#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২১
বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়িতে মানুষ আসা শুরু করেছে কিন্তু বিয়ের কনে আর শুভ্রতা কোন আনন্দ করতে পারছে না। পরিক্ষার রুটিন অনুযায়ী শাকিরার বিয়ের দিনেও পরিক্ষা আছে। পরিক্ষা দিয়ে তারপর বিয়েতে বসতে হবে। পরিক্ষার রুটিন আগে দিলে হয়তো বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করে অন্য তারিখে করা যেত কিন্তু একদম শেষ সময়ে এসে রুটিন দিয়েছে।
শাকিরা আর শুভ্রতা একই সাথে পড়ছে, শাকিরা পড়ার মাঝেমাঝে অসহায়ের মতো শুভ্রতার দিকে তাকাচ্ছে। একসময় রাগে বই বন্ধ করে ফেলে।
” ধুর, আমার বিয়ের দিনেও পরিক্ষা থাকতে হলো!”
শুভ্রতা শাকিরার অবস্থা দেখে হাসবে নাকি ওর মতই মন খারাপ করবে বুঝতে পারছে না। সে বলল,
” তোর বিয়ে এখনো তিনিদিন পর, আগে এই তিনটা পরিক্ষা শেষ হোক তারপর তো ওটা! কালকের পরিক্ষার জন্য আপাতত পড়। রায়হান ভাইকে বলব যেন তোকে নিয়ে যায়।”
” টেস্ট পরিক্ষা না দিলেও কিন্তু কিছু হতো না। শুধু ওই লোকের জন্য আমার প্যারা নিতে হচ্ছে। জীবনে বিয়েই করব একবার সেই বিয়ের দিনও যদি পরিক্ষা দিতে হয় বই পড়তে হয় তাহলে কেমন লাগে বল তো?”
” বিষয়টা তোর কাছে কেমন জানি না তবে আমার কাছে কিছু বেশ ভালোই লাগছে। শাড়ি গহনা পড়ে যাবি পরিক্ষা দিতে আর সবাই তোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। নতুন বউ/ বিয়ের কনে পরিক্ষা দিচ্ছে বিষয়টা কিন্তু দারুণ!”
” ধুর তোর সাথে কথা বলে লাভ নেই।”
” পড়া শেষ কর নইলে কাল কি পরিক্ষা দিবি? আমি যেগুলো পড়তে বললাম ওগুলোই পড় কাজে দিবে।”
শাকিরা অসহায়ের ভঙ্গিতে আবার পড়া শুরু করে। বর্তমানে তার জীবনে একটা দুঃখ, একটাই আক্ষেপ আর সেটা হলো বিয়ের দিনে পরিক্ষা।
মামাবাড়ি থেকে এসে মাত্র একদিন ক্লাস করতে পেরেছে শুভ্রতা আর সেদিনই জানিয়ে দিয়েছে পরিক্ষাটা তাড়াতাড়ি নিয়ে শেষ করবে কেন না কয়েকদিন পরই রাষ্ট্রপতি নিজে সেখানে আসবেন। উনার আশায় থাকলে পরিক্ষার সময় অনেক পিছিয়ে যাবে তাই পরিক্ষাটাই আগে নিয়ে নিবে। সারাবছর যারা পড়াশোনা করেছে তারা খুশি হলেও যারা পড়াশোনা করেনি তাদের মাথায় বাজ পড়ে। রুটিন দেওয়ার পরপরই ফাউজিয়া শুভ্রতাকে বলেছিল,
” তুই আমাকে কি কথা দিয়েছিলি মনে আছে তো?”
শুভ্রতা কি কথা দিয়েছে সেটা কিছুতেই মনে করতে পারে না তাই জিজ্ঞেস করে, ” কি কথা বল তো?”
” টেস্ট পরিক্ষায় তোকে টপার হতে হবে। পারবি তো?”
