#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_70
#Writer_NOVA
৫ বছর পর……
তাড়াহুড়ো করে রান্না করছি। রান্না চড়াতে আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে। সারা বাসা গুছিয়ে রান্না চড়াতে যে এতটা দেরী হয়ে যাবে বুঝতেই পরিনি।
— আম্মু কি করো?
আমার চার বছরের ছেলে নাভান গুটি গুটি পায়ে কিচেনের দরজা দিয়ে উঁকি মেরে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। আমি কড়াইয়ে মসলা কষাতে কষাতে ওকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— রান্না করি।
— কি রান্না করো?
— মাছ রান্না করি।
— কি মাছ?
— পাবদা মাছ।
— কি দিয়া রান্না করো?
— সবজি দিয়ে।
— কি সবজি?
— এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না বাবা। জলদী রান্না করতে হবে। তোর আব্বু চলে আসবে। চুপচাপ গিয়ে বোনের খেয়াল রাখো।
নাভান দরজার সামনের থেকে সরলো না। আমি এবার ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,
— মসলা কষাচ্ছি বাবা। এখান থেকে চলে যাও। নয়তো কাশি উঠবো।
— আমি দেখি!
— মসলা কষানো তুই কি দেখবি বাপ?
— একটু দেখি।
— দেখতে হবে না। নাবার কাছে যাও। আমি কি এখানে আসতে বলছি তোমাকে? যাও গিয়ে বোনুর পাশে বসে থাকো।
— বোনু ঘুমাইতাছে।
— ঘুমাইতাছে ওর পাশে গিয়ে খেলো। নাবা উঠে গেলে কান্না করবো তো।
— নাবাকে উঠাই গিয়ে।
খুন্তি দিয়ে মসলা নেড়েচেড়ে নাভানের দিকে তাকালাম। চোখ দুটো ছোট করে খুন্তি উঁচিয়ে ওকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম,
— এটা দেখছিস? নাবাকে উঠালে এটা তোর পিঠে ভাঙবো পাঁজি ছেলে। তোকে কি আমি উঠাতে বলছি? ওর পাশে বসে থাকতে বলছি।
নাভান ভয় পেয়ে কিচেন থেকে রুমের দিকে দৌড় দিলো। আমি রান্নায় মনোযোগ দিলাম। দেখতে দেখতে পাঁচ বছর কেটে গেছে। দুই সন্তানের জননীও হয়ে গেছি। আমাদের এখন এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম এনান আহমেদ নাভান, মেয়ের নাম এনায়া আহমেদ নাবা। নাবার বয়স ছয় মাস শেষ হয়ে সাতে পরেছে। আমাদের চারজন সুখী পরিবার। পাঁচ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। এনাম ভাইয়ার নিতুর সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের তিন বছরের এক ছেলে আছে। নাম এনায়েত আহমেদ। এনাম ভাইয়ার চাকরির সুবাদে পুরো পরিবার চট্টগ্রাম থাকে। আমরা চারজন এনাজের পুরনো ফ্ল্যাটে।
মাছ রান্না করে চুলোয় ডালের পাতিল বসিয়ে দিলাম। অনেকখন ধরে নাভানের কোন শব্দ পাচ্ছি না। ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে রুমের দিকে এগুলাম। সেখানে গিয়ে আমার চোখ চড়কগাছ। নাভান পাউডারের খাপ খুলে সারা রুম, চাদর, ফ্লোর সাদা করে ফেলছে। নিজের শরীর তো সাদা ভূত করছেই। সাথে এখন বোনের শরীরে ডলে দিচ্ছে। আমার পুচকে মেয়ে তাতে খিলখিল করে হাসছে। রাগে আমার সারা শরীর রি রি করছে। আমার কাজ কমাতে না পারলেও বাড়াতে বেশ এক্সপার্ট তিনি।
— এসব কি করছিস তুই নাভান?
— আম্মু দেখো আমি ভূত সাজছি।
— তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
— সুন্দর লাগতাছে না?
— তোর সুন্দরের গুষ্টি কিলাই। কার ভালো লাগে আবার এই জ্বালা সহ্য করতে। তোর পিঠে আজকে তাল পরবে। বিচ্ছু পোলা, আমার শান্তি নষ্ট করতে তুই একাই যথেষ্ট। জলদী আমার চোখের সামনে থেকে সর। নয়তো তোর কপালে মার আছে নাভান।
— কিনু🥺?
— আকাম করে এখন মুখটাকে ইনোসেন্ট বানানো হচ্ছে? দাঁড়া আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।
আমি এগিয়ে আসার আগেই নাভান উঠে খাটের কোণায় লুকালো। আমি রেগে সেদিকে যাওয়ার আগেই কোলিং বেল বেজে উঠলো। আমি দাঁতে দাঁত চেপে নাবাকে কোলে তুলে নাভানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— তোরে আজকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। সবসময় আমাকে জ্বালানোর ধান্দা।
— আমার বাবা চলে আসছে।
— তোর বাবা কে ভয় পাই নাকি আমি?
