#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ৬
Sidratul Muntaz
এই ঘরের বারান্দাটা বেশ বড় আর পরিপাটি করে সাজানো। দেয়ালে স্তরে স্তরে ফুলের টব, একটা বিশাল দোলনা, সুন্দর কারুকার্যময় মাটির কলস, হাড়ি, পাতিল। দেখতে অনেক শৈল্পিক লাগে। এছাড়াও বাইরের পরিবেশটা চমৎকার। এখানে দাঁড়ালেই যেন শহরটা একনজরে দেখে ফেলা যায়। দক্ষিণ দিকে সুন্দর একটা ঝিল। তার পাশে পরিচ্ছন্ন একটা পার্ক। দিবা উদাস মুখে তাকিয়ে থাকে। অধিকাংশ পার্ক দেখতে একই রকম হয়। দিবার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তাদের এলাকার সেই পার্করোডের কথা। সেখানে রাফিন আর সে কত হেঁটেছে, বাদাম খেয়েছে, নিজেদের ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবন নিয়ে হাজারও জল্পনা-কল্পনা এঁকেছে।
“শোনো দিবা, আমরা ছোট্ট দেখে দুই রুমের একটা বাসা নিবো৷ রিতু আপার তো বিয়ে হয়েই যাবে। রায়া আর মা আমাদের সাথে থাকবে। ঝামেলাহীন সুন্দর সংসার। আমি অফিস থেকে ফিরলে তুমি দরজা খুলবে, সুন্দর করে হাসবে। তোমার হাসি দেখে আমি ক্লান্তি ভুলে যাবো।”
দিবা মুখ বেঁকিয়ে বলে,” ন্যাকা! আগে বিয়ে করে দেখাও। যে অবস্থা দেখছি তোমার, আগামী পাঁচ-ছয়বছরেও কোনো গতি হবে না।”
” তো পাঁচ-ছয়বছরে কি তুমি বুড়ি হয়ে যাবে? আমাদের মধ্যে খুব সুন্দর একটা ম্যাচ আছে সেটা বোঝো না কেন? তোমার মাত্র উনিশ বছর আর আমার পঁচিশ। পাঁচ-ছয় বছরে আমি থার্টি ক্রস করব। আর অনেকটা স্টাবলিশও হয়ে যাবো। তখন তুমি থাকবে আমার বয়সী। মানে পঁচিশ-ছাব্বিশের তরুণী। তখন আমরা ইজিলি বিয়ে করব। একদম পারফেক্ট ম্যাচ হবে।”
” কিন্তু আমার বিয়ের জন্য এখনি পাত্র দেখা হচ্ছে রাফিন। বড়বোনের সংসারে আমি এভাবে কতদিন বোঝা হয়ে থাকবো বলো? রেবা আপার শাশুড়ীর আজ-কাল তাকে অনেক কথা শোনায়। তাই আপা বলেছে যত দ্রুত সম্ভব আমি যেন বিয়ে করি।”
” তোমার ফ্যামিলির এই বিষয়টা আমার ডিসগাস্টিং লাগে। এটা কোনো বিয়ের বয়স হলো? ন্যূনতম পাঁচ-ছয়বছর তো সময় দেওয়া উচিৎ। ধ্যাত!”
” তুমি কিছু করতে পারবে না?”
” ভরসা রাখো। ধৈর্য্য ধরো। এতো সহজে হাল ছাড়বো না।”
রাফিন খুব সহজেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে দিবা আজ এখানে। এই বিরাট অট্টালিকার চার দেয়ালের মাঝে বন্দী। চেষ্টা করলেও সে হয়তো আর কখনও প্রাণ খুলে হাসতে পারবে না। জীবনের সমস্ত হাসি- আনন্দ কবর দিয়ে সে একটা অনিশ্চিত জীবন বেছে নিয়েছে৷ এই জীবনের ভবিষ্যৎ কি তা সে জানে না। তবে এইটুকু নিশ্চিত, রাফিন ভালো থাকবে। তার সব স্বপ্ন পূরণ হবে একদিন। কিন্তু দিবা সহধর্মিণী হয়ে তার পাশে থাকতে পারবে না, এটাই একমাত্র দুঃখ।
আসলে তাদের দু’জনের একসঙ্গে তো ভালো থাকা কখনও সম্ভব ছিল না। তাই অন্তত একজন ভালো থাকুক। রোজা শাড়ির আঁচল টেনে ধরতেই ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে দিবা।
রোজা বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। দিবা মুগ্ধ হয়। মেয়েটা বড় হলে নিশ্চয়ই খুব রূপবতী হবে। এখনি কি ঘন আর লম্বা চুল মাথায়! গোল-গাল মিষ্টি মুখ। লাল টুকটুকে ঠোঁট খুলে সে একটু হাসতেই দিবার মনে হয় ঈশান সাহেবের সাথে রোজার চেহারায় অনেক মিল। সুদর্শন বাবার মেয়ে হয়েছে সুদর্শনা!
