#শিরোনামহীন_অনুভূতি
#রুহানিয়া_ইমরোজ
#পর্বসংখ্যাঃ১২
মেঘাচ্ছন্ন সকাল। আফিয়া চৌধুরী ব্যস্ত হাতে রান্না করছেন। তৌকির চৌধুরী এবং মেহরিমার জন্য হসপিটালে খাবার পৌঁছাতে হবে ওদিকে আবার আরশিয়ানের আসার সময় হয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান চৌধুরী গতকাল হসপিটাল ত্যাগ করার সময় উনাকে বলেছিলেন,
–” আরশিয়ান ফোন দিয়ে জানালো তীব্র ঝড়ের কারণে গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। আমি যেনো ওকে গিয়ে নিয়ে আসি। ”
স্বামীর কথায় বুক কেঁপে উঠেছিল উনার। ছেলের বিপদ শুনে কোনো মা নির্বিকার থাকতে পারে? আরিয়ান চৌধুরী উনাকে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু মায়ের মন কী আর মানে? শত কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলেও গতকাল থেকে কেনো যেনো উনার মনটা কু ডাকছে। মনের অবাঞ্ছিত ভাবনাকে বিশেষ পাত্তা না দিলেও একেবারে নির্লিপ্ত ও থাকতে পারছেন না আফিয়া চৌধুরী।
নুডলসের জন্য ফ্রাইপ্যানে তেল দিতেই আচমকা কলিংবেলের শব্দ শোনা গেলো। কিছু একটা ভেবে সার্ভেন্ট কে বকিটা দেখতে বলে ভেজা হাত আঁচলে মুছে চঞ্চল পায়ে এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে। উচ্ছ্বসিত মুখে দরজা খুললেও বাহিরের দৃশ্য দেখে উনার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।
শাড়ি পরিহিত জ্ঞানহীন একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরশিয়ান। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো তার পরনে রয়েছে একটা নীল রাঙা শার্ট এবং সাদা রঙের লুঙ্গি। ছেলের নতুন অবতার দেখে রীতিমতো চমকে উঠেন আফিয়া চৌধুরী।ছোটোবেলায় বিশেষ সময়ের ক’টা দিন লুঙ্গি পরলেও গোটা তেত্রিশ বছরের জীবনে আরশিয়ান কে একবারও লুঙ্গি পরতে দেখেননি তিনি। জোরাজোরি করেও তাকে কখনো এই পরিচ্ছদ পরাতে সক্ষম হয়নি কেউ।
উনাকে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যেতে দেখে আরিয়ান চৌধুরী চিন্তিত মুখে ভেতরে প্রবেশ করে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
–” সরে দাঁড়াও আফি। ছেলেমেয়েদের ভেতরে ঢুকতে দাও। জার্নি করে ভীষণ ক্লান্ত সবাই। ”
স্বামীর কথায় যেনো হুঁশ ফেরে আফিয়া চৌধুরীর। তড়িঘড়ি করে সরে দাঁড়াতেই দীপ্ত পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করে আরশিয়ান। তার পিছু পিছু শুকনো মুখে ভেতরে ঢোকে ফারজানা। তার পরে মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ইশতিরাজ।
ইশতিরাজের বাঁকা হাসিটা ফারজানার শরীরে রীতিমতো আগুন ধরিয়ে দেয়। ফারজানার কটমটে দৃষ্টি দেখে ইশতিরাজ ফিসফিসিয়ে তাকে বলল,
–” আমি দেখতে একটুখানি ব্যাড বয় হলেও বাস্তবে সভ্য মানুষ। এজন্যই সহজে আমার উপর হম্বিতম্বি করতে পারেন আপনি। অন্যদিকে, আরশিয়ান ব্যাটা দেখতে সহজ সরল হইলেও বাস্তবে একখান পিওর ঘাউড়া চিজ। হেতের সাথে যুক্তিতর্কে যাওয়া আর স্বেচ্ছায় পাথরে মাথা ঠুকা একই ব্যপার। ”
মন্তব্যটা শুনে ফারজানা দাঁতে দাঁত পিষল। চট্টগ্রাম থেকে ফিরতি পথে ফারজানা আরিয়ান চৌধুরী কে জানায়, তাকে এবং প্রিমাকে মানিকনগর নামিয়ে দিতে। আরিয়ান চৌধুরী সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন,
–” প্রিমা এখন চৌধুরী বাড়ির বউ সুতরাং সে তার শ্বশুর বাড়ি যাবে। ”