” ভালো রেজাল্ট করতে পারব টপার হতে পারব কিনা জানি না।”
” না, শুধু ভালো রেজাল্টে হবে না। তোকে সবার চেয়ে ভালো করতে হবে রেজাল্ট।”
” আচ্ছা দেখি।”
দুজন কথা বলার সময় সাহিল স্যার আবার ক্লাসে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ আগেই নিজের ক্লাস শেষ করে গিয়েছিলেন তিনি। স্টুডেন্টদের মতে তারা সাহিল স্যারের ক্লাস সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে। তাই সাহিল স্যার দ্বিতীয়বার ক্লাসে আসায় সবাই খুশি হয়। ক্লাসে আসতে দেরি হওয়ায় শুভ্রতা প্রথম ক্লাসটা করতে পারেনি।
সাহিল স্যারের হাতে কিছু কাগজ, সবার আগ্রহ সেদিকেই। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
” আপনাদের পরিক্ষা যেহেতু হুট করেই নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাই সব টিচার তার নিজ নিজ বিষয়ের ওপর আপনাদের জন্য সাজেশন তৈরি করেছেন। আমি একে একে পেইজ আর প্রশ্ন নম্বর বলব আপনারা লিখে বা দাগিয়ে নিবেন। আশা করছি এগুলো শেষ করলে পরিক্ষায় ভালো করতে পারবেন।”
সাহিল শেখ একেএকে সব বিষয়ের সাজেশন দিয়ে শেষ করল। সবাই যার যার মতো দাগিয়ে নিলো আর লিখে নিলো। নিজের কাজ শেষ হলে কারো সাথে কোন কথা না বলেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল।
শুভ্রতা আর ফাউজিয়া বসে পড়া নিয়ে আলোচনা করছে। শুভ্রতা নিজের খাতা বের করে ফাউজিয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। ফাউজিয়া শুভ্রতার হাতে থেকে খাতাটা নিয়ে বলল,
” কি এখানে?”
” আমি সাজেশন বানিয়েছি পড়ার জন্য। স্যারদের সাজেশনের সাথে আমারগুলোর সাথে অনেকগুলোই মিল আছে। আমার এখানে কম প্রশ্ন আছে। দেখ একটু…”
ফাউজিয়া শুভ্রতার খাতার সাজেশনগুলো দেখতে থাকে। খাতা দেখে বলে, ” পরিক্ষার আগে এমন সাজেশন বানাস নিজে নিজে?”
” হ্যাঁ। ”
” এভাবেই অল্প পড়ে ভালো রেজাল্ট করিস! আমার অনেক পড়তে হয়।”
” বুঝতে হবে ম্যাডাম।”
” খাতা দে তোরগুলো কম আছে, ছবি তুলে নিই।”
” নিয়ে নে ।”
ফাউজিয়া ছবি তুলে নেয়। শুভ্রতা মনে মনে ভাবে এগুলো এবার শাকিরাকে দিতে হবে কারণ বিয়ের জন্য সে ক্লাসে আসতে পারছে না। মেয়েটার ভাগ্য কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল৷ বিয়ের সময় পরিক্ষা!
~~
রাতে হঠাৎ জ্বরজ্বর অনুভব করল শুভ্রতা। তার প্রায়ই এমন হয় বিশেষ করে পরিক্ষার সময়। পরিক্ষার সময় চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকবার সে অসুস্থ হয়ে যায়। রাত পোহালেই পরিক্ষা আর রাত কি-না জ্বর! বাড়ির সবাই শাকিরাদের বাড়িতে আছে। নেহা আর স্নিগ্ধার পরিক্ষা শেষ হওয়ায় তারা দুজন সবার নাগালের বাহিরে। শুভ্রতার বাবা শাহাদাত সাহেবের কাজের চাপ থাকায় এখনো বাড়ি ফিরেন নি। ওখান থেকেই হয়তো তারাবী নামাজ পড়তে গিয়েছেন মসজিদে।
শুভ্রতা নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখে কপালটা বেশ গরম হয়ে গিয়েছে। রোজার সময় ইফতারিতে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি না খেলে ভালো লাগে না তাই সে বেশ খানিকটা পানি খেয়েছিল। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি সচরাচর খাওয়া হয় না। আজ হঠাৎ খেয়েই হয়তো এমন হয়েছে। সে ড্রয়িংরুমে গিয়ে থার্মোমিটার নিয়ে নিজেই তাপমাত্রা মেপে দেখল। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে একশো ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছেছে। রাতে জ্বর আরও বাড়তে পারে। ফার্স্ট এইড বক্সের মধ্যে জ্বরের কোন ওষুধ নেই। শুভ্রতা রুমে চলে যায় বাবাকে ফোন দিয়ে ওষুধ নিয়ে আসতে বলবে বলে। সে রুমে গিয়ে দেখে তার ফোন নেই। তার মানে স্নিগ্ধা ফোন নিয়ে গিয়েছে। শাকিরাদের বাড়ি যাওয়ার আগে ফোন চেয়েছিল, না দেওয়ায় হয়তো না বলেই ফোন নিয়ে গিয়েছে। একা একা তার একটুও ভালো লাগছিল না। কয়েকবার পড়া শেষ করা হয়ে গিয়েছে। এখন আর না পড়লেও হবে। মাথাটা ভারী ভারী লাগছে তার।
বাড়ির মেইন দরজা লক করে সমস্ত শরীরে ওরনা জড়িয়ে নেয় সে। শাকিরাদের ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। তার মাথাটা এখনো কেমন যেন করছে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হচ্ছে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে।
পিছন থেকে আবিরা ডাক দেয়, ” কে ওখানে? শুভ্রতা?”