— বাবা তোমাকে পিট্টি দিবে।
— কে কাকে পিট্টি দেয় আমিও দেখবো।
নাবাকে কোলে নিয়ে দরজা খুলে দিলাম। আমাদের দেখে এনাজ ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললো,
— কি ব্যাপার নাভানের আম্মু? মুখের এই অবস্থা কেন? কি করছে আবার নাভান?
— কি করেনি তাই বলো? আমাকে আজাইরা তোমার ছেলে দেখতেই পারে না। সারা রুম পাউডার দিয়ে নষ্ট করছে। নিজের শরীর তো সাদা করছেই সাথে মেয়েটাকেও ভূত বানাইছে। এই যে দেখো।
এনাজ আমার কথা শুনে মুচকি হাসলো। ওর হাসি দেখে আমার মাথায় চিনচিন করে রাগ বাড়তে লাগলো। চেচিয়ে বললাম,
— একদম হাসবে না। মাথা গরম আছে আমার।
— ওকে হাসবো না। দাও আমার মা-মণিকে আমার কোলে দাও।
— জ্বি না। বাইরে থেকে আসছো যাও গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। আর তোমার ছেলেকে পারলে একটু গোসল করে দিও। আমি পারবো না কিছু করতে। এদের জ্বালায় আমি অতিষ্ঠ। পুঁচকে মেয়েটাও একদম ভাইয়ের মতো হয়েছে। সুযোগ পেলে জ্বালাতে ছাড়ে না। আমার হইছে যত জ্বালা।
এনাজ আমাকে সাইড কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। আমার এখন কান্না পাচ্ছে। গত পরশু বিছানার চাদর, বালিশের কভারগুলো ধুলাম। আজকে বলে আবার ধুতে মন চায়। নাবাকে কোলে নিয়ে সোফায় চুপ করে বসে রইলাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। এনাজ ফ্রেশ হয়ে এসে আমাকে সোফায় বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হলো বসে আছো যে? গোসল করবে না?
— কিছু করবো না।
— কেমন কথা এগুলো নাভানের আম্মু?
— এমন কথাই।
— কি হয়েছে?
— বাচ্চা দুটো অনেক জ্বালায়। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে দু-চোখ যেদিকে যায় চলে যেতে।
— ওরা কি বুঝে বলো? বুঝলে তো এমন করতো না।
— তাই বলে কেউ এতো জ্বালায়? আমি একা এতদিক সামলাতে পারি না।
— কি করবো বলো? ওরা তো তোমার মতো হয়েছে। তুমিও তো সবাইকে কম-বেশি নাকানিচুবানি খাইয়েছো। এখন বুঝতে পারছো তায়াং, আম্মু, আব্বু তোমার কতকিছু সহ্য করতো।
— আমি আর ওরা কি এক হলাম নাকি!
— ছোটবেলায় কম-বেশি সবাই জ্বালায়। তুমি আমি সবাই বাবা-মা কে এভাবে জ্বালিয়েছি।
— হু জ্বালিয়েছি কিন্তু তোমার ছেলে-মেয়ের মতো এতো না। এই পুঁচকে নাবা কি করছে জানো?
— কি?
— সকালে ফিডারে করে একটু গরুর দুধ খাইয়ে দিতে নিয়েছি ভালো মেয়ের মতো মুখে নেয়। তারপর পিচকারির মতো করে ফুস করে শব্দ করে সব ফেলে দিছে। এক ঢোকও খায়নি। ছেলেটাকে খাইয়ে দিতে বসলে আমার পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকে। আমি একা কতদিক সামলাবো বলো তো? ভোর সকালে উঠে নামাজ পরে আর দু-চোখ লাগাতে পারি না। তাড়াহুড়ো করে রান্না বসাতে হয়। রান্না শেষ হওয়ার আগে তোমার গুনধর ছেলে-মেয়ে উঠে যায়। তোমাকে খাইয়ে, বিদায় করে দিয়ে আবার দুটোকে খাওয়াতে বসতে হয়। সেখানে দুই ঘন্টা ব্যয় করে একগাদা কাপড়চোপড় কাচতে হয়। ছাদে শুকাতে দিয়ে এসে বসতে না বসতে দুপুরের রান্নার চিন্তা করতে হয়। তারপর ওদের গোসল, খাওয়া। আমি একা হাপিয়ে উঠি।
এনাজ আমার কোলের থেকে নাবাকে নিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
— কান্না করো না। আমি আজই খবর নিয়ে দেখবো কাজের মহিলা পাওয়া যায় কিনা। তাতে তোমার একটু সুবিধা হবে। যাও গিয়ে গোসল করে নামাজ পরে নাও।
আমি নাক টেনে তার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললাম,
— নাভানকে গোসল করাইছো?
