#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৬
ভার্সিটিতে আপাতত উইনটার ভ্যাকেশন চলছে। ক্লাস নেই কারো। শুধু ফ্যাকাল্টি ম্যামবার’রা তাদের কাজ গোছাতে আসেন। উজ্জ্বল,হিমু আর সোহানা’র সাথে মৃত্তিকা’র দেখা হচ্ছে না অনেকদিন। পূর্ণ’কে এখন নাগাল পাওয়া দুষ্কর। ঐ যে সেদিন রাতে তাকে নিয়ে প্রেম রচনা করলো এরপর ভোর রাতে বাসায় ফিরে আরেকদফা তাকে ঘায়েল করলো। এরপর আর পাত্তা নেই তার৷ ভোরে বের হয় আসে গভীর রাতে। সরাসরি দেখা মিলে না আজ পাক্কা তিন দিন। কোথায়, কিকরে তা ও জানে না। রোজ একবার তার গলার স্বরটা শুনা যায় তাও ফোনে। মিনিট ও গড়ায় না। তার কথা শেষ। যদিও মৃত্তিকা বাবা’র কাছে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু তা সম্ভব নয়। পূর্ণ অনুমতি দেয় নি। রাতে বউ তাকে না দেখুক সে তো দেখে। এতেই তার ক্লান্তি দূর হয়। রোজ করে শশুরের সাথে বাবা’র কাছে যাওয়া হয় তার। আজকে বাবা’র সাথে ব্রেকফাস্ট করে বের হয়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। বার্তমান অবস্থান তার রিক্সায়। আনমনে এদিক ওদিক তাকায় মৃত্তিকা। রাস্তায় মানুষ জন শীতের চাদর মুড়িয়ে আছে। ঢাকা শহরটা যেন ঠান্ডা। অথচ গরমের দিনে টিকা দায়।
মিনিট দশ এক গড়াতেই রিক্সা থামলো। ভারা মিটাতে নিলেই বৃদ্ধ লোকটা হাসলেন। পান খাওয়া দাঁত বের করে বললেন,
— লাগবে না আম্মা। পূর্ণ বাবা দিয়েছে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মৃত্তিকা। পূর্ণ কি এখন তার পেছন জাসুস লাগালো? আচাণক উজ্জ্বলের গলায় ভরকে যায় মৃত্তিকা। নজর পরে হাসোজ্জল বন্ধুদের দিকে। পথ ধরে এগিয়ে গেলো ওদের সাথে। দুপুর তখনও হয়নি। উজ্জ্বল হিমু’র লেগ পুল করতে বললো,
— কিরে শালা আজকে সোনা রুপা তোকে ছাড়লো?
লজ্জা পাওয়ার মতো হাসলো হিমু। সোহানা ও দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
— আহাম আহাম পূর্ণ ভাই যদি মৃত্তিকা’কে ছাড়তে পারে সেখনে রুপালি আপু আর কোন ক্ষেতের মুলা?
সোহানার কথায় মৃত্তিকা’র ভ্রু কুচকে আসে। অল্প সল্প রাগ নিয়ে বলে,
— বাজে বলা বন্ধ রাখ। তোর পূর্ণ ভাই লাপাত্তা আজ তিন দিন।
উজ্জ্বল সান্ত্বনা দিয়ে আফসোস করে বললো,
— আহারে বান্ধবী আমার স্বামী ছাড়া কষ্টে আছে। থাক বইন কান্দে না।
মৃত্তিকা রাগ দেখিয়ে সামনে হাটা দিলো ওদের রেখেই। হিমু পেছনে দৌড়ে এসে বললো,
— আরে শুন দাঁড়া। মৃত্তিকা!
মৃত্তিকা শুনে না। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ট্রাক একদম কাছ ঘেঁষে চলে গেল ওর। ভয়ে লাফিয়ে দুই কদম সরে গেলো মৃত্তিকা। শরীর কাঁপছে তখনও। উজ্জ্বল আর সোহানা ও দৌড়ে আসে। জোরে জোরে শ্বাস টেনে নেয় মৃত্তিকা। আজ অনেকদিন পর এমন হলো।
সোহানা পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— লেগেছে তোর কোথাও?
