#লেবু
২২
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে ডেস্কের ওপর মাথা রেখে চোখদুটো বুজে রইলো সাবা। আজ সকাল থেকে অবিরাম কাজ করেই যাচ্ছে সে। ভোর বেলা চলে যায় রিপোর্ট করতে। জাল টাকা তৈরিকারীদের হাতে না হাতে ধরবে বলে সূর্য ওঠার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। সাধারণত রিপোর্টের শুট থাকলে, সেদিন আর অফিসে আসে না সাবা। শুট শেষে বাড়ি ফিরে আসে। তবে আজ বাড়ি ফিরলো না।
অফিসে এসে নিজের রিপোর্টটা নিজেই এডিট করতে বসলো। এডিটিংয়ে দারুণ দক্ষতা থাকলেও কাজের ব্যস্ততায় এই দায়িত্ব সে নিতে পারে না। আজ বহুদিন বাদে ইচ্ছা করেই দায়িত্বটা নিলো। এডিটিং সেরে নিজের কেবিনে বসে পরের রিপোর্টটা লিখতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
কাজ অজুহাত মাত্র। বিক্ষিপ্ত মনটাকে ব্যস্ত রাখার অজুহাত। গতরাতের ঘটনায় সাবা মারাত্মক বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। মনটা এতদিনে একটু একটু করে দুর্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছিল শাফকাতের প্রতি। সাবা সায়ও দিয়ে যাচ্ছিল সে দুর্বলতাকে। তবে গতকাল রাতের পর থেকে সবটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল।
শাফকাতের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছে সাবা। ছেলেটা বরাবরই তার সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সে না হয় ঠিক আছে। কিন্তু কাল যা ঘটলো, তা নেহায়েত তার উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ নয়। ইনসিকিউরিটির বহিঃপ্রকাশ। শাফকাত কি মনে মনে সন্দিহান সাবার বিশ্বস্ততা নিয়ে?
শাফকাতের সঙ্গে সম্পর্কটা আজও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারলো না বলে কী হবে? এই বিয়ে নামক শব্দটার প্রতি সাবার অগাধ শ্রদ্ধা আছে। অন্য কোনো ছেলের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই সাবার। আগ্রহ যার কাছে গিয়ে ঠেকেছিল, সেই কেমন অদ্ভুত আচরণ করে মনটাকে বিষিয়ে দিলো।
সাবা বুঝতে পারছে না, গত রাতের ওই ঘটনার পর থেকে শাফকাতের প্রতি তার মনোভাবে কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা। সে কি আগের মতোই শাফকাতের কথা মনে পড়লেই আনমনে হেসে উঠছে? না। উল্টো ওই ছেলেটার কথা মনে পড়তেই বিরক্তির প্রবল স্রোতে গা ভাসাচ্ছে।
সাবা এবার বুঝতে পারছে কেন বিয়ের শুরু থেকেই সে আপন করে নিতে পারেনি শাফকাতকে। তার এই অস্বাভাবিক-অদ্ভুত স্বভাবের জন্যে। এই যে ছেলেটা সর্বক্ষণ সাবাকে নজরদারিতে রাখে, এটা কি অস্বাভাবিক না? এ তো রীতিমত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ!
শাফকাতকে ঘিরে সাবার এই চিন্তাভাবনায় ছেদ পড়লো কেবিনের দরজায় টোকা পড়ায়।
সাবা মাথা তুলে উঠে বসতে বসতে বলল, “Come in.”
অফিসের এক ফ্লোর বয় প্রবেশ করলো কেবিনে। বিনয়ী গলায় বলল, “ম্যাডাম একজন আপনার সাথে দেখা করতে আসছে।”
সাবা কিঞ্চিৎ কৌতুহল নিয়ে বলল, “কে?”
“ফাহিম নাম বলল।”
বিরক্তির প্রবল হাওয়া আবারও এসে স্পর্শ করলো সাবাকে। এজন্যেই কাউকে বিনয় দেখাতে হয় না। ভদ্রতার সুযোগ নেওয়ার জন্যে মুখিয়ে থাকে প্রত্যেকটা মানুষ। কাল যদি ফাহিমকে সৌজন্যতা না দেখিয়ে দুর্ব্যবহার করতো, তাহলে আজ অফিস পর্যন্ত আসার দুঃসাহস সে পেতো না।
সাবা একবার ভাবলো ফাহিমকে চলে যেতে বলবে কিনা। পরমুহূর্তেই নিজেকে প্রশ্ন করলো, সে ফাহিমকে এড়িয়ে চলতে চাইছে কেন? শাফকাতের ভয়ে? না, না! ফাহিমকে সে এড়িয়ে চলতে চাইছে অতীতে তার কাছ থেকে পাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে।
এড়িয়ে চলতে চাইলেও এড়ানোর কোনো উপায় পাওয়া গেল না। এটা অফিস না হলে নির্ঘাত তার সঙ্গে দেখা করতো না সাবা। তবে অফিসে কেউ একজন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেও দেখা না পেয়ে চলে গেছে, এই নিয়ে কথা উঠবে। সাবার কলিগরা এমনিতেও তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। সুযোগ পেলেই টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। তার ওপরে এরকম একটা ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখলে, সাংবাদিকতার সমস্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে চটকদার গুঞ্জনে মেতে উঠবে।
সাবা গম্ভীর গলায় বলল, “পাঠিয়ে দাও।”
ফাহিম হাসিমুখে প্রবেশ করলো সাবার কেবিনে। তার হাসিটা দেখে রীতিমত গা জ্বলে গেল সাবার।
সাবা উঠে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, “কেন এসেছো ফাহিম? তোমাকে আমি বলেছি না যে হুটহাট তোমার সাথে দেখা করাটা এখন আর আমাকে মানায় না!”
