শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
219

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩৩

আবিরা ফোনে কথা বলার সময়েই নিহান দরজায় নক করে। সে তখন অভীকের সাথে কথা বলছিল কোন একটা বিষয় নিয়ে। নিহানের গলা শুনতেই আবিরা ফোনটা বিছানার ওপর ছুড়ে মা*রে। তাড়াতাড়ি করে দরজার সামনে গিয়ে ম্লান হাসি দেয়। নিহান রুমের ভেতরে এসে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে আবিরার মনে পড়ে সে কল কাটতে ভুলে গিয়েছে। নিশ্চয়ই অভীক ফোনের ওপাশ থেকে কথা বলেই যাচ্ছে। নিহান এগোতে দেখে আবিরা ভয়ে বারবার শুকনো ঢোক গিলছে। নিহান গিয়ে বিছানায় বসে। আবিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

” কারো সাথে কথা বলছিলি?”

” ন না তো ভাইয়া।”

” আমাকে দেখে ফোন ছুড়ে মারলি কেন?”

” ছুড়ে কেন মার*ব!”

নিহান ফোনটা হাতে নেয়। অভীক এতক্ষণে কল কেটে দিয়েছে। নিহান কললিস্ট চেক করে আবিরার দিকে তাকায়। আবিরা তখন ভয়ে কাঁপছে। নিহান ফোনটা রেখে বলে, ” অভীক কে?”

আবিরার গলা দিয়ে আর কোন কথা বেরোচ্ছে না। ভয়ে তার গলাভারী হয়ে এসেছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। এক হাতের আঙুল আরেক হাত দিয়ে নাড়ছে। নিহান আবার বলে,

” কে অভীক?”

আবিরা আমতা আমতা করে বলে, ” ভাইয়া উনি ডাক্তার।”

” তুই অসুস্থ?”

” না মানে..”

” কি?”

আবিরা আবার চুপ হয়ে আছে। কি বলবে সে এখন! এই সুযোগে কি অভীকের কথা বলে দেওয়া উচিৎ! কিন্তু কীভাবে কি শুরু করবে সে?

নিহান বলে ওঠে, ” অভীককে বলবি ওর বাবা-মাকে নিয়ে যেন এ বাড়িতে আসে। বাবার আসতে বেশি দেরি নেই কয়েকটা দিন মাত্র। ”

” ভাইয়া তু তুমি অ অভীকের কথা কীভাবে জানলে?”

” সেটা আপনার জানতে হবে না, যেটা বললাম সেটা কর।”

” তুমি রাজি?”

” তারা আসুক, দেখি কেমন! তারপর তো পছন্দ অপছন্দের বিষয়। ”

” ঠিক আছে।”

নিহান ফোনটা আবিরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ” তাকে কল করে বলে দিবি বিয়ের আগে প্রেম না, বিয়ের আগে প্রেম করলে বিয়ের পর সেই স্নিগ্ধ ভালোবাসাটা থাকে না।”

” হুম।”

নিহান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবার পিছন ফিরে বলে, ” মা কি তোকে কিছু বলেছে? ”

আবিরা ফোন টেবিলে রেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, ” কোন ব্যাপারে?”

” এই যে ছয়দিন পর আমি চলে যাব তার আগে আমি শুভ্রাকে বিয়ে করতে চাইছিলাম। এ ব্যাপারে কিছু বলে নি?”

” না তো, আমি তো এ বিষয়ে জানিই না। মা আমাকে বলেনি কেন? মা কি চাচ্ছে আমি বিয়ের দিনে জানব?”

” মা হয়তো আমার কথা সিরিয়াসভাবে নেয় নি। আমি এবার গেলে দুই মাসের আগে আর আসতে পারব না। শপথ গ্রহনের পর দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে, অনেক কাজ। আমি আজ কাকার সাথে কথা বলব। রাতে বাবার সাথে কথা বলেছি, জানিয়েছি সব। প্রথমে একটু আপত্তি করলেও পরে মেনে নিয়েছে। বাবা চেয়েছিল বাবা আসার পর বিয়েটা হবে কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব না। আমাদের না হওয়া সম্পর্ক নিয়ে মানুষ নানারকম কথা তুলছে। আমার মনে হয়েছে তাড়াতাড়ি নতুন সম্পর্কে জড়ানো উচিৎ। ”

” শুভ্রতা রাজি হয়েছে?”