মাথা নাড়ে মৃত্তিকা। লাগে নি তার। হিমু জানায়,
— ভাইয়ের উপর রেগে থাকিস না মৃত্তি। নির্বাচন আজ বাদে কাল। ব্যাস্ত তো থাকবেন৷ তোর যাতে মন খারাপ কেটে যায় তাই আমাদের পাঠালো। আমি তো গ্রামে যেতাম কিন্তু ভাইয়ের কল পেয়ে রয়ে গেলাম।
মৃত্তিকা যেন জানপ্রাণ অবাক ই হলো। কে বলেছে এই সিনিয়র ভাই পূর্ণ’কে তার জন্য এত ভাবতে? এখন খুশিতে কান্নাটা কার আসছে?
প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে তখন। জোহরের নামাজের জন্য পাশের মসজিদে ঢুকেছে উজ্জ্বল আর হিমু। সোহানা আর মৃত্তিকা বসা রবিন্দ্র সরোবরে। আশে পাশে দুই একজন আছে। উজ্জ্বল আর হিমু আসতেই দুইজন উঠে আসে৷ আজ ঘুরবে অনেক পথ। মৃত্তিকা ঘাড় ঘুরাতেই চমকালো। পূর্ণ টুপি হাতে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে দলের কিছু ছেলে পেলের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। মৃত্তিকা যেতে নিলেই উজ্জ্বল আটকালো। বললো,
— ঐ দিকে যাস না। ভাই ব্যাস্ত।
— খাবে না দুপুরে?
— আর খাওয়া দাওয়া।
হিমু কথাটা বলতেই মৃত্তিকা’র মনটা ভেঙে গেলো। লোকটা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ও করে না। চোখের পলকেই বাইরে চলে চলে গেল। পরণের সাদা পাঞ্জাবিটা কিভাবে গায়ে লেপ্টে ছিলো। মনটা বিষিয়ে উঠে মৃত্তিকা’র। খারাপ লাগা কাজ করে।
.
বাসায় ফিরলো মৃত্তিকা বিকাল নাগাদ৷ উজ্জ্বল, হিমু আর সোহানা ও এসেছে। বাবা তার এখনও বাসায় নেই। মৃত্তিকা ওদের নিয়ে বসেছে ড্রয়িং রুমে। মিঠি’র মা মিঠি হাতে হাতে এটা ওটা এনে পুরো টেবিল ভরলো৷ মৃত্তিকা ধরে মিঠি’কেও নিজেদের মাঝে নিয়ে নিলো। ব্যাস্ত হলো কথাতে। কেউ হয়তো খেয়ালই করে নি এখানে রচনা হচ্ছে কারো চোখে চোখে কথা। কিছুটা ভিন্ন অনুভূতি।
বন্ধুরা সব চলে গেল রাত আটটা নাগাদ। মৃত্তিকা ক্লান্ত থাকায় গা এলিয়ে পড়ে থাকে সোফাতে। পাশেই মিঠি বসে আলাপ করছে। আপাকে চোখ বন্ধ করা দেখে আর কথা আগায় না। উঠে চলে যায় মায়ের কাছে।
মৃন্ময় হাওলাদার বাসায় ফিরেন রাত নয়টায়। হাতে তার হালিমের বক্স। দেখেই কিনেছেন কন্যার জন্য। তার রাজকন্যার জন্য।
ড্রয়িং রুমে ঘুমন্ত মেয়েকে দেখেই তার ঠোঁট জুড়ে হাসি দেখা যায়। ধীর পায়ে হেঁটে এসে বক্সটা রাখেন টেবিলে। ফ্রেশ হতে চলে যান রুমে। ফিরে আসেন হাতে পাতলা একটা কম্বল নিয়ে। মৃত্তিকা’র গায়ে জড়িয়ে দিয়ে একদম শিয়রে বসেন। মিঠি কফি এনে দিতেই গম্ভীর কণ্ঠে শুনা যায়,
— সোজা সামনে বস।
মিঠি মাথা নিচু করে তাই করলো। কফিতে চুমুক দিয়ে মৃত্তিকা’র মাথাটা কোলে তুলে আরাম করে বসেন। প্রশ্ন ছুঁরেন মিঠি’র দিকে,
— রাতে বাসায় লেট হওয়া, কলেজ শেষে প্রাইভেট ফাঁকি, খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক না, শেষ কথা ঐদিন কে ছিলো তোর সাথ?
এত এত প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় মিঠি। মুখ খুলে কিছু বলা হয়ে উঠে না। অথচ মৃন্ময় হাওলাদার ধমকান নি। বেশ ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন গুলো করেছেন। মিঠি থেকে উত্তর না পেয়ে আবারও তাড়া দিতেই ছলছল চোখে তাকায় ও। মৃন্ময় হাওলাদার চোখে ভরসা দেন। মিঠি মাথা নিচু রাখে। মৃন্ময় হাওলাদার বুঝেন। জিজ্ঞেস করেন,
— কতদূর?
