শিরোনাম পর্ব-১১

0
79

#শিরোনাম
#পর্বসংখ্যা_১১
#মুসফিরাত_জান্নাত

কনকনে ঠাণ্ডা।গায়ে শাল জড়িয়ে পায়ে হেঁটে হাফ কি.মি. এগুলো কনা।চৌমাথা পেরিয়ে উত্তরের রাস্তায় ঢুকলো।কয়েক কদম পেরুতেই পুর্ব দিকের রঙচটা সবুজ গেইট চোখে পড়ে।সেদিকে এগিয়ে যায় কনা।গেইট মাড়িয়ে দোতলায় উঠে কলিং বেল চেপে অপেক্ষা করে।মিনিট দুয়েকের মাঝেই দরজা খুলে যায়।এক মাঝবয়সী মহিলা সাদরে গ্রহণ করে তাকে।সহাস্যে বলে,

“এসো মা, এসো।”

কনাকে ভেতরে ডেকে সোফায় বসিয়ে দেন তিনি।তারপর উচ্চস্বরে হাক ডাক শুরু করেন,

“কই রে মনা।তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠ।তোর ম্যাডাম এসেছে।”….“ফুলি ম্যাডামকে চা নাস্তা দে।মনা ওঠার ফাঁকে নাস্তা সেড়ে নিক।”

চেঁচিয়ে দু’টো মানুষকে দুরকম আদেশ দিয়ে এক গাল হাসেন তিনি।বলেন,

“আমার এই ছোট মেয়েটা বড্ড অলস হয়েছে। খালি ঘুমায়।এত করে বললাম তুমি পড়িয়ে গেলে তারপর ঘুমাতে।কিন্তু কে শোনে কার কথা!”

একটু দম নিলেন তিনি।তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে করলেন,

“রোজ রোজ এই হাল দেখে নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছো?”

এর মাঝে চা নাস্তা এলো।কনা চায়ের কাপ হাতে তুলে প্রতিত্তোরে হালকা হাসার চেষ্টা করলো।সঠিক উত্তর না দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলো।তার হাসিতেই উত্তরটা পেয়ে গেলেন ভদ্রমহিলা।অনুতাপের সুরে বললেন,

“হওয়াটাই স্বাভাবিক।ওর যে স্বভাব!এর জন্য কোনো টিউটর পড়াতে চায় না।বড়জোর এক মাস।তারপরই না করে দেয়।অনেকে তো এক সপ্তাহেই কেটে পড়ে।কি যে মুশকিলে পড়ি হোম টিউটর যোগাড় করতে তা আল্লাহ জানেন আর আমি জানি।তোমাকে আমার মেয়ের মতো ভাবি মা।তুমি আবার বিরক্ত হয়ে চলে যেও না?ছোট বোন মনে করে একটু মানিয়ে নিয়ো প্লিজ।”

এবারে মুখ খুললো কনা,

“না না আন্টি কি যে বলেন।আমি ঠিকই ওকে পড়াবো।আপনি চিন্তা করবেন না।এ শহরে যতদিন আছি ওকে পড়ানোর দ্বায়িত্ব আমার।”

একটা হোম টিউটরকে ধরে রাখার জন্য ভদ্রমহিলার যতটা প্রয়োজন ঠিক ততটাই একটা টিউশনি প্রয়োজন কনার।ফলে দু’পক্ষই দু জনের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে।ভদ্রমহিলা কনাকে বেশি টাকা অফার করে ও খাতির যত্ন করে।আর কনা রোজ রোজ এসে খনিকটা সময় মনার ঘুমানো দেখে নষ্ট করে।এতে অবশ্য কনার কিছুটা সুবিধাই হয়।গর্ভাবস্থায় এতোটুকু হেঁটে এসে একটু বিশ্রামের সময় পাওয়া যায় বৈকি।

কনার দিক থেকে আশ্বাস পেয়ে হাঁফ ছাড়লেন ভদ্রমহিলা,

“যাক খুশি হলাম।মাস খানেক পর আবার মত পাল্টিও না যেনো।”

