#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৪
না চাইতেও মৃত্তিকা সম্মতি জানালো বাবা’কে ছাড়ার। পূর্ণ ওর ঠিক বরাবর সামনে বসা। মৃত্তিকা বসা বাবা’র বুকে মুখ গুজে। ওভাবেই শশুড়,জামাই আলাপ চালাচ্ছেন। মৃত্তিকা তখন পূর্ণ’কে কল দিয়ে কেঁদে জানায় ওর বাবা চলে যাচ্ছে। তাও কি না দুই মাসের জন্য। এই যে বিয়ে হওয়ার পরও মৃত্তিকা অধিকাংশ সময় থাকে বাবা’র কাছে, বাবা চলে গেলে কার কাছে থাকবে? যত যাই হোক না কেন মৃত্তিকা বাবা’কে ছাড়া থাকতে পারবে না। কোনকিছুর বিনিময়েই না।
পূর্ণ এসে বহু কষ্টে মানিয়েছে। বুঝিয়েছে। কতটুকু এখন মৃত্তিকা আমলে নিয়েছে তা আল্লাহ মালুম।
আপাতত সে সুন্দর করে মুখ, নাক লাল করে বাবা’র বুকে ঢুকে আছে। কার এত সাধ্য তাকে ছুটাবে তার বাবা থেকে?
সময়টাও অবশ্য বেশি নেই। মৃন্ময় হাওলাদার এই আজ বাদে কাল যাবে। একদম সবটা গুছিয়ে তবেই মেয়েকে জানিয়েছেন। পূর্ণ এতসবে একদম অস্বাভাবিক যেন সবটা তার আগেরই জানা। আজ রাতে সে বউ পাবে না এটাও অঘোষিত ভাবে তার জানা আছে। আগামী কালই যেহেতু চলে যাচ্ছে তাই আর পূর্ণ ও ততটা ঘাটলো না মৃত্তিকা’কে। থাকুক একটু। না জানি কিভাবে সামলাবে আগামী দুটো মাস?
সকালে যেহেতু এখানেই পূর্ণ’র মা-বাবা আসবে তাই আজ আর পূর্ণ শশুড় বাড়ী ছাড়বে না। রাতে’র খাবারটাও মৃত্তিকা বাবা’র হাতেই খেয়ে নিলো।
.
সকাল সকাল ছেলের শশুর বাড়ী হাজির হলেন পূর্ণ’র মা-বাবা। মৃত্তিকা’কে মাত্রই খাওয়ালো ওর বাবা৷ সারাটা রাত মেয়েটা ঠিকমতো ঘুমালো না। সকাল থেকে এ পর্যন্ত কত বার কথায় কথায় কেঁদে উঠেছে তারও ইয়াত্তা নেই। উনিই বা কি করবেন?তার হাত যে বাঁধা। পূর্ণ’র বাবা-মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা হতেই তিনি জানালেন কোন ব্যাবসায়ী কাজেই বিদেশ গমন। পূর্ণ চুপচাপই আছে। কোনরূপ বাক্য এই পর্যন্ত সে ব্যায় করে নি। মৃন্ময় হাওলাদার অবশ্য চাইলেন যাতে মৃত্তিকা’কে আগে শশুড় বাড়ী যাক অতঃপর তিনি বেরুবেন কিন্তু তার মেয়ে’র অবস্থা দেখে তা আর সম্ভব হয়ে উঠলো না। এয়ারপোর্টে পর্যন্ত যাবে পূর্ণ আর মৃত্তিকা। মৃন্ময় হাওলাদার সায় জানালেন এতে যদি তার মেয়ে একটু শান্ত থাকে।
সকাল এগারোটা নাগাদ বাড়ী ছাড়লেন মৃন্ময় হাওলাদার। যাওয়ার আগে মিঠি’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই মিঠি মাথাটা নামিয়ে নিলো। তার কান্নাটা সে দেখাতে চায় না। মিঠি’কে আশ্বাস দিয়ে তিনি বললেন,
— শিঘ্রই ফিরব।
— ইনশা আল্লাহ মামা।
সবাই’কে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠেই আবারও মৃত্তিকা’কে বুকে চেপে ধরলেন তিনি। পূর্ণ’র বাবা-মা মৃত্তিকা’র কিছু ব্যবহিত জিনিস নিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। এমন না এই বাড়ী খালি থাকবে। মিঠি আর ওর মা থাকবে। কিন্তু পূর্ণ চাইছিলো না এই দুই মাস মৃত্তিকা আসুক এখানে। ফাঁকা বাসায় বাবা’কে না দেখেই মেয়েটা ভেঙে পরবে আরো।
পূর্ণ’র মা আলমারি থেকে কিছু বের করার সময়ই হঠাৎ একটা এলবাম পড়ে যায়। বেশ পুরাতন এটা। উঠানোর সময় না চাইতেও কিছু ছবি নজরে পরে৷ তার মধ্যেই একটা অনেক পুরাতন ছবি দেখে তার হাত থমকে গেলো। কখন যে হাত থেকে এলবামটা পড়ে গেলো তা ও টের পেলেন না তিনি।
.
এয়ারপোর্টে এসে যখন মৃন্ময় হাওলাদারের ফ্লাইট তখনই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মৃত্তিকা। কিছুতেই যেতে দিবে না। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় মৃন্ময় হাওলাদার। হঠাৎ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন ও তিনি ও। মৃত্তিকা যখন কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলে বললো,
— বাবা যেও না।
মৃন্ময় হাওলাদার ও কেঁদে ফেলে বললেন,
— আব্বু যাব না মা।
পূর্ণ’র ব্যাপারটা সামলাতে বেগ পেতে হলো অনেকটা। মৃত্তিকা’কে ছাড়িয়ে নিজে জড়িয়ে ধরলো মৃন্ময় হাওলাদারকে। মৃন্ময় হাওলাদার দুই হাতে পূর্ণ’র আঁকড়ে ধরে অনুরোধের সুরে বলে উঠলেন,
— ওকে দয়াকরে আগলে রেখো আব্বু। আমার মেয়েটা কাঁদবে অনেক। বিরক্ত বোঁধ করো না।
— আমার মৃত্ত সে আব্বু। আমার অর্ধেক অঙ্গ। নিজের প্রতি কিভাবে বিরক্ত হবো?
মৃন্ময় হাওলাদার যখন ভেতরে চলে গেলেন মৃত্তিকা তখন একদম চুপ করে তাকিয়ে রইলো বাবা’র দিকে। হঠাৎ ই তার কিছু একটা মনে পরলো যেন। পূর্ণ তাকিয়ে মৃত্তিকা’র হাবভাব বুঝার চেষ্টা করলো। এমনি সময় সে তার মৃত্ত’কে বুঝলেও আজ যেন কিছুতেই বুঝতে পারছে না সে।
#চলবে…..