শিশিরে ভেজা আলতা পর্ব-১৭+১৮

0
408

#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা

১৭.

শরতের ভোরে ভাতের মাড়ের মত ঘন ফ্যাকাশে কুয়াশায় ঢাকা শীতল প্রকৃতিতে টুপটাপ ঝরে পরা শিউলিতে ঘরের পেছন সবুজ ঘাসের আঙিনা সবুজ গালিচায় সাদা,কমলার কারুকার্য। দু চোখ ভরে ঝাপসা প্রকৃতিকে আরও ঝাপসা চোখের দেখার মধ্যেও নিজেকে ভীষণভাবে উপলব্ধি করার ভাগ্যটা যেন এক পরম সুখ-দুঃখের মিশ্র ভাগ্য। আর এই ভাগ্যটা ক’জনের হতে পারে! এমন সু কিংবা দূর্ভাগ্য আর কারও হোক বা না হোক সোহার হয়েছে, হচ্ছেও বলা যায়। এইতো এখনও চোখের সামনে হাত দুয়ের দূরত্বেই তার পছন্দের ব্যক্তিটি তার একান্ত এক তরফা ভালোবাসার মানুষটি শক্ত চোয়ালে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এইতো প্রথম এই মানুষটির পূর্ণ দৃষ্টি স্থাপিত হয়েছে তার ওপর যা সে বহুদিন ধরে চেয়ে এসেছে। কাল সন্ধ্যের সেই নৌকায় বসা তরুণীর পায়ে নুপুর পরার মুহূর্ত বন্দী করা ছবিটি দেখেছিলো শরত। অনাকাঙ্খিত হলেও একটি কথা নিদারুণ সত্যি সে মুহূর্তে বিনা মেঘে ভালো লাগার এক পশলা বৃষ্টি তার বুকের গহীনে বড্ড গোপনে ঝরেছিল। শরতের হিম হাওয়ার দৈবাৎ এক শীতল ঝাপটা লেগেছিল তার চোখেমুখেও কিন্তু সে সময়টা ছিল ক্ষীণ। নিরবচ্ছিন্ন এক বিষাদমাখা অতীত তার অতি সাধারণ মনটাকে আগেই ধ্বং*স করে গেছে। যে খেলেছিল ধ্বং*সলীলা সেই মানবী সেই মন পাতালের রমনীটিকে সে ভালো বেসেছিল আকাশসম, সমুদ্র তুলনীয় অসীম অফুরন্ত। অলির মত করে আর সে কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারবে না বলেই তার মন ঘোষণা দিয়েছে। জানান দিয়েছে তাকে এ জীবনে আর কখনও ভালোবাসার পথে পা মাড়ানো তার জন্য নি*ষিদ্ধ। এ পথে যাওয়ার ক্ষমতা তার শেষ হয়ে গেছে শেষ অব্দি যাওয়ার আগেই। কাল সন্ধ্যেতে অনুর পাঠানো সোহার ছবিগুলো দেখে থমকেছিল সেকেন্ড কয়েক। তার ব্যক্তিত্ব শীতল তবে কঠোর। সে মুহূর্তেই ফোনটাকে পকেটবন্দী করে নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সোহা তাকে পছন্দ করে এ কথা তার জানা হয়ে গেছে অনেক আগেই। মেয়েটা তার প্রতি নিজের দূর্বলতা মাত্র দু সাক্ষাতেই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু সে অপারগ হাজারো কারণে। আজও শরত প্রতিদিনকার মত ভোরে ফজর পড়তে গিয়েছিল কাকার সাথেই। আহসান নামাজের পর বেশ কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করে শরতও করে মাঝেমাঝে। আজ ইচ্ছে হয়নি বলেই সে বাড়ি ফিরেছিলো তখনও পাড়া জুড়ে নিস্তব্ধতায় কুয়াশামাখা। টিনের গেইট ঠেলে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই তার চোখ যায় শিশিরদের ঘরের উত্তর দিকটাতে। কুয়াশার ঘনত্ব এতোই যে হাত বিশেক দূরের সেই ঘরের কোণটাও ঝাপসা লাগছে তবে আবছা চোখে পড়ছে সেখানে শিউলি গাছটার কাছে কেউ বসে আছে। কৌতূহলী হয়েই সে পা বাড়িয়েছিলো সেদিকটাতে। তার পায়ের অল্প শব্দেই গাছের নিচে বসা মানুষটি ফিরে তাকালো আর সাথে সাথে উঠেও দাঁড়ালো। আর একটু কাছাকাছি হতেই শরত দেখতে পেলো সোহা দাঁড়িয়ে আছে। মুঠো ভর্তি তার শুভ্র শিউলি ফুল। শীতে কাবু হয়ে শাল চাদরে ঘোমটা দিয়ে জুবুথুবু হয়ে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছিলো সোহা তা বুঝতে পেরেই শরত ফিরে যাচ্ছিলো। তখনই সোহা ডেকে উঠলো বড় করুণ কণ্ঠে, “শুনুন”

