শান্তি সমাবেশ পর্ব-২২

0
882

#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২২

সিগ্ধ ঝমঝমা একটা ভোর। বৃষ্টি’র তেজ থেমেছে ঘন্টাখানিক হলো। পূর্ণ’র লোমহীন বুকে মুখ গুজে পড়ে আছে মৃত্তিকা। ঘুম নেই কারো চোখে। থেকে থেকে কেঁপে যাচ্ছে মৃত্তিকা। বেশ আদুরে ভঙ্গিতে ওর ভেজা চুলে হাত বুলাচ্ছে পূর্ণ। কথা নেই কারো মুখে। নিস্তব্ধতা ঘিরে সারা কক্ষময়। আলতো করে মৃত্তিকা’র চুলগুলো ছড়িয়ে দিলো পূর্ণ। মৃত্তটা অনেক নাজুক ওর। জানে পূর্ণ অসুস্থ হয়ে যায় ও অল্পতেই। সেখানে হঠাৎ পূর্ণ’র এমন আচরণে মূর্ছা যাওয়াটাই স্বাভাবিক। পূর্ণ মুখ এগিয়ে চুমু খেল ওর মাথায়। ধীম হয়ে আসা কন্ঠে ডাকলো,

— মৃত্ত?

জবাব নেই কোন অথচ পূর্ণ জানে জেগে আছে মৃত্তিকা। মাত্রই তো গোসল করে এলো দুজন। বহু কষ্টে ওকে তুলে নিয়ে গোসল করাতে হয়েছে। আদরে আদরে নেতিয়ে পরেছিলো তার মৃত্ত। হয়তো এত হৃষ্টপুষ্ট পূর্ণ’কে সহ্য করতে পারে নি। শান্তির শ্বাস ফেললো পূর্ণ। আজ কতটা মাস অপেক্ষারত ছিলো ও এই দিনটার জন্য। এই মৃত্ত’টা থেকে নিজেকে দূরে রাখা ছিলো বড্ড কষ্টসাধ্য। কিছুক্ষণ আগেই সকল বাঁধা সকল অদৃশ্য শেকল ছিন্ন করে দুইটি হৃদয় এক হয়েছে। কাছাকাছি এসেছে। ঠিক ততটা যতটা কাছাকাছি এলে আর আলাদা হওয়া যায় না। মৃত্তিকা’কে বুকের আরেকটু উপর তুলে নিলো পূর্ণ। সারারাত ঘুম হয় নি। এখন একটু ঘুম দরকার। মৃত্তিকা হয়তো ক্লান্ত হওয়ার দরুন পূর্ণ’র আদুরে ছোঁয়াতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো সেই লোমহীন বুকে।
.
সাফারাত লাল হওয়া চোখে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। মাত্র ফজরের নামাজটা পড়েছে সে। সারা রাত ঘুম তারও হয় নি। বুকের গভীরের ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। খানখান হয়ে যাচ্ছে তার অন্তরের অন্তস্তলে থাকা সেই লালচে খয়রি জিনিসটা। হয়তো র*ক্ত ক্ষরণ হচ্ছে যা লোকচক্ষুর আড়াল। অতীত ভাবতেই ওর মস্তিষ্ক চিরবিড়িয়ে উঠলো। দুই হাতে মুঠি করে ধরলো চুল। বদ্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠলো হাসোজ্জল একটা মায়াবী মুখ। দাগহীন একটা মুখ। মোহনীয় এক নারী। সাফারাতের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট সেই নারী। অসহ্যকর যন্ত্রণায় কাবু হলো সাফারাত। কানে বাজছে মিষ্টি সুধাময়ী কন্ঠে ডাক,”রাত”। দুইটা মানুষ এই নামে ডাকে ওকে। অথচ এখন এই নামে কেউ ডাকে না। কেউ না৷ ঐ দিন ভুলে অনেকবছর পর ঐ নামে পূর্ণ ডেকে ফেলেছিলো তাকে। “পূর্ণ” নামটা মাথায় আসতেই রাগে চোয়াল শক্ত হলো সাফারাতের।