শুভ্রতা পিছনে ফিরে তাকায়, আবিরাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আবিরা তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, ” একা একা কোথায় যাচ্ছিলি এই অন্ধকারে? বাহিরের আলোটা তাহলে জ্বেলে দিবি না?”
শুভ্রতা আমতা আমতা করে বলে, ” আসলে আপু, আমার একটু জ্বরজ্বর লাগছিল।”
” কি বলিস! কাল না তোর পরিক্ষা? ”
” হ্যাঁ। বাবাকে কল করে ওষুধ নিয়ে আসতে বলব আর দেখি রুমে ফোন নেই স্নিগ্ধা নিয়ে গিয়েছে।”
” জ্বর বাধালি কীভাবে? নামাজ পড়েছিস?”
” হ্যাঁ পড়েছি। মা তো ওই বাড়িতে গিয়েছে সবাই একসাথে নামাজ পড়ে৷ আর তাছাড়া বিয়ে বাড়ি নামাজ শেষ করে হয়তো আড্ডা দিচ্ছে। বাবা তো তারাবী নামাজে গিয়েছে আমি ভুলেই গিয়েছি। ”
” আচ্ছা দাঁড়া এখানে। ভাইয়া আসছে, চলেই এসেছে হয়তো। ভাইয়া নামাজ শেষ করে ব্রিজের ওখানে বসে ছিল হয়তো আমি কল দিয়ে বিস্কুট দিয়ে যেতে বলেছি চা খাব। ভাইয়া আসলে তুই ভাইয়ার সাথে এখানে দাঁড়া আমি স্নিগ্ধার থেকে তোর ফোনটা এনে দিচ্ছি।”
শুভ্রতা আর না করে না। সে আবিরার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। দুই মিনিট যেতেই নিহান চলে আসে। বাহিরের বড় উঠোনে দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানে এগিয়ে যায়। নিহানকে দেখেই আবিরা বলে ওঠে,
” ভাইয়া এখানে একটু দাঁড়াও তো, আমি শুভ্রতার ফোন এনে দিই। স্নিগ্ধা নাকি ওর ফোন নিয়ে গেছে। বেচারির জ্বর এসেছে ঠিকমতো হাটতে পারছে না। কাল ওর পরিক্ষা, কী যে করবে!”
আবিরা কথাটা বলেই শুভ্রতার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ওখান থেকে চলে যায়। হুট করে আবিরা চলে যাওয়ায় শুভ্রতা পড়ে যেতে লাগলে নিহান এসে হাতটা ধরে নেয়।
#চলবে……
#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২২
” জ্বর আসলো কীভাবে?”
শুভ্রতা ঠিকমতো দাঁড়ালে নিহান তার হাতটা ছেড়ে দেয়। শুভ্রতা আমতা আমতা করে বলে, ” ফ্রিজের পানি খেয়েছিলাম আর আজ তো খুব গরম ছিল ঘেমে যাওয়ার জন্য হয়তো ঠান্ডা লেগেছে।”
” এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না বাসায় দিয়ে আসি চল। আবিরা ওখানে গেছে তোর মা জানতে পারলে এমনিতেও চলে আসবে। ওষুধ আমার রুমেই আছে, আমি এনে দিচ্ছি। ”
” না না লাগবে না, আমি বাবাকে বললেই মিয়ে আসবে।”
” কেন আমি দিলে সমস্যা? আমি বাড়তি কথা শুনতে চাইছি না। চল তোকে বাসায় রেখে আমার মিটিংয়ে বসতে হবে সময় হয়ে যাচ্ছে।”
” কীসের মিটিং?”
” কাজের কথা হবে, তুই ওসব বুঝবি না। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।”
তৎক্ষনাৎ শুভ্রতার মা, আবিরা, স্নিগ্ধা চলে আসে। মিসেস আয়েশা তাড়াতাড়ি করে এসে মেয়ের জ্বর কেমন দেখেন। নিহান সবকিছু জানায় এবং শুভ্রতাকে তার মায়ের কাছে রেখেই ওষুধ নিয়ে আসতে যায়। শুভ্রতাকে নিয়ে মিসেস আয়েশা বাসায় ফিরেন। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা এই রাতের মাঝেই শুভ্রতাকে সুস্থ করতে হবে জ্বর বাড়তে দেয়া যাবে না। তিনি গিয়ে শুভ্রতার জন্য দুধ গরম করে নিয়ে আসেন, জলপট্টি দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। নিহান এসে দরজায় নক করলে স্নিগ্ধা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
” ভাইয়া!”