সাবা হুট করে রেগে যাওয়ায় ফাহিম কিছুটা ভড়কে গেল। কাল তার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে ভেবেছিল আজও সাবা তাকে সাদরে গ্রহণ করবে।
ফাহিমের বিস্মিত মুখটা সংবিৎ ফিরিয়ে দিলো সাবার। কী করছে এসব সে? শাফকাতের হুমকি-ধামকিতে প্রভাবিত হয়ে অন্যের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে? যতই ফাহিম তার প্রাক্তন হোক না কেন, কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা সাবাকে মানায় না। তার আদর্শে দুর্ব্যবহারের স্থান নেই।
সাবা নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, “সরি! আমি…”
ফাহিম কোমল স্বরে বলল, “ইটস ওকে সাবা। আমি বুঝতে পারছি তোমার ভেতর দিয়ে কী যাচ্ছে।”
সাবা ভ্রু কুঁচকে বলল, “কী বুঝতে পারছো?”
ফাহিম সামান্য হেসে বলল, “দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বলতে হবে?”
সাবা তার মুখোমুখি থাকায় চেয়ারে ইশারা করে বলল, “Have a seat!”
ফাহিম নিঃশব্দে বসলে, সাবা নিজেও বসলো তার মুখোমুখি।
তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “কী বুঝতে পারছো বলো!”
ফাহিম ইতস্তত করে বলল, “এতগুলো বছর আমাদের দেখা হওয়ায় আমার ভেতরে যে ইমোশনগুলো কাজ করছে সেগুলো নিশ্চয়ই তোমার ভেতরও কাজ করছে।”
সাবা বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল, “কী ইমোশন কাজ করছে তোমার ভেতরে?”
ফাহিম কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “বারবার সেই পুরনো সময়টাতে হারিয়ে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে সব ঠিক আগের মতোই আছে। আমরা এখনো নতুন নতুন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া ছেলে-মেয়ে। তোমারও এটাই মনে হচ্ছে তাই না?”
সাবা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে কঠিন গলায় বলল, “আমার কাছে এসব ফিল্মি ইমোশনের কোনো দাম নেই। কফি চলবে?”
সাবা কঠিন বাক্যে মনঃক্ষুন্ন হলেও মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে ফাহিম বলল, “অবশ্যই!”
বছর পাঁচেক আগে ফাহিমের সঙ্গে সাবার যে সম্পর্কটা ছিল, তাকে সে ঠিক প্রেমের সম্পর্ক বলে মানে না আজও। তার মতে ওটা তার অপরিণত বয়সের ভুল। ইনিভার্সিটিতে এসেও সাবার মধ্যে যথেষ্ট ইমম্যাচিউরিটি ছিল। পরিবারের আদরে আদরে যাদের শৈশব-কৈশোর কাটে, পরিপক্কতা তাদের স্পর্শ করে ধীরগতিতে। আজকের এই পরিপক্কতা তো সাবা অর্জন করেছে বহু পরে। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে।
ইউনিভার্সিটিতে প্রথম প্রথম সাবা লক্ষ্য করে ক্যাম্পাসের যেখানেই চোখ যায়, সেখানেই জুটি! ক্যাম্পাসের মধ্যে তেমন সাহস না পেলেও, ক্যাম্পাসের বাইরে পা রাখলেই দেখা মিলতো তাদের প্রেমের দৃশ্যের। হাত ধরাধরি করে হাঁটা, একে অপরকে ফুচকা খাইয়ে দেওয়া – এসব দৃশ্য সাবার মধ্যে বিচিত্র এক শূণ্যতার সৃষ্টি করে। তার মনেও ইচ্ছা জাগে কারও হাত ধরে হাঁটার, কারও হাতে ফুচকা খাওয়ার।
এমনই একটা সময়ে তার জীবনে আসে ফাহিম। ক্যাম্পাসেই তাদের পরিচয় হয়। দুজনের এক কমন ফ্রেন্ড অদ্রিকার মাধ্যমে। পরিচয়টা সাদামাটাভাবে হলেও ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। ফাহিম নিজেই ফেসবুকে সাবাকে খুঁজে বের করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। পরিচিত বলে সাবাও একসেপ্ট করে নেয়। প্রায়ই তাদের কথা হতে শুরু হয় ম্যাসেঞ্জারে।
একটা বিষয় খুব ভালোভাবেই খেয়াল করে সাবা। ফাহিম তাকে অচিন্তনীয় পরিমাণে পাত্তা দিচ্ছে! ম্যাসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ করলে মুহূর্তের মধ্যেই তার রিপ্লাই দিচ্ছে। দেখা হলে ভদ্রভাবে কথা বলছে। তার হ্যাঁতে হ্যাঁ মেলাচ্ছে। সাবা কোনো ভারী ব্যাগ নিয়ে ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে গেলে ফাহিম কোত্থেকে যেন ছুটে এসে তার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে যাচ্ছে।
একদিন কথায় কথায় সাবা বলেছিল তার পুরান ঢাকার চমচম খেতে ইচ্ছা করছে। পরদিন ক্যাম্পাসে ফাহিম হাজির সেই চমচম নিয়ে।
একে তো অন্যের প্রেম করা দেখে শূন্যতায় আচ্ছন্ন সাবা। তার ওপরে আচমকা একটা ছেলের কাছ থেকে এতটা পাত্তা পেলে তার মতো অপরিপক্ক মেয়ের পক্ষে গলে পড়াই স্বাভাবিক।
সাবাও গলে গেল। নিজেদের অজান্তেই তারা একে অপরের জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়ালো। ক্লাস শেষে তারা কতক্ষণ ঘোরাঘুরি করবে, গল্প করবে, ফাহিম সাবাকে তার বাইকে করে বাসায় নিচে নামিয়ে দিয়ে যাবে, ঘুমানোর আগে তারা একে অপরকে নিজেদের পুরো দিনের কর্মকান্ড বলবে – এটা হয়ে দাঁড়ালো তাদের অলিখিত রুটিন। এই রুটিনে হেরফের হলেই বিরক্তিতে দিশেহারা হয়ে যায় তারা।
একদিন ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ফাহিম জিজ্ঞেস করে বসলো, “আচ্ছা সাবা? আমরা কি প্রেম করছি?”
