শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব-৪০+৪১

0
611

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_40
#Writer_NOVA

বাইক থেকে নামতেই আমার বড় চাচাতো বোনের তিন মেয়ে অনন্যা, অর্থি, ঐশি ও ইভা দৌড়ে আমাদের নিতে আসলো। চারটা আমাকে জড়িয়ে ধরে চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলছে। আমি ওদের থেকে কোনরকম নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম,

— খালামণিরারে আমাকে একটু নিঃশ্বাস নিতে দে।আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমি শ্বাস আটকিয়ে নিচে পরে থাকবো।

অনন্যা মুখ গোমড়া করে বললো,
— এত দেরী! তোমাকে কল করতে করতে আমি হয়রান হয়ে গেলাম। আমি কিছু সময় পরপর ইভাকে জিজ্ঞেস করতাছি খালামণি কখন আসবো? কতখন পর পর রাস্তায় এসে দাড়ায় থাকি।তোমারা এত দেরী করে আসবে তা জানলে তোমাদের জন্য বরণডালা নিয়া আসতাম। তোমার জন্য আমরা কেউ দুপুরের ভাত খাই নাই। একসাথে খাবো বলে।

আমি ওর গাল দুটো টেনে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— আহারে, আমার বড় কাকিটা রে। মেয়ের জন্য কত চিন্তা।

অর্থি গাল ফুলিয়ে বললো,
— হু বড় আপিরেই আদর করে। আমরা তো কেউ না। তোমার জন্য আমরা কখন থেকে অপেক্ষা করতাছি।কিন্তু আমাকে কেউ দেখেয় না।

আমি এদের কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসলাম।তারপরে অর্থির এক হাত টেনে আমার পাশে দাঁড় করালাম,
— থাক খালামণি রাগ কইরো না। তুমি আমার কিউটি একটা খালামণি। এখন রাগ করলে কিন্তু আবার চলে যাবো।

অর্থি চেচিয়ে বললো,
— এই না। এক সপ্তাহের আগে কোথাও যাইবা না।আমরা যতদিন থাকবো তুমি ততদিন থাকবা।

ঐশি আমার এক হাত ওর দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে আমাকে বললো,
— কেমন আছো খালামণি?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?

— আমিও ভালো। তোমার জন্য আমরা কখন থেকে বসে আছি। বারবার ইভা খালামণিকে জিজ্ঞেস করি নোভা খালামণি কখন আসবো। আর তোমরা কত দেরী করে আসলা।

— আমরা ইচ্ছা করে দেরী করি নাই। সারা রাস্তা যাম। এতো যামে আগে কখনও পরিনি। সকাল দশটায় রওনা দিয়ে এই চারটা বাজে আসলাম।

— খালামণি ঐ আঙ্কেলটা কে?

— তোমার তায়াং মামার বন্ধু।

অনন্যা বললো,
— আম্মু আর মামার সাথে যে শপিং করছিলো সে?

ইভা আমার থেকে সাইড ব্যাগটা নিয়ে অনন্যাকে উত্তর দিলো।
— হুম এনাজ ভাইয়াই ছিলো শপিং-এর সময়।

অর্থি বললো,
— উনি কি শাড়ি চয়েজ করে দিছে?

অনন্যা বললো,
— হুম সেই শাড়ি চয়েজ করছে। উনার চয়েজ খুব সুন্দর। বিয়ের শাড়িটা বাসার সবাই পছন্দ করছে।

এনাজ বাইক নিয়ে আমাদের কিছুটা পেছনে আসছে।আমি ইভাকে বললাম,
— ইভা,যা উনার থেকে মিষ্টির প্যাকেটগুলা নিয়ে আয়।

ইভা ও অর্থি একসাথে দৌড় দিলো পেছন দিকে। এনাজের সাথে কুশল বিনিময় করে তার থেকে জোর করে প্যাকেটগুলো নিয়ে এলো। আমাদের পাশের বাসায় আসার পর আমি এনাজকে বললাম,

— আপনি আপাতত বাইকটা এখানে তালা মেরে রাখেন। বাসার অবস্থা বুঝে একটু পর এসে নিয়ে যাবেন।

এনাজ মাথা হেলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। বাইক রেখে আমাদের সাথে সাথে চলতে লাগলো। এর মধ্যে অনন্যা,অর্থি,ঐশী তিন বোনই এনাজের সাথে কথা বলেছে। এরা আবার খুব সহজে সবার সাথে মিশতে পারে। ঐশীতো ইতিমধ্যে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। এনাজের হাত ধরে হাটছে। এবার ছোট করে ওদের তিন বোনের পরিচয় দিয়ে দেই। আমার বড় চাচ্চুর চার ছেলে-মেয়ে। তিন ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়ের নাম শাহীনুর।এই আপু বংশের বড় মেয়ে। আর ভাই-বোনের মধ্যে উনি ২য়। তার তিন মেয়ে এই অনন্যা, অর্থি ও ঐশী। অনন্যা এবার কলেজে উঠেছে। অর্থি ক্লাশ 10-এ। ঐশী ক্লাশ ফাইভে। ওদের আপন খালামণি নেই বলে আমি ও ইভা ওদের সব। এই বাসায় আসলে আমাদের দুইজনকে ছাড়া কোন কাজ করবে না। যার বিয়ে সে হলো ওদের ছোট মামা।