এই কথার বিপরীতে ফারজানা বেশকিছু যুক্তি দেয়। আরিয়ান চৌধুরী বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়ার আগমুহূর্তে আরশিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,
–” মিসেস প্রিমা এখন আমার ওয়াইফ। উনার অভিভাবক যেহেতু আমি তাই আমার সিধান্তই শিরোধার্য। আপনারা অহেতুক নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করে শব্দ দূষণ করছেন। ”
কথাটা শুনে থম মেরে বসে ছিল ফারজানা। প্রত্যুত্তর করতে পারেনি। ফারজানাকে নিশ্চুপ হতে দেখে ইশতিরাজ বেশ আনন্দিত হয়।
ফারজানা ইশতিরাজের কথার জবাব দিতে গিয়েও থেমে যায়। আরশিয়ান সকলের দৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রিমা কে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গেস্ট রুমের দিকে। তাকে অনুসরণ করে উপস্থিত সকলেই পা বাড়ায় সেদিকে। আফিয়া চৌধুরী সকলের দিকে তাকিয়ে হতবাক সুরে বলেন,
–” কী হয়েছে? তোমাদের এই দশা কেনো? আর মেয়েটা এত অসুস্থ হলো কীভাবে? ”
প্রিমাকে চিনতে ভুল করেননি আফিয়া চৌধুরী। গতবার অসুস্থ আরশিয়ানকে প্রিমা বাসায় এনেছিল তা ঢের মনে আছে উনার। স্ত্রীর প্রশ্নবোধক চাহুনি দেখে আরিয়ান চৌধুরী গম্ভীর মুখে বললেন,
–” সবাইকে বাসায় ফিরতে বলো আফি। যা বলার সকলের সামনেই বলবো আমি। এখন অহেতুক কথা না বাড়িয়ে ছেলেমেয়েদের খেতে দাও। ”
প্রিমাকে ঠিকঠাক মতো বেডে শুইয়ে কম্ফোর্টার টেনে দিলো আরশিয়ান। বদ্ধ ঘরটার জানালা গুলো খুলে দিয়ে হালকা পাওয়ারে ফ্যান চালিয়ে দিলো। অচেনা একটা মেয়ের এত কেয়ার করতে দেখে আফিয়া চৌধুরী বিস্মিত চোখে তাকালেন। সবকিছু ঠিকঠাক দেখে আরশিয়ান বলল,
–” আপাতত ক্ষুধা নেই। আমার নিজের জন্য একটু সময় দরকার। অনুগ্রহপূর্বক কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করো না।”
কথাটা বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে প্রিমার দিকে একপলক তাকিয়ে ফারজানার উদ্দেশ্যে আরশিয়ান বলে,
–” আপনি উনার কম্ফোর্টজোন। এমুহূর্তে আপনি ব্যতীত অন্য কারও সাথে উনি সহজভাবে নিজের ফিলিংস শেয়ার করতে পারবেন বলে মনে হয়না আমার। আমার অনুরোধ থাকবে, যদি সম্ভব হয় তাহলে উনাকে এই ট্রমা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করুন। ”
ফারজানা বিরস মুখে বলল,
–” ওর অবস্থা বুঝেই ওকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আমি কিন্তু…
ফারজানার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আরশিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,
–” চৌধুরী বাড়ির বউয়েরা বিয়ের পর অন্যত্র রাত্রিযাপন করেনা। ”
শেষোক্ত কথাটা বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় আরশিয়ান। ছেলের কথায় হতভম্ব হয়ে যান আফিয়া চৌধুরী। স্বামীর পানে বিস্মিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আরিয়ান চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
–” যা শুনেছো সেটাই ঠিক। আরশিয়ান বিয়ে করেছে। সবাইকে জরুরী ভিত্তিতে বাসায় আসতে বলো। সবার সামনেই পুরো ঘটনা খুলে বলবো। ”
_
অপরাহ্ণের শেষ প্রহর। “আরশিয়ান বিয়ে করেছে ” খবরটা হসপিটালে পৌছানো মাত্র একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে তৌকির চৌধুরী এবং মেহরিমা ডিসচার্জ নিয়ে বাসায় ফিরেছে। হসপিটাল থেকে ফিরেই সকলে সমবেত হয়েছে আরিয়ান চৌধুরীর ঘরে।
