#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৪
ঘুটঘুটে অন্ধকার। সুউচ্চ বৃক্ষটাতে কানাকুয়া’র ডাকটা বিভৎসভাবে কানে বাড়ি খাচ্ছে। বুকটা যেন হাহাকারে কাঁদে সুঠাম পুরুষটার। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। তবুও পা থেমে নেই। বড় বড় গাছ গুলো পেরিয়ে সে দৌড়ে যাচ্ছে। হাতে থাকা ক্ষীন আলোটাতে সামনের পথ দেখে যাচ্ছে। কেউ নেই আশেপাশে। শুকনো পাতায় পা পড়াতে কেমন ভয়ংকর মচমচে শব্দ হচ্ছে। পাশ থেকেই বেঁজি’র আওয়াজ ও আসছে। এতে যেন মনের সান্ত্বনা পেলো সেই পুরুষ। বেঁজি আছে এরমানে অন্ধকারে সাপের ভয় নেই। কন্ঠনালীর কাঁপনটা অনেক বেশি আজ৷ শীতের প্রকোপ যেখানে কুয়াশায় ঢাকা রজণী সেখানে পুরুষটা ঘামছে। অদ্ভুত ভাবে নাকে একটা গন্ধ ধাক্কা খেলো। হাতে থাকা যন্ত্রটা ও লাগাতার টুটটুট শব্দ করে যাচ্ছে। ভয়ে এবার বুক কাঁপে তার। বারবার দোয়া তার একটাই এ রজণী কেটে যাক। ভুল হোক সব কিছু। মিথ্যা হয়ে যাক সব। হাঁটু গেড়ে মাটির উপর বসতেই ভেজা ভাব অনুভূব হলো। মৃদু আলোতে তরলটা আঠালো অনুভব করতেই চোখের সামনে মেলে ধরলো। লাল রঙের তরলটা আর কিছুই না বরং র*ক্ত। ভয়ানক ভাবে তখনই কারো মানুষ রুপি গর্জন কানে এলো৷
সাফারাত ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। নভেম্বর মাসের এই ঠান্ডা ভোরে সে ঘেমে উঠেছে। দুই হাতে চেহারাটা চেপে কেঁদে উঠলো একসময়ের শক্ত সেই পুরুষ। হু হু বাড়লো সেই কান্নার বেগ। চিৎকার জুড়ে দিলো একসময়। না পাওয়ার বেদনা, আক্ষেপ তার আক্রোশে ভরপুর এখন। বেশ সময় নিলো কেঁদে নিজেকে শান্ত করলো। এমন স্বপ্ন বিগত কত বছর ধরেই দেখে আসছে সে। আজও ব্যাতিক্রম ঘটে নি।
ঘড়িতে বাজে তিনটা। উঠে সোজা ওযু করে তাহাজ্জুদে দাঁড়ালো সাফারাত। প্রতিটা সেজদায় তার পুরুষদেহ কাঁপলো অনবরত। চোখের পানিতে ভাসলো চোয়ালের চাপ দাঁড়ি। মোনাজাত শুধু শান্তি চাইলো। শুধু শান্তি।
_______________
পূর্ণ টানা দিয়ে উঠে বসলো। শরীর বেশ হালকা তার এখন। আশেপাশে মৃত্তিকা’কে না দেখেই ডেকে উঠলো,
— মৃত্ত? মৃত্ত!
উত্তর এলো না। উঠে সুন্দর মতো বেড গুছালো পূর্ণ। এটা তার অভ্যাস। ওয়াসরুমে টোকা দেয়াতেই সেটা খুলে গেলো। ভ্রু কুচকে ফ্রেশ হতে গেলেই নাসারন্ধ্রে বারি খেলো তীব্র মেয়েলি সুঘ্রাণ। এমন ঘ্রাণ তার ওয়াসরুমে এই প্রথম। নিশ্চিত মৃত্তিকা সাওয়ার নিয়েছে। পূর্ণ ঝুড়িতে থাকা মৃত্তিকা’র শাড়ীটাও ধুয়ে নিয়ে একেবারে বের হলো। বারান্দায় মেলে পুণরায় রুমে এসেও দেখা মিললো না মৃত্তিকা’র। গায়ে একটা পাতলটা টিশার্ট জড়িয়ে বের হলো রুম থেকে। বাবা’কে দেখেই বুঝলো মাত্র হেটে এসেছে। বেফাঁস ওর বাবা’কে দেখলেই মুখ থেকে বের হয় এমনটা না। আগে বাবা কিছু বলে এরপরই না পূর্ণ উত্তর দেয়। বাবা ওকে দেখেই বলে উঠলেন,
— শরীরে নজর দাও একটু। কি অবস্থা করেছো নিজের?
