শর্তসাপেক্ষে পর্ব-২১

0
10

#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ২১
Sidratul Muntaz

দ্যা রিজ কার্ল্টন, লস এঞ্জেলসের খুব বিলাসবহুল ফাইভ স্টার হোটেল। নিজের ক্লাস আর প্রাইভেসী মেইনটেইন করতে সফল বিজনেসম্যান ঈশান আহসানের প্রথম পছন্দ ডাউনটাউন এলএ। এটি লস এঞ্জেলসের বিজনেস ও ফাইনান্সিয়াল হাব। এখানে সব স্কাইইস্ক্র্যাপার অর্থাৎ আকাশছোঁয়া উঁচু দালান আর বিলাসবহুল এপার্টমেন্ট রয়েছে।

দিবার জন্য এটা প্রথম বিদেশ যাত্রা। তারা ভোর ছয়টায় শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। আমেরিকা আসতে তাদের পুরো একটি দিন অর্থাৎ চব্বিশ ঘণ্টা লেগে যায়৷ এই পুরোটা সময় ঈশান তার অফিসিয়াল আর ব্যক্তিজীবন এতো নিখুঁতভাবে সামলে নিয়েছে যে দিবার একবারও মনে হয়নি যে এটা কোনো অফিসিয়াল ট্রিপ। বরং মনে হচ্ছিল তারা ব্যক্তিগতভাবেই ট্যুরে এসেছে। একবারও অফিসের কারো সাথে দিবার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। ঈশান শুধু কিছু মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হয়েছিল, এই যা! অতঃপর তারা যখন লস এঞ্জেলসের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছায়, তখন বিকাল চারটা বাজে।

বিকাল নরম আলো শহরের জমকালো পরিবেশ অত্যন্ত মায়াবী করে তুলেছে৷ দিবার কাছে সব এতো অন্যরকম লাগছে, মনে হচ্ছে স্বপ্নের দুনিয়া! যদিও সে ঈশানের উপর প্রচন্ড রেগে আছে কিন্তু তবুও নিজের মুগ্ধতা আর বিস্ময় ধামাচাপা দিতে পারছে না। পরিচ্ছন্ন শহরের দুই ধারে একের পর এক পাম গাছ যেন নির্দ্বিধায় স্বাগতম জানাচ্ছে তাদের। খুবই শান্ত একটা অনুভূতি হচ্ছে দিবার। মুগ্ধ হয়ে সে দেখছে বাহিরটা, একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম পরিবেশ, ভিন্ন আবহ, মানুষের জীবনযাত্রাও ভিন্ন৷ গাড়ির ভেতর এসি চলছে, তারা লস এঞ্জেলসের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাচ্ছে। এটুকু রাস্তা যাওয়ার সময় দিবা খুব মুগ্ধ হয়ে দেখছে বাহিরের কফিশপ, সাইকেল নিয়ে চলে যাওয়া কিশোর, কালো কোর্ট পরিহিত অজস্র ব্যস্ত মানুষ! ভেতরে এসি চলছে বিধায় জানালা বন্ধ।

হঠাৎ করেই জানালা খুলে যায়, দিবা একটু বিস্মিত হয়ে সামনে তাকায়৷ ঈশানের কারসাজি এটা? সে অবশ্য কানে এয়ারপড গুঁজে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। দিবার দিকে যেন খেয়ালই নেই।

তারা যখন গন্তব্যে পৌঁছায়, বিশাল ক্রাইস্ক্যাপার বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে দিবা খুব বিস্ময় নিয়ে তাকায়। রোজার হাত ধরে ফিসফিস করে,” দেখেছো বার্বী ডল, কি সুন্দর! এক্সাইটেড লাগছে না তোমার?”

রোজা মাথা নাড়ে, তবে সে দিবার মতো এতোটাও উত্তেজিত নয়। কারণ বাবার সাথে সে আরও একবার এখানে এসেছিল। রোদেলার সাথে ডিভোর্সের পর ঈশান যতবার দেশের বাইরে গিয়েছে, রোজাকেও সাথে নিয়েছে। তাই সে দিবার মতো এতো উত্তেজনা বোধ করছে না, এসবে সে অভ্যস্ত। একজন বেলবয় এসে তাদের লাগেজ তুলে নেয়। হাসিমুখে খুব ফরমাল কণ্ঠে ইংরেজিতে বলে,” আসুন ম্যাম, আসুন স্যার!”

