#শান্তিসুধা
১৯.
গোধূলি বিকেল। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে শান্তি। সারাদিনের প্রখর সূর্যতাপ শেষে প্রকৃতি এখন শান্ত। প্রকৃতির শান্ত, কোমল রূপ দেখছিল শান্তি। হঠাৎ পাশে এসে দাঁড়াল নুবাইদ। আঁচ পেতেই বুক কেঁপে উঠল শান্তির। আড়চোখে একবার দেখল মানুষটাকে। ভাবল, আর চুপচাপ থাকবে না। এবার নিজেকে প্রকাশ করতেই হবে৷ নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল সে। নুবাইদ হাতের ব্যাগগুলো রতনকে দিল। রতন সেগুলো নৌকায় উঠিয়ে বৈঠা হাতে বসল। শান্তি বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
” আগে কখনো নৌকায় উঠিনি। আজ ফার্স্ট টাইম নৌকা চড়ব৷ ”
স্মিত হাসল নুবাইদ। নৌকার দিকে পা বাড়াতেই শান্তি তার বাহু চেপে ধরল। একটুখানি ভীত হয়ে বলল,
” আমি সাঁতার জানি না নাফের। ভয় করছে, যদি এক্সিডেন্ট ঘটে যায়? একবার পানিতে পড়লেই আমি শেষ। চিরতরে শেষ। ”
শান্তি সাঁতার জানে না? খুবই আশ্চর্য হলো নুবাইদ। বলল,
” ভয় নেই। আমি থাকতে ভয় কীসের? ”
খুবই শান্ত ভঙ্গিতে, সাবলীল গলায় কথাটা বলল নুবাইদ। শান্তির বুকের ভেতর ধক করে উঠল। সর্বাঙ্গ শিহরিত হলো অচেনা সব শিহরণে। চেপে ধরা বাহুটা আর ছাড়ল না শান্তি। নুবাইদও ছাড়ানোর চেষ্টা করল না। বরং দায়িত্ব সহকারে, খুবই আগলে বউ সহ নৌকায় উঠল। নৌকার এ মাথায় বসল নুবাইদ। তার সামনে মাচাতে শান্তি বসল নুবাইদের দিকে মুখ করে। ভয় করছে ভীষণ। তাই নুবাইদের হাত ছাড়ল না। চেপে ধরে রইল। ও মাথায় রতন। বৈঠা বাইতে শুরু করেছে। একটু পর পর নৌকা দুলুনি দিয়ে উঠছে। যখনি এই দুলুনির পরিমাণ তীব্র হয়। নৌকার চারপাশে পানি ছলকে উঠে। শব্দ হয় ছলাৎ ছলাৎ। ঠিক তখনি শান্তি খুব শক্তি খাঁটিয়ে নুবাইদের হাত, বাহু চেপে ধরে। বিষয়টি মনে মনে বেশ উপভোগ করছে নুবাইদ। কিন্তু প্রকাশ্যে কখনো ভাবলেশহীন। কখনো স্রেফ দায়িত্ববোধ বোঝাচ্ছে। সূর্যাস্তের সময় ঘনিয়ে এলো। রতনের সঙ্গে টুকটাক গল্প করছে নুবাইদ। শান্তি চুপচাপ শুনছিল সেসব। হঠাৎ পদ্মফুল দেখতে পেল সে। এতদিন যা মোবাইল ফোনে, টিভিতে, ছবিতে দেখেছিল। তা দূর থেকে সামনাসামনি দেখে প্রচণ্ড উৎফুল্ল হয়ে উঠল। চ্যাঁচিয়ে বলল,
” নাফেরর, পদ্মফুল! ”
নুবাইদ চমকে তাকাল। শান্তির উচ্ছ্বসিত মুখ দেখে বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হলো। রতন বলল,
” ভাই ভাবিকে কি পদ্মফুল তুলে দেবেন? ”
রতনের কথা শুনে শান্তির চোখ দুটো চকচক করে উঠল। নুবাইদ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও তাকাতেই বলল,
” লাগবে? ”
