শুধু তুই পর্ব-০৪

0
60

#শুধু_তুই
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_উদন্তিকা_নাথ_বর্ষা

তরু হতভম্ব হয়ে বসে আছে। সে যেনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না আসলেই আদ্রিক এসেছে। সেই সকাল থেকে তার জন্য মন খারাপ করে বসে আছে অথচ লোকটার কোনো খবর নেই। তরু দরকার ছাড়া বাইরেও যায়নি।
তরুর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। তার বুকের ভিতর কেমন হাতুরা পেটা শব্দ হচ্ছে। কতদিন পর আদ্রিককে সে সামনা সামনি দেখবে ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠছে। রিয়া আর টিয়া আবার রুম থেকে বের হয়ে ছাঁদে চলে গেছে।আয়নাকে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা হচ্ছে। এদিকে তরু রুম থেকে বের হয়ে রেলিঙ ধরে নিচে দেখার চেষ্টা করছে। পরে মনে হলো আদ্রিকের রুমটা ঠিক আসছে না কি না দেখতে হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। রুমে গিয়ে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কি না দেখে নিলো। পিছন ঘুরে যেই না চলে যাবে কারো শরীরের সাথে ধাক্কা লাগতেই দ্রুত সরে যায়। মুখ তুলে সামনে দেখতেই চমকে যায় তরু। আদ্রিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিক কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ দেখছে তরুকে। চোখের পলক পড়ছে না। এই মুখটা দেখবে বলে কতদূর থেকে ছুটে এলো। আদ্রিক তরুর মুখে আলতো করে হাত রাখলো। কোমল কন্ঠে বললো, তরু।”
তরু সর্বাঙ্গ শিউরে উঠলো। তরু আলতো হেসে জবাব দিলো, আদ্রিক ভাইয়া।”
আদ্রিক তরুকে জড়িয়ে ধরলো। তরুও আদ্রিককে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। কতবছর পর আদ্রিককে সে জড়িয়ে ধরলো। এই মানুষটার জন্যই সে পথ চেয়ে ছিলো। যতই ফোনে কথা হোক আদ্রিক কখনোই ভিডিও কলে কথা বলেনি।
কেমন আছিস তরু? ”
তরু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয়,
খুব ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”
” আগে ভালো ছিলাম না, কিন্তু এই মুহুর্ত থেকে আমি অনেক ভালো আছি।”
তুমি আসবে আমায় বলোনি কেনো? ”
” কি করে বলতাম, না হলে যে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না।”
আদ্রিক তরুকে ছাড়িয়ে বলে, কিরে সাজবি না তুই? ”
“তোমার জন্যই সাজি নি। তুমি কথা বলোনি আজকে।”
আদ্রিক স্মিথ হেসে বলে, পাগলি তরু। যা গিয়ে সুন্দর করে সেজে নে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
” ঠিক আছে।”
তরু চলে যায়। আদ্রিক কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

রিয়াদ আর সিয়ামকে গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেখানেই তারা থাকবে। মির্জা বাড়িতে বেশ বড় করেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। রিয়াদ সিয়ামকে বলছে, ভাই সেই সেই মেয়েরে। আমার কপালে কি একটাও জুটবে না।”
সিয়াম শয়তান হাসি দিয়ে বলে, তোর তো কান্না করার কথা, তোর সিনিয়র ক্রাশের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।”
রিয়াদ ক্ষেপে গিয়ে বলে, সালা ওটা মজা করেই বলেছিলাম।”
সিয়াম অট্টহাসি দিয়ে বলে, তুই তো সবে মজা করিস, সিরিয়াস হবি কবে। এই জন্যই তোর কপালে ব্রণ ছাড়া কিছুই নেই।
আহা,শুধু আমারটাই দেখলি, নিজের যে নেই সেটা। ”
” চিন্তা নেই এতো সুন্দর হুরপরি আছে একটা পটিয়ে নিবো।”
তুই থাক আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।” রিয়াদ কথাটা বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সিয়ামের পানির তৃষ্ণা পেয়েছে তাই রুম থেকে বের হয়ে চারিদিক দেখে নিলো। অনেক লোকজন কাকে ডাকবে সে। হুট করেই তার একটা মেয়ের দিকে চোখ পরলো। সবুজ রঙের শাড়ি পরেছে বেশ ভালোই দেখাচ্ছে। সিয়াম সেই মেয়েটিকেই ডাকলো,এই যে জুনিয়র এদিকে আসো।”
টিয়া সিয়ামকে দেখে এগিয়ে এসে বলে, আপনি কাকে জুনিয়র বলছেন? ”
সিয়াম দাঁত কেলিয়ে বলে, তোমাকে।”
” আমার নাম টিয়া।”
ওহ আচ্ছা, টিয়া পাখি। সুন্দর নাম।
” আমার নাম শুধু টিয়া। পাখি কোথা থেকে আসলো? ”
” আমি ওটাকে এডজাস্ট করেছি।”
“আপনার মাথা এডজাস্ট করুণ।”
মাথা আবার এডজাস্ট করা যায় নাকি। তবে…
টিয়া একটু ভুরু কুঁচকে বলে, কি তবে? ”
” সিয়াম একটু মাথা নিচু করে বলে, মনটা এডজাস্ট করতেই পারি।”
” বুঝলাম না।”
” আমার গার্লফ্রেন্ড হবে। ”
টিয়া রেগে বলে, পাগল নাকি। ধুর।” কথাটা বলেই টিয়া হনহন করে চলে গেলো।
পিছন থেকে রিয়াদ ধপ করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলে, পটাতে পারলি না তো।” তারপর হাসতে লাগলো।
” আরে আসলাম তো আজকে, এই মেয়েকে তো পটিয়েই ছাড়বো।”
“যা ফ্রেশ হয় নে।
_____

