শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
220

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩০

“বিয়ের পর বউয়ের সাথে রোমান্স করা বাদ দিয়ে বউকে ধমকে ধমকে পড়াতে হয়েছে গত তিনদিন। তুমি হলে পড়াতে? থাকতে এমন বউয়ের আশেপাশে?”

রায়হানের এমন কথায় লজ্জা পেয়ে যায় শাকিরা। শাকিরার পরিক্ষা শেষ হতে না হতেই রায়হানের বাবা-মা দুজনকে বাড়ি ফিরতে বলছে। সে কথা রায়হান শাকিরাকে জানাতেই শাকিরা বলে, ” আর দুইদিন পর গেলে হয় না? মাত্র পরিক্ষা শেষ হলো দুইদিন বিশ্রাম নিয়ে তারপর যাই।”

তখন রায়হান উক্ত কথা বললে শাকিরা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। সে বলে, ” সবাই যে বলে আপনি ঠোঁটকাটা, এখন দেখছি মিথ্যা কেউ বলে না।”

” নিজের যা চাই সেটা না জানালে জানবে কি করে? পেতে হলে তো জানাতে হবে আর জানালে তবেই পাওয়া যায়।”

” আজই যেতে চাচ্ছেন?”

” গেলে ভালোই হতো। নিজের রুম ছাড়া অন্যকোথাও ঘুম হয় না। ”

” অভ্যেস করে নিন, মাঝেমাঝেই তো এখানে আসতে হবে।”

” সে দেখা যাবে। এখন বল কবে যেতে চাইছো?”

” দুইদিন পর যাই। আপনি আগে যেমন এখানে থেকেছেন ওভাবেই থাকুন।”

” আগে তো তোমার থেকে দূরে দূরে থেকেছি এখনো কি দূরে দূরে থাকব?”

বেশ জটিল প্রশ্ন, কি উত্তর দেবে শাকিরা? শাকিরাকে চুপ থাকতে দেখে রায়হান আবার বলে, ” কি হলো দূরে থাকতে হবে?”

শাকিরা বলে, ” না, এখানেই থাকুন।”

রায়হান শাকিরাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে বলে, ” কি মেয়ে বিয়ে করেছি নিজে থেকে এসে জড়িয়েও ধরে না একটু। সারাক্ষণ দূরে দূরে থাকবে শুধু।”

রায়হান শাকিরাকে বুকে জড়িয়ে নিতেই প্রশান্তির শ্বাস ফেলে রায়হান। সবার প্রিয় মানুষের জায়গা নিজের বুকে হয় না, কারো কারো প্রিয় মানুষ অন্যের বুকেও থাকে। সুখী তো সেই ব্যক্তি যে প্রিয় মানুষকে নিজের বুকে সারাজীবনের জন্য পেয়েছে।

ফাউজিয়া রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে। কার কাপে কয় চামচ চিনি দেবে সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। চা বানাতে আসার আগে শুনেও আসে নি। কি যে বোকা বোকা লাগছে নিজেকে!
এখন শুনতে গেলে লজ্জায় পড়তে হবে বিধায় তিন কাপ চা’তেই এক চামচ করে চিনি দিয়ে দেয়।

ফাউজিয়া একে একে তিনজনের হাতেই চায়ের কাপ ধরিয়ে দিল। সাহিল শেখ তার মাকে নিয়ে ফাউজিয়াদের বাড়িতে এসেছে। আসল কারণটা সে এখনো ধরতে পারে নি কারণ তার মা তাকে রান্নাঘরে চা বানাতে পাঠিয়েছিল।

ফাউজিয়ার মা সবাইকে চা নিতে বলে নিজেও এক কাপ চা নেন। সাহিলের মা চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন, ” আহ, চা তো বেশ ভালো বানাতে পারো দেখছি। এজন্যই বুঝি আপা মেয়েটাকে চা বানাতে পাঠালেন? শোনো মেয়ে চা আর রুটি কখনো ভালো বানাতে নেই, ভালো বানালেই মানুষ প্রশংসা করতে করতে কাজ বাড়িয়ে দেবে। এই যেমন তোমার মা।”

কথাটা বলেই তিনি হেসে আবার চা খেতে শুরু করেন। সাহিল শেখ চা মুখে নিতেই বুঝতে পারে চিনি দেওয়া হয়েছে। তবে খুব একটা মিষ্টি না হওয়ায় বেশ ভালোই লাগছে যদিও সে চা’তে চিনি পছন্দ করে না। সাহিলের মা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” চা কেমন হয়েছে রে?”

” ভালো, মা।”

” চিনি দিয়েছে?”

” হয়তো এক চামচ দিয়েছে, মন্দ লাগছে না।”

” আপনি চা’তে চিনি খান না স্যার?”