ঈশান ইশারায় বোঝায় শুধু দিবা আর রোজাকে নিয়ে যেতে। এখানে তার কিছু কাজ আছে। একবার আঁড়চোখে ঈশানকে দেখে চুপচাপ বেলবয়ের সাথে চলে যায় দিবা। লিফটে উঠে তার আত্মা কাঁপতে থাকে৷ তারা কতটা উপরে যাবে? দিবার আবার হাইটোফোবিয়া আছে। সে ভ’য়ে ভ’য়ে জিজ্ঞেস করে ইংরেজিতে,” আচ্ছা আমরা কয়তলা পর্যন্ত উঠবো?”

রোজা হাতের ইশারায় দেখায়,” পাঁচ।”

দিবা হাঁফ ছেড়ে বলে,” ওহ মাত্র ফাইভ! এটা তো খুব কম।”

তখন বেলবয় জবাব দেয় শান্ত স্বরে,” নো ম্যাম, ইটস ফিফটি!”

দিবার চোখগুলো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়। সত্যি কিছুটা তিরতির করে কাঁপতে থাকে হাত এবং পা। জীবনে এই প্রথমবার পঞ্চাশতলার উপরে উঠবে সে। বেঁচে থাকতে পারবে তো? এখনি কেমন মাথা চক্কর দিচ্ছে।

রোজার খুব হাসি পায় দিবার ভ’য় পাওয়া দেখে। সে শক্ত করে দিবার হাত ধরে রাখে। তাকে চোখের ইশারায় বোঝায়, “ভ’য় নেই। ডন্ট এফ্রেইড! আমি আছি।”

দিবা একটু হেসে ভীষণ মিষ্টি মুখটায় চুমু দেয়। এতে কিছুটা প্রশান্তি আসে মনে। বেলবয় তাদের বিশাল পেন্টহাউজে নিয়ে আসে। ঈশান এমন বিলাসবহুল আর রাজকীয় ধরণের পেন্টহাউজ এই প্রথম বুক করেছে শুধু এবং শুধু ফ্যামিলি প্রাইভেসী মেইনটেইন করার জন্য।

বেলবয় তাদের সমস্ত ব্যবস্থাপনা বুঝিয়ে দিতে থাকে, কোথায় বাথরুম, কিচেনেট, বেডরুম… এছাড়া এখানে একটা আলাদা দরজা আছে। ওই পাশে আলাদা আরেকটা সুইট। ভীষণ সুন্দর ওই দরজাটা ঠেলে দিবা ওই পাশে যেতে উদ্যত হতেই বেলবয় সাবধানী নির্দেশনা দেয়,” ম্যাম প্লিজ, ওদিকে যাবেন না।”

দিবা থেমে গিয়ে বলে,” ওহ স্যরি, এটা বুঝি অন্য মানুষদের?”

” নো ম্যাম। পুরো পেন্টহাউজ আপনাদের জন্য। কিন্তু এটা স্যারের পারসোনাল স্পেস। ওখানে কাউকে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন স্যার। তবে ছোট মিস চাইলে যেতে পারেন।”

দিবার পুরো গায়ে রাগের আগুন ধরে যায়। ছোট মিস যেতে পারে মানে শুধু রোজাই ওখানে যেতে পারবে। আর দিবার জন্য নিষিদ্ধ! অর্থাৎ সে এভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে যেন দিবা তার কেউই হয় না। এই বেলবয় তার পরিচয় জানে তো? নাকি সে শুধু দিবাকে রোজার কেয়ারটেকার ভাবছে! অপমানে দিবার মুখটা থমথমে হয়ে উঠে।

বেলবয় দেখায় দিবার জন্য কত সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে সুইটে। সে চাইলেই বিশাল ব্যালকনি থেকে পুরো শহরের সৌন্দর্য্য একনজরে দেখে নিতে পারবে। যখন মন চাইবে, সে এখানকার স্পেশাল পার্লারে গিয়ে হেয়ার স্পা, ফেসিয়াল, বডি ম্যাসাজ নিতে পারবে। ব্যক্তিগত জিমনেসিয়াম আছে যেখানে সব ধরণের যন্ত্রপাতি আছে এক্সারসাইজের জন্য৷ তাছাড়া দিবার যখন যা খেতে ইচ্ছে করবে, শুধু রিমোট টিপে ডাকার অপেক্ষা!