” শুভ্রা কোথায়?”
” আপু তো রুমেই, আম্মু তো জলপট্টি দিচ্ছে। কাল আপুর পরিক্ষা জ্বর বাড়তে দেয়া যাবে না। জ্বর বাড়লে পরিক্ষা দিতে পারবে না। তুমি ভেতরে আসো না প্লিজ।”
নিহান ভেতরে ঢুকলে স্নিগ্ধা দরজা বন্ধ করে দেয়। নিহান সোজা শুভ্রতার রুমে চলে যায়। শুভ্রতা তখন মায়ের কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল। কয়েক মিনিট সময়ের মধ্যেই শুভ্রতার শরীরের তাপমাত্রা বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। মাথাটা কেমন খালি খালি লাগছে!
নিহান বাড়িতে জ্বরের কোন ওষুধ খুঁজে না পেয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিল শুভ্রতার জন্য ওষুধ আনার জন্য। স্টেশনের পাশেই একটা ডাক্তার বসে। উনাকে জানাতেই উনি ওষুধ দিয়ে দিয়েছেন।
নিহান এসে মিসেস আয়েশার কাছাকাছি দাঁড়ায়।
” ছোটমা…”
” নিহান! হ্যাঁ বাবা বল।”
” ওর জ্বর কি বেড়েছে?”
” হ্যাঁ শরীরটা অনেক গরম। মাথাও নাকি ধরেছে, মাথা থেকে হাত নামাতে দিচ্ছে না। চোখ ও খুলছে না চোখ নাকি জ্বা*লাপোড়া করছে। ওর বাবার ফোন বন্ধ হয়তো কাজে ব্যস্ত আছে। নইলে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলতাম মেয়েটাকে।”
” আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। সবকিছু বলার পর ওষুধ দিয়েছে। কিছু খেয়ে ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে রাতের মধ্যেই।”
” আমার খুব চিন্তা হচ্ছে নিহান, কাল ওর টেস্ট পরিক্ষা। মেয়েটা পরিক্ষার সময় অসুখ বাধিয়ে বসে থাকে।”
” কিছু হবে না ছোটমা রাতের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। ওকে কিছু খাইয়ে দিন তারপর ওষুধ খেতে হবে ওর।”
” তুমি একটু ওর মাথার এখানে বসো আমি প্লেটে খাবার নিয়ে আসছি।”
” ঠিক আছে।”
মিসেস আয়েশা রুম থেকে চলে যান শুভ্রতার জন্য খাবার নিয়ে আসতে। নিহান গিয়ে শুভ্রতার পাশে বসে। কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারে জ্বর প্রচন্ড বেড়েছে। সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
দুই মিনিটের মাঝেই আয়েশা বেগম খাবার এনে শুভ্রতাকে ডেকে তোলেন। শুভ্রতা খেতে না চাইলেও অল্পকিছু জোর করে খাইয়ে দেন তিনি। আয়েশা বেগম আজকের রাতটা মেয়ের কাছেই থাকবেন। নিহান এবার জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
” ছোটমা..”
” হ্যাঁ নিহান বল।”
” রাতে কোন অসুবিধা হলে প্লিজ আমাকে কল করবেন। আমার রাতে এমনিতেও ঘুম হবে না।”
” শুভ্রতার জন্য খুব চিন্তা হয় না রে বাবা?”
নিহান কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকে। মিসেস আয়েশা আবার বলেন, ” মেয়েটা কেন যে মানুষ চিনতে ভুল করল! ঠিক মানুষকে চিনলে এতদিনে আমার মেয়ের একটা ঘর হতো। ”
” অতীতের কথা তুলে কী লাভ ছোটমা! ও আমাকে কথা দিয়েছে ও এবার আমার হবে। শুধু আমার কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে। আমি শুভ্রার জন্য অপেক্ষা করব ছোটমা। ভালোবাসার মানুষের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করা যায়।”
” দোয়া করি, আল্লাহ তোদের দুজনকে এক করে দিক। এখন যাও ঘুমানোর চেষ্টা করো। ওকে তো ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি। ইন শা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।”
” ছোটমা একটা কথা বলব?”
” হ্যাঁ বল। অনুমতি নেয়ার কি আছে?”
