শান্তি সমাবেশ পর্ব-২১

0
880

#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২১

[ রোম্যান্টিক পর্ব এটা। চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

হতভম্ব মৃত্তিকা। গাড়ি চলছে এত এত বৃষ্টির বিন্দুগুলোকে উপেক্ষা করে। মৃত্তিকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওর একটা হাত পূর্ণ’র হাতের মুঠোয়। লোকটা সচরাচর ওকে স্পর্শ করে না অথচ আজ সেই যে ধরলো এখন ছাড়ার নাম নেই। পূর্ণ’র পাশেই ওর মা বসা। তার কাঁধে পূর্ণ’র মাথা। ড্রাইভারের পাশে বসা ওর বাবা। মৃত্তিকা নজর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিলো সবাই’কে। মনে হচ্ছে পূর্ণ ঘুমাচ্ছে। অশান্ত পূর্ণ ভাই আজ একদম শান্ত হয়ে আছে কিন্তু কমে নি তার ঘাড়ত্যাড়ামো। হাজার বারণ সত্ত্বেও সে আজই মৃত্তিকা’কে নিয়ে বাড়ী ফিরছে। সবাই বললো আজ নাহয় থাকতো কিন্তু না পূর্ণ মানে নি। তার এককথা, বিয়ে করেছি কি বউ ছাড়া থাকতে?
মৃত্তিকা যেন বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলো তখন। এমন সব কথা আদৌ পূর্ণ বলতে পারে বলে ওর জানা ছিলো না। একপ্রকার ঘোরে’র মাঝেই বাবা কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিলো ওকে এরপর থেকে পূর্ণ হাত ধরে আছে। কিভাবে যেন জলদি জলদি সব হলো। বুঝে উঠার আগেই বাবা একসময় দৃষ্টিসীমানার বাইরে চলে গেলো। না বাবা দৃষ্টিসীমানার বাইরে যায় নি বরং মৃত্তিকা চলে এসেছে। এখনও বোধগম্য হচ্ছে না কিভাবে কি হলো আর হচ্ছে? পূর্ণ’র বউ হলো এবং হাত ধরে চলেও যাচ্ছে মৃত্তিকা। বাবা’রে রেখে। বিদায়ের শোক পালনের সময়টুকু পেলো না ও। জন্মের পর থেকে একরাত মনে নেই যেখানে কি না বাবা ছাড়া থেকেছে ও। আজ কিভাবে থাকবে? হঠাৎ ই মৃত্তিকা’র মনে হচ্ছে বড় একটা ভুল করে ফেলেছে ও। শুধু ভুল না মারাত্মক এক ভুল। এই ভুলের মাশুল কিভাবে চুকাবে ও?
বুক ফেঁটে কান্না আসার ঠিক আগ মুহূর্তে হাতে চাপ অনুভব হলো। মৃত্তিকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর আগেই কানে এলো পূর্ণ’র মায়ের কন্ঠ,

— বাড়ী এসে পরেছি মা। আসো নামো।

ধ্যান ভাঙলো মৃত্তিকা’র। আজ বিকেলেই এই বাড়ীতে এসেছিলো ও তখন পেয়েছিলো প্রত্যাখ্যান আর এখন এই বাড়ীর একমাত্র ছেলের বউ হয়ে এসেছে ও। ভাগ্য কতটাই না বিষ্ময়কর ওর। যে ব্যাক্তি তাকে অপমান করে তাড়ালো সে ই না এখন যোগ্য সম্মান দিয়ে তাকে হাত ধরে নিয়ে এলো? হাতে টান পরলো এবার। পূর্ণ দূর্বল হাতেই ওকে ভেতর থেকে বের হতে বলছে। বেশ রয়ে সয়ে বের হলো মৃত্তিকা। দারোয়ান ছাতা হাতে দাঁড়িয়েই ছিলো। এগিয়ে এসে সবাই’র হাতে ছাতা দিলো। পূর্ণ ছাতা খুলেই মৃত্তিকা’কে এক বাহুতে নিয়ে হাঁটা দিলো। ড্রয়িং রুমে শুধু লাইট জ্বলছে। মৃত্তিকা এখনও মানতে পারছে না কিছুই। মন সায় দিচ্ছে না কিছুতেই। পূর্ণ’র বাবা ছেলের দিকে তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে স্ত্রী’কে বললেন,