— বেশি না। দেখা হয়।
— কোথায় থাকে?
— আপার সাথে পড়ে। বন্ধু।
— হিমু না উজ্জ্বল?
কথা বলে না মিঠি। মৃন্ময় হাওলাদার দম নিয়ে শুধু বলেন,
— যাও পড়তে বসো।
মিঠি এক প্রকার পালিয়ে চলে যায়। মৃন্ময় হাওলাদার কফিতে চুমুক দিতে দিতে স্বভাব সুলভ অন্য হাতটার বিচরণ ঘটায় মৃত্তিকা’র চুলের ভাজে। তদ্রা ভাবটা কেটে যায় মৃত্তিকা’র। নিজেকে বাবা’র কোলে পেয়ে ঘুম জড়ানো মুখটা গুজে দেয় বাবা’র কোলে। ওভাবে থেকেই ডাকলো,
— আব্বু।
— জ্বি আব্বু।
আর কথা নেই। মৃন্ময় হাওলাদার সময় দিলেন। ঘুমন্ত তার মেয়ে। একটু একটু করে উঠুক। ঠিক দশ মিনিট পর নড়াচড়া দেখা গেলো। বাবা’র কোলেই মোচড়ামুচড়ি করে নজর দিলো বাবা’র দিকে। একে একে তার বুলি ছুটলো। সারাদিন কি কি করেছে না করেছে সবটা তার বলতেই হয় নাহলে শান্তি নেই। মৃন্ময় হাওলাদার আবার মনোযোগী শ্রোতা। মেয়ের কথা হলফে হলফে শুনেন। মৃত্তিকা’র কথার ঝুলি শেষ হতেই উঠে বসলো। এবার কোল থেকে বুকে ঢুকে পরলো। ঠান্ডা লাগছে তার। মৃন্ময় হাওলাদার কম্বলটা দিয়ে একদম মেয়েকে ছোট্ট বাচ্চার ন্যায় পেঁচিয়ে বুকে তুলে নেন। মেয়ে’র কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
— ঘুম হলো?
— আমি তো ঘুমালামই না।
— তাই?
হাসলেন মৃন্ময় হাওলাদার। শশুর বাড়ী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। পূর্ণ’র কথা উঠতেই মৃত্তিকা মুখটা গোমড়া করে বাবা’র বুকে চোখ লুকালো। মৃন্ময় হাওলাদার ডাকলেন,
— আম্মা?
— হু।
— আপনি পূর্ণ থেকে কেমনটা আশা রাখেন?
মৃত্তিকা তাকালো। অবুঝ চোখ টা দেখেই মৃন্ময় হাওলাদার বলা শুরু করেন,
— আপনি যেমন তাকে চান ঠিক ততটাই তার ক্ষেত্রে ও। এই যে আপনার অভিযোগ যে পূর্ণ সময় দেয় না। আপনি কি অপেক্ষা করেন তার জন্য আম্মা? তার কি কি এক্সপেকটেশন আপনার থেকে আছে তা কি পূরণ হচ্ছে? অন্তত রাতের খাবারে তার জন্য অপেক্ষা করুন। ক্লাস তো নেই একটু জেগে নাহয় তার জন্য অপেক্ষা করলেন। যে কোন সম্পর্ক একজন টানতে পারে না আম্মা। দুই দিক থেকে সমান সমান এফোর্ট লাগে। শুধু পূর্ণ কেন এফোর্ট দিবে?কিছুটা নাহয় আপনিও দিলেন।
মৃত্তিকা’র চোখ মুখ তখন কাঁদো কাঁদো। আসলেই তো সে চাইলেই পূর্ণ’র দেখা সম্ভব। রাতে জেগে থাকলেই তো হলো। মৃন্ময় হাওলাদার মেয়েকে বুঝেন। চোখ মুছিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
— হালিম এনেছি। আমার রুমের ওয়াসরুমে গরম পানি রাখা আছে। ওটা দিয়ে মুখ ধুয়ে আসুন।
মৃত্তিকা মাথা নেড়ে উঠেই আবার ফিরলো। ডাকলো,
— বাবা?
