শিরোনাম পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
270

#শিরোনাম
#পর্বসংখ্যা_১৪
#মুসফিরাত_জান্নাত

“বউ ছাড়া পাঁচ বছর কাটানো মুরাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।জান্নাতুল ভাবির বরটা যে বছর মা’রা গিয়েছে সে বছরই মেয়েটাকে বিয়ে করে আমার সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে সে।আমার সন্তান আমাকে ওরা দেয়নি জানেন?ওরা আমার সন্তানকে আমার পরিচয়ও দেয়নি।আমার সন্তানকে ওরা আসল মায়ের থেকে ছিনিয়ে রেখেছে।এর বিরুদ্ধে যে আইনী পদক্ষেপ নিবো তার জন্য পর্যাপ্ত অর্থও এখন আমাদের নেই।এদিকে আম্মার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।যখন তখন যায় যায় অবস্থা।চিকিৎসার অর্থ নেই।ভাইয়া চিরতরে পঙ্গু হয়েছে।ব্যবসা বানিজ্য নেই।জমিজমা মুরাদ শেষ করে গিয়েছে।ও সংসারে আমিই এখন একমাত্র উপার্জনক্ষম মেয়ে।অন্যের বাড়ি কাজ করে যতটুকু পাই তা দিয়ে পেট চালানোই দায়।ওদের চিকিৎসা করবো কি?…..”

জিনাত বলতে থাকলো এক এক করে।জেরিন নড়ে উঠলো এতক্ষণে।ভাবতেও পারেনি জিনাতদের কখনো এমন পরিস্থিতি হবে।যেই মেয়ে নিজের বাড়ির সব কাজ কাজের মেয়ে দিয়ে করাতো।সেই মেয়েই কিনা এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে?তাও কিনা পেট চালানোর দায় থেকে?ভাগ্য তাদের কোথায় এনে ফেললো?হাহ!জিনাত হাহ! ভাগ্যের এ কি পরিহাস ঘটলো তোমার সাথে?এই ছিলো তোমার কপালে?মনে মনে প্রমাদ গুনলো জেরিন।অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকলো জিনাতের দিকে।মেয়েটার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।আগের অহংকার তেজ সব চূর্ণ বিচূর্ণ। গরীব হালের পুরোটা মিশে গিয়েছে তার আচরণে।তাদের মতো করেই আত্মমর্যাদা বিলিয়ে সে খপ করে পায়ে লুটিয়ে পড়লো।হাউমাউ করে কেঁদে বললো,

“আমার মা আপনাকে দেখতে চায় আপা।মায়ের ধারণা আপনার সাথে করা অন্যায়ের জন্য আল্লাহ এই শাস্তি দিচ্ছেন ওনাকে।উনি অনুতপ্ত।আপনার হাত ধরে ক্ষমা চাইতে চায়।জীবনে যতটুকু পাপ করেছে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে তা উসুল করতে চায়।আপনি যাবেন কথা দিন।ফাঁসির কাষ্ঠের আসামীর মতো আমার মায়ের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করুন।আপনি তো আর কনা’র মতো নিষ্ঠুর না।মানবতা আছে আপনার।কনার সাথে যা হয়েছিলো তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিলো না।সেদিন কনা কেইস তুলে নিলে হয়তো আমার সংসার বাঁচতো।আমার সন্তান আমার কোলে থাকতো।কিন্তু ভাগ্য আমার দেখেন।জন্ম দেওয়া পর্যন্তই।তারপর কোনোদিনও সন্তানের মুখ দেখতে পেলাম না।মাতৃ পরিচয় পেলাম না।”

হু হু করে কেঁদে ওঠে সে।নিকাবে মুখ চেপে ধরে।পিঠ ফুলে ফুলে ওঠে। কান্নার দমকে শরীর কেঁপে ওঠে। জেরিন কি বলবে বুঝতে পারে না।জিনাতকে এ মুহুর্তে হয়তো স্বান্তনা দেওয়া দরকার।অন্য কেও হলে তাই করতো।কিন্তু সে দিচ্ছে না।কেননা এই স্বান্তনা আদৌ তার হৃদয় থেকে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সে।অহেতুক অভিনয় করে কি লাভ?মিথ্যা খোলস পরে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া।

জেরিন থমথমে মুখে কেবল বললো,

“আমি আপনাদের উপর কোনো অভিযোগ পুষে রাখিনি।আপনার আম্মার উপরও না।তিনি অহেতুক ভাবছেন এসব।যেখানে রাগ, ক্ষোভ, অভিযোগ কোনোটাই ধরে রাখিনি। সেখানে ক্ষমা চাওয়া অপ্রয়োজনীয়। আমার দীর্ঘশ্বাস আপনাদের উপর নেই।তাছাড়া পাপ ক্ষমা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলুন।একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই আমাদের শেষ ভরসা।ওনাকে বুঝিয়ে বলবেন।উনি আর আমার সাক্ষাৎ চাইবে না।”

জিনাত হতাশ হয়।কন্না জড়িত অবস্থায় আহত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“তারমানে আপনি যাবেন না?”