চোখ মুছে দিবা হাসার চেষ্টা করে বলে,” কি হয়েছে মা? তোমার কিছু লাগবে?”
রোজা ইশারায় বোঝায় যে সে দোলনায় বসবে। দিবা যেন ধাক্কা দিয়ে দেয়। রোজাকে কোলে নিয়ে দোলনার উপর বসায় দিবা। অন্যমনস্ক হয়ে ধাক্কা দিতে থাকে এবং একপর্যায়ে অঘটন ঘটে যায়। রোজা ধপ করে দোলনা থেকে উপুড় হয়ে পড়ে যায় এবং মাথার সামনের দিকে গুরুতর আঘাত পায়।
দিবা দ্রুত এসে তাকে কোলে নেয়। তীব্র ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদছে রোজা। কিন্তু একফোঁটা শব্দ হচ্ছে না। শুধু তার ফরসা কোমল মুখটা লাল র’ক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে। ফোলা ঠোঁট, টলটলে দু’টো মায়াবী চোখ আর নিঃশব্দে কাঁপতে থাকা শরীর দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে কতটা কষ্ট পাচ্ছে! দিবা অস্থির হয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,” লক্ষী বাচ্চা, আমাকে মাফ করে দাও।”
______
দিবাদের বাসার নিচে অনেকক্ষণ হয় দাঁড়িয়ে আছে রাফিন৷ কটকটে রোদের উত্তাপে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। অথচ দিবার কোনো খবরই নেই। প্রত্যেকবার তো রাফিন জানালায় ঢিল ছোঁড়ার মিনিট পাচেকের মধ্যেই দিবা হতো৷ আজ কি হলো? অনেক বেশি রেগে আছে নাকি? আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে দিবা বাসায় নেই। ব্যাপারটা মাথায় আসতেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় রাফিন৷ কি করবে এবার? চলে যাবে?
” কে আপনি? কারে চান?” দারোয়ান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। অনেকক্ষণ ধরে রাফিনকে বাসার সামনে দাঁড়ানো দেখে কৌতুহলী হয়েই প্রশ্নটা করেছে।
রাফিন একহাতে কপালের ঘাম মুছে আন্তরিক হেসে বলে,” আসলে চাচা… চারতলায় আমার এক ফ্রেন্ড থাকে, নাম দিবা রহমান। ওকে একটু ডেকে দিতে পারবেন?”
” কি বললেন? দিবা রহমান? ও আচ্ছা, আপনি তুহিন ভাইয়ের শালির কথা বলতেছেন নাকি?”