“না আন্টি আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।আপনাদের আমাকে যতটা প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন আমার টিউশনির।আমি অন্তত এতো অল্পতে ক্লান্ত হবো না।”

“খুশি করলে মা।কৃতজ্ঞ থাকবো তোমার প্রতি।তোমার কোনো অসুবিধা হলে বা কোনো দরকার পড়লে বলো।দ্বিধা করো না কিন্তু।”

কনা হাসলো।মাথা নাড়লো একটু।ইশারা করে বললো,

“আচ্ছা আন্টি।ওইযে ও চলে এসেছে।আজ বেশী সময় লাগেনি দেখছি।”

মনার আজ একটু বিলম্ব কম হওয়ায় খুশি হলেন ভদ্রমহিলা।স্বস্তির শ্বাস ফেলে বললেন,

“হুম।সুবুদ্ধি হচ্ছে।তুমি ওকে পড়াও।আমি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নেই।বাতের ব্যাথাটা আজকাল যা ভোগাচ্ছে না?আহ!”

কোঁকাতে কোঁকাতে চলে গেলেন তিনি।সেদিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো কনা।মনাকে বই বের করে পড়ানো শুরু করলো।সপ্তাহ খানেক হলো এই টিউশনি পেয়েছে সে।তার আগে ঘটে গিয়েছে অনেক কাহিনি।জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক বিপর্যয়।কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে তাকে।পড়ানোর ফাঁকে সেই অতীতে ডুব দিলো সে।চোখে ভেসে উঠলো হসপিটালের সাদা পর্দা।ঠিক ওভাবে করে যেভাবে একদিন মনোয়ারা ও জিনাতের সৃষ্ট আ’ঘাতে জুবায়েরদের বাড়ি শেষ জ্ঞান হারিয়ে হসপিটালে গিয়ে জ্ঞান ফিরে পর্দাটা দেখেছিলো সে।হুট করে জন্ম হয়েছে এমন ভাবে সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থানে আবিষ্কার করেছিলো নিজেকে।অবশ্য তার সেই অপরিচিত স্থানে দু’টো পরিচিত মুখ ভেসেছিলো সেদিন।তার বাবা ও দাদীর চিন্তিত মুখ।মনোয়ারা ও জিনাতের অত্যা’চারে মেয়ে হসপিটালাইজড শুনে তড়িৎ ছুটে এসেছিলেন ওনারা।গুনগুনিয়ে কাঁদছিলেন মেয়ের এমন বেহাল দশা দেখে। ভেবেই নিয়েছিলেন কনার সন্তানটা ন’ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।তাদের একরোখা আচরণের জন্য কনাকে ওই দুর্দিন দেখতে হচ্ছে বলে অনুতাপ হচ্ছিল।কনা নিরব চোখে দেখে গিয়েছে ওদের আহাজারি, আফসোসের সুর। মাস খানেক আগের সেই নিষ্ঠুর সত্তা কারোর মাঝেই ছিলো না।নরম হয়ে গিয়েছে তারা।কনাকে ভাঙতে যেয়ে অনুতপ্ত হয়েছে নিজেদের কর্মে।কিন্তু অতটুকুতে গলে যেতে পারেনি কনা।তার মনে সৃষ্ট ক্ষত অতটুকু চোখের জলে, অতটুকু অনুতপ্ততায় সেড়ে ওঠেনি।বরং মনের দহন বৃদ্ধি করছিলো।ফলে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো সে।শক্ত মুখে দাদী ও বাবাকে বলেছিলো,

“এখানে এসেছো কেনো?তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই জানোনা?স্বার্থপর লোকেদের অহেতুক করুনা নিতে চাই না আমি। ফিরে যাও।”

মোকছেদ ও তার দাদী শুরুতে বিশ্বাস করতে পারেনি ওমন অবস্থাতেও কনা এসব বলবে।কনার দাদী হতভম্ব হয়ে বলেছিলো,

“এগুলো কি বলছিস তুই কনা?মানছি আমাদের ভুল হয়েছে।আমাদের জিদ করে তোকে ও বাড়ি রেখে আসাটা উচিত হয়নি।তাই বলে এভাবে বললি?”