ফাউজিয়ার প্রশ্নে বেশ সহজভাবে উত্তর দেয় সাহিল, ” খাই না, তবে ভালোই লাগছে।”

” স্যরি স্যার আমি জানতাম না।”

” ইটস ওকে। আচ্ছা মা আমি তাহলে উঠছি, তুমি সাবধানে থেকো। আন্টি আমি আসছি তবে। রাত আটটার দিকে এসে মাকে নিয়ে যাব। মা’র শরীরটা একটু অসুস্থ না হলে আর কাজের বুয়া থাকলে বাড়িতেই রেখে যেতাম কিন্তু…..”

ফাউজিয়ার মা বলে, ” তুমি কোন চিন্তা করো না বাবা। তোমার মা আর আমি গল্পগুজব করে সময় পার করে দেব। আমার ভালোই হলো কথা বলার একটা মানুষ পাওয়া গেল। মেয়েটা সারদিন পড়াশোনা করে আমার ঘরেই বসে থাকতে হয় বা পাশের ফ্ল্যাটে যাই। তোমাদের বাড়িও তো কাছেই, ভালোই হলো মাঝেমধ্যে যাওয়া যাবে। তুমি যাও সাবধানে আবার ফিরে এসো।”

” ঠিক আছে আন্টি। মা আসছি তবে।”

সাহিল শেখ যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালে ফাউজিয়ার মা ফাউজিয়াকে বলে, ” সাহিল চলে গেলে দরজাটা আটকে দিয়ে আয়। আমি আর আপা রুমে গিয়ে বসি।”

মায়ের কথায় ফাউজিয়া সাহিলের পিছে পিছে গিয়ে দরজা আটকে ভেতরে চলে আসে।

রাত সাড়ে আটটা আকাশটা মেঘলা, চারদিকে শনশন বাতাস বইছে। বৃষ্টির ফোটা পড়ছে, এখনো জোরে বৃষ্টি আসেনি। শুভ্রতা রুম থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধার রুমে চলে যায়। স্নিগ্ধা তখন জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিল। শুভ্রতা গিয়ে স্নিগ্ধাকে টেনে ছাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামায়। স্নিগ্ধা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হলো!

” কি হলো আপু? এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”

” ছাদে চল, বৃষ্টিতে ভিজব। কি সুন্দর বৃষ্টি নেমেছে দেখেছিস!”

” আপু, মা কিন্তু ধরে মা*রবে।”

” কিচ্ছু হবে না আয় তো।”

” তোমার না এমনিই ঠান্ডা লেগেছে, বিকেলে আম্মুকে বললে?”

” আরে কিছু হবে না চল তো!”

স্নিগ্ধাকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে যায় শুভ্রতা। আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। বৃষ্টির ফোটা এসে গালে, চোখে পড়ে আবার ছিটকে পড়ছে। স্নিগ্ধা ছাদে বসে পড়ে, দুই পা উঁচু করে ব হাটুতে চিবুক রেখে বসে ভিজছে, তার মতে বৃষ্টি উপভোগ করার এটাই শ্রেষ্ঠ উপায়।

প্রায় আধাঘণ্টা পর দুজনে নিচে নেমে জামাকাপড় পাল্টে নেয়। দুজনই শীতে কাঁপছে। স্নিগ্ধা বলে, ” ভাগ্যিস আম্মু দেখেনি, দেখলে আজ খবর খারাপ ছিল।”

রুমের বাহিরে থেকে আয়েশা বেগম বলে ওঠে, ” কে বলেছে তোদের আমি দেখিনি? দুজনের সাহস খুব বেড়ে গেছে তাই না? এতরাতে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে? খুব বৃষ্টিবিলাসী হয়ে গেছেন দুজন! আর একদিন বৃষ্টিতে ভিজতে যদি কাউকে দেখেছি তাহলে সেদিনই পা ভেঙে ঘরে ফেলে রাখব।”

মায়ের কথায় স্নিগ্ধা চুপ হয়ে যায়। শুভ্রতার মুখও মলিন। আয়েশা বেগম রুমে এসে শুভ্রতার মাথা নিজের ওরনা দিয়ে মুছে দিতে দিতে বলেন, ” এতরাতে কেউ বৃষ্টিতে কেউ ভিজে? জ্বর আসলে! ঠান্ডার যেন না লাগে ওষুধ খেয়ে নে একটা।”

” ঠিক আছে মা খেয়ে নেব। বৃষ্টি দেখে খুব ভিজতে ইচ্ছে করছিল তাই….”

” বুঝেছি, এরপর কখনো যেন রাতে না ভিজতে দেখি।”

“তুমি আমাদের ভিজতে দেখলে কি করে? তুমি তো তখন নামাজ পড়ছিলে। তোমাকে কি অন্যকেউ খবর দিয়েছে?”