— না, তোমার সাথে করবে।
— ওরে আজকে ইচ্ছে মতো পিটাবো আমি।
— কিছু বলো না ছোট মানুষ তো বুঝেনি।
— একদম ছেলের হয়ে ওকালতি করবা তাহলে খবর আছে।
এনাজকে শাসিয়ে কিচেনে ছুটলাম। ডাল উতলিয়ে পরে গেছে বোধহয়। আমার তো আবার কাজের শেষ নেই। রান্না শেষ করে নাভানকে গোসল করিয়ে দিলাম। চাদর,বালিশের কভার ধুয়ে ছাদে মেলে দিয়ে এলাম। আমি গোসল করে নামাজ পরা শেষ করে দেখলাম এনাজ নাবা ও নাভানকে নিয়ে খেলছে।
💖💖💖
— নাভান জলদী খাবার গিলবি। আমি ভাত নিয়ে বসে থাকতে পারবো না। এমনি সিজারের রোগী আমি। বেশি সময় বসে থাকতে পারি না।
সন্ধ্যা বেলা রাতের খাবার নিয়ে বসেছি। আল্লাহ মালুম আমার ছেলের খাওয়া কবে শেষ হবে। এর তো আবার মুখে খাবার নিয়ে বসে থাকতে হেব্বি ভালো লাগে। আমাকে মাঝে মাঝে খোঁচা দিয়ে মনে করে দিতে হয় তার মুখে খাবার আছে তা গিলতে।দুপুরে না খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। নাবা পাশে হাত-পা নাড়িয়ে খেলা করছে। এনাজ সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে। এক লোকমা খাবার মুখে তুলে দিয়ে আধঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় ওকে খাইয়ে দিতে দিতে আমি বালিশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়েও যাই।
— আম্মু!
— হুম বলো।
— বাবা কোথায়?
— বাবা কাজ করে।
— একটা কথা বলি?
— বলো।
— নূরিতাদের বাসায় যাবা কবে?
— তুমি দুষ্টামী করো। নূরিতাকে মারো। তাই আর যাবো না।
— না আম্মু যাবো। আমি আর মারবো না নূরিতাকে। তুমি প্লিজ যাবা।
— আচ্ছা তুমি তাড়াতাড়ি মুখের খাবার শেষ করো। তারপর দেখা যাবে।
নূর আপি ও তায়াং ভাইয়ার একটা সাড়ে তিন বছরের মেয়ে আছে। তার নামই নূরিতা রহমান। রওনক ও তন্বীর এক ছেলে আছে। তন্বী সাড়ে পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। শাহেদ ভাইয়ার মোহনার সাথে বিয়ে হয়েছে। ওদের দুই মেয়ে হয়েছে।ইমরান হাশমি ভাইয়া, রায়হান, আবির ভাইয়া সবার বিয়ে হয়ে গেছে। যে যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ইফাত, সিফাতও অনেক বড় হয়ে গেছে। ইফাত ক্লাশ টেইনে আর সিফাত ক্লাশ এইটে পড়ে। তায়াং ভাইয়াদের বাসায় গেলে ইফাত ভুলেও রুমের থেকে বের হয় না। আগের কথাগুলো বলে সবাই ওকে রাগায় বলে। বেচারা আমাকে দেখলে এখন লজ্জা পায়। অথচ আগে নুবা, নুবা বলে কান পচিয়ে ফেলতো। রওশনের সাথে জারার বিয়ে হয়ে গেছে। ওরা এখন ইউ কে তে স্যাটেল। ফয়সাল ভাইয়ার থেকে বছর দুই আগে এতটুকু জেনেছিলাম। আম্মু, আব্বু গ্রামে থাকে। আমাদের জেলায় ইভার বিয়ে হয়ে গেছে।
ভাবনার মাঝে নাবা কেঁদে উঠলো। আমি ওকে দ্রুত কোলে নিয়ে কান্না থামানোর জন্য কথা বলা শুরু করলাম।
— কি হয়েছে আমার মা-মণিটার? খুদা লাগছে? আচ্ছা, তোমার ভাইয়াকে খাইয়ে নেই। তারপর তোমার সুজি গরম করে আনবো। কান্না করে না সোনামণি। তুমি তো ভালো মেয়ে। এই নাভান মুখের খাবার গিলছিস?
