#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(আঠারো)
#Mst.Shah Mira Rahman
আজ সুলেমান মীরা কে তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান এক অনুভূতি উপহার দিয়েছে।মীরা হতবাক, হতভম্ব।তাদের গাড়ি যখন একটা অনাথ আশ্রমের সামনে দাঁড়ালো তখনই মীরার মনে অভাবনীয় কিছু ভাবনারা হানা দিল।সেই ভাবনা গুলো আরো গভীর হলো যখন আশ্রমের ভেতর শাহিন মির্জা, সন্ধ্যা, সালমান আর সকালের সাথে দেখা হলো।এত বছর পর এই মানুষগুলোদের একসাথে দেখে মীরা আবেগে আপ্লুত হলো।খুশিতে আত্মহারা হয়ে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।অভিমানী সন্ধ্যা আগলে নিল মীরা কে।অনেক অভিযোগ জমে আছে তার এই মেয়েটার ওপর। নিষ্ঠুর মেয়ে কী করে পারলো এতগুলো দিন তাদের ছেড়ে থাকতে।তবে আজকের দিনে মুখ ফুটে একটা কথাও বললেন না।এরই মাঝে এক মধ্য বয়স্ক শাড়ি পরিহিতা মহিলা এগিয়ে এলেন তাদের দিকে।তার হাতে তিন মাসের একটি ফুটফুটে বাচ্চা।সুলেমান তার হাত থেকে বাচ্চাটি কোলে নিয়ে মীরার দিকে এগিয়ে গেল।মীরা তাকিয়ে রইল সুলেমানের দিকে।সুলেমান তার কোলে বাচ্চা মেয়েটাকে দিয়ে শান্ত গলায় বলল,
“আমাদের সন্তান।দেখো একদম আমাদের মতো।”
মীরা হতভম্ব।ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি ফেলে তাকালো তার কোলে থাকা মেয়েটার দিকে।বুকের ভেতরটা কেমন কাঁপছে।”তাদের সন্তান,তাদের মেয়ে” কথাটা মগজের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।অনুভূতি গুলো কেমন বেসামাল।মীরা হাত বোলালো বাচ্চাটার মুখে অতঃপর কপালে চুমু এঁকে সুলেমানের দিকে তাকালো।সুলেমান হাসল।নিজেও মীরা কপালে চুমু দিয়ে মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি খুশি?”
মীরা মাথা নাড়ালো।সে খুশি।সুলেমান চেয়ে রইল তার অভূতপূর্ব মুখখানায়।
____
আশ্রমের সব ফরমালিটিজ শেষ করে সবাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরলো সুলেমান।সাথে মীরাও আছে।তার কোলে তিন মাসের বাচ্চা।একটা সময় কোনো এক দুর্ঘটনাকে সাক্ষী করে গর্ভাবস্থায় এই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল মীরা।আর আজ যখন আবার ফিরল এই বাড়িতে তখন তার কোলে তাদের তিন মাসের বাচ্চা। সুলেমান তাকে স্বপরিবারে,স্বসম্মানে নিজের বাড়িতে তুলল।মির্জা বাড়িতে মূহূর্তেই হৈচৈ পড়ে গেল।সবাই ঘিরে ধরল মীরাকে।আয়াত দৌড়ে এসে কোলে নিল মীরার কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটাকে।নাক টিপে গাল টেনে নাম ও ঠিক করে ফেলল।”তুতুল”। সালমান নাক কুচকালো।এ আবার কেমন নাম।আয়াত চেতে উঠলো এই নামেই সবাইকে ডাকতে হবে তার ভাতিজি কে।অন্য কোনো নাম গ্যারেন্টেড নয়।সবাই হাসল তার কথায়।ঠিক হলো এই নামেই ডাকা হবে তাকে।পড়ে আকিকা দিয়ে ভালো নাম ও রাখা হবে। হায়াত দূর থেকে তাকিয়ে রইল মীরার দিকে।মীরার চোখ মুখ উজ্জ্বল। হায়াত এগিয়ে গেল তার দিকে।ডান হাত টেনে ধরল মীরার।মীরা তাকালো।মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছো হায়াত?”