স্নিগ্ধার কথা শুনে একটু ধমক দিয়ে স্নিগ্ধাকে চুপ করিয়ে দেন আয়েশা বেগম।

স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে কান্নার ভঙ্গিতে বলে, ” তুমি বড়মেয়েকে কিছু বলো না শুধু আমাকে ধমকের ওপরে রাখো। আমি যেতে চাই নি আপুই জোর করে নিয়ে গেছে আমাকে, কি রে আপু বল মাকে।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে বলে, ” হ্যাঁ মা, তুমি ওকে কিছু বলো না।”

আয়েশা বেগম স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ” হয়েছে হয়েছে এদিকে আয় মাথাটা মুছে দেই। চুলে গোড়ায় পানি থাকলে ঠান্ডা লাগবে তখন তো আমারই দেখতে হবে।

রাত দশটার দিকে শাহাদাত সাহেব শুভ্রতার রুমে নক করে। শুভ্রতা তখন শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করছিল আর ইরার সাথে কথা বলছিল। শাকিরার বিয়ের পরদিনই তাদের ফিরে যেতে হয়েছিল তাই সবার সাথে তেমন আনন্দ করতে পারে নি।

দরজায় নক করার শব্দ শুনে শুভ্রতা উঠে দরজা খুলে দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে। শুভ্রতা বাবাকে ভেতরে আসতে বলে নিজেও এসে বিছানায় পা তুলে বসে। শাহাদাত সাহেব এসে সামনের চেয়ারটায় বসে। তার হাতে একটা দেখে শুভ্রতা বলে, ” ব্যাগে কি বাবা?”

” তোদের দুই বোনের জন্য নতুন ড্রেসের কাপড় এনেছি সাথে ড্রেসের সাথে ম্যাচ করা হিজাব আছে। সামনে সপ্তাহে আমার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে। বাড়ির সবাইকে দাওয়া দিয়েছে তাই তোদের জন্য নিয়ে এলাম। কাল দর্জির কাছে গিয়ে বানাতে দিয়ে আসিস।”

” ঠিক আছে বাবা।” বলে শুভ্রতা তার বাবার হাতের ব্যাগটা নেয়। বের করে ড্রেসগুলো দেখতে থাকে। নতুন জিনিস পেলে সবার মন ভালো হয়ে যায় আর সেটা যদি বাবা দেয় তাহলে তো কথাই নেই।

শাহাদাত সাহেব বলেন, ” পছন্দ হয়েছে?”

শুভ্রতা মুখে হাসি নিয়ে বলে, ” হ্যাঁ বাবা দুটোই খুব পছন্দ হয়েছে। আমি কোনটা নেব বলো তো?”

শাহাদাত সাহেব কিছু বলবেন তার আগেই আবার সে বলে, ” কাল স্নিগ্ধাকে দেখাই, ও যেটা নেবে সেটাই ওর। আমার যেকোন একটা হলেই হবে কারণ দুটোই সুন্দর।”

” ঠিক আছে দুজন মিলমিশ করে নিস তাহলে।”

” ঠিক আছে বাবা।”

” এখন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা মা। ফজরে উঠে নামাজটা আদায় করে নিস।”

” ঠিক আছে, উঠব বাবা।”

শাহাদাত সাহেব মেয়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে শুভ্রতাকে ঘুমোতে বলে চলে যায়। শুভ্রতা তার বাবা আর বাড়ির মানুষগুলোকে দেখে ভাবে আল্লাহ তাকে কতটা ভাগ্যবতী করে পাঠিয়েছে। একটা ডিভোর্সি মেয়ের জীবন কতটা কঠিন তা কেউ তাকে বুঝতেই দেয় না। একজন বাবা কি এতটাই ভালো হয়! সবার বাবা কি তার বাবার মতো হয়!

#চলবে…..

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩১

“ডিভোর্স হওয়ার তিনমাস, সাড়ে তিন মাসেই চাচাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম শুরু করে দিয়েছে। এসব মেয়েদের কি স্বামী ছাড়ার কষ্ট আছে নাকি? এদের তো কিছু বলাও যাবে না, বড়লোক মানুষ, যার সাথে প্রেম সে আবার মেজর হয়েছে শুনলাম। কিছু বললে তো জেলে দিয়ে দিবে তবুও এসব দেখে কি সহ্য করে থাকা যায়?”

শুভ্রতা তার পরিবারের সাথে বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে এসেছে। এখানে এসে এমন একটা কথা শুনতে হবে এটা সে কল্পনাও করতে পারে নি।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসার ঘরে বসে আছে। শুভ্রতার ফোন আসায় সে একটু বাহিরের দিকে এসেছিল কথা বলতে। বাহিরে এসেই দেখে তার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন মহিলা তাকে নিয়ে কথা বলছে। তাদের মধ্যে দুজনই তার প্রতিবেশী, কয়েক বাড়ি পরেই বাড়ি।

শুভ্রতাকে দেখেই আরেকজন বলে ওঠে, ” এখনকার মেয়েরা কি সংসারী হয়? চুনের থেকে নুন খসলেই ছাড়াছাড়ি। তাদের কাছে সংসারের কোন দামই নেই।”

” যা বলেছ, বাহিরে ধেঈ ধেঈ করে ঘুরলে কি আর সংসার টিকবে?”

