#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ৭
Sidratul Muntaz
ঈশান আগে রোজার ঘরে ঢোকে। মেয়ের ঘুমন্ত মলিন মুখ দেখে ভ্রু আপনা-আপনি কুঁচকে যায়৷ কপালের পাশের ফোলাটা নজরে আসতেই চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে,” কি হয়েছে ওর? কপালের একপাশ ফোলা কেন?”
” ব্যথা পেয়েছে।”
আয়েশা বিছানার কাপড়গুলো ভাঁজ করতে করতে ভাবলেশহীন মুখে বলে। ঈশান প্রশ্ন করে,” কিভাবে ব্যথা পেল?”
” দোলনা থেকে পড়ে গেছিল।”
” পড়ল কিভাবে? তোমরা কি করছিলে?”
দিবা তখন মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকছে। আয়েশা আর কিছু বলেন না। দিবার দিকে কেমন হতাশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘর থেকে বের হয়ে যান৷ ফুপুর এমন রহস্যময় আচরণ বুঝতে অসুবিধা হয় না ঈশানের। দিবার মুখে চিন্তার ছাপ।
ঈশান ঠান্ডা গলায় জানতে চায়,” এটা কী শুনছি, রোজা দোলনা থেকে পড়ে গিয়েছিল?
দিবা ইতস্তত করে বলে,” হ্যাঁ, খুব একটা কিছু হয়নি। শুধু সামান্য ব্যথা পেয়েছে মাথায়।”
” এই ব্যথাটা আপনার সামান্য মনে হচ্ছে? ফুলে ঢোল হয়ে আছে আমার মেয়ের কপালটা।”
ঈশানের ওমন রূঢ় স্বরে খানিক কেঁপে ওঠে দিবা। কাঁচুমাচু হয়ে বলে,” আ’ম স্যরি, এটা আসলে আমার ভুলের জন্যই হয়েছে। আমি দোলনা ধাক্কা দিচ্ছিলাম আর ও হঠাৎ পড়ে গেল।”
” ব্যাপারটা এটলিস্ট আমাকে ফোন করে জানাতে পারতেন। ইন ফ্যাক্ট দরজা খোলার পর লাউঞ্জরুমে যে পাঁচমিনিট আপনার সাথে কথা বললাম তখনও বলেননি। আমি এই ঘরে না ঢুকলে মনে হয় জানতেও পারতাম না। কি উদ্দেশ্য ছিল আপনার? ব্যাপারটা আমার থেকে লুকিয়ে রাখা?”
” ছি, ছি, সেরকম কেনো হবে?”
ঈশান ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,” ভুল আমারই। এভাবে আপনার হাতে আমার মেয়ের দায়িত্ব তুলে দেওয়া উচিৎ হয়নি। এখন যেতে পারেন।”
” ঈশান সাহেব আমি…”
” আপনাকে আমি যেতে বলেছি মিস দিবা।”
দিবা আর দাঁড়িয়ে থাকার কারণ খুঁজে পায় না। দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ঈশান বিছানায় ঝুঁকে মেয়েকে কোলে নেয়। রোজা সামান্য কেঁপে উঠে চারপাশে তাকায়। ঘুমটা ভেঙে গেছে। বাবাকে দেখেই চেহারায় একটা স্বস্তি মাখা নরম হাসি ফুটে ওঠে। ঈশান মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে,” প্রিন্সেস আমার, এইতো বাবা এসে গেছি! এখন আর কোনো ভ’য় নেই। চলো আমরা ডক্টরের কাছে যাবো। ওকে মাম?”
রোজা মাথা নাড়ে। বাবার সাথে বাইরে যাওয়ার কথা শুনলেই তার খুশির সীমা থাকে না।
দিবা ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে জানালায় চেয়ে আছে। নিচে ঈশান রোজাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠছে। সম্ভবত মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। সামান্য কপালে আঘাত পাওয়ার বিষয় নিয়ে এতো ব্যস্ত হওয়ার কি আছে? ভেবে পায় না দিবা! বড়লোক মানুষদের সব বড় বড় ব্যাপার! সে তো ম’রে পড়ে থাকলেও খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। সেভাবেই বড় হয়েছে ছোট থেকে। অবহেলায় আর অযত্নে। সেজন্য রোজার প্রতি ঈশানের এই অতিরিক্ত যত্নশীল আচরণ তার কাছে অতিরঞ্জিত ঠেকছে।
“হ্যালো দিবা, কেমন আছিস? কেমন কাটছে তোর নতুন সংসার?”