শরত ফিরে তাকাতে চাইলো না। পা থেমেছে তার তবুও ফিরে তাকায়নি তা দেখেই সোহা আবার বলল, “একটু ফিরবেন এদিকে।”

কি যে করুণ, কি যে ভার লাগলো সেই কণ্ঠস্বর তা বুঝি শরত কখনো ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। সে ফিরে তাকালো একটুখানি সামনে এগিয়েও গেল। সোহা মাথা নিচু করে হাতের মুঠোয় রাখা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বড্ড জড়তা নিয়েই বলল, “আজ রাতেই চলে যাব আমরা।”

“হুম, জানি।”

শরত জবাব দিলো। সাথে সাথেই সোহা চোখ তুলে দেখলো একবার শরতকে। তারপরই আবারও দৃষ্টি নত করল, “আমার কিছু বলার ছিলো আপনাকে।”

“আমা…” শরত কিছু বলতে চাইলে থামিয়ে দিল সোহা।

“প্লিজ আমি আগে সবটা বলতে চাই তারপর না হয় আপনি বলবেন। ঠিক বলা নয় জবাব দিয়েন।”
সোহা এইটুকু বলে আবারও একবার শরতের মুখপানে চেয়ে নিলো। পুনরায় বলা শুরু করলো, “আমি জন্ম থেকেই শহুরে মেয়ে তবে জন্মসূত্র আমার গ্রাম৷ মানে আমার দাদারবাড়ি গ্রামে কিন্তু বাবা সরকারী চাকুরি করে সেই সুবাদে জন্ম, বেড়ে ওঠা সবটাই শহরে। এসব কেন বলছি আমি জানি না কিন্তু মনে হলো আমাকে শহুরে মেয়ে ভেবে যদি মিশতে না চান তাই বোধহয় বলে ফেলেছি। আমার, আমি না মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি শরত।”

সোহা থেমে গেল। সে কথাগুলো কখনো এভাবে তো বলতে চায়নি শরতকে তবুও কেন এমন এলোমেলোভাবে বলল! নিজের আচরণে সে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছে বলেই হয়ত, খেয়াল করেনি তার এই বলা কথাগুলোতে সামনে দাঁড়ানো মানুষটা কতোটা অবাক হয়েছে। সে দৃষ্টি নত রেখেছে বলেই দেখতে পায়নি শরতের বিবশ হওয়া মুখশ্রী। কিছু সময় তার লেগেছে নিজেকে ধাতস্থ করতে ততক্ষণে শরতের চেহারা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সে তার স্বভাবসুলভ শান্ত স্বরে ঠিক দৃঢ় আর রূঢ়ভাবে বলল, “কাউকে এক কিংবা দুই দেখায় যখন ভালো লাগে তখন সেই ভালো লাগাকে পাত্তা দিতে হয় না৷ আর ভালো লাগার মানুষটার সাথে যদি পরিবেশ, পরিস্থিতির সামঞ্জস্যতা যদি না থাকে তবে তো নয়ই। আমার যদি ভুল না হয় তবে তুমি প্রায় শিশিরের সমবয়সীই হবে। একুশ,বাইশ বছর বয়সী একটা মেয়ে একেবারেই ম্যাচিউরড হবে না তা ভাবা বোকামি সেক্ষেত্রে তুমিও নও।আর এই তিনদিনে যেটুকু দেখেছি তাতে তো বলা যায় আমাদের আলতা বা তোমার বান্ধবী অনুর চেয়েও যথেষ্ট ম্যাচিউরড তুমি। অন্তত তেমন আচরণই দেখেছি তোমার সেক্ষেত্রে বলব এখন এই মুহুর্ত থেকেই তোমার এই মনোভাবনাটাতে লাগাম টেনে নাও নিজেই উপকৃত হবে।”

শরত এই পর্যন্ত বলে পা বাড়াচ্ছিলো ঘরে যাবে বলে। কিন্তু সোহা সে মুহূর্তে বলে উঠলো, “আর যদি বলি এই উপকারটা আমি চাই না।”

“নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

“সেই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ কি!”

“নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব আর মনের দহন।”

“আপনিও কি সেই দহনে জ্বলছেন?”

“জেনে কি হবে?”