ফুঁপিয়ে উঠলো হায়াত।নাকের জল চোখের জল এক করে ক্ষমা চাইল মীরার কাছে।মীরা অবাক হলো।জড়িয়ে ধরল হায়াত কে।
“ছিঃ হায়াত!ওসব কথা আমি মনেও রাখিনি।”
“তুমি ক্ষমা করেছ তো আমায়?”
“তুমি আমার ছোট বোনের মতো।সামান্য এই সকল বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে আমি কিসের বড় বোন হায়াত।”
হায়াত কথা বলল না।মীরা কে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল।সালমান তাকিয়ে রইল কান্নারত হায়াতের দিকে।মাহিন মির্জা হাত বুলিয়ে দিলেন মীরার মাথায়।
“আমায় ক্ষমা করতে পারবি তো মা।”
মীরা বুঝলো মাহিন হয়তো হায়াতের কথা টেনেই এমন বলছে।আঁতকে উঠল সে।না না করে বলল,
“এভাবে বলছেন কেন চাচা?আপনি আমার আরেক বাবা।আমার আপন।এভাবে বলে আমায় ছোট করবেননা দয়া করে।”
মাহিন বুঝলো সুলেমান মীরাকে কিছু জানায় নি।মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।মীরার চোখের ঘৃণার দৃষ্টি সে সহ্য করতে পারতো না।এত কিছুর পরও মীরা সিদ্ধান্ত কে মিস করল।ভাইটা এলো না কেন তার জীবনের এমন একটি মুহূর্তে।
____
সুলেমান মাত্রই গোসল সেড়ে বের হলো।টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে তাকালো বেডের দিকে। প্রশান্তিতে বুকটা ভরে উঠলো তার। কতদিন ফাঁকা পড়ে ছিল তার এই ঘর।আজ যেন পূর্ণতা পেল।মীরা ঘুমন্ত তুতুল কে বেডের ওপর শুইয়ে দিয়ে এগিয়ে এলো সুলেমানের কাছে।দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে সুলেমান উদম বুকে থুতনি রাখল।মুখ উপরে করে চেয়ে রইল সুলেমানের দিকে। সুলেমান তাকালো।মীরা হাসল।ওভাবে ধরে রেখেই বলল,
“আমি খুব খুশি।”
একহাতে মীরার কোমড় চেপে অন্য হাতে মীরার গোছালো চুল আরেকটু গুছিয়ে দিয়ে সুলেমান ধীর কণ্ঠে বলল,
“আমিও খুশি।”
“আপনি আমার ছোট বড় সব ইচ্ছেকে প্রধান্য দেন।”
“তুমি ভালো থাকা মানে আমি ভালো থাকা।তাই তোমার ভালো থাকার সকল ইচ্ছে পূরণ করতে আমি বাধ্য।”
মীরা হাসল। সুলেমানের বুক থেকে থুতনি তুলে ওখানেই ঠোঁট চেপে ধরল।
“আপনাকে ভালোবাসি ব্যারিস্টার।অনেক অনেক ভালোবাসি।”
সুলেমান আগলে নিল তাকে।সুখ সুখ অনুভুতিতে ভড়ে মন প্রাণ। বুকের ভেতরটা শীতলতায় ছেয়ে গেল।মুখে উচ্চারণ করল,
“আমিও।”
____
হায়াত বেডের ওপর বসে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করছে। সালমান কিছুক্ষণ চেয়ে রইল সেদিকে।অতঃপর থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই বসল,
“এত কি করছিস ফোনে?”
“বাবুর জন্য শীতের পোশাক দেখছি।এখন তো অনেক শীত পড়া শুরু করেছে।এসো তুমিও পছন্দ করো।”
সালমান এগিয়ে গিয়ে বেডের ওপর বসল।কিন্তু ফোনের দিকে তাকালো না।হায়াতের দিকেই চোখ আবদ্ধ রইল।
“হায়াত।”
“হুম।”
“চল আমরাও প্ল্যানিং শুরুতে করি।”
“কিসের প্ল্যানিং?”
