শান্তিসুধা পর্ব-১৫

0
299

#শান্তিসুধা
১৫.
বিয়ের পর শান্তিকে নিয়ে বেশ হতাশ ছিল নুবাইদ। কিন্তু একসঙ্গে থাকতে থাকতে বাচ্চা মেয়েটার সম্পর্কে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। শান্তি ইঁচড়েপাকা। প্রচণ্ড দুষ্ট আবার জেদিও। বয়সের দোষে মুখ পাতলা আর দুঃসাহসিক। এসব কিছুর বাইরেও শান্তি সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আবিষ্কার করল নুবাইদ। সেগুলো হলো , ওর ভেতরে খুব নরম একটা মন রয়েছে। যে মন প্রিয়জনের নিখুঁত ভালোবাসা চায়। আপনজনদের থেকে প্রতারিত হওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। বুদ্ধিদীপ্ত , ভার মস্তিষ্কের নুবাইদ কিশোরী বউটাকে আপাদমস্তক বুঝেই ফেলল। অবশ্য হেনা দেশে আসার পর শান্তির কিঞ্চিৎ পরিবর্তন তাকে বুঝতে সহায়তা করেছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে , অপছন্দনীয় স্বামী নিয়েও কেউ এত পজেসিভ থাকে? শান্তিকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। শান্তির আচরণ বেশ উপভোগ করছে নুবাইদ।সেই সাথে সুযোগের সৎ ব্যবহার করারও চেষ্টা করছে। কিশোরী মন৷ কখন ঘুরে যায় বলা যায় না। তাই শান্তিকে ভালোবেসে , কাছে টেনে বশ মানাতে চাইছে।
অবচেতন মন বলছে খুব বেশি কঠিন হবে না। মেয়েটা খুব সরল। একবার তাকে বুঝে ফেললে, তার ব্যক্তিত্ব, সততা টের পেলে ঠিক ভালোবাসবে।

ছুটির দিন। অফিসের কিছু কাজ বাড়িতে নিয়ে এসেছে নুবাইদ। সেগুলোই মন দিয়ে করছিল। হঠাৎ শান্তির আগমন ঘটল। ফোঁস ফোঁস করতে করতে নুবাইদের পাশে বসল। ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে নুবাইদ বলল ,

“ আবার কী হয়েছে! কার সঙ্গে লাগল? ”

চোখ কটমট করে তাকাল শান্তি। চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে নুবাইদকে এভাবে বলল ,

“ কার সঙ্গে লেগেছে মানে? আপনার কী মনে হয় আমি সারাদিন আপনার খালামুনি আর আপার সঙ্গে লাগালাগি করি!”

“ আপা মানে? ”

“ আপা চিনেন না? গায়ে লাগে হেনাফেনাকে আপা বললে? ”

আকস্মিক মনে পড়েছে এভাবে নুবাইদ বলল ,

“ ওহ হেনা , রাগ করছ কেন? ওকে তো আপা ডাকিনা। পিঠোপিঠি তাই নাম ধরেই ডাকি। ”

“ কেন নাম ধরে ডাকবি? তুই জানিস না ও তোরে মনে মনে জামাই ভাবে। ”

“ ছিঃ! মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ শান্তি। ”

ভয়ংকর রেগে গিয়ে ধমকে উঠল নুবাইদ। এই প্রথম নুবাইদের রাগ দেখে , ধমক খেয়ে কেঁপে উঠল শান্তি। না চাইতেও চোখ গলে একফোঁটা অশ্রু ঝড়ে পড়ল। থমকানো কণ্ঠে মেয়েটা বলল ,

“ আমার হৃদয় কাঁপিয়ে ধমক দিলেই সত্যিটা মিথ্যা হয়ে যাবে না নাফের। হেনা আপা আপনাকে ভালোবাসে। পাগলের মতো ভালোবাসে। সে আমাকে সহ্য করতে পারে না। ”