মৃন্ময় হাওলাদার তাকাতেই মৃত্তিকা বলে উঠলো,
— আই লাভ ইউ আব্বু।
________________
রাত তখন বারোটা। গাড়ির ডিকির উপর শুয়ে আছে পূর্ণ। সাফারাত এসেই ওর পাশে শুয়ে পরলো। পূর্ণ এসেছে হবে পাঁচ মিনিট। জায়গাটা কিছুটা ঘন। জঙ্গল জঙ্গল দেখতে। রাত হওয়াতে কেমন ভয়ংকর লাগছে। দিনের আলোয় একদম স্বাভাবিক একটা জায়গা অথচ ভয়ংকর সত্যি বহন করে চলছে সে। সাক্ষী কারো আত্নচিৎকারের। কারো গুঙানির। কারো দুনিয়ার সমাপ্তির। কারো জীবন উলোট পালোট হওয়ার। সাফারাত ঢোক গিললো। একবার না পরপর কয়েকবার। পূর্ণ যে তা দেখছে না তেমনটা না। সে দেখছে। সাফারাতের কথা বিশ্বাস করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। সাফারাত স্বাভাবিক হতে চাইলো। পারলো না। পূর্ণ’র বাহু খাঁমচে ধরেছে সে। এই কনকনা শীতে সে ঘামছে। পূর্ণ কিছু বলছে না দেখে সাফারাত ই বললো,
— পূ..পূর্ণ চল এখান থেকে।
পূর্ণ দেখলো। শুনলো কম্পমান সাফারাতের গলা৷ স্বাভাবিক গলায় বললো,
— শান্ত হওয়ার চেষ্টা কর।
— আমার দম বন্ধ লা..লাগছে পূর্ণ।
সাফারাত দম নিলো পারলো না। তার মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। চঞ্চল তার শ্বাসপ্রশ্বাস। পূর্ণ উঠে বসে। সাফারাতকে ধরে স্বাভাবিক করতে চায় অথচ সাফারাতের ব্যাবহার অস্বাভাবিক। পূর্ণ ওকে ধরার আগেই সাফারাত গড়িয়ে পরলো ডিকি থেকে। পূর্ণ চটজলদি নামলো। সাফারাতকে ধরার আগেই যা ঘটার ঘটলো। দৌড়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকছে সে। পূর্ণ ভরকে গেলো। নিজেও দৌড় দিলো সাফারাতের পেছনে। চেঁচিয়ে ডাকতে লাগলো,
— রাত! রাত দাঁড়া। রাত! স্টপ।
সাফারাত তখন পাগল প্রায়। গলা ফাটিয়ে ডেকে যাচ্ছে,
— জান! আমার জান! রুহা। বেরিয়ে এসো। কলিজা আমার। এমন করে না। রু..হি। বার্ড প্লিজ আম আউট।
সাফারাত হঠাৎ বেকায়দা হয়ে পড়ে গেলো৷ পূর্ণ হাঁপিয়ে উঠে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। সাফারাত তখন ছটফট করে যাচ্ছে। বারবার ডেকে যাচ্ছে সমান তালে,
— বার্ড! আমার কলিজা। জান!
পূর্ণ অনেক কষ্টে টেনে সাফারাতকে ধরে বের করলো জঙ্গল থেকে। সাফারাত শান্ত নেই। সড়কে উঠতেই পূর্ণ শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে হিট করলো সাফারাতের গালে। মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়লো সাফারাত। ঠোঁটের কোণা বয়ে তখন চিকন ধারায় র*ক্ত বয়ে গেলো। উঠে দাঁড়ায় সাফারাত। পূর্ণ ঠাই দাঁড়িয়ে। সাফারাত এগিয়ে আসতেই তাচ্ছিল্য হাসে পূর্ণ। সাফারাত দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ওকে। পূর্ণ ছাড়ে না বরং হাতের বন্ধনী দৃঢ় হয়। শান্ত স্বরে বলে,
— ছাড় গাড়িতে উঠ। বাসায় একা যেতে পারবি না।
সাফারাত অপরাধীর ন্যায় তাকাতেই পূর্ণ আবারও তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
— ইউ লায়ার। তুই আবারও আমায় মিথ্যা বলেছিস রাত।
.