” জ্বী, জ্বী, তুহিন ভাইয়ের শালি৷ ঠিক ধরেছেন।”
” তারে এইখানে খুঁইজা তো লাভ নাই। গতকাল সন্ধ্যায়ই মাইয়াটার বিয়া হয়া গেছে। সে এখন শ্বশুরবাড়ি। বেশি প্রয়োজন হইলে ওইখানে গিয়া খোঁজ করেন।”
রাফিনের মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। কথাটা বুঝতে যেন তার মস্তিষ্ক খানিক সময় নেয়। পরমুহূর্তেই ঝট করে বলে,” না, না, চাচা আপনি মনে হয় ভুল করছেন। আমি দিবা রহমানের কথা বলেছি। চারতলায় থাকে। ওর বড় আপার নাম রেবা।”
” হ, হ, রেবা আপারেও আমি চিনি৷ তুহিন ভাইয়ের বউ৷ তার শালি দিবারই গতকাল সন্ধ্যায় বিয়া হইছে। বিশ্বাস না হইলে নিজেই ভেতরে আসেন। খোঁজ নিয়া দেখেন।”
রাফিন বোকার মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে হাতের বেলিফুল আর ডেইরি মিল্ক চকলেট নিয়ে। তার হাঁটু কাঁপছে মনে হয়। মাথার মধ্যে অদ্ভুত একটা শব্দ শুনতে পায়। কিসের শব্দ এটা? বুঝতে পারে না। হেলতে-দুলতে কোনমতে একটা রিকশা থামায়। রিকশাওয়ালা যখন জিজ্ঞেস করে,” কই যাবেন?”
রাফিন জবাব দিতে পারে না। জরাগ্রস্তের মতো রিকশায় উঠে বসে। ভীষণ ভারী লাগছে শরীরটা। চোখের সামনে সবকিছু ক্রমশ ঝাপসা হয়ে উঠে। রিকশাওয়ালা পুনরায় জিজ্ঞেস করে,” আরে যাবেন কোথায়?”
রাফিন অচেতনের মতো হাসপাতালের ঠিকানা বলে। যেই হাসপাতালে বর্তমানে তার মা ভর্তি আছেন।
রোজার কপালের একপাশ ভীষণভাবে ফুলে গেছে। বরফ লাগিয়েও কাজ হয়নি। মেয়েটা হাউমাউ করে কেঁদে-কেটে মাত্র কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে। দিবা অপরাধী মুখে বিছানার এক কোণে বসে আছে। কি করে ফেলল এটা সে? একটু সাবধানে থাকা উচিৎ ছিল।
আয়েশা খুব হা-হুতাশ করে বলছেন,” এতো খেয়াল রাখি মেয়েটার, জীবনে ওর গায়ে ফুলের টোকা পর্যন্ত লাগতে দেইনি। ঈশান এসে দেখলে কি করবে আল্লাহ জানে! ইশ, কপালটা কিভাবে ফুলে আছে। মাথার আঘাত তো যেন তেন ব্যাপার না। পরে যদি কোনো বড় ক্ষতি হয়? আমি ঈশানের কাছে কি জবাব দিবো আল্লাহ!”
দিবা নিচু স্বরে বলে,” আইস ব্যাগটা আরও কিছুক্ষণ ওই জায়গায় ধরে রাখুন ফুপু। ফোলাটা হয়তো কমবে।”
” হয়েছে থাক, তোমাকে আর পরামর্শ দিতে হবে না। দয়া করে এখান থেকে যাও। যথেষ্ট দেখা-শোনা করেছো আমার নাতনির। আর দরকার নেই৷ অনেক হয়েছে বাবা।”
দিবা মাথা নিচু করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কয়েকবার পিছু ফিরে তাকায়। আয়েশা মুখ ঘুরিয়েও দেখেন না। দিবা বুঝতে পারে না, আসলেই কি এখানে সম্পূর্ণ দোষ তার? সে তো আর ইচ্ছে করে রোজাকে ব্যথা দেয়নি।
ঈশান বিকালের দিকেই বাড়ি ফিরে আসে। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সাথে সাথে রোজার প্রধান কাজ হলো কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই দৌড়ে দরজা খুলতে ছুটে আসা। সে ছাড়া অন্যকেউ দরজা খুলতে পারবে না। তাহলেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে৷ বাবা এলে সে নিজের হাতে দরজা খুলবে তারপর বাবার কোলে উঠবে। এটাই তার প্রতিদিনের অভ্যাস।
তবে আজ দরজা খোলে দিবা। ঈশান আশেপাশে তাকিয়ে মেয়েকে কোথাও দেখতে না পেয়ে অবাক হয়। দিবা মলিন মুখে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, মাথাটা নিচু। ঈশান চুপচাপ ভেতরে ঢোকে। আঁড়চোখে দিবাকে লক্ষ্য করে বলে,” অ্যানি প্রবলেম? কি হয়েছে আপনার?”