” ভালোই আপা।”
” ভালোই? মানে জোর করে ভালো বলছিস?”
দিবা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,” জানি না।”
” জানিস না মানে? ঠিক করে বল! তোর শ্বশুর-শাশুড়ী ইন্ডিয়া থেকে ফিরেছে?”
” এখনও না। তারা নাকি ওখান থেকে থাইল্যান্ড যাবে।”
” বাবাহ, একদম হানিমুন প্যাকেজ কিনে গিয়েছে নাকি?”
” ধূর! জানি না।”
রেবা আগ্রহ নিয়ে বলে,” আচ্ছা তোর শাশুড়ীর ছবি তো অনলাইনে দেখলাম। বয়স খুব কম মনে হচ্ছে৷ তুহিনের কাছে শুনলাম এটা নাকি উনার দ্বিতীয় বউ? কেইস তো তাহলে তোদের মতোই। বাপ ছেলে দু’জনেই দ্বিতীয় বউ নিয়ে সংসার করছে। প্রথম বিয়ে কারোই টিকেনি৷ কি আশ্চর্য! ”
দিবা কঠিন গলায় বলে,” তুমি কি আপা আমার সাথে এই নিয়ে মজা করছো?”
” নারে, এমনি বলছি। এছাড়া আর কি বলব? নিজের কপালটা তুই নিজেই শেষ করলি। কি প্রয়োজন ছিল ওমন একজনকে বিয়ে করার? আমি তোকে বহুবার নিষেধ করেছিলাম দিবা।”
” বাদ দাও৷ এখন আর এসব বলেও কি লাভ?”
রেবা হেসে বলে,” আমি মনে হয় বুঝতে পেরেছি যে তুই ঈশান সাহেবকে কেনো বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলি। বলবো?”
দিবা জবাব দেয় না। রেবা একা একাই বলে যায়,” সে এক বাচ্চার বাপ, প্রথম বিয়ে টেকেনি আর তুই সুন্দরী, অল্পবয়স্কা কুমারী মেয়ে! ভেবেছিলি বিয়ের পর তোর যত্নের কোনো কমতি থাকবে না। বেটা মনে হয় সারাক্ষণ তোর আঁচল ধরেই ঘুরবে। আসলে আমিও সেরকমটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু ঈশান সাহেবকে দেখে তো সেরকম মনে হলো না। খুব নাক উঁচু আর গম্ভীর টাইপের লোক। তোদের মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক হয়েছে এখন পর্যন্ত? তুই কি লোকটার সঙ্গে ইজি হতে পেরেছিস? সে কি তোর অনুভূতির যথাযথ মূল্যায়ন করছে? সত্যি করে বলবি।”
দিবা হতাশ কণ্ঠে জানায়,” না আপা, কিছুই হয়নি৷ বরং আমার মনে হচ্ছে হুট করে অন্যকারো সংসারে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঢুকে পড়েছি। এখানে আমার কখনও জায়গা ছিল না আর হবেও না৷ তোমাদের সংসারেও পরগাছার মতো ছিলাম৷ এখানেও সেভাবেই থাকবো৷ আমি নিজের একটা সংসার কোনোদিন হবে না! সবার সব স্বপ্ন পূরণ হতে নেই।”
দিবা ফোন রেখে দেয়। তার গলা ভেঙে এসেছে। চোখ দু’টো অশ্রুতে পরিপূর্ণ। মুখে শাড়ির আঁচল চেপে নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা চালায়।
রাতে ঈশান মেয়েকে নিজের সাথে নিয়েই ঘুমিয়েছে৷ দিবার কাছে একবারও আসেনি রোজা। অথবা হয়তো তাকে আসতে দেওয়া হয়নি৷ দিবা নিজের ঘরেই একাকি রাত পার করেছে। একবার রাফিনের আইডিতেও ঢু মেরেছে৷ তার নিজের ফেসবুক একাউন্ট আপাতত বন্ধ। সিমটাও পরিবর্তন করেছে। যাতে রাফিনের সাথে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ রাখা সহজ হয়৷ এখন যে বিবাহিত নারী৷ রাফিনের সাথে কথা বলা বিরাট পাপ।