“যদি বলি আমি আপনার জ্বলনে মলম হবো।”

শরত পুনর্বার ফিরে তাকালো, ফিচেল হেসে জবাব দিলো, “শহরে ফিরে যাও দ্বিতীয়বার এ গ্রামের পথে পা বাড়িয়ো না।”
কথাটা শেষ করেই শরত চলে গেছে সেই থেকেই ঝাপসা চোখে কুঁকড়ানো শীতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সোহা। অনুর এখনো ঘুম ভাঙেনি বলেই সে জানতে পারলো না তার প্রিয় বান্ধবীটির এই মন ভাঙার ঘটনাটা।

আজ রাতেই আলতা ঢাকা চলে যাবে এ কথা আওলাদ জানে। তার তো ভাগ্য নেই প্রতিদিন মেয়েটাকে চোখের সামনে পাওয়ার তাই আজ আবার আসবে একবার ভেবে নিয়েছে। কিন্তু আলতাকে ফোন করতেই সে বলল, “আব্বা আসেন আমিও চাই আপনারে দেখে যাইতে কিন্তু আপনি আবারও যদি টাকা পয়সা নিয়া আসেন তাহলে দেখা করবোই না।”

আওলাদ হেসে মেয়েকে বলল, ট্যাকা পয়সা তো দরকারি জিনিস রে মা৷ দূরে থাকবি কোন সময় কি লাগে তহন তো লগে লগেই দিতে পারুম না।”

“যতটুকু না হইলে একেবারেই চলে না ততটুকু তো আপনি আগেই দিছেন আব্বা আর আম্মাও দিছে। দরকার পড়ার আগেই আমি আবার সময়মত চাইবো তখন দিয়েন!”

মেয়ের এমন বড়দের মত বলা কথা শুনে আওলাদের মন প্রফুল্ল হলো। সে আর কথা বাড়ায়নি কিন্তু এটা তার জন্যই ভালো হয়েছে। আজও সে দুই হাজার টাকা আনবে ঠিক করেছিলো কিন্তু টাকাটা তাকে ধার নিতে হতো। কালই ফার্মের আনাজপাতি কিনে হাতের টাকাগুলো শেষ হয়েছে। আপাতত সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মাছ কিংবা খামারের মুরগিও বিক্রি হবে না। আর দুধের টাকা সে মাসিক হিসাবে পায়। একটা জিনিস আওলাদ লক্ষ্য করেছে যখন সে মাসে হাজার দশেক টাকা ইনকাম করতো তখন সে টাকাতেই স্বচ্ছলভাবে সংসার চলত। তারপর আয় বাড়লো সাথে কি করে কি করে যেন খরচও বেড়ে গেল। সেই বেড়ে যাওয়া এখন দ্বিগুণ হয়েছে। মাঝেমাঝে তো একদম হাসফাস করতে থাকে সে হাত খালি হলে। আজ আবার হাঁটবার তাই সে আলতার সাথে কথা শেষ করে ফোন পকেটে পুরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তার ধারণা সত্যি এই যে সে এখন তার একমাত্র কন্যাটির সাথে কথা বলছিলো তখন তার এই স্ত্রীর বড় ধারালো চোখে তাকে দেখছিলো। এখনও সেই ধার মহিলার চোখে মুখে স্পষ্ট আর তা উপেক্ষা করেই আওলাদ বলল, “বাজারের ব্যাগ দেও আর বাজার সদাই কি কি লাগবো জলদি কও।”

আওলাদের স্ত্রীর তার কথা শেষ হতেই মুখ ঝামটি মে*রে বলল, “ক্যান ওই বউয়ের মাইয়ারে দেখতে যাওনের কি দেরি হইয়া যাইতাছে!”

আওলাদ কর্ণপাত করলো না এ কথার। মহিলার ভরণপোষণের কিছুতেই কমতি রাখছে না সে তবুও সন্দেহ করা ছাড়লো না। করুক সন্দেহ সে যত পারে আওলাদের কি! সে তো ছেলে দুটোর মত মেয়েটারও দ্বায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করবে। এমনিতেই তো পনেরো, ষোলো বছর দেরি হয়ে গেছে নিজের কন্যার দ্বায়িত্ব নিতে এরপর আর কয়টা বছর তারপর আবার অন্যকারো দ্বায়িত্ব হয়ে যাবে। বাবার জীবনে কন্যারা যে কত বড় নিয়ামত তা কি অন্যরা বোঝে!