এই প্রশ্নটা শুনে সাবার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল এক লাফে। চিন্তায় পড়ে গেল সে নিজেও। একই সঙ্গে উপলব্ধি করলো, ফাহিমের সঙ্গে তার এই সম্পর্কটা আর বন্ধুত্বের গন্ডির মাঝে আবদ্ধ নেই।
অলিখিতভাবেই প্রেম করতে শুরু করলো তারা। তবে এই প্রেমে বন্ধুত্বটাই সবথেকে বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছিল। সাবাকে ফাহিম বোঝে, ফাহিমকে বোঝে সাবা। একজনের কোনো সমস্যায় পড়লে নিশ্চিত থাকে অপরজনের এর সমাধান করে দেবে। একে অপরের দুঃখ-কষ্টগুলো তারা আপন করে নেয়। ব্যর্থতায় অনুপ্রেরণা যোগায়। আদর্শ বন্ধুত্বের এগুলোই তো লক্ষণ।
তবে সাবার কখনো মনে হয়নি, এই ছেলেটাকে না পেলে সে মরেই যাবে। মেয়েরা না-কি প্রেমে পড়লে যার প্রেমে পড়েছে তার সঙ্গে বিয়ের স্বপ্নও দেখে ফেলে। অথচ প্রেমের পুরোটা সময়ে সেই স্বপ্ন সাবা একবারও দেখেনি।
তবে ফাহিমের প্রতি তার এক আকর্ষণ ছিল ঠিকই। তাকে নিজের ‘বয়ফ্রেন্ড’ হিসেবে ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে একটা সুপ্ত গর্ববোধ হতো।
সেমিস্টার ব্রেকে সাবা ঘরবন্দি। যদিও বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার অজুহাতে সে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত, তবে রোজ রোজ বের হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। দেখা করাও আচমকা কমে গেল দুজনের।
চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল – এ সত্য প্রমাণিত হলো ফাহিমের ক্ষেত্রে। সাবার প্রতি তার নির্ভরতাও কমে এলো। সাবাকে পাত্তা দেওয়াও কমে এলো। সাবার ম্যাসেজ এখন সে দেরিতে সিন করে, কখনো সিন করেই রেখে দেয়। রিপ্লাই দেয় না। ফোনে ছোট ছোট উত্তর দেয়।
অন্যান্য প্রেমিকাদের মতো এ নিয়ে ফাহিমের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাটি করে লঙ্কাকান্ড বাঁধিয়ে দেয়নি সাবা। উল্টো তাকে সময় দিয়েছে। ভেবেছে, ক্লাস শুরু হলেই আবার সবটা আগের মতো হয়ে যাবে।
কিছু তো আগের মতো হলোই না, কিন্তু সবটা পাল্টে গেল। সাবা লক্ষ্য করলো, দেখা করতে এলেও ফাহিম উদভ্রান্তের মতো আচরণ করে। তার কথাগুলো আর মন দিয়ে শোনে না। হঠাৎ হঠাৎ চমকে ওঠে। চোখদুটো সর্বক্ষণ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে থাকে।
ভালো সাংবাদিকের লক্ষণ তখন থেকেই ফুটে উঠতে শুরু করেছিল সাবার মাঝে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে সে ফাহিমকে। অদ্রিকার কাছ থেকেই ফাহিমের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে সাবা। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ইউনিভার্সিটির কাছকাছিই একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো।
একা যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারেনি বলে সঙ্গে অরুণসহ আরও কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে যায় সাবা। বাড়ির দরজা খুলে যেতেই সত্য প্রমাণিত হয় সাবার ধারণা। বাড়ির ভেতরে বসেছে মা/দকের আড্ডা। মেঝেতে জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে কতগুলো খালি সিরিঞ্জ। একটা প্লাস্টিকের টেবিলের ওপরে কয়েকটা কাঁচের বোতলে মা/দকদ্রব্য।
সাবা একটু এগিয়ে যেতেই দেখে ভয়ানক এক দৃশ্যের। ক্যাম্পাসের সবথেকে ভদ্র ছেলেটা ঠোঁটের কাছে সরু একটা কাগজের মতো ধরে সেবন করছে মা/দক।
সাবা বুঝতে পারছিল ফাহিম খারাপ সঙ্গের পাল্লায় পড়ে একটা ভুল করেছে। দুরবস্থায় ছেড়ে যায়নি তাকে। কয়েকদিন পর সেমিস্টার ব্রেক শেষে ইউনিভার্সিটি খুলতেই সাবা তৎকালীন ভিসির কাছে গিয়ে জানায়, এ ইউনিভার্সিটির কয়েকজন ছেলে মা/দকাসক্ত হয়ে পড়েছে।
সাবা ফাহিমের ভালো চেয়েছিল বলেই এই পদক্ষেপটা নিয়েছে। নিজেও বোঝাতে পারতো, তবে তাতে বিশেষ কোনো কাজ হতো বলে সে মনে করে না। মা/দকে যারা আসক্ত, তাদের কোনোকিছুই বুঝিয়ে লাভ হয় না।
কর্তৃপক্ষ ফাহিমসহ তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের রিহ্যাবে পাঠানোর ব্যবস্থাও করে। গোটা ক্যাম্পাস তখন সাবার এই সাহসী উদ্যোগের প্রশংসায় ভাসছে।
হঠাৎ ফাহিমের ফোন এলো সাবার আগে। রীতিমত ক্রুদ্ধ গলায় সে বলল, “আমার এত বড় একটা ক্ষতি তুমি কী করে করতে পারলে সাবা? তোমার মতো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না?”
সাবাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দেয় ফাহিম। সে সম্পর্ক সুন্দর কোনো বাঁকে মোড় নিতে পারতো, সে সম্পর্কের ইতি ফাহিম টানে মাত্র আঠারো সেকেন্ডের একটা ফোন কলে।
কফির এসে গেছে। নিঃশব্দে কফির কাপে চুমুক দিলো সাবা।
ফাহিম ইতস্তত করে বলল, “সাবা? তুমি কি এখনো আমার ওপরে রেগে আছো?”