রিয়া তরুকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে। পাশে আরো মেয়ে আছে তারাও সাজগোজ করছে। তরুকে শাড়ি পড়ানো শেষ হলে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় রিয়া। রিয়া বলে, বাহ! অনেক সুন্দর লাগছে তোকে তরু।” তরু কিছুক্ষণ নিজেকে দেখে সব কিছু গোজ করতে শুরু করলো। সবাই ছাঁদে চলে গেছে। তরু রুমে একা। দরজায় চোখ যেতেই তরু আদিবা বেগম কে দেখতে পায়। তরু এগিয়ে গিয়ে বলে, কিছু বলবে আম্মু।”
আদিবা ধীর কন্ঠে সুধালো, হুম। চল আমার সাথে।”

আদিবা বেগম তরুকে নিয়ে যায় ছাঁদে। আয়না বসে আছে স্টেজে। সেখানে তরুকেও বসিয়ে দিলো। তরু শুধু আদিবা বেগম কে দেখছে তাকে কেনো বসালো। যাই হোক বোন হয়ে আপুর পাশে বাসাই যায় এই ভেবে আর কিছু বললো না। একটু পর সবাই এসে হুলুদ ছোঁয়ালো কনের গায়ে। আয়েশা, রজনী, আদিবা তিন জন শুধু আলতো করে তরুকেও ছোঁয়ালো। তরু শুধু দেখলো কিছু বলতে পারলো না। সেখান থেকে উঠে রুমে চলে আসবে। কেউ একজন হাত টেনে ধরে অন্য দিকে নিয়ে৷ তরু আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো।

তরু শুঁকনো একটা ঢোক গিললো। আদ্রিক তরুকে দেখছে কি মিষ্টি লাগছে। আদ্রিক আসতে আসতে ঝুঁকে গেলো তরুর দিকে। তরু পেছালো না ঠাঁই দাঁড়িয়ে আদ্রিককে দেখছে। আদ্রিক নিজের গাল এগিয়ে দিয়ে তরুর গালে লাগালো। তরুর গালের হলুদ গুলো আদ্রিকের গালে লেগে গেলো। তরু পাথরের ন্যায় দেখছে কিন্তু কিছুই বলছে না। বলবে কি করে তার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

জানিস তরু আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগে, একদিন মা আমার রুমে আসে। মা বলেছিলো আমি যেনো পড়ালেখার জন্য ঢাকা চলে যাই। যাওয়ার পিছনের কারণ ছিলি তুই। তোর মা মারা যাওয়ার পর আমি তোর দায়িত্ব নিয়ে ছিলাম। আমি চাই না তোর দায়িত্ব টা অন্য কেউ নিক। তাই মাকে শর্ত দিয়েছিলাম, আমি ঢাকা যাবো, যেদিন আমি বাড়িতে ফিরবো সেদিন যেনো তোকে আমার হাতে তুলে দেয়। আর আমি না থাকা অবস্থায় মা যেনো তোর দায়িত্বটা নেয়। মা আমার কথা রাখবে তরু।”
তোকে আর আমায় ছেড়ে থাকতে হবে না। কালকের পর থেকে তুই আমার সাথেই থাকবি। তরু স্তব্ধ হয়ে সব কিছু শুনলো। তার যেনো সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছ। আদ্রিক তরুকে জড়িয়ে ধরে বলে, তোকে খুব ভালোবাসিরে তরু। আমার হৃদয় জুড়ে শুধু তুই, শুধু তুই।
তরু এবার স্বস্তি পেলো। আদ্রিককে নিয়ে কত শত স্বপ্ন দেখেছিলো সে আর সেটাই পূরণ হতে চলেছে। আদ্রিক তাকে ভালেবাসে। তরুর চোখ ছল ছল করছে।
আদ্রিক তরুর মুখটা তুলে বলে, কাঁদবি না তরু। আমার বুকে কষ্ট হয় রে।

হুট করেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনে আদ্রিক আর তরু চমকে যায়। রিয়াদ আর সিয়াম দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আদ্রিক তরুকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে দিলো। রিয়াদ আর সিয়াম রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে, আরে রুমের ভিতর দেখি পরি দাঁড়িয়ে। আচ্ছা আদ্রিক এই মেয়েই কি তরু।
” হুম। আদ্রিক বললো।
” এ তো পিচ্চি। শেষমেশ পিচ্চি একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। কিন্তু দেখতে পরির মতো।
তরু এবার লজ্জা পেলো, সে না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
রিয়াদ বলে, আদ্রিক তুই তো দেখিয়ে দিলি।”
” কিছুই দেখাইনি আসতে আসতে দেখবি।”

#চলবে?