” অমত করবে না হয়তো।”

” বাহ মানিয়ে নিয়েছ? আমি কিছুই জানলাম না।”

” তোর জানার কথা?”

” আমার জানার কথা হবে না কেন? আমার বিষয়ে তুমি জানলে ক্ষতি নেই কিন্তু শুভ্রতা আর তোমার বিষয়ে আমি জানতে পারব না!”

নিহান আর আবিরার মাঝে বেশ কিছুক্ষণ কথা চলে। আবিরা তার ভাইকে খুব ভয় পায় অথচ মাঝেমাঝে এমন কথাবার্তা দুজন বলে যেন তারা একে অপরের সাথে ভীষণ ফ্রি। তবে ছোটবেলা থেকে ভাইয়ের সাথে অনেক মজা করা হলেও নিজের কথাগুলো শেয়ার করতে পারে নি। কোন ছেলে ডিস্টার্ব করলেও সেই কথা নিহানকে বলতে এসে কান্না করে ফেলত।

শাহাদাত সাহেবকে বাড়িতে না পেয়ে নিহান অফিসে এসেছে দেখা করতে। নিহানকে চা দেওয়া হয়েছে, সে বসে বসে শাহাদাত সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর শাহাদাত সাহেব এসে নিহানের সামনের চেয়ারটায় বসলেন। নিহান চা রেখে সোজা হয়ে বসলো। একজনকে ডেকে আরেক কাপ চা দিতে বলে নিহানের দিকে তাকালো। ঘড়ি দেখে বলল, ” পনেরো মিনিটে হবে?”

নিহান স্বাভাবিকভাবেই বলে ওঠে, ” এনাফ টাইম।”

” আচ্ছা ঠিক আছে বল।”

” আমি আর ছয়দিন এখানে আছি। এরপর আমার শপথগ্রহণ। যদিও কিছুদিন দেরিতেই ছিল তবে ফোন করে জানিয়েছে সময় আগানো হয়েছে। আমি চাচ্ছিলাম…..”

” কি চাচ্ছিলে? চলে যাওয়ার আগে বিয়েটা করে রেখে যেতে?”

” হ্যাঁ। ”

” ভাই কল দিয়েছিল রাতে। আমাকে বলেছে সবকিছু।”

” আপনার কি কথা এখন?”

” আমিও চাই না আমার মেয়ের গায়ে কোন দাগ লাগুক। আমার মেয়ের সহ্যশক্তি বেশি বলে যে সে সব সহ্য করবে আর আমি তাকে সহ্য করতে দেব এমন হবে না।”

” জি, আমি জানি।”

” শুভ্রার সাথে কথা বলেছ?”

” জি বলেছি।”

” ফলাফল কি? কি বলেছে আমার মেয়ে?”

” হয়তো অমত করবে না। সে জানে আমি তাকে…”

” তোমাদের বিয়েতে আমার আপত্তি নেই। হয়তো তোমার বাবা-মায়ের ও নেই, এখন নেই। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না, মানুষের মন পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। ”

” আমি সেসব দেখে নেব। আপনাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ”

” আমার মেয়ের বয়স একুশ, তাকে আমি তার জন্মের আগে থেকে ভালোবাসি। তার মা যেদিন জানিয়েছে আমাদের ঘরে নতুন মানুষ আসছে সেদিন থেকে আমি তাকে ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসা নিশ্চয়ই আমার চেয়ে বেশি না।”

” আমি আসলে ওভাবে বলতে চাই নি।”

” আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেব কিন্তু তোমার যদি কখনো মনে হয় আমার মেয়ের সাথে তোমার বনিবনা হচ্ছে না, তুমি তাকে আর ভালোবাসো না, তাকে সহ্য করতে পারছো না তাহলে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে রেখে দিও না। আমার মেয়েকে কষ্ট না দিয়ে তাকে আমার কাছে আবার ফিরিয়ে দিও। আমি নিজে হয়তো রাজা নই, আমার রাজ্য নেই কিন্তু আমার মেয়ে আমার কাছে রাজকন্যা। আমি তাকে আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।”

” ফিরিয়ে দেওয়ার দিন কখনোই আসবে না। তার প্রতি আমার ভালোবাসাও কমবে না। আপনার পর হয়তো আমি ওকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। ”

” আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিস না বাবা। ওর চোখের পানি আমি অনেক দেখেছি, আমার মেয়ের চোখের পানি দেখলে আমার বুকে প্রচন্ড ব্যথা করে।”

” দোয়া করবেন কাকা, আমি যেন আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার ভালোবাসাকে ভালো রাখতে পারি।”

” আমার মেয়ের কিছু হলে আমি তোকে ক্ষমা করব না কোনদিন মাথায় রাখিস। এই যেভাবে হাত পেতে আমার মেয়েকে চাইছিস, আমার মেয়েকে যদি মাথায় করে না রেখেছিস তোকে আমি খু*ন করতে দুবার ভাববো সে তুই পেশায় যাই হোস না কেন!”

” আচ্ছা ঠিক আছে, এমন দিন জীবনে কখনো আসবে না।”

” মাথায় রেখো সবসময়। ”

” জি থাকবে। আপনি কি তবে অনুমতি দিচ্ছেন?”

” দিচ্ছি। আমি বাসায় গিয়ে দিন ঠিক করছি তোমার মায়ের সাথে।”

” ঠিক আছে। তাহলে আমি কি শুভ্রাকে নিয়ে কিছু কেনাকাটা করতে যাব?”

” না, ওর এখন কিছু লাগবে না। বিয়েটা হোক, বিয়ের আসর থেকেই ইচ্ছে হলে বউকে নিয়ে গিয়ে যা ইচ্ছে হয় কিনে দেবে। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কোথাও যেতে দেব না।”

” ও কি শুধু আপনার মেয়ে?”

” হ্যাঁ শুভ্রতা এখন শুধু আমার মেয়ে। এখনো তোমাদের বিয়ে হয়নি যে তুমি ওকে নিজের স্ত্রী বলবে।”

” হবু স্ত্রী তো….”

” সেটার কোন দাম নেই।”

” এত হিংসুটে কেন আপনি কাকা?”

” কি বললে?”

” বিয়ে করে নি, বাসায় যেতেই দেব না।”

” বেরোও তুমি এখান থেকে। আমি মেয়েই বিয়ে দেব না। হতচ্ছাড়া কোথাকার।”

” এর জবাব আমি দেব, মনে রাখবেন।”

নিহান হাসতে হাসতে শাহাদাত সাহেবের কাছে থেকে চলে যায়। শাহাদাত সাহেব ও বসে বসে হাসতে থাকেন। চা টা খাওয়াই হয়নি ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই তিনি আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দেন।

#চলবে…….

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩৪

শুভ্রতার ফোন বাজছে আর শুভ্রতা পাশে বসে আছে কিন্তু ফোন ধরছে না। এটা প্রথমবার না সকাল থেকে পনেরো থেকে বিশবার কল এসেছে। রিসিভ করলে কথা বলছে না। খুব অসহ্য লাগছে তার। দুই ঘণ্টা ফোন অফ রেখেও কাজ হয়নি।

শুভ্রতা ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে থাকে। ওপাশ থেকেও কেউ কিছু বলছে না। কেউ কথা বলছে না দেখে শুভ্রতা আবার কল কেটে দেয়। ফোন রেখেই বাহিরে চলে যায় সে।
বাহিরে এসে বসতেই স্নিগ্ধা এসে আবার ফোন এনে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, ” তোমার ফোন বাজছে আর তুমি বাহিরে এসে বসে আছো?”

” তোকে ফোন নিয়ে আসতে বলল কে?”

” ওমা, এখন ফোন এনে দিয়েও দোষ করলাম?”

” যা এখান থেকে প্লিজ। বাবা কোথায়?”

স্নিগ্ধা মনে করতে পারছে না বাবা কোথায়! সে বাবা- মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে এসে বলে, ” বাবা হয়তো নিহান ভাইদের বাড়ি, আম্মুও বাসায় নেই।”

” ওখানে কেন?”

স্নিগ্ধা একবার ভাবে খুশির খবর কি এমনি এমনিই বলে দেবে! এত সহজভাবে জানিয়ে দেওয়া কি উচিৎ হবে যে তার জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা নির্বিঘ্নে চলে আসছে! সে মুখটা হালকা গম্ভীর করে বলে, ” তোমাদের বিয়ের দিন ঠিক করতে। ভাইয়া তো বলেছে যাওয়ার আগে তোমাকে বিয়ে করে রেখে যাবে।”

” কি!”