সাবা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “এই প্রশ্নের উত্তর গতকাল দিয়েছি।”
ফাহিম কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে দমে যাওয়া কণ্ঠে বলল, “বিশ্বাস করো সাবা, তখন আমি একদমই ইমম্যাচিউরড ছিলাম। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, কে ভালো, কে খারাপ – এগুলো বোঝার ক্ষমতা আমার মধ্যে ছিল না। না বুঝে তোমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। তাছাড়া তোমার কারণে আমারও তো কম ক্ষতি হয়নি।”
সাবা ক্ষীণ হাসি হেসে বলল, “তাই না-কি? ক্ষতি হলে আজ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারতে না। বিদেশে এত বড় একটা চাকরি করতে পারতে না।”
ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সেটা এখন বুঝি সাবা। তোমার কাছে সেজন্যে আমার কৃতজ্ঞতারও শেষ নেই। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি। আমার জীবনের সবথেকে মূল্যবান মানুষটা ছিলে তুমি। অথচ সেই তোমাকেই ধরে রাখতে পারিনি।”
সাবা কঠিন গলায় বলল, “যা হয়, ভালোর জন্যেই হয়। তুমি আমার জীবনে মোটেও মূল্যবান কেউ ছিলে না। সম্পর্কটা ভেঙে না গেলে দিয়েছিলে বলেই তো বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমার জীবনে একটা ভুল ছাড়া আর কিছুই নও। না হলে হয়তো বুঝতে বুঝতে বেশ দেরি হয়ে যেত।”
ফাহিম আহত গলায় বলল, “ভুল?”
আহত দৃষ্টিতেই কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো সাবার দিকে। তার অভিব্যক্তি এমন যেন কয়েক হাজার সূচ একসঙ্গে ফুটিয়ে দেওয়া হয়েছে তার শরীরে।
“ঘন্টার পর ঘন্টা লাইব্রেরিতে নিচু গলায় গল্প করে কাটানো ভুল? রাতের পর রাত রেগে ফোনে কথা বলা ভুল? একদিন দেখা না হলেও আমাদের অস্থির হয়ে পড়াটা ভুল?”
সাবা হেসে ফেলে বলল, “কী আশ্চর্য! তুমি দেখি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে আরও কয়েকগুণ ফিল্মি হয়ে ফিরে এসেছো!”
ফাহিম গম্ভীর গলায় বলল, “সরি!”
সাবা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, “আমাদের মধ্য যা ঘটেছে, তা নিয়ে এত ভাবনা-চিন্তা করার কিছুই নেই। তখন বয়স কম ছিল আর আবেগ বেশি। তাছাড়া আমাদের সম্পর্কটা টিকেছিল কয়দিন? বড়জোর ছয় মাস?”
ফাহিম স্পষ্ট স্বরে বলল, “সাড়ে সাত মাস।”
“ওই একই কথা। সময় অল্প। কিন্তু এই সাড়ে সাত মাস আমাকে কঠিন একটা শিক্ষা দিয়েছে।”
“কী শিক্ষা?”
“আমি তোমাকে প্রচুর অ্যাটেনশন দিতাম
জানো? কেয়ার করতাম। দুশ্চিন্তা হতো তোমার জন্যে। কিন্তু তোমার সঙ্গে এই সাড়ে সাত মাস নষ্ট করে আমি শিক্ষা পেয়েছি, যারা এই অ্যাটেনশন, কেয়ার, দুশ্চিন্তার যোগ্য নয়, তাদেরকে এসব দিতে হয় না।”
(চলবে)
#লেবু
২৩
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
সিগারেটের ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে গোটা বসার ঘর। এই ধোঁয়া বাড়ির থমথমে পরিবেশটাকে আরেকটু বেশিই থমথমে করে তুলছে। বাড়ি মোটামুটি নীরব হয়ে গেছে। আতিয়া আলম ঘুমোতে চলে গেছেন, শামা নিজের ঘরে পড়তে বসেছে। কয়েকজন স্টাফ যে যার মতো কাজে ব্যস্ত। তবুও বাড়ির মধ্যে একটা অস্পষ্ট গাম্ভীর্য যেন সকলেই টের পাচ্ছে।
গাম্ভীর্যের কারণটা শাফকাত। অন্যান্য দিন বাইরে থেকে ফিরে সে শাওয়ার নিয়ে আবারও স্টাডি রুমে কিংবা ছাদের সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে কাজে বসে যায়। আজ সেসবের কিছুই করছে না। বাড়ি ফিরে ঠায় বসে আছে বসার ঘরের সোফায়। একের পর এক সিগারেট টানছে অনবরত। তার চোখেমুখে ভয়ঙ্কর কাঠিন্য। চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। তার ভেতরে ভেতরে যে কী মারাত্মক রাগ খেলে বেড়াচ্ছে, তা বাইরে থেকে যে কেউই বুঝতে পারবে।
শাফকাত বুঝতে পারছে না তার রাগের কারণটা কে? সাবা না-কি সে নিজেই? নিজের ওপরেই তার রাগটা সবথেকে বেশি হওয়া উচিত। দেশের সবথেকে বড় বিজনেসম্যান যে মানুষটা, এত এত দায়িত্ব যার কাঁধে – সে কিনা সর্বক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে একটা মেয়ের চিন্তায়?