বাড়িতে ঢুকতেই আমাদের নিয়ে হৈচৈ পরে গেল। তাদের কান্ড দেখে মনে হচ্ছে ছয় মাস পর আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাই নিয়ে বাবার বাড়ি এসেছি।বাসায় এখন আমাদের নিয়ে হুলস্থুল। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রুমে ঢুকতে পারলাম। আমাদের উঠোনেই L আকৃতির করে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। মানুষ আজ খুব বেশি নয়। আমার এক ফুপি, তার মেয়ে, মেয়ের জামাই, বাচ্চারা ছাড়া আর কেউ আসেনি। আম্মু কাজ ছেড়ে উঠে আসলো। আমি ফ্যান ছেড়ে দিয়ে রুমের ফ্লোরে হাত-পা ছড়িয়ে বসে পরলাম। এনাজ খাটের ওপর চার হাত-পা চারদিকে দিয়ে শুয়ে পরলো। বেচারার ওপর দিয়ে ঝড়ই গেছে। আম্মু ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

— আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?

— একটুও না। বাইকে আসায় আমি হেব্বি আনন্দে আসছি। খালমণিরা আসে নাই?

— এই প্রশ্ন আমি তোকে করতাম। আধা ঘণ্টা আগে কল দিছিলাম তখন বললো বাবু বাজার ব্রীজে যামে আটকে আছে। এখনও কি যামে আটকে আছে কিনা কে জানে?

— আমরা বাইকে আসায় চিপাচাপা দিয়ে জলদী এসে পরেছি।

এনাজ উঠে বসে আম্মুকে সালাম দিলো।
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

— ওয়া লাইকুমুস সালাম। কেমন আছো বাবা?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

— আলহামদুলিল্লাহ। ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবারের ব্যবস্থা করি।

— এত ব্যস্ত হতে হবে না। তায়াং-এর খালামণির বাসা মানে আমারো খালামণির বাসা। যা করতে হবে নিজের হাতেই করতে পারবো।

— আচ্ছা তা করো। এখন যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিতে বলি।

— গোসল করবো আন্টি। নয়তো অস্বস্তি লাগবে।

— তাহলে এই ওয়াসরুমে গোসল করে ফেলো। বিকেল হয়ে গেছে আরো দেরী করলে দুপুরের ও রাতের খাবার একসাথে খেতে হবে।(আমার দিকে তাকিয়ে) বোরখা খুলিস না কেন? বোরখা খুলে ফ্রেশ হো।

আমি আম্মুকে বললাম,
— হ্যাঁ হচ্ছি। একটু জিরিয়ে নেই।

বোরখা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এনাজ গোসলে ঢুকছে। আমি মোবাইল বের করে ফেসবুক ওন করে খাটে বসতেই অনন্যা এসে বললো,
— এখন আবার মোবাইল নিয়া কেন বসছো?খেতে চলো। আজকে কি আর খাবে না? তোমার জন্য আমরা বসে আছি। পেটে ইদুর দৌড়াইতাছে।

আমি মোবাইল রেখে বললাম,
— মেহমান রেখে একা একা কি করে খাবো? বিষয়টা কি ভালো দেখায়?
—গোসল থেকে বের হয়নি?

— না।

— তাকে কি বলবো? আঙ্কেল নাকি মামা?

— মামা বলবি। আঙ্কেল কেন বলবি?

— ছোট মামা কিন্তু আমায় সব বলছে।

— কি বলছে?

— এই আঙ্কেল তোমাকে পছন্দ করে।

আমি চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে ওকে বললাম,
— কার থেকে জানলি?

— বললাম না ছোট মামা বলছে।

— ছোট ভাইয়া কার থেকে জানলো?

— মামাকে তো আঙ্কেল বলছে।

ওর কথা শুনে আমি আরেকদফা অবাক। এনাজ এই কথা ছোট ভাইয়াকেও বলে দিছে। আল্লাহ জানে এবার কি হয়? অনন্যাকে ওর মা ডাক দিতেই ও বের হয়ে গেলো। আমি চিন্তায় পরে গেলাম। যদিও ছোট ভাইয়া ও অনন্যা কাউকে এসব বিষয় বলবে না। তবুও একটা কিন্তু রয়ে যায়।