সকালে নাশতার পর থেকে আলতা লেপ্টে আছে তার মায়ের সাথে। আজ চলে গেলে এই উষ্ণ আদর সে আবার কতোটা দিন পাবে না তার কি ঠিক আছে! তাই যেন এভাবে মায়ের শরীরে মিশে মায়ের আদর, উষ্ণতা আর ভালোবাসাগুলো শুষে নিচ্ছে নিজের দেহে। নকশি কতবার তাকে সরিয়ে একটু রান্নাঘরে যেতে চাইলো কিন্তু আলতা সরলো না। টানা দুটো ঘন্টা একইভাবে কখনো মায়ের পা দুটো জড়িয়ে শুয়ে রইলো কখনোবা কোমর জড়িয়ে। নকশি সেই যে বালিশে হেলান দিয়ে আছে সেভাবেই কখনো পা লম্বা করছে কখনো হাঁটু মুড়িয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আলতার তাতে হেলদোল নেই। তার হেলদোল ফিরলো যখন জহির ঘরে এলো কোন প্রয়োজনে। তাকে দেখেই আলতা মাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। জহির বোধহয় নাশতার পরে দেখে গিয়েছিলো আলতাকে এভাবে আবার এখন ফিরেও সেরকম থেকে সোজা হতে দেখে বুঝলো মেয়েটা তাকে দেখেই সংকোচে উঠে বসেছে। তাই সে নিজে এসে দাঁড়ালো খাটের পাশে যে দিকটায় আলতা ছিল৷ আলতার মাথায় সে একটা হাত রেখে বলল, “আমাকে হয়ত বাবা বলে ভাবতে পারবি না, পারতে হবে তাও বলবো না। আওলাদ মিয়া তোর আব্বা সেই তোর আব্বা থাকবে সারাজীবন। কিন্তু আমি তো তোকে তোর জন্মের পর থেকেই চিনি খুব বেশি না একটু আকটু কোলেপিঠেও নিছি। বিশ্বাস না হয় আহসানরে জিজ্ঞেস করিস। ও যখন তোকে কাঁধে চড়াইয়া বাজারে নিতো, পুকুরে সাঁতার শিখাইতো আমিও কিন্তু তখন তোকে নিছি। তোর মনে নাই হয়ত তুই যখন মারবেল নিয়া খেলতি তখন আমিও মাঝেমধ্যে যোগ দিতাম খেলায়। তখন আবার চাকরি, ব্যবসা কিছুই ঠিকঠাক করতাম না তাই আরকি!”

কথার শেষের দিকে একটুহেসে সে ফেলল জহির৷ তারপর আবার বলল, আমার কাছে তুই আমার সন্তানের চেয়ে কম না। শরত, শিশিররে তো দেখিস কি আদর, স্নেহ করি তোকেও তেমনই করি। তোর আম্মার জন্য না আহসানের জন্যই করি৷ আমাকে দেইখা তুই এমন গুটাইয়া থাকলে, সংকোচ করলে আমার খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আগে যেমন থাকতি এখনও তেমন থাক না মা, আশপাশের লোকের মুখে হয়ত সৎ বাবা, পর কেউ আমি এসব কথা শুনিস কিন্তু সেইসব কানে নিস না আলতা আগে যেমন তোর জহির কাকা ছিলাম এখনও তোর জন্য আমি তাই।” কথাটা শেষ করেই জহির হাত সরিয়ে নিলো আলতার মাথা থেকে। আলতারও খারাপ লাগছে এখন৷ সত্যিই সে আগে জহিরকে একরকম দেখতো অথচ মায়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই সে জহিরকে আর আগের মত মনে করে না। না চাইতেও এক অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে। শুধু মনে হয়েছিলো বাবার জায়গাটা ওই লোক নিজের নাম করে নিয়েছে ভেবেই এই দূরত্ব। এই মানুষটার স্নেহ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই সে নিজেকে সরিয়ে রেখেছে। জহির ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই আলতা নকশিকে বলল, “আম্মা দুপুরের রান্না আজকে আমি করি!”

চলবে

#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
১৮.

