব কিছু মনে করার পর হঠাৎ আবারও মন খারাপ হয়ে গেলো অর্ণব কাঁদছে ব্যাপারটা মন পড়ে।রুমে কেউ ছিলনা তখন।সে নিজে নিজেই উঠে বসেছে।গায়ে সেই পরিমাণ শক্তি নেই যেটা দিয়ে সে কাউকে জোটগলায় ডাক দেবে।
উপায়ান্তর না পেয়ে হাতের ক্যানোলাটাকে ওলটপালট করে দেখছিল সে।অর্ণব মুখে পানি দিয়ে মুখটা ভাল করে মুছে এদিকেই আসছে।সে কান্নার কথা জানতে দিবেনা কুসুমকে।রুমে ঢুকতেই কুুসুম ওর দিকে তাকালো।
ওকে বসে থাকতে দেখে সে ছুটে এসে ওকে ধরে শোয়াতে শোয়াতে বললো,’তোমায় না বলেছি হুটহাট উঠে পড়বেনা।হাতে এটা থাকলে এরকম উঠা যায়না।’

কুসুমের মলিন মুখ ওকে আর একটা শব্দও বলতে দেয়নি।মাঝপথে যেন তারকাটার আবরণে থামিয়ে দিয়েছে।সেটার যন্ত্রনায় চুপ হয়ে আছে সে।কুসুম ওর হাত ধরে ফেললো।জিজ্ঞেস করলো কাঁদছিল কেন।

‘আমি কেন কাঁদতে যাব?’

‘আপনার চোখ লাল হয়ে আছে,ফুলে গেছে।কান্না না করলে এমনটা হবার কথা না’

‘চোখ অনেক চুলকাচ্ছিল।ওসব বাদ দাও।তোমার অনেক খিধে পেয়েছে তাইনা?আমি ডাক্তারকে বলে এই ঔষুধটা অফ রেখে তোমায় খাওয়াতে পারবো।খাবে কিছু?’

‘নাহ।একটু বসবেন এখানে?নাকি আবার চলে যাবেন?’

কুসুমের আবদারটা ফেলার মতন না বলে সে বসেছে এক পাশে।ওর চোখ কেবল অর্ণবের দিকে।অথচ অর্ণবের সাহস হয়না একবার ওকে দেখার।ইচ্ছে হয় হাত শক্ত করে ধরে রাখতে।
কেন রোগ আসে।কেন এত অসহায়ত্ব সঙ্গতা চায়।
রাগ হয় এসব কিছুর ওপর।রাগে বিছানার চাদর খাঁমছে ধরে রেখেছে অর্ণব।
কুসুম ওর ডান হাতটা ধরে রেখেছিল।অর্ণব এই রুমটায় আসায় এখন তার আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করে উঠে বাহিরে গিয়ে দম ফেলতে।কেমন যেন লাগছে মনের ভেতর।কুসুমের হাত ধরে রাখা আরও খারাপ লাগার সৃষ্টি করে।বাধ্য হয়ে ওর হাতটা ছাড়িয়ে রুম থেকে চলে আসলো সে।পেছনে তাকালো না আর।
—-
রাতের ১০টা বাজে।হাসপাতালে রুগী,রুগীর পরিবারের আনাগোনা ক্রমে বাড়ছে।ব্যস্ত করিডোর।সাজিয়ে রাখা সারি সারি চেয়ারের কিণারার একটি চেয়ার দখল করে বসে আছে অর্ণব।এই মনে হয় কুসুমের পাশে বসে থাকতে আর এই মনে হয় দূরে চলে আসতে।
‘রোগটা একটা স্বপ্ন কেন হতে পারেনা?কেন সব সত্যি হয়ে আসছে?আমি তো এই সত্যি চাইনি।আমি চাই সব মিথ্যে প্রমাণ হোক।তবে কেন বারবার সব খারাপের চেয়ে গুরুতর হয়ে গেলো।’