“নাহ।যে অতীত বহু কষ্টে মুছে দিয়েছি।সে অতীতের স্থানে এক সেকেন্ডের জন্য যেতে চাই না।আপনার আম্মাকেও অতীত সাক্ষাৎ চাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলুন।এতে কেবলই কষ্ট বাড়বে। কেবলই অনুশোচনা হবে।আর কিচ্ছু না।”

নির্দয় হয়ে বললো সে।জিনাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে পড়লো।চলে যাওয়ার আগে নিস্তেজ গলায় বললো,

“তবুও অপেক্ষায় থাকবো।যদি এতটুকু দিল নরম হয়ে দেখতে যান এই আশায়।ভালো থাকবেন।পারলে ক্ষমা করবেন।”

জেরিন তাৎক্ষনিক জবাব দেয় না।জিনাত দরজার কাছে গেলে কিছু একটা ভেবে পিছু ডাকে,

“শোনেন।অহেতুক আশা করবেন না।আমি কখনো যাবো না।আপনার মায়ের জন্য কোনো আর্থিক সাহায্য লাগলে আমাদের সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একটা দরখাস্ত করবেন।চিকিৎসার খরচ বাবদ কিছু টাকা পেয়ে যাবেন।আর কর্ম সংক্রান্ত কোনো সাহায্য চাইলে এখানে কাজ করতে পারেন।এতটুকু দয়া অন্তত আমি করতেই পারি।যেখানে আমার দুর্বল অবস্থায় আপনারা আঘাত করেছিলেন।সেখানে মানুষ হিসেবে আপনাদের দুর্বলতায় খুশি হতে পারছি না।সাহাযয়ের হাত উন্মুক্ত থাকলো।ভালো থাকবেন।”

জিনাত এ প্রস্তাবের জবাবে মলিন হাসে।জবাব না দিয়ে চলে যায়।জেরিন স্থির চোখে তার যাওয়া দেখে।ভাগ্য কখন কাকে কোন অবস্থায় ফেলে দেয় বলা মুশকিল।জুবায়ের-এর সাথে তার ডিভোর্স হওয়ার সময়ও কি সে ভেবেছিলো কখনো এমন করুন অবস্থায় দেখবে ওদের?জিনাতরাও হয়তো নিজেদের এমন পরিস্থিতি হবে ভাবেনি।ভাবলে এমন ভুল করার দুঃসাহস করতো না।করেছিলো বলেই আজ এই হাল।প্রকৃতির প্রতিশোধ যে কতোটা করুন তা কে বুঝবে?