— জ্বরের মেডিসিন খায়িয়ে দাও আরেকটা।

ওর মা ওদের সোফায় বসিয়ে নিজে গেলেন ঔষধ আনতে। মৃত্তিকা এক চেষ্টা করলো পূর্ণ থেকে হাত ছাড়াতে কিন্তু পারলো না। দূর্বল শরীরে ও বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছে মৃত্তিকা’র হাত। ওর মা মেডিসিন খায়িয়ে একপলক স্বামী’কে দেখলেন। ইশারায় দুইজন কথা বলাবলি করে আমতা আমতা করে পূর্ণ’র মা বললেন,

— পূর্ণ আজ নাহয় তুই তোর বাবা’র সাথে থাক। আমি মৃত্তিকা’কে নিয়ে আমার রুমে….

মায়ের কথা শেষ করার ধৈর্য রাখলো না পূর্ণ। সরস গলায় জবাব দিলো,

–বৃষ্টিতে ভিজেছি আমি। বিয়ে করেছি আমি।বউ আমার। বাসর আমার। সেই বাসর সাজাবে কি উল্টো বলছো আমাকে বউ দিবে না। এতটা অবিচার তোমাকে মানায় আম্মু। যার যার বউ তার তার। কি বলো আব্বু? যাও তোমার বউ নিয়ে ঘরে যাও আব্বু। আমি আমার বউ নিয়ে গেলাম।

কথাগুলো বলেই মৃত্তিকা’র হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো পূর্ণ। ছেলের এসব ঠোঁট কাটা কথাবার্তায় অভ্যস্ত ওর মা-বাবা কিন্তু মৃত্তিকা? সে তো আজ পর্যন্ত গম্ভীর, রাগচটা পূর্ণ বাদে অন্য কোন পূর্ণ দেখে নি। সেখানে এমন বেফাঁস কথাবার্তা শুনে যে কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। আরেকহাতে আঁকড়ে নিলো দোপাট্টা’র অংশ। হাতের তালু ঘেমে যাচ্ছে ওর। আচ্ছা পূর্ণ কি টের পাচ্ছে?

