#শর্তসাপেক্ষে
পর্ব ৩১
Sidratul Muntaz
গভীর রাত। তারা ঝলমলে আকাশে কোনো চাঁদের দেখা নেই৷ দিবা শুয়ে আছে রোজার পাশে। ছোট্ট রোজাকে গল্প শোনাতে শোনাতে তার নিজেরই ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছে। অথচ এই মেয়ের ঘুমের কোনো নাম নেই। তারা আমেরিকা থেকে ফেরার পরই এই সমস্যাটা শুরু হয়েছে। রোজার শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক এলোমেলো হয়ে গেছে৷ সে গতকালও ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। স্কুলে যেতে পারেনি। আজকেও নিশ্চয়ই তাই হবে! মেয়েটার চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই। কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
দিবা চোখ রাঙিয়ে বলে,” ঘুমাও! আরেকবার চোখ খুললে আমি কিন্তু বকা দিবো। ”
রোজা হেসে ফেলে, যেন দিবার বকা দেওয়ার ব্যাপারটা তার কাছে খুব মজার বিষয়৷ এইভাবে চাঁদের মতো হাসলে তো মন গলে যায়, আর বকা দিতে ইচ্ছে করে না। তবু দিবা ভ্রু কুঁচকে বলে,” খুব পাজি মেয়ে হয়েছিস তো তুই। এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কি আছে? রূপ বেড়ে গেছে আমার?”
নিচে থেকে হাসির আওয়াজ আসে। বিছানা পেতে হাফসা শুয়ে আছে ওখানে।
” হ আফা, কথা কিন্তু সত্যি। বিদেশ থেকা আইসা আরও সুন্দর হয়া গেছেন আপনি। তাই ছোট আফা চায়া আছে।”
” তুমি এখনও ঘুমাওনি হাফসা?”
” আপনেগো মা-মাইয়ার পেচাল শুইনা আমার ঘুম গেছেগা। কানের গোড়ায় কেউ ঘ্যানর ঘ্যানর করলে ঘুমামু কেমনে?”
” তোমাকে কে বলেছে এখানে শুতে? যাও নিজের ঘরে চলে যাও।”
হাফসা দ্রুত কাঁথায় মুখ গুজে বলে,” ওই ঘরে আমি যামু না। মাগো! ডর করে আমার।”
দিবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাসে। হাফসাদের জন্য আলাদা ঘর আছে, সে আর রোকসানা একসাথে ওই ঘরে থাকে। কিন্তু এখন রোকসানা নেই৷ তার মা অসুস্থ তাই গ্রামে গেছে। হাফসা তাই ওই ঘরে একা শোয় না৷ তার নাকি ভয় লাগে। এই বাড়িতে জ্বীন-ভূতের আছড় আছে বলে সে দিবাকেও ভ’য় দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দিবা ওর ওসব কথা পাত্তা দেয় না। ছোট থেকে বারান্দায় একা ঘুমিয়ে অভ্যাস তার। জ্বীন-ভূতের ভ’য় কি আর তাকে টলাতে পারবে?
কিছুক্ষণ পর রোজা সত্যি ঘুমিয়ে যায়। দিবা তাকে সুন্দরভাবে শুইয়ে দিয়ে নিজের বেডরুমে যায়। ঈশানও ঘুমিয়ে গেছে তখন। তার পাশে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ে দিবা। তারা বাংলাদেশে ফিরেছে এইতো তিনদিন হবে। সবার ঘুমের শিডিউল উলোটপালোট হয়ে গেছে। কাল খুব জরুরী ক্লাস আছে। ভার্সিটি যেতেই হবে। তাই দিবা দ্রুত চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। তখন হঠাৎ সে ঈশানের ভারী কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পায়।
বিস্ময়ে একটু অবাক হয়ে পেছনে তাকায় দিবা। ঘুমের মধ্যেই ঈশান শব্দ করছে৷ তার তো এমন কোনো অভ্যাস ছিল না। বিগত দুইদিন ধরে হচ্ছে এটা। লস এঞ্জেলসেও দুয়েকবার হয়েছিল। বিশেষ করে দিবার ওই এক্সিডেন্টের পর থেকে।
দিবা আলতো করে ঈশানের বুকে হাত রাখে। খানিক ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে,” ঈশান, আপনি ঠিকাছেন?”
ঈশানের কপাল জুড়ে ঘাম। সে ধপ করে চোখ মেলে তাকায়, ভ’য়ে চমকে যায় দিবা। ঈশান শোয়া থেকে উঠে বসেছে। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। দিবা এগিয়ে এসে আলতো করে তার গালে হাত রেখে বলে,” কি হয়েছে? দেখি আমার দিকে তাকান৷ খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন?”
