#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ১২
Sidratul Muntaz
(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।)
রাফিন আজ আবারও দিবার ভার্সিটির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে আজ শুধু দাঁড়িয়ে থেকেই ক্ষান্ত হয়নি। সরাসরি ক্যাম্পাসে ঢুকে ডিপার্টমেন্টে হানা দিয়েছে। মণি আর শাম্মি তখন গল্প করতে করতে ক্যান্টিন থেকে বের হচ্ছিল। তখনি ডিপার্টমেন্টের কাছে রাফিনকে দেখে থেমে দাঁড়ায় মণি।
” আরে, ওইটা রাফিন ভাইয়া না?”
শাম্মি বিরক্ত হয়ে বলে,” আবার এসেছে? কি আশ্চর্য! উনাকে বোঝানো দরকার, দিবার এখন বিয়ে হয়েছে৷ শুধু শুধু মেয়েটার সংসারে ঝামেলা না লাগালে হয় না?”
মণি এগিয়ে যায়৷ রাফিন তাদের দেখতে পেয়েই ছুটে এসে রুক্ষ গলায় বলে,” দিবা কোথায়? ওকে ক্যাম্পাসে দেখছি না কেনো?”
মণি শুকনো মুখে বলে,” দিবা আজ আসেনি ভাইয়া”
” কেনো আসেনি? সত্যিই আসেনি নাকি তোমরা মিথ্যা বলছো? দেখো আমার কাছে লুকিয়ো না৷ দিবার সাথে কথা বলাটা এখন আমার জন্য খুব জরুরী৷ প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো!”
রাফিনের কণ্ঠ থেকে আকুতি ঝরে পড়ছে। মণি আর শাম্মি চোখাচোখি করে৷ রাফিন অনুরোধ করে বলে,” এক কাজ করো, ওর ফোন নাম্বারটা এটলিস্ট আমাকে দাও। প্লিজ!”
শাম্মি বোঝানোর চেষ্টায় বলে,” এটা সম্ভব না ভাইয়া।দিবা এখন অনেক ব্যস্ত। আমাদের সাথে কথা বলারই সময় নেই ওর। আপনার ফোন কিভাবে ধরবে?”
রাফিন রেগে উচ্চারণ করে,” ব্যস্ত মানে? কিসের এতো ব্যস্ততা? হাজব্যান্ডের সাথে হানিমুনে গিয়েছে নাকি?”
মণি বলে,” বিদেশ থেকে ওর শ্বশুর-শাশুড়ী আসবে আজ। এই নিয়ে ও ভীষণ ব্যস্ত। আর আপনি কেনো শুধু শুধু মেয়েটার পেছনে লেগেছেন? ওর হাজব্যান্ড খুবই কনজার্ভেটিভ। চব্বিশ ঘণ্টা ওর উপর নজর রাখে। এভাবে প্লিজ ওর সংসারে ঝামেলা লাগাবেন না।”
রাফিন কোমরে হাত রেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,” ঝামেলা? আর ও যে আমার জীবনে ওয়াট লাগিয়ে দিয়েছে সেটা? যাইহোক, ওকে বলে দিও বুকের পাটা থাকলে অন্তত একবার যেন আমার মুখোমুখি হয়। ওর সাথে বোঝাপড়া না করা অবধি আমি থামব না। কথাটা জানিয়ে দিও ওকে।”
মণি আর শাম্মি শুধু তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না। রাফিন তার কথা শেষ করে চলে যায়। দিবার শ্বশুর-শাশুড়ী বিদেশ থেকে এসেছে, এটা ভেবে একটু হাসে সে। ভালোই৷ নতুন সংসারে ব্যস্ত হয়ে গেছে তাহলে। কি কাকতালীয় ব্যাপার! আজ তার অফিসের বসেরও বাবা-মা আসছে বিদেশ থেকে৷ তাই অফিস থেকে দ্রুত বের হয়ে গেছেন ঈশান স্যার। সেজন্যই রাফিন একঘণ্টার ব্রেক নিয়ে বের হতে পেরেছে। নয়তো ঈশান স্যার অফিসে থাকলে কখনোই এতো সহজে বের হওয়া যেতো না।