শুভ্রতা এবার তাদের দিকে এগিয়ে যায়। তিনজনের বেশ কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়।
একজনের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে, ” আমার প্রাক্তন স্বামী নতুন বিয়ে করছে, সেদিন বিয়ের কেনাকাটা করল। এসব খবর রাখেন না? বিয়েতে দাওয়াত পেয়েছেন?”

শুভ্রতার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মহিলাগুলো। তাদের মধ্যে একজন বলে, ” ঘরের বউয়ের বাহিরের দিকে টান থাকলে বর তো আরেকটা বিয়ে করবেই। ছেলে মানুষ বউ ছাড়া থাকবে নাকি?”

শুভ্রতা বলে, ” ছেলে মানুষের বউ লাগলে মেয়ে মানুষের কেন বর লাগবে না? তাদের চাহিদা নাই? আর কি যেন বললেন আমার বাহিরের দিকে টান? আপনার মেয়ের ডিভোর্স হয়েছে কেন? আপনার মেয়ের তো আপনার মতোই ভালো হওয়ার কথা। আমার মতো খারাপ কেন হলো? ”

” একদম মুখ সামলে কথা বলবে। আমার মেয়ের সাথে নিজের তুলনা করছো, সাহস কত তোমার!”

” কেন আন্টি? আপনার মেয়েও ডিভোর্সি আর আমিও ডিভোর্সি। নিজের মেয়েকে নিয়ে কিছু শুনতে পারবেন না, অন্যের মেয়েকে নিয়ে জলঘোলা ঠিকই করবেন। আপনার মেয়ে- মেয়ে আর অন্যকারো মেয়ে-মেয়ে না? ডিভোর্সের ক্ষেত্রে নিজের মেয়ে ধোয়া তুলসি পাতা আর অন্যের মেয়ে কি নিম পাতা? তেতো বলে গা গুলোয়? আপনাদের মতো কিছু মানুষের জন্য ডিভোর্সি মেয়েরা একটু শান্তি পায় না। ঘর থেকে বের হয় না এই ভয়ে যে সে বের হলেই আপনারা তাকে এভাবে মানসিক নির্যাতন করবেন। ডিভোর্স হলে শুধু মেয়েদের দোষ কেন দেখেন নিজেরা মেয়ে হয়েও?”

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর একজন বলে ওঠে, ” আমরা শ্বশুর শাশুড়ির সাথে সংসার করেছি। উঠতে বসতে কথা শুনিয়েছে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছে তবুও ঘর ছাড়ি নি। আর এখনকার মেয়েরা কথায় কথায় সংসার ভাঙে।”

শুভ্রতার বেশ রাগ হচ্ছিল, নিজেকে অসহায়ও লাগছিল। মানুষের কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেয়ে সবকিছু তাদের মানসিকতার ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো।

শুভ্রতা দুই চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে, ” আপনাদের কারো স্বামী পরকিয়া করেছে? আপনারা কেউ স্বামীকে চাকরি করে খাইয়েছেন? সংসার চালিয়েছেন? এতকিছুর পরও স্বামী খারাপ ব্যবহার করলে কেমন লেগেছে আপনাদের? ”

কেউ কোন কথা বলছে না। একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।

শুভ্রতা আবার বলে, ” অন্য মেয়েদেরও একটু নিজের মেয়ের মতো দেখতে শিখুন আন্টি, সবসময় শাশুড়ি শাশুড়ি ভাবটা নিয়ে থাকবেন না। আমরা মেয়েরা কোন কিছু নিয়ে ভয় না পেলেও আপনাদের মতো কিছু প্রতিবেশীদের ভীষণ ভয় পাই। সব সংসার ভাঙায় যেমন নিজের মেয়ের দোষ থাকে না ঠিক তেমন অন্যের মেয়েরও দোষ না-ও থাকতে পারে।”

শুভ্রতা কথাগুলো বলেই সেখান থেকে ভেতরের দিকে চলে যায়। শুভ্রতা ভেতরে গিয়ে দেখে তার মা বাবা এবং স্নিগ্ধা একটা জায়গায় বসে আছে। শুভ্রতা এগিয়ে যেতেই একজন এসে তার সামনে দাঁড়ালো। সামনে এসে পথ আটকানোর ফলে শুভ্রতাও থেমে যায়।

” জি কিছু বলবেন?”

” তুমি শাহাদাত আঙ্কেলের বড়মেয়ে না?”