” আপনি একটু ওকে বলবেন আমার সাথে যেন পরিক্ষা দিতে যায়। প্রয়োজনে ওকে আর শাকিরা দুজনকেই নিয়ে যাব। এই অবস্থায় আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে বলব।”
” ঠিক আছে আমি আসছি তাহলে।”
” হ্যাঁ, চিন্তা করিস না বাবা।”
” হুম।”
~~
প্রায় আধাঘণ্টা যাবৎ আবিরা অভীকের জন্য অপেক্ষা করছে। ক্লিনিকের ঠিক পিছনটায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে। অভীকের চেম্বারও তার ঠিক বা’পাশে। রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নামার সময় আবিরা অভীকের ক্লিনিকের দিকে খেয়াল করেছে তাকে দেখা যায়নি অথচ অভীককে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলার পর অভীক বলেছে সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চেম্বার থেকে বের হবে। সেই পাঁচ মিনিট আধাঘণ্টায় গিয়ে ঠেকেছে। বসে বসে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে অভীককে কিন্তু অভীক বারবার কল কেটে দিচ্ছে। আবিরা ঠিক বুঝতে পেরেছে অভীক তাকে মিথ্যে বলেছে সে হয়তো চেম্বারে নেই। আবিরা ফোনটা ব্যাগে নিয়ে অভীকের চেম্বারের দিকে যায়।
আবিরা এসেছিল কাজে আর সেই কাজটা হচ্ছে শাকিরাকে নিয়ে পার্লারে যেতে হবে যেহেতু কাল ওর বিয়ে ত্বকের একটু যত্নের ব্যাপার আছে। শুভ্রতা আর শাকিরা দুজন একা একা সবকিছু পারবে না তাই আবিরা এসেছে। শুভ্রতা আর শাকিরা পরিক্ষা দিচ্ছে তাই সে ভেবেছে এই সময়টা অভীকের সাথে থাকবে কিন্তু অভীক কোথায়!
আবিরা পায়ে হেটেই অভীকের চেম্বারে চলে যায়। সে যা ভেবেছিল তাই, অভীক চেম্বারে নেই। সে তাকে মিথ্যে কথা বলেছে। কিন্তু হঠাৎ মিথ্যে কেন বলল সেটাই ভেবে পাচ্ছে না আবিরা। মন খারাপ করে চেম্বার থেকে বের হবে ঠিক তখনই অভীকের কল আসে।
” হ্যালো আবিরা, কোথায় আছো?”
” সেটা আপনার জানতে হবে না।”
” স্যরি আবিরা, জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাব কিন্তু জ্যামের কারণে হয়ে ওঠে নি। এই রাস্তায় যে আজ এত জ্যাম হবে সেটা বুঝতেই পারি নি। কোথায় আছো তুমি? আমি রেস্টুরেন্টে এসে দেখলাম তুমি নেই। ”
” চলে এসেছি ওখান থেকে।”
” চলে গেছো! কেন? ”
” ওখানে বসে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগছিল না।”
” এখন কোথায় আছো?”
” জানি না।”
” জানো না মানে? বলো না কোথায় আছো? ”
” বলেছি তো জানি না। ফোন রাখুন আপনি।”
” প্লিজ সোনা রাগ করো না। আমি স্যরি বললাম তো।”
” আমি আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে এসব বলে ডাকবেন না!”
” রাগ করছো কেন? আচ্ছা যাও এসব বলে ডাকব না। এবার বলো কোথায় আছো?”
” আপনার চেম্বারে এসেছিলাম দেখতে যে আপনি সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যে বলছেন। এসে দেখি আমি যা ভেবেছিলাম তাই আপনি মিথ্যে বলেছেন।”
” আচ্ছা তুমি ওখানেই অপেক্ষা করো আমি আসছি।”
আবিরা কল কেটে দিয়ে সামনের রাস্তাটায় গিয়ে দাঁড়ায়। সে রাগে এখনো ফুঁসছে। কি হতো সত্যি কথাটা বললে? বললেই হতো যে আমি একটু দূরে আছি তুমি কয়েকটা মিনিট অপেক্ষা করো। সত্য কথা শোনার পর আধাঘন্টা কেন সারাজীবনও অপেক্ষা করা যায় কিন্তু কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পর যখন জানা যায় সে মিথ্যে বলেছে তখন আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করার ইচ্ছে থাকে না।
#চলবে…..
#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৩
” তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে আবিরা?”
অভীক এখনো হাঁপাচ্ছে, বলতে গেলে দৌঁড়ে এসেছে আবিরার কাছে। অভীকের কথা শুনে আবিরা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলে একে তো তাকে মিথ্যা বলেছে আবার এসে বিয়ের কথা বলছে!
” কি হলো কিছু বলবে না আবিরা?”
অভীকের কথায় সে আবার অভীকের দিকে ফিরে তাকায়। কি বলবে সেটাই ভাবছে। “না” তো বলতে পারবে না সে তো এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
” কোথায় ছিলেন আপনি?”