দিবার শ্বশুর-শাশুড়ি আসছে বিদেশ থেকে। ঈশান আর রোজা তাদের রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গিয়েছে। বাসায় দিবা আর আয়েশা তাদের আপ্যায়নের আয়োজনে ব্যস্ত। আয়েশা ঘর-দোর সব সুন্দর করে গুছাচ্ছে। আর রান্নার পুরো দায়িত্ব পড়েছে দিবার কাঁধে। এছাড়া দুইজন কাজের মেয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করছে, এতোদিন তারা ছুটিতে ছিল। দিবার শাশুড়ি ইলরা আসছে বলে তাদের গ্রাম থেকে ধরে আনা হয়েছে। এখন থেকে নাকি ঘর-বাড়ি ঝকঝকে সাজানো থাকতে হবে। ইলরার সুচিবায়ুর সমস্যা আছে।
দিবা মাংসের মশলা কষানোর জন্য খুন্তি নাড়তে নাড়তে জিজ্ঞেস করে,” আচ্ছা ফুপু, খাবারে ঝাল কেমন দিবো?”
আয়েশা খুব সতর্ক স্বরে বলেন,” একদম কম! আমার ভাই কিন্তু খাবার-দাবারের ব্যাপারে খুব সিনসিয়ার। হেলদি তবে সুস্বাদু খাবার পছন্দ করে। বেশি তেল দেয়া খাবার খায় না, মশলা বেশি দেয়া যাবে না, তাই একটু সাবধানে আর বুঝে-শুনে।”
দিবা হেসে বলে,” ঈশান সাহেবও তো এমন, হেলথ কনশিয়াস। উনার জন্য রান্না করতে করতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।”
আয়েশা বলেন,” শ্বশুর-শাশুড়ীকে হাত করার প্রথম ধাপ হচ্ছে রান্না। যদি তারা রান্না পছন্দ করে তাহলে প্রথমেই তুমি পাশ। তাই ভালো করে মন দিয়ে রান্না করো।”
তাদের ফেরে দুপুরের একটু আগে। ইলোরা এক হাত ব্যাগের স্ট্র্যাপ ধরে, অন্য হাতে সানগ্লাস খুলতে খুলতে ভেতরে ঢুকেন। পেছনে আলিফ সাহেব, সুদর্শন, ছিমছাম চেহারার এক ভদ্রলোক, সফট টোনে কথা বলছেন স্ত্রীর সাথে, চোখে হালকা ক্লান্তির ছাপ। ইলোরা খুব রেগে রেগে স্বামীর সাথে তর্ক করছে।
আয়েশা আফসোসের স্বরে কাজের মেয়ে হাফসাকে বলে,” ওইযে, ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই তাদের বাক-বিতন্ডা শুরু। ”
হাফসা আর রোকসানা মুখ টিপে হাসে। ঈশান গম্ভীর মুখে রোজাকে কোলে নিয়ে মা-বাবার পেছনে বাড়িতে ঢোকে। পাশে স্যুটকেস নিয়ে আসছে হোসেন। দিবা পরিপাটি হয়ে সামনে এগিয়ে আসে, তার হাতের ডিশে কয়েক গ্লাস ডাবের পানি আর ঠান্ডা ডেজার্ট।
“ আসসালামু আলাইকুম বাবা, আসসালামু আলাইকুম মা, ওয়েলকাম!” কিছুটা নর্ভাস হয়ে বলে দিবা।
আলিফ সাহেব ও ইলোরা দু’জনেরই মেজাজ তখন তীক্ষ্ণ। দিবার দিকে তাকায় তারা গম্ভীর দৃষ্টিতে। ঈশান বলে,” বাবা, এটা দিবা। ”
নামটা শোনা মাত্রই ঠোঁটে স্নেহময় হাসি ফুটিয়ে আলিফ সাহেব বলেন,” ওহ দিবা! কেমন আছো মা?”
” জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা ভালো আছেন তো?”
ইলোরা হেসে মাথা নাড়ে,” ভালো আছি। তা তুমি কি এনেছো আমাদের জন্য?”
“এইতো, প্রথমে ডাবের পানি। এই গরমে খুব উপকারী। ফ্রেশ হয়ে নিন, তারপর চা সার্ভ করব।”
ইলোরা হাসতে হাসতে বলেন,“ওয়াও! তুমি তো একেবারে হসপিটালিটি কোর্স করে ফেলেছো দেখি!”
দিবা লাজুক হেসে বলে,” জ্বী চেষ্টা করছি। ”
আলিফ সাহেব হালকা গলায় বলেন,“ডাবের পানি বেছে ভালো করেছো। ভ্রমণ শেষে সবচেয়ে হাইড্রেটিং।”
দিবা বলে,” জ্বী, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম চিনি দিয়ে শরবত করব। কিন্তু ফুপুর কাছে শুনেছি আপনি খুব হেলথ কনশিয়াস।”
আয়েশা হাসেন মিষ্টি করে। আলিফ সাহেব গ্লাসটা তুলে এক ঢোকে খেয়ে নেন। তারপর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলেন,” থ্যাংক য়্যু মা দিবা!”
” ঈশানের থেকে শুনেছি তুমি নাকি রান্নায় দারুণ! ” ইলোরা বলেন হাসি মুখে।
দিবা অবাক হয়ে তাকায় ঈশানের দিকে৷ সে চুপচাপ বসে আছে সোফায়, মনোযোগ মেয়ের দিকে। সে আবার দিবার রান্নার প্রশংসাও করে নাকি? কই, দিবার সামনে তো কখনও বলেনি কিছু!
ইলোরা আগ্রহ নিয়ে বলেন,” আজ তাহলে তোমার রান্না টেস্ট করবো?”
দিবা হেসে বলে,“হ্যাঁ, রান্না করেছি হালকা করে, কম তেলে। জানি না কেমন হয়েছে!”
আলিফ সাহেব বলেন,”ভালো করেছো। এতোদিন ভ্রমণে খাওয়া দাওয়া খুব এলোমেলো হয়ে গেছিল। অনেক দিন পর ঘরের খাবার খাবো ভেবেই শান্তি লাগছে।”
ইলোরা চোখ টিপে বলে,” তবে আমি কিন্তু দিবা সুস্বাদু খাওয়ার দলে! তোমার শ্বশুর ওসব বিস্বাদ খাবার কি করে মুখে তোলে কে জানে? আমি নরমাল খাবারই পছন্দ করি, একটু স্পাইসি আর মাখো মাখো!” বলেই উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন তিনি।
দিবা তার শ্বশুর-শাশুড়ীর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে এবার। হাসি মুখে বলে,” আপনার জন্য আলাদা করে মাখো মাখো ফ্রাইড চিকেন করেছি মা। পোলাও দিয়ে খেতে ভালো লাগবে।”
” বাহ, চমৎকার! রান্না ভালো হলে আমার দিক থেকে তুমি অফিশিয়ালি এপ্রুভড।” মজা করে বলেন ইলোরা।
আলিফ সাহেব নরম হাসি দিয়ে বলেন,“তুমি খুব গ্রেসফুল মেয়ে দিবা। আমাদের পরিবারে তোমাকে দেখে খুব ভালো লাগছে।”
দিবা হেসে ঈশানের দিকে তাকায় একবার৷ এতোক্ষণ ঈশান তাকেই দেখছিল। তবে দিবা তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
সন্ধ্যায় ছোটখাটো একটা গেট টুগেদারের আয়োজন হয়েছে। ইলোরার পরিবারের কিছু মানুষ আসবে দিবাকে দেখতে। আলিফ সাহেবের ভাই-বোনেরাও আসবে। আয়েশা দিবাকে বিকাল থেকেই তাড়া দিচ্ছে তৈরী হওয়ার জন্য৷ কিন্তু দিবা বুঝতে পারছে না কি রঙের শাড়ি পরবে! আলমারি খুলে হতাশ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার দুই হাতে হ্যাঙ্গারে দু’টো জামদানি শাড়ি ঝুলছে। একটা পিচ রঙের অন্যটা খয়েরী। হঠাৎ ঈশানের কণ্ঠ শোনা যায়। ফোনে কথা বলতে বলতে দিবার রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছে সে।
দিবা প্রশ্ন করে,” একটু দেখুন না, কোন শাড়িটা ভালো? ”
ঈশান তাকায় একবার। একটু দেখে ডানদিকে ইশারা করে। দিবা পিচ রঙের শাড়িটা তুলে বলে,” এটা?”