চারটা দিন কিভাবে যে কেটে গেছে কেউ টেরই পেলো না। আনন্দের সময় যেন দ্রুতই পালিয়ে যায় অথচ দুঃখ, যন্ত্রণার মুহূর্তগুলো কচ্ছপের মত শ্লথ পায়ে এগোয়। সকালের কুয়াশামাখা যে ঝড় সোহার ভেতরে বয়ে গেছে তা তাকে আর বেশিক্ষণ থাকতে দিতে চাইছে না এ গ্রামে। পদ্মাদিঘি গ্রামটা তার যার জন্য এত প্রিয় হয়েছিলো সেই মানুষটির সামনে পড়ার ভয়েই এখন এ গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে তার। শরত মুখের ওপর বুঝিয়ে দিয়েছে তার জবাব। এখন খুব আফসোস হচ্ছে সোহার কেন সে বেহায়ার মত নিজের অনুভূতির প্রকাশ করলো! ওই লোকটা শুধু শান্ত আর নীরবই নয় দাম্ভিকও মনে হচ্ছে এখন তার। সকালে শরতের সাথে হওয়া কথার পর আর শিশিরদের ঘর থেকে বের হয়নি। দুপুরের দিকে অনু খুব জোর করলো একটু হাঁটতে বের হবে বলে। মাথাব্যথার বাহানা করে সোহা বের হয়নি। আলতা এসেছিলো একেবারে দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর। আজ সে মায়ের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে করে দু পদের তরকারি আর ভাত রান্না করেছে। জীবনে প্রথমবার কোন রান্না করবে তা সে মামাকে খাওয়াবে না তা কি করে হয়! তাই সে যখন রান্নার পর তরকারি বাটিতে বাড়লো তখনই নকশি শিশিরকে ফোন করে বলল একটু আসতে। ইচ্ছে করেই আলতাকে দিয়ে পাঠায়নি নইলে আজ আর আলতার এ বাড়ি খাওয়া হতো না। ও বাড়িতে বড় মামী, শিফা মামী দুজনেই জোর করতো সেখানে খেতে। শিশির যখন নকশিদের বাড়ি এলো আলতা তখন সবে গোসল সেরে কলপাড় থেকে বেরিয়েছে। হাতে তার ভেজা কাপড়গুলো থাকায় সে শিশিরের দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ চিকন তারে কাপড় শুকানোর বাহানায় ব্যস্ত রইলো। শিশির উঠোনের কোণে দাঁড়িয়ে দেখলো সবটা। আবার দেখলো ফুপুআম্মা কোথায় আছে। তখনই চোখে পড়লো নকশির হাতে কাপড় সে কলপাড়ে ঢুকছে গোসল করবে বলে। শিশিরকে দেখেই বলল, “আব্বা ঘরে যেয়ে বসো একটু। আলতা রান্নাঘরে দ্যাখ তরকারির ঢাকনাওয়ালা বক্সটা আছে শিশিরকে দে। এখন তোর যাইতে হবে না ও বাড়ি নইলে ভাবীরা ওখানেই খাওয়াবে জোর করে।”

কথাটা বলতে বলতেই নকশি গোসলের জন্য কলপাড়ে ঢুকে টিনের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। শিশির তখনও আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে একমনে আলতাকে দেখে চলছে৷ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময় নিয়ে আলতা কাপড় মেলে দিলো। সত্যি বলতে তার কাল সন্ধ্যের পর থেকেই খুব অস্বস্তি লাগছে। শিশির ভাই কি বদলে গেছে খুব! কালকের আগ পর্যন্ত এতো বেশি উগ্র লাগেনি তার শিশির ভাইকে৷ হ্যাঁ জীবনে প্রথমবার শিশির ভাই তাকে ছুঁয়েছিল ভিন্ন কোন অনুভূতি নিয়ে সেদিন আলতা একদমই অপরিচিত ছিল এই স্পর্শ থেকে কিন্তু কালকের সেই আদেশপূর্ণ আচরণে মুঠো ভর্তি চুড়ি পরানো কিংবা পা ভর্তি আলতা মাখিয়ে দেওয়া সে স্পর্শে আদুরে এক অনুভূতি হয়েছে আলতার। যা তার কিশোরী মন বড় আবেগে গ্রহণ করেছিলো সেই সাথে পাহাড়সমান লজ্জায় রঙিন হয়েছিলো। আর সে কারণেই বোধহয় মানুষটার আজকের আগমন তাকে আড়ষ্ট করে তুলছিলো। মনে মনে সে আম্মার ওপর বিরক্ত হলো, তরকারির বক্সটা নিজেই তো পারতো শিশির ভাইয়ের হাতে তুলে দিতে। আলতাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিশির এগিয়ে এলো তার সামনে।

“জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতেছিস নাকি! ফুপুআম্মা কি বলছে শুনিস নাই?”

আর দাঁড়ানো যাবে না ভেবে আলতা পা বাড়ালো ঘরের দিকে তখনই টান পড়লো বা হাতে। আলতা ভয়ে শিউরে উঠলো আর তা দেখে তৎক্ষনাৎ তার হাত ছেড়ে দিলো শিশির। সে খেয়াল করলো আলতার হাতের পশম দাঁড়িয়ে গেছে ভয়ে। সে ভড়কে গিয়েই প্রশ্ন করলো, কি হয়েছে আলতা তোর গা শিউরে উঠলো কেন?”