মিষ্টি করে হেসে প্রশ্নটা করে দিবা। ঈশান কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তার দিকে চেয়ে থেকে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তার হৃৎস্পন্দনের গতি তখন তুমুলে। দিবা সেটা অনুভব করে খুব ভালোভাবেই। ঈশানের মাথায় হাত বুলিয়ে সে বলে,” কিচ্ছু হয়নি, এইতো আমি আছি৷ সব ঠিকাছে। রোজা ওর ঘরে ঘুমাচ্ছে। চাইলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।”
ঈশান গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায়। দিবার মুখটা আজলায় নেয়। সে এতোক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিল তা দিবাকে বলা সম্ভব না। স্বপ্নে দিবারই আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছিল সে। ভ’য়ে ভ’য়ে নয়বছরের ছোট্ট দিবা তার কাছে সাহায্য চাইছে। কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। একইভাবে সে রোজাকেও ওখানে দেখে। দিবার সাথে যেটা হয়েছে, সেটা তার মেয়ের সাথেও হচ্ছে! দু’জনই ঈশানের জীবনে সমান গুরুত্ব বহন করে। তাদের কারো আর্তনাদ ঈশান সহ্য করতে পারে না। এই ভ’য়াবহ স্বপ্ন দেখে প্রায় প্রতিরাতেই তার ঘুম ভেঙে যায়, গলা শুকিয়ে আসে, দমবন্ধ অনুভূত হয়।
তবে এই মুহূর্তে দিবার নির্মল মুখ আর ঠোঁটজুড়ে কোমল হাসি দেখে অনেকটা স্বস্তি লাগছে ঈশানের। সে গভীর আবেগ নিয়ে দিবার কপালে চুমু দেয়, তারপর গালে, তারপর ঠোঁটে। দিবা হেসে ফেলে বলে,” কি করছেন? আপনার কি হয়েছে এই মাঝরাতে? এই না দুঃস্বপ্ন দেখে ভ’য় পেলেন? এখন আবার রোমান্টিক মুডে চলে এলেন কেন?”
ঈশান ভারী কণ্ঠে জবাব দেয়,” তোমাকে দেখলেই আমার রোমান্টিক মুড চলে আসে।”
দিবা খিলখিল করে হেসে ফেলে। তার হাসির শব্দটা এতো মা’রাত্মক শোনায়! যেন অনেকগুলো কাঁচের চুরি ঝনঝন করে বাজছে!একদম নেশা লেগে যাওয়ার মতো।একটু আগেই সে যখন দিবা ও রোজার ক্ষয়িষ্ণু রূপ স্বপ্নে দেখেছে, তখন তার মধ্যে একটা রক্ষাকারী পুরুষ সত্তা জেগে উঠেছিল।
আর এখন দিবার প্রশান্তিময় চেহারা আর হাসির শব্দে তার প্রেমিকসুলভ হৃদয় জেগে উঠেছে। একটু আগের ওই মানসিক পীড়া থেকে মুক্তি পেতে ইন্টিমেসি হয়ে দাঁড়ায় একধরনের নিরাময়। তাই ঠেলে সে দিবাকে বিছানায় ফেলে দেয়। দিবা নিশ্চুপ হয়ে তাকায়, ঈশানের ওই গভীর চাহনি দেখে তারও নেশা লেগে যায়। মধ্যরাতে একজোড়া মানব-মানবী উত্তাল হয়ে ডুব দেয় তাদের নেশাময় অনুভূতিতে!
রিতু এসেছে বাপেরবাড়িতে। মা আর বোনের সাথে দেখা করতে। শাহনাজ বেগমের মন খুব খারাপ, ছেলেটার চাকরি চলে গেছে। মাত্র দশদিনের মাথায় এই বাসা ছাড়তে হবে তাদের। এর মধ্যে নতুন বাসা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চাকরি চলে যাওয়ার ব্যাপারটা তারা গতকালকেই জানতে পেরেছে। রাফিন আমেরিকা থেকে ফিরেছে এক সপ্তাহ হবে৷ প্রতিদিন সে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায়, ফেরে সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাতে৷ তারপর বিছানায় উল্টে শুয়ে থাকে। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলে না। গত সাতদিন ধরে এমনই চলছে। গতকাল শাহনাজ বেগম ছেলেকে চেপে ধরলেন, কি হয়েছে ওর? কেনো এমন অদ্ভুত আচরণ? গতকালকেই জানতে পেরেছে। রাফিন আমেরিকা থেকে ফিরেছে এক সপ্তাহ হবে৷ প্রতিদিন সে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায়, ফেরে সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাতে৷ তারপর বিছানায় উল্টে শুয়ে থাকে। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলে না। গত সাতদিন ধরে এমনই চলছে। গতকাল শাহনাজ বেগম ছেলেকে চেপে ধরলেন, কি হয়েছে ওর? কেনো এমন অদ্ভুত আচরণ?
