শিরোনাম পর্ব-০৭

0
83

#শিরোনাম
#পর্বসংখ্যা_০৭
#মুসফিরাত_জান্নাত

“আমি আইনী ব্যবস্থা নিবো।আপনারা বিচার করে এ বাড়িতে আমার পাওনাটুকু আজ বুঝে নিয়ে যেতে না দিলেও আইন ঠিকই দিবে।হয়তো দুইদিন আগে আর পরে।আইনী ব্যবস্থা নিয়ে জেলের ভাত ওকে আমি খাওয়াবই।আমার মন ভাঙার মানুষের সাথে কোনো আপোষ আমি করবো না।”

কাঠ হয়ে বলা জেরিনের বাক্যগুলোর সমাপ্তি টানতেই শোরগোল শুরু হলো বৈঠকে।সবাই গুঞ্জন তুললো এমন কঠোর মেয়ে আগে কখনো কেও দেখেনি।গোঁড়ামিতে বিশ্বাসী মুরুব্বিরা একটু মুখ বাঁকালো এতে।কি যুগ আসলো?স্বামী বিদ্বেষী নারীদের জন্ম হচ্ছে আস্তে ধীরে।স্বামী হলো সবচেয়ে বড় গুরুজন।সে বিয়ে করেছে বলেই এমন কঠোর হতে হবে নাকি?এমন মনোভাবনায় বিড়বিড় করে কানাঘুষা শুরু করলো ওনারা।আর অন্যদের মুখে ফুটলো রহস্যময় হাসি।তাদের গুঞ্জনে ফুটলো বাহবা।জেরিন এতোকাল পতি ভক্ত নারী ছিলো।জুবায়ের এর জন্য কি-না করেছে মেয়েটা?সবাই একটু আধটু জানে সেসব।মেয়েটারও যে মন পুড়ছে তা স্পষ্ট।এমন অবস্থায় এরকম কঠোর হয়ে আছে ভেবেই গর্ব হচ্ছে তাদের।নারীরা যুগে যুগে এমন কঠোর হলেই নারী পুরুষের বৈষম্য দূর হবে।নারীদের দূর্বল ভেবে কোনো পুরুষ আর অন্যায় অপকর্ম বিস্তার ঘটাতে সাহস পাবে না।সম্পর্কের মূল্যায়ন বুঝতে শুরু করবে।জুবায়েরও বুঝতে শুরু করে।কনাকে সন্তানের মোহে বিয়ে করলেও জেরিনকে সে এখনো ভলোবাসে।জেরিন তার প্রথম ভালোবাসা, প্রথম স্ত্রী। কতশত স্মৃতি জমে আছে তার সাথে।তার একটি শখের কারণে মেয়েটা এমন কঠোর হয়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে ভাবতেও পারেনি সে।যদি পারতো তবে এমন কাজ করার আগে দ্বিতীয় বার ভাবতো।সে ভাবেনি।তাই তো অনুশোচনার অনলে পোড়ার সময় শুরু হয়েছে তার।কৃতকর্মের পরিণতি ভোগের সময় এসেছে।এই ভাঙা শরীরে মনের ভার, কর্মের পরিণতি একত্রে সইবার ক্ষমতা হারায় সে।ফ্যালফ্যাল করে তাকায় জেরিনের দিকে।জেরিন মুখ ফিরিয়ে নেয়।তার দিকে ফিরেও চায় না।বৈঠকের রায় মোতাবেক বাড়ি থেকে আনা সব ফার্নিচার, গহনা সব সার্বিক পাওনা বুঝে নিয়ে এক এক করে গাড়িতে তোলে সে।সালিসি পরিষদের সাহায্য নিয়ে থানায় মামলা ঠুকে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।ঘোষণা দেয় বিচ্ছেদ নেওয়ার।এই ঘোষণার ভার টুকুই সহ্য করা কষ্টকর জুবায়ের এর।এসব ফলিত দেখা তো বহু দূরের কথা।
সে অসহায় হয়ে জেরিনকে দেখে।মেয়েটি এক ঘটনাতেই বদলে গিয়েছে।ভ’য়ংকর বদল হয়েছে তার।এই বদলে যাওয়া জেরিন তার বড় অচেনা।বড় অচেনা।সে মলিন স্বরে বলে ওঠে,

