#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
৪.
নকশির দু দিনের থাকা এক সপ্তাহে গড়ালো। প্রথম দুদিন সে স্কুল ছুটি নিলো সারাদিন শিফা আর জয়তুনের সাথে থাকবে বলে। কাটালো দুদিন খুব গল্পে, আড্ডায় সেই সাথে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কত কি ভাবলো। তৃতীয় দিন জহির কোন কাজে রাজশাহী যাবে বলে জয়তুন নিজেই বলল, আরো দুটো দিন সেখানে থেকে যেতে। নকশি হ্যাঁ বলবে কি না তা ভাবার আগেই জয়তুন বললেন, “তুমি রাজশাহী না গেলেও নকশি আরো দুইদিন এহানেই থাকতো। নাইওর আনছি কি ওরে দুইদিন থাকার জন্য?”
জহির আশ্বস্ত হয়ে রেখে গেল নকশিকে। সে দুদিন পরই ফিরে এলো কিন্তু সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। শিফা হুট করে বলল, “আজকে আর যাওয়ার দরকার নাই কালকে জুম্মার দিন। ভালোমন্দ কিছু করবো তারপর বিকেলে চলে যাবেন।” শিফার কথায় জহির নকশি দুজনেই হেসে ফেলল। এমনভাবে বলছিলো যেন কত দূর থেকে নাইওর এসেছে নকশি। তাই কাল ছুটির দিন জমজমাট আপ্যায়নের পরই যাবে। নকশি অবশ্য এখানে থেকে স্কুলে যাওয়া বাদ দেয়নি। শিফার কথার মান রেখেই তারা সেদিনও রইলো। শুক্রবারে দুপুর থেকেই খুব বৃষ্টি বিকেলে এসে ঝড়ও শুরু হলো। তোষামোদ এবার আহসান করলো। সে জহিরকে বলল, “আজ আর যাস না রাতে খিচুড়ি রান্না করবে তোর ভাবী। আড্ডা দিতে দিতে তাই খাবো একদম সকালে চলে যাস।”
সবার এই সপ্তাহ ধরা আদর যত্নের বহর দেখে জহির এবার বলেই ফেলল, “তোরা যা শুরু করলি এই বয়সে আমার এখন ঘরজামাই হওয়ার শখ জাগছে।”
“থেকে যা” আহসান বলল।
নকশি শুধু দেখেই যাচ্ছে সবটা। তার শুধু মনে হচ্ছে এই জীবনটা তার আরো আগে কেন এমন হলো না। এই যে এখন যা পাচ্ছে যে আদর, স্নেহ, ভালোবাসা পাচ্ছে এসব কেন আওলাদ থাকা অবস্থায় পায়নি৷ জীবনটা কেন জহির পর্যন্ত আসতে হলো আওলাদ কেন পাশে থাকলো না! তাহলে আজ নিশ্চয়ই তার মেয়েটা এত দূরে থাকতো না। বাবা থাকতেও তাকে এতিমের মত জীবন কাটাতে হতো না৷ নিজের বর্তমান পরিণতির দিকে তাকিয়ে অতীতের জন্য আফসোসের জল গড়ালো দু গাল বেয়ে।
পরপর ছয় দিন শিশির ইগনোর করেছে অনু আর সোহাকে। কিন্তু বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্বটা যখন সৎ আর অন্তরের হয় তখন সকল রাগ অভিমান আপনাতেই এক সময় ঝরে যায়। তবে অনু এ ছয়দিনে একবারও শিশিরকে কোন কৈফিয়ত দেয়নি তার কাজের জন্য অথচ সোহা আবেগি বোকা মেয়েটা প্রতিদিন কত শত ফোন কল আর টেক্সট করেছে শিশিরকে তার হিসেব নেই। অথচ শিশিরটা কি কঠিন মানুষ যে তার ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি আর ফোন নম্বর চুরির দায়ে সে বন্ধুত্বটাই শেষ করে দিচ্ছে! ছয়টা দিন সোহা অস্থির হয়ে শিশিরের পেছনে লেগে থেকেও যখন স্যরি এক্সেপ্ট করাতে পারলো না তখন বাধ্য হয়েই শরতের নম্বরে নিজে কল দিলো। রাত তখন দশটা বেজে গেছে। শহুরে জীবনে তখনও তেমন রাত নয় দশটা কিন্তু গ্রামে তখন ঘুমিয়ে পড়ার সময়। শরতও প্রতিদিনকার মত খাওয়ার পর একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলো। ফোনটা তার হাতে থাকায় আর বাইরে নেটওয়ার্ক ভালো বলেই সে একটু ফেসবুকিংও করছিলো। এমন সময় চেনা তবে আনসেভ নম্বরটা থেকে কল আসতে দেখেই তার বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো। সেদিন কল দিয়ে অনুকে ঝাড়ি দেওয়ার পর সে রাতে শিশিরকেও ফোন করেছিলো। অনুর চালচলন শরতের ঠিকঠাক মনে পড়ে এখনো। মেয়েটা জিন্স, টপ পরা, ডার্ক লিপস্টিক আর আঙ্গুলের ডগায় চেপে রাখা সিগারেটটা মনে পড়তেই সে শিশিরকে অনেকটা শাষণের সুরেই বলেছিলো হয় সঙ্গ ছাড় না হয় শহর। তার মনে হয়েছিল এই নিষেধাজ্ঞা তার সেদিনই করা উচিত ছিল যেদিন ঢাকায় গিয়ে মেয়েটাকে দেখেছিল। কিন্তু আজ আবার এই দ্বিতীয় নম্বর থেকে কল পেয়ে তার মনে হলো মেয়েটাকে আজও কিছু কথা বলা দরকার। এবং অবশ্যই আজকের কথাগুলো হবে তার জীবনে বলা সবথেকে বিশ্রী কথা। শরত যখন প্রস্তুতি সমেত কল ধরতে চাইলো তখনি কলটা কেটে গেল। কিন্তু সেকেন্ড গড়াতেই পুনরায় কল এলে সে রিসিভ করলো কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে একদমই স্নিগ্ধ স্বরে ভেসে এলো, “স্যরি শরত ভাইয়া আপনাকে কল করার জন্য আর সেদিন অনুর করা আচরণের জন্যও। অনু খারাপ মেয়ে নয় কিন্তু ও হাসিঠাট্টার ধরণ বোঝে না। ভাইয়া আমরা ভুল করে ফেলেছি প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।”
শরত অবাক হয়ে শুনলো পুরো কথা। সে যে আচরণ করবে ভেবে রেখেছিল তা একদমই করলো না। উল্টো সেও স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করলো, “আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না।”
অনুর সাথে তিনবার কথা হওয়ার দরুন শরতের চেনা সেই কণ্ঠ। কিন্তু সোহার কণ্ঠ সে চিনতে পারেনি। সোহাই এবার তার জবাবে বলল, “ভাইয়া আমি সোহা, শিশিরের ফ্রেন্ড।”
“ওহ”
“ভাইয়া আমি সত্যিই স্যরি। আমরা আসলে আপনার সাথে বেয়াদবি করতে চাইনি।”
“কিন্তু করে ফেলেছো তাইতো!” ঠেস মেরেই বলল শরত।
“না না আসলে আমি কিছু…” সংকোচে কি ইতস্ততায় তোতলাতে লাগলো সোহা। শরত খেয়াল করলো অনুর আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীত এই মেয়েটির আচরণ। তবে প্রথমে সোহা, অনু মনে হতেই যে মেজাজ খারাপ ভাব হতো এ ক’টা দিন আজ আর তেমন হচ্ছে না। বরং এই মেয়েটার মিষ্টি আওয়াজ আর অনুনয়ের সাথে কথা বলাটা ভালো লাগছে। তাই সে নিজেই সোহার কথার মাঝে বলল, “আচ্ছা বাদ দাও বুঝলাম ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা এমন করোনি। হয়ত ফ্রেন্ডের ভাইকেও ফ্রেন্ড পর্যায়েই ফেলে দিয়েছিলে তবে আমি সে পর্যায়ে পড়ি না। অনুকে বোলো একটু আচরণে শিথিলতা রাখতে অন্তত সামনের মানুষটার বয়সের দিক খেয়াল রেখে। আমি সত্যিই ছোটদের এবং অপরিচিতদের থেকে এমন আচরণ টলারেট করতে পারি না।”
শরতের কথাগুলো শুনেই হঠাৎ মুখ ফসকে সোহা বলে ফেলল, “আমরা কি খুব অপরিচিত?”