এসব দেখেও দিবার মন ভালো হয় না বরং রাগে আরও মাথার শিরা দপদপ করতে থাকে। ঈশান এসব দিয়ে কি বোঝাতে চায়? দিবা তার দয়া নিয়ে চলবে? এসব করে সে দিবাকে খুব খুশি রাখবে? এটা বাংলাদেশ হলে সে এই মুহূর্তে হোটেল থেকে বের হয়ে যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যেতো। কিন্তু এখান থেকে সে কোথায় যাবে? কিছুই তো আর চেনে না এই অচেনা শহরে।

বেলবয় চলে যাওয়ার পর দিবা অনেকক্ষণ থমথমে মুখে বসে থাকে একটা সোফায়। ড্রেস চেঞ্জ করতেও ইচ্ছে হয় না তার। একদম মুডটাই খারাপ হয়ে গেছে।

রোজা তার নিজের কাজে ব্যস্ত, তার জন্য একটা ছোট্ট বেবি স্পেস যেখানে টেন্ট, বই আর খেলনার ব্যবস্থা আছে। ছোট চেয়ার টেবিল, লোগো, রুবিক্স কিউব, স্টাফড টয় আর একটা বিশাল টিভি।

দিবার নিজের ঘরেও বিশাল আকারের ওয়াল-মাউন্টেড স্মার্ট টিভি আছে। আরও আছে একটা পারসোনাল বুক সেল্ফ যেখানে অসংখ্য বই, একটা রিক্লনিং চেয়ার৷ আরামে বসে এখানে বই পড়া যাবে। অথবা চাইলেই সে এখনি অভিজাত বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটা বডি স্পা নিয়ে নিতে পারে। তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে ছোট বার, যেখানে কফি মেশিন, চায়ের কেটলি, গ্রীন টি, খুব সুন্দরভাবে গোছানো আছে। উষ্ণ পানীয় পান করতে করতে সে পুরো শহরের সৌন্দর্য্য দেখবে স্বপ্নময় দৃষ্টিতে।

এসব তখনি সম্ভব হতো যখন ঈশানের সাথে তার সম্পর্কটা স্বাভাবিক থাকতো। ঈশান তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বোঝাতো, দিবার জন্য সে পুরো দুনিয়া এনে দিতে প্রস্তুত! বরং দিবাই তার কাছে দুনিয়া! যেমনটা গত পাঁচমাস ধরে হয়ে আসছিল।

কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে, দিবার যেন নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে। সে যেনো শুধুই একটা প্রয়োজনীয় বস্তু। যাকে ঈশান শুধুই স্বার্থের জন্য ব্যবহার করছে৷ ভালোবাসা থাকলে সে নিশ্চয়ই এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারতো না।

দিবা যখন উদাস মুখে এসে ভীষণ সুন্দর ব্যালকনিতে দাঁড়ায়, দেখতে পায় চারদিকে স্বচ্ছ কাঁচে মোড়ানো দেয়াল। যেন বিশাল শহরটা আয়নার মতো ঝকঝক করছে সামনে। নিচে ডাউনটাউন এলএ’র অভিজাত পরিচ্ছন রাস্তা, আলোময় গাড়িগুলো কত ছোট দেখাচ্ছে। ছোট ছোট কফিশপে মানুষের আনা-গোনা, শপিং সেন্টার থেকে বের হচ্ছে মেয়েরা, কাপলরা, সবাই কত খুশি, সুখী! অথচ দিবা যেন সোনার খাচায় বন্দী হয়ে মানুষের ওসব সুখ দেখছে। তার মনে আনন্দের লেশমাত্র নেই। শুধু আছে বুকভরা বিষণ্ণতার পাহাড়!

নিজের অপূর্ণতার জন্যই কি সে সব সুখ হারিয়েছে? তার মতো অভাগীর কপালে বুঝি কখনও আর সুখ আসবে না? তার স্বপ্নগুলো সব মিথ্যা হয়ে গেল। এই মুহূর্তে, ঠিক এই মুহূর্তে দিবার সবচেয়ে দমবন্ধ লাগছে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে নিজের আগের জীবনে। যেখানে সে অবহেলিত ছিল, কিন্তু মুক্ত-স্বাধীন ছিল। এরকম বিষাক্ত কষ্ট তো সহ্য করতে হয়নি! সে আবার আগের দিবা হয়ে যেতে চায়। এই ঐশ্বর্য্য, জৌলুস, তার জন্য নয়৷ সে শুধুই একটা আশ্রয় চেয়েছিল ঈশানের বুকে। যা ঈশান দিয়েও ছিনিয়ে নিয়েছে! এখন দিবার আর কিছুই চাওয়ার নেই।

সূর্যটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে ধীরে ধীরে, আকাশের উজ্জ্বল রঙ কালো হয়ে এসেছে, একইসাথে দিবার মনের মেঘ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