“বেবি প্ল্যানিং।”
চমকে উঠলো হায়াত। হুট করেই লজ্জা পেয়ে গেল।কান মুখ লাল করে উঠে যেতে নিলে আটকে দিল সালমান।টেনে নিল নিজের কাছে।
“কোথায় যাচ্ছিস?”
হায়াত চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইল। লোকটাকে কি করে বোঝাবে তার লজ্জা।এত কেন লজ্জা করছে তার?কিছুদিন আগেই এক ভয়ংকর সত্য এক অনুভূতির সম্মুখিন হয়েছে তাই কি!লোকটা কে কি করে বলবে তার মনোবাসনা ইতিপূর্বেই পূরণ হতে চলেছে। লজ্জায় তো হায়াত চোখ তুলেই তাকাতে পারছে না বলা তো দূরেই থাক।সালমান দেখল হায়াতের লজ্জা।হাত দ্বারা পেটের ওপর গভীর স্পর্শে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল হায়াত কে। হায়াত কেঁপে উঠলো।
“হায়াত!”
“হুম।”
“চল প্রোসেস শুরু করে দি।”
হায়াত আতকে উঠল।
“এখন!”
“তো কখন?রাতে?”
“না।”
“হ্যা।”
“না।”
সালমান বেডের ওপর ছুড়ে ফেলল হায়াত কে। নিজে তার ওপর আধশোয়া হয়ে তাকালো হায়াতের দিকে। হায়াত আকুতি করল,
“এখন না প্লিজ।”
“না এখন।চুপ।”
সালমান হায়াতের গালে অধর স্পর্শ করল।অতঃপর তার গলায়।হায়াত ছটফট করল।সালমান ছাড়ল না।বরং নিজের অধর চেপে ধরল হায়াতের নরম কোমল অধরজোড়ায়। হায়াত ছাড়ানোর চেষ্টা করল।ব্যর্থ হয়ে শেষে নিজেও মিশে গেল নিজের একান্ত পুরুষটির সাথে।দুই হাতে জড়িয়ে ধরল তার গলা।মিলে মিশে এক হলো দুটো শরীর দুটো মন।
____
একটা পুরোনো গোডাউনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সিদ্ধান্ত।তার পাশে আনোয়ার বুশরা। সিদ্ধান্ত কে জানানো হয়নি তারা কোথায় এসেছে। কিন্তু বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত আগেই বুঝেছে তার চাচার পরিকল্পনা। তবুও চুপ আছে। আনোয়ার দ্রুত হেঁটে গোডাউনের ভেতর ঢুকলো। সিদ্ধান্ত তার পেছনে গেল।চারিদিকে মৃদু মন্দ আলো ছড়িয়ে আছে।রাতের অন্ধকার এই ছোট ছোট বাল্ব গুলো কাটিয়ে তুলতে ব্যর্থ। সিদ্ধান্ত চারিদিকে চোখ বুলালো।দুই একটা লোক এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে নিজেদের কাজ করছে।চারিদিকে এখানে ওখানে অনেক ধরনে কার্টুন পড়ে আছে। সিদ্ধান্ত রা একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো।একটা সুরেলা শিষ কর্ণগোচর হলো খুবই তীক্ষ্ণ ভাবে।এদিক ওদিক থেকে নজর সরিয়ে এবার সামনের দিকে তাকালো সিদ্ধান্ত।একটা যুবক চেয়ারে বসা।মাথা এলিয়ে দিয়ে এক হাত কপালে রেখে ঠোঁট গোল করে শিষ বাজাচ্ছে।পা দুটো সামনে চেয়ারে ওঠানো। সিদ্ধান্ত চোখের দৃষ্টি দৃঢ় করলো।তাদের দেখে পাশ থেকে মধ্য বয়স্ক কালো মতো এক লোক যুবকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ওরা আইসা পড়ছে।”
শিষ বন্ধ হলো।শোনা গেল এক ভরাট পুরুষালি কণ্ঠ।
“কারা আইছে?”