“হুট করে এক দেখা ছিলো আমাদের। ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ডদের সাথে এক দেখাতেই শুধু নামের পরিচয়েই খুব পরিচিত বলে মনে হয় না আমার হাসি ঠাট্টা তো দূরের ব্যপার।”
হেটে ফিরতে পথে কথা বলছিলো শরত। বাড়ির গেইটের কাছে চলে এসেছে খেয়াল হতেই সে নিজেই বলল, “ভালো থেকো, আল্লাহ হাফেজ।”
সোহা অবাক হয়ে আল্লাহ হাফেজ বলতেও ভুলে গেল। এত তাড়া কেন লোকটার কল কাটার! সে যে উদ্দেশ্যে ফোন করলো সেটাই তো বলা হয়নি। কিন্তু আবার এখনই কল করাটা ভালো দেখায় না। তবে এও তো একটা সুযোগ কালকে আবার কল করার জন্য। ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক সোহার। সত্যিই সে কাল আবার কল দিবে।
কোলের ওপর বালিশ রেখে তাতে বায়োলজি বইটা রাখা। ফ্যানের বাতাসে বইয়ের পাতা একের পর এক উল্টে যাচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। শৈলী আপার বয়ফ্রেন্ড আছে। প্রতিদিন রাত নয়টার পর পরই শুরু হয় তাদের ফোনালাপ সেকারণে অনেকটা সময় রুমে আর বাইরে বাগানে বসে ফোনালাপ সারে। এখনও বাইরেই ছিলেন ফোনকলে থাকায়। কথা শেষ হতেই রুমে এসে আলতাকে লক্ষ্য করে অবাক হন। এই মেয়ে মাঝেমধ্যে এতো বেখেয়ালি কেন হয়ে যায় সে বোঝে না। আলতার সামনে এসে আলতো হাতে তার কাঁধ ছুঁয়ে প্রশ্ন করলেন, “কি ভাবো এতো তুমি আয়শা?”
ভাবনার মাঝে আচমকা প্রশ্নে চমকায় আলতা। সত্যিই সে ভাবনায় বিভোর ছিলো অনেকটা সময়। বালিশের ওপর থেকে বইটা সরিয়ে বালিশের ওপর কনুই রেখে বসলো৷ শৈলীর সাথে পরিচয়ের পর সে প্রথম প্রথম একদমই মিশতে পারতো না। তার বয়সে বড় এই মেয়েটিকে কোন অজ্ঞাত কারণে ভয় ভয় লাগতো। শৈলীও তা বুঝতে পারতো বলেই একদিন জোর করেই আলতার সাথে গল্প করতে বসলো। সময় লেগেছিলো তবে তার ভয়টাও কেটে গেল। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সে নিজের সম্পর্কে সব কথাই বিনা দ্বিধায় বলে দিলো। বাবা মায়ের কথা জানতে চাইলে আলতা তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এবং মাকে জোরপূর্বক বিয়ের পিড়িতে বসানো। শুধু লুকিয়ে গিয়েছিলো তার মনের কুঠুরিতে লুকিয়ে থাকা এক মানবের গল্প তার কৈশোরে পাওয়া প্রথম পুরুষের স্পর্শের গল্পটাও। অথচ আজকাল শৈলী খুব সন্দেহের নজরে পরখ করে তাকে আর শিশিরকে। আলতা অনেক ভেবে বলে সে মায়ের জন্য চিন্তিত। শৈলীর বিশ্বাস হয় না। সে বলে, “মাকে নিয়ে চিন্তা করবে কেন? তুমি যা করেছো একদম ঠিক করেছো। তেমার কাছে শুনে এবং ছবি দেখে তোমার মাকে আমার একদমই অল্পবয়স্ক মনে হলো। অন্তত চল্লিশের ধারেকাছে এখনো পৌছায়নি বলেই মনে হলো। অথচ তোমাদের কলেজের রিপ্তি ম্যামকে চিনি আমি। তিনি খুব সম্ভবত চল্লিশের কাছাকাছি অথচ গত বছর তৃতীয় বিয়ে করলেন এবং গত বছরই তাঁর বড় মেয়ের বিয়ে দিলেন এখন আবার মহিলা প্রেগন্যান্ট। লোকসমাজ এ নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছে ছি ছি করেছে এমনকি তাঁর মেয়ে আর এক ছেলে দুটোই চাইতো তিনি যেন বিয়ে না করেন। ম্যাম কিন্তু কারো কথা শোনেনি তার কারণ তার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সে চিন্তিত। মেয়ে বিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ি আছে, ছেলেটা কলেজে টপ স্টুডেন্ট এবং এ বছরই সে বিদেশ চলে যাবে পড়াশোনার জন্য। এও শুনেছিলাম ছেলে সেখানেই স্যাটেল করবে আর এদিকে ম্যাম তার শেষ বয়সের চিন্তা করেই নিজের জন্য একজন সঙ্গী বেছে নিয়েছেন। প্রথম স্বামী মৃত দ্বিতীয় বিয়ে করলেন কিন্তু