একই হোটেল রিজ কার্লটনের কর্পোরেট ফ্লোরে রাফিনসহ টিমের সকলের থাকার সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা হয়েছে। ঈশান এমনভাবেই সব আয়োজন করেছে যেন তার ব্যক্তিগত আর প্রফেশনাল জীবনে এতোটুকু সংঘর্ষ না হয়।

রাফিনের জন্যও এটাই প্রথম বিদেশ যাত্রা! একসময় সে আর দিবা একসাথে বাংলাদেশের কত সুন্দর সুন্দর জায়গা ঘুরেছে। স্বপ্ন ছিল একদিন একসাথে বিদেশেও ভ্রমণ করবে তারা। স্বপ্নগুলো কি বিদ্রুপাত্মক ভাবে সত্যি হয়ে গেছে, একই সাথে তারা আজ বিদেশ ভ্রমণ করছে। অথচ একই ফ্লাইটে এসেও দিবাকে একবার দেখা তো দূর, তার কণ্ঠ শোনার সৌভাগ্য পর্যন্ত হয়নি রাফিনের।

নিজের হোটেলরুমের বিছানায় এসে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে সে এসবই চিন্তা করছিল। হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পিআর তামান্না এবং আরও কয়েকজন জুনিয়র মেয়ে। লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আসিফও আসে।

লিজা হাস্যজ্জ্বল কণ্ঠে বলে,” কি অবস্থা রাফিন ভাইয়া? এভাবে শুয়ে আছেন যে? ডিএল-এ তে এসে আপনার ভালো লাগছে না? আমরা তো কতকিছু প্ল্যান করছি!”

তামান্না হাত তালি বাজিয়ে বলে,” উঠুন দ্রুত, আমরা সানসেট বুলেভার্ডে ঘুরতে যাচ্ছি।”

টিনা মজা করে বলে,” হ্যাঁ আপনাকেও যেতে হবে। কারণ আপনাকে ছাড়া আমাদের ট্যুরই পূর্ণ হবে না।”

আসিফ ভ্রু উঁচু করে বলে,”ওরে বাবা, তাই নাকি? দেখেছেন রাফিন ভাই, কত দাম দিচ্ছে মেয়েরা আপনাকে। বাহ!”

নাটকীয় ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টায় সে। লিজা টিপ্পনী কাটতে হেসে বলে,” এজন্য আমাদের আসিফ ভাইয়ের মনখারাপ হয়ে গেছে।”

তামান্না হেসে উঠে বলে,”আরে ধূর, আমি মজা করছিলাম। এখন কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। স্যার বলেছে আগামীকাল ক্লায়েন্ট ব্রিফিং থাকবে সকাল ১১টায়। আমাদের এর মধ্যে প্রিপারেশন নিতে হবে।”

টিনা আহত স্বরে বলে,” সেজন্য আমরা একটু বের হতেও পারব না তামান্না আপু? মাত্র একঘণ্টার জন্য? তাছাড়া আমার কিছু শপিং আছে।”

লিজাও অবুঝের মতো বায়না ধরে,” হ্যাঁ, হ্যাঁ,তাছাড়া লস এঞ্জেলসে কেনো এসেছি? শুধুই কাজ করব? একটু ঘুরে বেড়াবো না?”

তামান্না হাত ভাঁজ করে বলে,” তাহলে তোমরা যারা ঘুরতে যেতে চাইছো, আমি তাদের নাম স্যারের কাছে ইনফর্ম করব। স্যার বলেছে কে কখন বের হচ্ছে সেটা যেন তাকে জানানো হয়।”

এবার সবাই ভ’য় পেয়ে যায়। টিনা তটস্থ হয়ে বলে,” না থাক বাবা, আমি কোথাও যাবো না। শপিং কাল করলেও হবে।”

লিজা সাবধানে সোফায় বসে পড়ে বলে,” আমিও যেতে চাই না।”

আসিফ তাদের অবস্থা দেখে হাসে, রাফিন অবশ্য নির্বিকার! আসিফ থুতনিতে আঙুল ঠেকিয়ে বলে,” আমাদের তামান্না ম্যাডাম মনে হয় স্যারের কমান্ড খুব সিনসিয়ারলি মানছে! স্যারকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা? আবার প্রমোশন চাই নাকি? ”

তামান্না খানিকটা রুক্ষ স্বরে বলে,” এক্সকিউজ মি, আপনার মতো সবাই প্রমোশনের পাগল হয় না। আমি জাস্ট এটা স্যারের ভালো লাগার জন্য করছি।”