______________________

মাত্র তেইশ বছর বয়সে বাবা হয়েছেন মৃন্ময় হাওলাদার। পরিবারিক নিষেধাজ্ঞা থাকার দরুন বিয়ে করেছিলেন বউ তুলে নিয়ে। প্রেমে’র বিয়ে। বেশ ভালোবাসা ছিলো তখন তার হৃদয় জুড়ে। হোক তখন তার এবং তার প্রেয়সীর ছোট্ট সংসার তবুও তাতে কখনো ভালোবাসার কমতি ছিলো না। সেই সোনা’র সংসার ছেড়ে একদিন বিদায় নিলো তার প্রেয়সী নাম না জানা জায়গায়। চলে গেল তাকে এবং তার মেয়ে’কে ছেড়ে। সেই থেকে জীবনটা কঠিন হতে নিয়েছিলো। প্রয়সী হারানোর শোক আর একটা মৃত্তিকা পাওয়ার আনন্দ। এই শক্ত পোক্ত হাতে তখন তুলে নেন ছোট্ট একটা দেহ। না মৃত্তিকা’র জন্মদিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয় নি বরং কয়েক বছর এই রাজকন্যা সহ তাদের সংসার ছিলো। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে সংসার গড়েছিলেন তিনি। কতরাত ছটফট করতে থাকা বুকের উপর মৃত্তিকা ঘুমিয়ে থাকতো। সারাটা রাত সেভাবেই থাকত। রাতে খাবার হজম হতো না মৃত্তিকা’র। ঘুমের ঘোরে বমি করে দিতো বাবা’র বুকে। কতশত বায়না তার। দশ বছর বয়স থেকে সবার দেখা দেখি মা চাইতো। কত মানুষ বুঝ দিলেন তাকে বিয়ে করতে। সংসার করতে। পারেন নি তিনি।
যৌবনটা তখন তাজা তার। ত্রিশ বছর বয়সে এসে নিজেকে সামলানোটা দায় ছিলো। যখন একদম পেরে উঠলেন না তখন ম্যানেজার তাকে একদিন রঙিন দুনিয়ার ঠিকানা দেয়। রুচিতে কুলায় নি তার তাই বাদ দেন সেসব কিন্তু তাকে না জানিয়ে একরাতে তার কিছু বন্ধুরা বদ্ধ ঘরে নিয়ে দরজা আটকে দেন। মৃদু মৃদু আলোতে খোলামেলা পোশাকে উপস্থিত ছিলো সেখানে সুন্দর এক রমণী। চোখ ধাঁধানো তার সৌন্দর্য। রুপ যেন তার খঁসে খঁসে পড়ে ঠিক চাঁদের ন্যায়। মেদহীন ছিলো তার উন্মুক্ত পেট যা শাড়ীর আঁচল ভেদ করে বেশ বুঝা যাচ্ছিলো। পাতলা একটা জর্জটের লাল রঙা শাড়ীতে ঠিক অপসরা লাগছিলো সেই মোহনীয় নারীকে। পিঠ পর্যন্ত তার এলোকেশী চুলগুলো ছিলো মাতানো সুগন্ধের সমারোহে ভরপুর। যৌন তৃষ্ণা হরহর করে বেড়ে গিয়েছিলো তার। বলিষ্ঠ দেহ চাইছিলো একটু প্রেম সুধা। মন, মস্তিষ্ক যেন এক হয়ে তাড়া দিচ্ছিলো সেই জ্বলন্ত আগুনে হাত বাড়াতে। তৃষ্ণা নিবারক হিসেবে নিজের করে চাইছিলো সেই আবেদনময়ী’কে। দিকহারা যৌবনপোড়া এক পুরুষ। শীরা উপসিরা ফুলে উঠে তখন এই নারী’র উষ্ণতায়। এগিয়ে যাওয়ার আগেই যখন নারীটি তাকে ধরা দিলো তখন যেন পথভ্রম ধরলেন তাকে। আঁকড়ে ধরেন সেই নারীর চুল। নারীটিও যেন এহেন সামর্থ্য বান, সুপুরুষ পান নি আগে। আনাবৃত্ত করে নেয় নিজের উপরিভাগ। হাত রাখেন তার শার্টের বোতামে।

পরিস্থিতি যখন একদম বাইরে ঠিক সেই মুহূর্তে নারীর আদুরে গলায় করা শব্দের বদলে তার কানে হঠাৎ বেজে উঠে, “বাব্বা, বাবা”। তার রাজকন্যা’র আদুরে ডাক। শরীর যেন আসাড় হয়ে আসে তার। তড়িৎ গতিতে সরে আসে সেই নারী থেকে। অতৃপ্ত রসনায় নারীটি চোখ তুলে তাকায়। মৃন্ময় হাওলাদার যেন উপেক্ষা করতে পারছিলেন না। কিন্তু যখনই সেই নারী তার ওষ্ঠে ছোঁয়া দিতে চাইলো নিজের রঙিন ওষ্ঠের তখনই শক্ত হাতের এক থাপ্পড় মা’রেন নারীটির সুশ্রী চেহারায়। হঠাৎ এহেন থাপ্পড় খেয়ে হুমরি খেয়ে পরেই ঠোঁট, নাক ফেঁটে যায় তার। ফ্লোর থেকে নিজের শার্ট’টা তুলে ঝটপট পড়ে দরজায় কড়াঘাত করে। এটা তারই ফার্মহাউসে ছিলো। তীব্র গানের শব্দে কেউ হয়তো শুনে নি তার গলা। একপর্যায়ে দরজার লক ভেঙে আসেন। গান বন্ধ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার বেস্ট ফ্রেন্ডর উপর। নাক বরাবর কয়েকটা ঘুঁষি মে’রে বলতে থাকেন,

— কেন করলি? কেন করলি এমনটা আমার সাথে? আমার আম্মা! আজ কিছু হলে এই মুখ কিভাবে দেখাতাম তাকে? কু*ত্তা*র বাচ্চা তোকে জানে মে*রে দিব আমি।