এ পর্যন্ত বলেই বা হাতে চোখের পানি মুছে ছুটে বেরিয়ে গেল শান্তি। নুবাইদ হতভম্ব মুখে ঠাঁই বসে রইল। কয়েক মুহুর্ত পর হুঁশ ফিরতেই ত্বরিত উঠে দাঁড়াল। এক হাতে মাথার চুল গুলো পেছন দিকে টেনে ধরে বলল ,

“ ওহ শীট , কাঁদিয়ে ফেললাম ওকে! ”

শাশুড়ি মায়ের ঘরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে শান্তি। নুবাইদ সারা বাড়ি বউকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে মায়ের ঘরে পেল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাছে গিয়ে নরম গলায় বলল ,

“ রাত হয়েছে শান্তি। ঘরে চলো। ”

পাশ ফিরে শুলো শান্তি। না তাকাল নুবাইদের দিকে আর না কথা বলল। নুবাইদ কাছে এসে কাঁধ স্পর্শ করে ফের বলল ,

“ আই এম সরি ওভাবে ধমক দেওয়া উচিত হয়নি। ঘরে চলো কথা আছে। ”

নুবাইদের মা এলেন ঘরে। ছেলের কথা শুনে বললেন ,

“সারাক্ষণ মেয়েটাকে ধমকে কী শান্তি হয় তোমার? এখন এসেছ সরি বলতে। ”

আচমকা উঠে দাঁড়াল নুবাইদ। বিব্রত হলো মায়ের সামনে। বলল ,

“ শান্তি কিছুতেও নেই আম্মু। শান্তি শুধু তোমার বউমার নামেই আছে। ”

ঠোঁট টিপে হাসল তাসলিমা বেগম। নুবাইদ লজ্জিত হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। এভাবে মায়ের সামনে রাতবিরেত বউকে ঘরে ডাকা যায় নাকি? একহাত ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছিল ঘরের দিকে। হঠাৎ হেনা এসে সামনে দাঁড়াল। আপাদমস্তক নুবাইদকে দেখে হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল তার। কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা সিলকি চুল , সুন্দর , স্বচ্ছ ভাসা দুটো চোখ , পুরু ঠোঁট দেখে ঢোক গিলল সযত্নে। এরপর ধীরে ধীরে বলিষ্ঠ বুক , পেশিবহুল বাহুতে নজর পড়তেই অনুভূতির ঝড় উঠল বুকে। তার আরাধ্য পুরুষ নুবাইদ!

হেনার তাকানোতে বিব্রত হলো নুবাইদ। মনে পড়ল তখন শান্তির বলা কথাগুলো। তাই বলল ,

“ ঘরে আয় হেনা কথা আছে। ”

ঘরে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়াল নুবাইদ , হেনা। দুহাত ট্রাউজারের পকেটে গুঁজে দিয়ে অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে নুবাইদ বলল ,

“ শান্তি তোকে ঘিরে আমাকে ভুল বুঝছে হেনা। তুই ওর সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করবি। বুঝাবি আমরা জাস্ট কাজিন। সেদিন ফ্ল্যাটে তোকে দেখেছে এরপর তুই বাড়িতে আসার পর ওর সঙ্গে বাজে আচরণ করছিস। বাচ্চা মেয়ে তাই এসবের ভুলভাল মানে বের করে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমনিতেই আমরা কাছাকাছি আসিনি সেভাবে। ক্ষীণ দূরত্ব প্রগাঢ়ে রূপ নেওয়ার আগেই ওর ভুল ভাঙানো উচিত। যেহেতু আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কটা গড়ে উঠেনি সেহেতু আই নিড ইউর হেল্প। ”

একই সঙ্গে তীব্র রাগ আর আনন্দ দুটোই অনুভব করল হেনা। শান্তি ভুল বুঝুক এটাই তো চায় সে। আর নুবাইদ কী বলল? তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কই হয়নি? চাপা উত্তেজনায় দম নিতে ভুলে গেল সে। মুহুর্তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলল ,