সারা রাত বৃষ্টি হওয়াতে নভেম্বরের ভোরটা ও বেশ ঠান্ডা। অথচ রাগে ঘামছে সাফারাত। পরণে থাকা টিশার্ট টা ঝট করে খুলে ছুঁড়ে মারতেই তা দূরে গিয়ে পরলো। বলিষ্ঠ দেহটা দৃশ্যমান হলো। বুকের লোমে হাত বুলালো সাফারাত। এই বুকটা ছিলো সেই নারীর প্রিয় স্থান। এই লোমে ভরা বুকে নাক ডুবিয়ে শ্বাস টানতো। সাফারাত তখন দিকবিদিকশুন্য হয়ে পরতো।
এতসব মনে পড়তেই ছটফটিয়ে উঠলো ওর পৌরুষ চিত্ত। খলবলিয়ে উঠলো পেটানো দেহ। হাত পা ছড়িয়ে ফ্লোরে শুয়ে পরলো সাফারাত। ছটফট করলো প্রেমহীনা। চোখ মুদন করে ফোনটা হাতে তুললেই কল এলো তাতে। রিসিভ করতেই কানে ভাসলো নারী কন্ঠ। সাফারাতের চোখ গলিয়ে দুই ফোটা পানি পরলো ফ্লোরে। জীবনে তার চাওয়াটা কি খুব বেশি ছিলো?

__________________

সকাল প্রায় ১১ টা অথচ পূর্ণ’র বুকে বেহুশ হয়ে ঘুমাচ্ছে মৃত্তিকা। ভারি ভারি নিশ্বাস গুলো আছড়ে পড়ছে পূর্ণ’র উদাম বুকে যা জানান দিচ্ছে তার মৃত্ত গভীর ঘুমে আছে। মাত্রই চোখ খুলেছে পূর্ণ তখনই চোখটা আটকায় মৃত্তিকা’র খোলা গলায়। লালচে দাগটা সময়ের সাথে কালচে হয়েছে। পূর্ণ’র মনটা তীব্র প্রতিবাদ জানালো। সেখানে আবারও লালচে দাগের ক্ষত করতে বললো। শাসালো পূর্ণ সেই মনকে। মন থামবে কি উল্টো পূর্ণ’কে শাসিয়ে বললো, “তোর মৃত্ত এটা পূর্ণ, শুধু লাল দাগ কেন ক্ষত বিক্ষত করার হক তোর আছে”। মনের দেয়া জোরে পূর্ণ সেই খোলা জায়গায় পুণরায় মুখ ডুবালো। সুক্ষ্ম দাঁতের সূচালোভাবে ব্যাবহার করলো। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে আর্তনাদ করে উঠলো মৃত্তিকা। হকচকালো পূর্ণ। ঘুমন্ত মৃত্তিকা কেঁদে যাচ্ছে অথচ ঘুম জোড়ালো হওয়াতে চোখ খুলতে পারছে না। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো পূর্ণ। আদর করে দিলো ঘুমন্ত তার মৃত্ত’কে। কাজ হলো বটে। ধীরে ধীরে কান্নার সুর মিলিয়ে গেলো। পূর্ণ একটু ঝুঁকলো ক্ষতস্থানে মলম সরুপ ভেজা ওষ্ঠের ছোঁয়া দিলো। ভাবলো এতে হয়তো তৃষ্ণা মিটবে অথচ হলো তার ব্যাতিক্রম। পূর্ণ যেন এতে আরো তৃষ্ণার্ত হয়ে পরলো। দেখতে মন চাইলো তার পূর্ণ্যময়ীকে। আলতো হাতে মৃত্তিকা’র উপর থেকে কম্বটা সরাতেই চোখ আটকে গেলো। পূর্ণ’র একটা সাদা শার্ট তার পরণে। হাঁটুর সামান্য উপরে তার অবস্থান। বুকের দিকে দু’টো বোতাম খোলা যা টানতে লাগলো পূর্ণ’কে। দিক হারানো পূর্ণ সামলালো নিজেকে। শুধু গাঢ় চুম্বন করলো সেই উন্মুক্ত স্থানে পরপর যথাযথ ভাবে ঢেকে নিলো তার মৃত্ত’কে যেন লুকিয়ে ফেললো দিনের আলো থেকে।