ভাগ্য মন্দ লোকটা জোচ্চোর ছিলো। বিয়ে করার পর এক মাসও হয়নি বিভিন্নভাবে টাকা পয়সার জন্য ব্ল্যাকমেইল করতো বাধ্য হয়েই সেই বিয়ে ভাঙতে হলো। ছেলে মেয়ে দুটে এতে মায়ের থেকে আরো বেশি দূর হতে থাকলো। কয়েক বছর আবারও একা কাটিয়ে একাকীত্বে অতিষ্ঠ হয়েই আবারও বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে এবার বোধহয় তিনি পাকাপোক্ত কোন ব্যবস্থা করে বিয়ে করেছেন এখন শুনছি বাচ্চাও নিচ্ছেন। বয়সের কারণে সমস্যায়ও ভুগছেন খুব হাসপাতালেই কাটাচ্ছেন মাসের অর্ধেকটা সময় তবুও লাইফটাকে নিজের মত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় এগিয়েই যাচ্ছেন। সে তুলনায় তোমার মায়ের বিয়ে একদমই স্বাভাবিক। আজকাল তো মেয়েরা এমনিতেই পড়াশোনা শেষ করি চাকরিবাকরি করে ত্রিশের ঘরে পা দিয়েও বিয়ের নাম নেয় না।”
আলতা চুপচাপ শুনে গেল সব। তার সব কথার মাঝে ম্যামের প্রেগন্যান্সির কথাটা শুনে একটু কেমন কেমন লাগলো। তার মায়ের যদি একটা বাবু হয়! সে কলেজে পড়ে অথচ তার ভাই বোন থাকবে এইটুকুনি একদম ছোট। ইশ, কেমন লাগবে তখন! সে ছোট্ট বাচ্চাটাকে কোলে নিবে, আদর করবে, খাওয়াবে আবার তাকে আপা বলে ডাকবে সেই বাচ্চা। ভাবতে ভাবতেই আবার অস্বস্তি হতে লাগলো তার। মায়ের একমাত্র সন্তান সে এখন যদি আরো একজন সন্তান আসে মায়ের তাহলে কি তার আদর কমে যাবে! সেই সন্তান মায়ের কাছে, মায়ের বুকে থাকবে আর এতে কি সে দূর হয়ে যাবে না! মায়ের আদর ভালোবাসায় সে ছাড়া আরো কেউ ভাগ বসালে সে কিছুতেই সইতে পারবে না৷ এক মুহূর্তেই মনটা বড় স্বার্থপর হয়ে উঠলো। আফসোস হতে লাগলো কেন সে মাকে বিয়ের জন্য জোর করলো। তা না হলে তো মা আজ শুধু তার একার হতো। এখন নিশ্চয়ই অন্য কেউ ভাগ বসাবে। বসাবে কি বলছে বসিয়েই তো দিয়েছে জহির কাকা। মা এখন তার একার চিন্তা নয় জহির কাকার চিন্তাও করে ক’দিন পর জহির কাকার সন্তানেরও করবে। অকস্মাৎ মনটা বড় স্বার্থপর আচরণ করতে লাগলো। বিরক্ত লাগতে শুরু করলো শৈলী আপাকে। ঘুম পেয়েছে বাহানা দিয়েই আলতা বিছানায় শুয়ে চোখ বুঁজে নিলো।
সূর্য যখন পূবের আকাশে লালিমা ছড়িয়ে মাটি ছুঁতে ব্যস্ত ঠিক তখনি আলতার ফোনটা বেজে উঠলো মিষ্টি সুরেলা এক গানে। রাতটা ভালো ঘুমে কেটেছে বলেই এখন ঘুম ভাঙাতে একটুও খারাপ লাগেনি। ফুরফুরে মেজাজে সে ফোন হাতে তুলে নিলো। চোখ খুলে দেখলো শিশির কল দিচ্ছে। ঘড়ির কাটায় সময় কত তা দেখার সময় হলো না আলতার। সে কল ধরেই সালাম দিলো। অপর প্রান্তে সালামের জবাব দিলো কি দিলো না বোঝা গেল না শুধু শোনা গেলো উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে একটি বাক্য।
“এ্যাই আলতা ঘুরতে যাবি আমার সাথে?”
চলবে
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
৫.
কিচকিচ করে দুটো শালিক কান ঝালাপালা করে ভোরের ঘুমটা নষ্ট করে দিলো শরতের। রাতে ঘুমটা ছাড়া ছাড়া হয়েছিলো বলেই ভোরের আগ মুহূর্তে ঘুমটা গাঢ় হলো আর তাতেই ব্যাঘাত ঘটালো শালিকে দুটো। আজ শরত ফজরের নামাজটাও আদায় করতে পারেনি এই ঘুমের জন্য। ঘরের জানালাটা রাতে খোলাই রেখেছিলো বলে সকাল সকাল ঘরের পেছন দিকে এই শালিকদুটোর হুটোপুটি দেখা গেল। আফসোস হচ্ছে এ দুটোই না হয় ভোরে এমন খুনসুটি করতো তাহলে অন্তত নামাজটা মিস হতো না। কিন্তু অবাক করা বিষয় আজ তাকে উঠতে না দেখেও মা আর কাকীও কেন ডাকলো না! অন্যান্য সময় তো মা ডাকে আবার কাকা বেরিয়ে পড়তেই কাকীরও গলা শোনায় যায়। “শরত নামাজে গেলে না তোমার কাকা যাচ্ছে!”