💖💖💖

ছোট ভাইয়ার নাম আব্দুস সামাদ। তারই বিয়ে। একে আমাদের বাড়ির সবাই ভয় পায়।ভাইয়া আবার আমার আব্বুকে ভয় পায়। আব্বুকে শুধু ভাইয়া নয় আমার চাচাতো সব ভাই-বোন ভয় পায়। আসলে আব্বুকে দেখতে খুব ঠান্ডা ও নরম মনের মানুষ মনে হবে। কিন্তু তার রাগ বাড়ির সবার থেকে বেশি। তাই তাকে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আব্বুকে আমাদের দুই বোনের থেকে চাচাতো ভাই-বোনের ভয় পাওয়া দেখলে মাঝেমধ্যে আমার ভীষণ হাসি পায়।কিন্তু ভাইয়া আবার অন্যরকম। তার মাথা সবসময় গরম থাকে।যেদিন ভাইয়া রেগে যাবে সেদিন বাড়িতে ভাংচুর অবশ্যই হবে। তবে আমি মাঝে মাঝে আব্বুকে ভয় পেলেও ভাইয়াকে একটুও ভয় পাই না। ভাইয়া আমার থেকে ১২ বছরের বড়। কিন্তু আমাদের বন্ডিং দেখলে বলবে পিঠাপিঠি ভাই-বোন। ওকে আমি তুই করে বললেও সবার সামনে সবসময় বলি না। আম্মু জানতে পারলে বকা দেয়।যার কারণে লুকিয়ে তুই বলতে হয়। তায়াং ভাইয়াকে তুই করে বলাও আম্মু পছন্দ করে না। তাই আম্মুর সামনে আমি দুজনকে আপনি বলে সম্বোধন করি। আর আম্মুর আড়ালে তুই।

— এই যে মিস টিডি পোকা হারালে কোথায়?

— কোথাও না।

— তিন মিনিট ধরে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু তোমার কোন রিয়েকশন নেই।

— আমি খেয়াল করিনি।

— তাতো দেখতে পাচ্ছি। তায়াং,আন্টি,তন্বী আসছে?

— না এখনো আসেনি।

— তায়াং আজ অনেক রাগবে। সকালে এমনি রেগে ছিলো। যামে পরে আজ ওর মেজাজ হাই লেভেলের চড়া হবে।

— হুম তাতো হবেই।

— চলো খেতে যাই। নাকি আমাকে রেখে পেটভোজন করে এসেছে?

— ইস, ওমন নই আমি। আপনার জন্য বসে আছি। আর আমার জন্য আমার সব ভাগ্নিরা বসে আছে।

— তোমার ভাগ্নিগুলো ভীষণ মিশুক। ছোট টা তো আমার হাত ছাড়ছিলোই না।

— ওরা এরকমি। সবার সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে।

— ওদের নাম কি?

— বড়জনের নাম অনন্যা, আমরা ওকে অন্যা বলে ডাকি। মেজু অর্থি, ছোট ঐশী।

— খুব সুন্দর নাম।

এনাজ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে লাগলো। তখুনি রুমে শাহীনুর আপু প্রবেশ করে আমাকে বকা আরম্ভ করলো,

— কি রে নোভা এখনো খেতে আসিস না কেন? মেহমান নিয়ে আসছিস আর না খাইয়ে রাখবি? একটু পর মাগরিবের আজান দিবে। আর কখন খাবি? রাতের রান্না বসিয়ে দিলে কি খাবারের ভেজাল করতে পারবো?

— আমার কি দোষ? উনি তো গোসলে গিয়েছিলো। তাকে ছাড়া কি খেতে পারি? মেহমান রেখে খেলে কেমন দেখায়?

শাহীনুর আপু আমার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এনাজের দিকে তাকালো। এনাজের সাথে কুশল বিনিময় সেরে নিয়ে বললো,

— তুমি তাহলে আসছো ভাই? আমি তো ভাবছিলাম আসবা না। তুমি আসছো তাতে অনেক খুশি হইছি। সামাদকে জিজ্ঞেস করলাম তোমাকে কল দিছে কিনা। ও বললো হ্যাঁ দিয়েছে। তুমি না আসলে সত্যি আমি অনেক রাগ করতাম।

এনাজ মাথার পেছনে চুলকে লাজুক হেসে বললো,
— এতবার করে বলছেন না আসতে পারি? ছোট ভাইয়ের কাছে বড় বোন দাওয়াত রক্ষা করার কথা বলেছে। ছোট ভাই সেটা অমান্য করলে তো বড় বোনকে অপমান করা হয়।

— চলো তাড়াতাড়ি খেতে আসো। আন্টিরাতো এখনো আসলো না।নোভা আয় জলদী।

আপু চলে গেল। বলে রাখা ভালো শাহীনুর আপু ও ছোট ভাইয়া ঢাকায় গিয়েছিল শপিং করতে। তখুনি এনাজ ও তায়াং ভাইয়া ছিলো তাদের সাথে। আমাদের পরিবারটা এমনি বেশ বড়। যদিও সবাই ভিন্ন খায়। তবে কোন অনুষ্ঠান হলে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করি। এনাজ বললো,

— তোমাদের পরিবারের সবাই খুব ভালো। আমাকে কত সহজে সবাই আপন করে নিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে নিজের বাসার অনুষ্ঠানে এসেছি। খুব বড় কপাল থাকলে এরকম ফ্যামেলী পাওয়া যায়।

— তা ভুল বলেননি। আমার পরিবারের মানুষ এরকমি। আরো দুটো দিন যাক তখন আপনিও তাদের সাথে পুরোপুরি মিশে যেতে পারবেন। আমাদের বিক্রমপুরের মানুষ অনেক অতিথিপরায়ণ। অতিথি পেলে আমরা ভীষণ খুশি হই। এখান থেকে যাওয়ার পর আপনি সারাজীবন এখানকার আতিথিয়েতা মনে রাখবেন।

এনাজ শয়তানি হাসি দিয়ে এক চোখ মেরে বললো,
— এই জন্য তো এই বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছি। পুরো পরিবার পেয়ে যাবো তাহলে😉।

— ইস, শখ কত!