পূর্ণ আস্তে ধীরে উঠে বসলো। শরীরটা তার এখন চাঙ্গা একদম। আড়মোড়া ভাঙতেই মনে পরলো জ্বর নেই তার। কথা তার একদম ঠিক। বউ আসতেই জ্বর পালিয়েছে। একথা বাবা’কে জানাতে হবে। বাবা বারবার তার যুক্তিকে প্রাধান্য দেয় নি এখন মিললো তো? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুম ঢুকলো পূর্ণ। এদিকে মৃত্তিকা’র ঘুম আলগা হয়ে গিয়েছে। এত রাত পর্যন্ত কখনো জেগে থাকে না ও গতকালই হয়তো ব্যাতিক্রম ঘটেছে। গতকাল বললো ভুল হবে যা ঘটেছে তা আজ। রাত বারোটার দিকেই তো বিয়ে হলো পরপর বাসর। কথাগুলো মনে পরতেই ঝট করে চোখ খুললো মৃত্তিকা। আশে পাশে তাকাতেই রুম ফাঁকা পেলো। শরীরে তখনও তার ব্যাথা অনুভব হচ্ছে সাথে মাথা ভার হয়ে আছে। নামার জন্য শরীর থেকে কম্বলটা সরাতেই চমকে উঠলো ও। পরণে তো পূর্ণ’র শার্ট। হুট করেই যেন কাঁন্না পেলো মৃত্তিকা’র। এমন সব পরিস্থিতিতে কি করা দরকার ও বুঝে উঠতে পারছে না। তবুও বুঝলো এটা পড়ে থাকা যাবে না। নিজের কিছু ও নেই এখানে। বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানো মাত্র ধপ করে পড়ে গেলো একদম ফ্লোরে। তখনই খট করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো পূর্ণ। মৃত্তিকা এবার মাত্রাতিরিক্ত লজ্জায় কেঁদে উঠলো। হতভম্ব পূর্ণ’র বুঝতে সময় লাগলো আসলে কি হয়েছে। সচল মস্তিষ্কে কথাটা ঢুকতেই তারাতাড়ি এগিয়ে এসে দুই হাতে তুলার চেষ্টা করলো। মৃত্তিকা সাপোর্ট না দেয়াতে একটু কষ্ট হলো বটে। বুকের সাথে ঠেস দিয়ে তুলে বিছানায় বসিয়ে নিজে বসলো হাঁটু গেড়ে ওর কোলের কাছে। হাত দুটো শক্ত করে মুঠোয় পুরে চুমু খেয়ে আদুরে গলায় ডাকলো,

— মৃত্ত?

গুটি কয়েক বারই পূর্ণ এহেন আদুরে গলায় ডেকেছে ওকে। আঙুলে গণণা ও করা যাবে। এই ডাকটা কেন জানি উপেক্ষা করতে পারে না ও৷ না চাইতেও নজর তুলে তাকালো। দেখলো একপলক তার একান্ত পুরুষটাকে ছলছল চোখে পরপরই নজর নামিয়ে। পূর্ণ একহাত মৃত্তিকা’র ভেজা গালে রাখলো। মুছে দিলো সেই নোনা পানি। শীতল কণ্ঠে বললো,

— মৃত্ত আমার, তাকান আমার দিকে।

মৃত্তিকা তাকাতে পারলো না। পূর্ণ জোর দিলো না। সম্মুখে বসা নারীটা বড্ড নাজুক। নোনি’র পুতুল সে। পূর্ণ এবার কিছুটা কথা গোছালো ভেতর ভেতর। মৃত্তিকা’র হয়তো বেশ কিছুই অজানা। সেটা তার আগেই বুঝা উচিত ছিলো। আগে ভাগে বুঝালে এতটা সমস্যা হতো না। কেন জানি ধৈর্যটা ধরে রাখতে পারে নি সে৷ সময় দিতে পারে নি। নরম কন্ঠে বলা শুধু করলো,

— মৃত্ত এটা হওয়া স্বাভাবিক ছিলো তাই না?

মাথা উপর নিচ করলো মৃত্তিকা। কান্না তার থেমেছে কিন্তু আড়ষ্ঠতার দরুন মাথা তুলতে ব্যার্থ সে। পূর্ণ এবার মৃত্তিকা’র হাত দুটো’র স্থান দিলো নিজের দুই গালে। ঠান্ডা গালে লাগলো মৃত্তিকা’র গরম তালু। পূর্ণ শুধালো,

— এটা যেমন স্বাভাবিক ছিলো তার সাথে ফিজিক্যাল পরিবর্তন গুলোও স্বাভাবিক মৃত্ত। আপনার সমস্যা গুলো নিরদ্বিধায় আমাকে বলুন৷

অতিলজ্জায় হাসফাস করতে থাকা মৃত্তিকা পুণরায় থমকালো,

— পেইন হচ্ছে?

