শিশির ধোয়া গোলাপ পর্ব-০৩

0
632

#শিশির_ধোয়া_গোলাপ

#ইভান_ডালী

#পর্বঃ০৩

আদনান কাঁপা কাঁপা হাতে আরোহীর গাল স্পর্শ করতে নিয়ে আবার হাত সরিয়ে ফেলল।আদনান নতুন করে কোনো প্রেমে জড়াতে চায় না। যাকে এতো আগলে রাখার চেষ্টা করেছে সেই শেষ পর্যন্ত তার হলো না। আবার আরোহীর কথা ভাবতেই মনে হলো এই মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই।আমার জন্য না খেয়ে আছে।তারপর আদনান আরোহীর কাধ স্পর্শ করে ডাকতে লাগলো,
-এই যে, তুমি না খেয়ে শুয়ে আছো কেন, ওঠো তাড়াতাড়ি।

-আচ্ছা, আমার ঘুম কি আপনার সহ্য হয় না।( ঘুম লাগা কণ্ঠে আরোহী বলল)

– আশ্চর্য। তুমি খেয়ে ঘুমালে তো আর ডাকতাম না।

– আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম।

– এভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বুঝি আমার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিলো।

আরোহী এবার উঠে বসলো,
– আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অপেক্ষা করছিলাম না বরং অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

– কি করে বুঝবো যে তুমি সত্যি কথা বলছো?

– বিশ্বাস না হলে রাহেলা খালা কে জিজ্ঞেস করুন।আর আপনি কি করে জানলেন আমি না খেয়ে আছি?

আদনান এবার আমতা আমতা করে বললো,
– আ-মি -তো বলি নি যে আ-পনি না খে-য়ে আছেন।

– আসলে আপনি মিথ্যাটাও বলতে পারেন না।

– মি-থ্যা না…..কথাটি বলা মাএই আরোহী বলে উঠলো,আপনি আমাকে যখন ডেকে ছিলেন তখনি তো বলেছেন,এই যে তুমি না খেয়ে শুয়ে আছো কেন, তাড়াতাড়ি উঠো।

-আমি বাসায় আসার পর রাহেলা আন্টি বলেছে, তুমি খাওনি। তাই ডেকে ছিলাম।

-এবার বলেছেন সত্য কথা, তাহলে রাহেলা আন্টির কাছ থেকে শুনেও আমার সাথে এরকম করার কারনটা কি?

– যদি এরকম না করতাম তাহলে উঠতে না। আমি খেয়ে এসেছি এখন চুপচাপ গিয়ে খেয়ে আসো।

– আপনাকে তো আমি বলে দিয়েছিলাম যে রাতে বাসায় এসে খাবেন তো….

-তো কিছু না। আমি খেয়ে এসেছি তুমি গিয়ে খেয়ে নেও।

আরোহী মনে একরাশ হতাশা নিয়ে নিচে চরে আসলো। নিচে আসতেই রাহেলা বেগম আরোহী কে বললেন,

– তুমি একা যে আদি বাবা কই?

– সে নাকি বাহিরে খেয়ে এসেছে।

– তুই নিরাশ হোসনি মা, আদি বাবা একদিন ঠিক বুঝবে সে তার জীবনে একটা হিরের টুকরো মেয়ে পেয়েছে।

আরোহী খাবার নিয়ে নড়েচড়ে ওঠে গেল।রুমে আসতেই দেখে আদনান একটা বই পড়ছে। সামনে গিয়ে একটু উঁকি দিতেই আদনান বলল,
-এটা গল্পের বই এভাবে উকি দেওয়ার কিছু নেই।

– অবশ্যই আছে।যেহেতু আপনি আমাকে বিয়ে করেছে তাই আপনি কখন কি করছেন আমি দেখতেই পারি।

– আচ্ছা তুমি এতো কথা কেন বলো? কাল না বাসায় যাবে গিয়ে শুয়ে পড়ো।

– আচ্ছা।আপনাকে কি জন্মের পর নিমপাতার রস খাওয়ানো হয়েছিল।একটু ভালো, সুন্দর, সাবলীল ভাবে বলতে পারেন না।

– না, পারি না। এখন বেশি কথা না বলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

আরোহী কথা না বাড়িয়ে খাটের একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।কারন কাল সকাল সকাল রেডি হতে হবে যাওয়ার জন্য। আদনান ও ওপর প্রান্তে শুয়ে পড়লো।কেটে গেল আরো একটি রাত দুই দম্পতির।

আধার কেটে সূর্যের সোনালি মৃদু আলো আদনানের চোখে পড়তেই আদনান হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেয়।তবে এখন মুখের উপর কিছুর ফোঁটা অনুভব করলো,পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো আরোহী তার ভিজে চুল গুলো ঝারতে ব্যস্ত।কমরের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে চুলগুলো।আদনান আরোহী আসার পর চুল খোঁপা করা দেখেছে। তবে এই ভিজে যাওয়া চুলগুলোর জন্য আরোহীর পড়া কুর্তি টা পিছনের অংশ ভিজে শরিরের সাথে লেপ্টে আছে।সাদা রঙের কুর্তি পড়ায় ফর্সা শরির টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