“ এটা কোনো কথা নাফের? এই মেয়েটার সঙ্গে তুই সারাজীবন কীভাবে কাটাবি? যার কমনসেন্স এত কম। সব বয়সের দোষ। এই মেয়েটা কোনোদিক থেকেই তোর সঙ্গে যায় না রে। একটা সম্পর্কে বয়স কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জেনারেশন গ্যাপ ভয়াবহ এক সমস্যা। বিয়ের এতগুলো মাসেও তোদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। আর কবে গড়বে? আমি বলি কি তুই একটি গভীর ভাবে চিন্তা কর। আজ না হয় আমি ওকে বোঝালাম, মানালাম। কিন্তু কাল যে আরেকজন মেয়ে নিয়ে সমস্যা করবে না এর কী গ্যারান্টি? তুই এতবড়ো বিজনেসম্যান। তোর কি শত্রুর অভাব আছে?কেউ যদি শত্রুতা করে তোকে নিয়ে কিছু বলে শান্তি সেটা নিয়েই তোর লাইফ নরক করে ফেলবে। দাদুভাইয়ের সঙ্গে কথা বল নাফের। দেরি করিস না।”

চোখমুখ কুঁচকে ফেলল নুবাইদ। হেনার কথার অর্থ স্পষ্ট বুঝল। তাই বিরক্ত গলায় বলল ,

“ বিয়েটা ছেলেখেলা নয় হেনা। এই পৃথিবীতে আমাদের মতো এজ গ্যাপে অনেক দম্পতি রয়েছে। একসঙ্গে থাকছে , সংসার করছে। একে-অপরকে ভালোবাসছে। শান্তি সম্পর্কের ব্যাপারে মারাত্মক পজেসিভ। ওকে চিনতে ভুল করিনি আমি। কিন্তু ওর ম্যাচিওর হতে সময় লাগবে। গায়ের জোরে কাছে টানতে চাচ্ছি না বলেই তোর হেল্প চেয়েছি। ব্যস , আর কিছুই না। আমার উদ্দেশ্য গড়ে তোলা ভাঙা নয়। ”

হতভম্ব হয়ে গেল হেনা। স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে বিব্রত গলায় বলল ,

“ ওকে আমি বুঝাব। আসলে আমি তোর প্রতি পজেটিভ হয়েই কথাগুলো বলেছি। প্লিজ নেগেটিভ নিস না। ”

নুবাইদ মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়াল। হেনা হকচকিয়ে গেল। আর কিছু বলার সাহস পেল না। বেরিয়ে গেল চুপিসারে। চোখদুটো তার রক্তিম , ঝাপসা হয়ে এসেছে। নুবাইদ শান্তিকে ছাড়তে চায় না! তার পক্ষে কী সম্ভব হবে ওদের বিচ্ছেদ ঘটানো?

শাশুড়ি মা অনেক বুঝিয়ে শান্তিকে নুবাইদের ঘরে পাঠাল। কিন্তু শান্তি দেখে ফেলল হেনাকে। মন খারাপ ছিল। সেই মনে এবার আগুন জ্বলে উঠল। নুবাইদ আরো একবার শান্তিকে ডাকতে যেতে উদ্যত হতেই দরজায় মুখোমুখি হলো শান্তির। শক্ত মুখের রক্তিম চাউনি দেখে মস্তিষ্ক শূন্য হলো নুবাইদ। আবারো কী ভুল বোঝাবুঝির জালে আঁটকে গেল? নিমেষে শান্তি তার বুক বরাবর দু’হাতে ধাক্কা দিল। চিৎকার করে বলল ,

“ হেনা এ ঘরে কী করছিল? তুই আমাকে এক্ষুনি ডিভোর্স দিবি। আমি এক্ষুনি এ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাব। ”

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় নুবাইদ। সহসা শান্তির মুখে হাত চেপে ধরল। চিৎকার বাইরে গেলে বিপদ। বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হবে। এরপর চটজলদি দরজা আঁটকে দিল। আরো বেশি ক্ষেপে গেল শান্তি। খামচে ধরল নুবাইদকে। বড়ো বড়ো নখের আঁচড় পেয়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল বেচারা। নিমেষে ছিঁটকে গেল শান্তি। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ফোন করল নানুভাইকে। তারপর চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল ,