আলতা মুখ খুলল না তবে তার মুখ জুড়ে কেমন আতঙ্ক স্পষ্ট হলো। শিশির কয়েক সেকেন্ড তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তরকারির বাটিটা নিয়ে আয়। আর বাসের টিকিট রাত দশটার নয়টায় তৈরি হয়ে থাকবি।”

শিশিরের কথা শেষ হতেই আলতা রান্নাঘরে গেল। তরকারির বক্সটা এনে শিশিরকে দিতেই সে চুপচাপ চলে গেল সেখান থেকে৷ সন্ধ্যের সময় আওলাদ এলো আলতার সাথে দেখা করতে। আওলাদ শিশিরদের বাড়িই এসেছে মেয়েকে দেখতে। নকশির শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার মত মন মানসিকতা তার নেই আর না নকশির মুখোমুখি হওয়ার। মন এখনও তার নকশির নামে চিনচিনিয়ে ব্যথায় মজে তাই ইচ্ছে করেই এড়িয়ে চলে এই সুযোগগুলো। আর তার উপস্থিতি জহিরেরও খারাপ লাগতে পারে ভেবেও সে আলতাকে ফোন করে বলেছে, তোর মামার বাড়ি আয় আমি সেইখানেই আছি।

আলতা এসে দেখলো তার আব্বা আহসান মামার সাথে ঘরের সামনে উঠোনের দক্ষিণে চেয়ারে বসে গল্প করছে। বাইরের রান্নাঘরে বসে শিফা মামী পুলি পিঠা আর বড় মামী ভাপা পিঠা বানাচ্ছেন। এখন বুঝতে পারলো আলতা মামী তাকে জরুরি তলবে কেন আসতে বলেছে এখানে। একে তো আব্বা আসছেন দ্বিতীয়ত আব্বার সেদিনের দেওয়া চালের, গুঁড়ো, গুড় সবই তো রয়ে গেছে সেগুলোর পিঠা পুলি বানিয়ে খাওয়াবে আজ। আলতা বাড়ির ভেতর আসার পরই সকলের দৃষ্টি তার দিকে ছিলো। সেও দেখলো শরত ভাই আর শিশির ভাই ছাড়া বাকি সবাই আছে এতে তার যেন স্বস্তি হলো। কি যে হলো কাল থেকে কে জানে, যখন তখন বুকের ভেতর ধুকপুকানি এক রোগ দেখা দেয়। শিশির ভাইকে দেখা তো পরের কথা নামটা শুনতেই তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। জয়তুনই প্রথমে ডাকলো, “উঠানে খাড়াইয়া আছোস ক্যান! এইহানে আয় পিডাগুলা গরম গরম খাইয়া নে। তোর লাইগা ওরাও কেউ খায় নাই অহনও।”

জয়তুন শেষের কথাটা সোহা, অনুকে দেখিয়ে বলেছেন। আলতা এগিয়ে এসে আব্বার সাথে কথা বলে রান্নাঘরে ঢুকলো। মোটামুটি রকম বড় হওয়ায় এই মাটির রান্নাঘরটিতে একপাশে তিন-চারজন বসতে পারে। কাঠের পিঁড়ি পেতে বসেছে আলতা, সোহা, অনু। আর চুলার সামনে বসা জয়তুন আর শিফা একের পর এক পিঠা চুলা থেকে নামিয়ে তাদের সামনে দিলো। একটু আধটু খাওয়া চলছে তাদের সাথে গল্প। আওলাদও মেয়েকে এটা সেটা বলছে আবার আহসানও কিছু বলছে। কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে শিশির এসে উপস্থিত হলো। সবার দিকে একবার তাকিয়ে শুধু বলল, “ভাই বাড়ি নাই?”

“ও কি এই সময় বাড়ি থাকে! দোকানে দেখে আসিস নাই?” আহসান জবাব দিলো। শিশির বলল, ” আমি বাজারের দিকে যাইনি। অপুর আম্মা ক্ষীর রান্না করছিলো বলল খেয়ে যা তাই ওদিকে ছিলাম।”

জয়তুন শুনে বলল, বন্ধুর বাড়ি ক্ষীর খাইতে যাওয়া লাগলো ক্যা। বাড়িতে কইতে পারোস নাই আমরা রাইন্ধা খাওয়াইতাম। আর শরতরে খুঁজলি ক্যা!”

জয়তুনের কণ্ঠ কেমন ঝাঁঝালো শোনালো। শিশির অবাক হয়ে গেল জেঠির আচরণে।

“ও বাড়ি খাওয়াতে কি হলো জেঠি। আগেও তো কত কি খাইতাম।”

“আগের হিসাব আলেদা আগে অপুর বইন ছোড আছিলো। অহন ওই ছেড়ি বড় হইছে পুরুষপোলা দেখলে মা, ঝি পাগল হইয়া উঠে।”

