শান্তিসুধা পর্ব-১১

0
373

#শান্তিসুধা
১১.
আজ সারাটা দিন ঝুম বৃষ্টি। উদাস মুখে বসে আছে শান্তি। জানালার থাইয়ে বৃষ্টির ফোঁটায় দৃষ্টি স্থির। মন জুড়ে চিনচিনে অস্থিরতা। যা ক্ষণে ক্ষণে মুখ দিয়ে বলায়, ভালো লাগে না। ভাল্লাগছে না। শান্তির কি তবে
ভালো না লাগার অসুখ হলো? উহুম, আবহাওয়া বলছে ভালো না লাগার নয়। এই অসুখের নাম প্রেম। প্রেমাসুখে আক্রান্ত শান্তি। গত দুদিন ধরে নাফেরের দেখা নেই। সুন্দরী কিশোরী বউয়ের কামড় খেয়ে সুঠাম দেহের বলিষ্ঠ বর কি তবে পালালো!

সেদিন ভয়ানক রাগে চোখ, মুখ লাল করে বেরিয়ে গেছে নুবাইদ। শান্তি ভেবেছিল, বাড়ির লোক ডেকে অশান্তি করবে। পরেরদিন অপেক্ষাও করেছিল, নানাভাই আর মামাদের। নিশ্চিত তারা এসে বিচার করবে, কঠিন শাস্তি দেবে। কত্তবড় বেয়াদব! জামাইয়ের ঠোঁটে চুমু না দিয়ে কামড়ে রক্ত বের করে দেয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সবাই যখন তাকে বকবে, ধিক্কার দিবে। সে মাথা নত করে কান ধরবে। তারপর নরম গলায় বলবে,
‘ এই কান ধরে বলছি নানুভাই। আর কক্ষনো এতবড়ো অপরাধ করব না। ‘

কান ধরতে লজ্জা পায় না শান্তি। পাবে কি করে? এমনও দিন তার গেছে যে দুষ্টুমি, অন্যায় করে দিনে বেশ কয়েকবার কান ধরে উঠবস করতে হয়েছে। স্কুলে কতদিন যে প্রায় প্রতিটি ক্লাশে কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছে হিসাব নেই। তাই অভ্যস্ত এবং দুধভাতের মতো সহজ শাস্তি অনায়াসে নিতে চেয়েছিল। নানুভাই যদি তবুও বকাবকি করতো। ইমোশনাল কথা বলে চোখের জল ফেলতো। তাহলে সে সান্ত্বনা দিতো। সান্ত্বনা বাণীও তৈরি ছিল। ‘ কান্না করো না নানুভাই। আমি স্বীকার করছি এভাবে নিজের স্বামীর ঠোঁটে কামড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি৷ আমি তোমাকে প্রমিজ করছি একশোবার কান ধরে উঠবস করার পর রুমে গিয়ে বরের কামড়ে দেওয়া ঠোঁটে একশোটা চুমুও খাব! ‘

বাঁধিয়ে রাখার মতো কপাল শান্তির। সব পরিকল্পনা জলে পড়ল। সে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেউ জানতেই পারলো না। নুবাইদ কাউকে জানালো না। কেউ শান্তিকে বকলও না৷ কৈফিয়ত চাইল না ‘ শান্তি কেন নাফেরকে কামড়ে দিয়েছো? ‘ ফলশ্রুতিতে না চাওয়া হলো ক্ষমা, না পাওয়া হলো শাস্তি আর না দেওয়া হলো নুবাইদের ঠোঁটে সরি মেশানো চুমু হুহহ।

পরেরদিন ভোরবেলা। শাশুড়ির ডাকে ঘুম ভাঙল শান্তির। সকাল আটটা বাজে। শুনতে পেল তাসলিমা বেগম বলছেন,

‘ শান্তি মা তাড়াতাড়ি উঠো। কলেজে যাবে না? দুদিন যাওনি। আজ কিন্তু যেতেই হবে। ‘

তড়িঘড়ি করে উঠে বসল শান্তি। পুরোপুরি ঘুম ছাড়াতে ছাড়াতে অনুভব করল, বুকের ভেতরটা কেমন খাঁখাঁ করছে। এত শূন্যতা অনুভব করছে কেন শান্তি? এ শূন্যতায় যে নতুন পরশ! নতুন করে আবার কি হারালো সে? হৃৎস্পন্দন কেঁপে উঠল কেমন। ঢোক গিলে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলল। শাশুড়ির স্নিগ্ধ মুখটা দেখে একটু ভালো লাগার অনুভূতি হলো। আকস্মিক প্রশ্ন করে বসল,