— দুই দিন হলো বিয়ে করলাম আব্বু। পরিশ্রম বেশি যাচ্ছে। বুঝোই তো।
একেবারে অক্কার মা চক্কা হয়ে গেলেন ওর বাবা। উনি তো শুধু মাত্র ছেলের শরীরের কথা বলতে চেয়েছিলেন আর এই ঠোঁট কাটা ছেলে বলে কি। মিনমিন করতে করতে রুমে হাঁটা দিলেন তিনি।
পূর্ণ বাবা’কে পাত্তা দিলো না। কিচেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মা’কে ডেকে বললো,
— আম্মু, আমার বউ কোথায়?
পূর্ণ’র মা বের হতে হতে গাঢ় হেসে বললেন,
— তোর বউ একার নাকি? আমার মেয়ে আমার সাথে কিচেনে।
পূর্ণ যেন সময় নিলো না। মা’কে ঠেলে কিচেনে ঢুকতেই দেখা মিললো মৃত্তিকা’র। পূর্ণ যেহেতু শাড়ী বাদে তেমন কিছু আনে নি তাই শাড়ী পড়েই মৃত্তিকা কোমড়ে আঁচল গুঁজে রান্না করছে। খালি কিচেনে একা বউ পেয়ে মন পুলকিত হলো ওর। পেছন থেকে আলত করে হাত রাখলো মৃত্তিকা’র কোমড়ে। চমকে উঠে যেই না মৃত্তিকা’র হাত থেকে চামচটা পড়লো ওমনি পূর্ণ’র মা চলে এলো ভিতরে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্তিকা। পূর্ণ’র মা না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে? মৃত্তিকা, মা আমার, ব্যাথা পেয়েছো?
— না। হাত থেকে চামচ পড়ে গেলো।
তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেকে একবার দেখে নিলেন তিনি। পরপর হাতে করে পরটার প্লেট টা নিয়ে চলে গেলেন। পূর্ণ চামচটা তুলে সিঙ্কে রাখতে রাখতে একটু বিরক্ত গলায় বললো,
— এত এত গভীর স্পর্শ দেই তাও আমার এই অল্প স্পর্শ চেনেন না আপনি?
মৃত্তিকা ঘুরে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় শুধু বললো,
— আমি চিনেছি কিন্তু হঠাৎ হওয়াতে চমকে গিয়েছিলাম শুধু।
পূর্ণ একটানে নিজের কাছে নিলো ওকে। চোখ ঘুরালো সারামুখে। আদুরে একটা মুখ এই মৃত্ত’র। দেখলেই আদর আদর লাগে। নাকের ডগায় একটা চুমু খেয়ে বললো,
— এত অভিমানি কি আমি অভিমান ভাঙাতে পারি না বলেই?
— রাগ করি নি। ছাড়ুন না।
পূর্ণ আরেকটু কোমড় আঁকড়ে নিজের কাছে এনে ফিসফিস করে বললো,
— আমি কি বলেছি রাগ করেছেন? বলেছি অভিমানি আমার অভিমান করেছে।
— আচ্ছা আমি কোনটাই করি নি। ছাড়ুন। আন্টি আসবে।
— আসুক।
— আপনি একটা বেলাজ মানুষ।
কথাটা বলেই জিভ কাটলো মৃত্তিকা। কি বলতে কি বলেছে ও। আস্তে ধীরে চোখ তুলতেই দেখলো দুষ্ট চোখে পূর্ণ তাকিয়ে ওর দিকে। মৃত্তিকা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিতেই কার্যসিদ্ধি সম্পূর্ণ করে চলে গেল। এদিকে হতভম্ব মৃত্তিকা ঠাই দাঁড়িয়েই রইলো। মাত্র এটা কি করে গেলো পূর্ণ? কথাটা ভাবতে অজান্তেই হাতটা গেলো নিজের ঠোঁটে।
.