ছেলের অভিমানী দৃষ্টি এবং চাপা আক্ষেপ ধরতে পেরে আকস্মিক ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরিয়ান চৌধুরী। উনার অবস্থা দেখে আফিয়া চৌধুরী ভয় পেয়ে গেলেও ইশতিরাজ উনাকে আশ্বস্ত করে। সবার কৌতূহলী দৃষ্টি দেখে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরো ঘটনা খুলে বলেন আরিয়ান চৌধুরী। সকলে হতবাক হয়ে শোনে সেই কাহিনী।পুরো ঘটনা শুনে তাজরিয়ান একমুহূর্তে অপেক্ষা না করে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দেয়। মেহরিমা ও একপ্রকার বাধ্য হয়ে ছুটে যায় তার পিছু।
আরশিয়ান তার প্রথম স্ত্রী কে পাগলের মতো ভালোবাসতো। শুদ্ধ পুরুষের জীবনে আসা প্রথম নারীরা ভীষণ সৌভাগ্যবতী হয়। দুর্ভাগ্যবশত সেই বেচারির কপালে এত সুখ সহ্য হয়নি। আকস্মিক এক দুর্ঘটনায় তার ভয়াবহ মৃত্যু হয়। আরশিয়ান তার লাশ দেখে টু শব্দ করেনি উল্টো ভীষণ রকমের শান্ত হয়ে পড়েছিল। কথিত আছে সেটা দুর্ঘটনা নয় বরং মার্ডার তবে এই কেসের অভ্যন্তরীণ বিষয় তাদের কারোরই জানা নেই। গম্ভীর আরশিয়ান এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল যে বাধ্য হয়ে তাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিতে হয় এবং সুস্থতা সুনিশ্চিত করতে সুদূর লন্ডনে পাঠাতে হয়।
সকলের দোয়া এবং প্রচেষ্টার ফলে আরশিয়ান সুস্থ হয়ে উঠলেও ধীরেধীরে একরোখা হয়ে উঠে। মেজাজের দিক দিয়ে শান্ত প্রকৃতির হলেও রাগলে হুঁশ হারিয়ে ফেলে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সে পণ করেছিল ইহজীবনে আর বিয়ে নামক সম্পর্কে নিজেকে জড়াবেনা। আরশিয়ানের পরিস্থিতি দেখে বাড়ির কেউই তাকে জোরাজোরি করার সাহস পায়নি কিন্তু নিয়তির লিখন কী আর খণ্ডানো যায়?এই বিয়ের পরিণতি কী হবে কারোরই জানা নেই তবে তারা শঙ্কিত। আরশিয়ান কে চিরতরে হারিয়ে ফেলতে হবে না তো?
আরিয়ান চৌধুরী হাজার রকমের নেতিবাচক চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেন। দুর্বল গলায় বলেন,
–” তোমরা নিজেদের ঘরে যাও। আমি একটু ঘুমাবো। ”
পুরো ঘটনা শুনে সকলে একটা ঘোরের মাঝে ছিল। আরিয়ান চৌধুরীর কথায় তারা দ্বিরুক্তি প্রকাশ না করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। তৌকির চৌধুরী মেজ এবং ছোটো ছেলের হাত ধরে বেরোতে বেরোতে আনন্দিত স্বরে বলেন,
–” আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি। তিনি আমার শান দাদুভাই এর জীবনটা গুছিয়ে দিয়েছেন। আমার মন বলছে আরু, এবার তোর ছেলেটার ঘরে শান্তি বর্ষিত হবে। সুখের আলোকছটায় ঝলমলিয়ে উঠবে গোটা সংসার। ঘরে লক্ষীর আগমন আমি বেশ টের পাচ্ছি। ”
বাবার কথা শুনে আরিয়ান চৌধুরী ম্লান হেসে বলেন,
–” আমার ছেলেটার উপর এখনি জোরপূর্ব কোনো কিছু চাপিয়ে দিও না আব্বা। একটুখানি সময় যাক। ওদের স্থির হতে। দু’জনে আগে পরিস্থিতি বুঝে উঠুক এরপর নাহয় আমরা আমাদের মতামত দেবো? ”
তৌকির চৌধুরী মুখ ভার করে চললেন নিজের ঘরের দিকে। আরিয়ান চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্ত্রীর হাতটা মুঠোবন্দি করে অসহায় কন্ঠে ডাকেন,
–” আফি? ”
মায়াময় ডাকটা আফিয়া চৌধুরীর অন্তঃকরণে নাড়া দেয়। অভিমান থিতু হয়ে আসে। নীমিলিত দৃষ্টি জোড়া স্বামীর মুখপানে নিক্ষেপ করে বলেন,
–” বলুন মহাশয়। ”
স্ত্রীর কন্ঠে অভিমান টের পেয়ে আরিয়ান চৌধুরী ধরা গলায় বলেন,