‘ নাফের এসেছে আন্টি? ‘

তাসলিমা বেগম যেন এ প্রশ্নে ব্যাকুলতা টের পেলেন। তবে কি শান্তি তার ছেলেকে মিস করছিল? মেয়েটা ভালোবাসে তার ছেলেকে? মনে মনে খুশি হলো ভীষণ। পরোক্ষণেই মুখ ভার করে ফেলল নুবাইদের কথা মনে করে। ছেলেরার কী হলো হঠাৎ? বাড়ি ফিরছো না কেন? দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মুহুর্তেই। শান্তির উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল,

‘ না মা। অফিসে কাজের চাপ খুব। চাপ কিছুটা কমলেই আসবে। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতো আসো। ‘

গোপনে হাঁপ নিঃশ্বাস ছাড়ল শান্তি। বিড়বিড় করে বকা দিলো নুবাইদকে।

‘ শা লা বেইমান! আমার কামড়টাই দেখলি। তুই যে বস্তাভরা শরীর দিয়ে চিপকে ধরেছিলি সেটা দেখলি না। ‘

কলেজে যাওয়ার মন নেই শান্তির। তবুও আজ যাবে। বাড়িটা বিষাক্ত লাগছে এখন। যে বিয়ে করে আনল সেই লাপাত্তা। তবে এ বাড়িতে থেকে কী হবে শুনি? ঝড়ের বেগে হাতমুখ ধুয়ে তৈরি হলো সে। এরপর খেতে গিয়ে দেখল, খালা শাশুড়ি শাশুড়ি মাকে বলছেন,

‘ কপাল করে বউ পেয়েছো আপা। তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হয়। তোষামোদ করে খাবার খাওয়াতে হয়। ‘

বোন তানজিনার কথা শুনে তাসলিমা বেগম উত্তর দিলেন,

‘ তুই কেন ওর পিছনে লাগিস তানু। বাচ্চা মেয়ে। আমার একটা মাত্র ছেলের বউ। সবে ইন্টারে পড়ে। ওর থেকে আমাকে কী আশা করতে বলিস? ওইটুকু মেয়ে আমাকে রেঁধে বেড়ে খাওয়াবে। সব কাজ করে দেবে। আমার কি সেই বয়স হয়েছে রে? ‘

শাশুড়ির কথা শুনতেই শান্তির মন ভালো হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে ফুটল হাসি। কিছুক্ষণ আগে যে বাড়িটা বিষাক্ত লাগছিল। সে বাড়ি এখন স্বর্গ মনে হলো। নাফের নেই তো কী হয়েছে? এই শাশুড়িকে নিয়েই সে একজনম কাটিয়ে দিতে পারবে। এত ভালো শাশুড়ি তার। আহা, একদম মাখনের মতো। ভেবেই চপল পায়ে এগিয়ে এসে শাশুড়ির গালে টোপ করে চুমু খেলো। তাসলিমা বেগম হকচকিয়ে গেলেন বউমার কাণ্ড দেখে। বিরক্ত হলো তানজিনা বেগম। বলল,

‘ এ কেমন অসভ্যতামি? ‘

শান্তিও বিরক্ত হলো। চোখ দুটো কুঁচকে বলল,

‘ শাশুড়িকে আদর করে চুমু দিলে অসভ্যতামি হয় জানতাম না তো? এমন ভাণ করছেন যে পাশের বাড়ির খালুকে গিয়ে চুমু দিয়ে আসছি। ‘

হতভম্ব হয়ে গেল তানজিনা বেগম। তাসলিমা বেগম শান্তিকে চুপ করতে বললেন,

‘ এসব বলতে হয় না শান্তি। শান্ত হয়ে বসো আমি খাবার দিচ্ছি। ‘

তানজিনা বেগম ঘৃণায় ছিঃ ছিঃ করে উঠলেন। আপার দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বললেন,

‘ এভাবে মাথায় উঠিও না আপা। ‘

শান্তি কিছু বলতে যাবে তক্ষুনি তাসলিমা বেগম চোখে ইশারায় থামিয়ে দিলেন। তারপর রান্নাঘরে গেলেন খাবার আনতে। সেই সুযোগে তানজিনা মেজাজ দেখিয়ে শান্তিকে বললেন,

‘ লজ্জা করে না বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে? শাশুড়ির হাতে রাঁধা খাবার নির্লজ্জের মতো গিলবে এখন ছিঃ। ‘

খাবার নিয়ে খোঁটা! শান্তির মাথায় রক্ত উঠে গেল। অগ্নি চোখে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,

‘ জামাইয়ের টাকার খাবার আর শাশুড়ির রান্না খেতে কেন লজ্জা করবে? জামাইটাও আমার, শাশুড়িটাও আমার। অন্যের জামাই, অন্যের শাশুড়ি তো আর না। ‘