এই কথা বলে তামান্না নিজেই হালকা দ্বিধায় পড়ে যায়। কেনো বলল এটা? সবাই খুবই আগ্রহ নিয়ে তাকায়। টিনা তো খানিকটা ব্যঙ্গ করেই বলে ফেলে,” ও বুঝলাম! কিন্তু লাভ কি? স্যারের তো বিয়ে হয়ে গেছে।”

তামান্না কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,” আ’ম ইউর সিনিয়র অফিসার। মাইন্ড দ্যা লিমিটেশন্স। ডন্ট ক্রস ইট।”

এটুকু বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে যায়। একটা থমথমে নীরবতা বিরাজ করে। টিনাও খুব অপ্রস্তুত। কি হলো এটা? তামান্না তো সবসময় খুব হাসি-খুশি আর বন্ধুর মতো ব্যবহার করে জুনিয়রদের সাথে। সে নিজেই এই সাহসটা দিয়েছিল তাদের। তাহলে এখন হঠাৎ রেগে গেল কেন?

টিনার কলিগ অর্থাৎ তার সমমান এমপ্লয়ি লিজা তার কাঁধে হাত রেখে বলে,” বাদ দিন মিস টিনা। জানেনই তো, ঈশান স্যার সেকেন্ড বিয়ে করার পর থেকে ম্যাডামের মাথাটা একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। সে হয়তো ভেবেছিল স্যারকে ইমপ্রেস করে নিজেই কিছু একটা হয়ে যাবে।”

টিনা দ্রুত লিজাকে ইশারায় চুপ থাকার নির্দেশ দেয়। কারণ আসিফ স্যার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি এসব বুঝে ফেললে অবস্থা বেগতিক হবে! স্যারের কানে এসব পৌঁছালে তাদের চাকরিও যেতে পারে।

রাফিনের মনোযোগ তাদের দিকে নেই। সে ভাবছে অন্য কথা। কাল যখন সবাই মিটিংয়ে চলে যাবে, তখন রাফিন যদি এই রুমেই থেকে যায়? যদি সে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে মিটিং এটেন্ড না করে? আর সবাই যখন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকবে তখন সুযোগ বুঝে সে চলে যাবে উপরতলার পেন্টহাউজে। যদিও সে জানে না কত নাম্বার ফ্লোরে কিংবা কয় নাম্বার রুমে দিবা আছে। ঈশান এসব কাউকে জানায়নি।

কিন্তু রাফিন ঠিকই খুঁজে বের করবে। দিবার সাথে কথা বলা তার জন্য একান্ত জরুরী। নয়তো মনের এই অশান্তির আগুন নিভবে না!

সবাই দয়া করে রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন। আপনাদের অনুপ্রেরণায় আমি দ্রুত পরবর্তী পর্ব লিখতে বসতে চাই।*

পরের পর্বের জন্য পেজটিকে ফলো করে রাখুন

চলবে

#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ২১ ( অতিরিক্ত)
Sidratul Muntaz

রেবার মাথায় বেশ বড় একটা তোয়ালে। মুখ ভর্তি লাজুক হাসি নিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। কথা হচ্ছে দিবার সাথে। বোনের মুখে এতো হাসি দেখে দিবা প্রশ্ন করে,” কি করছো আপু? গোসল করে এসেছো নাকি?”

” আরে না, চুলে ভাপ নিচ্ছি। একটা হেয়ার প্যাক লাগিয়েছিলাম৷ কাল তোর ভাইয়া খুব দাম দিয়ে কিনে এনেছিল৷ আজ-কাল এতো চুল পড়ছে আমার!”

দিবা মৃদু হাসে। মলিন কণ্ঠে বলে,” ভালোই আছো তাই না?”

রেবা মাথা দুলিয়ে বলে,” হুম, সে কি আর বলতে? তুহিন তো এখন হেড অফিসের সব দায়িত্ব একাই সামলাচ্ছে। তার প্রমোশনের পর থেকে আশেপাশের কলিগরা এতো ঈর্ষা শুরু করেছে! এবার ইন্ডিয়া যাবোই দিবা। ডাক্তার দেখাবো, কি কারণে আমাদের বেবি হয় না, তিন- তিনবার মিসক্যারেজ হলো। তারপর থেকে সব বন্ধ!”