” হ্যাঁ তাই তো শুনলাম।”

” আচ্ছা তুই যা।”

স্নিগ্ধা চলে গেলে শুভ্রতা নিহানের নম্বরে কল দেয়। নিহান এসব করছে তাকে বলে নি কেন! রিং হচ্ছে এমন সময় সেই অচেনা নম্বর থেকে আবার কল আসে। নিহান কল রিসিভ করে বলে, ” আমি বাড়ির সামনেই আছি, কিছু বলবি?”

শুভ্রতা আর ফোনে কথা বাড়াতে চায় না। সে নিহানকে বাড়িতেই আসতে বলে দেয়। ফোনে কথা বলার চেয়ে সরাসরি কথা বলাটা হয়তো সবচেয়ে ভালো হবে। শুভ্রতা ফোন রেখে নিহানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। নিহান কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে। এসে দেখে শুভ্রতা এদিক থেকে ওদিক হাটাহাটি করছে। সে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে যায়।

” কি হয়েছে?”

শুভ্রতা হাটাহাটি থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নিহান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতার জন্য আগে থেকে কোন কথা বলার জন্য তার নিহানের ওপর রাগ হওয়া দরকার কিন্তু রাগ হচ্ছে না। কেমন অনুভূতি হচ্ছে সে নিজেও জানে না।

সে নির্জীবকন্ঠে বলে, ” আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হচ্ছে আর আমি জানি না কেন? যদিও আমি আপনাকে সেদিন বলেছিলাম আমি তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই কিন্তু সেটা মানুষের কথা থেকে বাঁচতে। আমার মনে হয় বিয়েটা এত জলদি করলে লোকে আরও নানারকম কথা বলবে। ”

নিহান বুঝতে পারছে না শুভ্রতা কি বলতে চাইছে। সে কি মত পাল্টে ফেলেছে! সে বলে, ” তুই মানুষের কথা কবে থেকে শুনতে শুরু করলি?”

” সমাজে থাকতে গেলে, একসাথে বাঁচতে গেলে শুনতে হয়।”

” কথা খারাপ লাগলে সেটার জবাবও দেয়া যায়। পৃথিবীর সবাই সবকিছু মুখবুজে সহ্য করে না শুভ্রা। তুই অনেক ভাগ্য করে জন্মেছিস, তোর ভাগ্য এত ভালো না হলে তোর বাবা এত ভালো হতো না। আবার এ বাড়ির মানুষকে দেখ, তোকে নিয়ে কেউ কোনদিক বাজে মন্তব্য করেনি। তারা তোকে বোঝে, এমন ভাগ্য কতজনের হয় বল তো!”

শুভ্রতা নিহানের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে, ” আমি এটা মানি আমি খুব ভাগ্যবতী। আমি যাদের নিজের মানুষ বলে জানি তারা সবাই আমাকে ভালোবাসে, আর একজন তো সবকিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে পেতে চায়। তাকে আর অপেক্ষা করাতে চাই না আমি। ”
শুভ্রতা কিচ্ছুক্ষণ থেমে আবার বলে, ” আচ্ছা এক হওয়া যদি আমাদের ভাগ্যে না থাকে তবে?”

কথাটা শোনামাত্র নিহানের বুকের ভেতর কেমন একটা করে ওঠে। সম্ভবত চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়। যাকে পাওয়ার জন্য এত আয়োজন, এত ত্যাগ, এত অপেক্ষা আর সে কী না ভাগ্যে থাকবে না! নিহান বেশ অন্য মনস্ক হয়েই বলে, ” তুই আমার ভাগ্যে না থাকলেও মনে থাকবি। ভাগ্য আর মন দুটোই সৃষ্টিকর্তা বানিয়েছে। তিনি তোকে কোথায় রেখেছে আমি জানি না ভাগ্যে থাকলে আমি বুঝিয়ে দেব ভালোবাসা কাকে বলে! আর যদি ভাগ্যে না থাকিস তবুও মন থেকে সরাতে পারব না। ভালোবাসি আমি তোকে। তুই আমার ব্যক্তিগত মানুষ, তুই আমার শুভ্র ভালোবাসা।”

নিহান আর শুভ্রতার বিয়ের তারিখ ঠিক হয় আর সেটা একদিন পরই। যেহেতু হাতে বেশি সময় নেই তাই বেশি দেরিও করা উচিৎ হবে না বলে মনে করেছে সবাই।