” বাসায় গিয়েছিলাম একটু, তোমাকে বাসায় নিয়ে যাব আজ। মা-বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব তাই মাকে জানাতে গিয়েছিলাম।”
” আপনার বাসায় যাব মানে? আগে তো বলেন নি?”
” আগে থেকে বলার কি আছে? এই যে এখন বললাম। ”
” কিন্তু প্রস্তুতির তো একটা ব্যাপার আছে তাই না?”
” কোন প্রস্তুতি লাগবে না। তুমি শুধু আমার সাথে যাবে, গিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা করবে। আমি খুব শিঘ্রই মা-বাবাকে তোমাদের বাড়ি পাঠাবো। তোমার ছোট বোনেদের বিয়ে হয়ে গেল অথচ তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছো। আর অপেক্ষা করতে হবে না। খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিয়ে করব আবিরা।”
” কিন্তু এখন…..”
” কোন কিন্তু না আবিরা। চলো আমার সাথে, আমরা বাসায় যাব এখন।”
” শুভ্রতা আর শাকিরা পরিক্ষা দিচ্ছে, ওদের পরিক্ষা হয়ে যাবে তো। আমি এখান থেকে কীভাবে তোমাদের ওখানে যাব বলো? শাকিরার বিয়েটা হয়ে গেলে আমি আবার একদিন এখানে আসব তখন তোমাদের বাসায় যাব কেমন?”
” ওদের পরিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই আমরা ফিরে আসব, তুমি চিন্তা করো না।”
” আসতে পারব তো? আমার খুব ভয় লাগছে অভীক। আপনার মা-বাবা আমাকে পছন্দ করবেন তো?”
” অপছন্দ করার কোন চান্স নেই। চলো তো। যত তাড়াতাড়ি যেতে পারব তত তাড়াতাড়ি ফিরতে পারব।”
অভীক আবিরাকে গাড়িতে তুলে নিজে গিয়ে নিজের জায়গায় বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে। আবিরার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা অভীকের মা-বাবা তাকে পছন্দ করবে তো!
অভীকের চেম্বার থেকে বাড়ির দূরত্ব খুব একটা বেশি না। দশ থেকে পনেরো মিনিটের পথ। এই দশ থেকে পনেরো মিনিট আবিরা কোন কথা বলল না। চোখ বন্ধ করে দোয়া ইউনুস পড়ে যাচ্ছিল। অভীক ড্রাইভ করছে আর আবিরাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। মেয়েটা এত বড় হয়ে গিয়েছে তবু বাচ্চামি ভাবটা এখনো যায় নি।
~~
পরিক্ষা চলছে…
শুভ্রতা একমনে লিখে যাচ্ছে। গত দুইটা পরিক্ষা তার অসম্ভব ভালো হয়েছে। প্রশ্ন কমন পড়লে যে আনন্দ পাওয়া যায় সেই আনন্দটা খুব কম জিনিসে উপভোগ করা যায়। শুভ্রতা আর ফাউজিয়া একই রুমে পড়েছে কিন্তু দূরত্ব অনেক। পরিক্ষা চলাকালীন কোন বিষয়ে দুজনের কথা বলার কোন সুযোগ নেই।
প্রথম পরিক্ষার দিনে নিহান এসে তাকে দিয়ে গিয়েছিল। সারারাস্তা সে নিহানের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে এসেছে। শুভ্রতা সেদিন নির্ভর করার মতো একটা কাধ পেয়েছিল। যেখানে সে নিশ্চিন্তে মাথা রাখতে পারে। নিহান হাতে একটু সময় নিয়ে বের হয়েছিল যেন বাইক আস্তে চালিয়ে যেতে পারে।
বাইক চালানোর পর যখন মাথাটা সোজা রাখতে না পেরে নিহানের পিঠের ওপরের দিকে রাখে নিহান তখন চমকে যায়।
” শুভ্রা!”
” হুম।”
” খারাপ লাগছে?”
” মাথা সোজা রাখতে পারছিলাম না।”
” এক হাত দিয়ে আমাকে ধরে বসতে পারিস। ধরে না বসলে পড়ে যাবি যখন তখন। বাম হাতটা দিয়ে ধরে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাক। আমি আস্তে যাচ্ছি।”
” ঠিক আছে।”
” বেশি খারাপ লাগলে বলিস কিন্তু।”
” আচ্ছা।”
” পরিক্ষা দিতে পারবি তো?”