এই বাক্যটা খুব কমন এ বাড়িতে। কিন্তু আজ পরিচিত কোন ডাক শোনা যায়নি। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে প্রথমেই বিছানাটা গুছিয়ে নিলো। তারপরই বাথরুমে ঢুকে মুখ হাত ধুয়ে একদম গোসল সেরে মায়ের ঘরে ঢুকলো। মা ঘরে নেই আবার মায়ের ঘরের সাথে রান্নাঘরের লাগোয়া দরজাটাও বন্ধ। এমনটা শুধু মা বাড়ির বাইরে গেলেই করেন। কিন্তু কোথাও গেলে তো তাকে ডেকে অন্তত বলে যায় একবার। শিউলির শরীরটা আজকাল ভালো থাকছে না তাই এ মাসেই তাকে নিয়ে আসতে হবে মনে পড়লো শরতের। নিজের ঘরে গিয়ে ফোন হাতে নিলো একবার শিউলিকে ফোন করবে বলে। কল লগে নম্বর দেখতে গিয়ে চোখে পড়লো কাল রাতের কল ডিউরেশন। নম্বরটা ফোনে সেভ নেই তবে কি মনে করে শরত নম্বরটা সেভ করে নিলো। তখনি মনে পড়লো সোহা মেয়েটা কাল শুধু স্যরি বলতে নয় অন্য কোন কারণে ফোন করেছিলো কিছু বলতে চাচ্ছিলো। এ বিষয়ে আর ভাবনা নয় শিউলিকেই ফোনটা দিলো সে। ফোন বাজলো একবার শিউলি তোলেনি। দোকান খুলতে হবে তাই আপাতত তৈরি হয়ে নাশতা করতে আবার মায়ের ঘরে গেল শরত। মায়ের ঘরের সাথে রান্নাঘর বলে খাবারের টেবিল মায়ের ঘরেই রাখা। এমনিতেই তাদের ঘরের সামনের বারান্দা খুব একটা চওড়া নয় বলে আলাদা খাবারের স্পেস করা যায়নি। তবে শরতের ইচ্ছে আছে আরো টাকা পয়সা হাতে এলে ঘরের সামনের অংশটা বড় করে আলাদা একটা ডাইনিং স্পেস করবে আর মায়ের ঘরে লাগোয়া বাথরুম। মায়ের বয়স বাড়ছে আর তাই মায়ের সুবিধার সবটাই শরত আগেভাগে করে রাখতে চায়। বোনটাকে নিয়ে বাড়তি চিন্তা নেই তার আলহামদুলিল্লাহ ভালো একটা ঘর আর বর বোনের জন্য হয়েছে। সত্যি বলতে আজকাল সে খুব ভারমুক্ত মনে করে নিজেকে শুধু দিনশেষে কোথাও একটু অতীত এসে একাকীত্বটাকে খুঁচিয়ে দেয়। কল্পনায় সাজিয়ে রাখা ফুলেল একটা ডিঙি নৌকা আর তাতে সে কারো স্বপ্নসারথি ছিলো মনে পড়ে যায় কোন অবেলায়, অযাচিত কোন মুহূর্তে। সেই মুহূর্তে খুব করে পাশে চায় কেউ একজন থাকুক যে তার তারা গোনা রাত্রি কিংবা বিষন্ন বর্ষায় মন খুলে গল্প শুনবে, তাকে শোনাবে। আবার ভয় হয় আবারও যদি স্বপ্ন ভঙ্গ হয়, বিশ্বাসে চির ধরায়!
কত মিষ্টি একটা সকাল আজ তা আলতা বসে বসে ভাবছে আর চুলে চিরুনি বুলাচ্ছে। আর মাত্র আধঘন্টা তারপরই সে যাবে শিশির ভাইয়ের সাথে। কোথায় যাবে তা জানে না শুধু জানে আজ অর্ধবেলা সে ঘুরে বেড়াবে৷ শিশির ভাই বলেছে আজ তার বন্ধুরাও সবাই ঘুরবে আর শুক্রবার বলে আলতারও ছুটি সেকারণেই তাকে সাথে নেওয়া। সকালের নাশতা করা হয়নি আলতার এখনও অথচ শিশির বলেছে নাশতা করে তৈরি হতে। আনন্দে, উত্তেজনায় এখন কি গলা দিয়ে খাবার নামবে! কিচ্ছু বোঝে না শিশির ভাই শুধু পারে কথায় কথায় তাকে ধমক দিতে। চুল আঁচড়ে বেণী করা হয়ে গেছে। আজকে সে হলুদ একটা সেলোয়ার-কামিজ পরেছে। একরঙা জামাটার নিচের দিকেই শুধু বড় বড় ফুলের ছাপ আর লাল রঙা ওড়নার হলদে বর্ডার। জামাটা সুতির হলেও ওড়নাটা সম্পূর্ণ শিফনের। এখানে এসে আলতা দেখেছে বেশিরভাগ মেয়েই জিন্স, গ্যাবাডিন আরো কতরকম প্যান্ট পরে সাথে টপ, কূর্তি, লেডিস শার্ট আর অনেকে ডিজাইনার কামিজও পরে। কিন্তু আলতার তেমন কোন ড্রেস নেই যা আছে সব গ্রামের দর্জির কাছে বানানো কামিজ যার শুধু স্লিভে একটুখানি ডিজাইন। আজকের জামাটা পরে তার মনে হচ্ছিলো শিশির ভাইয়ের বান্ধবীরা খুব মডার্ন তারা নিশ্চয়ই দামী কোন পোশাক পরবে! তাদের মাঝে আলতাকে নিশ্চয়ই খুব বেমানান লাগবে? শিশিরের ফ্রেন্ডদের সে দেখেছিলো হাসপাতালে ওই যে তাকে নিয়ে যেবার শরত ভাই আর আম্মা এসেছিল তখন সে দেখেছে দুটি মেয়ে ফ্রেন্ড একজন তো পুরো ছেলেদের মত চালচলনের অন্যজন খুব মিষ্টি ছিল তবে পোশাকে খুব চাকচিক্য। একটু আগ পর্যন্তও তার মনে যে আনন্দের ঢেউ ছিলো আচমকাই তাতে ভাটা পড়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে তার যাওয়াটা মানায় না সেখানে। নিজের পরিচ্ছদ নিয়ে এই প্রথম আলতার মাঝে হীনমন্যতা দেখা দিলো। শুক্রবার বলে আজ রুমে আলতা ছাড়া কেউ নেই। বাকি দুজন নিজ নিজ প্রয়োজনে সকালেই বেরিয়ে পড়েছে। ফোনটা বাজছে আলতার কয়েক সেকেন্ড হলো সেদিকে তাকিয়ে তার মনে হলো এখন কোথাও যাবে না সে। কিন্তু না ফোনটা আপন সুরে বেজেই চলছে এবং সে জানে যতক্ষণ না তুলবে ততক্ষণ ওপাশের ব্যক্তিটি কল দিতেই থাকবে। তার মনে হয় শিশির ভাই তাকে বকা দেওয়ার জন্য সারাটাক্ষণ উদগ্রীব হয়ে ছটফট করতে থাকে নতুন পাখা গজানো প্রজাপতির মত৷ হাহ্ লোকটা একদম ভালো নয় কখনোই মিষ্টি হেসে কথা বলে না তার সাথে। অথচ এখানে কোন প্রয়োজনে এলে শৈলী আপা কিংবা জুঁইয়ের সাথে দেখা হলেই মিষ্টি হেসে বলবে কেমন আছেন আপু অথবা কেমন আছো জুই? তখন আলতার মনে হয় শিশির ভাইকে কলার চেপে ধরে বলে আপনি এত বদ কেন এত অসভ্য কেন এত লু’চ্চা কেন, কেন, কেন? শহরের সুন্দরী মেয়েদের দেখলে কি আপনার ঠোঁট বড়শি গেঁথে কেউ দুপাশ থেকে টেনে ধরে! আর তাই এত দাঁত কেলিয়ে দেখান! কিন্তু এত সাহস আলতার আছে নাকি? ফোনটা বেজে এবারও কেটে গেছে আলতা ধরেনি কিন্তু কতক্ষণ ধরবে না! এবার ভয় হচ্ছে ফোন না ধরার জন্য নিশ্চিত মা’র খাবে দেখা হলে। ভয়েই এবার নিজে কল ব্যাক করলো। শিশির ফটাফট কল তুলেই বলল, “তৈরি হয়েছিস?”