–” তোমাকে টেনশন থেকে বিরত রাখতে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলাম আফি। একটামাত্র সন্তান আমাদের। ওর বিপদজনক পরিস্থিতির বর্ণনা শুনে তুমি স্থির থাকতে পারতে? তোমাকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে যেতে আমার মন সায় দিতো? ”
প্রিয় পুরুষের কাছে অত্যন্ত যুক্তিবাদী নারী ও অবুঝ হয়ে যায়। পুরো সংসার দক্ষ হাতে সামলানো আফিয়া চৌধুরী ও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বামীর কথা শুনে হৃদয়ে অবিশিষ্ট অভিমান টুকু বিসর্জন দিয়ে স্বামীর বুকে মাথা রেখে ক্রন্দনরত স্বরে আফিয়া চৌধুরী বলেন,
–” শুনছেন? আমার ভীষণ ভয় করছে। কী হবে ওদের ভবিষ্যত? নারীর আসল ঠিকানা তার স্বামীর ঘর। স্বামী যদি ভাবলেশহীন হয় তাহলে স্ত্রী সেই ঘরে লাঞ্চিত হয়। আরশিয়ান যদি বিয়েটা মন থেকে না মানে তাহলে মেয়েটাকে কী জবাব দিবো আমরা? ”
আরিয়ান চৌধুরীর চিন্তা যেনো হু হু করে বাড়লো। স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললেন,
–” আমরা আরিশানকে জোর করতে পারবোনা তবে অনুরোধ করবো। ওকে বোঝানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবো এরপরও যদি তার অমত থাকে তবে আমাদের করার কিছুই থাকবে না। তবে আমার সুপ্ত বিশ্বাস রয়েছে, আরশিয়ান তার স্ত্রীর অমর্যাদা হতে দিবে না। ”
আফিয়া চৌধুরী নিরবে শোনেন স্বামীর কথা। কীয়ৎকাল পেরোতেই আরিয়ান চৌধুরী বলেন,
–” আফি? ”
আফিয়া চৌধুরী ধীর স্বরে বলেন,
–” বলুন মহাশয়।
আরিয়ান চৌধুরী কন্ঠে খানিকটা চাপা উচ্ছ্বস নিয়ে বলেন,
–” জানো, মেয়েটা একদম পুতুলের মতো। আমরা যেরকম মেয়ের জন্য খোদার নিকট ফরিয়াদ করতাম একদম সেরকম উপরন্তু সে এতিম। শ্বাশুড়ির সম্পর্কটা সাইডে রেখে ওকে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না? আরশিয়ানের সাথে ওর কতটুকু বনিবনা হবে আমার জানা নেই কিন্তু আমি চাই আমাদের সাথে ওর বন্ডিংটা চমৎকার হোক। ”
স্বামীর কথায় নিরবে সায় জানিয়ে আফিয়া চৌধুরী নিজেও আহ্লাদী কন্ঠে বলেন,
–” খোদাতায়ালা শেষ বয়সে এসে আমাদের ইচ্ছে পূরণ করেছেন। আপনার বউমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমিও দ্বিরুক্তি করবোনা। নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবো ওকে। ”
আরিয়ান চৌধুরী স্মিত হাসলেন। জীবনে উত্তম সঙ্গী পাওয়া ব্যক্তিরা কতোটা সৌভাগ্যবান হয় সেটা আবারো টের পেলেন তিনি।
_
অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর। মেহরিমার উন্মুক্ত কাঁধে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে তাজরিয়ান। মেহরিমা টের পাচ্ছে, তার কাঁধের কাছটা উষ্ণ পানিতে জবজব করছে। তার সাথে লেপ্টে থাকা শক্তপোক্ত পুরুষালি শরীরটা কিছুক্ষণ পরপর কান্নার দমকে কেঁপে উঠছে। তবুও সে নির্বাক থাকে। নিরবে কেবল তাজরিয়ানের মাথার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর তাজরিয়ান নিজ থেকে বলে উঠে,
–” সব দোষ আমার। আমি যদি তোকে ইগনোর না করতাম তাহলে তুই অসুস্থ হতি না। ভাইয়া এরকম একটা বিপদে পড়তো না। আমি কীভাবে ভাইয়াকে ফেস করবো…
কান্নার দমকে কথা আঁটকে আসে। জ্ঞান হওয়ার পর তাজরিয়ান কে কখনো কাঁদতে দেখেছে বলে মনে পড়েনা মেহরিমার। এমনকি সাত বছর আগের সেই জঘন্য ঘটনাও তাকে কাঁদাতে পারেনি অথচ আজ বড় ভাইয়ের অবস্থা দেখে শক্তপোক্ত মানুষটা নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। মেহরিমা তাজরিয়ানের কথার প্রত্যুত্তরে শুধায়,