নাস্তার টেবিলে বসা সবাই। পূর্ণ’কে এই প্রথম ওর মা পেট পুড়ে খেতে দেখলেন। সকালে সবজি সিদ্ধ সহ ডিম, দুধ ছাড়া তেমন কিছু খাওয়া ওর পছন্দ না সেই ছেলে কি না আর পরটা খাচ্ছে। তাও একটা দুটো না এই পর্যন্ত তিন চারটা শেষ তার। পূর্ণ একপলক মা’য়ের দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে বললো,
— নজর দিচ্ছো কেন আম্মু? পেট ব্যাথা করবে না আমার?
ভ্রু কুচকে ওর মা মৃত্তিকা’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— তোমার এই জামাই কোনদিন ই এসব খায় না অথচ আজ বউ রান্না করায় সব ঠুসছে।
খেতে খেতে অল্প লজ্জা পেলো মৃত্তিকা সেই লজ্জা বাড়াতে পূর্ণ পালন করলো মূখ্য ভূমিকা,
— ঠিক মতো খান মৃত্ত।
কথাটা বলেই নিজে মৃত্তিকা’র মুখের সামনে খাবার ধরলো। না চাইতেই পূর্ণ’র চাহনি দেখে দমে গেলো মৃত্তিকা। মুখ খুলে খেয়ে নিলো চুপচাপ। পূর্ণ মৃত্তিকা’র লজ্জা বুঝলো। পুণরায় মৃত্তিকা’র মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো,
— সামনের এই কাপলদের দেখে লজ্জার কিছু নেই মৃত্ত। এরা নিজেরা রোম্যন্স করে কুল পায় না আপনার আর আমার রোম্যান্স দেখার সময় নেই তাদের। তাই লজ্জা না পেয়ে চুপচাপ হা করুন।
মৃত্তিকা’র যেন খাবার তালুতে উঠে গেলো। ওর মা তারাতাড়ি পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। পূর্ণ ধরে পানি খাওয়াতেই ওর বাবা ধমকে উঠলো,
— খাবার সময় মেয়েটাকে শান্তি দাও পূর্ণ।
— কি বলো আব্বু। বউ আমার শান্তি তো আমিই দিব তাই না? তুমি নিজের চরকায় তেল দাও। তোমার বউ’কে শান্তি দাও।
লজ্জায় কান লাল হয়ে উঠলো মৃত্তিকা’র। আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
— আন্টি আমি চা নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই ছুটন্ত পায়ে কিচেনে চলে গেল। পূর্ণ’র হেলদুল নেই অথচ মৃত্তিকা’র যেন লজ্জায় কান্না এসে যাবে। বাবা-মায়ের সামনে পূর্ণ কিসব কথা বলে?
.
রুমে ঢুকতেই পূর্ণ’কে উদাম গায়ে দেখে মৃত্তিকা কেটে পড়তে চাইলো। যা ছেলে এই সিনিয়র ভাই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মৃত্তিকা। এখন না কান্ড ঘটায় অথচ কান্ড ঘটেই গেলো। পা ঘুরাতেই পূর্ণ ডেকে উঠলো,
— মৃত্ত?
মনে মনে “সিট” বলে রুমে ঢুকলো মৃত্তিকা। একপলক পূর্ণ’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— আজকে বাবা’র কাছে যাব না?