” হ্যাঁ পারব।”
” ঠিক আছে।”
শুভ্রতা পরিক্ষা দিতে দিতে নিহানের কথা মনে পড়ে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ স্যার এসে বেঞ্চে শব্দ করতেই চমকে ওঠে সে। সামনে স্যারকে দেখে লেখা শুরু করে।
” কি হয়েছে শুভ্রতা? প্রশ্ন কমন পড়ে নি?”
” জি স্যার পড়েছে।”
” তাহলে লিখছো না কেন?”
” স্যরি স্যার লিখছি। ”
স্যার আর কোন কথা মা বলে সেখান থেকে চলে যায়। পিছনের দিকে ডানপাশের সারিতে তাকালে দেখে ফাউজিয়া তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে ইশারায় জিজ্ঞেস করে, ” কিছু হয়েছে?” শুভ্রতা মাথা ঝাঁকিয়ে লেখায় মনে দিতে বলে নিজেও লেখা শুরু করে।
~~
আবিরা আর অভীক বাসা থেকে মা-বাবার সাথে দেখা করে বের হয়েছে। আবিরা আঙুলের রিংটার দিকে তাকিয়ে আছে। অভীকের মা অসম্ভব ভালো মানুষ নইলে কি কেউ এত ভালো ব্যবহার করে! প্রথম দেখায় সোনার আংটিও পড়িয়ে দিলেন। আবিরা গাড়িতে ওঠার পর থেকে ওটা দেখেই যাচ্ছে। অভীক আবিরার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়। সে বলে,
” মা-বাবাকে কেমন লাগলো তোমার?”
” দারুণ!”
” হ্যাঁ? ”
” না মানে অসম্ভব ভালো লেগেছে।”
” খুব তো ভয় পাচ্ছিলে প্রথমে তারপর বাড়ি গিয়ে গল্প থামছিলই না।”
” সুন্দর করে কথা বলেন উনি।”
” আচ্ছা, শোনো এখন তোমাকে কোথায় নামিয়ে দেব বলো? ওদের কি পরিক্ষা শেষ হয়েছে?”
” সময় তো হাতে এখনো আধাঘণ্টা আছে।”
” আমার চেম্বারে বসবে?”
” না, আপনি আমাকে সামনের রাস্তায় নামিয়ে দিবেন। সময় যেহেতু আছে তাহলে কিছু কেনাকাটা করা যাবে।”
” আমি যাই সাথে?”
” না, আমার সাথে কেউ থাকলে আমি পছন্দ করে কিনতে পারি না। আপনি আপনার কাজে যান। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”
” সাবধানে থাকবে কিন্তু, কোন বিপদ মনে করলে আমাকে কল দিও।”
” আচ্ছা। ”
গাড়ি এসে মার্কেটের সামনের গোলিতে এসে থামে। আবিরা অভীকের থেকে বিদায় গোলিতে ঢুকে গেলে অভীকও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
~~
ফাউজিয়া খাতা জমা দেওয়ার জন্য দাঁড়াতেই শুভ্রতাও দাঁড়ায়। দুজন নিজ নিজ জায়গা থেকে বেরিয়ে খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে আসে। তারা দুজন বাহিরে এসে দাঁড়ায়। ফাইল থেকে প্রশ্নটা বের করতে করতে শুভ্রতা বলে,
” পরিক্ষা কেমন হয়েছে তোর?”
” আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু ‘ক’ বিভাগের দুইটা প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারি নি।”
” কোন দুইটা?”
ফাউজিয়া প্রশ্নপত্রটা হাতে নিয়ে খুঁজতে থাকে। পেয়ে গেলে বলে, ” তিন আর সাত নম্বর। তুই পেরেছিস?”
” হ্যাঁ লিখেছি কিন্তু হয়েছে কি না জানি না।”
” সব মিলিয়ে পরিক্ষা কেমন হয়েছে?”
” সবমিলিয়ে ভালো হয়েছে। তোর কেমন হয়েছে?”
” আমারও ভালো হয়েছে। এখানে দাঁড়াবি নাকি সামনে গিয়ে কিছু খাবি?”
শুভ্রতা প্রশ্নপত্র থেকে চোখ তুলে ফাউজিয়ার দিকে তাকায়। অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,” এই তুই রোজা না?”
” ইশ, ভুলে গেছিলাম। কি যে একটা অবস্থা! চল এগোই তাহলে।”
” শাকিরা বের হোক।”
” আমি ভাবছি আগামীকাল ও পরিক্ষা দিবে কীভাবে! বিয়ের দিনে পরিক্ষা!”