ওমা, অবাক কান্ড! শিশির ভাই তাকে প্রথমে ধমক দিলো না কেন! কথাটা ভেবেই আবার নিজেকে বকলো আলতা, “কিরে আলতা তুই কি শিশির ভাইয়ের ব’কা খেতে চাইছিস নাকি? মানুষটা ব”কে বলে তোর অভিযোগ আবার এখন না ব”কায় আফসোসে মরে যাচ্ছিস!”
আলতা যখন নিজেকে শা”সন করছে তখনই ওপাশ থেকে শিশির বলে উঠলো, “কথা বলছিস না কেন? তৈরি হোসনি এখনও, সেই কখন বলে রাখলাম তেরি হ।”
“আমি তৈরি।”
আমতা আমতা করে বলল আলতা। সত্যি বলতে শিশিরের কণ্ঠস্বর শোনার পর আর পোশাক নিয়ে তার হীনমন্যতা মাথায় রইলো না। তখন শুধু মনটা বলল, এখনি বের হতে হবে। শিশির বলল সে হোস্টেলের সামনে আছে তাই আলতা আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার সময় মায়ের কিনে দেওয়া ছোট্ট পার্সটাতে কিছু টাকা ঢুকিয়ে নিলো। কোথায় যাবে তাতো সে জানে না কিন্তু সে শুনেছে ঢাকায় এদিক ওদিক সব জায়গায়ই দোকানপাট থাকে। তার যদি কিছু পছন্দ হয় কেনার মত তখন সে এই টাকায় কিনবে। খাওয়ার ব্যপারে তো শিশির ভাই থাকতে তার ভাবার দরকার পড়বে না সে জানে কিন্তু অন্য জিনিসের বেলায় সে কি করবে! ভালো একটা জামা, একটুখানি উঁচু একজোড়া জুতো, কোঁকড়া চুলগুলোতে লম্বা একটা বেণী আর ঠোঁটে হালকা ঠোঁটরঙা লিপস্টিক এতেই তার সাজ চোখে লাগার মত। এমনিতেই তার আলতারঙা গায়ের রঙ মানে গোলাপি ফর্সা ত্বক তার ওপর পানপাতার মত মুখটা এমনিতেই সকলের নজর কাড়ে। এ মুখে সে কখনো মেকাপের কথা ভাবলেই মনে পড়ে যায় শিফা মামীর মুখটা। ইশ, কি যে বকেছিলো মামী শিউলি আপার বিয়েতে মুখে মেকাপ করায়৷ তার এক কথা, বড় হয়ে গিয়েছিস তুই এখন আর সাজবি না বেশি বেশি নইলে নজর লেগে যাবে। তোর মুখে যে নজর আগে লেগেছে সেটাই থাক সারাজীবন।
“মেহেদী পায়ে হাঁটছিস নাকি!”
সেই কঠিন আর গম্ভীর স্বর। আলতা পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে গেইট পেরিয়েছে খেয়ালই নেই। তাকে অন্যমনস্ক দেখেই শিশির এ কথা বলেছে। আলতা আশপাশে দেখলো শিশির একা আর কেউ নেই পাশে। সে তো জানতো আরও অনেকেই যাবে তাদের সাথে তারা কই!
“চল” বলেই শিশির একটু সামনে এগোলো। খালি রিকশা ডেকে উঠে পড়ে আলতাকে বলল, “ওঠ।”
আলতাও উঠে বসলো শিশিরের পাশে। রিকশা চলছে গন্তব্যে কিন্তু গন্তব্য কোথায় আলতার জানা নেই৷ সে শুধু আঁড়চোখে দেখছে শিশিরকে। অফহোয়াইট কালো স্ট্রাইপড শার্ট আর নরমাল জিন্স প্যান্ট। শার্টের হাতা গুটানো অথচ উজ্জল লোমশ হাতটাতে মোটা কালো বেল্টের ঘড়িটা কি দারুণ লাগছে। সকালের কাঁচা হলদে রঙা সূর্যের আলো কপাল ছুঁয়ে গালের পাশে পড়ছে তার। আলতা খুব মনযোগে দেখতে চাইছে শিশিরকে কিন্তু বারংবার রিকশার ঝাঁকুনি আর শিশিরের ভয়ে ঠিকঠাক তাকানোর সাহস হচ্ছে না৷ তবে এই রিকশায় বসার জন্যই আজ শিশির ভাইয়ের প্রিয় সুগন্ধির সুবাসটা নিতে পারছে সে। ছটফটিয়ে উঠছে মনটা খুব করে কিন্তু পাশে বসা মানুষটার ভয়ানক ধমকের ভয়ে মনটাও গুটিয়ে থাকতে চায়। প্রায় পঁচিশ মিনিট পর তারা এসে থামল সুন্দর একটা জায়গায়। আলতা রিকশায় বসেই চারপাশে তাকিয়ে রইলো বিষ্ময়ে ঠিক তখনই শিশির তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “নেমে আয়।”
“এ কি স্বপ্ন নাকি সত্যি!”
চলবে
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
৬.
দু পাশে সবুজ লতায় ঢাকা দেয়াল মাঝখানে সরু রাস্তা। মাত্র বিশ কদমের দূরত্বে একটা লোহার গেইট সেটা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আলতা মুগ্ধ নয়নে তাকায় চারপাশে। রিকশা থেকে নেমেই সেই লতায় মোড়ানো দুই দেয়াল এবং তার আশপাশের ফুলের গাছ দেখেই তো কত অবাক হয়েছিলো এখন তা আরো দ্বিগুণ হয়ে গেল গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই আঙিনা বলতে যতটুকু চোখে পড়ে সবটাই রংবাহারি গাছ আর লতায় ঢাকা। একদম মাঝামাঝি অংশে একটা গাছ যা দেখতে অনেকটা খেজুর গাছের মত মনে হলো আয়নার। সেই গাছ ঘিরেই আবার মানিপ্ল্যান্ট আর বিভিন্ন পাতাবাহার। বাড়ির চারিধারে গাছ লতাপাতায় একদম জঙ্গুলে বাংলো মনে হচ্ছে। শিশির খেয়াল করেছে আলতার মুগ্ধ দৃষ্টি তাই সে নিচু স্বরে প্রশ্ন করলো, “অবাক হয়েছিস?”
আলতাও ধীরে বলল, “অন্নেক সুন্দর জায়গাটা৷ এটা কোন জায়গা শিশির ভাই?”
“আমার বান্ধবী সোহাদের বাড়ি এটা।”
মুহূর্ত কয়েক আগের চমৎকার হাসিমাখা মুখটা আচমকাই দূর্যোগ পূর্বের আকাশের মত হয়ে গেল। শিশিরও বুঝি খেয়াল করলো এই আকস্মিক পরিবর্তন কিন্তু আজব বিষয় এমন কেন হলো! আলতা নরম স্বরে বলল, “ওহ!”