জিনাত চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ কাজে মনোযোগ আনতে ব্যর্থ হলো জেরিন।তার মস্তিষ্ক জুড়ে চললো জিনাতের কথাগুলো।যত ঘৃণাই মনে পুষে থাকুক এককালে তাদেরকে ভালোবাসতো সে।জুবায়ের তার প্রথম ভালোবাসা ছিলো।কালের বিবর্তনে অতীত হলেও তা চরম সত্য।এজন্যই কিনা কে জানে, তাদের অবস্থার জন্য খারাপ তেমন না লাগলেও আফসোস হলো ভীষণ।তার জীবন সে গুছিয়ে নিয়েছে।ওদের সংসারে যতটা না ভালো ছিলো তারচেয়ে ভালো নিজের করে নিয়েছে।ওদের সংসারে যতটা না সুখে ছিলো তারচেয়ে অধিক সুখের জীবন পেয়েছে।অথচ জুবায়েররা?কেবল সন্তান সুখ পেতে গিয়ে সব হারিয়েছে। সব কিছু। জিনাত একটু আগেই বলে গেলো, যে সন্তানের জন্য এতকিছু সেই সন্তানটাও জুবায়ের-এর পাওয়া হলো না।কনা সত্যিই সন্তানটা দেয়নি জুবায়েরকে।মেয়েটা ডেলিভারির পরপরই জুবায়েরকে ডিভোর্স দিয়েছে।আর বছর খানেক পর অন্য কোথাও বিয়ে বসেছে।জুবায়ের-এর সন্তান এখন তাদের কাছে।সে সন্তানের পিতৃ পরিচয় কাগজে কলমে জুবায়ের পেলেও বাস্তবে পায়নি।জিনাতের মতো করে বঞ্চিত হয়েছে সে।আল্লাহ তায়ালা যার ভাগ্যে যা লেখেনি। তা জোর করে পেতে গেলেও কখনো পাওয়া হয় না।যা পাওয়া হয় তা নিজের ধ্বংসাবশেষ।হয়তো কোনো কোনো মানুষকে এই ধ্বংস থেকে রক্ষা করতেই আল্লাহ তায়ালা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেন।এই না দেওয়ার মাঝে কল্যান লিখে রাখেন।আমরা দেখতে পাই না বলেই এতো আফসোস করি।দেখতে পেলে তা করতাম না।কখনোই না।
_________
তখন সকাল সাতটা বেজে পনেরো মিনিট।চায়ের কাপ হাতে করিডোরে বেতের চেয়ারে বসে পত্রিকায় শিরোনামগুলো দেখছিলো জেরিন।আর একটু পর পর ওয়াশরুমের দিকে তাকাচ্ছিলো।পানির ঝিরি ঝিরি শব্দ ভেসে আসছে সেখান থেকে।ভেতরে একটি মানব গোছল করছে।তার বের হওয়ার পর একত্রে চা খাবে বলে এই দৃষ্টিপাত।একটু পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়েল মাথার দিয়ে বের হলো একটি পুরুষ মানুষ।লম্বা লম্বা পা ফেলে সোজা এগিয়ে এলো জেরিনের কাছে।ভেজা চুল থেকে টুপটাপ পানি মুখশ্রীতে ছড়িয়ে আছে।দেখতে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে।তার দিকে বিমোহিত চোখে তাকিয়ে থাকে জেরিন।এই মানুষটা তার নতুন জীবনসঙ্গী।নতুন করে তার জীবন শতরাঙা প্রজাপতির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছে এই মানব বছর খানেক হলো।নাম আরমান শায়ের।*** গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টির চেয়ারম্যান সে।পৈত্রিক সূত্রে পদটা পেয়েছে লোকটা।ব্যবসার মাধ্যমেই দু’জনের পরিচয়।অতঃপর মনের সাথে মনের কি এক অদৃশ্য টান।যেটাকে শেষ অবধি অস্বীকার করতে পারেনি জেরিন।তুলে দিয়েছে পরিণয়ের কাঠগড়ায়।বিয়ে করবে না করবে না বলে বিয়ে করে ফেলতে বাধ্য হয়েছে এই মানুষটাকে।

প্রেম,ভালোবাসা ও বিয়ে নিয়ে বিশ্বাস উঠে গিয়েছিলো জেরিনের।পুরুষ মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গিয়েছিলো।তা নতুন করে সৃষ্টি করেছে মানুষটা।তবুও বিয়েতে ভয় পেতো সে।যদি কখনো জুবায়ের এর মতো করে এ লোকটাও তাকে ঠকায়?লোকটা তো আরও অবিবাহিত।অথচ কিছু দিন যেতে না যেতেই জেরিন জানতে পেরেছিলো এ মানুষটার তাকে ঠকানোর প্রয়োজন নেই।তার অপূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রয়োজনীয়তা নেই।সন্তানের কোনো চাহিদা নেই।কেননা সে নিজেই অক্ষম বলে এতগুলো বছরেও বিয়ে করে নি।অতঃপর জেরিনের অতীত শুনে তাকে নিয়ে কল্পনা করেছে।এক বিকেলে রয়েসয়ে এক মোহনীয় পরিবেশে প্রস্তাব নিবেদন করেছে।অকপটে বলেছে নিজের অক্ষমতার কথা।এসব শুনে আআর না করেনি জেরিন।পারিবারিক সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দিয়েছে।

বিয়োগে বিয়োগে যেমন যোগ হয় তেমনি যোগ হয়েছে দুজন।ফলাফল হিসেবে পেয়েছে লোকটার এক বুক অকৃত্রিম ভালোবাসা।যার আচার আচরণে সর্বদা তা ফুটে থাকে।জেরিন এখন প্রায়ই তার জীবন নিয়ে ভাবে।লোকটার ভালোবাসা নিয়ে ভাবে।এতোটা নিখুঁতভাবেও কি কেও ভালোবাসতে পারে?নাকি নিজের খুঁত ঢাকতে ভালোবাসায় নিঁখুত ভাব টানে?জানে না জেরিন।তবে লোকটার ভালোবাসায় আটকে আছে সে এতটুকু জানে।যা ক্ষনে ক্ষনে তাকে জানিয়ে দেয় এই লোকটা।নিজের আচরণে,নিজের যত্নে।

তার দিকে এগিয়ে এসে আচমকা মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে শায়ের।চোখ টিপে বলে,

“দৃষ্টি দিয়ে খু’ন করবে নাকি?এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”

আচমকা প্রশ্নের ঝড়ে অপ্রস্তুত হলো জেরিন।নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে পত্রিকায় চোখ রেখে বললো,

“খবর পড়ছি।”

তার অপ্রস্তুত জবাবে হো হো করে হেসে উঠলো শায়ের।রসিকতা করে বললে,

“আমার চেহারায়?ইন্টারেস্টিং!”