তখন ভাবলেশহীন মুখে জানায়,” চাকরিটা আমার চলে গেছে মা।”
এমন কথা শুনে যেনো যথারীতি বজ্রপাত হয় শাহনাজ বেগমের মাথায়। মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে কাঁদতেই তিনি রিতুকে এসব বলছিলেন৷ রিতু চোখ-মুখ কঠিন করে বলে,” আমি জানতাম এটাই হবে একদিন। তোমার ছেলের জীবনে কিছু হবে না। ও একটা গাধা ছিল, এখনও গাধাই আছে। মানুষ আর হতে পারেনি।”
শাহনাজ বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন,” তুই জানতি মানে? কিভাবে জানতি?”
রিতু থমথমে মুখে বলে,” অফিসটা তো দিবার হাজব্যান্ডের। আমার তো মনে হয় দিবার সুপারিশেই ওকে চাকরিটা দেওয়া হয়েছিল৷ আমেরিকা গিয়ে নিশ্চয়ই উল্টা-পাল্টা কিছু করেছে। তাই চাকরিটা গেছে। নাহলে শুধু শুধু চাকরি যাবে কেন? যেমন হঠাৎ করে চাকরি হয়েছিল, তেমন হঠাৎ করেই চলে গেল৷ ব্যাপারটা রহস্যজনক না?”
শাহনাজ বেগম ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। একটু পর হতভম্ব ভাব কাটতেই ঢোক গিলে বলেন,” দিবার হাজব্যান্ড কি ওই অফিসের বস? ”
” হুম।”
রায়া পড়ার টেবিলে বসে অংক কষছিল৷ এই কথা শোনা মাত্র উচ্চকণ্ঠে বলে,” ও মাই গড! পুরা ফিল্মি টুইস্ট দেখি।”
শাহনাজ বেগম ধমক দিয়ে উঠেন,” এক থাপ্পড় দিবো। তুই আমাদের কথা কান পেতে শুনছিস কেন? যা চোখের সামনে থেকে। ”
রায়া মুখ ভার করে বলে,” তোমরাই তো আমার সামনে বসে কথা বলছো। আমার কি দোষ? কানে তুলে গুঁজে রাখবো?”
শাহনাজ বড় বড় চোখে তাকালেন,” মুখে মুখে তর্ক করার জায়গা পাস না? ঝাড়ুর বারি দিবো কিন্তু এখন।”
রায়া ভীত হয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়।এবার শাহনাজ বড় মেয়ের দিকে ঘুরে বলেন,”এটা তুই কেমন করে জানলি যে দিবার হাজব্যান্ডই রাফিনের বস ছিল?”
” তোমার ছেলেই বলেছে আমাকে। বিশ্বাস না হলে ওকেই ডেকে জিজ্ঞেস করো!”
শাহনাজ পরিশ্রান্ত কণ্ঠে বলেন,” থাক বাবা, আর জিজ্ঞেস করে কাজ নেই। আমি শুধু শুধুই আফসোস করছিলাম। ভালোই হয়েছে ওই চাকরি গেছে। এর থেকে আরও অনেক ভালো চাকরি পাবে আমার ছেলে।”
” কচু পাবে তোমার ছেলে। এতোদিনেও কিছু করতে পারল না! ওর উপর আমার আর কোনো ভরসা নেই। ও জীবনেও লাইফ নিয়ে সিরিয়াস হতে পারবে না৷ তাছাড়া নিজের কপাল ও নিজেই খেয়েছে। ”
শাহনাজ বিছানায় হেলান দিয়ে বলেন,” টেনশনে আমার কিছু ভালো লাগে নারে মা। আজ-কাল কোমরের ব্যথাটা এতো বেড়েছে!”
” সেজন্যই আমি এসেছি। তোমাকে ডাক্তার দেখাবো, চলো। এমনিতেও তোমার বেয়াড়া ছেলে কিছু করতে পারবে না। তুমি এখানে ম’রবে আর সে ফিরেও তাকাবে না।”
” তুই ডাক্তার দেখাবি মানে? তোর কাছে টাকা কোথায়?”