ঈশান থাম্বস আপ দেখায়। দিবা হেসে ফেলে। সেও এটাই ভাবছিল৷ ঈশান অবশ্য দাঁড়ায় না, চলে যায় সাথে সাথেই। দিবা দরজা আটকে শাড়ি পরে সাজ-গোজ করে রেডি হয়ে নেয়। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে দিবার বন্ধুরাও এসেছে। শাম্মি একবার ভাবে আজকে সকালে রাফিনের ঘটনাটা বলবে দিবাকে। রেখা নিষেধ করে,” কোনো দরকার নেই। মেয়েটা দেখছিস না কত হাসি-খুশি আছে? ওসব বলে ওর মুড অফ করার মানেই হয় না ”
মণি বলে,” একদম ঠিক৷ বাদ দে।”
দিবা তাদের দিকে হাসি মুখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,” কিরে, আমার দিকে তাকিয়ে কি ফিসফিস করছিস তোরা?”
রেখা হাসিমুখে বলে,” তোর প্রশংসা করছিলাম! শাড়ির রঙটা কি সুন্দর রে! তোকে একদম মালাই চমচম লাগছে।”
দিবা হেসে ফেলে খিলখিল করে৷ তারপর লাজুক মুখে বলে,” তোদের ভাইয়া পছন্দ করে দিয়েছে।”
শাম্মি আর মণি এবার ঠোঁট উল্টায়। মণি হাত তালি দিয়ে বলে,” ও, এবার বুঝলাম তোর গ্লোসিনেসের আসল রহস্য!”
” বাই দ্যা ওয়ে, উনার সাথে আলাপ হয়েছে তোদের?”
শাম্মি মাথা নেড়ে বলে,” হ্যাঁ, গেইটের কাছেই তো আলাপ হলো। আমাদের দেখেই চিনে ফেললেন। বললেন তোমরা দিবার ফ্রেন্ড না? আমরা তো একটু অবাক। খুব কর্ডিয়ালি ওয়েলকাম জানালেন তারপর।”
রেখা বলে,” শোন দিবা, প্রথম দিন উনার ছবি দেখে আমি যা যা মন্তব্য করেছিলাম সব ফিরিয়ে নিচ্ছি। হি ইজ আ পারফেক্ট ড্যাশিং ম্যান। কি সুন্দর ব্যবহার, কি এট্রাক্টিভ! তুই জিতেছিস৷ আর রোজা তো পুরাই একটা কিটক্যাট। এমন মেয়ে পাওয়াও সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
দিবা হাসতে থাকে বন্ধুদের কথায়। হ্যাঁ সত্যিই তাই। নিজের জীবনটাকে প্রথম দিকে সে যতটা জটিল ভেবেছিল, এখন সেটা একদমই মনে হয় না। বরং আর কয়টা স্বাভাবিক মেয়ের জীবনের চেয়ে তার জীবনটা অনেক রঙিন, অনেক সুন্দর!