তার কথার ধরনে লজ্জা পায় মেয়েটা।শায়ের তার গা ঘেঁষে পাশের চেয়ারে বসে। ফিসফিস করে বলে,

“অবশ্য তুমি চাইলে খবর আমি এমনিতেও তৈরী করতে পারি।যদি সে উদ্দেশ্য নিয়ে তাকিয়ে থাকো তাহলে…গোছল আরেকবার করতে হবে এই যা।” ঠোঁট কামড়ে বদমাইশি হাসলো সে।তার কথার গীতিকাব্য বুঝতে পেরে লজ্জিত হলো জেরিন।হুশিয়ার করে বললো,

“খবরদার এমন করবে না!”

না করতে করতেই তাকে কাছে টেনে নিলো পুরুষটা।অধরে অধর মিলিয়ে গভীর চুমু দিলো।লজ্জায় শরীর হিম হয়ে এলো জেরিনের।তা আড়াল করতে ছাড়া পেতেই মেকি শাসানির চোখে তাকায় সে।শায়ের হালকা হেসে বলে,

“নিষেধাজ্ঞার মাঝে প্রশ্রয় লুকায়িত ছিলো ম্যাডাম।এমনটা না করে উপায় ছিলো না।…এই এই ওভাবে তাকিয়ো না।এটা খবরের শিরোনাম ছিলো কেবল।ওভাবে তাকালে বিস্তারিত ঘটে যাবে।অথচ দুজনেরই অফিস যেতে হবে।আপাতত চুল মুছে দাও তো।”

আদুরে কণ্ঠে আবদার করে মাথার টাওয়েল জেরিনের দিকে এগিয়ে দিলো শায়ের।প্রায় প্রতিদিনই এমনটা করে সে।তার এই ছোটখাটো ব্যপার গুলো ভীষণ ভালোলাগায় জেরিনকে।বিশেষ অনুভব করায় মুহুর্তগুলোকে।কেমন সুখ সুখ লাগে।টাওয়েল হাতে নিয়ে শায়েরের মাথার চুল মুছতে নেয় সে।মনে মনে ভাবে যে জীবনে সে হুট করে পড়ে গিয়েছিলো।সেখান থেকে উঠে আসা মেয়ে হিসেবে তার কপালে সত্যিই এতোটা সুখ লেখা ছিলো?আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে তার।

মাথার চুল মোছা হয়ে গেলে জেরিনের চায়ের কাপ নিয়ে তাতে দুটো চুমুক দেয় শায়ের।তারপর টাওয়েল নিয়ে করিডরে মেলে দিয়ে কিচেনে যায়।নিজের চা নিজে ঢেলে না নিলে পোষাচ্ছে নাহ।

এর ফাঁকে পত্রিকায় নজর দেয় জেরিন।তার সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একটি অনাথাশ্রম আছে।সেই অনাথাশ্রমে কাল এক হাজার সদস্য পূর্ণ হয়েছে। তা উপলক্ষে একটা প্রোগ্রামও করা হয়েছে।কেক কেটে হুলস্থুল আয়োজনে উদযাপন করেছে বিষয়টা।এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায়।সে নিয়ে পড়তে ভীষণ ভালো লাগছে তার।এ দুনিয়ায় তার মতো অনেক মেয়ে আছে যারা সন্তান জন্ম দিতে পারে না বলে পরিবারে, সমাজে,সংসারে অবহেলিত।আবার অনেক সন্তানও আছে যাদের বাবা মা নেই বলে অবহেলিত।জেরিন বেছে বেছে ওই পিতৃ মাতৃহীন পথের শিশুগুলোকে তার অনাথাশ্রমে জায়গা দিয়েছে।জায়গা দিয়েছে সেসব গরীব ঘরের সন্তানদের যারা সন্তান জন্ম মানেই বোঝা মনে করে পালক দিয়ে দেয় বা এখানে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়।অনেক পাপের ফসলও হবে হয়তো ডাস্টবিন বা যত্রতত্র ফেলে রাখা শিশু থাকে।এমন শিশুদেরও নিজের আশ্রমে নিয়েছে সে।অন্য কারোর পাপের ফসল হলেও সন্তানগুলে তো আর পাপ নয়।তার নিষ্পাপ একেকটা প্রাণ।যাদের ধ্বংস করাও আরেকটা পাপ।জেরিন এপ্রুভ করেছিলো তাদেরকে।বছর তিন হলো তার এই আশ্রম চালু হয়।আর এই তিন বছরেই তা হাজার সদস্য ছুঁয়ে দেয়।এদের একেকটাকে নিজের সন্তান রুপে পরিচয় দেয় জেরিন।সটিভির খবরে পত্রিকায় এটাকেই ফোকাস করে শিরোনাম করা হয়েছে।