“হ্যাঁ বলছি।কারণ সেদিন যদি তোমরা অনুচিত কাজ করো তবে আজ তোমাদের সাহায্য নেওয়াও আমার জন্য অনুচিত হবে।আমি তা করতে চাই না।আমাকে একবার যখন ত্যাগ করেছো। তখন আমি ত্যাগ হয়ে গিয়েছি। কোনো অবস্থায় গ্রহণ করতে চাইলে আমিও সায় দিবো এমনটা ভেবো না।”

মোকছেদ আহাম্মক হয়ে বলে,

“কিন্তু আমরা তো এভাবেই বলেছিলাম ওসব।তোর ভালোটা চেয়ে। তোর সংসার টিকিয়ে রাখতে!”

“আর আমি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে তোমাদের থেকে রেহাই চাইছি বাবা।দয়া করে লোক জড়ো করার আগে মুক্তি দাও আমাকে।বিদায় হও।”

মোকছেদ ও জরিনা বানু হয়তো তাতেও যেতেন না।আরেকটু বোঝাতে চেষ্টা করতেন।কিন্তু কনার শক্ত চোখ মুখ দেখে ও হসপিটালে এসে রুগীকে উত্তেজিত করতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চুপচাপ মেনে নিলো বিষয়টা।দুর্বলচিত্তে চলে গেলো দুজন।পরে আবারও বোঝাবে ভেবে।তার একটু পর ডাক্তার এলো।রিপোর্ট গুলো পর্যবেক্ষণ করে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললো,

“যেভাবে আঘা’ত পেয়েছেন ও যতটুকু র’ক্তক্ষ’রণ হয়েছে। তাতে ভেবেছিলাম আপনার গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ তা হয়নি।আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে বাচ্চা পেটে ঠিক আছে।এটা একটা মিরাকেল বলা চলে।তবে আপনাকে বিশ্রামে থাকতে হবে।আরও সাবধানে চলতে হবে।যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।”

সংবাদটা শুনে কি যে খুশি হয়েছিলো কনা তা বলে বোঝানো যাবে না।তার হৃদয়ের সকল আ’গুন নিভে গিয়েছিলো এই এক সংবাদে।তার বাচ্চা বেঁচে আছে।সে মা হবে।তার বাচ্চা এই দুনিয়ার মুখ দেখবে।এরচেয়ে আনন্দের সংবাদ আর কি হয়?যত যাইহোক মায়ের মন বলে কথা।

আরও দু দিন হসপিটালে থেকে তারপর রিলিজ পেয়েছিলো সে।এর মাঝে মুরাদ এসে টাকা পয়সা, ওষুধ পত্র যা যা দরকার সরবরাহ করেছে।কনার কাছে এসে একটু সময় কাটিয়েছে।লোকটাকে দেখলে ভীষণ মেজাজ চটে যেতো কনার।তবু নিরব ছিলো সে।কেনো ছিলো তা সে নিজেও জানে না।অতঃপর হসপিটাল থেকে মুক্তি পেলে শুরু হলো তার আরেক ভাবনা।বাসস্থান নিয়ে। জুবায়েরদের বাড়ি আর উঠবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে।বাবার বাড়িতেও আর যায়নি।অনেক ভেবেচিন্তে চলে এসেছিলো কলেজ হোস্টেলে।
সকলের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে।কাওকে জানায়নি তার এখানে আসার খবর।কেও তাকে খুঁজতে এখানে আসবেও না হয়তো।কেননা খোঁজ নেওয়ার মতো সম্পর্ক কারো সাথে যে তার নেই।

বিয়ের পর কনার এই হোস্টেলে একরাত থাকা না হলেও সিট ছেড়ে দিয়েছিলো না পরীক্ষার সময়ের চিন্তা করে।যা ওই মুহুর্তে তাকে সাহায্য করেছে।আর তার খাওয়া পড়ায় সাহায্য করছে এই টিউশনি।অগ্রিম বেতন দিয়ে মোটা অংকের টাকায় এই টিউশনি এ শহরে আসার সাতদিনের মাথাতেই পেয়ে গিয়েছে সে।মনার ঘুমকাতুরে স্বভাব ও মাথা বিশেষ ভালো না ছাড়া বিশেষ অসুবিধে তার হবে না।বরং এক টিউশনির টাকা দিয়েই তার মাস খরচ চলে যাবে বলে আল্লাহ প্রদত্ত সেরা সুযোগ ভাবে এটাকে।অতটুকু মানিয়ে না হয় সে একটু আধটু নিলোই।