” জি।”

” চলো এনা তোমাকে ডাকছে।”

” এনা কে?”

” এনাকে চেনো না? ”

“আসলে আমি কাউকেই তেমন চিনি না।”

” যার বিয়ে হচ্ছে।”

” ওহ আচ্ছা আমি তো ইশায়া নামে চিনি, স্যরি।”

” ঠিক আছে, এসো আমার সাথে।”

মেয়েটা শুভ্রতাকে ডাকতেই মেয়েটার পিছে পিছে চলে যায়।

সবার বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ খানিকটা রাত হয়ে যায়। শুভ্রতা সারাদিন বাহিরে বাহিরে খুশি দেখালেও ভেতরে ভেতরে সে ভেঙে পড়েছে। খুটিতে ঘুনে ধরলে ঘরটা নড়বড়ে থাকে আর সেখানে যদি প্রচন্ড ভারী কিছু সেখানে নিক্ষেপ করলে ঘরটা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। কেন মানুষ ভাঙার জন্য নড়বড়ে ঘরগুলোই বেছে নেয়? কেন তারা ভঙ্গুর মনটাকে আরও ভেঙে দেয়! জোরা না লাগতেই কেমন দাগ বসিয়ে দেয়! মানুষ বড় অদ্ভুত প্রাণী।

শুভ্রতা বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করছে। নিজেকে সামলে নিলেও মানুষগুলো বারবার একই ক্ষ*ততে আঘা*ত করে৷ এত জোরালোভাবে আঘাত করে যে ব্যথা যেতেই চায় না।

দরজা নক করার শব্দ পেতেই শুভ্রতা চোখের পানি মুছে নেয়। যত দুঃখ, কান্না সব ঘরেতেই মানায় বাহিরে না। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ঘরে দম বন্ধ করে কান্না করলেও হাসিমুখেই দরজা খুলতে হয়। বাহিরের মানুষগুলো যে অত্যন্ত ভয়াবহ।

শুভ্রতা স্বাভাবিক হয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দেখে নিহান দাঁড়িয়ে আছে। এই লোকটাকে দেখলেই কেন যে দুঃখগুলো আজকাল সায় পেয়ে যায়। ভেতর থেকে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে আসতে চায়। কত কষ্টে যে চেপে রাখতে হয়!

নিহানকে রুমের ভেতরে আসতে বললে নিহান ভেতরে আসে। শুভ্রতাও ভেতরে যাওয়ার আগে মাকে দেখে সে জানতে চায় কি হয়েছে কিন্তু তার মা উত্তর দিতে পারে না কারণ তিনি নিজেও জানেন না। শুভ্রতা রুমে যাওয়ার সময় এক কাপ চা ফ্লাস্ক থেকে নিয়ে যায়।
নিহানের চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিতেই নিহান সেটা নিয়ে টেবিলে রেখে বলে, ” বোসো কথা আছে।”

শুভ্রতা চেয়ার টেনে বসলেই নিহান বলে, ” আগামীকাল নয়টার মধ্যে তৈরি হয়ে থেকো। কোর্টে যেতে হবে।”

” ঠিক আছে।”

” আচ্ছা তাহলে উঠি। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে যাও।”

” ঠিক আছে।”

নিহান উঠে চলে যেতে লাগলে শুভ্রতা বলে, ” চা খেয়ে গেলেই পারতেন।”

” না এখন আর চা খাব না।”

” আপনার কি মন খারাপ?”

শুভ্রতার কথায় নিহান এবার থেমে যায়। শুভ্রতা কি করে বুঝলো তার মন খারাপের ব্যাপারে! আসলেই তো বিকেলে অফিস থেকে কল আসার পর থেকে তার মন খারাপ। নিহানকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্রতা আবার বলে, ” আপনার কি হয়েছে, মন খারাপ কেন?”

” মন খারাপ কেন থাকবে? ”

” দেখে মনে হচ্ছে।”

” না।”

” আপনি আমার মন খারাপ দেখতে পারেন না আর নিজের কথা বলতে চাইছেন না?”

নিহান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ” আমার কল এসেছিল, সামনে সপ্তাহে চলে যেতে হবে। ”

” সময় হয়ে গিয়েছে এত তাড়াতাড়ি! ”

” হ্যাঁ। আমি চলে গেলে নিজেকে রক্ষা করতে পারবি তো? মানুষের কথায় কষ্ট পাবি না তো?”

নিহানের কথায় শুভ্রতার মন আরও খারাপ হয়ে যায়। মানুষ যে তাকে কথায় কথায় মে*রে ফেলার সুযোগে আছে।

নিহান আবার বলে, ” কেউ কিছু বললে চুপ করে সহ্য করবি না। যারা সহ্য করে তাদের দুঃখ বেশি।”

শুভ্রতা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে, ” আমি পারব, আমাকে যে পারতেই হবে। আমি সহ্য করি না নিহান ভাই।”

” তোরও কোন কারণে মন খারাপ আজ তাই না? আমি আসার আগে কান্না করছিলি!”