শুভ্রতা ফাউজিয়াকে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। তার একটাই কথা ফাউজিয়াকে এবার আসতেই হবে। অনুষ্ঠান যেহেতু হবে না তাই বাহিরের কেউ থাকবে না কিন্তু ফাউজিয়াকে আসতেই হবে তাও আবার আজকেই। ফাউজিয়া কল কেটে ধীরপায়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছে। মা কি যেতে দেবে সেটা ভাবছে।

ফাউজিয়া গিয়ে মায়ের পাশে বসে। তিনি বসে বসে গল্পের বই পড়ছিলেন। পাশে ফাউজিয়াকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলেন, ” কি হয়েছে, কিছু বলবি?”

” মা চা খাবে? এক কাপ গরম গরম চা করে দিই?”

ফাউজিয়ার মা বইটা বন্ধ করে চশমাটা খুলে পাশে রেখে বলেন, ” চা গরমই হয় ফাউজিয়া। ”

ফাউজিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সাহসের অভাবে কি উল্টাপাল্টা কথা বলছে সে! চা তো আসলেই গরম হয় এখানে আবার গরম গরম চা খাওয়ানোর অফার করার কি আছে!

” কি হলো কিছু বলছিস না কেন?”

” মা শুভ্রতার কালকের দিন পর বিয়ে। ও আমাকে আজকেই যেতে বলছে। আমি এখনো কিছু বলিনি, আমি ওকে বলেছি তোমাকে আগে বলব তারপর তুমি যেতে বললে আমি যাব তুমি যদি নিষেধ কর তাহলে আমি যেতে পারব না।”

” শুভ্রতা কে? ওই মাস চারেক আগে ডিভোর্স হলো ওই মেয়েটা? এখনই বিয়ে আবার? এবারের ছেলে ভালো তো? বাবা-মা দেখেশুনে বিয়ে দিচ্ছে তো? বিয়েতে এত তাড়াহুড়ো না করলেও পারত।”

” হ্যাঁ মা ওটাই। ছেলে ভালো, ওর কাজিন।”

” ওহ আচ্ছা। এখন যদি না যাস তাহলে ভাববে আমি নিষেধ করেছি তাই তো?”

” আসলে….”

” আজ যেতে হবে না কাল বিকেলে সাহিল দিয়ে আসবে। একা একা যেতে হবে না ওতদূর। রাস্তা তো আর কম না, ঘণ্টাখানেকের পথ। তুই একা কোথাও যাস না যেতেও হবে না। আর তাছাড়া বাড়িও তো চিনিস না।”

মায়ের কথা ফাউজিয়াকে বেশ অবাক করে দেয়। সাহিল শেখ কেন যাবে তার সাথে? সে বলেই বসে, ” আমার সাথে স্যার কেন যাবে মা?”

তার মা বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে, ” কারণ খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের বিয়ে হবে।”

মায়ের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল ফাউজিয়া। বিয়ে মানে! তাও আবার তার ভার্সিটির প্রফেসরের সাথে! এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? সে তো স্যারকে শুধু স্যারের নজরেই দেখে তার মা এসব কি বলছে!

নিজেকে সামলে নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে,” এসব কি বলছো মা? দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়েছে যে এখন নিজের স্যারকে বিয়ে করতে হবে? এসব ভুলেও মাথায় নিয়ে আসবে না। উনি আমার স্যার হয়, স্যার মানে স্যার। বাড়ি কাছাকাছি তাই হয়তো একটু যাতায়াত হয় তাও তোমার সূত্রে। তুমি খবরদার এসব ভাববে না।”

ফাউজিয়াকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে ওঠেন, ” আমি সাহিলকে তোমার জন্য ঠিক করেছি। সাহিলের মা-ও তোমাকে বেশ পছন্দ করেছে। ”

বিষয়টা ফাউজিয়ার মোটেও ভালো লাগে নি। সে সাহিলকে শিক্ষক হিসেবেই পছন্দ করে। সাহিলের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কখনো মাথায় আসতে দেয় নি সে অথচ তার মা কি না! ফাউজিয়া কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় কারণ সাহিলের সাথে যেতে না চাইলে হয়তো শুভ্রতার বিয়েতেই তার যাওয়া হবে না।

