শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব-২১+২২

0
795

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_21
#Writer_NOVA

আম্মু কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে।কিন্তু এনাজের সরার নাম নেই। সে এখনো আমার কানে তার অধর যুগল ছুঁয়ে বসে আছে। তারপর যে অঘটন ঘটলো তার জন্য আমি কিংবা এনাজ কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। অঘটন ঘটার আগে আমি বাইরে তায়াং ভাইয়া ও আম্মুর কথা শুনতে পেলাম। আম্মু সম্ভবত এদিকে আসছিলো। তখুনি তায়াং ভাইয়া তার পথ আটকিয়েছে।

—কি হয়েছে খালামণি? নোভা কি এখনো ঘুমে?

—তাইতো দেখতে যাচ্ছি। আমরা একটু পর চলে যাবো।আর ও এখানো ঘুমাচ্ছে। ওকে না বলে চলে গেলে আবার গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।

—আচ্ছা তুমি যাও। আমি দেখছি। তোমাকে আম্মু ডাকছে। কি জানি দেবে মামাীর জন্য। সবকিছু গোছাতে থাকো ততক্ষণে আমি ওকে কান ধরে ঘুম থেকে উঠাই।

— আচ্ছা আমি তাহলে যাই। তুই উঠিয়ে দিস।

— কোন চিন্তা করো না। আমি আছি তো।

আম্মুর কন্ঠ পাচ্ছি না। তায়াং ভাইয়া বোধহয় এই রুমে এলো। কিন্তু সে তো নড়ার নামও নেই। কিন্তু কে জানতো এরপরই অঘটন ঘটবে😵। সে সরছে না বলে আমি ধরফর করে উঠে বসতে নিলে দূর্ভাগ্যবশত তার অধর যুগলের সাথে আমার অধর যুগল মিলে গেলো।সে যে আমার দিকে ঝুঁকে আছে সেটা কি আমি জানি! এরকম কিছু হবে তা আমি কিংবা এনাজ কেউ কল্পনাও করিনি। দুজন যে সরে যাবো সেই খেয়ালটুকু আমাদের মাঝে নেই। বিস্ফোরিত চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি। মিনিট খানিক পর হুশ ফিরতেই সে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। আমি এক হাতে ঠোঁট ধরে (😳) এই ইমোজির মতো করে তাকিয়ে আছি। বেচারাও লজ্জায় পরে গেছে। দুজনের একজনও কারো চোখে চোখ মিলচ্ছি না। মেলানোর মতো অবস্থায় কেউ নেই। আসলে এক্সিডেন্টলি যে এমনটা হবে সেটাই বা কে জানতো। ঠোঁট ছেড়ে লজ্জায় কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। এনাজ এক মিনিটও দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এনাজ বের হতেই তায়াং ভাইয়ার প্রবেশ। আমার এখনো লজ্জা লাগছে। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি।ভাইয়া আমাকে এই অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলো,

— কি রে মুখ ঢেকে বসে আছিস কেন? কি হয়েছে রে? একটু আগে দেখলাম এনাজ মুখে হাত দিয়ে বের হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কিছুই বললো না। এখন দেখছি তুই মুখ ঢেকে বসে আছিস। তোদের মধ্যে হয়েছেটা কি বলবি তো?

আমি মুখের থেকে কাঁথা সরিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। এখন কি ওকে আমি বলবো যে কি ঘটেছে? আদোও কি তা বলার মতো কিছু? আমি তো লজ্জায় শেষ। মুখটাকে কাঁদো কাঁদো করে বললাম,

— কিছু হয়নি।

—তাহলে কাঁদছিস কেন?

—এমনি।

আমি এখন পারছি না তায়াং ভাইয়াকে সবকিছু খুলে বলতে আবার পারছি না সইতে। চোখের মধ্যে এখনো একটু আগের এক্সিডেন্টটা ভাসছে। সেটা মনে পরতেই আমি নিজে নিজেই লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। তাই ইচ্ছে করছে হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদতে। তায়াং ভাইয়া ধমক দিয়ে বললো,

— কিছু যখন হয়নি তাহলে ঢং করছিস কেন?

— তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস কেন?