শুভ্রতা নিহানের কথায় বেশ অবাক হয়। দরজা খোলার সময় তো সে বেশ স্বাভাবিক হয়েই দরজা খুলেছিল তাহলে নিহান বুঝল কি করে?

নিহান আবার বলে, ” লুকোনোর দরকার নেই। তোর চোখে লালচে রঙ বলে দিয়েছে যে তুই কান্না করেছিস। কি হয়েছে?”

শুভ্রতার দুপুরের ঘটনা আর লুকোতে ইচ্ছে করছিল না। শুভ্রতা প্রথম থেকে সবটা বলে। কথা শেষ করতে গিয়ে শুভ্রতার গলা ভারী হয়ে ওঠে। নিহানের মুখের ভাবটা পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রিয় মানুষের অপমান হয়তো কেউই সহ্য করতে পারে না। নিহান বলে ওঠে, ” আমাকে কল দিতে পারলি না? আমি বুঝিয়ে দিতাম দোষ কাকে বলে।”

” নিজের সমস্যার সমাধান নিজেকেই করতে হবে। আমি নিজেই পারব, আপনি দেখে যান।”

” আমি বিশ্বাস করি তুই পারবি। শুধু নিজের সমস্যার সমাধান না অন্যকেউ বিপদে পড়লেও তাকে সাহায্য করতে হবে। বড় কিছু ঘটলে আমাকে একবার ইনফর্ম করে রাখবি।”

” হুম।”

” আচ্ছা আমি এখন বাসায় যাই, মাথাটা খুব ব্যথা করছে।”

” একটা ওষুধ খেয়ে নিবেন।”

” ঠিক আছে।”

” আপনি সারাজীবন আমার জন্য এমন থাকবেন তো?”

ভালোবাসার মানুষ যখন সারাজীবন থেকে যাওয়ার কথা বলে সেই অনুভূতি কোনকিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। শুভ্রতার কথা অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করে নিহানের। শুভ্রতা উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। নিহান মুচকি হেসে মাথা উপরনিচ নাড়িয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুভ্রতার মুখেও হাসি ফুটে যায়।

#চলবে……

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩২

” আমি আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই নিহান ভাই।”

সোহেলের বিষয়ে কোর্টের রায় শুনে বাসায় ফিরছিল নিহান আর শুভ্রতা। শাহাদাত সাহেব নিজের বাইক নিয়ে একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন। নিহান শুভ্রতাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। অনেকটা পথ শুভ্রতা কোন কথা বলে নি। হঠাৎ করে উক্ত কথা বলায় নিহান আস্তে করে বাইকটা থামিয়ে ফেলে। তড়িঘড়ি করে বলে, ” ক কি বললি?”

” এবার তো আপনার ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, ওখান থেকে এলেই আমাকে বিয়ে করে নেবেন প্লিজ।”

” এমনভাবে বলছিস যেন আবদার করছিস!”

” যদি মনে হয় আবদার তাহলে আবদারই।”

” সেদিন কি যেন বললি ডিভোর্সের পর নির্দিষ্ট একটা সময় পার করতে হয়, ওই সময় শেষ হয়েছে কি?”

” হ্যাঁ, রিসেন্ট শেষ হয়েছে। কেন?”

” তাহলে কি আর বাধা আছে?”

” মানে?”

নিহান বেশ সাধারণ ভঙ্গিতেই বলে, ” বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে আমার।”

” এ্যাহ?”

” আমার প্রতিদিন মাথা ব্যথা করে অন্যের মেয়েকে দিয়ে তো আর মাথা টিপিয়ে নিতে পারব না, বউ থাকলে ভালো হতো।”

” ধ্যাত কি যে বলেন না!”

” বউকে শাড়ি পরে কেমন লাগে দেখতে ভারী ইচ্ছে করে। ভেজা চুল থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরবে আমি আঙুলের ডগায় নিব, বউয়ের মুখে ছিটিয়ে দেব, বউয়ের মুখে পানি পড়তেই চোখ বন্ধ করে নেবে আহ কতকিছু যে মিস করতে হচ্ছে! কতকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমি, তোমার কি উচিৎ হচ্ছে আমার সাথে এমন অবিচার করা?”

” কি করা উচিৎ আমার তাহলে এখন?”

” কোনদিকে না তাকিয়ে পিছনে ছেড়ে আসা কাজী অফিসে চলে যাওয়া উচিৎ। ”

” সোজা সামনের দিকে চলুন, পিছনে যাওয়া নিষেধ। ”

” যাই না চল, একবার গেলেই হয়ে যাবে। তোমার বাবাকেও লাগবে না, সে অলরেডি জামাই বলে মেনে নিয়েছে তুমি শুধু বর বানিয়ে নাও। ”

” ইশ কি সব বলছেন! এমন ঠোঁটকা*টা স্বভাবের হলেন কবে?”