গাঢ় দীর্ঘশ্বাস বের হয় রেবার ভেতর থেকে। দিবা বিষণ্ণ চোখে বোনকে দেখতে দেখতে বলে,” তোমার আর আমার কপাল প্রায় এক। আমি জন্ম বন্ধ্যা আর তুমি…”

” তুই জন্ম বন্ধ্যা কে বলেছে? ওই এক্সিডেন্টটা না হলে তো…” রেবার কণ্ঠ হালকা কেঁপে আসে।

দিবা বিব্রত কণ্ঠে বলে,” বাদ দাও৷ তুহিন ভাইয়ের কি খবর সেটা বলো। আর বাকি সবাই ভালো আছে?” তোমার শাশুড়ী, ননদ?”

” হুম, আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছে। আর তোর তুহিন ভাইয়ের কথা কি বলবো? সে তো এখন মহা সুখী মানুষ। ঈশান নাকি আমেরিকা যাওয়ার সময় তাকে কোম্পানীর দায়িত্ব দিয়ে গেছে। সে এখন এমডির ভাব নিয়ে অফিসে যায়। আর দিন-রাত শুধু তোর প্রশংসা করে। তোকে বসের কাছে বিয়ে দিতে পেরেই তার কপাল খুলে গেছে। ” রেবা কথাটা মজা করে বলে হাসতে থাকে একা একাই।

দিবা বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে, যেন সে একটা ঘোরে। কিছুই শুনছে না। অথচ কয়েকদিন আগেও মেয়েটা কত প্রাণবন্ত ছিল। প্রতি কথায় শুধু হাসতো। আমেরিকা যাওয়া নিয়ে তো সে আরও আনন্দে মাতোয়ারা ছিল। তাহলে হঠাৎ কি হয়েছে? ঈশানের সাথে ঝগড়া নয়তো?

রেবা সাবধানে প্রশ্ন করে,” কি হয়েছে তোর?”

দিবা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,” তেমন কিছু না৷ রাখি আপু।”

” আরে, রাখবি কেন? ঈশান কোথায়? আর রোজা?”

” রোজা ঘুমিয়েছে। ওর আইপ্যাড এখন আমার কাছে। ওটা দিয়েই তোমার সাথে কথা বলছি।”

” তুই রোজার আইপ্যাড দিয়ে কেনো কথা বলছিস? তোর ফোন কোথায়?”

দিবা চুপ করে যায়। সে তো নিজের ফোন, কার্ড, সবই ঈশানকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তাই রোজার আইপ্যাড দিয়েই এখন কাজ চালাতে হয়। রোজা সবসময় আইপ্যাড হাতে নেয় না। শুধু বিকালে কিছু মুহূর্ত তাকে গেইমস খেলতে দেওয়া হয়। বাকিটা সময় এটা দিবার কাছেই জমা থাকে। তাই এখানে দিবা তার আইডি খুলে রেখেছে। রেবা আর ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে।

রেবা আবার জিজ্ঞেস করে,” কি হয়েছে তোদের মধ্যে? ঝগড়া?”

” আসলে আপু, জীবনে মানুষকে দূর থেকে যতটা সুখী মনে হয় সে আসলে তার চেয়েও বেশি দুঃখী হতে পারে। ব্যাপারটা কাছে গেলেই কেবল রিয়েলাইজ করা যায়। দূর থেকে কখনও বোঝা সম্ভব হয় না।”

রেবা কিছুক্ষণ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে। তারপর মুখ ভার করে বলে,” হঠাৎ এতো গভীর কথা বলছিস কেন? কি হয়েছে শেয়ার কর দ্রুত। মন হালকা হবে। আমি তোর একমাত্র বোন। তোর সুখের কথা যেমন আমাকে বলবি, দুঃখের কথাও আমাকে বলবি। আমরা দুইবোন যদি একজন-আরেকজনের কাছে মনের কথা খুলে বলতেই না পারি তাহলে আর কিসের বোন হলাম? আমাদের বাবা-মা তো বেঁচে নেই। এখন আমার আপন বলতে শুধু তুই আছিস৷ তোর আপন বলতে আমি আছি। বল বোন, কি হয়েছে?”

দিবা ঘোরগ্রস্তের মতো বলতে থাকে,” তোমার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে আপু। আমার উপর থেকে ঈশানের মন উঠে গেছে। সে হয়তো আর কখনোই আমাকে আগের মতো ভালোবাসবে না!”

এই মুহূর্তে দিবা খুব হতাশায় আছে, কথাগুলো বলতে না পারলে দমবন্ধ লাগতো৷ তাই বলেই শান্ত হয়েছে। রেবা কতক্ষণ হতবাক চেয়ে থেকে বলে উঠে,” আশ্চর্য! এতো দ্রুত মন উঠে গেল? তাহলে সে তোকে বিয়ে কেনো করেছিল? তুই তো বিয়ের আগেই সব জানিয়ে দিয়েছিলি তাই না?”

