#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৩
পূর্ণ বিবাহিত। মাস কয়েক পরই তাদের বড়সড় রিসিপশন ও হওয়ার কথা কিন্তু আপাতত সবাই তা কিছুটা ভুলার পথে। শাজাহান খানের এহেন হঠাৎ আগমনে সবাই ভড়কেছে। পূর্ণ’র মা ওনার সামনে যায় নি। ওর বাবাই কথা বলেছেন টুকটাক। তার কথার প্রেক্ষিতেই বুঝা গিয়েছে সে পূর্ণ’র সাথে তার ছোট মেয়ে বিয়ে দিতে চান। একথা মৃত্তিকা শুনেছে শাশুড়ীর সাথে কিচেনে কাজ করতে গিয়ে। এমনিতে শান্ত শিষ্ট ভদ্র মৃত্তিকা’র মাথায় যেন ধপ করে আগুন ধরে যায়। ওর কথা একটাই, পূর্ণ’কে বারংবার মৃত্তিকা বলেছে ঘটা করে সবাইকে জানাতে কিন্তু না পূর্ণ মহাশয় ব্যাস্ত। এবার নে ব্যাস্ততার ঠেলা। রাগের মাঝেই তখন পূর্ণ’কে কল দিয়ে কথাটা বলেই ফোনটা ধপ করে রাখলো। ওর মা একপলক মৃত্তিকা’কে দেখে বুয়াকে দিয়ে স্বামী’কে ডাকালো। পূর্ণ’র বাবা’র মৃত্তিকা’র রাগে টলমল চোখ দেখেই মায়া লাগলো কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে কিছুটা বলতেও পারলেন না। তাদের দ্বারা যতটুকু সম্ভব আপ্যায়ন করা হলো। শাজাহান খান চায়ের কাপে চুমুক বসাতেই লক্ষ্য করলেন কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে পূর্ণ। শীতের মধ্যেও ছেলেটা ঘেমে একাকার। সাদা পাঞ্জাবিটা তার গায়ে লেপ্টে আছে। শাজাহান খান কিছু বলার আগেই পূর্ণ সালাম জানিয়ে বলে উঠলো,
— আমি বিবাহিত আঙ্কেল৷ কয়েকমাস আগেই অনেক কষ্টে বিয়ে করেছি।
পূর্ণ নীরব বো*মটা মা’রতেই প্রায় মিনিট খানিক সবটা নিস্তব্ধতায় ঘিরে গেলো। শাজাহান খান সময় নিলেন সবটা হজম করতে। পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা চালালেন। পূর্ণ’র নজর তখন এদিক ওদিক। তার পূর্ণ্যময়ীটা কোথায়?
শাজাহান খান পরিস্থিতি সামলে উঠতে চায়ের কাপে পুণরায় চুমুক বসিয়ে শান্ত ভাবে তাকালেন তার আনা ডালার দিকে। যথেষ্ট ঠান্ডা মেজাজের মানুষ তিনি। ঠোঁটের ভাজে হাসি ফুটিয়ে পূর্ণ’কে উদ্দেশ্য করে বসতে বললেন। পূর্ণ দম ফেলে বরাবর সামনে বসলো। শাজাহান খান এদিক ওদিক কথা না টেনে হাসি মুখেই বললেন,
— দেড়ী করে ফেললাম তাহলে। তোমার মতো একজন ছেলে হাত ছাড়া হয়ে গেলো। দুঃখীত আপনাদের এমন অসস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য। আজ তাহলে উঠি।
সময়টা ভিন্ন হলে পূর্ণ নিশ্চিত তাকে বসতে বলতো। কিছুটা সময় নিয়ে আরো আপ্যায়ন করতো কিন্তু এই মুহুর্তে তা করা হলো না। পূর্ণ’র মনে হলো শাজাহান খানের এই মুহূর্তে প্রস্থান করাটাই উত্তম।
উঠে দাঁড়িয়ে তাকে ভদ্রতার সহিত পূর্ণ’র বাবা কিছুটা কথা বলে ব্যাপারটা হালকা করে নিলো। তাকে বিদায় দেয়ার পরই পূর্ণ অস্থির হয়ে রুমে দৌড়ে গেলো কিছুটা। পেছনে ওর বাবা হেসে ওর মা’কে বলে উঠলো,
— এবার পাগলা ঘোড়ায় লাগাম টানবে আমার ছেলের বউ।
.
রুমে ঢুকতেই তা ফাঁকা পেলো পূর্ণ। অস্থির হয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে ডাকলো,
— মৃত্ত? মৃত্ত! কোথায়? বের হন।
কেউ বের হয় না। পূর্ণ এবার দরজা আটকে বারান্দায় তাকালো। না নেই। কোথায় ই বা যাবে? ফোন হাতে নিতে গেলেই খেয়াল করলো পর্দাটা কিছুটা আগোছালো। ঢিল মে’রে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেই পা বাড়ালো পর্দার নিকট। কোন কথা না বলে এক টানে পর্দা সরিয়ে টেনে বের করলো মৃত্তিকা’কে। কথা বলার সুযোগটা ও দিলো না। দুই হাতে চেপে ধরলো নিজের বুকের সাথে৷ একদমে বলতে লাগলো,
— মাফ চাইছি। মাফ করে দিন আপনার পূর্ণ’কে। আমার পূর্ণ্যময়ী? সরি না? আর কাউকে সুযোগ দিব না।
মৃত্তিকা চুপ করে রইলো। পূর্ণ তখন অনবরত ওর মাথায় আর হাতে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। একটু পর যখন মৃত্তিকা’র থুতনিটা তুললো তখনই নজরে এলো কান্নারত চোখদ্বয়। বুকে ধনুকের আঘাতের ন্যায় ব্যাথা অনুভব করলো পূর্ণ। মৃত্তিকা মাথাটা নামিয়ে নিতেই পূর্ণ চুমু খায় তার ভেজা গালে। রা নেই মৃত্তিকা’র মুখে। পূর্ণ যখন পুণরায় কিছু বলতে নিবে তখনই মৃত্তিকা বলে উঠলো,
— আর সরি বলতে হবে না। আপনার দোষ নেই আমি জানি। কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছিলো তাই কান্না পেয়েছিলো।
— এখন?