“হাজার সন্তানের জননী হলেন দেশের অন্যতম গার্মেটস “প্রমীলা লিমিটেড” এর মালকিন জেরিন তাসনিম।”

এই হেডলাইনটা দেখতে এত আদুরে লাগছে জেরিনের তা লিখে প্রকাশ করার নয়।নিজের অক্ষমতা হাজার গুনে সক্ষম হয়ে ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।জন্ম না দিলেও যে মা হওয়া যায়,মা হওয়ার আনন্দ পাওয়া যায়। তা অনুভব করছিলো সে।অনেকগুলো পত্রিকা মেলে ওই শিরোনামটাতেই চোখ বুলালো সে।এর ফাঁকে কালবেলা পত্রিকায় আকষ্মিক এক অন্য শিরোনামে চোখ পড়লো তার-

“সাত বছরের পুত্রের হাতে খু’ন হলেন ***পুর গ্রামের জুবায়ের…”

আচমকা চোখ আটকে যায় জেরিনের।আঁতকে উঠে সে।তড়িৎ বিষয়বস্তু পড়তে শুরু করে দেয়।নিচেই লেখা হয়েছে –

“যে সন্তান পেতে গোপনে করেছিলেন দ্বিতীয় বিয়ে, পঙ্গু অবস্থায় করেছেন সাত বছরের কারাভোগ।সেই সন্তানের হাতেই এবারে খু’ন হতে হলো ***পুর গ্রামের জুবায়েরকে(৩৮)।এই সন্তানের মা ফারজানা ইয়াসমিন কনা (৩১) ডেলিভারীর পরপরই জুবায়েরকে তালাক দিয়ে করেছেন দ্বিতীয় বিয়ে।সন্তানকে নিয়ে নতুন সংসারে সুখেই বসবাস ছিলো ওনার।জুবায়ের এর মুক্তির পর বাঁধে ঝামেলা।নিজের সন্তানকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিতে চায় জুবায়ের।এ নিয়ে উভয় পক্ষে চলে ঝামেলা।মামলা মোকদ্দমা করার টাকা না থাকায় তা এড়িয়ে যান জুবায়ের। আটেন আরেক ফন্দি। সোমবার বিকেলে লুকিয়ে সন্তানের সাথে দেখা করতে গিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে তাকে নিজের গ্রামের বাড়ি অবধি নিয়ে যান তিনি।রাত নামলে ঘটে বিপত্তি।মাকে ছাড়া সাত বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তান কিছুতেই থাকতে রাজী হয় না।এদিকে রাতের বেলায় তাকে ফিরিয়ে দেওয়াও সম্ভব হয় না জুবায়ের এর পক্ষে।মা কনা বিকেল থেকে নানার জায়গায় সন্তানের খোঁজ চালায়।রাতের বেলায় তাকে কল দিয়ে সত্যিটা জানায় জুবায়ের।কনা সন্তানকে নিতে গ্রামের পথে রওয়ানা দেয় তখনই। এর মাঝেই এক পর্যায়ে মাথা বিগড়ে যায় অবুঝ শিশুটির।ঘরের আসবাব ঘেঁটে দা বের করে তা দিয়ে কু’পিয়ে হ’ত্যা করেন পঙ্গু পিতাকে।ঠেকাতে এলে তার দাদী ও ফুপিকে করেছেন চরম জখম।এ নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে পুরো গ্রাম।থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি বলেছেন,

“জুবায়ের এর সন্তান মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো।দীর্ঘ দিন হলো চিকিৎসা চলছিলো ওর।সেদিন রাতে ওষুধ না খাওয়ায় ও মায়ের অনুপস্থিতিতে মাথা বিগড়ে যায় বাচ্চার।ফলে ঘটে যায় এই খুনের ঘটনা ।আপাতত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।এ নিয়ে তদন্ত চলছে।বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”

সমাপ্ত