একটু আগের প্রশ্নের সাথে যে উচ্ছাস মিশে ছিল তার ছিটেফোঁটাও আর এখন পাওয়া গেল না। শিশির আবার বলল, “সোহার বাবা সচিবালয়ে চাকরি করেন এই বাড়ি সরকার থেকেই পেয়েছেন। রিটায়ার্ড করার পর অবশ্য এটা আর তাদের থাকবে না।”
আলতা কথাগুলো শুনলো কি শুনলো না কে জানে। শিশির ইচ্ছে করেই কথা চালাচ্ছে আলতার মলিন মুখের ভাব ধরতেই কিন্তু না আলতা আর রা কাড়লো না। মূল গেইট পেরিয়েও এখন আরো এক লোহার গেইট লাগানো এটা সোহাদের ঘরের। শিশির একবার ডাকবে ভেবেও না ডেকে ফোন বের করে কল দিলো। ওপাশ থেকে কি বলল শুনতে পেলো না আলতা তবে শিশির বলল, “হ্যাঁ ওকে নিয়ে এসেছি সাথে।”
কথা বলার কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই সোহাকে দেখা গেল। সে ভেতর থেকে দরজা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছো আয়শা?”
আলতা সালাম দিয়ে জবাব দিলো সোহার কথার। দুজনে ভেতরে যেতেই শিশির অনু, হৃদয় আর পরশের কথা জিজ্ঞেস করলো। সোহা বলল কথা হয়েছে অনু এখানে আসবে আর বাকি দুই বন্ধু নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আগেই টিকিট কেটে রাখবে। অনু আসবে মানে তাদের গাড়ি নিয়ে চিন্তা রইলো না। অনু গাড়ি নিয়ে আসবে তাতে করেই পৌঁছে যাবে তারা। সোহা অনুকে ডেকে নিজের শোবার ঘরেই নিয়ে গেল শিশির অবশ্য সোহার ছোট ভাই সোহানকে দেখলো বসার ঘরেই ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। সোহানের সাথে পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তার গল্প করার সুযোগ হলো। এক ফাঁকে সোহাকে বলল, “তাড়াতাড়ি করবে এখানে বেশিক্ষণ বসবো না।”
সোহা কাজের মেয়েকে ডেকে বলল চা আর পেস্ট্রি দিতে শিশিরকে আর আলতাকেও। আলতা চুপচাপ বসে আছে সোহার ঘরে আর লুকিয়ে বারবার সোহাকে দেখছে। সোহা তার ওয়াল কেবিনেট থেকে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। অল্প সময়েই সে পোশাক বদল করে বেরিয়ে এলো৷ কাজের মেয়েটি এক কাপ দুধ চা আর পেস্ট্রি রেখে গেছে আলতার সামনে। সোহা আলতার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, “চা খাও না তুমি আয়শা?”
“জ্বী”
“ঠান্ডা হয়ে যাবে চা টা খাও। আসলে আজ আম্মু বাড়ি নেই তো তাই সকালে নাশতা আমরা পাউরুটি আর জ্যাম দিয়ে করেছি তাই আর তোমাকে নাশতার জন্য বললাম না কিছু মনে করো না।” আন্তরিকতার সুর ছিলো সোহার কণ্ঠে তবুও আলতার ভালো লাগলো না। তার শুধু মনে হচ্ছে না আসাটাই ভালো হতো। সোহা তার ছোট্ট ড্রেসিংটেবিলটার সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন প্রসাধনী মাখছে আর আয়নায় ভেসে ওঠা আলতার প্রতিবিম্ব দেখছে।
“কি দেখছো আয়শা?”
চমকে গেল আলতা সোহার প্রশ্নে। সে আবারও আঁড়চোখে সোহাকেই দেখছিলো কিন্তু এভাবে ধরা খেয়ে যাবে বুঝতে পারেনি।
“কিছু না…”
আমতা আমতা করতে লাগলো আলতা তা দেখে হেসে ফেলল সোহা। আবারও সেই মিষ্টি হাসির সাথে আলতার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপু বলতে পারো আমি শিশিরের বয়সী। আচ্ছা আয়শা তুমি তো সকাল সকাল উঠেই এখানে এসেছো একটু সাজগোজ করারও সুযোগ পাওনি৷ এখানে এসো আমি সাজিয়ে দেই তোমায়।”
আলতা বলল সে এমনই সাজে তার বেশি সাজাটা শিফা মামীর ভালো লাগে না। সোহা জানতে চাইলো শিফা কে আলতাও বলল শিশির ভাইয়ের মা৷ এ কথার পরই যেন সোহা সুযোগ পেলো মনমতো কিছু কথা জানার। সে আলতাকে জোর করেই বসিয়ে দিলো তার ছোট টুলে। আলতার গায়ের রঙটা এতোই ফর্সা যে তাতে ফাউন্ডেশন এর প্রলেপ লাগানোর দরকার মনে করলো না। সে একটুখানি কম্প্যাক্ট নিয়ে আলতার গালে মুখে আলতো হাতে লাগিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করলো, “মামি ছাড়া আর কে কে আছে ও বাড়িতে।”
কিশোরী, দুরন্ত, চঞ্চলা আলতা তখনও নিজেকে গুটিয়ে খুব ধীর স্বরে বলল, “মামা, বড় মামী আর শরত ভাই। শিউলি আপার বিয়ে হয়ে গেছে তাই সে এখন শ্বশুর বাড়ি আর আম্মাও…” বলে থেমে গেল সে। সোহা জানে নকশির বিয়ের ব্যপারটা শিশিরের মুখে শুনেছিলো। তাই কথা ঘুরিয়ে বলল, “শরত ভাই মানে ওই যে হাসপাতালে যে ভাইয়া এসেছিলো?”
“হ্যাঁ”
“কি করেন তোমার শরত ভাইয়া? ”
“শরত ভাইয়ের বড় একটা দোকান আছে । সেখানে অনেক রকম জিনিস মানে মুদি বাজার সব।”
আলতা একমনে বলে চলছিলো কথা। তার মনের ভীরু আচরণ এবার আগল ভেঙে খুব স্বাভাবিক যেমনটা বাড়িতে থাকতে হতো। সোহাও সুযোগ বুঝে বলল, “সেই ভাইয়া বিয়ে করেনি?”
“নাতো তবে বড় মামী সেই কবে থেকেই পাত্রী খুঁজছেন। শরত ভাই-ই রাজী হয় না।”
“রাজী হয় না কেন?”