জয়তুনের কথায় কোন ঋণাত্মক ইঙ্গিত ছিলো তা কারোই বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তাই শিশির আর কোন কথা বলল না। সে জানে তার মায়ের মতোই জেঠিও তাকে খুব ভালোবাসে তাই কখনোই কোন ভুল কিছুতে সে জড়িয়ে পড়ুক এটা কিছুতেই চান না তিনি। সবাই গরম গরম পিঠা খেলেও শিশির বলল বক্সে ভরে দিতে সে বাজারে গিয়ে ভাইয়ের সাথে খাবে। তার কথাটা ভালো লেগেছে জয়তুনের। সেও চাইছিলো তার ছেলেকে গরম গরম পিঠা খাওয়াতে কিন্তু শরতকে ফোন করলে সে ভুলেও বাড়ি আসবে না৷ তাই শিশিরের কথাতে ভীষণ খুশি হয়ে দ্রুত উঠে দুই বক্স ভরে পিঠা দিলো৷ শিশির যেতে পা বাড়াতেই অনু বলল, আমরাও আসি একটু লাস্ট মোমেন্ট ঘোরাঘুরি আরকি!”

অনুর কথাটা শুনে মনে হলো সে অনুমতি চাইছে বড়দের কাছে। আহসান শিফার দিকে তাকালো যেন স্ত্রীর পক্ষ থেকেই জবাবটা চাচ্ছেন তিনি কিন্তু তাদের আর ভাবতে হয়নি জয়তুনই বললেন, যাক পোলাপানগুলা তো রাইতেই যাইবোগা।”

ব্যস, আর কারো ভাবার দরকার নেই। শিফা আর আহসান বরাবরই ভাবীর মতামতকে প্রাধান্য দেন। এই যে শহুরে দুটো মেয়ে তার ছেলের বান্ধবী এদেরকে এখানে এসে চারটা দিন থাকার অনুমতিও তারা এমনি এমনি দেননি। পাড়ার লোকের কথা খুব বেশি না ধরলেও কিছুটা পরোয়া আহসান অবশ্যই করতো। সে ভেবেছিলো শিশিরকে কোনভাবে বারণ করবে তাদের না আনতে। কিন্তু জয়তুন যখন শুনলো তখন বলল, এহন এইসব কে ধরে! আর মাইয়া দুইটা কি খালি বাড়ি আইবো আমরা আছি না!”
জয়তুনের কথাতে আশ্বস্ব হয়েই অনুমতি দিয়েছিলো আহসান। দেখতে দেখতে চারটা দিন পার হলো সুন্দর ভাবেই। আজ তারা চলে যাবে ভাবলেই খারাপ লাগছে শিফা আর জয়তুনের। এ বাড়িতে আগে আলতার চঞ্চলতা, শিউলির গুঞ্জনে মুখর থাকতো। শিশির শহরমুখো হতেই শিউলি আর আলতার চেঁচামেচি একটু কমেছিলো বটে তাদের কথায় কথায় মা*র দেওয়া মানুষটা না থাকায়। এরপর শিউলির বিয়ে হলো বাড়ি আরও খালি হয়ে গেল। দেখতে দেখতে এখন আলতা চলে গেল, নকশির নিজের বাড়ি হলো ব্যস, পুরো মাস্টার বাড়ি নীরব হয়ে গেল কয়েকটা বছরের মধ্যেই। আর শরত! সে তো বাড়ি থাকলেও কেউ টের পায় না৷ এজন্যই আজকাল জয়তুনের সাথে শিফাও তাল মেলাচ্ছে ছেলেটাকে বিয়ে দিতে। এতে যদি বাড়িতে একটা বউ আসে তাহলে তো কথাই নেই। আর মেয়েটা অবশ্যই হোক চঞ্চলচিত্তের যে কিনা এই বাড়ি আর বাড়ির মানুষগুলোকে সারাক্ষণ হৈ হল্লায় মাতিয়ে রাখবে। এমনিতেও তো শিফা জানে আর মাত্র বছর দুই কি তিন তারপর আলতা চিরদিনের জন্যই চলে আসবে তাদের ঘরে। সেই যে আলতা ওইটুকুনি থাকতেই শিফা মনে মনে ঠিক করেছিলো এ ঘরে আসবে আলতা তারপর তার বাপের বাড়ি থেকে ফেরার পরই তো জানতে পারলো সে তার ছেলেটাও মন দিয়ে বসে আছে আলতাকে। তার তো পুরো সংসারই সাজিয়ে রাখা শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। এসব কথা ভেবে ভেবে আনমনেই হেসে ওঠে শিফা। এখনও তো তারা মা ছেলে মিলে আহসানকে কিচ্ছুটি জানায়নি আর কটা দিন তারপরই শিফা ভেবে রেখেছে আহসানকে বলবে সব কথা। আপাতত ছেলে মেয়েগুলো নিজেদের পড়াশোনাতেই মনোযোগী থাক। এখনই বিয়ে-শাদির কথা তুললে মন বদলে যাবে তাদের।