কয়েকদিন পর আরও একটা টিউশনি ম্যানেজ করে ফেললো কনা।এই বাসার তিনতলায়।বেতন মনাদের চেয়ে খানিক কম দিবে তবে তাতে বেশ পুষিয়ে যাবে।মনাদের বেতন দিয়ে নিজের মাসিক খরচ ও পড়াশোনা এবং তাহিয়াদের দেওয়া বেতনটুকু সন্তানের জন্য জমাতে শুরু করবে সে।ডেলিভারি থেকে শুরু করে সন্তান লালন পালনের পুরো দায় দ্বায়িত্ব যে এখন শুধুই তার কাঁধে।
_______
দুপুরের আলস্য কাটিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বিকেলের কোলে।পথের ধারের মাচায় বসে রয়েছে পাড়ার চাচিরা।সামনের খোলা জমিকে মাঠ বানিয়ে ফুটবল খেলছে ছেলেপুলে।তাদের হৈ হৈ রৈ রৈ ধ্বনিতে বোঝার উপায় নেই কুয়াশা ঘন হয়ে গালে মুখে কা’মড় দিতে শুরু করেছে।একেকজনে ঘেমে নেয়ে একাকার।আনন্দ উল্লাসে সেই ঘাম শরীরে জমে বিন্দু মাত্র প্রভাবিত করতে পারছে না।এদেরকে দেখে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী বলে মনে হলো জেরিনের।ওই বয়সটায় সেও এমন সুখী ছিলো।যদিও মেয়ে হওয়ার দরুন ফুটবল খেলে নয়, তবুও শৈশব কৈশোর বেশ মুখরিত কেটেছে তার।ওই বয়সটাই হয়তো এমন।কারো অন্তরে কোনো ব্যা’থা দেয় না।কনকনে শীতে কুয়াশার আলতো কা’মড় খেয়ে জেরিন সদ্যই আবিষ্কার করলো এটা।তার মন বলে উঠলো শৈশব হলো সুখের বয়স। আর কৈশোর হলো সুখের রুপদান।আস্তেধীরে সুখে ভাটা পড়ে যায় যৌবনের পদার্পণে।ধীরে ধীরে বয়স যত বাড়ে সুখ ততই কমতে থাকে।জীবনে হানা দেয় দুঃখের স্রোত।এই স্রোতের বিপরীতে নিজেকে যারা ধরে রাখতে পারে তারাই জীবনের অর্থটা খুঁজে পায়।সাফল্য ছুঁয়ে দেয়।

জীবনের এ পর্যায়ে এসে সেই আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য খুঁজতে এই গ্রাম্য পথে হেঁটে চলেছে সে।সঙ্গে কেও নেই।ইচ্ছে করেই কাওকে নেয়নি।নিজের জন্য যখন বাঁচার তাগিদ, তখন অন্য কাওকে সঙ্গী করে কি হবে?
জেরিনের মনোভাব যদিও এমন তবে সঙ্গী তাকে করতেই হলো এ মুহুর্তে।একা পথে আসলেও যাওয়ার এ মুহুর্তে বিনা অনুমতিতে তার সঙ্গী হয়ে গেলো একজন পুরুষ কায়া।সেই একই রুপ সাদা পাঞ্জাবি, চোস্ত পাজামা ও গায়ে শাল জড়িয়ে হাজির হলো লোকটা।ওয়াসীর মীর্জা কোথা থেকে উড়ে এসে সহাস্য বদনে বললো,

“আরে ম্যাডাম যে।কি খবর?এই অবেলায় এখানে কি?”

জীবন নিয়ে যেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সে এই এক সপ্তাহ অতীত হলো করে আসছে তার বাস্তবায়ন করতেই জেরিনের এখানে হেঁটে আসা।যে বিষয়টা ওয়াসীরকে বলতে অনিচ্ছুক সে।ফলে এড়িয়ে গেলো ব্যাপারটা।পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লো,

“যদি বলি একই প্রশ্ন আমারও?”