–” আমাকে সাত মাস ধরে ইগনোর করার কারণটা কী? সামান্য একটা ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিচ্ছিলেন? ”
তাজরিয়ান মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি প্রকাশ করে বলে,
–” কোম্পানির কিছু ঝামেলার কারণে আমার ফোন হ্যাক করা হয়েছিল। যাবতীয় ইনফরমেশন ঘন্টায় ঘন্টায় অন্যের মনিটরে শো করছিল। আমি চাইনি শত্রুপক্ষ তোর অস্তিত্বের আভাস পাক। তুই হয়তো খেয়াল করেছিস, বাসাতেও সেভাবে যোগাযোগ করা পসিবল হয়নি। তোর উপর চাপা রাগটা থেকে আরও বেশি ইগনোর করছিলাম তোকে।”
মেহরিমার বুক চিরে বেরিয়ে আসলো দীর্ঘশ্বাস। তাজরিয়ানের মুখটা সম্মুখে এনে তার রক্তিম চোখ দু’টোতে আলতো চুম্বন এঁকে দিয়ে বোঝানোর স্বরে বলল,
–” জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিনটে আল্লাহর হাতে। এক্ষেত্রে আপনার দোষ থাকতে পারেনা কখনোই। অহেতুক নিজেকে দোষারোপ করবেন না। ভাইয়া কে মেন্টালি স্ট্রেস ফ্রী রাখার উপায় খুঁজেন তাহলে সব সমস্যা এক ঝটকায় সমাধান হয়ে যাবে।”
তাজরিয়ান মেহরিমার রুগ্ন মুখটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে বলে,
–” তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস বউজান। ”
মেহরিমা পরিস্থিতি পাল্টাতে ভাব নিয়ে বলে উঠে,
–” কোনো সন্দেহ আছে? ”
তাজরিয়ান মেহরিমার একহাত টেনে নিজের সন্নিকটে এনে তার অনাবৃত বক্ষে মুখ গুঁজে হাস্কি স্বরে বলল,
–” লেট মি চেক বউজান। ”
তাজরিয়ান আকস্মিক করা কান্ডে মেহরিমা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। ঘুৃম জড়ানো চোখদুটোর অলস দৃষ্টি বিছানার একপাশে পড়তেই নিজের পছন্দের ছেড়া গাউনটা দেখে বলে,
–” আমার পছন্দের ড্রেস গুলোর সাথে আপনার কীসের শত্রুতা আছে বলুন তো। ”
তাজরিয়ান রাশভারি স্বরে বলে উঠে,
–” একান্ত মুহূর্তে কেবল তাজরিয়ান নামক আব্রু তোর অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকবে বউজান। বাকি সব পরিচ্ছদের গুরুত্ব মূল্যহীন। ”
তাজরিয়ানের কথায় মেহরিমা বিস্মিত হয় না উল্টো নিজেকে ছাড়িয়ে ওপর পাশ ফিরে শুয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
–” আমাকে সাত মাস ইগনোর করার শাস্তিস্বরূপ আপনাকে আমি আগামী সাত বছর টানা ইগনোর করবো। সুতরাং এখন সাত ফুটের দূরত্ব বজায় রাখুন। ”
বউয়ের মুখ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে তাজরিয়ানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো। মৃদু রাগ নিয়ে পেছন থেকে মেহরিমার পেলব উদরে হাত রেখে তার নতজানু শরীরটা নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হুমকির স্বরে বলল,
–” ফর ইয়্যোর কাইন্ড ইনফরমেশন বউজান, আমি ফাদার তেরেসা নই। সাত মাস পর বেবি শাওয়ার উদযাপন করতে না চাইলে মস্তিষ্ক থেকে সাত বছর এবং সাত ফুটের প্ল্যানটা ডিলিট কর।”
তাজরিয়ানের কথা শুনে মেহরিমার গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে মন চাইল। এরকম অসভ্য পুরুষ মানুষ তার কপালেই কেনো জুটলো। ভয়ংকর কথা হজম করার শক্তি নেই বিধায় মেহরিমা ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইল। তাজরিয়ান কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি দিয়ে পরিশেষে ব্যর্থ হয়ে মেহরিমাকে নিজের প্রশস্ত বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে নিজেও প্রশান্তির ঘুমে তলিয়ে গেলো।