সকালে ব্রেকফাস্টের জন্য ডাইনিং রুমে আসতেই একটা অদ্ভত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় দিবা। আয়েশা নাস্তা বানাচ্ছেন, ছুটা বুয়া রান্নাঘর পরিষ্কার করছে। আর ডাইনিং টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে একটা অপরিচিত মেয়ে রোজাকে খাওয়াচ্ছে। দিবা চোখে প্রশ্ন নিয়ে আয়েশার দিকে তাকায়। তার মনের কথা বুঝতে পেরেই যেন আয়েশা জবাব দেন,” ও তৃষা। আজ সকালেই এসেছে। রোজার দেখা-শুনা করার জন্য আজ থেকে ওকে রাখা হয়েছে, বেবি সিটার। তোমার জন্য ভালো হলো৷ এখন থেকে আর রোজার বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।”
দিবা হতভম্ব হয়ে ঈশানের দিকে তাকায়। লোকটা কি নির্বিকার ভঙ্গিতে খাবার খাচ্ছে। যেন কোনো হেল-দোল নেই৷ বিষয়টা একবার দিবাকে জানানোর প্রয়োজন অবধি অনুভব করেনি। অবশ্য করবেই বা কেন? দিবা তো এই বাড়ির কেউ না৷ সে এখানে এসেছে অতিথির মতো। আর অতিথি হয়েই আছে।
আয়েশা রুটি সেঁকছিলেন। দিবা চায়ের জন্য পানি বসাতে গেলেই আয়েশা বলেন,” লাগবে না। তুমি যাও খেয়ে নাও। আর তোমার নাকি ইউনিভার্সিটি আছে? সেখানেই যাও বাবা৷ এসব ঘরের কাজ আমি সামলে নিতে পারব।”
” আমি কখন বলেছি যে আমার ইউনিভার্সিটি আছে?”
” লেখাপড়া কি ছেড়ে দিয়েছো?”
” না তা দেইনি। কিন্তু আজকে আমি ইউনিভার্সিটিতে যাবো না।”
” কেনো যাবে না? আরে যাও। এখানে তো তোমার এমনিও কোনো কাজ নেই। ঘরে বসে থেকে করবেই বা কি?”
দিবা মাথা নিচু করে ডাইনিং টেবিলে বসে। আঁড়চোখে একবার ঈশানের দিকে তাকায়। ঈশান মেয়ের দিকে চেয়ে মুচকি হাসছে। দিবা রোজার দিকে তাকায়৷ রোজা হঠাৎ তার দিকে এগিয়ে আসে। তার পাশে বসে। তৃষা নামের মেয়েটি বলে,” হা করো বাবু।”
রোজা মাথা নেড়ে বোঝায় আর খাবে না সে। পেট ভরে গেছে তার। তৃষা মুখ গোজ করে বলে,” এখনও কিছুই তো খেলে না তুমি। তাহলে পেট কিভাবে ভরল? প্লিজ হা করো। না খেলে বড় হবে কিভাবে? ”
দিবা বলে,” আমাকে দিন, আমি চেষ্টা করছি।”
তৃষা খাবারের প্লেটটা দিয়ে দেয় দিবার হাতে। এবার দিবা বলে,” গল্পটা কি বলেছিলাম মনে আছে? এক রাজকুমার কিচ্ছু খেতে চাইতো না৷ না খেতে খেতে সে একদম ছোট হয়ে গেল। কোনো জামা-কাপড়ই তার লাগে না। দেশ-বিদেশ থেকে ডাক্তার ডেকে আনল রাজা। এত্তো বড় বড় ইঞ্জেকশন দেয় তারা রাজপুত্রকে।”
রোজা বড় বড় চোখ করে আগ্রহ নিয়ে গল্প শুনতে শুনতে পুরো খাবার খেয়ে শেষ করে ফেলে। দিবা তার টসটসে গোলাপী গালে চুমু খেয়ে বলে,” গুড গার্ল! আমার লক্ষী বাচ্চা।”
ঈশান খাওয়া শেষ করেও বসে থাকে। সম্পূর্ণ ঘটনাটা দেখে। তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,” বের হচ্ছি আমি। আপনি কি ভার্সিটি যাবেন? তাহলে আমার সাথে আসতে পারেন। ড্রপ করে দিবো।”
দিবা ঈশানের দিকে না তাকিয়েই অবজ্ঞার ভঙ্গিতে বলে,” প্রয়োজন নেই৷ আমি বাসেই চলে যেতে পারব।”
ঈশান রুক্ষ ভঙ্গিতে বলে,” তাহলে আপনার ভার্সিটি যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমার ওয়াইফ লোকাল বাসে চড়ে হেলতে-দুলতে ভার্সিটি যাচ্ছে, এটা আমার পছন্দ হবে না।”