রাতে অনেক গেস্ট থেকে গেছে বাসায়। পুরো ঘর ভর্তি হয়ে আছে মানুষে৷ দিবা রোজাকে খুঁজে পাচ্ছে না কোথাও। ঈশানের ঘরে ঢুকতেই দেখে সে ব্লেজার খুলছে গা থেকে। দিবা দ্রুত চলে যেতে নেয়। ঈশান বলে,” দাঁড়াও দিবা।”
থামে দিবা। আজ-কাল ঈশান তাকে ‘তুমি’ করেই বলছে। দিবার অবশ্য ব্যাপারটা খারাপ লাগছে না।
ঈশান গলা থেকে টাই খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,” তুমি কি রোজাকে খুঁজছো?”
দিবা মাথা নাড়ে,” হুম। ও রাতে মনে হয় ঠিক করে খায়নি। এখন ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়াবো।”
” প্রয়োজন নেই। ও মিসেস ইলোরার সাথে ঘুমিয়ে গেছে আরও ঘণ্টাখানেক আগেই।”
ঈশান নিজের মাকে মিসেস ইলোরা বলে ডাকে। যদিও সৎমা, তবুও এমন নাম ধরে ডাকার ব্যাপারটা দিবার কাছে কেমন যেন লাগে।
দিবা বলে,” আসলে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তো, ওর কথা একদম মাথায় ছিল না। ওর ঘুম পাচ্ছিল আমাকে আগেই বলেছে। কিন্তু গেস্টদের সময় দিতে গিয়ে…”
” আচ্ছা সমস্যা নেই। তুমি ভেতরে এসো।”
” জ্বী, ভেতরে?”
ঈশান স্বাভাবিক স্বরেই বলে,” হুম, এখন থেকে তোমাকে এই ঘরেই থাকতে হবে। কারণ বাবা চলে এসেছে। আর আজ কোনো রুমও খালি নেই।”
দিবা ভুলেই গেছিল। তবে আজরাতে সে ঈশানের সাথে থাকবে ভেবেই কেমন অদ্ভুত লাগে। এটা কিভাবে সম্ভব? তারা কি এক বিছানায় থাকবে?
দিবা ঈশানের সাথে একই বিছানায় শুয়েছে ঠিক, তবে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে শুয়েছে৷ একদম বিছানার শেষ প্রান্তে এমন নড়বড়ে হয়ে শুয়ে আছে যেন একটু ধা’ক্কা লাগলেই উল্টে পড়বে মেঝেতে। ঈশান ওর এই অবস্থা দেখে কঠিন গলায় বলে,” দিবা, কাছে এসো।”
ভারী কণ্ঠে মৃদু কেঁপে উঠে দিবা। নিজের অবস্থান থেকে সামান্য এগিয়ে আসে। তবে স্বাভাবিক হতে পারে না৷ ঈশান শক্ত গলায় বলে,” আরও কাছে এসো। আমার কাছে।”
দিবা খুব দ্বিধা নিয়ে আরেকটু এগোয়। ঈশান এই পর্যায় অধৈর্য্য হয়ে উঠে। একেবারে দিবার কোমর চেপে ধরে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তার এমন কান্ডে দিবা চ’মকে যায়। ঈশান তার উপর ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,” বি নরমাল। আমি অন্যকেউ না, তোমার হাজব্যান্ড।”
দিবা বড় বড় শ্বাস নেয়। ঈশান খুব কাছে ঝুঁকে আসে৷ তার শক্ত, লম্বাটে শরীরের ভারে দিবা যেন তার ছোট্ট শরীরটা নিয়ে নরম বিছানার গদিতে মিশে যাচ্ছে একদম! ঈশান বলে,” এতো কাঁপছো কেন তুমি? বি নরমাল!”