দিবা চ’মকায় একটু। থতমত খেয়ে তাকায়। বিয়ের আগে যেদিন রাতে দিবা ঈশানের সাথে দেখা করতে গেছিল, সেদিন বাড়ি ফিরে রেবাকে বলেছিল সব জানিয়ে এসেছে। তাইতো রেবা খুব পছন্দ করে ফেলেছিল ঈশানকে। নয়তো এই বিয়ে সে কখনও হতে দিতো না। দিবা ছোট থেকেই প্রবল ভালোবাসা কাতর মেয়ে ছিল। কেউ একটু আদর করে মাথায় হাত রাখলেও কেঁদে ফেলতো। অথচ অন্যরা শত অপমান করলেও কাঁদতো না। তাই রেবা চেয়েছিল দিবার বিয়ে এমন কারো সাথে হোক, যে মেয়েটার সমস্ত অপূর্ণতা মেনে নিয়েই তাকে ভীষণ ভালোবাসবে! কখনও কষ্ট দিবে না।

যে কারণে এক বাচ্চার বাবা ঈশানকে তার পছন্দ হয়নি। যেই লোক আগের বউকে ডিভোর্স দিয়েছে সে নিশ্চয়ই বিয়ে করবে শুধু নিজের মেয়ের কথা ভেবে। হয়তো সম্পর্কের কোনো গুরুত্ব তার কাছে থাকবে না। খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির হবে। এসব ভেবেই রেবা বিয়েটা দিতে চায়নি। কিন্তু দিবাই তো ঈশানকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছিল। এমনকি বোনের কাছে মিথ্যা বলেছে যে ঈশান সব মেনে নিয়েছে!

আসলে সত্যিটা হলো, দিবা কখনও ভাবেইনি ঈশান তাকে সত্যিকারের ভালোবাসবে। কিংবা সত্যি স্ত্রী হিসেবে এতো সম্মান, গুরুত্ব আর যত্ন করবে। এসব তো তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। সে নিজের এই অপূর্ণতার কথা জানানো এতো প্রয়োজনই মনে করেনি। ভেবেছিল একসময় বলবে, তখন ঈশান তাকে ডিভোর্স দিলে ভালো। না দিলেও কোনো ব্যাপার না। দিবা রোজার দেখা-শুনা করে কাটাবে সারাজীবন৷ এটাও কম কি? তার অন্তত একটা সংসার তো হবে!

কিন্তু ঈশান, সে তো উথাল-পাথাল ভালোবাসা আর প্রগাঢ় যত্ন দেখিয়ে দিবাকে একদম বিগড়ে ফেলেছে। এখন দিবা সব ছেড়ে বের হতে পারলেও ঈশানের প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারছে না। সে হয় আবার ঈশানকে আগের মতো চায়, নয়তো আর কিছুই চায় না।

এতোক্ষণ ধরে দিবার নীরবতা দেখে রেবা নিজেই আঁচ করে নেয় পুরো ব্যাপারটা৷ চোখ-মুখ শক্ত করে বলে,” তুই ঈশানকে কিছু জানাসনি তাই না? ও কি নিজে থেকে বুঝতে পেরেছে?”

দিবা ফুপিয়ে কেঁদে ফেলে এই পর্যায়। মাথা নাড়ে খুব অসহায়ের মতো। রেবা বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যায়। খুব আহত স্বরে বলে,” এটা খুব খারাপ হয়েছে দিবা, তুই এখন এই বাজে পরিস্থিতি কিভাবে সামলাবি? সারাজীবন এই খোঁটা সহ্য করে তোকে থাকতে হবে!”

দিবা মুখে হাত চেপে কাঁদতেই থাকে। রেবার নিশ্বাস আটকে আসার উপক্রম হয়। সে নিজেও তো ভুক্তভোগী৷ তাই বুঝতে পারছে দিবার কষ্টটা। কোনমতে বলে,” এক কাজ কর। বেরিয়ে আয় ওই জাহান্নাম থেকে। আমি তোকে আশ্রয় দিবো। তোর বোন এখনও বেঁচে আছে!”

দিবা খুব তিক্ত স্বরে বলে,” আশ্রয় শব্দটা আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি আপা। এটা আমি আর একদম শুনতে চাই না। আমি কোনো আশ্রয় চাই না। হয় এসপার নয় ওসপার। আমার সাথে কিছু একটা তো হবেই। আমি মেনে নিতে প্রস্তুত। এখন রাখছি।”

” মানে? তুই কি বলতে চাস?”