কথাগুলো বলতে বলতে অনবরত আঘাত করেন তাকে। বাকিরা কোন মতে ধরে ছাড়াতেই সকল বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসেন তিনি সেই কত বছর আগে। বাড়ীতে এসে যখন ঘুমন্ত রাজকন্যা’কে দেখেন সাথে সাথে আগে গোসল করে পরপরই ছোট্ট রাজকন্যা’র পাশে শুয়ে বুকে তুলে নেন। আটকে রাখতে পারেন নি নিজেকে। ঘুমন্ত দশবছরের সেই মেয়েকে বুকে নিয়ে পাগলের ন্যায় চিৎকার করে কেঁদেছেন তিনি। ঘুম ছুটে বাবা পাগল মৃত্তিকা ও কাঁদতে থাকে। চেয়েও নিজেকে থামাতে পারেন নি মৃন্ময় হাওলাদার। যদি একটা ভুল হয়ে যেত। যদি নারী দেহের সানিধ্য পেতে মরিয়া হয়ে কিছু করে ফেলতেন? তখন কোনদিন ও নিজেকে মাফ করতে পারতেন না। বিয়ে ও করেন নি। সেই অধিকার একমাত্র তার প্রয়সী’র। ঐ ঘটনার পর বন্ধু ত্যাগ করেন তিনি। মেয়ে নিয়ে গড়েন তার ছোট্ট এই রাজ্য যা আজ ফাঁকা। সম্পূর্ণ ফাঁকা রাজ্য তার।
.
টলতে টলতে মৃত্তিকার রুমে এসে আলমারিটা খুললেন। হাতড়ে হাতড়ে কাপড়গুলো দেখছেন। একটা পোশাকে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললেন হাউমাউ করে। যেন আজ বয়সটা তার দ্বিগুণ হয়ে গেলো। ফ্লোরে বসে কেঁদে উঠলেন আজ তৃতীয়বারের মতো। জরুরি ছিলো বিয়েটা নাহয় কোনদিন তার রাজকন্যা তিনি দিতেন না। প্রয়োজনে রাজকুমার তুলে আনতেন। ভাগ্যের পরিহাসের শিকার হয়ে তার সুখের রাজ্য ভেঙে তার একমাত্র রাজকণ্যা চলে গেল। কি মনে করে উঠে দঁড়ালেন। সবকিছু ছুঁয়ে দিতে দিতে নিচু গলায় ডাকলেন,

— আম্মা।

জবাব দিলো না কেউ। আবারও একই ভাবে ডাকলেন তিনি,

— আম্মা। বাবা’র কাছে আসুন। দৌড়ে না। পড়ে যাবেন। আম্মা? আম্মা আসুন। এই যে বাবা হাত বাড়িয়েছি। পড়তে দিব না। এক দৌড়ে বুকে আসুন না আম্মা।

কেউ আসলো না। নেই কেউ তার। ফাঁকা রুমটায় গলা ফাটিয়ে আবারও কেঁদে উঠলেন এক অসহায় বাবা। তার রাজ্য আজ খালি। তার বাগানে ফুটা একমাত্র গোলাপটা আজ নেই৷ এতদিন মালি হয়ে যেই গোলাপের যত্ন নিলেন সেই গোলাপ নিজ হাতেই তুলে অন্য বাগানে দিয়েছেন তিনি৷
শরীর ক্লান্ত হয়ে এলো তার। অচেতন হয়ে পড়লেন কিছুটা। মিঠি দৌড়ে এলো তার কান্না শুনে। মা’কে ডেকে এনে তুললো বিছানায়। মিঠি ও কেঁদে ফেললো মামা’র এমন অবস্থা দেখে। হাজার পর হলেও আজ তার অবদানেই মিঠি এতদূর।

_________________

পুষ্পহীন বাসর ঘরে বসে আছে মৃত্তিকা। খাটে বসে পা দুলাচ্ছে আর গভীর ভাবে কিছু চিন্তা করে যাচ্ছে। পূর্ণ গিয়েছে ওয়াসরুমে। একটু পরই খট করে দরজা খুলে বের হলো। মৃত্তিকা এতটাই ভাবনায় বেভুর যে পূর্ণ’র আগমন ওর খেয়াল হলো না। যেই না পূর্ণ দরজা লক করে লাইট অফ করলো ওমনি কিছুটা চমকে চিৎকার করে ওঠে ও৷ সাথে সাথেই মৃদু আলোতে ঘর ঝলমলিয়ে উঠে। পূর্ণ এগিয়ে আসতে আসতে বললো,

— অন্ধকারে ভয় পান মৃত্ত?