_
নিস্তব্ধ সন্ধ্যা। বেলকনির গ্রিল আঁকড়ে ধরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে চাঁদের লুকোচুরি দেখছে প্রিমা। বেলকনিতে আহামরি তেমন সাজসজ্জা না থাকেও গ্রিলের ফাঁকে ক’টা ইনডর প্ল্যান্ট ঝুলছে। এই বেলকনির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হলো এটার সাথে এটাচড্ সিঁড়ি রয়েছে। যার মাধ্যমে খুব সহজে নিচে অবস্থিত সুবিশাল বাগানে যাওয়া যাবে।
প্রিমা আনমনে পরখ করছিল সবকিছু। সারাটাদিন ঘুমানোর ফলে শরীরের অসুস্থতা এবং ক্লান্তি নিমিষেই গায়েব হয়ে গিয়েছে। তাকে সারাদিন পাহাড়া দিয়ে ক্লান্ত ফারজানা এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। প্রিমার কল্পনার মাঝে বাঁধ সাধলো এক গমগমে পুরুষালি স্বর। নিচের দিকের সিঁড়ির কাছটায় দাঁড়িয়ে আরশিয়ান শীতল কন্ঠে বলেছে,
–” আপনার অসুবিধা না থাকলে একটু নিচে আসবেন? ”
প্রিমার হৃদয়টা থমকে যায়। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর এই মানুষটার মুখোমুখি হওয়া মাত্রই হৃদয়ের হৃদয়স্পন্দন তরতর করে বেড়ে যায়। অদ্ভুত অপরাধবোধ জাগ্রত হয় মস্তিষ্কে। প্রিমা কেনো যেনো আরশিয়ানের ডাক উপেক্ষা করতে পারলোনা। হলদেটে কামিজের ওড়নাটা শরীরে ভালোমতো জড়িয়ে ধীর পায়ে নেমে গেলো নিচের দিকে। কদম বাড়ানোর সাথে সাথে বেলাগাম গতিতে বাড়তে থাকলো তার হৃৎস্পন্দন।
আরশিয়ান নির্নিমেষ তাকিয়ে দেখল প্রিমার আগমন। সে নেমে আসতেই আরশিয়ান পুনরায় ধীর স্বরে বলল,
–” বাগানের ভেতরের দিকটায় বসার জন্য চমৎকার একটা জায়গা আছে। আমরা সেখানে বসে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি? ”
প্রিমা দৃষ্টি নত রেখে নরম স্বরে বলে,
–” জ্বী অবশ্যই।
নৈঃশব্দ্যে একত্রে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে একটা বড়সড় দোলনার সামনে দাঁড়াল তারা। প্রিমা চোখ ঘুরিয়ে দেখল, দোলনার পাশে বিরাট এক বেলীফুলের গাছ আছে। সেই পুষ্পের সৌরভে বিমোহিত হয়ে উঠে প্রিমার মন। আরশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
–” পাশাপাশি বসতে সমস্যা আছে? আন ইজি ফিল হবে আপনার? ”
প্রিমা সম্মুখে তাকিয়ে দেখে দোলনায় যথেষ্ট স্পেস আছে। দু’জন বসলেও তাদের মাঝে বিস্তর ফারাক থাকবে। প্রিমা মাথা নাড়িয়ে ধীর স্বরে বলে,
–” না। কোনো অসুবিধা নেই। ”
অতঃপর প্রথমবারের মতো তারা দু’জন পাশাপাশি বসলো। আরশিয়ান নিশ্চুপ থেকে প্রিমা কে পর্যবেক্ষণ করছিল। প্রিমা সবকিছু ভুলে বেলীফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। প্রিমার মুগ্ধ দৃষ্টি অবলোকন করে হাত বাড়িয়ে ফুলসহ একটা ছোট্ট ডাল ভেঙে প্রিমার কোলের উপর রেখে আরশিয়ান বলল,
–” আপনার অপলক চাহনিতে ওরা বিব্রত হচ্ছে মিসেস প্রিমা। ”
আরশিয়ানের কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র লজ্জায় দৃষ্টি নীমিলিত হলো প্রিমার। আরশিয়ান সেই দৃশ্য দেখে স্মিত হেসে উঠল। পরিশেষে হেয়ালি বন্ধ করে কিছুক্ষণ পর গম্ভীর স্বরে বলল,
–” আপনি আমাদের সম্পর্কটা থেকে কী আশা করেন আপনি? দাম্পত্য জীবন নিয়ে আপনার চাহিদা কীরূপ ? ”
প্রিমা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