— কি?
— কান্না পায়?
— না।
— সত্যি?
— হু।
পূর্ণ এবার মৃত্তিকা’কে ছেড়ে দিলো। কন্ঠে দুষ্টামি ঢেলে বললো,
— এবার আমাকে ফ্রেশ হতে সাহায্য করুন।
মৃত্তিকা কিছু বললো না। পূর্ণ’কে ফ্রেশ করাতে সে কখনোই বিরক্ত হয় না।
ওকে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকতেই গলা শুনা গেলো মৃন্ময় হাওলাদারের। পূর্ণ ভ্রু কুঁচকে মৃত্তিকা’কে দেখতেই মাথা নামিয়ে নিয়ে মিনমিন করে বললো,
— আব্বু’কে কল দিয়ে কেঁদেছিলাম আর বলেছিলাম আপনার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।
অতঃপর? পূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— আগে আমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিন এরপর শশুড় আব্বু’কে সবটা বলব।
________________
সময় গড়িয়ে আজ অনেকদিন। দায়িত্ব নামক জিনিসটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পূর্ণ। ইদানীং মৃত্তিকা’কেও ততটা সময় দেয়া হচ্ছে না তার। এরমধ্যে অন্যতম এটা কথা হলো মৃন্ময় হাওলাদার দেশ ত্যাগ করছেন। মৃত্তিকা তাতে কেঁদে কেটে অস্থির। বাবা’কে আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। মৃন্ময় হাওলাদার বুকে পাথর চেপে মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বললেন,
— আম্মা? আব্বু জাস্ট দুই মাসের জন্য যাচ্ছি। পূর্ণ আছে না আপনার কাছে।
মৃত্তিকা কেঁদেই যাচ্ছে। মৃন্ময় হাওলাদার মেয়ের মাথাটা বুকে চেপে ধরে বললো,
— মা আমার? এভাবে কাঁদে না। কাজটা একটু জরুরী আম্মা।
— এত..এতো বছর তো ক..কখনো যেতে হয় নি। এখন ক..কেন যেতে হবে? বাবা?প্লিজ যেও না।
মৃন্ময় হাওলাদারের ও চোখে পানি জমাট বাঁধলো। দুই হাতে মেয়েকে ঝাপ্টে বুকে তুলে নিলেন। কপালে চুমু খেতে খেতে নিজের কান্না দমালেন৷ যেতে তাকে হবেই। হোক সেটা যেকোন মূল্যে। তার আম্মা’কে তার চাই। সারাটা জীবনের জন্য চাই।
.
সাফারাত আর পূর্ণ একসাথেই ছিলো। কয়েকমাস আগে কাঁচা বাজারের ব্রীজের নীচে মন্ত্রীর ছেলের লা*শ পাওয়া গিয়েছিলো। যার অভিজান অর্ধেক হয়েই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও কারওয়ান বাজারের সিন্ডিকেট এখনও বহমান। সরকারি জায়গা অথচ টাকা তুলা হয় বেআইনি ভাবে।
এই এলাকাটা পড়েছিলো শোয়েব মির্জা’র আন্ডারে যা এখন পূর্ণ’র দখলে। তবুও সিন্ডিকেট বন্ধ হয় নি। পুলিশ তদন্ত সচল করা হয়েছে। কাজটা পূর্ণ তার ক্ষমতা লাভের সপ্তাহ খানিকের মাঝেই শুরু করেছে। এসব কালোটাকা জমা হয় শোয়েব মির্জা’র খাতায়।
পুলিশ অফিসার মায়ান এসে পূর্ণ’কে সালাম জানাতেই পূর্ণ মাথা এলিয়ে দিলো সিটে। সাফারাত জিজ্ঞেস করলো,
— প্রমাণ?
— সব জমা হয়েছে স্যার।
— গুড। ইউ ক্যান গো নাও।
মায়ান তবুও দাঁড়িয়ে আছে বলে পূর্ণ বাঁকা হাসে। পকেট থেকে টাকা বের করে মায়ানের দিকে দিতেই মায়ান মাথা চুলকে সালাম জানিয়ে চলে গেল। সাফারাত নিজের গাড়ির ডিকির উপর গা এলিয়ে দিলো। সরস গলায় বললো,
— রাত ফুরাবার অপেক্ষা শুধু।
— হু।
ফোন বাজতেই পূর্ণ মৃত্তিকার নাম্বার দেখে রিসিভ করলো ওমনি কার্ণভেদ করে শুনা গেলো তার পূর্ণ্যময়ীর কান্নারত গলা।
#চলবে….