ঠিক এ কারণেই নারী জাতিকে বরাবর এড়িয়ে চলেছে সে। এদের প্রধান কাজই হলো পুরুষের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো! এই সাবার কারণেই আজ সিনেব্লাস্টের মিটিংটা শেষ মুহূর্তে ক্যান্সেল করতে হলো। আরশাদ হকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কে ফিল্মসে যে ছেলেটাকে স্পাই হিসেবে পাঠানো হবে, সে এসেছিল আজ। তাকে জরুরি কয়েকটা বিষয় বুঝিয়ে দেওয়ার ছিল।
কিন্তু না! এই সাবাই যত নষ্টের গোড়া। এই মেয়েটার কারণেই মেজাজটা এমনভাবে বিগড়ে গেল যে আর কোনো কাজেই মন বসাতে পারলো না শাফকাত। সোজা চলে এলো বাসায়।
কলিংবেল বেজে উঠলো। রান্নাঘর থেকে একজন স্টাফ ব্যস্ত পায়ে বেরিয়ে এসে পা বাড়ালো দরজার দিকেই। তাকে হাতের ইশারায় থামালো শাফকাত। স্টাফ তার অগ্নিচক্ষুর তীক্ষ্ণতায় তটস্থ হয়ে আবারও ফিরে গেল রান্নাঘরে।
কলিংবেল আরও বেশ কয়েকবার বাজলো। শাফকাত ঠিক আগের ভঙ্গিমায় সিগারেটে লম্বা লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। উঠে গিয়ে দরজা খোলার কোনো লক্ষণ তার মাঝে প্রকাশ পেলো না।
কলিংবেল অনবরত বেজেই যাচ্ছে। তবুও শাফকাত ধীরেসুস্থে সিগারেটটা শেষ করে তবেই পা বাড়ালো দরজার দিকে।
দরজা খুলতেই দেখা মিলল সাবার। সেই কোন সকালে বেরিয়েছে। দিনভর খাটাখাটনি করে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত মেয়েটা। দেরিতে দরজা খোলায় স্টাফের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করতেই যাচ্ছিল। তবে আত্মসংবরণ করলো শাফকাতকে দেখে।
শাফকাতকে দেখে বললে অবশ্য ভুল হবে। শাফকাতের রক্তচক্ষু দেখে। ছেলেটার মাঝে ভয়ানক রাগ দেখতে পাচ্ছে সে। এতটা রাগ এর আগে কোনোদিন দেখেছে বলে মনে পড়ে না।
রাগের কারণ সাবার জানা। নির্ঘাত সে কোনো না কোনোভাবে জেনে গেছে আজ অফিসে ফাহিমের আগমনের কথা। জানুক গিয়ে! সাবা তার ভয়ে প্রকৃত নিজেকে গুটিয়ে রাখবে না। সে তো ফাহিমের সঙ্গে প্রেম করছিল না। তার কয়েকটা ভুল ধারণা ভাঙিয়ে দিচ্ছিল কেবল।
সাবা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে শাফকাতকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। মাঝপথে তার বাহু আঁকড়ে ধরে তাকে আটকালো শাফকাত। এত জোরে তার বাহু আঁকড়ে ধরেছে যে ব্যথায় রীতিমত কেঁপে উঠলো সাবা।
সাবাকে কিছু বলার বা কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া দেখানোর অবকাশ না দিয়েই শাফকাতকে টানে টেনে নিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে।
সাবা ব্যথা আর সহ্য করতে না পেরে বলল,
“ছাড়ুন! ব্যাথা পাচ্ছি!”
তার আকুতি বোধ হয় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো শাফকাতের কর্ণকুহরে। গম্ভীর মুখে দৃপ্ত পায়ে সিঁড়িগুলো বেয়ে সে উঠে গেল সাবাকে নিয়ে।
নিজের ঘরে সাবাকে এনে দরজা লক করে দিলো শাফকাত। তবুও হাতটা ছাড়ছে না।
সাবা আবারও অস্থির গলায় বলল, “আহ্ ছাড়ুন! ব্যাথা পাচ্ছি তো!”
শাফকাত আরও জোর দিয়ে তার বাহু আঁকড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “শুধু আমি ছুঁতে গেলেই ব্যাথা পাও? না-কি তোমার বয়ফ্রেন্ডের স্পর্শেও একই হাল হয় তোমার?”
মোটেও অবাক হলো না সাবা। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল ফাহিমকে নিয়ে আবারও সন্দেহ করবে শাফকাত।
সাবা তার হাতের বাঁধন থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে বলল, “আপনি আবারও আজে-বাজে কথা শুরু করেছেন?”
শাফকাত অঅগ্নিকণ্ঠে বলল, “আজে-বাজে কথা না? আমি যা বলি তাই তো তোমার কাছে আজে-বাজে মনে হয়। এখন আমি বলবো আজ তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমার অফিসে গিয়েছিল। এখন নিশ্চয়ই বলবে না সেটাও আজে-বাজে কথা।”
কথা বলতে বলতে আলগা হয়ে এসেছিল শাফকাতের হাতের বাঁধন। এই সুযোগে সাবা তড়িৎ গতিতে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে কঠিন গলায় বলল, “প্রথমত, ফাহিম আমার বয়ফ্রেন্ড না। দ্বিতীয়ত, অফিস একটা পাবলিক প্লেস। এখানে একটা মানুষ আরেকটা মানুষের সঙ্গে দেখা করতে আসতেই পারে। আমার অফিসে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে কাজের জন্যে।”
শাফকাত তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, “অফিস পাবলিক প্লেস কিন্তু তোমার কেবিন তো না।”
সাবা ভ্রু কুঁচকে বলল, “কী বলতে চাচ্ছেন?”
শাফকাত উত্তপ্ত স্বরে বলল, “তোমার অফিসে প্রতিদিন যে এত এত মানুষ আসে, তারা প্রত্যেকে কি টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট তোমার কেবিনে কাটায়?”
অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে সাবা কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো শাফকাতের দিকে। এই কি সেই মানুষটা, যে তাকে অতীতের ক্ষতগুলো ভুলে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে? এই কি সেই মানুষ, যে তাকে ট্রমাগুলো থেকে পালিয়ে না বেঁচে তাদের মোকাবেলা করতে শিখিয়েছে?
বিভ্রান্তির প্রচন্ড এক সাগরে গা ভাসিয়ে বেড়াচ্ছে সাবা। বড্ড অচেনা লাগছে এই মানুষটাকে আজ। ছোটখাটো সন্দেহ তো যে কেউই করে। তবে শাফকাত রীতিমত তার চরিত্রে আঘাত হানার চেষ্টা করছে।
সাবা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, “দেখুন, ফাহিম শুধুমাত্র আমার সাথে কথা বলতে এসেছিল। অতীতে আমাদের মধ্যে যা হয়েছিল তার জন্যে সরি বলতে এসেছিল।”
শাফকাত বাঁকা হাসি হেসে বলল, “বাহ্! চমৎকার! আজ সরি বলছে। কাল ভালোবাসি বলবে। পরশু তোমাকে ওর খালি ফ্ল্যাটে যাওয়ার প্রস্তাব দেবে…”
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না সাবা। রাগে ফেটে পড়ে বলল, “আপনি চুপ করবেন? সেই তখন থেকে একটার পর একটা নোংরা কথা বলে যাচ্ছেন!”
“তুমি নোংরা কাজ করলে কোনো দশ নেই। আর আমি নোংরা কথা বললেই যত দোষ!”
দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলালো সাবা। শাফকাতের একেকটা কথা যেন বিষমাখা একেকটা তীরের মতো তার বুকে এসে বিঁধছে। বিষের তীব্রতায় ছটফট করে উঠছে তার হৃদয়টা।
ছটফট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যা সে করেনি, তার জন্যে এভাবে কেউ কখনো আক্রমণ করেনি তাকে।
সাবা জোর গলায় বলল, “আমি কোনো নোংরা কাজ করিনি! মনে মনে গল্প বানানো বন্ধ করুন।”
শাফকাত থমথমে গলায় বলল, “তাহলে পঁয়তাল্লিশ মিনিট বন্ধ কেবিনে কী করছিলে ওই ছেলেটার সাথে? পুরনো প্রেমিককে পেয়ে ভুলে গেছো যে তুমি বিবাহিত?”
সাবার হঠাৎ কী যে হলো! সুতীব্র রাগ খেলে গেল তার সর্বাঙ্গে। এই রাগের উৎস কেবল শাফকাতের বিষমাখা তীরগুলো নয়। জীবনের পদে পদে নেওয়া একেকটা ভুল সিদ্ধান্ত, একেকটা ভুল উপলব্ধি এই রাগের কারণ। শাফকাতকে বিয়ে করা, তার প্রতি ক্ষণিকের মোহকে ভালোবাসা হিসেবে গণ্য করা – এই একেকটা আক্ষেপ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলো সাবার রাগ।
সাবা রাগে ফেটে পড়ে বলল, “আমি করতে চেয়েছিলাম এই বিয়ে? না-কি আমি টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম বিয়েটা?”
শাফকাত শীতল গলায় বলল, “ওহ্ তার মানে তুমি স্বীকার করছো নিজের কুকীর্তির কথা?”
সাবা উচ্চ স্বরে অস্থির ভঙ্গিতে বলল, “মোটেই না! আমি শুধু বলছি আপনি কোন অধিকারে আমার সঙ্গে চেঁচামেচি করছেন? আমি তো চাইনি আপনাকে বিয়ে করতে। আপনার বউ হয়ে এ বাড়িতে থাকতে। আপনিই জোর করে রেখে দিয়েছেন আমাকে। আমি তো সেই প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি ডিভোর্সের কথা! তবুও আপনি আমাকে ডিভোর্স দেননি। সেটা আপনার ব্যর্থতা। এখন আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। আমি যদি অন্য কারও সাথে প্রেম করেও বেড়াই তাতে আপনার কী?”
সাবা হয়তো আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। বলার সুযোগ আর পেলো কই? তার আগেই প্রচন্ড গতিতে একটা চড় এসে পড়লো তার গালে। চড়ের জোর এতটাই ছিল যে টাল হারিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল।
বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে সাবা তাকালো শাফকাতের দিকে। চড় মেরে কোনো অনুশোচনা নেই তার মাঝে। উল্টো ভয়ানক রাগে ফুসছে সে। সাবার বিশ্বাসই হচ্ছে না তার সঙ্গে এমনটা হলো। যে মেয়েটা কোনোদিন বাবা-মা, ভাইয়ার কাছে মার খায়নি সে কিনা চড় খেলো স্বামীর হাতে?
শাফকাত তার খুব কাছে এগিয়ে এসে দুই হাতে তার দুই বাহু আঁকড়ে ধরে বলল, “খুব সাহস বেড়েছে তাই না? আর একবার যদি আমার কানে আসে তুমি ওই ছেলেটার সাথে দেখা করেছো, হাত-পা ভেঙে সারাজীবনের জন্যে এ বাড়িতে বন্দী করে রাখবো।”
সাবার পেছনেই একটা সোফা ছিল। তাকে রীতিমত ধাক্কা দিয়ে সোফার ওপরে ফেলে ভয়ানক প্রলয়ের গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল শাফকাত।
(চলবে)
#লেবু
২৪
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
একটা চড়ে কী-ই বা এসে যায়? হয়তো কিছুই না। কিন্তু কেন মারবে শাফকাত? কে দিয়েছে তাকে সেই অধিকার? একটা কাগজে সাইন করে সাবার গায়ে হাত তোলার লাইসেন্স পেয়ে গেছে সে? আইন তো তাকে বলেছে সাবাকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে, তার সব ধরনের দায়িত্ব নিতে। গায়ে হাত তুলতে তো বলেনি।
বেশ! রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে হয়তো চড়টা মেরে ফেলেছে। সে নিয়ে সাবা খুব একটা ভাবছেও না। চড়ের থেকেও যে জিনিসটা সাবাকে বেশি আঘাত করেছে, তা হলো তার কথাগুলো।
“আজ সরি বলছে। কাল ভালোবাসি বলবে। পরশু তোমাকে ওর খালি ফ্ল্যাটে যাওয়ার প্রস্তাব দেবে…”
রীতিমত সাবার চরিত্রে আঘাত হেনেছে সে। এসব আর মেনে নেওয়া যায় না। সাত মাস ধরে ছেলেটা মানসিক ভাবে অত্যাচার করে আসছে তার। আজ তো গায়েও হাত তুললো। সাবা কেন এসব অত্যাচার সহ্য করবে? সে তো গোবেচারি-অসহায় কোনো মেয়ে নয়। সুশিক্ষিত-আত্মনির্ভরশীল একটা মেয়ে সাবা। ভালো চাকরি করছে, সমাজে একটা সম্মান আছে। সে কেন শাফকাতের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে যাবে?