রাত আটটা বাইকের তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান আর শাকিরা। তারা মূলত শুভ্রতার বিয়ের জন্য আসছিল। বাইকে যতটুকু তেল ছিল রায়হান ভেবেছিল বাড়ি পৌঁছে যাবে কিন্তু বিপত্তি ঘটল কিছুদূর এসেই। শাকিরা আবদার করল সোজা রাস্তা দিয়ে নয় সে ভেতরের রাস্তা দিয়ে যাবে তাহলে অনেকক্ষণ একটু ঘুরাঘুরি হবে। রায়হান ভাবে ভেতর দিয়ে গিয়ে যেখানে তেল ওঠানো যায় ওই অবধি গেলেই হবে তাহলে আর অসুবিধা হবে না। অথচ এখনো পাঁচ মিনিটের রাস্তা। পাঁচ মিনিট বাইক নিয়ে হেটে যেতে হবে। শাকিরাকে বলতেই শাকিরাও রাজি হয়ে যায়। শাকিরা বলে, ” চলো তো পাঁচ মিনিট লাগবে। ব্যাপার‍টা কিন্তু দারুণ! এই রাতে আমি আর তুমি হেটে যাব, আমাদের সাথে সাথে যাবে মাথার ওপরেই ওই চাঁদটা। আচ্ছা তুমি কি খেয়াল করে দেখেছ আমরা যেখানে যেখানে যাই চাঁদ ও সেখানেই যায়?”

” তুমি পাগল হলে? এই সময়ে তোমার এসব মাথায় আসছে? পাঁচ ছয় মিনিটের রাস্তা বাইক নিয়ে হেটে যেতে হবে এখন আমার।”

” এমন ভাব করছো যেন আমাকেও বাইকের ওপর বসিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে তোমার। বাইক নিয়ে যাওয়া কোন ব্যাপারই না। চলো তাড়াতাড়ি, এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে কিছুই হবে না।”

রায়হান আর শাকিরা দুজন হাটা শুরু করে। শাকিরা রায়হানের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে। দুজন হাটছে প্রতি সেকেন্ডে রাস্তা কমছে মাথার ওপরের চাঁদটা তাদের সঙ্গ দিচ্ছে। যদিও শাকিরার বাড়ি ফেরার তাড়া আছে তবুও তার মন গেয়ে উঠতে চাইছে, ” এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো। যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো…….”

#চলবে…..

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩৫

রাত এগারোটা, ইরা বসে বসে কান্না করছিল। কিছুক্ষণ আগেই স্নিগ্ধার কল এসেছিল সেখানে থেকে জানতে পেরেছে শুভ্রতা আর নিহানের বিয়ের ব্যাপারে। তখনই স্নিগ্ধার সাথে কথা বলতে গলা ভারী হয়ে আসছিল তার। পছন্দের মানুষের বিয়ের খবর শুনলে কেমন অনুভূতি অনুভূত হওয়ার কথা! বুকটা কেমন শূণ্য হয়ে যায়? মাথার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়? ইরার এমনই লাগছে, তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে গায়ে জড়িয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। নিহানের কথা মনে পড়তে থাকে। ইরা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। নিহানকে বলে দিতে ইচ্ছে করছে, ” প্লিজ আপনি বিয়েটা করবেন না, আপনি এই বিয়েটা কীভাবে করতে পারেন? আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে কোন নারী অন্যকারো সাথে দেখতে পারে না সেটা বোন হলেও না।” ইরা কথাগুলো গিলে নিয়ে জোরে একটা চিৎকার দেয়। মেঝে থেকে উঠে শাড়িটা ছুড়ে ফেলে জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে। প্রচন্ড আওয়াজে ইরার বাবা-মা চলে আসে। বাহিরে থেকে তারা দরজা ধাক্কাচ্ছে আর ইরা ভেতর থেকে জিনিসপত্র ভেঙেই চলেছে। কিছুক্ষণ পর ঘরের মধ্যকার শব্দ থেমে যায় স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে এরা চিৎকার করে করে কান্নাকাটি করছে। ইনার বাবা-মা বেশ চিন্তিত তারা দরজা ধাক্কাচ্ছে আর একে অপরকে দেখছে।
কিছুক্ষণ পর সবকিছু একদম নিরব হয়ে যায়। রুমে কোন সারাশব্দ নেই, আমজাদ সাহেব বলে ওঠেন, ” ইরা, মা কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? দরজা আটকেছিস কেন? দরজা খুলে দে নইলে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলব।”