আড়ষ্টতা নিয়েই মাথা দুলালো ও৷ পূর্ণ আবারও জিজ্ঞেস করলো,

— এটা নরমাল মৃত্ত। পেইন কিলার নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর হয়তো দূর্বল লাগবে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। সময়ের ব্যাপার শুধু। ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয় নি৷

একটু থামলো। ফের বললো,

— আমি জানি কষ্ট হচ্ছে মৃত্ত। আমার ভালোবাসা গুলো যে এমনই জ্বালাময়ী। এতদিন তো আমি পুড়লাম এবার নাহয় আপনি পুড়ুন।

মৃত্তিকা তাকাতেই চোখের পাতায় চুমু পরলো। পূর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

— আসুন আমি ওয়াশরুমে দিয়ে আসি৷

মৃত্তিকা’কে ধরে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে সোজা চাদর তুলে নিলো। নতুন চাদর বিছিয়ে দরজা খুলে হাঁটা দিলো মায়ের রুমে। রুম খালি দেখে কিচেনে পা বাড়াতেই পেছন থেকে ওর বাবা ডাক দিলো,

— জ্বর কমেছে পূর্ণ? মৃত্তিকা কোথায়? ওকে নিয়ে খেতে আয়। আমরাও ওয়েট করছি।

ভ্রু কুচকে বাবা’র দিকে তাকালো পূর্ণ। অদ্ভুত চাহনিতে থমকালেন ওর বাবা। এহেন চাহনির মানে বুঝতে পারেন নি। পূর্ণ গমগমে গলায় বললো,

— আমি নাহয় বউ সাথে থাকায় দেড়ীতে উঠেছি তোমার কেন লেট হলো? আফটাল অল ইউ আর এ মর্নিং পারসন।

বাবা মুখ খুললেন কিছু বলার জন্য তার আগেই পূর্ণ বাঁকা হেসে বললো,

— নিশ্চিত আমার লাই পেয়ে বাসর তুমিও করেছো?

গলার কথাটা টুপ করে গিলে নিলেন ওর বাবা। এই ছেলে সকাল সকাল বেফাঁস বকা শুরু করেছে। পেপারে মুখ গুজার আগে শুধু বললেন,

— বিয়ে করবা দিন রাত ভুলে আর এক্সপেক্ট করবা সবাই ভোরে উঠবে তা তো হয় না।

পূর্ণ পাত্তা দিলো না বাবা’কে। মায়ের কাছে কিচেনে টুকি দিয়ে বললো,

— আম্মু মৃত্ত’র জন্য ড্রেস দাও।

ওর মা হাতের কাজটা বুয়াকে দিয়ে ঝটপট বের হলেন কিচেন থেকে। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আগে ছেলের কপাল দেখলেন। জ্বর ছেড়েছে দেখে শুকরিয়া আদায় করে বললেন,

— কি মুশকিল বল তো? কাল তো তারাহুরো করে আসায় ওর বাসা থেকে কিছুই আনা হলো না।

পূর্ণ ঝটপট বললো,

— তোমার শাড়ী দাও।

— গাঁধা শাড়ীর সাথে আর কিছু লাগে না বুঝি?

কথাটা বলেই আবার বললেন,

— চল রুমে।

নিজের চিকন থাকা কালের একটা ব্লাউজ আর সাথে একটা নতুন কাতান শাড়ী দিয়ে বললেন,

— আপাতত পরুক পরে বিকেলে শিপং এ যাবি।

মায়ের গালে চুমু খেয়ে পূর্ণ ছুটলো তারাতাড়ি। রুম লক করে বসার পাঁচ মিনিট পরই মৃত্তিকা বের হলো। বেশ আনইজি লাগছে এভাবে শার্ট পরে পূর্ণ’র সামনে থাকায়। পূর্ণ এগিয়ে এসে শাড়ী দিয়ে বললো,

— আজ শাড়ী পড়ুন মৃত্ত। আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে এটাতে। আম্মুর এটা।

মৃত্তিকা শাড়ী হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে বললো,

— আপনি একটু বের হবেন। আমি ওয়াসরুমে শাড়ী পড়তে পারি না।ভিজে যায়।

বিয়ের পর এটা দ্বিতীয় বার ঠিকঠাক ভাবে বলা কথা মৃত্তিকা’র এছাড়া তেমন কথা বলতে পারে নি মেয়েটা। পূর্ণ ঝোঁপ বুঝে কোঁপ মা’রলো,

— আমি পড়িয়ে দেই? আপনি তো পারবেন না?