লোকটিকে উত্তর দিতে হলো না।যুবকটি নিজেই মাথা তুলে তাকালো।দেখল সিদ্ধান্ত কে। সিদ্ধান্ত তাকিয়ে রইল যুবকটির দিকে।সে জানে এই যুবক কে?তারপরও মনে মনে প্রশংসা করল তার রূপের।ওমর কিছুক্ষণ সিদ্ধান্তকে অবলোকন করে স্বাভাবিক গলায় বলল,
“ওহ তুমি!আসো বসো এখানে।”
পায়ের নিচে থাকা চেয়ার টা সিদ্ধান্তর দিকে এগিয়ে দিল ওমর। সিদ্ধান্ত বসল না। কিন্তু বুঝল ছেলেটার ব্যবহার রুচিশীল। বয়স কত হবে ছেলেটার?সাতাশ কি আটাশ?ওমর পাশে কালো মতো লোকটি কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এদের জন্য চা পানির ব্যবস্থা করতে বলো আব্বা।যতই হোক নতুন মেহমান বলে কথা।”
ওবাইদুল হাক ছাড়লো সুজন কে।
ওমর আবার তাকালো সিদ্ধান্তর দিকে।
“আরে ভাই তুমি এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন?আসো বসো।দুটো কথা বলি তোমার সাথে।”
সিদ্ধান্ত কথা বাড়াল না।চুপচাপ বুক টানটান করে বসল।তার চোখ কান এদিক ওদিক খোলা রাখলো।ওমর দেখল।মৃদু গলায় বলল,
“তা কেমন যাচ্ছে দিন কাল? অবশ্য ভালো তো যাওয়ার কথা নয়।বিয়ে করেছো তিন বছর অথচ এখন অবধি বাসরটা সাড়তে পারো নি। ইটস সো স্যাড ফর ইউ মি.সিদ্ধান্ত।”
সিদ্ধান্ত তাকিয়ে রইল তার দিকে।ছেলেটা কথা প্যাচাচ্ছে আসল কথায় আসছে না।ওমর বুঝলো সিদ্ধান্তর বিরক্তি।মৃদু হেসে বলল,
“তুমি আমার খুব পছন্দের মানুষ বুঝেছো।যারা বেইমানি করে তাদের বেশ পছন্দ আমার। তোমার চাচাও বেইমানি করেছে নিজের ভাইয়ের সাথে।দেখো এখন সে আমার কত কাছের মানুষ।তাই না বুশরা সাহেব?”
আনোয়ার হাসল।সেই হাসি দেখে গা রি রি করে উঠল সিদ্ধান্তর। চোয়াল শক্ত হলো।ওমর আবার বলল,
“যারা বেইমানি করে তারা আমার পছন্দ।কিন্তু আমার সাথে বেইমানি করাটা আমার পছন্দ নয়।”
ওমরের চোখ মুখ শক্ত হলো।বাম হাতের দুই আঙ্গুল দ্বারা কপাল ঘষে বলল,
“মারাত্মক পরিকল্পনা করেছিস তোরা।তুই আর ওই ব্যরিস্টার মিলে আমার এতদিনের স্বাধের ব্যবসাকে একবারে লাটে উঠিয়ে দিয়েছিস। বাহ্ বাহ্। দারুন প্ল্যানিং।বাট আই ফা*ক ইউ এন্ড ইউর রা*বিস প্ল্যানিং।
আক্রোশের সাথে চেঁচিয়ে উঠলো ওমর।তাদের জন্য আনা চায়ের ট্রে টা হাত দিয়ে ঝটকা মেরে ফেলে দিয়ে কোমড়ে গুঁজে রাখা রিভলবার বের করে তাক করল সিদ্ধান্তর দিকে।
“এত নাটক আমি করতে পারবো না।এখন তুই মরবি।তারপর তোর জানের দুলাভাই ওই ব্যরিস্টার মরবে।”
বলেই ওমর রিভলবার লোড করে ট্রিগারে চাপ দেবে তার আগেই কোথা থেকে একটা গুলি এসে লাগল তার হাতের রিভলবার বরাবর।হাতের রিভলবার পড়ে গেল। রক্ত ঝরল অবিরাম।ওমর তাকালো আশেপাশে। সিবিআই তাদের পুরো গোডাউন ঘেরাও করেছে।রাগে কাঁপতে কাঁপতে তাকালো সিদ্ধান্তের দিকে।বুঝলো এতক্ষণ যাবৎ তার চুপ থাকার কারন।ওমর চট করে নিজের রিভলবার হাতে নিয়ে একটা পিলারের আড়ালে দাঁড়ালো। সুলেমান এগিয়ে এলো সিদ্ধান্তর কাছে।