পূর্ণ টেনে নিলো নিজের কাছে। বাহুতে আটকে নিয়ে সোজা উঁচু করে নিতেই মৃত্তিকা চমকে উঠলো। আঁকড়ে ধরলো পূর্ণ’র কাঁধ। পূর্ণ ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসতেই মৃত্তিকা সরতে চাইলো। চোখ ছোট ছোট করে পূর্ণ সোজা মৃত্তিকা’র হাত চেপে ধরে আঙুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আপনার নখ কাটতে হবে মৃত্ত।
নিজের আঙুল ছাড়াতে চাইলো মৃত্তিকা। খুব সুন্দর একটা সাউজ করা তার নখগুলোতে। পূর্ণ’র হাতে আগেই নেইলকাটার ছিলো৷ একহাতে মৃত্তিকা’র ডানহাতের আঙুলগুলো চেপে ধরে যেই না কাটতে যাবে ওমনি লাফিয়ে সরে গেলো মৃত্তিকা। হাত পেছনে লুকিয়ে বললো,
— কাটব না নখ। আমার তো বেশি বড় না।
পূর্ণ বুঝি শুনার লোক? একদম চেপে ধরে কোলে বসিয়ে দশ আঙুলের সব নখ জিরো সাইজ করে দিলো। এদিকে টলমলে অসহায় চোখগুলো লাল হয়ে উঠলো। এমনিতেই চাপা স্বাভাবের মৃত্তিকা। বাবা বাদে ততটা ফ্রী না কারো সাথে। হাজার হলেও পূর্ণ’র সাথে অতটাও ফ্রী হতো পারে নি ও। তার মধ্যে বাবা কখনো জোর করে নি ওকে কিছুর জন্য। কখনোই না। সেখানে পূর্ণ জোর আর ধমক ব্যাতিত গত দুই রাত একদিন ধরে ভিন্ন রুপে মৃত্তিকা গলেছিলো।
পূর্ণ নখগুলো টিস্যুতে পেঁচিয়ে সাইডে রাখলো। মৃত্তিকা তখনও ওর কোলে। মাথাটা টেনে বুকে নিলেও মৃত্তিকা শক্ত হয়ে বসে রইলো। পূর্ণ বুঝলো। মাথা তুলে চুমু খেলো ওর পূর্ণ্যময়ীর চোখে। বদ্ধ চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো পানির বিন্দু গুলো। পূর্ণ ডাকলো,
— মৃত্ত?
……..
— কথা বলবেন না?
— আমার অনেক প্রিয় ছিলো নখগুলো।
— আমার থেকেও বেশি?
মৃত্তিকা উত্তর দিলো না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
পূর্ণ নিজের খোলা বুকে মৃত্তিকা’কে আঁচড় সহ পিঠে’র ক্ষতগুলো দেখালো। সাদা চামড়ায় বেশ গভীর দেখালো সেগুলো। পূর্ণ আবারও বুকে নিলো মৃত্তিকা’কে। মাথায় চুমু খেয়ে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
— আপনাকে আমি রোজ আদর করব মৃত্ত। কিন্তু এই নখগুলো প্রচন্ড ব্যাথা দেয়। পানি লাগলে মনে হয় কেউ মরিচের গুড়ো ঢেলে দিচ্ছে। এখন আপনিই বলুন আমার রোম্যান্সের শত্রু’কে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখি?
_________________
গাড়িটা এসে থামলো মৃত্তিকা’র বাসার সামনে। ফুড়ফুড়ে মেজাজে নেমে এলো মৃত্তিকা। সামনে যেতেই পেছন থেকে আওয়াজ এলো,
— থামুন মৃত্ত।
মৃত্তিকা পেছনে ঘুরতেই পূর্ণ গাড়িটা লক করে এসে ওর হাত ধরে বললো,
— চলুন।