“ওই যে অলি আপা ধোঁক….” আলতা চুপ হয়ে গেল এইটুকু বলেই। সে তো কথা বলতে বলতে ভুলেই গেল বাইরের কাউকে এত কথা বলা ঠিক হচ্ছে না। সোহাও তার থেমে যাওয়া দেখে বুঝতে পারলো আলতা এরপর আর বলবে না। তবুও আর কিছু জানার আছে বলে মনে হয় না তার। সে কথা শুনতে শুনতেই আলতার চোখে আইলাইনার লাগিয়ে দিল। গোলাপি ফর্সা চোখের পাতায় কালো রঙ দূর থেকেই যেন দৃষ্টি কাড়ছে৷ সোহা নিজেই মুগ্ধ হয়ে দেখলো আলতাকে। এবার চোখ পড়লো আলতার বেণীতে। সে বেণী খুলতে গিয়ে বলল, “ভেজা চুল বেঁধেছো কেন?”
“বাইরে চুল খোলা রেখে বের হলে বড় মামী রাগ করতেন৷”
“বড় মামী কি তোমার শরত ভাইয়ের মা!”
“জ্বী”
“আর কি করলে রাগ করতেন মামী?” সোহা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো। বাইরে থেকে শিশির আর অনুর গলার আওয়াজ পাওয়া গেল তাই আলতা চুপ হয়ে গেছে। সোহার সাজ আগেই হয়েছে সে এবার শুধু চুল গুলো একটু স্ট্রেইটনার দিয়ে সোজা করে নিলো। তার চুল আগে থেকেই রিবনডিং করা থাকায় খুব একটা সময় নিলো না হালকা টাচআপে। কিন্তু সে দেখলো আলতা বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে মেশিনটার দিকে।
“তুমি সোজা করবে?”
“না আপু।”
আলতার কোঁকড়াচুল আগেই খুলে ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দিয়েছিলো সোহা কিন্তু এবার মনে হলো বাচ্চা মেয়েটা বেশ চমকেছে জিনিসটা দেখে। তাই হঠাৎই সে অনুকে ডেকে বলল ভেতরে আয়৷ শিশির রেগে বাইরে থেকেই বলল, “এখানেই থেকে যাই!”
“ইশ, একটু অপেক্ষা করো দশ মিনিট আর।”
অনু ভেতরে ঢুকতেই সে তাকে চিরুনি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “হেল্প কর তার চুল স্ট্রেইট করব।”
অনু কয়েক পল গম্ভীর হয়ে আলতাকে দেখে বলল, “মিষ্টি মেয়েটাকে ভূত না বানিয়ে ছাড়বি না তুই?”
আলতা বোধহয় কথাটা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলো৷
” আজকে দোকানে যাইতে হইবো না আব্বা আমরা শিউলির খালা শ্বাশুরির বাড়ি যামু।”
জয়তুন খুব ইনয়িবিনিয়েই বলল শরতকে। সে সকালে মা আর চাচীর হদিশ না পেয়েই বুঝতে পেরেছিলো কোন লুকানো ব্যাপার আছে। কিন্তু সেই ব্যাপার যে এত দ্রুতই খোলাসা হবে তা বোঝেনি। সে নাশতা শেষে দোকানের জন্য বের হবে ভাবছিলো কিন্তু তখনই তার মা এসে ঘরে ঢুকে এ কথা বলল। শরত আন্দাজ করেছে আম্মা নিশ্চয়ই কোন পাত্রীর খোঁজে বেরিয়েছে। কিন্তু এখন জানতে পারলো সকালেই আম্মা আর চাচী পাশের গ্রামেই পাত্রী দেখে এসেছে কিন্তু মেয়ে পছন্দ হয়নি বলে তাড়াতাড়িই ফিরে এসেছে। আর আসার পথেই শিউলির ফোন পেয়েছে সেও এক পাত্রী পছন্দ করেছে মাকে জানালো। তারই খালা শ্বাশুরির দেবরের মেয়ে দেখতে যেমন সুন্দরী পড়াশোনায়ও ভালো। আর সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা নাকি নিজেই বলেছে শরতকে তার পছন্দ৷ মায়ের চাপাচাপিতে ভ্রু কুঞ্চিত করে কিছু সময় বসে থেকে সে উঠে পড়লো। তার পক্ষে এখন বিয়ে করা সম্ভব নয় এটাই শেষ কথা। রেগে গেল জয়তুন ছেলের কথা শুনে কিন্তু ছেলে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেল। মনকাননে এখনই আর ফুল ফুটবে না আগেই জেনেছে শরত। তার আরো সময় চাই স্বার্থপর মানুষটাকে মন থেকে মুছে ফেলতে। কয়েক দিন আগেই দেখা হয়েছিলো তার অলির সাথে। বাজারের মোড়ে বাস থেকে নেমে অটো ধরেছিল। অকস্মাৎ চোখের সামনে তাকে দেখে থমকে গিয়েছিলো শরত কিছু সময়ের জন্য। ফর্সা মেয়েটা আগের চেয়ে কালো হয়েছে, মায়াবী চোখ দুটোয় বিষন্নতা আর নিম্নাংশে তাকাতেই দেখতে পেয়েছিলো মেয়েটি সর্বোচ্চ সুখের সময়ে আছে এখন৷ ফোলা পেটে প্রকাশ পাচ্ছিলো তার অনাগত সন্তানের সংবাদ৷ অলি যদি সুখী হয়ে থাকে তাতে শরত অসুখী নয় শুধু তার দুঃখ হয় মেয়েটাকে সে আজীবন নিজের পাশে চেয়েছে অথচ সে আজীবনের জন্য অন্যকারো হয়ে গেছে।
আলতার চুল খুব ঘন আর অতিরিক্ত কোঁকড়া হওয়ায় দশ মিনিটে খুব একটা সোজা করা গেল না। এতে অবশ্য আলতাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। যেভাবে দুজন মিলে তার চুলের পেছনে পড়েছিলো তাতে মনে হচ্ছিলো যেকোন মুহূর্তে মাথাটাই আলাদা করে দিবে তার। অবশেষে তিনজনেই ঘর ছেড়ে বের হলো। শিশির তখন বাইরে বাগানের পাশে ছায়ায় দাড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো। একসাথে আলতাদের বের হতে দেখে ভ্রু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল, “রং ঢং শেষ হয়েছে?”
” এমনে কও ক্যান মামা তোমার কি নায়িকা পছন্দ হয় নাই?”