” মানুষের চরিত্রে অনেক ধরণ আছে, প্রয়োজন অনুযায়ী সামনে নিয়ে আসে।”

” খুব ভালো এখন চলুন।”

” জীবনে এডভেঞ্চারের প্রয়োজন আছে কিন্তু তুমি চাইলেই আজ কাজটা সেরে ফেলতে পারি। বাড়িতে সবার অবস্থা কেমন হবে ভাবতে পারছো?”

” এত এডভেঞ্চারের প্রয়োজন নেই বাড়ি চলুন।”

” না মানে একটু গেলেও কিন্তু হতো।”

” আমি কিন্তু এখন বাবাকে কল দিয়ে বলব নিয়ে যেতে।”

” যাচ্ছি।”

নিহান আবার গাড়ি স্টার্ট করে। শুভ্রতা পিছনে বসে হাসছে। শুভ্রতা নিজেও জানে না তার এই হাসি একজন কত নেশাতুর চোখে তাকিয়ে আছে একজন। যখন তখন তার এই হাসির কারণে ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা।

” আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”

শুভ্রতা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আবার কথাটা বলে ওঠে। নিহান সামনে থেকে বলে, ” হ্যাঁ শুনছি।”

” আগে বলুন রেগে যাবেন না? আর রাগবেনই বা কেন আপনি নিজেই তো আমার পিছে পড়ে আছেন বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।”

” কি বলবেন সেটা বলুন। কথায় কথায় এমন অপমান করবেন না। ”

” অপমান করলাম?”

” তা নয়তো কি?”

” আচ্ছা বাদ দিন, আসল কথা বলি।”

” হ্যাঁ সেটাই ভালো।”

” আবিরা আপুর বিয়ের ব্যাপারে ভেবেছেন কিছু?”

” কেন? ঘটকালি করবেন নাকি?”

” হ্যাঁ ওরকমই কিছু একটা।”

” কি কিছু একটা? বাবা ওর জন্য ছেলে খুঁজে রেখেছে। ”

” আমার কথা তো শুনবেন।”

” বলো।”

” আমার ভার্সিটির ওখানে একটা ডাক্তার আছে, আবিরা আপুকে পছন্দ করে।”

” পছন্দ করতেই পারে।”

” পছন্দ করে বলতে ভালোবাসে।”

” মানে?”

” গলা এমন কেন হয়ে গেল?”

” কাহিনী কি সেটা বল।”

” ওইতো আবিরা আপুকে একজন পছন্দ করে সে একজন ডাক্তার। দুই একেই হয়তো আপুকে দেখতে আসার অনুমতি চাইবে। সবার অধিকার আছে ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকার।আমি আশা করব আপনি বিষয়টা বুঝবেন। অভীক ভাইয়া খুব ভালো মানুষ। ”

” ওহ আচ্ছা তাই বলুন। আপনি সবকিছু জেনে বসে আছেন! ”

” হ্যাঁ জানি। আমি জানি বলেই আপনি জানলেন। আমি না জানলে তো আর জানতেন না তাই না?”

” জানিয়ে খুব উপকার করলেন। ”

” এভাবে কেন বলছেন?”

নিহান আর কোন কথার জবাব দেয়নি। শুভ্রতা আরও কিছু কথা বলেও নিহানকে কথা বলাতে পারেনি। মনে মনে কত কথা শুনিয়েছে সে! নিজে যাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করতে কতকিছু করছে আর বোনের বেলায় সব ভাইয়েরাই ভিলেন কয়ে যায়।
~~

শাহাদাত সাহেব বাসায় ফিরেন নি। তিনি কোর্ট থেকে সোজা অফিসে গিয়েছেন। এদিকে আয়েশা বেগম চিন্তায় আছেন সোহেলের কি গতি হলো সেটা জানার জন্য। তিনি বারবার শুভ্রতা আর নিহানকে কল দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কেউ কল রিসিভ করছে না। কিছুক্ষণ পর বাড়ির বাহিরের বড় উঠোনটায় এসে এসে ঘুরে যাচ্ছেন, রাস্তার দিকে উঁকি দিয়ে দেখছেন আসছে কি না তারা।

বাড়ি থেকে এবার বের হবেন ওমনি শুভ্রতার সাথে দেখা। তিনি কিছু বলবেন তখনই শুভ্রতা বলে, ” মা খুব পানি পিপাসা পেয়েছে একটু পানি খাওয়াও তো, আমি রুমেই আছি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে রুমে গিয়ে বস আমি পানি নিয়ে আসছি।” বলেই আয়েশা বেগম আনতে যান। শুভ্রতা রুমে গিয়ে বোরখান হিজাব খুলে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

আয়েশা বেগম মিনিট দুয়েকের মাঝে একগ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে মেয়ের রুমে উপস্থিত হন। শুভ্রতাকে পানি দিলে সে খেয়ে নেয়। আয়েশা বেগম বলেন, ” এখন বল তো কী হলো?”