ধীরে ধীরে উঠে বসলো সাবা। বাইরের পোশাকেই এতক্ষণ বিছানায় পড়ে ছিল অন্ধকার ঘরে। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। গোসল সেরে ডিনার করলো। পুরোটা সময়েই তার মস্তিষ্ক গভীর চিন্তা-ভাবনায় আচ্ছন্ন।
এতদিন সে বুঝতে পারেনি, তবে আজ সে বেশ বুঝতে পারছে সবাই মিলে তাকে বন্দী করে রেখেছে অদৃশ্য এক বেড়াজালে। চাইলেও এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সাবা। বাবা-মায়ের কাছে সে বহুবার গেছে ডিভোর্সের আর্জি নিয়ে। উল্টো-পাল্টা কী সব বুঝিয়ে তারা আবারও এ বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে। এদিকে শাফকাতকে ডিভোর্সের কথা বললেই তো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে সে।
তাহলে কী করবে সাবা? চিরকাল এই দমবন্ধকর জীবন বয়ে বেড়াবে? আগে থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেছিল মেয়েটা। এই বিয়ের পর থেকে জোড়া লাগা তো দূরে থাক, উল্টো আরও সূক্ষ্মভাবে ভেঙে গেছে সে।
নিজেকে এই বন্দীদশা থেকে মুক্ত করার পথ নিজেকেই বের করতে হবে। সাবা সকলকে বুঝিয়ে দেবে সে কারও হাতের পুতুল নয়।
নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিলো সাবা। খুব ভালো করেই সে জানে এই ফোন ট্র্যাপ করা। তার প্রত্যেকটা কথোপকথন দূর থেকে শোনে শাফকাত। তাকে শোনানোর জন্যেই সাবা ডায়াল করলো তার মায়ের নম্বরে।
ওদিকে এত রাতে মেয়ের ফোন পেয়ে যারপরনাই চমকে উঠলেন ফাহমিদা বেগম। তড়িঘড়ি করে ফোনটা রিসিভ করে বললেন, “কী ব্যাপার সাবা? তুই ঠিক আছিস?”
সাবা গম্ভীর গলায় বলল, “ঠিক থাকবো না কেন? মা শোনো, আমি আসছি।”
ফাহমিদা বেগম অবাক গলায় বললেন, “কোথায়?”
সাবা বিরক্ত গলায় বলল, “কোথায় আবার? বাড়িতে!”
ফাহমিদা বেগমের বিস্ময় নির্ঘাত চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে গেছে। বিয়ের পর সাবা বাড়িতে পা রাখেনি। বাড়ির সবকটা ঘরে সে দেখে তার ভাইয়াকে। ভাইয়ার ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে তার ঝুলন্ত প্রাণহীন দেহটা। যন্ত্রণাগুলো এড়াতে সাবা সে কারণেই বাড়ি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে নিজেকে। ফাহমিদা বেগম আর আমির সাহেব বহুবার তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। সেই সাবাই কিনা আজ নিজ থেকে যেতে চাইছে ওই বাড়িতে?
ফাহমিদা বেগম বিস্ময়ে খাবি খেয়ে বললেন, “তুই বাড়িতে আসবি? সত্যি?”
সাবা গম্ভীর গলায় বলল, “কেন যেতে পারি না?”
“অবশ্যই পারিস। কিন্তু, তুই তো বাড়িতে আসিস না এখন আর।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল সাবা। আহনাফের স্মৃতিগুলো এড়াতেই ওই বাড়িতে যায় না সাবা। তবে তাকে এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে হলে ওই বাড়িতেই যেতে হবে। ভাইয়া আজ পৃথিবী থাকলে নির্ঘাত তাকে এভাবে সকলের হাতে বন্দী হয়ে থাকতে দিতো না।
সাবা ভ্রু কুঁচকে কাঠিন্যের স্বরে বলল, “কোনোদিন যাই না, আজ যাবো। আজ রাতে ওখানেই থাকবো।”
ফাহমিদা বেগম উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, “কোনো সমস্যা হয়নি তো সাবা?”
“কিছুই হয়নি! এমনি যেতে ইচ্ছা করলো, তাই যাচ্ছি।”
তড়িঘড়ি করে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো সাবা। শাফকাতকে তবুও বিশ্বাস নেই। সাবার হুট করে এই রাতে বাড়ি বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে আবার উল্টো-পাল্টা সন্দেহ করে বসবে। সেটা এড়ানোর জন্যেই সাবা টোকা দিলো শামার ঘরের দরজায়। শামা জেগেই ছিল।
দরজা খুলে হাসিমুখে বলল, “আরে ভাবি! এসো।”
সাবা যথাসম্ভব স্বাভাবিক গলায় বলল, “এখন আর যাবো না শামা। আমি একটু বাড়িতে যাচ্ছি। তোমাকে বলতে এলাম।”
শামা অবাক গলায় বলল, “এত রাতে?”
সাবা এক মুহূর্ত ভেবে বলল, “হ্যাঁ… আসলে মা ফোন করে বলল কী একটা ইমার্জেন্সী আছে। তাই তড়িঘড়ি করে যাচ্ছি।”
“আঙ্কেল-আন্টির শরীর ঠিক আছে তো?”
সাবা আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল, “হ্যাঁ! মনে হলো অন্য কোনো সমস্যা। যাই গিয়ে দেখি। এমনিতেই তো অনেক দিন যাই না। আজ রাতে ওখানেই থাকবো। মা তো ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই বলে যেতে পারলাম না। মা উঠলে বলে দিও।”
শামা মিষ্টি গলায় বলল, “ঠিক আছে ভাবি।”
সাবা খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, “আর… তোমার ভাইয়া বাড়ি ফিরলে তাকেও বলে দিও।”
শামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সাবা। সামনের সিটে শাফকাতের নিয়োগ করা ড্রাইভার আর বডিগার্ড জহুরুল।
গাড়ি চলছে ঢাকার নীরব রাস্তায়, এদিকে সাবা মগ্ন গভীর চিন্তায়। কালকের মধ্যেই তার মুক্তির সব বন্দোবস্ত সেরে ফেলতে হবে!
একহাতে শক্ত করে ছু/রিটা চেপে ধরে রেখেছে শাফকাত। এই হাত দিয়েই কিছুক্ষণ আগে সাবার গালে চড় মেরেছিল সে। স্বচ্ছ কাঁচের টেবিলে ভেসে যাচ্ছে তার র/ক্তে। তাতে অবশ্য বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। ছেলেটার কি ব্যথাও অনুভব হয় না? হয়তো না। হলে আরেক হাত দিয়ে কি এভাবে অনায়েসে ড্রিংক করতে পারতো শাফকাত?