“তুমি বদলে গেছো জেরিন।আমার এই অবস্থায় যেখানে তোমার পা’গলপ্রায় হওয়ার কথা ছিলো।সেখানে এমন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছো কি করে?তোমাকে আমি আর চিনতে পারছি না।”

আবেগমাখা মলিন স্বরে থমকে দাঁড়ায় সে।ব্যাথার হাসি মুখে ফুটিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলে,

“আমিও কাল তোমাকে চিনতে পারিনি।আমার অতি চেনা জুবায়ের আমি জীবিত থাকাকালীন দ্বিতীয় কাওকে বিয়ে করা তো দূর, আমার ম’রনের পরেও বিয়ে করবে এমন ছিলো না।অথচ গোপনে আজকাল তাই হয়েছে।তুমিও বড় বদলে গেছো।তোমাকেও আমি চিনতে পারিনা।অচেনা লোকের জন্য পা’গল কে হয় বলো?”

জুবায়ের এর মুখ চুপসে যায়।মনোয়ারা কাল রাত থেকে জেরিনের তেঁজ দেখে অনেকটাই দমে গিয়েছে।আজকের বৈঠকের পর তার মুখ দিয়ে ধুলো উড়ছে।সে বুঝতে পেরেছে জেরিন কোন ধাঁচের মেয়ে।তাকে ইট মা’রলে পাটকেল নয়, দ্বিগুণ সাইজের ইট ফিরতি মা’রে।ছেলেকে বাঁচাতে আপোষ করতে সে অসহায় কণ্ঠে বলে,

“সে তো সন্তানের জন্য করছে।তোমার প্রতি ভালোবাসা কি কমবে কোনোদিন? এ ঘর সংসার তোমার। এই ঘর তুমি ছেড়ো না।”

শাশুড়ীর কথায় তাচ্ছিল্য ভরে হাসে জেরিন।এতটা নত হওয়ার মানুষ তিনি নন।কেবলই কারাদণ্ডের ভ’য় ওনার মনে চেপেছে।কথায় বলে না শক্তের ভক্ত নরমের যম।মনোয়ারারও ঠিক তেমন হয়েছে।তার সাথে সায় মেলায় জিনাতও। মা মেয়ের কথা শুনে জেরিন হাসে।জবাবে বলে,

“ভালোবাসা থাকলে তো কমার প্রশ্ন ওঠে মা।ভালোবাসাই তো অবশিষ্ট নেই।থাকলে বিয়ে করতো না।আর রইলো সন্তানের মোহ!যারা বিয়ে করার তারা এমনি করে।সন্তান তো বাহানা মাত্র।”

শেষ বাক্যটা বিতৃষ্ণা প্রকাশ করে বললো সে।কথাটা তীরের বেগে জুবায়ের এর বুকে লাগে।এখনই যেনো সে বুঝতে পারে কতোবড় ভুলটাই না সে করলো।বৈঠক সমাপ্ত হয়।মামলা দায়ের করার পর আইন মোতাবেক বিচ্ছেদ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে। আপাতত জেরিনের জিনিসপত্র তাকে বুঝে দেওয়া হয়।এক এক করে নিজের পাওনাটুকু বুঝে নেয় জেরিন।গহনা গাটি, ফার্নিচার, ঘরের আসবাব ঠিক যেভাবে বিয়ের সময় ট্রাক বোঝাই করে এনেছিলো এ বাড়ি, ঠিক সেভাবেই ফিরিয়ে নিতে সাজায়।পার্থক্য কেবল বিয়ের সময়
এসব নিয়ে আসার সময় সেগুলোতে প্রাণ ছিলো,আনন্দ ছিলো।আজ সব বিধ্বস্ত, শোকবার্তায় পরিপূর্ণ। তপ্ত শ্বাস ছাড়ে জেরিন। শেষ ফার্নিচারটা গাড়িতে তুলে দিয়ে কি যেনো এক মায়ার টানে জুবায়ের এর দিকে শেষ দৃষ্টি মেলে তাকায় সে।জুবায়ের এর চোখ মুখ বিধ্বস্ত।কেমন মায়া এই চেহারায়।এই নিষ্পাপ মুখশ্রী দেখলে কে বলবে এই লোক এমন জঘন্য কাজ করতে পারে?জেরিনের চোখ ধরে আসতে চায়।হারানোর যন্ত্রণা মনে চাপে।এই চেহারা কিছু দিনের মাঝেই তার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।তার সবচেয়ে কাছের মানুষটা পর হয়ে যাবে।কেবলই কি সন্তানের মোহে?নিজের আবেগ আর লুকানো সম্ভব হয় না।ঝাপসা হয়ে আসা চোখ সমলে নিলেও কণ্ঠ বাঁধ মানে না।কণ্ঠ বিগলিত হয়ে বেরিয়ে আসে তার বুকের হাহাকার,