— একদম কথা বলবি না। চুপচাপ ড্রয়িংরুমে আয়। খালামণি চলে যাবে।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি আনমনে বেশ জোরেই বললাম,

— আমি যাবো না আমার লজ্জা লাগছে। আমি তার মুখোমুখি হতে চাই না।

— কিসের লজ্জা, কার মুখোমুখি হতে চাস না? আমার থেকে কি লুকচ্ছিস বল তো?

— উফ, বেশি কথা বলিস না তো। আমার মাথা ধরবে। যা তুই আমি আসছি। আর কিছু হয় নাই।

— আমার সাথে চল। তোকে রেখে গেলে কখন আবার হাঁটতে গিয়ে হেচোট খেয়ে পরে মাথা ফাটিয়ে ফেলিস কে জানে? তোকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।

আমি চোখ দুটো ছোট করে ওর দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। কিন্তু বাইরে যেতে লজ্জা লাগছে। কি করে তার মুখোমুখি হবো? যা লজ্জা পেয়েছি। কেন যে এমনটা হলো? এরকম এক্সিডেন্ট না হলে কি হতো? ধ্যাত ভালো লাগে না কিছু।

💖💖💖

রুমের বাইরে গিয়ে তায়াং ভাইয়ার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে রইলাম। কিন্তু এনাজকে কোথাও দেখতে পেলাম না। শারমিন চলে গেছে একটু আগে। ওর সাথে তওহিদ ভাইয়াও চলে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে তার নাকি একটা জরুরি কাজ পরে গেছে। ডাহা মিথ্যা কথা। শারমিন চলে গেছে বলে সেও বের হয়ে গেছে, তা আমি জানি। তায়াং ভাইয়া ড্রয়িংরুমে এসে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলো,

— তন্বী, এনাজ কোথায় রে?

— এনাজ ভাইয়া তো একটু আগে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আমি পেছন থেকে ডাকলাম। কিন্তু সে শুনলো না। তোর সাথে কি কিছু হয়েছে?

— না তো। ও আমাকে না বলে চলে গেলো কেন? নোভা তুই কি ওকে কিছু বলেছিস?

তায়াং ভাইয়া সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। আমি প্রথমে একটু চমকে গেলোও পরে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

— আমি তাকে কি বলবো? আর সে কেন গিয়েছে তা আমি কি জানি? যাওয়ার আগে কি আমাকে বলে গেছে? আমি কিচ্ছু জানি না।

তায়াং ভাইয়া আমার কথা বিশ্বাস করলো না।মুখ খুলে যেই আমাকে কিছু বলবে তখুনি খালামণি কয়েকটা ব্যাগ এনে ভাইয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

— তায়াং, এগুলো নিয়ে বাইরে যা। তোর খালামণিকে সুন্দর মতো বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসিস। সেখান থেকে বাসায় চলে আসিস। কোন আড্ডায় বসবি না। বাসায় কাজ আছে।

তায়াং ভাইয়া ব্যাগগুলো নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আমি শান্তিতে সোফায় বসলাম। এনাজ নেই। এখন লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে হবে না। আম্মু নেকাব লাগাতে লাগাতে আমাকে বললো,

— সাবধানে থাকিস। একদম অনিয়ম করবি না।ঠিকমতো খাবার খাবি। ঔষধ যেনো মিস না যায়। তোর খালামণি আর তায়াং-এর কথা মেনে চলিস।

— যথাআজ্ঞা আম্মাজান।

আম্মুকে সাইড কাটিয়ে ইভা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বড়দের মতো করে শাসন করার ভঙ্গিতে বললো,

— ঠিকমতো থাইকো। কোন শয়তানি কইরো না। আর বৃষ্টিতে ভিজবা না। আরেকবার যদি অসুস্থ হও তাহলে তায়াং ভাইয়াকে বলবো হসপিটালে নিতে না। কোলে কইরা ড্রেনে ফালায় দিতে। এতে তুমি এমনি সুস্থ হইয়া যাইবা।

আমি ওর কান টেনে ধরে বললাম,
— বেশি বড় হয়ে গেছিস? আমাকে বুড়িদের মতো শাসন করা হচ্ছে? যা ভাগ। তুই সাবধানে থাকিস। আর আম্মুর কথামতো চলিস।

আম্মু ইভাকে তাড়া দিয়ে বললো,
— জলদী আয় ইভা। তায়াং নিচে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে!তাড়াতাড়ি রওনা না দিলে দেরী হয়ে যাবে। জলদী চল।