— অনেক শখ।

— হু হয়েছে চলেন এবার। এখন না গেলে সত্যি বকা খাবো। আমার বাকি চাচাতো ভাইয়ের বউদের সাথে আপনাকে পরিচয় করে দিবো।

— ওকে চলো।

রুম থেকে বের হয়ে বাইরে এলাম। উঠানের কোণার দিকে দুটো টেবিল পাতা। সেখানে চেয়ার টেনে খেতে বসে পরলাম। আমাদের সাথে অনন্যা,অর্থি,ইভাও বসলো। ওরা এনাজের সাথে কথা বলছে। আম্মু আমাদের খাবার বেড়ে দিয়ে গেল। এনাজ খেতে খেতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
— রান্না কে করেছে?

আমি ডালের বাটি থেকে ডাল প্লেটে নিয়ে বললাম,
— এতগুলো মানুষের রান্না শাহিনুর আপু একা করছে। আপু রান্নায় বেশ এক্সপার্ট। উনি একা ১০০ জন মানুষের রান্না একা করতে পারবে। উনাকে অনুষ্ঠানের সময় রান্নাঘর ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

— তাহলে তো আপু অনেক কাজের। তুমি তাহলে এতো অলস কেন?

— সব পরিবারে একটা অলস থাকেই। আর আমার পরিবারে সেই একজন আমি।

— এমনভাবে বলছো যেন মনে হচ্ছে কি বীরত্বের কাজ।

—ইয়েস।

— সব রান্না কি মাটির চুলোয় করেছে?

— জ্বি হ্যাঁ। গ্যাস বেশি হয়ে যাইনি আমাদের।

— আপুর রান্না অনেক মজা।

— যে খাবে সেই বলবে। আপু অনেক ভালো রান্না পারে।

— তুমি মাটির চুলোয় রান্না করতে পারো?

— এটা কি এমন কঠিন কাজ যে পারবো না?

— তুমি সত্যি পারো😳?

— ক্লাশ নাইন থেকে মাটির চুলোয় রান্না করতে পারি। এটা আমার কাছে কোন ব্যাপারই মনে হয় না।

— গ্যাস নেই এইখানে?

— প্রত্যেকের ঘরে ঘরে আছে। তবে গ্রামের মানুষ মাটির চুলোয় রান্না করতে বেশি পছন্দ করে। খরচ কম আবার রান্নাও খুব দ্রুত হয়।

— মাটির চুলোর রান্না ভীষণ মজা।

— হ্যাঁ।

আমরা দুজন ফিসফিস করে কথা বলছি। অর্থি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমরা দুজন কি কথা বলো?

এনাজ দুষ্টুমির সুরে বললো,
— বলতেছি ভাগ্নিগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে এবার বিয়ে দিতে হবে।

অর্থি মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— এ্যাহ না। ছোটমামার পর সিরিয়ালে নোভা খালামণি। তারপর ইভা। আমাদের বিয়ে দেরী আছে।

এনাজ সবার সাথে কথা বলে খেতে লাগলো। আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। কিছু সময় পর খালামণি, তায়াং ভাইয়া, তন্বী চলে এলো। একেকজনের চেহারার অবস্থা কাহিল। তায়াং ভাইয়া অনেক রেগে আছে। আমার দিকে রেগে একবার তাকিয়ে হনহন করে আমাদের দালানে ঢুকে পরলো। আমি মুচকি হেসে শসায় কামড় দিয়ে চাবাতে লাগলাম।
তায়াং ভাইয়ার সাথে আজ সাবধানে কথা বলতে হবে। নয়তো সব রাগ আমার ওপর ঝারবে।

#চলবে

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_41
#Writer_NOVA

পরের দিন…..

সব মিলে সকাল সাতটায় জোর করে উঠালো। এমনভাবে উঠিয়েছ মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেছে আর আমি শেষ সৈনিক হিসেবে বেঁচে আছি।চোখ টেনে মেলতে পারছি না। নামাজ পরে একটু ঘুমিয়েছিলাম। তাও এদের সহ্য হলো না। এখন আমার মাথাব্যথা না উঠলেই চলে। ঘুম ঘুম চোখে বাইরে আসতে দেখি সব টেবিলে গোল করে খেতে বসেছে। আমাকে দেখে সামাদ ভাইয়া বললো,

— বোইনা খেতে আয়।

— এত সকালে খেতে ভালো লাগে না। দশটার সময় সব হজম হয়ে যাবে। তখন আমাকে কে খেতে দিবে?