“ নানুভাই , আমি এই বিয়েটা করতে চাইনি। জোর করে বিয়ে , বয়স্ক বর আবার চরিত্রেরও ঠিক নেই। আমি এই বিয়েতে থাকব না। এমন একটা…”

বাকিটুকু আর বলতে পারল না শান্তি। নুবাইদ ওর থেকে ফোন কেড়ে নিল। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলল ,

“ সরি নানুভাই , শান্তি ভুল বুঝেছে আমাকে। আমি ওকে সামলে নিচ্ছি। আপনি টেনশন করবেন না।”

কথাটা বলেই ফোন কেটে দিল। শান্তির রাগ বাড়ল বৈ কমল না। ফোন নেওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করল। কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না শান্তিকে। নুবাইদের মেজাজ এতটা বিগড়াল যে গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শান্তির ফোন দেয়ালে ছুঁড়ে মারল। যা দেয়ালের বাড়ি খেয়ে টাইলসের ফ্লোরে পড়ে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। তীব্র উত্তেজিত শান্তি এ পর্যায়ে দমল। বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে , ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করল। নুবাইদ চোখ , মুখ খিঁচে ডান হাত তুলে বলল ,

“ থা’পড়াতে থা’পড়াতে জাস্ট সেন্সলেস করে ফেলব বেয়াদব মেয়ে! অশান্তির চূড়ান্ত হয়েছে। আর না। কী চাও তুমি আমাকে ছাড়তে? ওকে ফাইন ছেড়ে দাও , চলে যাও। তবুও আমার মানসম্মান নিয়ে খেলা করো না। তোমার মতো স্টুপিড ব্রেইন আমার না। কাজিনের প্রতি যদি বিন্দুমাত্র উইকও হতাম। আটাশ বছর অবিবাহিত থাকার পর তোমার মতো স্টুপিড বিয়ে করে মানসিক যন্ত্রণা নিতাম না। ”

অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল শান্তি। নুবাইদ ভয়ানক ক্ষেপে গেছে। ওর রাগের ধরণ অন্যরকম। যা সম্পর্কে প্রথম অভিজ্ঞতা শান্তির। নির্ভীক শান্তিও আজ ভয় পেতে বাধ্য হলো। ওর আগুন চোখকে উপেক্ষা করে নুবাইদ ধমকাতে লাগল ,

“ চোখ নামাও। ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরোও। ”

অনড় চোখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে শান্তি। এত্ত ত্যাড়া মানুষ হয়? ভাষা হারিয়ে ফেলল নুবাইদ। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল ক্রমশ। ফের ধমকাল ,

“ নিজের যা কিছু আছে গুছিয়ে নাও। যেভাবে এনেছি ঠিক সেভাবেই রেখে আসব। ”

শান্তির মেজাজও তুঙ্গে। কোনোকিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না৷ এই যে নাফের এখন তাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে চাচ্ছে এতেও মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। নুবাইদও এখন তপ্ত মেজাজে। তাই ঘর কাঁপিয়ে গর্জন দিল ,

“ রেডি হতে বলেছি আমি! ”

কাঁধজোড়া কাঁপিয়ে চমকে উঠল শান্তি। চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে তাকাল এবার। নুবাইদ শক্ত মুখে রক্তিম চোখে তাকিয়ে। নিজের আত্মসম্মানের সঙ্গে সেক্রিফাইস করা তার পক্ষে সম্ভব না। মোটা মাথার শান্তি কি তা বুঝবে?

লাগাতার ধমক খেয়ে, শ্যামলা মুখের ভয়ংকর আকৃতি দেখে বাধ্য হয়ে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল শান্তি। নুবাইদও কোনোরকমে তৈরি হয়ে ড্রাইভারকে কল করল গাড়ি বের করতে। এরপর শান্তিকে কঠিন দৃষ্টি দিয়ে বুঝাল তাকে অনুসরণ করতে।মস্তিষ্ক শূন্য শান্তির। আসলেই বিয়ে ভেঙে গেল তার! ওই হেনার জন্য নাফের তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে? এই যে বিয়ে করল এর কোনো দাম রইল না। একসাথে এতগুলো দিন থাকল সব মিথ্যা? পুরুষ মানুষ এত বেইমান হয়!