উচিত জবাব দিলেও অস্বস্তি ঠেকল মেয়েটার। এখন যদি নুবাইদ থাকতো। নিশ্চয়ই আরো কিছু শক্ত কথা খালামুনিকে বলতো। শান্তির পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়াতো। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। নুবাইদকে মিস করল ভীষণ। কিছুক্ষণ পূর্বে রুমে অনুভব করা শূন্যতা কিসের জন্য ছিল এবার টের পেল। শান্তি কাঁদতে পারে না। কোনো ব্যথাই ওর চোখে জল গড়াতে পারে না। কিন্তু মন কাঁদতে শুরু করল। ‘নাফের আপনি কোথায়?’ একটা মানুষ এত অল্প সময়ে তার জীবনে এতবেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কখন? হাসফাস চিত্তে না খেয়েই উঠে পড়ল শান্তি। এরপর রুমে গিয়ে কলেজ ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ত্বরিত।

কলেজ প্রাঙ্গণে পা রাখতেই শান্তির মেজাজ গরম হতে শুরু করল। কীসের পড়াশোনা? বেঁচে থাকতে হলে পড়াশোনা করতেই হবে। নয়তো বেঁচে থাকা যাবে না।এমন কোনো নিয়ম কি জীবনের জন্য আছে? নাহ, এমন কোনো নিয়ম নেই। কারো থেকে শুনেনি এমন নিয়ম। তার নানাবাড়ির কাজের মহিলা, মেয়েগুলো খুব একটা শিক্ষিত নয়। তবুও দিব্যি বেঁচে আছে৷ কাজ করছে, খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে। বিয়ে করে সংসারও সামলাচ্ছে। যত অশান্তি তার। এত অশান্তি আরো আর ভাল্লাগছে না। ‘ধুরর বা’লের পড়াশোনা ‘ মনে মনে এসব ভেবেই ঘুরে দাঁড়াল শান্তি। ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছে না। কাছাকাছি একটা পার্ক আছে। শিশু পার্ক লেখা থাকলেও বড়োদের আনাগোনা বেশি। তাই সে পার্কে গিয়ে বসে রইল। আধঘন্টা পর পার্কের সামনে মামাতো ভাই পাপনকে দেখতে পেলো। কয়েকজন বন্ধু নিয়ে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান্তি চটজলদি বেরিয়ে এসে পাপনকে ডাক দিলো। পাপন জটলা থেকে বেরিয়ে এসে অবাক কণ্ঠে বলল,

‘ আরে শান্তি তুই! কার সাথে এসেছিস? নাফেভাই যে বলল তুই কলেজে গেছিস। সে কী রে, এখনো কলেজের নাম করে পার্কে আসছিস। কার সাথে এসেছিস রে? ‘

চোখ টিপল পাপন। শান্তি চোয়াল শক্ত করে বলল,

‘ কারো সাথে না। একা একাই মন ফ্রেশ করতে এসেছি।’

‘ বলিস কী! তোর মনে আবার ধুলোবালি জমল কবে?’

শান্তি কিছু বলতে উদ্যত হয়েও থেমে গেল। এক মিনিট! পাপন ভাইয়া কী বলল? নাফের বলেছে আমি কলেজে এসেছি। তার মানে নাফের জানে আমি কলেজে? আমার খবর জানে নাফের? তবে আমি কেন জানি না তার খবর? আপনমনে প্রশ্নগুলো জমতেই ফের আরো একটি প্রশ্ন আসলো মাথায়। পাপনের সাথে নাফেরের দেখা হয়েছিল!

‘ তোমার সঙ্গে নাফেরের দেখা হয়েছিল পাপন ভাইয়া?’

‘ দাদুভাইয়ের সঙ্গে আজ নাফেভাইয়ের অফিসে গিয়েছিলাম। শুনলাম সে অফিসে নেই। ফ্ল্যাটে রয়েছে। তারপর সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। দাদুভাইও ব্যবসায়িক কিছু কাগজপত্র নিয়ে আলাপচারিতা করল। ‘

‘ ফ্ল্যাট মানে কীসের ফ্ল্যাট? ‘

‘ ঘোড়ার ডিমের ফ্ল্যাট মুরগি, নাফে ফ্যাশন লিমিটেডের মাথার উপর ডিরেক্টরের পার্সনাল একটা ফ্ল্যাট রয়েছে। ‘

এ কথা শুনে ভাবলেশহীন হয়ে গেল শান্তি। পাপনের সাথে কাছের একটা কফিশপে গিয়ে কফি খেলো। মাথা ঠান্ডা হলো আস্তেধীরে। পাপন বলল,