সে ঠিক আছে কি না জিজ্ঞেস করলে সিদ্ধান্ত জানালো সে ঠিক আছে। সুলেমান তাকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য উদ্ধুত হলো কিন্তু হঠাৎ করেই একটা গুলি ছুটে এসে লাগল সিদ্ধান্তর বাহুতে। আর্তনাদ করে উঠলো সে। সুলেমান ধরল তাকে।তাকালো আশেপাশে।গুলিটা ওমর ছুড়েছে।ইতিমধ্যেই ওখানে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। আনোয়ার বুশরা আহত হয়েছেন।বুকের বাম পাশে গুলি লেগেছে। সুলেমান নিজের সরকারি রিভলবার বের করে গুলি ছুড়লো ওমরের দিকে ওমর সরে গেল।গুলি লাগল তার বাবা ওবাইদুলের পায়ে। সুলেমান দেরী করল না সিদ্ধান্ত কে নিয়ে বেরিয়ে পরল। এমনি ও তার এখানে কোনো কাজ নেই।সে তার দায়িত্ব পালন করছে।সকল প্রমাণ সহ অপরাধীদের সিবিআইদের সামনে তুলে ধরেছে। এখন তদের ধরা সিবিআইদের কাজ।সে শুধু এখানে এসেছিল সিদ্ধান্তর জন্য। সিদ্ধান্ত তার দায়িত্ব।তার স্ত্রীর ভাই তার বোনের স্বামী। সিদ্ধান্তর কিছু হয়ে গেলে সুলেমান এই দুই নারীদের কী জবাব দেবে?এত কিছুর পরও সুলেমান এক নিষ্ঠুরতার কাজ করেছে।আহত আনোয়ার কে ওখানেই ফেলে রেখে এসেছে।যে কি না তার কিছুক্ষণ পর ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।
ওমর পালানোর রাস্তা খুঁজল। এগিয়ে গেল ওবাইদুলের দিকে।
“ওঠো পালাতে হবে ওখান থেকে।”
ওবাইদুল উঠতে পারল না।পা ধরে আর্তনাদ করে গেল।ওমর ক্ষেপে গেল।
“শা*লার বাপ ওঠ তাড়াতাড়ি।নয়তো থাক এখানে গুলিখোরের বংশধর।যেখানেই যায় একটা করে গুলি শরীরে বিন্দায় নিয়া আসে।”
ওমর ওবাইদুল কে ছেড়েই গোডাউনের পেছন দিকে চলে গেল। সিবিআই এর লোকজন ওবাইদুল সহ বাকি সবাইকে আটক করল কিন্তু ওমর কে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
চলবে🌺
#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(উনিশ)
#Mst.Shah Mira Rahman
ছোট থেকেই বস্তিতে বেড়ে ওঠা ওমরের।মা রিয়ানা একজন প*তিতা।ওবাইদুল এর সাথে প*তিতালয় থেকে পালিয়ে এসে একটা ছোট্ট বস্তিতে আশ্রয় নেয়।প**তিতালয় থেকে পালিয়ে এলেও এই জীবন থেকে নিজেকে সরাতে পারেনি রিয়ানা।কিছুদিনের মধ্যে এখানে ও ওই একই কাজে জড়িয়ে পড়ল।দিনের মাঝে কত পরিচিত অপরিচিত লোক এসে তাকে নিয়ে ঘরের দরজা লাগাতো।ছোট্ট ওমর তখন নির্নিমেষ চেয়ে রইত সেই দরজার দিকে। ওবাইদুলের নিজস্ব ইনকাম বলতে কিছুই ছিল না।বউ যা কামাতো তা দিয়ে সংসারের পাশাপাশি তার ম*দ জু*য়ার আড্ডাখানা চলতো।দুজনের দুজনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা জীবনের মাঝে অথৈ সাগরে ভাসল ছোট্ট ওমর।একা নিঃসঙ্গ ঘুরে বেড়াতো রাস্তায় রাস্তায়।এক বেলা খেলে আর এক বেলা খাবার জুটতো না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?ক্ষুদার জ্বালায় একসময় এ দোকানে ও দোকানে চু*রি করা শুরু করল। তবুও বাসায় যেত না পেট পুড়ে খাবার আশায়।