দিবা চোখ বন্ধ করে ফেলে। তীব্র অস্বস্তি আর লজ্জায় তার পালাতে ইচ্ছে করছে। ঈশানের পারফিউমের ঘ্রাণে মাথা ধরে যাওয়ার যোগাড়। দিবাকে একবার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে ঈশান কোমল গলায় বলে,”শাড়িটায় তোমাকে মানিয়েছে খুব। মিষ্টি লাগছে!”
দিবা কাঁপা গলায় বলে,” আপনিই তো সিলেক্ট করে দিলেন।”
” তাই নাকি? আমি সিলেক্ট করেছিলাম?”
” হুম। রেডি হওয়ার আগে আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম কোনটা পরবো৷ আপনি এটা দেখালেন।”
ঈশান মৃদু হেসে বলে ” বাহ, আমার কথায় শাড়ি পরতে পেরেছো, এখন খুলতে পারবে তো?”
দিবার নিঃশ্বাস আটকে আসার অবস্থা হয়। চোখ বড় করে তাকায়। এবারও সে বুঝতে পারে না ঈশান মজা করছে নাকি সিরিয়াস! কয়েক মুহূর্ত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে সে ঢোক গিলে উচ্চারণ করে,” মানে?”
ঈশান ধৈর্য্য নিয়ে জবাব দেয়,”মানে সম্মতি চাইছি তোমার। ইচ্ছে না থাকলে বলো।”
দিবা থম মেরে যায়৷ কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মাথা নাড়ে, বলে,”ইচ্ছে থাকবে না কেনো? আর এটা তো আপনার অধিকার।”
ঈশান সন্তুষ্ট হয় দিবার উত্তরে। আলতো করে কপালে চুমু দেয়। তারপর শাড়ি খোলার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতেই দিবা কাঁপা কণ্ঠে বলে,” আপনি সেফটিপিন খুঁজে পাবেন না। আমি খুলছি।”
ঈশান থামে, গভীর চোখে তাকায়, মরিচ বাতির নরম আলোয় ফকফকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবকিছু। ঈশানের ওই গাঢ় দৃষ্টির নিচে দিবা যেন মরমে ম’রে যাচ্ছে! ধীরে ধীরে সে কাঁধের পেছন থেকে সেফটিপিনটা খোলে। ঈশান সঙ্গে সঙ্গে শাড়ির আঁচল টেনে নামিয়ে দেয়। দিবার পুরো শরীর ঝংকার দিয়ে ওঠে।
আলতো হাতে ঈশান খুব যত্নের সাথে একটা একটা করে কুচি খুলতে থাকে। তার আঙুলের প্রতিটি ছোয়া যেন দিবার শরীরে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেয়। লজ্জায় চোখ বুজে ফেলে সে। দেখতে চায় না এই দৃশ্য! অন্যকিছু ভাবার চেষ্টা করে, কিন্তু লাভ হয় না৷
দিবার ফর্সা পেটের ঢেউ দেখে ঈশান নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না বেশিক্ষণ। হঠাৎই তার ঠোঁটের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে উদরের কোমল ত্বকে। ধীরে ধীরে সেই স্পর্শ উঠে আসে দিবার উরোজ অবধি।
দিবার শরীর জমে গেছে পুরো। না চাইতেও মুখ দিয়ে মৃদু চিৎকার বেরিয়ে আসে। ঈশান মুখ তুলে দিবার ঠোঁট দু’টো চেপে ধরে এবার৷ দিবার চোখ বড় হয়ে যায়। আর কোনো শব্দ করতে পারে না সে। শুধু হাতের মুঠোয় চেপে ধরে রাখে ঈশানের টি-শার্ট। ঈশান টেনে দিবার দামী শাড়িটা ফেলে দেয় মেঝেতে, প্রচন্ড অবহেলায়। সময় অতিবাহিত হতে থাকে। সেইরাতে দিবা নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করে। সবকিছু বদলে যায়।
চলবে