” আমার কিছু হয়নি।”
” তাহলে আপনাকে এতো টেন্সড দেখাচ্ছে কেন? ওহ, আপনার বয়ফ্রেন্ডের চাকরির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন? সেটা নিয়ে আর টেনশনের কিছু নেই। আজকেই তাকে ডেকে জব কনফার্ম করে দিয়েছি। কালকে থেকে জয়েনিং৷ স্যালারি যেমন আপনি বলেছিলেন, এরাউন্ড ফোরটি কে। মাসের মাঝখান থেকে জয়েন করলেও ফুল স্যালারি পেয়ে যাবে। নো প্রবলেম।”
সোফায় বসে পায়ের জুতো খুলতে খুলতে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে যায় ঈশান৷ দিবা ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে,” থ্যাংকস। আল্লাহ আপনার ভালো করুক।”
ঈশান চোখ তুলে তাকায় দিবার দিকে। ফোঁড়ন কেটে বলে,” অবশ্য আপনার তো আগেই খবর পাওয়ার কথা। উনি নিশ্চয়ই ফোন করে জানিয়েছে।”
” ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।” মাথা নিচু রেখেই খুব স্পষ্ট স্বরে জানায় দিবা।
ঈশান অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বলে,” স্ট্রেইঞ্জ! এতো দ্রুত যোগাযোগ অফ করে দিয়েছেন? মানে আমাদের বিয়ের তো এখনও চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি। কমপক্ষে একমাস তো সময় নেওয়া উচিৎ ছিল।”
” আশা করি আপনি ঠাট্টা করছেন।” দিবার মুখভঙ্গি শক্ত।
ঈশান হেসে জিজ্ঞেস করে,” আমার মেয়ে কোথায়?”
” ঘুমাচ্ছে।”
” এটাই গেস করেছিলাম। নয়তো কলিংবেলের আওয়াজ শুনে নিশ্চয়ই ছুটে আসতো।”
ঈশান কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। টেবিলে খুলে রাখা ঘড়ি আর ফোনটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়৷ দিবা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। রোজার ব্যথা পাওয়ার ব্যাপারটা ইচ্ছে করেই চেপে গেছে সে। এই কথা ঈশানকে জানানোর সাহস তার এই মুহূর্তে নেই। তবে মনে হয় না বেশিক্ষণ চেপে রাখা সম্ভব হবে। ঈশান তো কিছুক্ষণ পরে নিজের চোখেই দেখবে সব। তাছাড়া কথা লাগানোর জন্য দিবার ফুপু শাশুড়ী আয়েশা তো আছেনই।
_____
” কেমন আছিস বাপ? মুখটা এমন শুকনা কেনো? সারাদিন কিছু খেয়েছিস নাকি না খেয়েই ঘুরছিস? কিরে, কথা বল৷ এমন ভূত হয়ে আছিস কেন?”
রাফিন অনুভূতি শূন্য কণ্ঠে জানতে চায়,” তোমার শরীরের কি অবস্থা মা?”
” শরীরের অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক ভালো। রিতু একটু আগে ব্যালকনিতে নিয়ে আমাকে কতক্ষণ হাঁটাইল। ভালোই লাগলো। তা তুই নাকি কোন জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিস? কিছু হয়নি তাই না? এজন্য মনখারাপ? এতো মনখারাপের কিছু নাই বাবা। আল্লাহ ভাগ্যে যা লিখে রাখছেন তা হবে। আয়, আমার কোলের উপর একটু মাথা রাখ। ভালো লাগবে।”
শাহনাজ টেনে রাফিনের মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখেন। আদর করে ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নানান কথা বলতে থাকেন৷ এক পর্যায় রাফিন বলে উঠে, ” আমি চাকরিটা পেয়ে গেছি মা৷ ”
” কি বললি?”