— না।
— আবার বলে না, জলদী গিল।
— আমি লিখতে লিখতে খাবো।
— আহা আমার পন্ডিত ছেলে। পড়াশোনা করে উল্টিয়ে ফেলবে। আগে খাবার টুকু শেষ করো। তারপর পড়াশোনা করো।
— পানি খাবো।
পানির গ্লাসটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। তারপর নাবাকে ব্রেস্ট ফিডিং করিয়ে নাভানকে খাওয়াতে আবার মনোযোগ দিলাম। এক ঘন্টা পর খাওয়ানো শেষ হলো। প্লেট, গ্লাস কিচেনে রেখে এসে নাবাকে সুজি খাওয়াতে বসলাম। এই পুঁচকে মেয়ে জ্বালানো শুরু করলো। সুজি মুখে দিতেই গড়গড় করে কিছু সময় শব্দ করে মুখ থেকে ফেলে দেয়।
— নাবা, তুমি কিন্তু দুষ্টুমী করছো। চুপচাপ খেয়ে নাও মা-মণি। সবসময় কি আম্মুকে জ্বালাতে হয় বলো? তুমি না আমার লক্ষ্মী মেয়ে। খেয়ে নাও জাদু।
মেয়ে আমার তার ভাইয়ের থেকে পাঁজি কম নয়। আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।দুই চামচের বেশি আর খাওয়াতে পারলামি না। জিদ করে রেখে দিছি। যা খেতে হবে না। দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম এনাজ খুব মনোযোগ সহকারে কাজ করছে।আমি নাভানকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— নাভান, চল তোর বাবাকে জ্বালাই।
নাভান ফ্লোরে বসে খেলনা দিয়ে খেলছিলো। খেলা রেখে চোখ দুটো ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— দেখছো না আমি খেলতেছি। আমাকে ডিসপাব (ডিস্টার্ব) করো না।
— ইস, মনে হচ্ছে কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন তিনি।
— এই আম্মু যাও তো। আমাকে খেলতে দাও।
— যা যা বেশি করে খেল। কিন্তু আমার কাজ যদি বাড়াস তাহলে তোর একদিন আমার যতদিন লাগে। কথাটা মনে রাখিস।
নাভান চোখ দুটো কপাল কুঁচকে আমার দিক থেকে চোখ দুটো সরিয়ে খেলায় মনোযোগ দিলো। আমি নাবাকে কোলে নিয়ে এনাজের পাশে গিয়ে বসলাম। আমাকে দেখে বললো,
— কিছু বলবে?
আমি ডানে-বামে মাথা নাড়ালাম। উনি আবার কাজে মনোযোগ দিলো। আমার ইচ্ছে ছিলো তাকে জ্বালানোর কিন্তু তার মুখ দেখে ইচ্ছে করলো না। কিছু সময় পর ল্যাপটপ অফ করে আমার কোলের থেকে নাবাকে নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে লাগলো।
— আমার আম্মুটা কোথায়? আম্মুটা কি খেয়েছে? তুমি নাকি এখন আম্মুকে অনেক জ্বালাও। এটা কি ঠিক বলো? আম্মু সারাদিন কত কাজ করে তাকে জ্বালালে তো সে আমাদের সাথে রাগ করে চলে যাবে। তখন কি হবে বলো তো?
এনাজের কথা শুনে নাবা ঠোঁট ফুলিয়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। এমন ভাবে কাঁদছে যেন তাকে বকা দিয়েছে আর তিনি সব বুঝে ফেলেছে। আমি এনাজকে বললাম,
— দেখছো কি পাঁজি মেয়ে! বকা খাওয়ার থেকে বাঁচতে আগেই কেঁদে কেটে মামলায় জিতে গেলো।
এনাজ আমার কথার উত্তর না দিয়ে নাবার কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এনাজ কিছুখন নাবাকে কোলে দুলিয়ে কান্না থামিয়ে ফেললো। ওর সাথে কথা বলা শুরু করলো। নাবাও ওর বাবার সাথে হা হু শব্দ বলছে। এনাজ আমাকে বললো,
— নাভান কোথায়?
— কোথায় আর থাকবে তোমার পন্ডিত ছেলে? রুমেই আছে। কত ব্যস্ত মানুষ তিনি। সারাদিন কাজের মধ্যে থাকে। তার মা-কে তো অবসর বসে থাকতে দেওয়া যাবে না। সবসময় জ্বালাতে হবে। রুমে বসে খেলনা দিয়ে খেলছে। গিয়ে দেখে আসি আবার কোন কাজ বাড়িয়েছে আমার।
সোফা থেকে উঠে রুমের দরজার সামনে গিয়ে দুই হাতে কান ধরে এনাজকে চেচিয়ে ডেকে উঠলাম,
— নাভানের আব্বু! দেখে যাও তোমার গুনধর পুত্র কি করছে।
#চলবে