” প্রতিবেশী কয়টা বাচ্চাকে পড়ানো শুরু করেছিলাম। তারা আজ বেতন দিল। তোমার জামাইয়ের অনুমতি নিয়েই এসেছি। চিন্তা কোর না। যতদিন রাফিনের কোনো গতি না হচ্ছে, আমি তোমাদের পাশে থাকব।”
আবেগে কাতর শাহনাজ বেগমের চোখ দু’টো অশ্রুতে ভরে উঠে। সবসময় দুই মেয়ের মধ্যে থেকে ছেলেকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন তিনি। বড় মাছের টুকরা, মাংসের রান, ছেলের পাতে তুলে দিয়েছেন সবসময়। ছেলেকে তুলোর মতো নরম আদরে-আহ্লাদে মানুষ করেছেন। শেষ বয়সে ছেলে আশ্রয় হবে তার। কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন, ছেলে কিংবা মেয়ে কোনো বিষয়ই না। সুসন্তান হওয়া জরুরী। মেয়েটা এতো কষ্টের টিউশনের বেতন এনেছে মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। আসলে মেয়েরাই মায়ের দুঃখ বোঝে। ছেলেরা বোঝে না।
রায়া বাড়িতে এখন একাই বলা চলে। শাহনাজ বেগম রিতুর সাথে ডাক্তারের কাছে গেছেন। ফিরতে রাত হবে। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেই এডমিশন টেস্ট শুরু। তাই রায়া এখন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠে। দরজা খুলেই সে দেখতে পায় অন্তরা এসেছে।
অন্তরা রায়ার ঘনিষ্ট বান্ধবী। আগে রাফিনের ছাত্রী ছিল। চাকরি পাওয়ার পর রাফিন সব টিউশন ছেড়ে দিয়েছে। তাই অন্তরা প্রায়ই এখানে আসে, রাফিনের কাছে অংক বোঝার জন্য। আজও সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে।
রায়া বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে বলে,” কেমন আছিস দোস্ত? ভালো সময় এসেছিস। বাসায় কেউ নেই। আমি একা বোর হচ্ছিলাম।”
অন্তরার মুখটা চুপসে যায়। রাফিনের ঘরের বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে বলে,” স্যারও কি বাসায় নেই?”
রায়া হেসে বলে,” ভাইয়া আছে তো। কিন্তু তার থাকা না থাকা সমান! এমনিতেও তার সঙ্গে কথা বলা যায় না। মেজাজ সবসময় আসমানে চড়ে থাকে। আর চাকরি যাওয়ার পর থেকে তো…”
বাকি কথা আর উচ্চারণ করে না রায়া। জীভ কেটে নিজেকে সামলায়। তার অতিরিক্ত কথা বলার অভ্যাস আর যাবে না! এজন্য কত বিপদে পড়তে হয়!
” কি? রাফিন স্যারের চাকরি চলে গেছে? কবে হলো এসব?”
সোফায় বসতে বসতে চোখ বড় করে প্রশ্নটা করে অন্তরা। কাঁধের ব্যাগটা খুলে রাখে সেন্টার টেবিলে। তার উচ্চতা বেশ, পাঁচফুট সাত। মেদহীন শরীর, গায়ে টি-শার্ট আর জিন্স। লম্বা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে পিঠময়। গায়ের রঙটা কালো। আর এই কালো রঙের জন্যই তাকে দেখতে খুব আকর্ষণীয় লাগে। চেহারায় কেমন একটা মায়াময় ভাব! ফরসা হলে তাকে একদম মানাতো না।
বান্ধবীর জন্য কফি বানাতে বানাতে এসবই ভাবছিল রায়া। সে জানে, রাফিনের প্রতি অন্তরার একটা দূর্বলতা আছে। ব্যাপারটা রায়ার ভালোই লাগে। অন্তরার মতো মেয়ে তার ভাবী হলে জমে যেতো একদম। সারাক্ষণ বেস্টফ্রেন্ডকে পাশে পাওয়া যেতো। কিন্তু রাফিন ভাইয়া জীবনেও ছাত্রীকে পাত্রী বানাবে না। এটাও জানে রায়া৷ তাই শুধু শুধু এসব ভেবে মাথা নষ্ট করে না সে।
” কিরে, বল? রাফিন স্যারের চাকরি কিভাবে গেল?”