দরজা নক করতেই মিঠি’র মা খুলে দিলো। মৃত্তিকা’কে দেখেই কিছু বলবে তার আগেই মৃত্তিকা পূর্ণ’র হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। ওর বাবা উঠে আসতে নিবে তখনই ঝড়ের মতো ঝাপটে পড়লো কেউ তার বুকে। দুই হাতে গলা পেচিয়ে নিজের ঠাই করে নিয়েছে মৃত্তিকা। মৃন্ময় হাওলাদার স্তব্ধ। বিমূঢ়। আজ তার যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তার মেয়ে যে আসবে তা জানা ছিলো না। নিজেকে ধাতস্থ করে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন। বাবা’র উচ্চতা বেশি হওয়ার দরুন মৃত্তিকা কিছুটা ঝুলে পরলো বাবা’র গলা জড়িয়ে। কাঁধে ভেজা অনুভব করলেন মৃন্ময় হাওলাদার। তার কলিজা কাঁদছে। খুশিতে নাকি কষ্টে? মনটা যেন নিমিষেই উত্তর দেয়, তাকে দেখার খুশিতে আর দূরে থাকার কষ্টের দরুন এই কান্না। মাথাটায় অনবরত চুমু খেলেন তিনি। মন ভরলো না। একটুও না। আজ দুই রাত ঘুম হয় না তার। ঝটপট করে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। আজ কিছুটা যেন লাঘব হলো।
দরজায় তাকাতেই নজরে এলো দাঁড়িয়ে থাকা পূর্ণ। যদিও আগে এসেছিলো তবুও জামাই হিসেবে আজ প্রথম। মৃন্ময় হাওলাদার মৃত্তিকা’কে নামাতে নিলো। নামলো না মৃত্তিকা। ধরা গলায় বললো,
— বাবা আই মিস ইউ।
ঢোক গিলে নিলেন বড় বড় মৃন্ময় হাওলাদার। তার যে বুক ফেটে যাচ্ছে এটা কোনভাবেই বুঝানো যাবে না। মৃদু শব্দ করে হেসে মৃত্তিকা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে একবাহুতে পুরে নিলেন। ওভাবেই হেটে দরজা পর্যন্ত যেতেই হাত ধরে পূর্ণ’কে ভেতরে আনলেন। পূর্ণ মুচকি হেসে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
সালামের জবাব দিয়ে একপাশে বুকে জড়িয়ে নিলেন পূর্ণ’কেও। মৃদু শব্দে জিজ্ঞেস করলেন,
— আমার আম্মা’র খেয়াল রেখেছো?
— দেখে নিন।
বুক থেকে পূর্ণ সরলেও সরলো না মৃত্তিকা। মৃন্ময় হাওলাদার আজ দেখে গেলেন তার মা’কে। শাড়ীতে তার বিবাহিত আম্মা। দুই রাতে যেন রুপ বদলে গিয়েছে। একেই বোধহয় বিয়ের সিরি বলে। চেহারায় বিবাহিতের ছাপ ফুটে উঠেছে, এতেই যেন শ্যামা রাজকন্যাকে আজ প্রথম রাণী লাগছে? পূর্ণ’র রাজ্যের রাণী।
#চলবে…..
[ আবারও বলছি,রেগুলার গল্প এখন সম্ভব নয়। ১৬ তারিখ থেকে আমার ফাইনাল। দোয়া করবেন। গল্প কবে দিব ঠিক নেই তার। যখন যা পারি দেয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আর এতো এতো ম্যাসেজের রিপ্লাই করা সম্ভব হচ্ছে না তাই সরি।]
গরম চায়ের কপটা হাতে নিয়ে ছুটছে তাঁরা। চাঁদের নিশ্চিত ঘুম ছুটছে। উঠে তাঁরাকে সামনে না পেলে তুলকালাম বাঁধবে জনাব। তারাতাড়ি ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরতে নিলেই আগলে নিলো চাঁদনী বেগম। তাঁরা ঢোক গিললো। সারাক্ষণই ভয়ে ভয়ে থাকে এই মেয়ে। কারণ যে বুঝে না যে চাঁদনী বেগম তা নয়। যত আতঙ্ক তাঁরার চাঁদকে ঘিরে। চাঁদনী বেগম দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিলেন।
-“এত কিসের ভয় তোর? চাঁদ কিছু বললে আমাকে বলবি?”