— তখন আবার খাবি।

— আমাকে রেখে সব বসে পরছে। আবার কত কথা। যা খাবো না তোদের সাথে।

তায়াং ভাইয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— তোর খেতে হবে না। যা গিয়ে পরে পরে ঘুমা। তুই তো ঘুমাতে এসেছিস।

আমি তায়াং ভাইয়াকে একটা ভেংচি কেটে জোরে চেয়ার টেনে বসলাম। আমি বসতেই এনজিও সংস্থা তায়াং ভাইয়ার সাথে থেকে প্লেট নিয়ে আমার পাশের খালি চেয়ারে বসে পরলো। এর কান্ড দেখে আমি রেগে তাকালাম। বেচারা বোকা ফেস করে এক হাসি দিতেই আমিও ফিক করে হেসে উঠলাম। তায়াং ভাইয়া এনাজকে টম্পনি কেটে সামাদ ভাইয়াকে বললো,

— বুঝছেন ভাই, আজকালের পিচ্চি পোলাপাইন গুলাও বেশি এডভান্স হয়ে গেছে। বড় সমন্ধিরা যে সামনে আছে তাও কোন লাজ শরম নেই। সব বোধহয় প্রেমে পরার সাথে সাথে খেয়ে ফেলেছে। এমন ছেলের কাছে বোনের বিয়ে দিতে চাই না।

এনাজ এক ভ্রু উঁচু করে একগালে হেসে বললে,
—আমাকে পিচ্চি পোলাপাইন বললে ইফাত কিরে ভাই? আর শালা কি বললি তুই? আমার কাছে তোর বোনের বিয়ে দিবি না? এই বড় ভাইকে সাক্ষ্যি রেখে বলছি যদি তোর বোন মানে তোর খালাত বোনকে আমার কাছে বিয়ে না দিস তাহলে সোজা উঠিয়ে নিয়ে কাজী অফিস চলে যাবো। বিয়ের পর কল দিয়ে বলবো তোর বোনকে বিয়ে করে ফেলছি। দেখি এখন তুই কি করিস? এভাবে মান-সম্মান খোয়ানোর থেকে ভালো চুপচাপ আমার হাতে তুলে দিস।আমি কিছু করবো না।

তায়াং ভাইয়া তরকারির বাটি থেকে কাঁচামরিচ তুলে নিয়ে এনাজকে ছুঁড়ে মেরে বললো,
— তোর এত সাহস আছে নাকি? সাহস থাকলে আমার সামনের থেকে তুলে নিয়ে যাস।

— সাহস নিয়ে প্রশ্ন তুলিস না তায়াং। তাহলে ভালো কিছু হবে না।

আমি এনাজের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে মুখটাকে কুচোমুচো করে বললো,
— তুমি এভাবে তাকিয়ে না। আমার তেমন কিছু করার ইচ্ছে নেই। তবে যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে করতেও পারি। আমাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।

আমি তার কথা শুনে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শব্দ করে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। সামাদ ভাইয়া আমাদের কান্ড দেখে হাসছে। সামাদ ভাইয়াকে হাসতে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম,

— তোর বউয়ের সাথে কথা হইছে ভাইয়া?

— না রাতে একটু হইছিলো।

— তুই জিতলি ভাই। মামাতো বোনকে ছোট থেকে একতরফা পছন্দ করে তাকে বিয়ে করে এখন ঘরে তুলবি। তোরা বিদেশি ছেলেরাই জিতিস। বুড়ো বয়সে কচি মেয়ে বিয়ে করতে পারিস।

— ঐ আমি কি করছি?

— কি করিস নি তাই বল? আবার বড় গলায় কথা বলিস? তোকে যদি জিজ্ঞেস করতাম তখন বলতি না মারিয়া আমার মামাতো বোন। ওকে আমি কেন পছন্দ করবো? এখন তাহলে বিয়েটা কি আমার ফুফাতো বোনের সাথে হচ্ছে সালাদ😤? তোর বয়স ৩৩ আর তোর বউয়ের মাত্র ১৮। আমার থেকে তিন বছরের ছোট। আগে নাম ধরে ডাকলেও এখন তো নাম ধরে ডাকতে পারি না। অবশ্য ওর জামাইকে সামাদের বদলে সালাদ বলি তাহলে ওকে কি প্রথম প্রথম ভাবী বলতে পারবো? তবুও কিচ্ছু করার নাই। ভাবী বলেই ডাকতে হবে। তুই তলে তলে রেলগাড়ী চালিয়ে এখন বলছিস কি করছি?