ইভা দরজা দিয়ে বের হয়ে আমাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরে শাসনের সুরে বললো,
— কি কি বলছি মনে আছে তো? বড়দের কথা শুনবা কিন্তু। তুমি তো কাল্লু কোন কথাই শুনো না। তুমি কি ভালো তা আমার থেকে বেশি কেউ জানে না।

—তুই আমাকে কাল্লু বললি কেন? আম্মু দেখো ইভা আমাকে কাল্লু বলে। আমি কি কাল্লু কও🥺? আমার গায়ের রং কি কালা তুমিই বলো? আমি তো শ্যামলা।

— ইস, আবার ঢং করা হচ্ছে বোইনে?

— যা মোটু ভাগ। আর আসবি না আমার খালামণির বাড়িতে।

— একশ একবার আসবো।আমার খালামণির বাড়ি আমি আসবো তোমার কি?

— আমার সব।

খালামণি হাসতে হাসতে আমাদের সামনে এসে বললো,
— হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না। আরো ঝগড়া করতে গেলে দেরী হয়ে যাবে।

আম্মু এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
— নিজের খেয়াল রাখিস। তোর খালামণি নিজে অসুস্থ। তাকে আর প্রেশার দিস না। হাতে হাতে একটু দুই বোন মিলে কাজ করে দিস। তুই বাসায় থাক। সিঁড়ি বেয়ে নিচে যেতে হবে না।

— আগামীকাল তো শুক্রবার থেকে গেলে কি হতো?

— আমাদের চাকরীতে কি শুক্রবার আছে মা। কালকে ট্রেনিং ফালাইছে। হ্যাড স্যার এই পর্যন্ত চারবার কল করে বলছে, “ট্রেনিং-টা কিন্তু ইম্পরট্যান্ট আপা। কালকে উপস্থিত থাকতেই হইবো।” যাইতেই হইবো। নয়তো এ.টি.ইউ স্যার কথা শুনাবে। আমি থাকতেই চাইছি। কিন্তু থাকা হবে না।

—তোমাদের মিস করবো আম্মু।

— মন খারাপ করিস না। আগামী মাসেই তো বাসায় যাবি। বিয়ে আছে তো।

—কার বিয়ে?

— তোর চাচাতো ভাইয়ার।

—কোন চাচাতো ভাই?

— দেখ এখন জানেই না কোন চাচাতো ভাই! তোর বড় চাচ্চুর ছোট ছেলে। ও তো সামনের সপ্তাহে দেশে আসবে। তারপর মোটামুটি ভালো বড় করে অনুষ্ঠান করে বউ নিয়ে আসবে।

—ওহ আচ্ছা,এই খবর। আমি দেখছি কিছুই জানি না।

— আসি, ভালো থাকিস।কোন দুষ্টুমি করিস না।

আমি মন খারাপ করে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। ভীষণ খারাপ লাগছে। বাসাটা আবারো খালি খালি হয়ে যাবে। আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। ইভা ভেংচি কেটে সেদিকে চলে গেলো। তন্বী ও খালামণি তাদের গেইট অব্ধি এগিয়ে দিতে চলে গেলো। আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। তারা চোখের আড়াল হতেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো। চোখের পানিটুকু পরতে দিলাম না। বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাসার ভেতর ঢুকে গেলাম।

পরেরদিন…..

গতকাল আম্মু,ইভা চলে যাওয়ার পর থেকে মনটা ভালো নেই। শরীরটা আগের থেকে অনেকটা ভালো।তাই সবার চোখের আড়ালে একটু ছাদে গিয়েছিলাম। যেহেতু ছাদের চাবি আমার কাছে থাকে সেহেতু ছাদে যেতে আমার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। ছাদ থেকে এসে
দরজা বন্ধ করে সোফায় বসতে না বসতেই আবার কোলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই দেখি হাসিমুখে দুই পুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে যেন আরো বেশি খুশি হয়ে গেলো। দুজন একসাথে হাসিমুখে বললো,

— বউ, তুমি সুস্থ হয়ে গেছো😍?

— ভাবী তুমি দেখছি আগের থেকে অনেক সুস্থ?