“এমনটা কেনো করলে জুবায়ের?শুধুই কি সন্তানের মোহে?”

জুবায়ের নির্বাক।জেরিনের দিকে তাকাতে পারছে না সে।চোখ দু’টো অনুতাপের অশ্রু গলে আঁধার হয়ে গিয়েছে।মানুষ বোঝে।কিন্তু আফসোস এটাই তা সময়ে নয়।অসময়ে।নিজের করুন পরিণতি হলে সকল দাম্ভিকতা নিপাত যায়।তখনই মানুষ বুঝতে শুরু করে।নত হয়।দুটো পুলিশ অফিসার তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে।জুবায়েরকে ধরে নিয়ে যেতে তারা উপস্থিত আছে।মামলা জেরিন খানিক পরেই দিবে।এর মাঝেই যদি পালিয়ে যায়?

তাদের ব্যতিব্যস্ততা দেখে হাসে জেরিন।জুবায়ের এর জবাবের অপেক্ষা করে না।কাল দিনেও বংশের বাতি জ্বালার আনন্দে যাদের চোখমুখ জ্বলজ্বল করছিলো।তাদের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে এগিয়ে যায় জেরিন।শেষ সময়ে ঘৃণা ছাড়া তাদের প্রতি আর কিছু মন থেকে আসে না। সে মলিন স্বরে বলে,

“তোমরা বলতে আমি কখনো কাঁদি না জিনাত।আমার বাবা মা’রা গেলেও তেমন কাঁদিনি, বন্ধ্যাত্বের খবর জেনেও কাঁদিনি,বিয়ের দিনে বাড়ি ছেড়ে আসার দুঃখেও কাঁদিনি।তোমাদের এত যন্ত্রণা সয়েও কোনেদিন চোখে পানি জমেনি আমার।আমার চোখে পানি দেখতে চেয়েছিলে বলে এমন পরিণাম দিলে। তবুও কাঁদলাম না দেখো।অথচ এর বিপরীতে যদি অতটুকু সুখ দিতে।যতটুকু সুখ দিলে চোখে সহসাই পানি জমে।আমি ঠিকই কাঁদতাম জানো।তোমরাও সফল হতে।অথচ আমার চোখে ব্যর্থতার অশ্রু দেখতে গিয়ে তোমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে।তোমরাই অধিক ব্যর্থ হলে।আমার ব্যর্থতা সাময়িক। কিন্তু তোমাদের ব্যর্থতা ম’রণের পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী।আমি ক্ষমা না করলে ম’রনের পরেও ব্যর্থই থাকবে।আমার পিছনে নষ্ট ষড়যন্ত্র করার জন্য। এভাবে আমার সবচেয়ে ক্ষতি করার জন্য।আল্লাহ ছাড় দিলেও কখনো ছেড়ে দিবেন না মনে রেখো।”

শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে সে বলে,

“আল্লাহর পরিকল্পনা ছিলো বলেই হয়তো আমাকে সন্তান দেননি মা।আমার দ্বারা আপনাদের বংশ পরম্পরা রক্ষা করা আল্লাহ তায়ালাই চাননি।এতে আমার আফসোস ছিলো না।আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত অতি উত্তম। অতি কল্যানকর।এই সিদ্ধান্ত টপকে যাওয়াই অকল্যানকর।আপনারা আল্লাহর সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী থাকলেন না।আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিণতি কি আসবে কে জানে?তবুও বলছি ভালো থাকুন বংশের বাতি নিয়ে।স্বার্থপররা অবশ্য ভালোই থাকে।”