চু*রি করত ধরা পড়তো।আবার চুরি করতো।সময় এভাবেই গড়ালো।একসময় চুরির পাশাপাশি আরো ছোটখাটো অন্যায় কাজে জড়িয়ে পরল।হাত দিয়ে টাকা ছুঁয়ে দেখল।নেশা লাগল তার টাকা ইনকামের।এর মাঝে বারো বছর বয়সে তার শরীরের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো।রিয়ানা অসম্ভব সুন্দরী রমনী।তারই আদল পেয়েছে ওমর।তার সৌন্দর্য ও শরীরি পরিবর্তন চোখে পরল রিয়ানার।কিভাবে চেয়ে থাকতো তার দিকে।ওমরের সেই দৃষ্টি সহ্য হতো না। বাড়িতে আসা কমিয়ে দিল।পনেরো বছর বয়সে তার মা তার সৌন্দর্য কে কাজে লাগালো।তার মাধ্যমে সুন্দরী মেয়েদের ফাঁসিয়ে নিজের কাছে এনে তাদের দিয়ে দে*হ ব্যবসা করাত।ছোট থেকে এই পরিবেশে বড় হওয়া ওমরের কাছে এসব কিছুই ছিল না।সে শুধু দেখল টাকা।যখন তার বয়স সতেরো বছর তখন তার মা রিয়ানা নিজেই তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্র*লুব্ধ করার চেষ্টা করে।রাগে শরীর রি রি করে ওঠে ওমরের।হাতের কাছে থাকা ছু*ড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে মায়ের শরীরে। র*ক্তাক্ত রিয়ানা ওখানেই শ্বাস ত্যাগ করে।ওমর চৌকি থেকে চাদর টেনে ঢেকে দেয় রিয়ানার অনাবৃত শরীর।এটাই ছিল তার জীবনের প্রথম খু*ন।নিজের মাকে হ*ত্যার দায় এসে পড়ে তার ঘাড়ে। পুলিশের হাত থেকে বেঁচে পালিয়ে যায় ওমর। নতুন শহরে নতুন নামে বাচে ওমর। কিন্তু টাকার নেশায় কিছুদিনের মধ্যেই আবার একই কাজে জড়ায়।ওই শহরের ই এক প*তিতা পল্লীর আম্মার সাথে তার পরিচয় হয়।প্রেমের জালে মেয়েদের ফাঁসিয়ে নিয়ে আসে আম্মার কাছে। বিনিময়ে টাকা নেয়।বাইশ বছর বয়সে তার পরিকল্পনা বড় হয়।এবার আর দেহ ব্যবসা নয় নারী পাচার কাজে হাত লাগায়। বিভিন্ন জেলা থেকে মেয়েদের অপহরণ করে তাদের বিদেশে পাচার করা হয়।তার কাজের কেনো প্যাটার্ন থাকে না বলেই পুলিশ সে অবধি এখনো পৌছাতে অক্ষম।অমর বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত। কখনো ডক্টর কখনো আইনজীবী কখনো চাকরিজীবী তো কখনো বেকার সেজে মেয়েদেরকে নিজের জালে ফাঁসানোই ছিল তার অন্যতম কাজ।আর এসব কাজে তাকে সহায়তা করল তার বাবা ওবাইদুল।সুলেমান কয়েকবছর যাবৎ স্টাডি করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।তাকে সাহায্য করেছে সিদ্ধান্ত।এ পর্যায়ে এসে তার সকল আস্তানায় সিল করেছে আইন।একশোর ও বেশি নারী উদ্ধার হয়েছে তার গোপন আস্তানা থেকে।তার সব লোকজন দের ধরা পড়লেও ওমর নিজেই এখনও লাপাত্তা।
____
সিদ্ধান্ত হসপিটালে।হাত থেকে গুলি বের করা হয়েছে।আপাতত সুস্থ।আনোয়ারের মৃ*ত্যুতে বুশরা বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা আবার চাচার মৃ*ত্যুতে ভেঙে পরে মীরা।হুমায়ূনের পর মীরা আনোয়ার কেই বাবা হিসেবে মেনেছে।সেই লোকটার এমন মৃ*ত্যু মানতে পারলো না সে।কেদে কেটে একসার হলো।সুলেমান সামলালো তাকে। সিদ্ধান্তর কোনো অনুভূতি কাজ করল না চাচার মৃ*ত্যুতে। সুলেমান যখন হসপিটালে তার কাছে এলো তখন মৃদু গলায় বলল,