নার্স এসে বলেছে কুসুম নাকি ওকে ডাকছে।
কথাটা দুইবার বলে গেছিল।অথচ অর্ণব যাবার সাহস কুলিয়ে পাচ্ছেনা।কুসুমের কাছে গেলে তার বুকে আরও বেশি ব্যাথা হয়।
শুকনো ঠোঁটটাকে জিভ দিয়ে ভিজিয়ে মনের সাথে যুদ্ধে মেতে রুমের দিকে চললো আপাততর জন্যে।
‘মনে সাহস থাকুক,কিংবা না থাকুক।ভবিষ্যত মনে করে বুক পুড়ুক তাও তার কাছে আমার থাকা চাই।সে একা,অনেক একা।তার একটা আমি’র দরকার।’

দরজায় হাত রেখে ধীরে সুস্থে ভেতরে ঢুকলো সে।কুসুম যেন ওর অপেক্ষাতেই চোখ দুটোকে ব্যস্ত রেখেছিল এই যাবত ওকে দেখেই।
ওকে ভেতরে আসতে দেখে এখন চোখ তার ঝলমল করছে।
অর্ণব পাশে এসে বসতেই সে বললো,’আমাকে একবার উঠাবেন?’

‘আচ্ছা’

অর্ণব ওর হাত ধরে বসালো শোয়া থেকে।এরপর একটা মূহুর্ত ও দেরি না করে কুসুম ওকে জড়িয়ে ধরে ফেলেছে। অর্ণব আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা।চোখ ঝাপসা হয়ে অশ্রুর বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে তার দুচোখে।
কুসুমকে ওর মত করে ধরে সে কেঁদে ফেললো।
সেসময়ে মৃদুল হাতে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে ঢুকেছিল।ওদের এমন অবস্থায় দেখে আবার পিছিয়ে গেছে বাহিরের দিকে।
এখন খাবার হাতে চেয়ারে গিয়ে বসে অপেক্ষা করছে দশ মিনিট হবার।ততক্ষণ তার কাছে অতি দীর্ঘ, এর কারণে যাকে জ্বালাতন করলে মিনিটটা সেকেন্ডে পরিণত হবে তাকে জ্বালাতে ফোন হাতে কল দিলো সে।
জুথি তখন মোরকোর সাথে বাড়ির সামনের রোডটাতে সাইকেলিং করছিল।ছোটকালে অনেক সময় তারা এভাবে দুজনে সাইকেল চালাতে চালাতে অনেকদূর পর্যন্ত চলে যেতো।এখন চালানো হলেও আগে কার মতন দুজনে এখন আর দুষ্টুমি করেনা।জুথি মুখে হাসি ফুটিয়ে নিরবে চালাচ্ছে।
মোরকো ওকে বললো দেশে ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড হয়েছিল কিনা।ওর প্রশ্ন শুনে জুথি অবাক হলো প্রথমে।কারণ মোরকো ওকে কখনও পার্সোনাল প্রশ্ন করেনা।সবসময় লেখাপড়া আর স্পোর্টস নিয়ে তার যত আলাপ ছিল।
এখন তার এই প্রশ্নে জুথি জানালো “”না সূচক””।
মোরকো আবার প্রশ্ন করেছে জুথি কি তাহলে আর প্রেমই করবেনা।
জুথি এর উত্তর দেইনি।সবসময় দ্বিতীয় লাইনের উত্তর সে দেয়না।এখনও তাই। মৃদুলের সাথেও এমন করে সে।
মোরকোকে পিছনে পেলে জুথি অনেকদূর চলে এসেছে।ঠিক সেসময়ে মৃদুলের কল দেখে থামলো।মৃদুল ভাইয়ার কি টাকা বেশি হয়ে গেলো?বিদেশী নাম্বারে এতবার কল করলে ফোনের টাকা সব যে কি পরিমাণে কাটে তা কি উনি বোঝেননা?