মুখ বাঁকিয়ে বলল অনু। আলতার খুব লজ্জা করছিলো শিশিরের সামনে এসে। অনুর মুখের কথা শুনে তার মন খারাপ হয়ে গেছে সাথে সাথে সে সোহা আর শিশিরের দিকেও তাকাচ্ছে। শিশির নিশ্চয়ই এখন সোহাকে দেখে খুব খুশি হয়েছে সেজেছে বলে! সত্যিই শিশির গভীর মনযোগে তাকিয়ে দেখছিলো সামনের দিকে। আলতার পাশেই সোহা তার পাশেই অনু। আলতার মনে হলো শিশির বুঝি সোহাকেই দেখছে৷ এ মুহূর্তে তার আর একটুও ভালো লাগছে না এখানে থাকতে কিন্তু উপায় নেই ফিরে যাওয়ার। অনু তাড়া দিয়ে সে গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসলো। শিশিরও গিয়ে অনুর পাশে বসতে চাইলে অনু ইশারা করলো পেছনে গিয়ে বসতে। ততক্ষণে সোহা পেছনে বসে পড়েছে। আলতার হঠাৎ কান্না পেয়ে গেল কেন! কিন্তু না এখানে কিছুতেই কান্না করা যাবে না। শিশির অনুর কথা না শুনে বলল, “তুই চুপ থাক গাড়িতে মন দে।” বলেই শিশির পেছনের দিকের আরেক দরজা খুলে আলতাকে বলল, “ওঠ”
আলতা কিছু না বলে উঠে বসলো শিশিরও সামনে বসলো৷ গাড়ি চলছে আহসান মঞ্জিলের উদ্দেশ্যে। শিশির হঠাৎ গাড়ির সামনের ছোট্ট আয়নাটা একটু কাত করে দিলো। আলতা খেয়াল করেছে তা আর তার মনে হলো আয়নাটা বুঝি সোহাকে দেখার জন্যই অমন করে দিলো শিশির ভাই!
প্রায় এক ঘন্টা পর যখন তারা এসে পৌঁছুলো তখন আগে থেকেই দুই বন্ধু উপস্থিত ছিলো। তারা টিকিটও কেটে রেখেছে শুধু বন্ধুদের আসার অপেক্ষায়। সবাই গাড়ি থেকে নামতেই শিশির আলতার কাছে এসে বলল, “জানিস এই মহলটার নাম কি?”
আলতা মাথা নেড়ে জবাব দিলো, “না”। শিশির বলল পুরনো আমলের নবাবদের বাড়ি ‘আহসান মঞ্জিল’ এখন অবশ্য এটা বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের একটা শাখা।”
আলতা সামনে তাকিয়ে দেখলো বিশাল প্রাসাদটি৷ আহসান মঞ্জিল নামটা সে অনেকবার শুনেছে এবং সাধারণ জ্ঞান বইয়েই হয়ত পড়েছিলো। কিন্তু কখনো এমন ঐতিহাসিক কোন প্রাসাদ দেখার সুযোগ হবে ভাবতে পারেনি। শুক্রবার বলেই হয়ত আজ খুব ভীড় তবে এখানে বেশিরভাগই কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া মনে হচ্ছে। আলতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিশির বলল, “চল ওরা ভেতরে ঢুকে গেছ।”
টিকিট দেখিয়ে শিশির, আলতাও ভেতরে ঢুকলো। চারপাশে সবুজ মাঠ আর সামনে বিশাল প্রাসাদ। দেখতে ভালো লাগছে আর শিশিরের পায়ে পা মিলিয়ে চলাটাও। বন্ধুরা সব আগেই সামনের মহলে ঢুকে গেছে। আলতাকে নিয়ে শিশিরও আগাচ্ছে সামনে। আজ কমলা রোদ চকচকে আর বড্ড তেজী। রোদ থেকে বাঁচতেই আলতা মাথায় তার লাল ওড়ানাটায় ঘোমটা টেনেছিলো। সিঁড়ি বেয়ে সেও উপরের দিকে উঠতে যাচ্ছিলো। হঠাৎই হাতে টান পড়ায় পিছু ফিরে চাইলো সে। মাথার ঘোমটা পড়ে গেছে তার হাতের টানেই। রোদের আলোয় পিটপিট করে চাইলো প্রথমে হাতের দিকে তারপরই হাতটি ধরে রাখা মানুষটির দিকে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা যুবকটির চোখেমুখ সূর্যকিরণে স্বর্ণরঙা লাগছে যেন! কিশোরী মন চোখের সামনে প্রিয় মানুষটিকে এরূপ দেখে হয়ত বিভ্রমে এক মুহূর্ত থমকে গেল। শরতের আকাশে ভেসে আসা শুভ্র মেঘের মত হালকা অথচ কোমল হয়ে ছুঁয়ে দিতে চাইলো আবেশে। গালভর্তি সদ্য বেড়ে ওঠা খোঁচা দাঁড়ি আর রোদ্র তেজে ছোট হয়ে আসা চোখের দৃষ্টিতে নিজের ম”র”ণ যেন দেখতে পাচ্ছিলো আলতা। শিশির এদিকে যাবো না বলেই আলতাকে টেনে চলে গেল গ্যালারি সাইডে। দ্বিতীয় প্রাসাদের পেছন দিকে চিকন বাঁকানো লোহার সিঁড়িটা দেখিয়ে শিশির বলল, “ছবি তুলবি! চল ওপরে ওঠে দাঁড়া আমি তুলে দিচ্ছি।”
আলতা দেখলো সিঁড়িটা খুব চিকন ওপরের অংশে একটুখানি জায়গা৷ সিঁড়িটা একতলা সমান উঁচু কিন্তু তার ভয় লাগছে সে উঠবে না। শিশির শুনলো না বলল, “চল আমি হাত ধরে নিয়ে যাই।”
শিশির খেয়াল করে দেখলো আশেপাশে কাউকে দেখা যায় কিনা। বন্ধুরা তো ভেতরে চলে গেছে আগেই। আশেপাশে দেখতেই চোখে পড়লো কাপল আর তারা বিভিন্ন পোজে নিজেদের সেলফি তুলছিলো। আলতাকে একটু অপেক্ষা কর বলেই সেই জুটির দিকে ছুটে গিয়ে অনুরোধ করলো একটা ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। ছেলেটি রাজী হতেই শিশির আলতার হাত ধরে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। আলতাকে সামনে দাঁড় করাতেই শিশির পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে ছেলেটিকে ইশারা করলো ক্লিক করতে। খুব একটা বাতাস নেই তপ্ত প্রকৃতি তবুও একটু উঁচুতে হওয়ায় যেন হালকা বাতাস এসে লাগছিলো গায়ে। পাট করে রাখা চুলগুলো আলগোছে ডান গালে জায়গা করে নিলো। শিশির ঘাড় বাঁকিয়ে দেখলো সেটা। তার মনে হলো চুলগুলো সরিয়ে দেওয়া দরকার আলতা তো ভয়ে ঠিকঠাক নিঃশ্বাসটাই নিচ্ছে না। চোখমুখে খিঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা শিশির হাত উঠিয়ে চুল সরালো। শিশিরের ছোঁয়াতেই বুঝি আলতাশুভ্রা মুখের সেই কুঞ্চন আপনাআপনি সরল হয়ে এলো। বাতাসে তখন শিশিরের গায়ের মাতালকরা পারফিউম এর সুবাস আলতাকে ভাসিয়ে নিচ্ছিলো দূর কোন বনপাহাড়ে।
চলবে