–” কাগজে-কলমে নামধারী সম্পর্কে আশা নিরাশার ব্যপারটা থাকে না। যদি বলেন দাম্পত্য জীবনের কথা তবে, আমি চেয়েছিলাম একজন শুদ্ধ পুরুষকে। যার হৃদয়ে কেবলমাত্র আমার জন্য একটুখানি জায়গা হবে। যার চোখজোড়ায় আমি সীমাহীন সম্মান খুঁজে পাবো। পার্সোনালি আই বিলিভ দ্যাট, একটা সম্পর্কে ভালোবাসার থেকেও সম্মানটা অধিক জরুরি। ”
আরশিয়ান ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শুনলো তার কথা। আজকালকার যুগে বাস্তবতা বুঝে এমন মেয়েমানুষ খুব কম এক্সিস্ট করে। প্রিমার উত্তর শুনে বুকের উপরকার বোঝা কিছুটা হালকা হয় তার। আরশিয়ান ধীর স্বরে বলে উঠল,
–” আপনি আমার জীবনে আসা দ্বিতীয় নারী। সোজাসাপটা বলতে গেলে এই সম্পর্কটাকে আমি অস্বীকার করছিনা তবে আপনাকে দায়িত্ব ব্যতীত অন্য কিছু ও ভাবতে পারছিনা। ”
এতটুকু বলে আড়চোখে প্রিমার মুখপানে তাকাল আরশিয়ান। মেয়েটার দৃষ্টি স্বাভাবিক কিন্তু একহাতে খামচে ধরে রেখেছে ওড়নার এক অংশ। আরশিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বলে,
–” স্বামী, সংসার, দাম্পত্য জীবন এই বিষয়গুলো ঘিরে আপনার এক্সপেকটেশন থাকাটা ভুল নয় তবে আপনার সমস্ত সপ্নগুলোকে প্রাধান্য দিতে পারবো কিনা তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। আমি আপনাকে কখনোই অসম্মান করবোনা তবে ভালোবাসবো এমন প্রতিশ্রুতি ও দিতে পারবোনা। বদ্ধ কামরায় আমরা একসাথে থাকলেও আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সূলভ কোনো সম্পর্ক আদতেই কখনো পূর্ণতা পাবে কিনা সেটার নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিতে পারবো না। ”
প্রিমা আনমনে কিছু একটা ভেবে তাচ্ছিল্য হাসলো। আরশিয়ানের রক্তিম চোখজোড়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল,
–” দায়িত্বের মুখোশ থেকে বেরিয়ে প্রকৃতপক্ষে স্বামী হওয়ার চেষ্টা করবেন কখনো? ”
আরশিয়ান অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–” প্রচেষ্টা থাকবে। ”
প্রিমার অধর কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল। সে ধীর কন্ঠে বলল,
–” তবে আমিও একটা শেষ সুযোগ দিতে চাই সম্পর্কটাকে। দেখা যাক পরিশেষে নিয়তি কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়। ”
আরশিয়ান মাটিতে পড়ে থাকা নষ্ট বেলীফুলের দিকে দৃষ্টি তাক করে শুধায়,
–” সুযোগের সময়সীমা কতদিন? ”
প্রিমা স্মিত হেসে বলল,
–” আমৃত্যু। ”
আরশিয়ান হতবাক চোখে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
–” সুযোগের সময়সীমা আমৃত্যু নির্ধারণ করার কারণ? যদি এই সম্পর্কটা কেবল দায়িত্বের বেড়াজালেই আবদ্ধ থাকে এবং আমৃত্যু আমাদের সংসার না হয় তখন?”
প্রিমা নির্বিকার সুরে বলে,
–” নাই-বা হলো সংসার। অন্তিম সময়ে গিয়ে আমার লাশের খাটিয়া বহন করার জন্য একটা কাঁধ অন্তত থাকবে।বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে না এটাই আমার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ।”
আরশিয়ান হতবাক সুরে বলল,
–” আপনার নির্মম কথাগুলো শুনে আমি বিস্মিত হচ্ছি। ”
প্রিমা আলতো হেসে বলল,
–” নিষ্ঠুর বাস্তবতার সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো মানুষ কে বিস্মিত করা। আমার একটা অনুরোধ আছে। রাখবেন? ”
আরশিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–” বলুন?