কল কেটে জুথি নিজে ব্যাক করেছে এবার।মৃদুল বললো,’কাটলে কেন?আমার ফোনে অনেক টাকা আছে।বাপের একমাত্র ছেলে আমি।টাকার কোনো অভাব নাই’

‘অভাব নাই নাকি আছে সেটা তো এক পাঞ্জাবি পরে আমার সাথে ১০বার মিট করাতেই বুঝেছি’

‘আসলে সেটা না,আমার পাঞ্জাবি হাজারটা আছে।কিন্তু ঐ পাঞ্জাবিটা অনেক লাকি।ওটা পরে বের হলে তোমার সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটানো হয়, বুঝলে?’

‘কিসের জন্য ফোন করেছিলেন?’

‘আমার বোরিং লাগছে।কুসুমকে যেমন মন ভাল করে দিয়েছিলে ভিডিও কল করে।আমাকেও দেও না প্লিজজজজ’

‘আপনার অসুখ?’

‘হ্যাঁ।আমার মনে বিশাল বড় অসুখ।এই অসুখে আমার বুকের ভেতর খালি খালি লাগে।মনে হয় কলিজা,আঁত সব কোথায় যেন চলে গেছে।মাঝে মাঝে ঐ কলিজা আঁতের ঠিকানাও মেলে। ঐ ঠিকানা হলো তুমি।ডাক্তার বলেছে ঐ ঠিকানায় এক তলা বাড়ি করে নিতে।তারপর সেটাতে বসবাস করতে।তবেই অসুখ সারবে।তুমি এখন ভিডিও কল করে আমাকে বিল্ডিং তৈরির সিমেন্ট,রডের ব্যবস্থা করে দাও।আমি নিজেই বাড়ি বানিয়ে দেবো।তারপর ওখানে আমরা থাকবো’

‘আপনি না…!!!’

‘কি?’

‘আপনাকে কি বললে সঠিক হবে তাই বুঝতেছিনা আসলে।’

‘জামাই বলো।আমি কিছু মনে করবোনা’

জুথি লাইনটা কেটে দিয়েছে।মৃদুল ঘড়িতে চেয়ে দেখলো দশ মিনিট পেরিয়ে বারো মিনিট হয়ে গেছে।তাই খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে আবারে রুমে ঢুকেছে।অর্ণব কুসুমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।ও হয়ত ঘুমে।
মৃদুল ওর পাশে প্যাকেটটা রেখে ফিসফিস করে বললো,’কিছু খেয়ে নে’

‘খিধে নেই’

‘সকালে আমার সাথে পাউরুটি, চা খেয়েছিলি।আর কিছু মুখে দেসনি।তোকে খেতেই হবে।আয় বোস এখানে।দে আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি পিচ্চি ভাবীর মাথায়’

‘তোর যে শক্ত হাত।কুসুমের কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাবে।আচ্ছা,তুই খেয়েছিস?’

মৃদুল টুল একটা টেনে বসে বললো,’আমারটা বাদ দে।ডাক্তার কিছু বলেছিল?’

‘ডাক্তারকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করবোনা।খালি মরার কথা বলে।লাস্ট স্টেজে এসে সবাই মারা যায়?এটা উনাকে বুঝাতেই পারছিনা।ভয় দেখায় খালি’

অর্ণবের কথা শুনে মনে হলো আধাপাগল হয়ে গেছে।মৃদুল কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলো।এই কি সেই অর্ণব?
আর এই সেই কুসুম?সেই ছোট্ট মেয়েটা।যাকে অর্ণব পছন্দ করত না।যাকে বিয়ে করার ভয়ে তিনটা বছর বাড়ি ছাড়া ছিল।আর আজ তার জন্য অর্ণবের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

অর্ণবের মাথায় এবার মৃদুল হাত বুলিয়ে বললো,’তোর অবস্থা বুঝতে পারছি।কিছু খেয়ে নে।কুসুমের খাওয়া আরও দেরিতে হবে।অন্তত ওর খেয়াল রাখতে তোকে শক্ত থাকতে হবে।
ওরে কোলে নিতে দিবি আমায়?দিবি না তো?তাহলে তুই এখন খাবি।তোর বউকে কোলে নিতে হলেও অন্তত গায়ে শক্তি আন।বুঝলি?’
চলবে♥