” ভাইয়াই ছেড়ে দিয়েছে৷ তার চাকরি করতে ভালো লাগে না। ব্যবসা করবে তাই।”
বান্ধবীর কাছে নিজের ভাইয়ের দাম বজায় রাখতেই ইচ্ছাকৃত মিথ্যেটা বলে রায়া। অন্তরা হেসে বলে,” বাহ, দারুণ ব্যাপার তো! বিজনেস ইজ মাই ফেভারিট থিংগ। চাকরি করে আসলে লাইফে কিছু হয় না৷ স্যার একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তারপর সে একটু আঁড়চোখে রাফিনের ঘরের বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে আগ্রহ নিয়ে বলে,” আচ্ছা, আমি কি একটু গিয়ে স্যারের সাথে দেখা করে আসব?”
রায়া চোখ বড় করে বলে,” এই না খবরদার! ভাইয়ার মেজাজ এখন খুব খারাপ। রেগে গেলে ঝামেলা হবে। বাসায় মাও নেই।”
অন্তরা যেনো নাছোড়বান্দা। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,” আমি তো যাবোই। স্যারের কাছে অংক বুঝতেই এসেছি। উনি রাগ করবে না। যাই প্লিজ!”
রায়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অন্তরাকে মানানো তার সাধ্যি নয়৷ তাই হার মেনে বলে,” ঠিকাছে তোর ইচ্ছে হলে যা, পরে কিছু হলে আমার দোষ নেই।”
অন্তরা উৎফুল্ল হয়ে ঘরের সামনে গিয়ে দরজা নক করে। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা লক ছিল না। সে কয়েকবার ধাক্কা মারতেই খুলে যায়। ভেতরটা অস্বাভাবিক নীরব। পুরো ঘর পরিপাটি করেই সাজানো। কিন্তু বিছানায় কেউ নেই। বাথরুমের লাইটও বন্ধ। তাহলে স্যার কোথায়? নিশ্চয়ই বারান্দায় হবে।
অন্তরা সাবধানে বারান্দায় প্রবেশ করে। রাফিন একটা চেয়ার টেনে বসে আছে সেখানেই, হাতে সিগারেট। হৃষ্টচিত্তে বলে,” কেমন আছো অন্তরা?”
অন্তরা সামান্য কেঁপে উঠে। একটু নর্ভাস হয়ে বলে,” জ্বী স্যার? এইতো ভালো! আপনি কেমন আছেন?”
” ভালো। হঠাৎ এইখানে কি মনে করে?”
” রায়ার কাছে শুনলাম, আপনি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন?”
রাফিন এই প্রশ্নের জবাব দেয় না। শান্ত চোখে সামনে তাকিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়তে থাকে। অন্তরা হেসে বলে,” ভালোই হয়েছে। এখন তাহলে সবসময় আপনাকে ফ্রী পাওয়া যাবে।”
রাফিন মৃদু হাসে এই কথায়। একঝলক অন্তরাকে দেখে নিয়ে বলে,” আমাকে ফ্রী পেলে তোমার কি লাভ?”
অন্তরা কানের পেছনে চুল গুজে লাজুক মুখে বলে,” এখন তাহলে যখন তখন আপনার কাছে হায়ার ম্যাথ বুঝতে আসতে পারব। আমি মনে হয় প্রতিদিনই আসবো৷ আপনি মাইন্ড করবেন না তো স্যার?”
রাফিন সরাসরি তাকায় অন্তরার চোখের দিকে। কৃষ্ণবর্ণের মেয়েটির থুতনির নিচে ছোট্ট একটা তিল। ওই তিলটাই তাকে মোহনীয় করে তোলে। রাফিন কখনও মেয়েটাকে এমন খুঁটিয়ে দেখেনি। আজ কেনো দেখছে তা সে নিজেও জানে না৷ তবে তার প্রতি অন্তরা কতটা অবসেসড, এটা সে জানে ভালো করেই। কখনও প্রশ্রয় দেয়নি। তবে আজ রাফিন সবচেয়ে বাড়াবাড়ি কাজটা করে। আচমকা কাছে এসে অন্তরাকে দেয়ালে চেপে ধরে চুমু দেয় তার ঠোঁটে।
হঠাৎ এমন আক্রমণ আশা করেনি অন্তরা। সে তো এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না! পুরো শরীর হিম হয়ে যায় বিস্ময়ে। রায়া তখন কফি আর টোস্ট নিয়ে রুমে ঢুকেছে। বারান্দার দরজার কাছে নিজের বড়ভাই আর বান্ধবীর এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখে সে আশ্চর্য হয়ে হাত থেকে সব ফেলে দেয়। তীব্র শব্দে কেঁপে উঠে সারাঘর। রাফিন সাথে সাথে থেমে ঘুরে তাকায় বোনের দিকে।
রায়া মুখে হাত দিয়ে কাঁপছে রীতিমতো। দৃষ্টি প্রসারিত। আর অন্তরার মনে হচ্ছে সে এখনি জ্ঞান হারাবে। দাঁড়িয়ে থাকার বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। রাফিন এভাবেই তাকে ছেড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে, বাড়ি থেকেও।
আজ শুক্রবার। রেবা ঠিক করেছিল শ্বশুরবাড়ি যাবে। সকাল থেকেই সেই প্রস্তুতি চলছে৷ তারা সেখানে গিয়ে লাঞ্চ করবে তাই কিছু রান্নাও করেনি। কিন্তু হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঈশান এসে হাজির। তুহিন তো উত্তেজনায় অস্থির। স্যার হঠাৎ তার বাড়িতে? সে খুব বিনয়ের স্বরে বলে,” কি আশ্চর্য, স্যার আপনি জানিয়ে আসবেন না? ইশ, ঘরের কি অবস্থা! এই রেবা কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি এসো। দেখে যাও কে এসেছে!”