এরা কারা তাতো আপনাদের বলতে হবে না। তবুও বলছি একজন হলো আমার খুদে প্রেমিক আরেকজন প্রেমিকের ভাই। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুইজন একসাথে, তারমানে কোন চক্কর আছে। কোন দুষ্টামী কিংবা প্রয়োজন ছাড়া এদের দুজনকে একসাথে সচারাচর দেখা যায় না। হাত দুটো কোমড়ে রেখে, চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম।

— ঘটনা কি? দুই নেংটি ইদুর আজ একসাথে? তা নেংটি মহাশয়রা কোন মতলবে আসা হয়েছে?

আমার কথার উত্তর না দিয়ে ইফাত মুচকি হেসে এগিয়ে এলো। তারপর যা করলো তা আমি কল্পনাও করিনি। চোখ দুটো আমার বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে এগিয়ে এসে……

#চলবে

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_22
#Writer_NOVA

আমার কথার উত্তর না দিয়ে ইফাত মুচকি হেসে এগিয়ে এলো। তারপর যা করলো তা আমি কল্পনাও করিনি। চোখ দুটো আমার বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে এগিয়ে এসে আমাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরের দিকে দৌড় দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে ভেতরের দিকে এলাম। সোফার পাশে দাঁড়াতেই সে লাফ দিয়ে সোফায় উঠে গেলো। তারপর আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে টাইট করে একটা চুমু দিলো। আমি বিস্ফোরিত চোখে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ভাই, এরা শুরু করছে কি😵? একজন কানে,কপালে চুমু দেয়।আরেকজন এখন আবার গালে দিলো।মিনিট খানিক পর গালের থেকে ঠোট সরিয়ে গলা ছেড়ে লাজুক মুখে দাঁড়ালো। লজ্জা পেয়ে দুই হাতে মুখ লুকালো। আমি এখনো হাওয়ায় ভাসছি। সিফাত মুখ টিপে হাসছে। হো হো করে হাসির শব্দ পেতেই সামনে তাকালাম। তন্বী পেট ধরে হাসতে হাসতে বসে পরেছে। আমি ওর দিকে রাগী লুকে তাকাতেই ও হাসি না থামিয়ে মুখ ধরে আরো হাসতে লাগলো। কোনরকম হাসি থামিয়ে বললো,

— এটা কি ছিলো নোভাপু? আমি তো হাসি থামাতে পারছি না। আমি কিন্তু কিছু দেখিনি।

আমি একবার ইফাতের দিকে আরেকবার সিফাতের দিকে তাকালাম। ইফাত দুই হাতের ফাঁক দিয়ে তাকাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে। সিফাত তো সোফায় বসে মুখ চেপে ধরে রাখছে। আমি গালে হাত দিয়ে ধপ করে সোফায় বসে থুম মেরে বসে রইলাম। এই নেংটি ইদুর যে এমন কিছু করবে তা আমার বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিলো না। আমি অসহায় মুখে ইফাতকে জিজ্ঞেস করলাম,

— এই নেংটি ইদুর তুই এসব কোথা থেকে শিখেছিস?

সিফাত মুখের থেকে হাত সরিয়ে ফটফট করে বললো,
— আব্বু তো আম্মুকে এভাবে কিসি দেয়। সেখান থেকে বোধহয় শিখেছে ভাইয়া। ভাইয়াও তো সেমভাবে তোমায় কিসি দিলো ভাবী।

আমার চোখ দুটো আরেকবার রসগোল্লা হয়ে গেলো। ওরে বাটপার, ওরে চিটার! আজকালের পিচ্চি পোলাপাইনগুলো এত এডভান্স হয়ে গেছে। না, এদের বাবা-মা কে বলতে হবে ছেলে তাদের বহুত বড় হয়ে গেছে। সাবধান করে দিতে হবে এদের সামনে কোন রোমান্স করতে না। বাচ্চাগুলো অলরেডি পেকে গেছে। এর থেকে বেশি পাকলে হীতের বিপরীত হবে। ইফাত তার ভাইকে ধমক দিয়ে আমাকে বললো,

— আমি এগুলো বাংলা মুভিতে দেখেছি। সাকিব খান তার বউকে এভাবে কিসি দেয়। অনেক দিন ধরে ইচ্ছে ছিলো তোমাকে একটা কিসি করার। আজ পূরণ হলো।