” চাকরি, আমি পেয়ে গেছি। । চল্লিশ হাজার টাকা স্যালারি। এখন থেকে আর চিন্তা করতে হবে না। তুমি বলার আগেই তোমার ঔষধ হাজির হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে সব ঋণ মিটিয়ে দিবো। আর তোমার অপারেশনের জন্য টাকাও অফিস থেকে লোন নিবো। তুমি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। আর একটা নতুন বাসা ভাড়া নিবো, সুন্দর দেখে, খোলামেলা যেন হয়।”
ছেলের এসব কথা শুনে শাহনাজ হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকেন। হঠাৎ শব্দ করে বলেন,” তুই সত্যি বলছিস? আসলেই চাকরি হয়ে গেছে?”
” হ্যাঁ মা, আসলেই চাকরি হয়ে গেছে।”
” ওই রিতু, শুনে যা তোর ভাই কি বলে। আরে কই গেলি? তাড়াতাড়ি এদিকে আয়।”
রিতু ওয়ার্ডের বেসিন থেকে প্লেটগুলো ধুঁয়ে এনেছে। মায়ের চিৎকার শুনে একটু দ্রুত এগিতে এসে বলে,” কি হয়েছে মা? কোনো সমস্যা?”
” আরে সমস্যা না, সুখবর। বিরাট বড় সুখবর। তোর ভাইয়ের তো চাকরি হয়ে গেছে!”
” কি? সত্যি?” রিতু উৎফুল্ল ভঙ্গিতে হেসে উঠে।
শাহনাজ গমগমে স্বরে বলেন,” সামর্থ্য থাকলে আমি আজকে পুরো হাসপাতালে মিষ্টি বিলাতাম। আল্লাহ, সবই আল্লাহর দয়া। এতোদিন পর আল্লাহর রহমত আসছে আমাদের সংসারে।”
রিতু কাছে এসে রাফিনের গোমড়া মুখ দেখে বলে,” গাঁধাটা এভাবে বসে আছে কেন? এই কিরে, দিবাকে জানিয়েছিস? মেয়েটা শুনলে কত খুশি হবে। এখন তো আর ওদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই।”
সঙ্গে সঙ্গে শাহনাজের মুখ বেজার হয়ে যায়। তিনি চোখ-মুখ কুঁচকে বলেন,” আর কোনো প্রসঙ্গ পেলি না? ওই মেয়ের কথাই কেনো এই মুহূর্তে তুলতে হবে তোকে? তাছাড়া আমার ছেলে এতো ভালো চাকরি পেয়েছে, ওই এতিম মেয়েকে ঘরে তোলার জন্য? ওর চেয়েও হাজারগুণ ভালো পাত্রী দেখবো আমি রাফিনের জন্য। ওই মেয়ে আমার ছেলের যোগ্য না!”
রিতু বিরক্ত হয়ে বলে,” কি আবোল-তাবোল কথা বলছো মা। রাফিন প্রেম করেছে দিবার সাথে। তাহলে বিয়ে কেনো অন্যজনকে করবে?”
” তুই আমার মেজাজ খারাপ করিস না তো রিতু। ওর মাথাটা তুই-ই খেয়েছিস।”
রাফিন হঠাৎ বলে,” তোমার ইচ্ছাই পূরণ হলো মা। দিবাকে চাইলেও আমি আর বিয়ে করতে পারবো না ”
রিতু অবাক হয়ে বলে,” কেন? দিবার কি হয়েছে?”
রাফিনের চেহারা তখনও ভাবলেশহীন৷ দৃষ্টি শূন্যে। সেভাবেই বলে,” আমি দিবাদের ওখান থেকেই এসেছি। দারোয়ানের কাছে শুনলাম দিবার নাকি গতকাল সন্ধ্যায় বিয়ে হয়ে গেছে।”
রিতু অবাক হয়ে মুখে হাত চেপে ধরে,” কি বলছিস? এভাবে কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ? মানে কিভাবে কি হলো?”
” জানি না আপা। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। শুধু কলিজাটা ছিঁড়ে যাওয়ার মতো কষ্ট হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি ম’রে গেলেও এতো কষ্ট হতো না। মাথাটা কেউ পাথর থেতলে দিলেও এমন লাগতো না। কি অদ্ভুত এক যন্ত্রণা বলতো!”
রিতু কাছে এসে শক্ত করে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
চলবে