ঈশান ইতস্তত মুখে বলে,” এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই তুহিন সাহেব। আমি একটা জরুরী দরকারে এসেছি। বেশিক্ষণ থাকব না।”
তুহিন উচ্চস্বরে বলে,” তা কিভাবে হয় স্যার? আপনাকে আমি লাঞ্চ না করিয়ে যেতে দিচ্ছিই না। তাছাড়া আপনি এখন এই বাড়ির জামাই মানুষ। আপনার সাথে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক! সেই কথা ভুলে গেলে হয়?”
ঈশান মৃদু হেসে চারপাশে তাকায় একটু। সোফায় বসে জিজ্ঞেস করে,” রেবা আপু কোথায়?”
রেবা বেডরুম থেকে বাইরে আসে, ব্যস্ত ভঙ্গিতে মাথায় ঘোমটা টেনে নেয়। হাসি মুখে বলে,” এইতো আমি। কেমন আছেন?”
” আপু আসসালামু আলাইকুম। আমি ভালো আছি। বসুন প্লিজ, আপনার সাথেই কথা বলতে এসেছি।”
রেবা সালামের জবাব দিয়ে অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে একটু তুহিনের দিকে তাকায়। তারপর জিজ্ঞেস করে,” নিশ্চয়ই। তার আগে বসুন আপনি, আমি চা নিয়ে আসি।”
” আমি কিছু খাবো না। শুধু কথা বলতে চাই। আর্জেন্ট!”
রেবা থেমে দাঁড়ায়। তুহিন প্রতিবাদ করে বলে,” সেটা কিভাবে হয় স্যার? আপনি রেবার সাথে কথা বলুন৷ আমি নিজে গিয়ে চা বসাচ্ছি। আর দুপুরে না খেয়ে কিন্তু যেতে পাবেন না৷ রান্না বসাচ্ছি।”
কথাগুলো বলতে বলতে প্রবল উৎসাহ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায় তুহিন। সে মাত্র গোসল করে বের হয়েছিল৷ এখনও কোমর থেকে গামছা খুলেনি। গায়ে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি। এই অবস্থাতেই রান্নাঘরে ঢুকেছে চা বানাতে। রেবা অবাক হয়ে স্বামীর কান্ড দেখে। জীবনে রান্নাঘরের চৌকাঠ মারায়নি যে মানুষ, বস আসার উত্তেজনায় সে এখন কোমরে গামছা বেঁধে রান্না বসাতে যাচ্ছে! এসব দেখে রেবার হাসিই পায়। সোফার সামনে ছোট্ট বিছানায় বসতে বসতে সে জিজ্ঞেস করে,” বলুন ঈশান সাহেব, দিবার কি অবস্থা? কেমন আছে ও?”
ঈশান শান্তমুখে বলে,” ভালো আছে, আগের চেয়ে অনেক বেটার। রেগুলার ভার্সিটি যাচ্ছে! সামনে ওর এক্সাম তো.. পড়াশুনা নিয়ে একটু বিজি।”
” ও আচ্ছ। ওকে একদিন নিয়ে আসবেন প্লিজ। কতদিন দেখা হয় না।”
” নিশ্চয়ই আনবো। কিন্তু… তার আগে আমার কিছু ইনফরমেশন দরকার ছিল।”
” কিসের ইনফরমেশন?”