হাত সরিয়ে লজ্জা রাঙা মুখে একদমে কথাগুলো বললো। তারপর আবার মুখ ঢেকে ফেললো। আমি রেগে বললাম,

— ওরে বাংলা মুভিরে! তোর দাদার সাথে বসে এখনো এসব দেখিস তুই। আজই প্লাস দিয়ে তোদের বাসার ডিস এন্টেনার তার কেটে দিবো। তারপর দেখবো মুভি দেখিস কি করে?তোদের দাদা, নাতীর বাংলা মুভি আমি বের করছি। তোর বাংলা মুভির গুষ্টি কিলাই। বাচ্চা পোলাপাইন দেখবে কার্টুন চ্যানেল। তা না দেখে সে বাংলা মুভি দেখছে। আজকে তোদের মায়ের কাছে না না মায়ের কাছে বিচার দিয়ে লাভ নেই। তোদের বাবার কাছে বিচার দিবো।

তন্বী হাসতে হাসতে আমার পাশে এসে বললো,
— বাংলা মুভির কিস করার সিনটা জোস ছিলো। নায়ক ছোট বলে সোফায় উঠে তারপর গলা জড়িয়ে ধরে…..। থাক, আর কিছু বললাম না। আমার নিজেরই লজ্জা করছে। বাপরে, আজকালের পিচ্চিরা এতো এডভান্স!!

এতক্ষণ ঘোরে থাকলেও এখন ঘোর কেটে গেছে। রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে। চিন্তা করুন বাচ্চা ছেলেগুলো কতটা বজ্জাত হলে এমনটা করতে পারে।
সিফাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর বড় ভাইকে ইশারা করে কি জানি বলতে বলেছে। ইফাত মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলছে। আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে রাগী গলায় বললাম,

— দুজন ইশারায় কি বলছিস? জলদী বল।
তোরা এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? দুইটাকে আমি পিটিয়ে সোজা করবো। তোদেরকে এখুনি মাথায় তুলে আছাড় মারবো। ওয়েট কর একটু।

সিফাত মুচকি হেসে বললো,
“জানো ভাবী সেদিন কি হয়েছে?”

কথাটা বলে একবার ইফাতের দিকে তাকালো। ইফাত বারবার মানা করছে বলতে। কিন্তু সিফাত শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— সেদিন হয়েছে কি?

তন্বী ঝাড়ি মেরে বললো,
— বলবি তো কি হয়েছে?

— বলছি তো। ঝাড়ি মারছো কেন?

— জলদী বল।

—সেদিন ভাবী যখন বৃষ্টিতে ভিজে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলো তখন ভাইয়া ভাবীকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। প্রতিদিনই তো ভাবী গোসলের পর যখন ভেজা চুলগুলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝাড়ে তখন ভাইয়া বারান্দার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভাবীকে দেখে। দেখছো ভাবী ভাইয়া তোমাকে কতটা ভালোবাসে।

সিফাতের কথা শুনে আমি ও তন্বী দুজন দুজনার মুখের দিকে শুকনো দৃষ্টিতে তাকালাম। এমন কিছু শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তন্বীর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তন্বীরও একি অবস্থা। আমার মুখের শব্দ মনে হচ্ছে কেউ বন্ধ করে দিয়েছে। কোনমতে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বললাম,

— ওরে এরা দেখি জুয়ান ছেলেগুলোকেও ক্রস করে ফেলেছে। পুরো লুচি পরোটা। তন্বী আমি বোধহয় জ্ঞান হারাবো বোইন। যা জলদী পানি নিয়ে আয়।

ইফাত দ্রুত এগিয়ে এসে সিফাতের পিঠে দুম করে এক ঘুষি বসিয়ে বললো,

— আমার বউকে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি তোর কি হ্যাঁ? আরেকটা কথা বললে ইচ্ছে মতো মারবো।

ঘুষিটা বেশ জোরেই লেগেছে। যার কারণে সিফাত ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। আমরা কিছু বলবো কি করে আমাদের দুই বোনের জবান তো অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে। সিফাতের কান্নার শব্দ পেয়ে তায়াং ভাইয়া কিছুটা দৌড়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলো। জোরে চেচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হচ্ছে এখানে? এতো কান্নাকাটি কিসের?