সামাদ ভাইয়া আমার কথার উত্তর না দিয়ে হাসতে লাগলো। মারিয়া মানে সামাদ ভাইয়ার বউ সম্পর্কে ভাইয়ার আপন মামাতো বোন। সে বহু আগের থেকে ওকে একতরফা পছন্দ করে। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এক বছর আগে ওদের কাবিন (আকদ) হয়েছে। এখন শুধু অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিয়ে আসবে।ভাইয়া জানে একতরফা ভালোবাসাটা কতটা কঠিন।তাই হয়তো এনাজের বিষয়টা জেনেও কিছুই বলেনি।
ভাইয়া এখনো হাসছে।তাতে আরো রাগ উঠলো। আমি রেগে বললাম,

— একদম দাঁত কেলাবি না। ডালের চামচ ফিইক্কা মারমু। শয়তান ছেমরা। একটাও ভালো না। সব তলে তলে রেলগাড়ী চালায়।

তায়াং ভাইয়া ফোঁস করে রেগে বললো,
— কি করেছি তোর সাথে?

— তোকে কিছু বলছি আমি? তুই ফোঁস করে উঠিস কেন? আমি তো কাউকে মিন করে বলিনি। যেহেতু তোর গায়ে ফোস্কা পরেছে তাহলে তোকেই বলছি।

আমাদের ভাই-বোনের ঝগড়া দেখে মনে হচ্ছে এনাজ হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পরে যাবে। শাহিনুর আপু রান্নাঘর থেকে এসে ভাতের বোল টেবিলে রেখে বললো,

— কি হয়েছে তোদের? ঝগড়া করিস কেন?

আমি আপুর উত্তর না দিয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করলাম,
— অন্যা,অর্থি, ইভা কোথায়?

— মেজু কাকা আসতাছে। তাদের আনতে গেছে।

— দুই আপু আসবে না?

— হুম জামাই নিয়ে আসবে। এর মধ্যে বোধহয় চলেও আসছে।

আমার আব্বু, চাচ্চুরা মিলে তিন ভাই। ভাইদের মধ্যে আব্বু ছোট।বোন চারটা ছিলো। কিন্তু এখন মাত্র একজন বেঁচে আছে। যে বেঁচে আছে সে আবার আব্বুর ছোট। বড় চাচ্চুর চার ছেলে-মেয়ে।মেজু চাচ্চু ঢাকায় থাকে। তার তিন ছেলে-মেয়ে। দুই মেয়ে আর এক ছেলে। মেয়ে দুটোর বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলেটা আবার আমার ছোট। তাই ওকে নাম ধরেই ডাকা হয়।আর আমার আব্বুর আমরা দুই মেয়ে।

শাহীনুর আপু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
—বড় মামীরা কবে আসবে?

— কারা নূর আপিরা?

— হুম, নূরদের কথাই বলছি।

— হ্যাঁ, বিকালে আসবে।

— তন্বী, খালামণি কোথায়?

— আসলেই তো তারা কোথায়?

তায়াং ভাইয়া বললো,
— আম্মু, তন্বী খালামণির সাথে ঐ পাশের বাসার এক আন্টির বাসায় গিয়েছে।

সামাদ ভাইয়ার খাওয়া হতেই সে উঠে গিয়ে আমাদের বললো,
— আচ্ছা থাকো তাহলে তোমরা। আমার আবার ডেকোরেশনের লোকদের সাথে কথা বলতে হবে। হলুদের স্টেজ কবে করবে কে জানে? উনাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আগামীকাল করবে।

শাহীনুর আপুর সাথে কিছু টুকটাক কথা বলে সামাদ ভাইয়া চলে গেল। আপু তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
— তায়াং কিছু দিবো?

আমি তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,
— আপু, মুলার তরকারি আছে? থাকলে ভাইয়াকে দিয়ে যাও। ভাইয়ার মুলার তরকারি ভীষণ পছন্দ। এটা হলে আর কিছু লাগে না।

শাহীনুর আপু বললো,
— মুলার তরকারি রান্না করি নাই। সিমের তরকারি আছে তা দিবো? দুপুরে না হয় তোমার জন্য আলাদা করে মুলার তরকারি রান্না করবোনি।

তায়াং ভাইয়া চেচিয়ে বললো,
— না আপু। আমি মুলার তরকারি পছন্দ করি না। এই শাঁকচুন্নি মিথ্যে বলছে।

এনাজ মুখ টিপে হেসে বললো,
— তোর পছন্দ তায়াং তা বলতেই পারিস। এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

— শালা, এখুনি আমার বোনের আইন টানিস? আর তো দিন পরেই আছে। তুই বউয়ের আঁচল ধরেই ঘুরবি।

শাহীনুর আপুকে ফুপি ডাক দিতেই সে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো। তায়াং ভাইয়া আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো,
— তোর ভিটামিন মাইরের অভাব আছে। ভিটামিন মার খেলে তুই ঠিক হবি।

আমি প্লেটের খাবার শেষ করে গ্লাস নিয়ে একটু দূরে হাত ধুয়ে এলাম। গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে হাতে থাকা পানি তায়াং ভাইয়ার মুখে ছিটা মিরে বললাম,

— কম করে খা পাঠা, কম করে খা। দিনকে দিন যে ফুলছিস সেই দিকে খেয়াল আছে তোর? চিন্তা করতেছি সামনের কুরবানির পশুর হাটে তোকে উঠাবো। তাতে আমার বেশ লাভই হবে। চড়া দামে তোকে বিক্রি করা যাবে।

ভাইয়া চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে আসতে নিলেই আমি দৌড়ে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে সবার সাথে বসে পরলাম। এখানে ভাইয়া আসবেও না। আর আমাকেও ধরতে পারবে না😝।

💖💖💖

দুপুরে….