” ওই লোকটির ব্যাপারে৷”
ঈশানের এমন কথা শুনে স্বভাবতই ভ্রু কুঁচকে যায় রেবার। মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে তুলে জিজ্ঞেস করে,” মানে? বুঝলাম না ঠিক।”
ঈশান রুদ্ধ স্বরে বলে,”সেদিন আপনি ফোনে আমাকে দিবার সম্পর্কে যেটা বলেছিলেন, আমি ওই ঘটনাটা ভুলতে পারছি না। ওই লোকটা সম্পর্কে সমস্ত ইনফরমেশন আমি জানতে চাই। রেবা আপু প্লিজ, আমার মানসিক শান্তির জন্য হলেও কিছু লুকাবেন না। বলুন কোথায় আছে ওই রেপিস্ট?”
প্রশ্নটা করে ঈশান ছোট ছোট শ্বাস নিতে থাকে, তার দৃষ্টি র’ক্তিম। রেবা হকচকিয়ে যায়। আঁড়চোখে একবার রান্নাঘরের দিকে চেয়ে বলে,” শুনেছি সে এখন কোন নামকরা একটা ব্যাংকে চাকরি করে। ঢাকাতেই আছে!নাম আবিদ সাইফুল। এর বেশি কিছু জানি না৷ বড়খালার সাথে অনেকদিন কথা হয় না আমার।”
” আপনি আপনার বড়খালার থেকে ওই আবিদ সাইফুলের ব্যাপারে সমস্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করে আমাকে জানাবেন।”
রেবা বাধ্যের মতো মাথা নেড়ে বলে,” ঠিকাছে। কিন্তু তুমি হঠাৎ এসব কেনো করছো? এটা অনেক বছর আগের ঘটনা। মিটে গেছে সবকিছু। দিবাও সব ভুলে গেছে।”
ঈশান গম্ভীর স্বরে বলে,” চিন্তা করবেন না। দিবা এই বিষয়ে কিছু জানবে না। আমি এসব শুধু নিজের আত্মতুষ্টির জন্য করছি। আশা করি আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।”
” নিশ্চয়ই করব। কেনো করব না?”
ঈশান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,” আসি তাহলে।”
” আরে, চলে যাবে মানে? তুহিন তো তোমার জন্য লাঞ্চের আয়োজন করতে গেল।”
ঈশান হালকা হেসে বলে,” তুহিন সাহেবকে বলুন ব্যস্ত না হতে। লাঞ্চ আমি বাসায় গিয়ে করব। তাছাড়া দিবা অপেক্ষায় আছে, আসি।”
রেবা আর কিছু বলে না। ঈশান চলে যাওয়ার পর সে দুশ্চিন্তায় বুদ হয়ে যায়।
আজ শনিবারেও চারঘণ্টার ল্যাব ক্লাস আছে। ফাহিম স্যার এতো প্যারা দিতে পারে! দিবা খুব অনাগ্রহের সাথে ক্লাস করতে এসেছে। কিন্তু তার কিছুই ভালো লাগছে না। মুখ ভার করে ল্যাবের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে, গায়ে সাদা এপ্রোণ। শাম্মি হাসতে হাসতে বলে,” তোর আবার কি হয়েছে? ভাইয়াকে মিস করছিস মনে হয়?”
রেখা বলে,” আমাদের দিবারাণী বিয়ের পর এমন স্বামী ভক্ত হয়েছে, ক্লাসে বসেও হাজারবার মেসেজ লিখবে। এই আপনি খেয়েছেন, এই আপনি কি করছেন, এই শুনুন না, আমার ভালো লাগছে না! কোলে নিন। ইশ!”
তার বলার ঢংয়ে মণি আর শাম্মি মুখ টিপে হাসতে থাকে। দিবা কটমট করে বলে,” তোরা আমার মেসেজ দেখিস? ছি, ম্যানারলেস গুলো! তোদের সাথে আর বসবোই না।”
দিবা ক্লাস থেকে বের হওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাতে থাকে। মণি বলে,” ইশরে, বেচারি মনে হয় মাইন্ড করল।”
রেখা বলে,” আরে ওসব মাইন্ড-ফাইন্ড কিছু না, আসল কথা হচ্ছে ওর ক্লাসে মন বসছে না৷ আজ ভাইয়া বাসায় না? ও কি ক্লাসে সময় নষ্ট করবে? তাই বাসায় চলে যাচ্ছে। বাসায় গিয়ে বরের কোলে উঠে বসে থাকবে।”
শাম্মি মজা করে বলে,” ওহো! তাহলে এই ব্যাপার? বুঝি আমরা সবই বুঝি।”
মণি আরও যুক্ত করে,” হুম, খাই না আমরা সুজি।”
দিবা হাসি চেপে রাখতে পারে না। ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,” অসভ্যগুলো।”
বাইরে এসেই ঈশানকে ফোন করে সে। তখন ঈশান রোজাকে কোলে নিয়ে করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে ঘুম পাড়াচ্ছিল। দিবার ফোন দেখেই রিসিভ করে,” হ্যালো।”
” কি করছেন?”