প্রিমা ভাবলেশহীন গলায় বলল,
–” যতদিন আমাদের সম্পর্কটা কেবল দায়িত্ব নামক বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবে ততদিন নিজের দায়িত্ব আমি নিজেই নিবো অর্থাৎ আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বয়ং আমার। আপনার কোম্পানিতে চাকরি না থাকলেও অসুবিধা নেই আমি অলটারনেটিভ ওয়ে খুঁজে নিবো। ”
আরশিয়ান ক্ষণে ক্ষণে বিস্মিত হচ্ছে। সে নিরবে মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বলে,
–” ঠিকাছে তবে আমার পিএ হিসেবে আপনি চমৎকার দায়িত্ববান একজন মানুষ। আপনাকে হারাতে চাইছি না। ”
প্রিমা স্মিত হাসলো কেবল। প্রশ্ন ফুরিয়ে যাওয়ায় আরশিয়ান নিশ্চুপ রইল। আচমকা বাগানের দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালাকার কাঠগোলাপের গাছ থেকে একটা ফুল পড়ায় প্রিমা দোলনা থেকে উঠে সেটা তুলতে গেলো। প্রিমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আকস্মিক কিছু একটা চোখে পড়ল আরশিয়ানের। চোখবুঁজে অস্ফুটস্বরে সে আওড়াল,
–” ওহ্ শীট্। ”
প্রিমা ফুলটা হাতে তুলে নিয়ে ফিরে দাঁড়াতেই আরশিয়ানের বাহুর সাথে মৃদু ধাক্কা খেলো। আরশিয়ান ব্যস্ত ভঙ্গিতে তার বাহু টেনে ধরে দোলনায় বসিয়ে বলল,
–” আপনি দশমিনিট মতো দোলনায় একটু বসেন। একদম নাড়বেন না৷ কেউ আসলেও উঠার দরকার নেই। আমি আসছি। ”
প্রিমা হতবাক হয়ে তাকাল আরশিয়ানের প্রস্থানের পানে। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদুস্বরে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে দোল খেতে লাগলো। নিস্তব্ধ জায়গাটায় সেই শব্দ গুঞ্জন তুলল। হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো গানের কিছু পঙক্তি,
–” ❝ তবু প্রেম এসে ভালোবেসে
আজও দেখা দিয়ে যায়
যেই ছুঁতে যাই, আমি হাত বাড়াই
কেন দূরে সরে যায়? ❞
প্রায় পনেরো মিনিট পর আরশিয়ান তার সামনে উপস্থিত হয়। লোকটা হাঁপাচ্ছে। তামাটে বর্ণের কপাল বেয়ে স্বেদজল গড়িয়ে পড়ছে। হাতের উল্টো পিঠে কপালের ঘাম টুকু মুছে হাতে প্রিমার উদ্দেশ্যে আদেশের স্বরে আরশিয়ান বলল,
–” আমার সাথে আসুন। ”
প্রিমা বাধ্য স্ত্রীর ন্যায় তার পিছু গেলো। কিছুটা সামনে এগোতেই আরেকটা সিঁড়ি যুক্ত বারান্দা দেখল প্রিমা। আরশিয়ান ইশারায় তাকে উঠতে বললে অগত্যা প্রিমা পা চালিয়ে উঠে পড়ল সেই বেলকনিতে। কাঁচের নির্মিত স্লাইডিং ডোরটা চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকলো। প্রিমার দিকে হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো আরশিয়ান । কিছু একটা খুঁজে একটা অফ হোয়াইট কালার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এবং একটা ব্লু কালার টিশার্ট এগিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
–” আপনার কামিজে ব্লাডের স্টেইন লেগে আছে। আমরা যৌথ পরিবারে থাকি। বাসায় আমি ব্যতীত অসংখ্য মানুষ আছে। আমি চাইনা কেউ আপনাকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখুক। ”
প্রিমা লজ্জায় থিতু হয়ে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। আরশিয়ান তাকে সহজ করতে বলল,
–” অসাবধানতা বশত অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে যায় তবে আমি চাইব আপনি সতর্ক থাকুন। ব্যক্তিগত বিষয়াদি লোকসমক্ষে আনা আমার পছন্দ নয়। যেকোনো প্রয়োজন, প্রবলেম আপনি আমার সাথে শেয়ার করবেন। আদর্শ হাসবেন্ড হতে না পারলেও আমরা একে-অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী হবো।”
চলবে?