আমরা দুই বোন নিষ্পলক চোখে একসাথে তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমাদের এমন চেহারা দেখে তায়াং ভাইয়া বিরক্তিমুখে বললো,

— তোরা এভাবে থুম মেরে বসে আছিস কেন? ও কাঁদছে কেন? কিছু তো বলবি?

আমরা কি বলবো? কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। এদের কথা শুনে আমরা পাথর হয়ে গেছি। দের কথা শুনে আমি এখন অজ্ঞান হবো।তায়াং ভাইয়া আমাকে এসে ধাক্কা দিতেই আমি সোফায় মাথা হেলিয়ে দিলাম।তারপর তায়াং ভাইয়াকে খোঁচা মেরে বললাম,

— তায়াং ভাইয়া আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি।জলদী আমার জ্ঞান ফেরা🌚। যদিও পুরোপুরি জ্ঞান যয়নি তবে এদের অত্যাচারে কাইত হইয়া পইরা রইছি।

— ঐ শাঁকচুন্নি কি বলিস এসব?

আমি তায়াং ভাইয়ার হাত টেনে নিয়ে আমার গালে থাপ্পড় মারতে মারতে পরিমণির স্টাইলে বললাম,

—ভাই আমি বাইচা আছি কেন?আমারে মার, আমারে মাইরা ফালা। আমি বাঁচতে চাই না।

ইফাত এগিয়ে এসে আমার গালে এক হাত রেখে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,

— এসব কথা কইয়ো না বউ। আমার অনেক খারাপ লাগে। জানো তুমি এই কয়দিন অসুস্থ ছিলা বলে আমি তোমার লিগা নামাজ পরে দোয়া করছি। অনেক কান্না করছি। তোমার সাথে দেখা করতেও আসছিলাম। আম্মুর সাথে আসছিলাম বলে তোমার সাথে কথা বলতে পারি নাই। তোমার কিছু হইলে আমার কি হইবো কও?

আমি মুখটাকে একটুকু করে ছলছল নয়নে বললাম,
— তুই তো আমারে ইমোশনাল করে দিলি রে। তোর ভালুপাসা দেখে আমি মুগ্ধ।

তারপর হঠাৎ রণমুর্তি রূপ নিয়ে ওর হাত আমার গালের থেকে সরিয়ে রেগে বললাম,
— ইফাইত্তারে তুই কি আমার সামনে থেকে যাবি? নাকি দুই-চার ঘা খাবি। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন। বেশি পেকে গেছো? দাঁড়া তোরে আজকে আমি কাঁচা চাবায় খাইয়া ফালামু। একটু লবণও নিমু না। বাঁচতে চাইলে সামনের থেকে ভাগ।

এদিক সেদিক তাকিয়ে ওকে ধাওয়া দেওয়ার জন্য কিছু একটা খুঁজতে লাগলাম। কিছু পাই না বলে টি-টেবিলের ওপরে থাকা মাটির ফুলদানি হাতে তুলে নিলাম। সেটা উঁচিয়ে মারার জন্য উদ্যত হতেই ইফাত ছুট লাগালো। ইফাতকে নাগাল না পেয়ে সেটা নিয়ে সিফাতের দিকে তাকাতেই দেখি সে আগের থেকে গায়েব। আমি ফুলদানিটা যথাস্থানে রেখে আবার সটান হয়ে সোফায় শুয়ে পরলাম। তন্বী হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পরছে।তায়াং ভাইয়া কিছু না বুঝে আমাদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,

— কি হলো তা কি তোরা কেউ আমাকে বলবি।

তন্বী হাসির রেশ কমিয়ে বললো,
— নোভাপুকে জিজ্ঞেস করো।

— কেন তুই বললে কি সমস্যা?

—আমি কিছু বলতে পারবো না। যারটা তার থেকে জেনে নাও। আমি কিচেনে গেলাম। চা খেলে বল বানিয়ে দেই।

তন্বী মুখ টিপে হাসতে হাসতে কিচেনে চলে গেল। তায়াং ভাইয়া আমার সামনে এসে খোঁচা মেরে রাগী ভঙ্গিতে বললো,

— বলবি কি হয়েছে?

আমি ভাইয়ার দিকে না তাকিয়ে চেচিয়ে বললাম,
— ভাইয়া আমারে নাড়া দিস না। আমি কিন্তু মইরা গেছি।

#চলবে