খুশিতে আঁটখানা হয়ে শান্তি বলল,
” প্লিজ, প্লিজ কয়েকটা নিব। তারপর ছবি তুলে দেবেন আপনি। আমি ফেসবুকে পোস্ট দিব৷ রিলস বানাব। ”
চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে নুবাইদ মুখ এগুলো। ফিসফিস করে বলল,
” পদ্মফুল কিন্তু জোঁকের খাঁটি আস্তানা। ”
চমকে গেল শান্তি। ভয়ে শিরশির করে উঠল শরীর। ভয়ংকর জোঁকের আঘাতের চিহ্ন এখনো রয়েছে তার শরীরে। চুপসে গেল নিমেষে। ভয় ভয় চোখে তাকাল নুবাইদের পানে। নুবাইদ দুষ্টু হেসে রতনকে বলল,
” রতন ওদিকটা ঘুরিয়েই নাও। তোমার ভাবিকে পদ্ম ফুল তুলে দিই। ”
রতন নৌকা ঘোরাল। শান্তি ভীত মুখে বসে। তার ভেতরের সব উল্লাস নিভে গেছে। খেয়াল করে নুবাইদ বলল,
” মজা করেছি৷ পদ্মফুলে জোঁক না সাপও থাকে। ”
এ পর্যায়ে ভয়ে কান্নাপ্রায় অবস্থা হলো শান্তির। রতনকে বলল,
” রতন ভাইয়া, লাগবে না আমার পদ্মফুল। আপনি ওদিকে যাবেন না প্লিজ। ”
রতন শব্দ করে হাসতে শুরু করল। বলল,
” ভাই মজা করছে ভাবি। সব পদ্মফুলে সাপ, জোঁক থাকে না। আমরা দেখেশুনেই তুলব আপনি ভয় পাবেন না৷ ”
স্বস্তি পেল না শান্তি। তাকাল নুবাইদের দিকে। নুবাইদ ওর ভয়কাতুরে মুখ দেখে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,
” সাহসী শান্তিসুধাও ভয় পায় তাহলে! ”
কপালে ভাঁজ পড়ল শান্তির। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে পর্যবেক্ষণ করল নুবাইদকে। সুযোগ পেয়ে এভাবে মজা নিচ্ছে লোকটা? অহমিকায় লাগল খুব। অকস্মাৎ ছেড়ে দিল বদমাশটাকে। এরপর মুখ ঘুরিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে ঠাঁয় বসে রইল। কিন্তু পদ্মফুলের কাছে এসে রাগ ধরে রাখতে পারল না। মন আপনাআপনি ভালো হয়ে গেল৷ রতন বেশ কয়েকটা পদ্মফুল তুলে দেখেশুনে শান্তির হাতে দিল। নুবাইদ নিজেও তুলল কয়েকটা। শান্তিরও ইচ্ছে করল একটা নিজের হাতে তুলবে। কিন্তু সে যেই পদ্মই তুলতে গেল সেটাই এত শক্ত ছিল! শক্তিতে কুলোতে পারল না৷ নুবাইদ হাসল ওর কাণ্ড দেখে। তারপর নিজেই তুলে দিল। এতে শান্তির জেদ বাড়ল প্রচণ্ড৷ নুবাইদ পারলে সে পারবে না কেন? দুহাত বাড়িয়ে দিল এবার। সঙ্গে সঙ্গে ওড়নার অর্ধেক অংশ পানিতে পড়ে গেল৷ একই সঙ্গে চমকাল নুবাইদ, শান্তি দুজনই। নুবাইদ ত্বরিত পানি থেকে ওড়না তুলল। শান্তিও ঝুঁকেছিল। ফলে বুকের ভাঁজ দেখা গেল। ওপাশে রতন। এদিকে খেয়াল নেই। তবুও চোখ গরম করল নুবাইদ। বলল,
” সোজা হয়ে বসো। অনেক ফুল নিয়েছ। আর নিতে হবে না, দ্যাটস এনাফ। ”
ভ্রুজোড়া কুঁচকে সোজা হয়ে বসল শান্তি। বিড়বিড় করে বলল,
” বেরসিক কোথাকার। ”
চলমান…
®জান্নাতুল নাঈমা