” এইতো, রোজাকে ঘুম পাড়াচ্ছি।”
” ও, ঠিকাছে আমি বাসায় চলে আসছি।”
” মানে? তোমার না আজকে চারঘণ্টার ক্লাস ছিল?”
দিবা শ্রাগ করে বলে,” করব না ক্লাস! ইচ্ছে করছে না। মাঝে মাঝে ফাঁকি দিতে ভালো লাগে।”
ঈশান হেসে বলে,” ঠিকাছে আসো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
দিবা উত্তেজিত হয়ে বলে,” সত্যি? আমি তাহলে ছুটে আসছি।”
” ছুটে আসতে হবে না, সাবধানে এসো৷ ওকে? বায়।”
” শুনুন, একটা কথা।”
” হুম, বলো?”
ঈশান ফোনটা রাখতে নিয়েও আবার কানে চেপে ধরে। দিবা ফোনের স্ক্রিন ঠোঁটের কাছে এনে চোখ বুজে বলে,” উম্মাহ, আই লভ ইউ।”
ঈশান চমকে যায়। পরমুহূর্তেই হেসে উঠে বলে,” আই লভ ইউ টু। চুমুর জবাব বাসায় এলে পাবে।”
লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে দিবা। ঈশান বলে,” রাখছি।”
দিবা মোবাইলটা ব্যাগে রেখে একটা বড় শ্বাস নেয়। ভার্সিটির পেছনের গেইটেই হোসেন ভাই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। খোশমেজাজে সেদিকে এগিয়ে যায় দিবা। তার মাথায় মিষ্টি রঙের হিজাব, চোখে সানগ্লাস, কাঁধে ভারী ব্যাগ। সে কিছুটা ক্লান্ত, তবে মনটা খুব ফুরফুরে। ঈশান বলেছিল বাসায় গেলে সারপ্রাইজ আছে। কি সেই সারপ্রাইজ? ভাবতে ভাবতে সে গাড়িতে উঠে বসে। এসি না ছেড়ে জানালা খুলে দেয়। বিকালের নির্মল বাতাসটা গায়ে এসে লাগে।
টিএসসি পার হয়ে কিছুদূর যেতেই রমনার কাছাকাছি একজোড়া কপোত-কপোতী দেখে দৃষ্টি থমকে যায় দিবার। সে তড়িঘড়ি করে বলে,” হোসেন ভাই, গাড়িটা একটু রাখুন তো।”
হোসেন নির্দেশমতো গাড়ি থামায়। দিবা অবাক হয়ে দেখে, রাফিন আর অন্তরা একে-অন্যের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে৷ রাফিনের ডানহাতটা ঠিক অন্তরার কোমরে। অন্তরার পরনে জিন্স, ডেনিম টি-শার্ট আর গলায় একটা স্লিং ব্যাগ। হাতে আইসক্রিম কোন যেটা সে আর রাফিন ভাগ করে খাচ্ছে। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে দৃশ্যটা দেখে দিবা। মনে মনে ভাবে, এতো অধঃপতন হয়েছে ছেলেটার? শেষমেষ ওইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এইসব? তাও এমন পাবলিক প্লেসে! ছি!
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,” চলুন হোসেন ভাই। তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন।”
এবার গাড়ির জানালাটা বন্ধ করে দেয় সে। দৃশ্যটা মাথায় ঘুরছে এখনও। অন্তরাকে দিবা ভালো করেই চেনে। একসময় তার প্রতিবেশী ছিল মেয়েটা। রাফিন তাকে বাসায় এসে ম্যাথ আর হায়ার ম্যাথ পড়াতো। মূলত দিবার সাথে প্রতিদিন দেখা করার সুবিধার্থেই অন্তরাকে এতো দূরে এসে রোজ পড়াতো রাফিন।
অন্তরার বয়স তখন আরও কম ছিল, রাফিনের প্রতি তার দূর্বলতা ছিল। সেটা দিবা বুঝতো। এই নিয়ে রাফিনকে কত পিঞ্চ করেছে। আর আজ সে এটা কি দেখল? রাফিন শেষ পর্যন্ত এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে… উফ! অবশ্য এতে দিবার কি এসে যায়? সে কেনো এসব নিয়ে চিন্তা করছে? মাথা থেকে জোর করে ভাবনাটা তাড়িয়ে দেয় দিবা।
চলবে