কথাটা শেষ করে নিজের বেডরুমের দিকে যেতে থাকে সে। দিবা শক্ত হয়ে বসে আছে। ঈশানের মুখে ‘আমার ওয়াইফ’ কথাটা শুনে কেমন অদ্ভুত লাগছে। হঠাৎ আয়েশা বলে উঠেন,” শুধু শুধু রাগিও না ছেলেটাকে। ভালো করে বলল ছেড়ে দিয়ে আসবে, চুপচাপ চলে যাও। এতো ঝামেলা কেন করছো? ও রেগে গেলে কিন্তু সর্বনাশ। মহাবিপদে পড়বে বলে দিলাম। ওর মন যুগিয়ে চলতে পারলে দুনিয়ার সব সুখ তোমার পায়ের কাছে এনে ফেলবে৷ কিন্তু একবার যদি রাগিয়ে দাও তাহলে তোমাকে সোজা নরকে ঘুরিয়ে আনতেও দ্বিধা করবে না। বুঝে নিও কি বললাম।”
ছোটা বুয়া আর বেবি সিটার তৃষা হাসছে আয়েশার কথায়। দিবা থমথমে মুখে উঠে নিজের ঘরের দিকে যায়। ভার্সিটি যাওয়ার জন্য পাঁচমিনিটে তৈরী হয়ে নেয়।
দিবা আর ঈশান পাশাপাশি বসে আছে গাড়িতে। ঈশান গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করছে। চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই। এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি। দিবা নিজে থেকেই কথা শুরু করে,” হঠাৎ রোজার জন্য বেবি সিটার রাখার কারণ কি জানতে পারি?”
ঈশান মনে হয় অন্যকিছু ভাবছিল। দিবার প্রশ্নে তার ধ্যান ভাঙে। নিরেট কণ্ঠে জবাব দেয়,” এমনিতেও একজন প্রয়োজন ছিল যে রোজাকে চব্বিশ ঘণ্টা কোম্পানি দিতে পারবে। তাছাড়া আপনার জন্যেও এক্সট্রা প্রেশার হয়ে যাচ্ছিল।”
” আমি তো একবারও বলিনি যে আমার প্রেশার হয়ে যাচ্ছে! আপনি আগ বাড়িয়ে বুঝে নিয়েছেন।”
” কালকের ওই ঘটনার পর আমার এটাই ঠিক মনে হয়েছে। রোজার জন্য আসলেই প্রফেশনাল কাউকে দরকার। আপনি পারবেন না।”
” ও, একজন প্রফেশনাল বেবি সিটার মায়ের চেয়েও ভালো খেয়াল রাখতে পারবে বলে মনে হয় আপনার?”
দিবা যেন কথাটা একটু ব্যঙ্গ করেই বলে। ঈশান স্পষ্ট স্বরে জানিয়ে দেয়,” আপনি রোজার মা না মিস দিবা। আর মা ছাড়া একটা বাচ্চাকে হ্যান্ডেল করা একটা স্ট্রাগলের মতো। তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার মেয়ের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।”
” গুড!” দিবা আর কিছু বলে না। বলার মতো কিছু নেইও।
ভার্সিটি পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে ঈশানকে বিদায় জানানোর জন্য হাত বাড়ায় দিবা। কিন্তু এর আগেই ঈশান গাড়ি টেনে চলে যায়। যেন পেসেঞ্জার নামিয়ে দিয়ে গেছে। তার দায়িত্ব এখানেই শেষ। দিবা স্থিরমূর্তির মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর হতাশ ভঙ্গিতে প্রবেশ করে ভার্সিটি চত্বরে।
ক্লাসে গিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা হতেই শাম্মি আর মনি হামলে আসে দিবার দিকে। তার বৈবাহিক জীবনের গল্প শুনতে উৎসুক দু’জনেই। শাম্মি ঠাট্টা করে বলে,” কি অবস্থা? তোর চেহারা দেখি আগের চেয়ে সুন্দর হয়ে গেছে দিবা৷ দুলাভাই মনে হয় আদর করে খুব।”
রাগে দিবার গা রিরি করতে থাকে। বিরক্ত স্বরে বলে,” ধূর, তোদের মতো অসভ্যের সাথে বসাই আমার ভুল হয়েছে।”
মনি বলে,” আরে এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমরা আমরাই তো। আচ্ছা যা, তুই আনকমফোর্টেবল ফীল করলে আমরা আর এসব জিজ্ঞেস করব না।”
রেখা হঠাৎ ছুটে এসে বলে,” কেমন আছিস দিবা? মুখ-চোখ এমন শুকনা দেখাচ্ছে কেন? তোকে সামনের গেইটে আমি দেখেছিলাম গাড়ি থেকে নামছিস। ভেতরে কি ভাইয়া ছিল?”