— আমি পারি।আপনি প্লিজ একটু বের হন।

কোঁপটা বিফলে যাওয়াতে আফসোস হলো পূর্ণ। ব্যালকনিতে যেতেই মৃত্তিকা দরজা লক করে শাড়ী পড়ে নিলো ঝটপট। এভাবে থাকাটা বেশ লজ্জাজনক ছিলো।

পূর্ণ রুমে এসেই দেখলো ওর পূর্ণ্যময়ীকে। আকাশী রংটা যেন শ্যামলা গায়ে বেশ মানানসই শুধু মাত্র ঢোলা হয়েছে ব্লাউজ। এগিয়ে এসে মাথায় ঘোমটা তুলে মুগ্ধ হওয়া গলায় বললো,

— আমার পূর্ণ্যময়ী।

— আমার কাপড় আমি ধুঁতে পারি।

ওর এহেন কথায় পূর্ণ বললো,

— জানি তো আমার মৃত্ত সব পারে কিন্তু আজ সে পারবে না। আমার মৃত্ত দূর্বল আজ।

বলে ওকে রেখে ওয়াসরুম থেকে নিজের আর মৃত্তিকা’র কাপড়গুলো নিয়ে বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে এসে বললো,

— চলুন আম্মু-আব্বু ওয়েট করছে।
.
একসাথে নাস্তার টেবিলে বসতেই পূর্ণ’র বাবা-মা এর ব্যাবহারে মুগ্ধ হলো মৃত্তিকা। “মা” কি বা কেমন হয় তা জানা নেই তার। না ছিলো জানার আগ্রহ কারণ বাবা যথেষ্ট তার জন্য। আজ যেন মৃত্তিকা মা পেলো। যদিও তার আফসোস বা আক্ষেপ নেই মা নিয়ে। বাবা তাকে দ্বিগুণ না বরং চৌগুণ দিয়েছে। গা গুলানোর কারণে তেমন কিছুই খেতে পারলো না মৃত্তিকা। জোর করে পূর্ণ’র মা একটা ডিম খায়িয়ে দিয়েছে।
মাথা ঘুরাতেই উঠে দাঁড়িয়ে ও মৃত্তিকা টেবিলে বসে পরে। খেয়াল করে সেটা পূর্ণ। বাবা-মা একটু এদিক ওদিক যেতেই সোজা কোলে তুলে রুমে এসে শুয়িয়ে দেয় বিছানায়। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— অনেক খারাপ লাগছে?

— আব্বু’র কাছে যাব।

চোখ বুজে আবারও খুললো পূর্ণ। মৃত্তিকা’র দিকে ঝুৃঁকে বললো,

— যাবেন। আগে মেডিসিন নিতে হবে তো।

মৃত্তিকা হঠাৎ উঠে বসলো। আলাম ডিম খাওয়াতে বমি পাচ্ছে ওর। মুখে হাত চাপতেই পূর্ণ তারাতাড়ি ওয়াশরুমে নিলো। গলগলিয়ে বমি করে দিলো মৃত্তিকা। জোরে জোরে শ্বাস ফেলতেই পূর্ণ আস্তে করে ওর মুখ ধুঁয়িয়ে বাইরে এলো। মুখ মুছিয়ে মেডিসিন খায়িয়ে বললো,

— নিশ্চিত গত কাল ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হয় নি মৃত্ত নাহলে এতটা দূর্বল হওয়ার কথা না আপনার।

মৃত্তিকা চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরতেই পূর্ণ ওর ভেজা কোঁকড়াচুলো চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিলো। নরম কন্ঠে জানালো,

— একটু পরই বাবা’কে কল দিয়ে কথা বলুন। বিকেলে নিয়ে যাব।

— হু।
.
পূর্ণ’র আশায়ই বসে ছিলো মৃত্তিকা। সে বলেছিলো বিকেলে নিয়ে যাবে বাবা’র কাছে। যদিও বাবা’র সাথে কথা হয়েছে তবুও মন মানছে না তার৷ পূর্ণ’র মা একবার কলও দিলেন। পূর্ণ বলেছে আধ ঘন্টায় ফিরে আসবে অথচ এখনও খবর নেই। তখনই কলিং বেল বাজলো। কাজের মেয়েটা দরজা খুলতেই চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

— খালাম্মা দেইখা যান। ভাইজানের মাথা ফাইট্টা গেসে।

চমকে উঠলো সবাই। মৃত্তিকা’র নজরে হঠাৎ ভেসে উঠলো পূর্ণ’র র*ক্তাত্ব চেহারাটা।

#চলবে…..

[ সরি একটু অগোছালো হয়েছে।]