” কি আর করার! যেতে যেতেই ইফতারের সময় হয়ে যায়। বিয়ে রাতে হবে ইফতার পর। রায়হান ভাইয়া হয়তো থেকে যাবে, পরিক্ষা শেষ হলে ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। ”
” নিহান ভাইয়ার কি খবর? ”
” সে ভালো আছে।”
” না মানে আমি জানতে চাইছিলাম তোরা বিয়ে কবে করছিস? ”
” অনেক দেরি।”
” দেখ মানুষটা কিন্তু অনেক ভালো, দেরি করিস না। তাড়াতাড়ি নিজের করে নে।”
” হ্যাঁ, আসলেই উনি খুব ভালো মানুষ। ”
ফাউজিয়া আর শুভ্রতা কথা বলতে থাকে এমন সময় শাকিরা বেরিয়ে আসে। শাকিরা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় শুভ্রতা আর ফাউজিয়াকে দেখে এগিয়ে আসে। শুভ্রতা শাকিরাকে দেখেই হেসে বলে, ” আরে বিয়ের কনে যে!”
” হ্যাঁ, বিয়ের মধ্যে যে প্যারা দিচ্ছে পরিক্ষা! চল, যাবি না? আবিরা আপুর কি খবর, কোথায় সে? কল দিয়েছিলি?”
” না, আমি ফোন নিয়ে আসি নি। তুই কল দে।”
” আচ্ছা।”
শাকিরা একটু দূরে গিয়ে আবিরাকে কল দিয়ে জেনে নেয় সে কোথায় আছে। আবিরা তাদের দুজনকে মেইন গেইটের সামনে যেতে বলেছে। আবিরার সাথে কথা শেষ করে শাকিরা আবার শুভ্রতার কাছে যায়। ফাউজিয়াকে বলে,
” তুই আজকেই আমাদের সাথে চল, খুব মজা হবে।”
ফাউজিয়া হেসে বলে, ” খুব মজা কি হবে? গিয়েই তো ইফতার পর পড়তে বসতে হবে। পরিক্ষার সময় মাঝে একটাদিন ছুটি নেই। তুই বিয়েটা তিনদিন পর করলেই পারতি তাহলে যাওয়া যেত। ”
” বিয়ের তারিখ আগেই ঠিক করা হয়েছে যে। কি আর করার, অন্যরকম ভাগ্য আমার। তুই কি তাহলে কালকে যাবি?”
” না রে আমার মা অসুস্থ। বিয়ে কর, ভাইয়াকে নিয়ে একদিন বাড়িতে আসবি।”
” এটা কোন কথা! আমি তো কালকে আগে আগে বের হয়ে যাব। পাশমার্ক উঠলেই বেরিয়ে যাব।”
” কার সাথে বাসায় যাবি পার্লার থেকে?”
” নিহান ভাইয়া আসবে। শুভ্রতার তো কাল একা একা যেতে হবে। কি রে শুভ্রতা যেতে পারবি একা?
শুভ্রতা নিচে গাছের দিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে। এতক্ষণ কেউ তার দিকে তাকিয়ে ছিল মনে হচ্ছিল তার। সে তাকাতেই সেখান থেকে কেউ গাছের আড়ালে চলে যায়। অনেকক্ষণ ধরেই কেউ তাকে দেখছিল।
শাকিরা কোন জবাব না পেয়ে শুভ্রতার হাত ঝাঁকাতেই শুভ্রতা চমকে ওঠে।
” ক কি হয়েছে?”
” তোর কি হয়েছে? ওদিকে কি দেখছিস? আমার কথার কোন জবাব নেই কেন?”
” কোন কথা?”
ফাউজিয়া এবার শুভ্রতার মুখ দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে তার। বাহিরে কিছু একটা দেখছিল, শাকিরা ডাকতেই সে চমকে উঠলো। ফাউজিয়া একটু বারান্দার গ্রিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে বাহিরে তাকালো কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই দেখল না। ফাউজিয়া স্বাভাবিক হয়েই বলল, ” আচ্ছা বাদ দে এবার সবকিছু। চল বের হই নইলে দেরি হয়ে যাবে। মা বাসায় একা আছে। আর আজ তোদের বাড়ি ফিরতে এমনিতেও অনেকটা দেরি হবে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যা।”
ফাউজিয়ার কথায় শাকিরা তাল মিলিয়ে বের হওয়াতে রাজি হয় কারণ এখানে যত দেরি হবে বাড়ি ফিরতেও তর দেরি হবে। তার চেয়ে ভালো এখান থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়া। তিনজন হাটা শুরু করে কিন্তু শুভ্রতা বারবার পিছনে সেই গাছটার দিকে তাকাচ্ছে। তিনজন চলে গেলে মুখে কালো মাস্ক আর কালো শার্টে কেউ গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।
#চলবে……