দিবা মাথা নাড়ে৷ মনি আর শাম্মী চেঁচিয়ে বলে,” ওয়াও, ভাইয়া ড্রপ করে দিয়েছে? সো রোমান্টিক!”
শাম্মী বলে,” আমাদের সাথে মিট করালি না যে?”
দিবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ এখন বান্ধবীদের কিভাবে বোঝাবে তার হাজব্যান্ড রূপি ওই মানুষটা যে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মতো এটিটিউড নিয়ে চলে! একে বন্ধুদের সামনে আনলেও দিবার মান-সম্মান যেতো।
দিবা হাসার চেষ্টা করে বলে,” ও একটু ব্যস্ত ছিল তো, তাই দ্রুত চলে গেছে। সমস্যা নেই, রিসিপশনে তো তোরা সবাই আসছিস। তখন আলাপ করিয়ে দিবো।”
রেখা জানতে চায়,” কবে হচ্ছে তোর রিসিপশন?”
” আমার শ্বশুর-শাশুড়ী দেশে ফিরলেই ডেইট ফিক্সড হবে।”
ক্লাস শেষে দিবা যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে বের হবে তখন মনি সামনে এসে বলে,” থাম দিবা, ওদিক দিয়ে যাস না৷ আমি রাফিন ভাইয়াকে দেখেছি গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।”
দিবার বুক ধ্বক করে ওঠে। রেখা বলে,” তো কি হয়েছে? দেখা করতে চাইলে দেখা হবে৷ চলতো দিবা, ভ’য়ের কিছু নেই।”
” না আমি যাবো না। ” দিবা একটু পিছিয়ে যায়। তার শরীর ঘামছে। এই মুহূর্তে রাফিনের সাথে দেখা করা কোনমতেই সম্ভব না৷ সে নিশ্চয়ই দিবার বিয়ের খবর জানতে পেরে ঝগড়া করার উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে। রাগারাগি করবে, মেজাজ দেখাবে, বিশ্বাসঘাতকিনী বলে অপবাদ দিতে চাইবে। ওসব সহ্য করার মতো মানসিক শক্তি এই মুহূর্তে দিবার নেই৷ সে রাফিনের মুখোমুখি হতে চায় না। তাই রাস্তা বদলে পেছনের গেইট দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
হঠাৎ অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে দিবার। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয় ফোনটা বুঝি রাফিন করেছে। কিন্তু সে দিবার নতুন নাম্বার জানে না৷ খুব আশঙ্কা নিয়ে দিবা ফোনটা রিসিভ করে। কিন্তু কথা বলে না। ওই পাশ থেকে একটা মেয়েলি সুর ভেসে আসে,” হ্যালো, দিবা রহমান বলছেন?”
” জ্বী, বলছি। আপনি কে?”
” আমি রোদেলা হাবিব। আপনার সাথে জরুরী প্রয়োজনে একটু দেখা করতে চাই। আপনি কি ফ্রী আছেন? আমি আপনার ভার্সিটির বাইরেই দাঁড়িয়ে আছি। গেইট থেকে বের হলেই আপনি আমার এশ কালার গাড়িটা দেখতে পাবেন।”
খুব আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে স্পষ্ট কণ্ঠে কথাগুলো বলে যায় মেয়েটা। দিবা দ্বিধায় পড়ে যায়। কে এই রোদেলা হাবিব? পরমুহূর্তেই মনে পড়ে, ঈশানের প্রাক্তন স্ত্রীর নাম রোদেলা। মুহূর্তেই শিরদাঁড়া কেমন ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ভদ্রমহিলা হঠাৎ তার সঙ্গে দেখা করতে চায় কেন? উদ্দেশ্য কি তার?
*গল্পটা কেমন লাগছে আপনাদের? সবাই কমেন্ট করবেন।
চলবে