সাফিয়া বেগম রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠেন, ” ইরা তুই কি দরজা খুলবি নাকি দরজা ভাঙবে। দরজা যদি ভাঙতেই হয় ভেতরে গিয়ে কিন্তু আমি তোকে আস্ত রাখব না বলে দিলাম। ভালোয় ভালোয় দরজা খুলে দে।”

সাফিয়া বেগমের কথায় ভেতর থেকে কোন কথা এলো না তবে দরজাটা ঠিকই খুলে গেল। ইরা বাহিরে এসে আমজাদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে৷ যদিও কান্নার বেগ এখন কমেছে।

সাফিয়া বেগম রুমে ঢুকে দেখেন রুমের ভেতরে যা তা অবস্থা। মেঝেতে জিনিস পড়ে আছে, ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে আছে কিছু জিনিস। তিনি ভেবেই পাচ্ছেন না কি এমন হলো যে ইরা এরকম করছে।

ইরা মাকে দেখে প্রচন্ড ভয় পায়। রুমের অবস্থা দেখে তিনি কি বলবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তার মা কি তার কষ্টকে গুরুত্ব না দিয়ে রুমের এই অবস্থা নিয়ে পড়ে থাকবে?

আমজাদ সাহেব মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ” কি হয়েছে তোমার?”

ইরা চুপ করে আছে, মুখে কোন কথা নেই। সে পূর্বের মতোই বাবার বুকে মাথা রেখে দাঁড়ায়। সাফিয়া বেগম এসে মেয়েকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসায়। আমজাদ সাহেব ও এসে পাশেই বসেন।

সাফিয়া বেগম ঠান্ডাস্বরে মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন, ” ইরা, কি হয়েছে তোমার?”

ইরা তখনও চুপ করেই আছে।আমজাদ সাহেব মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে ভয় না পেয়ে সবকিছু বলতে বলেন। ইরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ” বাবা আমার বাহিরে যাওয়া কতদিনে?”

” কাজ চলছে, খুব বেশি দেরি হবে না হয়তো।”

সাফিয়া বেগম নিম্নস্বরে বলেন, ” তোমার কি হয়েছে সেটা বলো? ঠিকই তো ছিলে এখন কি এমন হলো যে ভাঙচুর করছো চিৎকার করে কান্নাকাটি করছো? আলমারি থেকে অন্য কিছু বের করোনি কিন্তু নিহানের দেয়া শাড়িটা কেন বাহিরে? আমি যেটা সন্দেহ করছি সেটাই কি আজকের এই পরিস্থিতির কারণ? তোমাকে আমি এ ব্যাপারে ভাবতে নিষেধ করেছিলাম ইরা।”

” সবকিছু নিজের ইচ্ছেতে চলে না আম্মু, আমি ওকে ভালোবাসি। আমি তো তোমাকে বলেছিলাম বড়আম্মুর সাথে কথা বলতে, বলোনি কেন তুমি? তুমি নিজের মেয়ের খারাপ কি করে চাইতে পারো?”

ইরার কথায় অবাক হয়ে যায় আমজাদ সাহেব। ইরা নিহানকে পছন্দ করে! মেয়েটা এত কথা শেয়ার করে আর এই কথাটা বলেনি তাকে!

সাফিয়া বেগম রেগে উঠে বলেন, ” চড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে দেব আমি তোমার। এটুকু বয়সে খুব পেকে গেছো তাই না? আমি কখনোই আত্মীয়দের সাথে নতুন কোন সম্পর্কে যাব না। এমনিতেই ভালো সম্পর্ক, মেয়ে বিয়ে দিয়ে বিপক্ষ হতে চাই না। আর তুমি আগে থেকে জানো নিহান শুভ্রতাকে পছন্দ করে। শুভ্রতাকে তো তুমি বড়বোনের মতোই দেখো তবে এই ব্যাপারে স্বার্থপর হতে একবারও বাধছে না?

ইরা কিছু বলছে না চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজের রুমে চলে যায়। আমজাদ সাহেব মেয়ের চলে যাওয়া দেখে আবার স্ত্রীর দিকে তাকায়।

” কি হয়েছে বলো তো?”