আমাদের বাড়ির পুকুরে সব গোসল করতে নেমেছে। তায়াং ভাইয়া, এনাজ, সামাদ ভাইয়া সাথে দুই দুলাভাই। ঐশী, মেজু ভাইয়ার বড় মেয়ে আশা, ফুপাতো বোনের দুই ছেলে-মেয়ে। ইচ্ছে মতো ডুবচ্ছে আর শুধুই জোরে জোরে চিৎকার করে সারা বাড়ি তুলে ফেলছে। এখন মনে হচ্ছে আসলেই এই বাড়িতে বিয়ে। আমি, অন্যা,অর্থি,ইভা,তন্বী পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে ওদের হৈচৈ দেখছি। আমি মোবাইলে ভিডিও করে নিচ্ছি। তায়াং ভাইয়া ডুব দিয়ে কিছুটা কাদামাটি উঠিয়ে এনে আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো। অর্থি আমাকে অন্য দিকে টেনে নিয়ে যেতেই রক্ষা হয়েছে। তায়াং ভাইয়া শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— ইস একটুর জন্য বেঁচে গেলি। তুই ঐখানে দাঁড়িয়ে থাকিস। আমি তোকে কাদা দিয়ে ভুত বানাবো।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
— সাহস থাকলে দিয়ে দেখাস। তুই যখন আগামীকাল জামাই সেজে কনের বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হবে তখন শোধ তুলবো।

— ঘন্টা করবি তুই আমার।

ভাইয়া আবার ডুব দিয়ে অন্য দিকে চলে গেল। এনাজ জোরে চেচিয়ে বললো,
— টিডি পোকা গোসল করবে নাকি?

— জ্বি না। আপনারাই করেন। তা এনজিও সংস্থা আপনি সাঁতার জানেন তো? নাকি ঘাট ধরে বসে থাকবেন?

— এভাবে অপমান🙁? সাঁতার না জানলে পুকুরে নামতাম আমি? আমি এখন পুকুরের মাঝখানে আছি। আর তুমি আমাকে ঘাট ধরে বসে থাকতে দেখছো। এগুলো কোন কথা?

তায়াং ভাইয়া এনাজকে বললো,
— আরে আমাদের পানিতে নামতে দেখে ওর হিংসে হচ্ছে। তাই এসব কথা বলছে।

— জ্বি না। আমার কাউকে দেখে হিংসে হচ্ছে না।

অনন্যা শয়তানি হেসে বললো,
— ঐ যে এলো সাপ এলো। ঐদিকে দেখো মামা।

সামাদ ভাইয়া ভাবলো সত্যি সাপ। উনি অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলো
— কোথায় সাপ?

আমরা পাঁচজন পেয়ে গেলাম শয়তানি করার উপায়। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ক্লোজ আপের এড দিলাম। অর্থি চেচিয়ে বললো,
— ছোট মামা তোমার ঐদিক দিয়ে দেখলাম। উঠে আসো। নয়তো সাপে কামড় দিবে।

ইভাও মুখটাকে সিরিয়াস মুডে নিয়ে বললো,
— ভাইয়া কামড় দিলে কিন্তু আপনার আর বিয়ে করতে হবে না।

আমি চেচিয়ে বললাম,
— লুঙ্গি সাবধানে রাখিস। সবগুলো তো লুঙ্গি পরে নেমেছিস। সাপের ধাওয়া খেয়ে যেন আবার লুঙ্গি খুলে না যায়😷। তাহলে কিন্তু আরেক সর্বনাশ। পানিতেই থাকতে হবে।

তন্বী মুখে হাত দিয়ে বললো,
— ভাইয়ারা সাবধান। সাপে কামড় দিয়ে আবার লুঙ্গি টেনে নিয়ে না যায়। ভালো করে গিট দিয়ে নে।

আমাদের কথা শুনে সবাই আমাদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমরা পাচজন হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতে বাকি।তায়াং ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
— তোদের যদি পুকুরে গোসল করতে হয় তাহলে নেমে পর। পাড়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখে জ্বলতে,পুড়তে হবে না।

আমি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলেই অনন্যা বললো,
— আমাদের এত শখ নাই মামা। আমরা এখন বড় হয়েছি। পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করার বয়স চলে গেছে।

আমি মুখ ঝামটা মেরে বললাম
— তোর মাথার ঘিলু কি গলে পরে গেছে রে পাঠা? কি বলিস এসব? পুকুরে নেমে ডুবানোর বয়স আমাদের আছে? তোরাই বেশি করে ডুবা। যদি একটারো জ্বর আসে কিংবা ঠান্ডা লাগে তাহলে খবর আছে।