হঠাৎ আরোহীর আয়নায় খেয়াল করলো আদনান এদিকে তাকিয়ে আছে।আরোহী একটু লজ্জা পেয়ে ভিজে চুলগুলো খোঁপা করে নেয়।তারপর কাবাট থেকে একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আদনান ঘোরের মধ্যে ছিলো আরোহী চলে যাওয়ায় আদনানের হুশ ফিরে।নিজে কে নিজে হাজার টা গালি দিতে থাকে আদনান।সে কি ভাবছিলো এতোক্ষণ।






তারপর দুজনেই যাবার জন্য তৈরি হয়ে নেয়।আরোহীদের বাসা বাখেরগঞ্জ তাই মোটামুটি ৫-৬ ঘন্টা লাগবে যেতে। তাই সকাল সকাল রেডি হয়ে নেমে যায়।আদনান গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আরোহীর জন্য অপেক্ষা করছে। আদনান যেতে মোটেই রাজি ছিলো না। তবে বাবা অনেক বলায় যাচ্ছে ডাক্তার আগে থেকেই বলেছে বাবাকে কোনো কিছু নিয়ে উওেজিতো করা যাবে না। তাহলে বাবার কোনো সমস্যা হয়ে যেতে পারে।তাই নিজের জন্য বাবার কোনো ক্ষতি হতে দিবে না আদনান।তাই সে বাবার কোথায় আরোহী কে বিয়ে করে নিয়েছে।
এসব ভাবতেই আরোহী উপর থেকে নামতে দেখে আদনান অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে। বাসন্তী রঙের শাড়িটায় আরোহী কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।মেয়েটা তেমন সাজগোছ করে না তবুও তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে দেখতে।
আরোহী আদনানের হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো..

– আমি তো আপনারি বউ এভাবে তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে বসুন সারা জীবন অনেক দেখতে পারবেন।

– তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার বয়েই গেছে।

– হ্যা, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কি রকম হা করে তাকিয়ে ছিলেন মনে হচ্ছিল কোনো মশা মাছি ডুকে পড়বে।

– এই যে মিস্ কথা একটু সাবধানে বলো। আমি কিছু বলিনা এর মানে এটা না যে কিছু বলবো না।

– ভুল বললেন,ওটা মিস না মিসেস হবে।যাই হোক আপনি গাড়িতে বসুন। কারন অহেতুক এনার্জি নষ্ট করতে চাই না। আপনার সাথে ঝগড়া করে।

– নিজেই আমার সাথে ঝগড়া করবে আবার বলবে আমি ঝগড়া করি না। বাবার জন্য এই মেয়েটা কে কিছু বলতেএ পারি না। (কথাগুলো আস্তে আস্তে বলে আদনান)

– আপনি কি কিছু বললেন আমাকে? (ভ্রু কুচকে)

– না,,একদমি না। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেও।

গাড়ি আপন গতি তে চলছে। দুজন চুপ ছিলো নিরবতা ভেঙে আদনান বলে উঠলো,
-তোমার ব্যপারে কিছু বললে না যে?

– আগে আপনি বলুন তারপর আমি বলি।

– আমার ব্যাপারে আমার থেকে তুমি ভালো জানো।

– কোথায় আমি তো তেমন কিছু জানি না।

– কোনো কি কি যেনো বলো আমাকে, নিরামিষ, ঢেঁড়স, আনরোমান্টিক। আর কি কিছু জানার আছে?

– এগুলো তো আপনার ছদ্মনাম। আসল পরিচয় বলুন।

– আমি আদনান চোধুরি। তবে বাবা ভালোবেসে আদি বলে ডাকে।মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা একমাএ আমার জীবন।

– আমি আরোহী। বাবা মায়ের একমাএ রাজকন্যা। এই পৃথিবীতে এরাই আমার সব।

– আচ্ছা আমরা তো বন্ধুর মতো ও থাকতে পারি তাই না?

– হুম, অবশ্যই।আমিও এটাই বলতে চেয়েছিলাম। নাউ উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড? হাত বাড়িয়ে

– ইয়া।(কথাটি বলে,আদনান ও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো) তবে আমি তোমাকে আরোহী নামে ডাকবো না। আমার যেহেতু এতো গুলো নাম দিয়েছো আমার ওতো একটা নাম দেওয়া উচিত।

– জ্বি না।

– না বলতে তো হবে না। আমি তোমাকে শুধু রুহি নামে ডাকবে।

– কি রুহি?

– হুম রুহি। কেন নামটা পছন্দ হয়নি? তবে পছন্দ না হলেও আমি এই নামে ডাকবো।

– ওকে তবে আমি কিন্তু আনরোমান্টিক, ঢেঁড়স,আর নিরামিষ ই বলবো।

– রুহি….. নাম ধরে রাগি গলায় আদনান ডাক দিতেই আরোহী হেসে দেয়।

দীর্ঘ ৬ ঘন্টা পর আদনান আর আরোহী আরোহীদের বাসার সামনে এসে পৌঁছায়।আরোহীদের বাসা গ্রামাঞ্চলে এ আর কয়েকটি বাসার মতোই।আরোহী গাড়ি থেকে নেমে তার বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ আদনান এমন কিছু করবে তা সবার কল্পনার বাহিরে ছিলো।

অতঃপর……..

#চলবে