— না৷

কোন গাইগুই ছাড়া সোজা উত্তর মৃত্তিকার। পূর্ণ দূর্বল দূর্বল পা ফেলে এগিয়ে এসে পাশে বসলো। মৃত্তিকা সোজা হয়ে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। লোকটার চোখে তাকানো যায় না। মাথায় পূর্ণ’র হাতের অস্তিত্ব টের পেতেই মৃত্তিকা মাথা উঁচু করলো। পূর্ণ ধীর শব্দে কিছু দোয়া পড়ে ওর মাথায় ফুৃ দিলো। পরপর উঠে আলমারি খুলে কিছু টাকা বের করলো৷ কিছু টাকা বের করলো একটা ড্রয়ার থেকে। সব টাকা টেবিলে রেখে গুনছে একসাথে। মৃত্তিকা চুপচাপ ওর কার্যকলাপ দেখছে৷ মাথা শূন্য হয়ে আছে। কি করতে চাইছে পূর্ণ তাই বোধগম্য নয় ওর। হঠাৎ সামনে বসলো পূর্ণ। টাকা গুলো মৃত্তিকা’র হাতে দিয়ে ক্লান্ত স্বরে বললো,

— কাবিননামা এত কম করায় আমার আব্বু রাগলো দেখলেন অথচ সাপোর্ট করলো আপন শশুর৷ আমি আমার সাধ্যর মধ্যে মোহরানা রেখেছি মৃত্ত। বাবা’র টাকায় আমি কেন কাবিন করব বলুন? এই যে এখানে কাবিনের মোহরানা পুরোপুরি এক লক্ষ টাকা। ভাববেন না ঠকেছেন। আমার সবটা আপনার মৃত্ত।

মোহাবিষ্ট হয়ে সবটা শুনে গেলো মৃত্তিকা। পূর্ণ’র দেয়া টাকা হাতে নিয়ে তা পুণরায় পূর্ণ’কে দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,

— আমার হক আপনাকে দিলাম৷ আব্বু বলেছে এটা আপানকে দিতে। এটা দিয়ে আপনার ব্যাবসায় ইনভেস্ট করুন। বরকতময় রিজিক এটা৷

পূর্ণ হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়ে পাশের ড্রয়ারে রাখলো। এই প্রথম বারের ন্যায় চমকালো মৃত্তিকা কপালে পূর্ণ’র উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই। এই প্রথম স্বামী থেকে পাওয়া এর আদুরে স্পর্শ এটা। কতটা মোহনীয়,কতটা আবেদনময়ী, কতটা পবিত্র তা বুঝে উঠতে গিয়ে যেন আরো অতলে তলিয়ে যাচ্ছে মৃত্তিকা সেই অতল থেকে তাকে পূর্ণ টেনে তুললো। নামাজের আহবান করতেই দুইজন একসাথে নামাজ পড়ে নিলো।

মৃত্তিকা হঠাৎ খেয়াল করলো পূর্ণ কাঁপছে। মৃত্তিকা’র হাত ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বিচলিত হলো মৃত্তিকা। ধরে শুয়িয়ে দিতেই খেয়াল করলো অসম্ভব ঠান্ডা হাত পা অথচ কপাল গরম হয়ে আছে। উঠে ওর মা-বাবা’কে ডাকতে যেতেও দিলো না পূর্ণ। ঝাপটে বুকে চেপে ধরলো। পুরো দুই হাত পা দিয়ে পেচিয়ে শুয়ে কাঁপছে পূর্ণ। দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাচ্ছে অনবরত। শরীরের উপর মোটা একটা কম্বল। সেই সাথে পূর্ণ’র উষ্ণ বুক। মৃত্তিকা যেন ঘেমে নেয়ে উঠছে। গরমে আর আড়ষ্টতায় হাসফাস করছে ওর দেহ। পূর্ণ এতটা কাছে এত সহজে কিভাবে নিলো? যেই ছেলে সহজে হাত ধরতো না আজ বিয়ে নামক ছোট্ট একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কতটা সহজে, কতটা কাছে টেনে নিলো ওকে।
বহু কষ্টে মৃত্তিকা বললো,