দিবা জবাব না দিয়ে ফোন রেখে দেয় আর নেটওয়ার্ক কানেকশন বন্ধ করে দেয়। তারপর ভূতগ্রস্তের মতো বসে থাকে চুপচাপ। রুমে সে একাই বসে আছে। রোজা ঈশানের পারসোনাল সুইটে। বাবার সাথে ঘুমাচ্ছে। সে বেশিরভাগ সময় ঈশানের কাছেই থাকে। দিবার কাছে খুব একটা আসে না।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দরজায় নক করে। দিবা দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে শুয়ে পড়ে, ভাণ করে ঘুমিয়ে যাওয়ার। কারণ সে জানে ঈশান ছাড়া অন্যকেউ আসবে না এই গভীর রাতে। আর সেও যে বিরহে কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে উঠেছে এটা তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না কোনোমতেই।

দিবা তার অভিনয়ে সফল হয়নি। ঈশান বিছানার কাছে দাঁড়িয়েই গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,” জানি তুমি ঘুমাওনি। চোখের পাতা কাঁপছে। চোখ খোলো, কথা শোনো আমার।”

দিবা মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত হয় নিজের প্রতি। সে কেনো এতো দূর্বল? তাকে শক্ত হতে হবে। ঈশানকে ফেস করার সাহস থাকতে হবে। সে শান্ত ভঙ্গিতে উঠে বসে চুপচাপ। মাথা নিচু করে বলে,” আপনি এসেছেন, আমি খেয়াল করিনি।”

” আমি যথেষ্ট শব্দ করেই হাঁটি, তাছাড়া নক না করেও রুমে ঢুকিনি যে বুঝতে পারবে না।”

দিবা জানালার দিকে চেয়ে ত্যাড়া উত্তর দেয়,” আমি শুনতে পাইনি! চোখ লেগে এসেছিল।”

” রাতে ডিনার করোনি কেনো? খাবার সব টেবিলেই পড়ে আছে।”

দিবা একবার টেবিলে পড়ে থাকা বাহারি আইটেমের খাবারের দিকে তাকায়। তারপর তাকায় তার সামনে সটান দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা-চওড়া মানুষটির দিকে। গায়ে ক্যাজুয়াল টি-শার্ট আর ট্রাউজার তার। দু’দিন আগেও ঈশানকে এই অবস্থায় দেখলে দিবা ধপ করে কোলে উঠে বসতো। আর এখন তার চোখের দিকে তাকাতেও অস্বস্তি লাগছে। তীব্র অপমানে গা টনটন করছে।

ঈশান শান্ত ভঙ্গিতে বসে বিছানায়, দিবার সামনে। দিবা একটু সরে যায়। যেন ঈশানের ছোয়া গায়ে লাগানোও পাপ। ঈশান প্রশ্ন করে,” না খেয়ে থাকবে কেনো? খাবার পছন্দ হয়নি? বলো তাহলে অন্যকিছু অর্ডার করছি।”

” না, আমি এমনি খাবো না। ক্ষিদে নেই।”

” ক্ষিদে নেই কেন? অসুস্থ? ওয়েট, আমি দেখি কোনো ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করতে পারি কি-না।”

” এতোরাতে ডাক্তার কোথায় পাবেন?”

” হেল্পডেস্কে ফোন করছি, ওরা ডাক্তার পাঠিয়ে দিবে এক্ষুণি। জাস্ট ফাইভ মিনিটস।”

” প্রয়োজন নেই।”

” অবশ্যই প্রয়োজন আছে।”

দিবা এবার র’ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলে,” খবরদার, এসব এক্সট্রা ঢং দেখাবেন না। আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান৷ তাহলে আমি এমনিই সুস্থ থাকবো। বুঝেছেন মিস্টার ঈশান আহসান, আপনার এসব টাকার গরম দেখতে দেখতে আমি ঝলসে যাচ্ছি। প্লিজ এবার একটু আমাকে মুক্তি দিন। প্লিজ!”

দুইহাত জড়ো করে অত্যন্ত উচ্চ কণ্ঠে কথাগুলো বলে দিবা। তার শরীর কাঁপছে, দৃষ্টি অশ্রুসিক্ত। ঈশান অবাক চোখে কতক্ষণ অবলোকন করে তাকে। একটু পর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে তার কাঁধে হাত রেখে ঠান্ডা গলায় বলে,” কামডাউন!”

দিবা শান্ত হওয়ার আগেই কাঁদতে শুরু করে।

চলবে।