তাঁরা মলিন হাসলো। এমন শাশুড়ী আজকাল কে ই বা পায়? শশুর বাড়ী একপ্রকার বিলাসিতা করে চলে তাঁরা। শুধু চাঁদ নামক স্বামী’টা জ্বালিয়ে মারছে ওকে। সারাদিন ভয়ে টটস্থ থাকে তাঁরা। যদিও চাঁদ সহজে রাগে না বিয়ের পর তবুও এতবছরের ভয়তো আর একমাসে কমবে না। কাঁপটা হাতে নিয়ে রুমের সামনে যেতেই থামলো তাঁরা। ভেরানো দরজা’টাতে চোরের মতো মাথা ডুকিয়ে তড়িঘড়ি করে আবার তা সরিয়ে নিলো। চাঁদ রুমের কোথাও নেই মানে এখনও গোসল করছে সে। ঝটপট ভেবে নিলো তাঁরা, রুমে ডুকেই চায়ের কাপটা রেখে কেটে পরবে। যেই ভাবা ঐ কাজ। কিন্তু কপাল কি তাঁরা’র এত ভালো? যেই না কাঁপটা রেখে বের হবে ওমনি ঠান্ডা চওড়া একটা পুরুষ দেহ ওকে আগলে নিলো। ছোট্ট তাঁরা’র স্থান হলো সেই বুকে। একদম লেগে গেল। হীম হলো তার দেহ পিঞ্জর। একদম চুপ করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। তখনই কানের পেছনে পেলো ভেঁজা ঠোঁটের স্পর্শ। মোচরে সরে যেতে চেয়েও পারলো না। এত শক্ত বন্ধনী এত সহজে কিভাবে ভাঙবে? বিগত এক মাস ধরে এমন স্পর্শের সাথে পরিচিত ও তবুও কেন জানি এখনও মানিয়ে উঠতে পারে নি। হঠাৎ শাড়ীর আঁচলটা সরাতেই তাঁরা শক্ত করে চাঁদের হাতটা চেপে ধরলো। মুহুর্তেই চাঁদের মুখের ভঙ্গি পালটালো। এমন রোম্যান্টিক মুহুর্তে এমন ডিসটার্ব তার মোটেও পছন্দ হলো না। সজোরে কাঁমড়ে দিলো তাঁরা’র ঘাড়ে। মুখ দিয়ে ব্যাথাকাতুর শব্দ তুলে সরে গেল। চাঁদ ও ছেড়ে দিয়েছে ওকে। তাঁরা মাথা নিচু করে ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে। ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে সে। চাঁদ বিরক্ত হলো। এই মেয়ে এক ফোঁটা ও রোম্যান্টিক না। লাভ বাইট দিলে কেউ এভাবে কাঁদে? এর আগেও তাঁরা’র এমন আচরণে চাঁদ বিরক্ত হয়েছে। ভেবেছে সময়ে’র সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না তাঁরা ঠিক হচ্ছে না। এক মাস হলো বিয়ের। আর কত সময় দিবে চাঁদ? প্রথম রাত থেকেই নিয়মিত ভালোবাসা দিয়ে আসছে সে তবুও তাঁরা’র কোন হেলদুল নেই। কেমন অনুভূতিহীন ভাবে পড়ে থাকে। এভাবে কি আর রোম্যান্স হয়?
অধর কাঁমড়ে কিছু ভাবলো চাঁদ। ছোট্ট তার বউ। অবুঝ। তাই বলে রেগে গেলে তো চলবে না। বউকে আদরে আদরে ভরিয়ে রাখতে হবে। নিজের ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে ভালোভাবে নাড়লো চাঁদ। কয়েক ফোঁটা পানি গিয়ে আছড়ে পড়লো তাঁরা’র মুখে। চোখ তুলে তাকাতেই আবারও তা নামিয়ে নিলো। চাঁদ শুধু একটা টাওয়াল পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুষ্ট হেসে তাঁরা’র হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো৷ ভেজা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ দিলো নিজের নারীর গালে। আগোছালো কয়েকটা চুল ঠিক করে বললো,
-“আমিই তো। লজ্জা’র কি আছে? তাকা আমার দিকে।”
তাঁরা তাকালো না তো নাই। চাঁদ এবার একটা ধমক দিতেই তাঁরা মিনমিন করে বললো,
-“আমার লজ্জা লাগে। ছাড়ুন প্লিজ।”
চাঁদ কি ছাড়ার পাবলিক। তাঁরা’কে এত করে বলার পরও কথা না শুনায় তার মেজাজ গেলো বিগড়ে। দাঁত খামটি মে’রে বললো,
-” তোর লজ্জার কাঁথা পুড়ি।লাস্ট বার বলছি তাকা আমার দিকে।”
তাঁরা ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। এতেই যেন যা অঘটন ঘটার তা ঘটে গেলো। দুই হাতে খাবলে ধরলো চাঁদ তাঁরা’কে। এক প্রকার বিছানায় ছুঁড়ে মে’রে দরজা লাগিয়ে দিলো। অবহেলায় পড়ে রইলো শুধু চা ভর্তি কাপ।
“অমৃতাংশু নক্ষত্র” এর অংশ বিশেষ। সম্পূর্ন বইটি পড়তে কমেন্টে দেয়া লিংক এ ক্লিক করুন।