“আমার বাবা নিরপরাধী ছিলেন।আপনি জানতেন।”
“হুম।”
“মিথ্যে কেন বলেছিলেন।”
“সত্যি বললে আজ এতদূর অবধি আসা হতো না। তোমার বাবা অপরাধী এটা ভেবে তুমি যেমন নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলে যদি তুমি জানতে তোমার বাবা নিরপরাধী এবং তাকে ফাঁসিয়ে হ*ত্যা করেছে তোমার চাচা তাহলে তুমি নিয়ন্ত্রণ হারাতে।না চাইতেও এমন ব্যবহার করে ফেলতে যা তোমার চাচার চোখে সন্দেহজনক হতো।”
সিদ্ধান্ত চুপ করে রইল।সুলেমান সত্যি বলছে।নিজেকে হয়তো আটকাতে পারতো না সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার শান্ত গলায় বলল,
“এসব কিছু মীরাকে জানানোর প্রয়োজন নেই।কষ্ট পাবে ও।”
_____
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল দুই ভাইয়ের।তবে হুমায়ূন যতটা সুনাম অর্জন করেছিল আনোয়ার তা পারেনি।মনে মনে ঈর্ষা করত সে হুমায়ূন কে।তার ক্ষমতার লোভ ছিল।সেই লোভ থেকেই সে জড়ায় নারী পা*চার চক্রের সাথে।অল্প বয়সী মেয়ে সংগ্রহ করা তার কাজ ছিল।এর মাঝে পুলিশের নজর পড়ে তাদের ওপর। আনোয়ার ষড়যন্ত্র করে হুমায়ূন কে ফাঁসায়।সকল প্রমাণ তার বিরুদ্ধে কাজে লাগায়।স্ত্রী সন্তানদের ক্ষতির হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখে তাকে। কিন্তু শুনানির পর সুলেমান আবার এই কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। হুমায়ূনের সাথে দেখা করে তাকে আশ্বাস দেয় দ্বিতীয়বার কেস রি ওপেন করা হবে।এসব কিছু জানার পর আনোয়ার হুমায়ূন কে পরিকল্পিতভাবে হ*ত্যা করে।হুমায়ূনের হার্টের অসুখ ছিল। সেটিকেই কাজের লাগায়। তার ওষুধ খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।যার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।একসময় তা হার্ট অ্যাটাক এ পরিণত হয়।সঠিক সময়ে চিকিৎসার ওভাবে মৃ*ত্যুবরণ করেন তিনি।
____
সিদ্ধান্ত হসপিটালে জানতে পেরে সকাল ছুটে এসেছে। পরিবার পরিজনকে উপেক্ষা করে ঝাপিয়ে পড়েছে তার বুকে। সিদ্ধান্ত দেখল সকালের ক্লান্ত মুখশ্রী। সকাল কাঁদছে না।অথচ তার চোখ মুখ অগোছালো। সিদ্ধান্ত আলগোছে আগলে নিল সকালকে। সকাল জড়িয়ে আসা গলায় বলল,
“আর দূরে সরাবেন না প্লিজ।মরে যাবো।”
মির্জা বাড়ির সবাই অবাক হলো তাদের দেখে। সন্ধ্যা আহাজারি শুরু করে দিল।ছেলে মেয়েদের বিয়ে নিয়ে এতদিন সে চিন্তায় চিন্তায় মরতে বসেছিল অথচ তার ছেলেমেয়েরা তলে তলে ঠিক নিজেদেরটা বুঝে নিয়েছে।একজন জোড় করে বিয়ে করে বউ ঘরে তুলল। আরেকজন সেই তিন বছর আগেই বিয়ে করে বসে আছে।কিছুদিন পর এসে হয়তো কোলে বাচ্চা ধরিয়ে বলতো,
“দেখো মা,তোমার নাতি।একদম তোমার মতো হয়েছে তাইনা?”