” আদালতের রায়?”

” হ্যাঁ। ”

” সাত বছরের সশ্রম কারা*দন্ড দিয়েছে।”

” যাক আলহামদুলিল্লাহ। আরও বেশি দেয়া উচিৎ ছিল। সবাই শিক্ষা পাক, অপরা*ধের শা*স্তি যত বাড়বে অপ*রাধ তত কমবে।”

” হুম।”

” আচ্ছা তুই থাক, ফ্রেশ হয়ে নে। আমি একটু নিহানদের বাড়ি থেকে আসি।”

” ওখানে কেন?”

” আপা একটু ডাকলো।”

” কী কারণে ডেকেছে বলেনি?”

” না।”

” আচ্ছা যাও।”

রাবেয়া বেগম ছেলেকে আসতে দেখে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত বানিয়ে রুমে নিয়ে গেলেন। নিহান ততক্ষণে গোসলে চলে গিয়েছে। তিনি শরবতটা টেবিলে রেখে বিছানায় বসেন।

নিহান তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে নিজের মাকে দেখে বলে ওঠে, ” কি মা? এখানে কেন?”

” ছেলের রুমে আসতে কারণ লাগে নাকি?”

” না সেটা না। এসে বসে আছো একা একা তাই বললাম।”

” তোর জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসেছিলাম, এসে দেখি তুই গোসলে গিয়েছিস।”

” আচ্ছা দাও।”

নিহান গ্লাসটা নিয়ে শরবত খেতে থাকে। সে মায়ের মুখ দেখে বুঝতে পারছে রাবেয়া বেগম কিছু একটা বলতে এসেছে। নিহান শরবত শেষ করে বলে, ” মা আমি চাচ্ছিলাম যাওয়ার আগেই শুভ্রাকে বিয়ে করে রেখে যেতে। ”

নিহানের কথায় রাবেয়া বেগমের মুখ আরও বেশি মলিন হয়ে যায়। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, ” শুভ্রতাকে বিয়ে না করলে হয়না বাবা?”

নিহান বেশ অবাক হয় মায়ের কথায়। যেই মা এতদিন তার পাশে ছিল আর যখন ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তখন কি না এসব বলছে!

উৎকন্ঠিত হয়ে নিহান বলে ওঠে, ” এসব কি বলছো মা? আমি ওকে ভালোবাসি। এতগুলো বছর আমি অপেক্ষা করেছি আর এখন যখন ওকে পাবার সময় হয়েছে তখন তুমি এসব বলছো?”

” আমার কোন আপত্তি নেই বাবা, আশেপাশের মানুষ ভালো চোখে দেখছে না।”

” আশেপাশের মানুষ কি দুইবেলা খাওয়াতে আসবে? প্রতিবেশী কাজই ওগুলো। এখন আল্লাহ না করুক শুভ্রার জায়গায় যদি আবিরা বা নেহা থাকতো তাহলে কি করতে বলো তো? চাইতে না তোমার মেয়ে ভালো কাউকে বিয়ে করে সুখী হোক? প্রথম বিয়েতে কারো কপালে সুখ না-ই থাকতে পারে তাই বলে কি সে ভালো থাকার অধিকার হারাবে?”

” আমাকে ভুল বুঝিস না৷ আমি চাই তুই ভালো থাক, শুভ্রতাকে আমি যথেষ্ট ভালোবাসি।”

নিহান বুঝতে পারে এগুলো তার মায়ের কথা না, আশেপাশের কেউ হয়তো বাড়ি এসে এসব বলেছে। সে মায়ের পাশে গিয়ে বসে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” মা আমি আজ বাবার সাথে কথা বলব। আমি চলে যাওয়ার আগেই শুভ্রাকে বিয়ে করতে চাই।”

” সেদিন তো বললি কয়েকমাস পর বিয়ে করবি শুভ্রা থার্ড ইয়ারে উঠলে! আর এখন তো আত্মীয়দের দাওয়াত দেয়াও সম্ভব নয়। তোর বাবাও আসবে কয়েকদিনের মধ্যে। ”

” এখনই কোন অনুষ্ঠান হবে না মা। শুধু বাড়ির মানুষ থাকলেই হবে।”

” আচ্ছা আমি দেখছি তোর বাবার সাথে কথা বলে।”

” ঠিক আছে মা।”

রাবেয়া বেগম গ্লাসটা নিয়ে রুম থেকে চলে যান। নিহানের কল আসায় বারান্দায় চলে যায়।

#চলবে….