‘ কী চিন্তা করছিস? ‘

চমকে উঠল শান্তি। বলল,

‘ নাফেরের ফ্ল্যাটে যাব। ‘

‘ ওবাবা তাই নাকি? সারপ্রাইজ দিবি বুঝি? ‘

ফের চমকাল শান্তি। আমতাআমতা করে বলল,

‘ হ্যাঁ। ‘

‘ চল তাহলে নামিয়ে দিয়ে আসি। আমার বন্ধুদের সঙ্গে একটা মিটিং আছে। তাড়াতাড়ি কর। ‘

পাপন গিয়ে শান্তিকে কোম্পানির সদর দরজায় থাকা দারোয়ানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। দারোয়ান তো অবাক। তাদের স্যার বিয়ে করেছে! কই তারা তো কেউ জানে না। এরপর এক কর্মচারী দিয়ে শান্তিকে ফ্ল্যাট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হলো। পাপন চলে গেছে নিচ থেকেই। কর্মচারী ছেলেটা ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে বলল,

‘ ম্যাডাম এটাই স্যারের ফ্ল্যাট। ‘

‘ থ্যাংকিউ আপনাকে। এবার যেতে পারেন আপনি। ‘

আদেশ শিরোধার্য এমন ভঙ্গিতে চলে গেল ছেলেটা। শান্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এরপর কলিং বেলে চাপ দিলো বারকয়েক। ভেতর থেকে দরজা খোলা হলো না। ক্লান্ত লাগছিল শান্তির। তাই অপেক্ষা করার জন্য দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে অনুভব করল দরজা পিছিয়ে যাচ্ছে। চকিতে ঘুরে তাকাল শান্তি। উহুম কেউ দরজা খুলেনি। ভেতর থেকে দরজা লাগানোই ছিল না। শুধু ভেড়ানো ছিল। যা সামান্য ধাক্কায় আপনাআপনি খুলে গেছে। আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি ছলকে উঠে মনে। দুষ্টুমি চাপে মাথায়। চুপিচুপি গিয়ে নাফেরকে ভয় দেখাবে সে। লাপাত্তা হওয়ার প্রতিশোধ নেবে৷ কতবড় সাহস! লাপাত্তা হয়ে যায়। ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখে। মনের আনন্দে চুপিচুপি ভেতরে ঢুকল শান্তি। ইয়েস, এটাই ড্রয়িংরুম। কিন্তু ফাঁকা। সামান্য একটা কাঠের চেয়ার পড়ে আছে। তার পাশে ইয়া বড়ো একটা লাগেজ। কার ওটা? ওখানে ওভাবে পড়ে আছে কেন? ধুরর অতো চিন্তার কাজ নেই। নাফের কোথায় সেটা দেখি…

পা টিপে টিপে বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেল শান্তি। দরজা বন্ধ। বাব্বাহ, মেইন দরজা বন্ধ করেনি। অথচ বেডরুমের দরজা বন্ধ। কত ঢং যে জানে এই নাফের। ভেবেই দরজায় টোকা দিতে উদ্যত হয়েই থেমে গেল শান্তি। ওপাশে জানালা খোলা। বাহ, চমৎকার! তাহলে জানালা দিয়েই কতক্ষণ লুকোচুরি ভয় দেখানো যাক। মনটা উৎফুল্ল হয়ে গেল। ফের পা টিপে টিপে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই থমকে গেল চোখজোড়া! পা থেকে মস্তক পর্যন্ত থরথর করে কেঁপে উঠল। মেরুদণ্ড বেয়ে দরদর করে গড়িয়ে পড়ল স্বেদজল। বাকশক্তি হারিয়ে দৃষ্টি জোড়া বুজে ফেলল আচমকা। কয়েক মুহুর্ত কাটল অবিশ্বাসে। পরোক্ষণেই কিশোরী হৃদয় তাচ্ছিল্য করে উঠল। অবিশ্বাসের কী আছে? কে এই নাফের? নুবাইদ তালুকদার নাফের কে? কতদিনের পরিচয় তার সঙ্গে? বিয়ে হয়েছে মানেই সে ফেরেশতা নয়। আর না মানুষটা সৎ। হুহু করে উঠল বুকটা। নিজেকে সামলে নিল পরমুহূর্তেই। কাঁপা কাঁপা হাতটা বুকের বামপাশে চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল,

‘ ভাগ্যিস শুধু মিসই করছিলাম। ভাগ্যিস ভালোবাসিনি। ভাগ্যিস ঠকে যাইনি মায়ের মতো। ভাগ্যিস…কিন্তু নানুভাই সে তো ঠকল! ‘

এ পর্যায়ে চোখ দুটো ঝাপসা হলো শান্তির। তবে কি এ প্রথম কাঁদবে মেয়েটা? এ প্রথম কোনো দুঃখ কি ছুঁবে ওকে? কোনো এক ব্যথায় হবে কি হৃদয় ব্যথিত।

‌…চলবে…
® জান্নাতুল নাঈমা