সন্ধ্যা কে চুপ করালো শাহিন মির্জা। সত্য মিথ্যা সব পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করা হলো আবার বিয়ে দেওয়া হবে তাদের।একমাস পর বড় করে অনুষ্ঠান করে তাদের বিয়ে হবে সাথে সালমান হায়াতের রিসেপশন ও হবে।সিদ্ধান্ত চোখ মুখ কুঁচকালো।এই বাপ ছেলে দুজনের জন্য এখন তাঁকে আরো একমাস অপেক্ষা করতে হবে বউকে ঘরে তুলতে।তিন বছর কি কম ছিল।এরা দুজন মিলে কি তাকে চিরকুমার বানিয়ে মারার পণ করেছে!
শোকের কাঁটা ছিঁড়ে ধীরে ধীরে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করল।এরই মাঝে আরো একটি সুখবর হলো মির্জা বাড়িতে। হায়াত মা হতে চলেছে।কথাটা জানতে পেরে সালমান বাকরুদ্ধ।মির্জা বাড়ির সবাই হৈচৈ লাগিয়ে ফেলল।লজ্জায় হায়াত আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল সোফার এক কোণায়। হায়াত কে একা পেল না সালমান বেশ কিছুক্ষণ। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে এলো তার। হায়াত আড়চোখে একবার তার দিকে তাকাতেই শক্ত চোখে তাকালো সালমান। হায়াত পূর্ণ দৃষ্টি ফেলল তার ওপর। সালমান ইশারায় তাকে ঘরে যেতে বলল। হায়াত না না করল। সালমান চোখ গরম করে তাকাতেই বসার ঘর থেকে উঠে সুরসুর করে হায়াত ঘরের দিকে এগোলো।তার পিছু পিছু গেল সালমান। সবাই দেখল তাদের।মুখ লুকিয়ে হাসল কিছুক্ষণ।
____,
ঘরে এসেই হায়াত কে কাছে টেনে নিল সালমান। হায়াত মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।
“আমাকে আগে বলিস নি কেন আমার বাচ্চার কথা।”
হায়াত এদিক ওদিক তাকালো।মৃদু কণ্ঠে বলল,
“আমার লজ্জা করে।”
“বাড়ির সবাই কে কেমনে বললি তাহলে?”
“আমি বলিনি সবাই বুঝে নিয়েছে।”
“না বুঝলে বলতি না?”
হায়াত মাথা নাড়ালো বলতো না।সালমান চট করেই কামড় বসালো তার গালে।
“তোর লজ্জা পাওয়ার শাস্তি এটা।”
“আমি মঞ্জুর করলাম।”
সালমান কামড় দেওয়া গালে ঠোঁট চেপে ধরল।
“আমার বাচ্চা তোর পেটে!”
“হুম।”
“আমার সুখ সুখ লাগে হায়াত।”
“আমার ও।”
সালমান তার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল।হায়াত বলল,
“মরে যাবো।”
“যাহ্।”
হায়াত কামড়ে দিল তার বুকে।সালমান নড়ল না।বরং হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হলো।
এতো এতো খুশির মাঝে আয়াতের নিখোঁজ হওয়ার দুঃসংবাদ সব কিছু কে ধামা চাপা দিল। সালমান সুলেমান তখন ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সেদিন আর রাতে বাড়ি ফেরা হলো না তাদের।
চলবে🌺