” কি হবে? তুমি তোমার মেয়েকে স্পর্ধা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছ, নামাতে তো আর পারবে না। ওকে বাহিরে পাঠিয়ে দাও। মেয়েটার নতুন সংসারে যেন কোন ঝামেলা করতে না পারে বলে দিলাম।” কথাগুলো বলেই সাফিয়া বেগম জায়গা ছেড়ে উঠে রুমে চলে যান। আমজাদ সাহেব কিছুতেই বুঝতে পারছেন না যে এসব এতদূর গড়ালো কীভাবে?

সকালে খাবার টেবিলে বসে আছেন শাহাদাত সাহেব। রান্নাঘরে আয়েশা বেগম রুটির সাথে ডিম ভেজে দিচ্ছেন শাহাদাত সাহেবের জন্য। শুভ্রতা গিয়ে সামনেই চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো। শাহাদাত সাহেব মেয়েকে দেখে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলেন৷ শুভ্রতা গিয়ে পাশের চেয়ারে বসলো। শাহাদাত সাহেব খবরের কাগজটা রেখে জিজ্ঞেস করলেন, ” কিছু বলবি মা?”
শুভ্রতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, ” বাবা এখনই বিয়ে না করলে হয় না?”

শাহাদাত সাহেব মেয়ের কথায় বেশ অবাক হন। আজকের দিন আর রাতটা পার হলেই যার বিয়ে সে কী না এখন এসব বলছে!

” নিহানকে তোর অপছন্দ?”

” না না বাবা সেটা না। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে এখন বিয়ে করা ঠিক হচ্ছে না। চারপাশের মানুষ নানারকম কথা বলবে। আমি ওদের কথা সহ্য করতে পারি না। তারা সবাই কোন বিষয়ে না জেনেই কথা শোনায়। সব জায়গাতেই যেন মেয়েদের দোষ। আমার সংসার ভাঙায় নাকি আমার দোষ আবার কয়েকদিন ওই সমস্যাটার কারণে সাথে সাথে ছিল এটা দেখে সবাই ভাবছে হয়তো তার জন্যই আমি সংসার ভেঙে চলে এসেছি।”

” মানুষ তোকে মানসিকভাবে আ*ঘাত করলে প্রয়োজনে তুই শারীরিক আ*ঘাত করবি তবু ক্ষ*তবিক্ষ*ত হয়ে কাঁদবি না। মানুষ আঘা*ত করে সফল হলে চাহিদা আরও বেড়ে যায়, সফল হতে না দিলে চেষ্টা অবধিই চলে, আঘা*ত করে উঠতে পারে না। আঘা*তের পরিবর্তে আঘা*ত করবি চোখের পানি ফেলবি না। লোকে বলে না ব্যথার ওপর ব্যথা দিলে ব্যথা কমে যায়? তুই আঘা*ত পেলে পাল্টা আঘা*ত করে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দিবি তুই অবলা নারী না, তোকে চাইলেই ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

” কিন্তু বাবা সবসময় নিজেকে শক্ত রাখা যায় না তো।”

” সবসমই শক্ত থাকতে হবে। কিছু সময় শক্ত আর কিছু সময় নরম হলে মানুষ সময় বুঝে আঘা*তটা করবে। সবসময় পাথরের মতো কঠিন থাকবি যেন যারা আঘা*ত করতে আসবে তারা নিজেরাই যেন আহ*ত হয়। তুই মানুষকে আর তাদের কথাকে যত গুরুত্ব দিবি তত বেশি আঘা*ত পাবি রে মা। ভালো থাকার জন্য নিজের মন যা বলে তাই করবি, তোর মন কখনো ভুল বলবে না ইন শা আল্লাহ। অন্যা*য়ের সাথে কখনো আপোষ করবি না। প্রথম আঘা*তেই বুঝিয়ে দিবি তুই সহ্য করার মেয়ে না।”

শুভ্রতা ওপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেয়। এটাই তার বাবা, মন খারাপে যে মানুষটা সবসময় সঙ্গ দিয়েছে, আঘা*তে আঘা*তে ক্ষ*তবিক্ষ*ত হয়ে যাওয়ার পথে এভাবেই সাহস হয়ে দেখা দিয়েছে, দুঃখ নামক বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার আগে ছাতা হয়ে দেখা দিয়েছে।

#চলবে….