— আপনার জ্বর অনেক। আমি মাথায় পানি দেই। ছাড়ুন। উঠতে দিন।

পূর্ণ ছাড়লো না। কাঁপতে কাঁপতে শুধু বললো,

— ঔষধ খেয়েছি মৃত্ত। থেমে যাবে কাঁপন। আমি আমাকে ধরে রাখুন।

মৃত্তিকা না পেরে শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো ওকে। ঘড়ির কাটা তিনটায় থামতেই ধীরে ধীরে পূর্ণ’র কাঁপন থামলো। জ্বর ছাড়েনি পুরোপুরি। মৃত্তিকা’র উপর দিয়ে কি গেলো সেটা ওই বুঝলো। চোখ দিয়ে অপ্রিয় প্রিয় মানুষটার এহেন দশা যেন বুক ঝাঁজড়া করে দিচ্ছে ওর।

আস্তে ধীরে চোখ খুললো পূর্ণ। লাল হওয়া চোখ দিয়ে মৃত্তিকা’র পানে তাকিয়ে বললো,

— পানি খাব মৃত্ত।

পাশেই পানির বোতল রাখা। মৃত্তিকা অনুরোধের সুরে বললো,

— একটু ছাড়ুন পানি দেই।

পূর্ণ হাত আলগা করলো। ছাড়লো না। মৃত্তিকা একটু উঠে পানির বোতলটা খুলে পূর্ণ’র ঠোঁটের সামনে দিতেই প্রায় অর্ধেক খেয়ে নিলো পূর্ণ। মৃত্তিকা সেটা রেখে যেই না সরবে ওমনি পূর্ণ আবারও ঝাপটে নিলো বুকে। ঠান্ডা হাত দিয়ে গালে আসা সকল চুলগুলো সরিয়ে অনবরত চুমু খেতে লাগলো মৃত্তিকা’র গালে, কপালে,চোখে। লজ্জায় লাল হওয়া মৃত্তিকা কিছুটা আঁতকে উঠলো পূর্ণ’র দাবিতে,

— মৃত্ত আমাকে আজকে আপনিটাকে দিবেন। প্লিজ মৃত্ত। একবার ছুঁয়ে দেই? একটাবার আদর দেই? আপনি কি ফিরিয়ে দিবেন আমায়? মৃত্ত আমার একটাবার…

কথাগুলো বেশ অস্থির হয়ে বললো পূর্ণ সাথে বাড়তে লাগলো তার বাহ্যিক অস্থিরতা। দুই হাতে মৃত্তিকা’কে বুকে তুলে নিলো। ঘনঘন গরম নিঃশ্বাস ফেলে আকুল আবেদন করলো পুণরায়। সাড়া সরুপ হাত দিয়ে পূর্ণ’র সেই লালচে ওষ্ঠধর ছুঁয়ে দিলো মৃত্তিকা। এতেই যেন উলোট পালোট হলো সব। বাইরের বেড়ে চলা তুফানের কাছে যেন বদ্ধ কামড়ার এই ঝরটা বড্ড ভিন্ন। নিজের সবটা দিয়ে পাগল পূর্ণ আগলে নিলো তার পূর্ণ্যময়ী’কে। অবহেলায় বাবা’র দেয়া সেই দোপাট্টা’টা গড়াগড়ি খেলো শুভ্র ফ্লোরে। পূর্ণ আজ পাগল হলো সাথে পাগল বানালো তার পূরণ্যময়ীকে৷ ভালোবাসার অতলে হারালো তার মৃত্ত’কে নিয়ে। ধৈর্যশীল সেই সুদর্শন পুরুষটা আজ অধৈর্যের দাঁড় গোড়ায় পৌঁছে গেলো সাথে টেনে হিঁচড়ে নিলো মৃত্তিকা’কে। একসময় থামলো বাইরের তুফান কিন্তু থামলো না সেই অধৈর্য পুরুষটার তার নারীর প্রতি বিলিয়ে দেয়া ভালোবাসা।

#চলবে……