বিচক্ষণ ওয়াসীর বুঝে গেলো জেরিন জবাব দিতে নারাজ।যদিও সে ব্যাপারটা এভাবেই জানতে পেরেছে।তাই ঘাটলো না আর।বললো,

“এই আসি নানান ব্যস্ততায়।তা এসে ভালোই হলো।
আপনার দর্শন মিলে গেলো।”

ওয়াসীর এর কথার কায়দা বেশ অন্যরকম লাগলো জেরিনের নিকট।ঠোঁটে চটচটে হাসি।জেরিন সুক্ষ্ম চোখে চেয়ে দেখলো এটা।গম্ভীর হয়ে বললো,

“আমার তো মনে হচ্ছে আমাকে দর্শন করতেই আপনার এখানে আগমন।”

তার কথার পৃষ্ঠে চমৎকার করে হাসলো ওয়াসীর।জেরিনের সন্দেহ প্রবল হলো।সাথে অস্বস্তিও বাড়তে লাগলো।লোকটা আজও অবিবাহিত।জীবনের এতোগুলা বছর পাড় করেছে তবুও বিয়ে করতে আগ্রহ দেখায়নি সে।এটা কেনো সেই ব্যাপারটা জানে বলেই ওয়াসীর এর সঙ্গ অপছন্দ জেরিনের।সেখানে ডিভোর্সি হয়ে এই নির্জন পথে সে লোককে সঙ্গী করে চলা মুশকিল।লোকে গল্প রটিয়ে দিবে।জেরিনের ইচ্ছে হলো লোকটিকে বলে যেনো তার সঙ্গে না হাঁটে।মুখের উপর এমন কথা বলা বেমানান বলে নিজেকে যথাসম্ভব ধাতস্থ রাখতে চেষ্টা করলো।গম্ভীর মুখে বললো,

“হাসছেন কেনো?”

হাসি সংবরণ করলো সে,“এমনি।”

সুক্ষ্ম চোখে তাকায় জেরিন,“জবাব দিলেন না?”

ভ্রু কুঁচকালো ওয়াসীর,“কিসের?”

“সত্যি বুঝতে পারছেন না?”

রসিকতা করে পাল্টা প্রশ্ন করলো ওয়াসীর,

“আপনি বুঝতে পারছেন তো?”

চোখমুখ থমথমে হলো এমন রসিকতায়।ওয়াসীর রহস্যময় হাসলো তা দেখে।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।পরক্ষণেই উদাস হয়ে বললো,

“আপনার বোধ হয় অস্বস্তি হচ্ছে ম্যাডাম।আমি না হয় একটু দাঁড়াই।আপনি এগিয়ে চলুন।….আর হ্যাঁ শুনুন, প্রকৃতি যদি চায় দেখা হবে।পথে, ঘাটে,মাঠে যত্রতত্র দেখা হবে।আপনি চান বা না চান বারবার দেখা হবে।মনকে সদা প্রস্তুত রাখুন।আমাদের ফের দেখা হবে।”

কথাগুলো আবেগঘন কণ্ঠে বলে স্মিত হাসলো পুরুষটা।দাঁড়িয়ে গেলো পথের কোনে।কুয়াশার ভীরে ঝাপসা করে দিয়ে এগিয়ে চললো জেরিন।ওয়াসীর এর তার অস্বস্তি বুঝে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা ভালো লাগলো।আর ওই বাক্যগুলো?কেমন যেনো বোধ করালো তাকে।সেটা হয়তো ভাষায় বোঝানো সম্ভব না।তবে মস্তিষ্কে তার বিচরণ চললো দীর্ঘক্ষন।ওয়াসীর থেকে গেলেও তার শেষ বাক্যগুলে সঙ্গী হলে জেরিনের। একদম বাড়ি পৌঁছানো অবধি।বাড়ির চৌকাঠে পা রাখলেও মস্তিষ্ক নড়ে উঠে বাজালো, “দেখা হবে।”

চলবে