বাজার জুড়ে ষাট কিংবা একশো পাওয়ারের স্বচ্ছ কাঁচের বাল্ব জ্বলছে। সেই বাল্বের হলদে আলোয় সন্ধ্যের বাজারে এক গমগমে হুল্লোড়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে কাপড় ইস্ত্রি করার দোকান সব জায়গাতেই নানা বয়সের পুরুষদের আড্ডা। অনুর ভীষণরকম টানাটানিতে সোহাও এসেছে তাদের সাথে। অনু যখন বলেছিলো শিশিরের সাথে তারাও আসবে তখন এক বাক্যে নাকোচ করে সোহা। তা শুনে অবশ্য সোহার সাথে শিশিরও অবাক হয় খুব। কারণ সেও তো জানে শরতকে নিয়ে তার এই বান্ধবীটির মনে কি চলে। আর সেই বান্ধবীই কিনা আসতে চাইছে না ভাইয়ের সাথে দেখা হবে জেনেও! কিন্তু অনু বোকার মত সবার সামনে টানাহেচড়া করাতেই বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে সোহাকে। সবাই মিলে যখন দোকানের সামনে হাজির শরত বিষ্ময়ে হা হয়ে গেল। বিষ্ময় প্রকাশ না করেই সে সবাইকে বসতে বলল টুল দেখিয়ে। তার দোকানে চা বিক্রি হয় না বলে আড্ডাও বসে না তেমন। আর সে কারণেই কোন বেঞ্চের ব্যবস্থা নেই তবে দোকানে দুটো টুল আছে সেগুলোই এগিয়ে দিতে বলল সে তার কর্মচারী ছেলেটিকে। একটি টুলে অনু বসলে অন্যটিতে সোহাকে বসতে বলল শরত। সোহা তার দিকে না তাকিয়েই বলল, “না না বসবো না।”

আর এইটুকুই খেয়াল করলো অনু, শিশির। তারা বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে শরত আর সোহার মাঝে কিন্তু কি তা জানার জন্য কথা বলতে হবে। শিশির পিঠার বক্স দুটো এগিয়ে দিতেই শরত অবাক হলো। পিঠা নিয়ে তারা দোকানেই চলে এসেছে! তবে মনে মনে খুব খুশিও হলো সে। কাস্টমার একটা দুটো আসছে যাচ্ছে তাই তারা সবাই একপাশে দাঁড়িয়ে শরতের সাথে পিঠা খেলো। শরত চা আর সমুচাও আনিয়ে খাওয়ালো। প্রায় আধ ঘন্টার মত সময় তারা দোকানে থাকলো এরপরই বাড়ি ফিরবে বলে ভাবছিলো। আলতা চা খায়নি তবে সমুচা খেতেই সে পানি চাইলো। শরত বোতল ভর্তি পানি আলতাকে দিলো। প্রথম ঢোক গিলতেই পানি গলায় বিঁধলো আলতার। শরত তার পাশে থাকায় মাথায় আলতো করে দু, তিনটা থাপ্পড়ের মত করে দিতে দিতে বলল, আস্তে খা এত তাড়া কিসের!”

সন্ধ্যের বাজারে অনেক মানুষ আসে তার মধ্যে মুরুব্বিরাই যেন বেশি। শরতের দোকানের উল্টোদিকেই রফিকের চায়ের দোকান। শিশিররা দোকানে আসার পর থেকেই রফিকের নজর এদিকে ছিলো। কাল কাশফুলের মাঝে আলতাকে দেখেই সে চিনেছিলো তবে ছেলেটিকে নিয়ে একটু কনফিউশন ছিলো তার। শরত আর শিশিরকে একইরকম লাগে আজকাল। ঢাকা থেকে আগেরবার যখন এলো তখন শিশিরকে একটু একটু বড় মনে হলেও এবার আসার পর থেকেই দাঁড়ি, লম্বা চুল আর শরীরের গড়নে শরতের মতোই লাগছে। গায়ের রঙ আর চুল লক্ষ্য না করলে বোধহয় দুজনকে আলাদাই করা যেত না তাই রফিক একটু দ্বিধায় ছিলো আলতার সাথের ছেলেটা কে! কিন্তু এখন এই মুহুর্তে শরতের হাত আলতার মাথায় দেখতেই মনে হলো তার রহস্য আর খোঁজা লাগবে না। ছেলেটা শরতই ছিলো কাল। মনে মনে একটু রোষানলে পুড়লো রফিক। তার মনে বহু বছরের পুরনো এক কূটচাল আবারও সতেজ হয়ে উঠলো যা অপ্রকাশিত ছিল।

চলবে