একটু থামলো সে।অতঃপর বললো,

“চিন্তা করবেন না।কারাদণ্ড হলেও মৃ’ত্যুদন্ড হচ্ছে না আপনার ছেলের।সে একদিন ঠিকই মুক্তি পাবে।আপনাদের বুকে আবারও ফিরে আসবে।কিন্তু আমার বুক যে খালি হলো তা আর কখনো পূর্ণ হবে না।আমার অভিধানেই কেবল তার মৃ’ত্যুদন্ড হবে।বস্তুত দুনিয়ায় বাতাসে, আপনাদের মাঝে তার শ্বাস ঠিকই সচল থাকবে।আমার মনে ম’রন হলে কি-বা আসে যায় তাই না বলুন?”

কন্ঠ ধরে আসতে নেয়।জেরিন তা আড়াল করতে চুপ হয়ে যায়।তার কথা শুনে মনোয়ারারও কি খানিক অনুতপ্ত হয়?কে জানে?তারা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।জিনাত মাথা নিচু করে থাকে।জুবায়ের ঘনঘন শ্বাস ছাড়ে।হুট করেই কি যেন হয় বাবার করা অন্যায়ে পর্যুদস্ত কনার।সে আচমকাই বলে,

“আপনি তাকে শাস্তি দিন আপু।জেলের ভাত খাওয়ান।আপনার এই সাজানো সংসার ছেড়ে চলে যেয়ে দেখেন।আপনার মনে জমা মায়ার বাঁধন ছিঁ’ড়লে এই সংসারের কোথাও কিছু থাকবে না।নড়বড়ে হয়ে ভেঙে যাবে সবটা।এরা তীলে তীলে অনুতাপ করে ম’রবে।আপনার দ্বারা সবই সম্ভব।মাথায় পরিবারের ছায়া আছে।কিন্তু আমার কোথাও কেও নেই।এদের সাথে যেনো আমিও পুড়ে ম’রবো।”

জবাবে জেরিন নিশ্চুপ থাকে।বাবার কর্মে একটু বেশিই দুর্বল হয়ে পরেছে কনা।তার মনে কি চলছে কে জানে?তবে তার বাবার মন মতলব অনুযায়ী আজই তাকে এ বাড়ি রেখে যাওয়া হয়েছে।কনা অসহায়ের চিৎকার দিয়ে অভিশাপ দিয়েছে বাবা ও দাদীকে।সে হুংকার দিয়ে বলেছে, এই দুনিয়ার বুকে ব্যক্তি মোকছেদ ও জরিনা বেঁচে থাকলেও তার পিতা মোকছেদ ও দাদী জরিনার কবর হয়েছে।তাদের মুখ আর সে দেখতে চায় না।যতদিন না তাদের করুন পরিণতি হয় তার আগ অবধি তাদের সে দেখবে না।যদি এখানেই তাকে রেখে যাওয়া হয় তবে তার কর্ম কি হবে সে বলেনি তখনও।তবে মোকছেদ ও জরিনা তীলে তীলে অনুতাপ করে ম’রবে।তা সে ঠিকই অভিশাপ দিয়ে গ্যারান্টি দিয়েছে।মাজলুমের দোয়া আল্লাহ ফেলেন না।তখন তার কণ্ঠে অন্যরকম তেজ ছিলো।পরিবেশ ভারী হয়ে আসায় সেই তেঁজ কমে এসেছে। ভারী হয়েছে কণ্ঠনারী।জেরিন ম্লান হাসে।দূর্বল হয়ে গিয়েছে কনা।সে দূর্বল কণ্ঠেই বলে,