পুরো রাস্তা একদম নিশ্চুপ রইল শান্তি। নুবাইদও গম্ভীর হয়ে ছিল। বসেছিল ড্রাইভারের পাশে। পেছনে গুমোট ধরে থাকা শান্তির মনে কী চলছে জানা নেই। তালাল শেখের বাড়ি পৌঁছাতে রাত বাজল একটা। কলিং বেলের শব্দ শুনে শান্তির বড়ো মামা দরজা খুললেন। মাঝরাতে বিধ্বস্ত মুখে ভাগ্নিকে দেখে বিচলিত হলেন খুব। নুবাইদকে ভেতরে নিয়ে বসতে দেওয়া হলো। শান্তি স্তব্ধ মুখে একপাশে দাঁড়িয়ে। বড়ো মামা থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলেন ,

“ কী হয়েছে? ”

“ শান্তি আমার সঙ্গে থাকতে চায় না। জোর , জুলুম করে রাখা সম্ভব হলো না। ”

মামার মুখ শক্ত হয়ে গেল। বড়ো মামি ছুটে এলেন। বেরিয়ে এলেন তালাল শেখও। নুবাইদের মাথা নিচু। শান্তি কোন ধরনের মেয়ে জানে সবাই। নুবাইদ সম্পর্কেও জানে। তাই তালাল শেখ বললেন ,

“ আমরা এ ব্যাপারে কাল বসে কথা বলি? তোমাদের দুজনের মাথা ঠান্ডা হোক। তারপর খোলামেলা আলোচনা করব। ”

নিমেষে উঠে দাঁড়াল নুবাইদ। গম্ভীর গলায় বলল ,

“ কখন আসব বলে দিন। ”

আহত চোখে তাকাল সকলে। বড়ো মামি বললেন ,
“ থেকে যাও বাবা এত রাগ করো না।”

এক ঝলক শান্তির দিকে তাকাল নুবাইদ। এরপর দম ধরে বলল ,

“ দুঃখীত মামি। বাড়িতে কেউ কিছু জানে না। ওদিকটা সামলাতে হবে। কাল সঠিক সময় উপস্থিত হবো। ”

বিদায় নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়েও থেমে গেল নুবাইদ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তালাল শেখকে বলল ,

“ নানুভাই, শান্তিকে রেখে যাচ্ছি কিন্তু ছেড়ে যাচ্ছি না। ”

একটু থেমে ফের বলল ,

“ আমার স্ত্রীকে রেখে গেলাম। আশা করব অফিশিয়ালি আমরা আলাদা না হওয়া পর্যন্ত সে সসম্মানে, কটুবাক্যহীন এখানে থাকবে। ঝুটঝামেলা প্রতিটা দম্পতির মধ্যে হয়। আমাদেরও হয়েছে। আমি অপারগ ওকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না তাই মাঝরাতেই রেখে গেলাম। বাকি কথা আগামীকাল হবে।”

আর এক মুহুর্ত দাঁড়াল না। চলে গেল নুবাইদ। শান্তি মূর্তির ন্যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে। তালাল শেখ আহত গলায় বলল ,

“ অমন শান্ত মাথার ছেলে, হঠাৎ কী হলো বলো তো বড়ো বউমা! ”

বড়ো মামি আড়চোখে তাকাল শান্তির মুখে। তারপর
বিস্ময়াপন্ন গলায় বলল ,

“ শান্তশিষ্ট পুরুষ মানুষ সহজে বিগড়ায় না। আর যদি একবার বিগড়ায় উপায় থাকে না। এইবার হয় সব তছনছ হবে নয়তো সব গড়ে উঠবে। সবটা নির্ভর করছে আপনার নাতনির উপর বাবা। ”

~চলমান~
‌®জান্নাতুল নাঈমা