তায়াং ভাইয়া আমার কথা গায়ে না মেখে মাঝখানের দিকে চলে গেল। তারা পাঁচজন ইচ্ছে মতো ডুবাচ্ছে। পুঁচকেগুলো ঘাটের সামনেই সাঁতার কাটছে। ভাইয়াদের দেখে মনে উনিও আজ ওরাও পুঁচকেদের মতো ছোট হয়ে গেছে। টানা দুই ঘন্টা ডুবিয়ে তারপর সবগুলো উঠলো। একেকটার চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে আবার খেতে বসলো। আমি, অনন্যা, অর্থি,ইভা আর দুই ভাবী মিলে ওদের সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি। শাহীনুর আপু সবাইকে বিনা ডিটারজেন্টে ধুচ্ছে। আমি বেশ ইনজয় করছি। আমার হেব্বি লাগছে।

শাহীনুর আপু একটু থেমে আবার শুরু করলেন,
— সবগুলো ছোট বাচ্চাদের মতো করে দুই ঘন্টা ডুবিয়ে আসলো। চোখগুলো এখনো লাল হয়ে আছে। যদি একটারো ঠান্ডা লাগে তাহলে খবর আছে। জ্বর আসলেও একটারও সেবা করবো না। কাউকে সেবা করতে দিবো না। এই বুড়ো বয়সে কেউ এতো ডুবায়। চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অন্যার আব্বু তুমিও ওদের সাথে জোড়া বেঁধে গেছো। জ্বর আসলে আমি একটুও সেবা করবো না। যেমন তোমার ছোট মেয়ে ডুবাইছে তেমন তুমিও।

ফুপাতো বোনও সবাইকে ঝারছে। তার দুই ছেলে-মেয়ের পিঠে কতগুলো তাল ফেলেছে। তিনি বললেন,

— পুকুরে গোসল করতে নেমে একদম ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে। যদি কেউ একজন অসুস্থ হও তাহলে সরকারি হসপিটালে কোরনার রোগী বলে ভর্তি করে রেখে আসবো।

আমি সবার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলাম। তারপর আপুদের সাথে সুর মিলালাম।

— একদম ঠিক বলছো আপু। একটাকেও ধরবো না। জ্বর,ঠান্ডা লাগা তো দূরে থাক। যে একটা হাঁচি দিবে তাকে ঐ পশ্চিম দিকের বাঁশবাগানে ফেলে দিয়ে আসবো। নয়তো চ্যাংদোলা করে ছাদের ওপর রোদে শুকাতে দিবো। রোদের তাপে শুটকি হলে এরা ঠিক হবে। তার আগে নয়।

আমার কথা শেষ হতেই এনাজ হাঁচি দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে উঠলো। বেচারা শুকনো মুখে আমার ও আপুর দিকে তাকালো। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। আমি আপুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

— এই তো পেয়ে গেছি। এটাকে আগে ধরো। বাঁশ বাগানে ফেলে রেখে আসি। তারপর রোদে শুকাতে দিবো। তোমরা চাইলে সরকারি হসপিটালে করোনার রোগী বলে ভর্তি করে রেখে আসতে পারো৷ (এনাজের দিকে তাকিয়ে) তা ভাইয়া চোখ দুটো তো লাল করেছেন। জ্বালা করছে না।

এনাজ দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বললো,
— কে ভাইয়া? কার ভাইয়া? আমাকে ভাইয়া বলতে বারণ করেছি টিডি পোকা।

আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
— সবার সামনে ভাইয়া বলবো না তো কি জামাই বলবো?

এনাজ একগালে হাসি দিয়ে বললো,
— খারাপ নয়। বলতে পারো। আমি কিছু মনে করবো না। তবে ভাইয়া বলবা না।

— চুল টেনে ছিঁড়বো। এখন যদি ঠান্ডা, জ্বর আপনাকে ধরে তাহলে আমি একটুও আপনার সামনে ভিড়বো না। ইচ্ছে করে ওদের দাওয়াত দিলেন।

— এমন করো কেন? কত বছর পর পুকুরে গোসল করলাম। সবার সাথে মজা করতে করতে কখন যে এত সময় চলে গেল বুঝতেই পারিনি🥺।

উনার ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টানো কথাগুলো শুনে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু না হেসে মুখটাকে কঠিন করে বললাম,
— আপনি অসুস্থ হলে এখন আমিও বুঝবো না। এটাই আপনার শাস্তি।

আমাকে এনাজের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজু ভাবী বললো,
— কি ফুসুরফাসুর করছো নোভা?

— কিছু না ভাবী।

আমি তরকারির বাটি নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলাম। ভাবীর চোখে আমি সন্দেহ দেখতে পেয়েছি। এখন ধরে ফেললে ভেজালেও পরতে পারি। তারচেয়ে মঙ্গল এখান থেকে ভালোই ভালোই কেটে পরা।

#চলবে