“আপনি চাইলে থেকেও যেতে পারেন।ওকে কেবল জেলের ভাত খাওয়ালেন।কাবিনের টাকা আদায় করলেন।যা যা শাস্তি সবটুকু আদায় করলেন।এখানে থাকলে আইন মোতাবেক আপনার সব হক আদায় করতে সে বাধ্য থাকবে।বিচ্ছেদ দিলে ওদের কষ্ট ওই একেবারেই সমাপ্ত হবে।আমার জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে এসব দেখতে হবে আজন্মকাল।আপনি থেকে গেলে তীলে তীলে ওদের কর্মের প্রতিশোধ তুলতে পারবেন।আমিও একটু শক্তি পাবো।নারী শক্তির বলেই না অন্য নারী বলীয়ান হয়।”

কনা কি বলতে চাইছে তা বুঝতে পারে বয়সে ও অভিজ্ঞতায় বড় জেরিন।কিন্তু তা সম্ভব নয়।মানুষ বদলায়।কনারও বদল হবে।তার বয়স অল্প। বয়স বৃদ্ধিতে সে তার যায়গা বুঝে যাবে।অল্প বয়সের আবেগে এখন সে এসব বলছে মাত্র।এই যে বাবার প্রতারণায় দুর্বল হয়ে গিয়েছে সে।পরবর্তীতে তো আরও হবে।নাকি হবে না?কে জানে?তবুও মেয়েটির প্রতি একটু মায়া হলো জেরিনের।সে তার গালে হাত দিয়ে আরেক হাত এক হাতে পুরে বললো,

“আমার প্রতিশোধ স্পৃহা এই এতটুকুই বোন।আমি বিচ্ছেদেই সমাপ্ত টানতে চাই।তীলে তীলে প্রতিশোধের দ্বায়িত্বটুকু না হয় আপনিই নিন।আপনার বাবা ও দাদী তো আপনাকে আর গ্রহণ করবে না বলে গেলো।যাওয়ারও জায়গা নেই।থাকতে হবে এখানেই।নিজের ভালোটুকু আদায় করে নিবেন।আমি চললাম।হয়তো কখনো আর দেখা হবে না।কাল পরকীয়া করেছেন কিনা জিজ্ঞেস করে যতটুকু মন্দ করেছি আপনার সাথে। আজ এই সংসার একান্ত আপনার করে দিয়ে তার শোধ তুললাম।ভালো থাকবেন।”

কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না সেখানে।মা ও ভাইয়ের সাথে গাড়িতে উঠে প্রস্থান করে।যাওয়ার পানে শেষ বারের ন্যায় তার আপন হাতে সাজানো ঘর বাড়ি দেখে যায়।ওই যে তার সাধের ঘর।ওই যে তার সাধ্যের সংসার।বাড়ির দক্ষিন দিকের পুকুর,পুকুর ধারের জাম গাছ।পাশেই দাঁড়ানো হিজল গাছ।তার ঘরের জানালার ধারে সখ করে লাগানো ফুল বাগান।বকুল তলায় থরে থরে পড়ে থাকা ফুল।আর?আর এই বাড়ির আনাচে কানাচে থরে থরে সাজানো কতশত স্মৃতি।সব ফেলে রেখে যাচ্ছে সে।উঠোনে পুলিশ অফিসার ঘিরে রাখা পা ভাঙা জুবায়েরকেও ফেলে রেখে যাচ্ছে।যে কিনা তার আস্ত দুনিয়া হয়েছিলো একদিন।লোকটিকে কতই না ভালোবাসা দিয়েছিলো সে।আজ সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাচ্ছে সে।সব ভেঙে গিয়েছে।ভাগ্য সব কেঁড়ে নিয়েছে তার থেকে।সবকিছু।

তাদের থেকে আড়াল হতেই চোখ বাধ হারালো।ঝাপসা চোখে আবছা হয়ে জুবায়ের এর করুন মুখ ভাসলো।সে তার মুখ পানে চেয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,

“তুমি সন্তানসুখ চাইলা পুরুষ আমায় চাইলা না।অচিন পুরে সন্তান খুঁজলা।আমায় খুঁজলা না। সন্তান তুমি পাইবা ঠিকই আমায় পাইবা না।তুমি সন্তাসুখ খুঁজলা পুরুষ আমায় খুঁজলা না।”

চলবে