সাবাকে ঠিক ওই জায়গায় ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। গাড়ি নিয়ে সোজা চলে আসে ‘The Paradise’-এ, নিজের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে। ড্রিংকসের নেশায় ডুবে ভেতরকার অস্থিরতা দূর করতে ব্যস্ত সে।
শাফকাত আলম এমনই একটা মানুষ যার জীবনে কোনো আফসোস নেই, কোনো আক্ষেপ নেই। সে যা করে, যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই করে। তার ধারণা, ভুল সে কোনোকালেই করতে পারে না। আজ সে ধারণা শূন্যে মিলিয়ে গেছে। ভুল সে করেছে বটেই, ভুলের জন্যে অনুতাপেরও কমতি নেই তার মাঝে।
এই যে সাবাকে তার নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা, সে যা চাইবে সাবা তাই করবে এমনটা প্রত্যাশা করায় কোনো ভুল আছে বলে সে মনে করে না। সাবার ভালোটা চায় বলেই হয়তো তার ওপর নজরদারি করতে গিয়ে নিজেকে বাঁধা পর্যন্ত দেয় না।
তবে আজ সে যা করেছে তা নেহায়েত বাড়াবাড়ি। শাফকাত চায় না সাবা তার প্রাক্তনের সাথে দেখা করুক, কথা বলুক, বন্ধুত্বে জড়াক। ফাহিম তার প্রাক্তন বলে শাফকাত যে তাকে ছেলেটার কাছ থেকে দূরে রাখতে চাইছে ব্যাপারটা এমন নয়।
বিয়ের পর পর শাফকাত যখন সাবার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছিল, তখনই জানতে পেরেছে এক হে/রোইন খোরের সাথে তার পুরনো সম্পর্কের কথা। সাবাই যে ছেলেটাকে ধরিয়ে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষের কাছে তাও জানতে পারে। সে জন্যেই সাবাকে ছেলেটার থেকে দূরে রাখতে এত বাড়াবাড়ি তার। যে ছেলে অল্প বয়সে মা/দক সেবনের দুঃসাহস করতে পারে, পরিণত বয়সে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে তার সাহস নির্ঘাত আকাশ ছুঁয়েছে।
সাবার কারণেই ফাহিমের জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে যায়। এক বছর তাকে রিহ্যাবে থাকতে হয়েছিল। সাবার প্রতি তার ক্ষোভ জমে থাকা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। হয়তো ক্ষোভের বশেই দেশে ফিরে ঘন ঘন দেখা করছে সাবার সঙ্গে। সুযোগ বুঝে তার কোনো ক্ষতি করবে বলে।
সে যাই হোক না কেন। শাফকাত চাইলেই পারতো তার এই আশঙ্কার কথাটা সাবাকে বুঝিয়ে বলতে। নিতান্ত অবুঝ মেয়ে সাবা নয়। বুঝিয়ে বললে সে ঠিকই বুঝতো।
তবে বুঝিয়ে বলার মানুষটারই তো মাথা বিগড়ে গেছে রাগে। সাবার অফিসের সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমের একটা ছেলের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ করে রেখেছিল শাফকাত। সে চাইলেই যাতে তাকে সাবার কেবিনের বাইরের ফুটেজ সরবরাহ করা হয়। আজ যখন শাফকাত দেখলো, ওই ছেলেটা আবারও এসে সাবার সঙ্গে দেখা করতে, সাবাও সব কাজ ফেলে রেখে জীবনের মূল্যবান পঁয়তাল্লিশ মিনিট তাকে দিয়েছে – রাগে সবটা কেমন গুলিয়ে গেল।
রাগের সঙ্গে কিঞ্চিৎ ঈর্ষাও বোধ হয় বোধ হলো। কই? সাবা তো কোনোদিন তাকে এতটা সময় দেয়নি। হে/রোইনখোর প্রাক্তনকে এত সময় দেওয়ার কী হলো?
রাগ থেকে হোক কিংবা ঈর্ষা থেকেই হোক, শাফকাত আজ যা করেছে মোটেও ঠিক করেনি। মেয়েটাকে সন্দেহ সে করে না। রাগ মেটানোর জন্যেই ওই বাজে কথাগুলো বলেছিল। মেয়েটার গায়ে হাত তুলে তো সব সীমা অতিক্রম করে ফেলল শাফকাত।
একটা শিক্ষিত, বিবেকবান ছেলে হয়ে সে কী করে পারলো বউয়ের গায়ে হাত তুলতে? তার সঙ্গে তাহলে সমাজের অসংখ্য অত্যাচারী স্বামীদের পার্থক্য আর রইলো কোথায়? এমন তো না যে সে সাবাকে সহ্য করতে পারে না। শাফকাত তো সাবাকে… ভালোবাসে?
নিজের র/ক্তাক্ত হাতটার দিকে তাকালো শাফকাত। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে উঠেছে হাতটা। না জানি কতগুলো সেলাই লাগবে। লাগুক গিয়ে! এই হাত সাবাকে আঘাত করেছে, এটাই তো তার প্রাপ্য।
এক চুমুকে গ্লাসের বাকি ড্রিংকসে গলা ভেজালো শাফকাত। এক হাতেই আবারও বোতল থেকে ঢাললো গ্লাসে। এক ফোঁটা ব্যাথাও তার অনুভব হচ্ছে না। বরং মারাত্মক এক উপলব্ধিতে শিউরে উঠলো তার গোটা অন্তরাত্মা।
একটা সময়ে মনে হতো মেয়েটাকে সে সহ্যই করতে পারে না। তার জীবনে সাবার আগমন কেবলই ঝামেলা বাড়ানোর জন্যে। তবে আজকাল তাকে ছাড়া সবটাই যেন অসহ্য লাগে। কিছুদিন আগে মানসিক আঘাতগুলোর যন্ত্রণায় সাবা যখন ছটফট করছিল, ছটফট করছিল শাফকাতের মনটাও।
মারাত্মক উপলব্ধিটা হলো, শাফকাত সাবাকে ভালোবেসে ফেলেছে। ভালোবাসে বলেই অন্য একটা ছেলের সঙ্গে তাকে দেখে গা জ্বলে ওঠে তার। ভালোবাসে বলেই তাকে মানসিক আঘাত করে কয়েকগুণ আঘাত পাচ্ছে সে নিজে। ভালোবাসে বলেই তাকে শারীরিক আঘাত করে, আঘাত করছে নিজেকে।
(চলবে)