বাসায় ফিরতে আজ পূর্ণ’র বেজে গেলো রাত ২ টা। ক্লান্ত দেহটা টানতেও মন চায় না কিন্তু রুম পর্যন্ত যেতে হবে। তার পূর্ণ্যময়ীর দেখা মিলবে সেখানে। খাটে পূর্ণ’র বালিশে শুয়ে আছে নিশ্চিত। পূর্ণ দেখবে। লোভ জাগবে মনে। কিছুটা সময় তাকে অবলোকন করে শ্বাস টেনে নিবে তার৷
লোভী পূর্ণ রুমে ঢুকে আজ আর লাইট জ্বালালো না। অল্প আলোয় পাঞ্জাবির দুটো বোতাম খুলে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। লাইটটা অন করতেই দেখলো বিছানা খালি। হায় আল্লাহ! পূর্ণ’র বউ কই? মাথা খারাপ হলো পূর্ণ’র। বউ তার অনুমতি ব্যাতিত বাবা’র কাছে থাকবে না। নিশ্চিত ওর বাবা-মা র রুমে। রাগে দপদপ করতে করতে জোড়ে জোড়ে বাবা-মা র দরজায় নক করতেই ঘুমু ঘুমু চোখে ওর বাবা চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলেন। ছেলেকে কপাল কুচকে বলেন,
— কি চাই?
— বউ।
–অনেক হয়েছে তোমার। আর না। রাত নেই দিন নেই বউ দাও, বউ দাও। কি পেয়েছো তুমি? যাও ঘুমাও।
ওনার ধমক কাজে দিলো না। পূর্ণ দ্বিগুণ তেঁতে উঠে উল্টো ঠেলে বললো,
— নিজে বউ নিয়ে আছো আমার কষ্ট কিভাবে বুঝবে? ভালোয় ভালোয় বউ দাও আমার আব্বু।
— কি করবি তুই? কি করবি না দিলে?
দু’জনের ঝগড়ায় পূর্ণ’র মা ও উঠে এলো। মা ওকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে আব্বু?
— বউ লাগবে আম্মু।
পূর্ব বাবা এবার বেশ জোড়েই ধমকে উঠলেন,
— দুইদিন পর পর ঢং করো তুমি? ঢং! দুই দিন পরপর বলবা আর বিয়ে করাব? যাও এখান থেকে ভদ্র মতো। বেয়াদপ ছেলে!
ততক্ষণে ওদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মৃত্তিকা দৌড়ে এলো কিচেন থেকে। প্রথমে তারা ধীরে কথা বললেও শেষে তেঁতেছিলো বাবা। মৃত্তিকা’কে দেখেই পূর্ণ নিজের কাছে টেনে নিলো। অবুঝ চোখে তাকায় মৃত্তিকা। পূর্ণ মায়ের দিকে তাকিয়ে শুধু বললো,
— গুড নাইট আম্মু। তোমার জামাই ক্ষেপেছে সামলাও একে।
বউ নিয়ে কেটে যায় পূর্ণ। ওর বাবা ও রাগে গজগজ করতে করতে দরজা লাগায় বউ নিয়ে। মনে মনে গালি দেয় ছেলেকে শখানেক।
পূর্ণ রুমে এসেই চেপে ধরে মৃত্তিকা’কে,
— কোথায় ছিলেন?
— কিচেনে।
— এত রাতে কেন?
— খাবার গরম করতে?
পূর্ণ নরম হলো। মৃত্তিকা’কে বুকে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ক্ষুধা লেগেছে মৃত্ত?বসুন আমি নিয়ে আসি। ভালো মতো ডিনার করেন নি? ক্ষুধায় ঘুম ভেঙে গেলো যে।
— উহু। ডিনার ই করি নি। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷ বারান্দায় ছিলাম তো। আপনার গাড়ি দেখেই কিচেনে গেলাম। শুধু শুধু বাবা’র সাথে লেগেছেন।
পূর্ণ ব্যাস্ত হলো। কন্ঠে কিছুটা রাগ,
— রাতে কেন খান নি মৃত্ত? আমি এসব একদম সহ্য করব না।
মৃত্তিকা দুই হাতে পূর্ণ’র গলায় ঝুললো। আদুরে গলায় বললো,
— আই মিসড ইউ ইন লাস্ট থ্রি ডেইস।
পূর্ণ থমকালো। অনুভূতিটা আজ ভিন্ন। ঠিক একজন গৃহিণী’র ন্যায় মৃত্তিকা খাবার গুছিয়ে আনলো। আজকে পূর্ণ’কে নিজে মুখে তুলে খায়িয়েও দিলো। পূর্ণ অবাক হয়। যাকে সে বুকে বুকে রেখে মুখে তুলে খাওয়ায় সে কি না আজকে তাকে মুখে তুলে খাওয়ায়? পূর্ণ’র হঠাৎ মনে হলো সে সুখী। ভীষণ সুখী। মনে মনে আওড়ালো,”আপনার নিকট আসা সকল বিপদ আগে আমার হোক মৃত্ত। আপনিটা ভালো থাকুন তাহলেই হলো।”
#চলবে….
পরবর্তী পর্ব নিয়মিত আপলোড করা হবে।