#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব_১৫
সূবর্ণা স্কুলে যাচ্ছে!তা দেখে শাশুড়ী মা রেগে আগুন!আকাশ তখন শুয়ে আছে।শাশুড়ী মায়ের চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনে আকাশ চোখ মেলে!আমি তখন বাথরুম থেকে গোসল সেরে বেরিয়েছি।আকাশ ঘুম ঘুম চোখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কি হয়েছে সুপ্রভা বাইরে?এত চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে কেন?
আমি বললাম,
” মা সূবর্ণাকে স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না!”
আকাশ ওমনি বিছানা থেকে নেমে বাইরে গেলো!গিয়ে বললো,
“কি হয়েছে বলো ত?”
“ওরেহ তুই আবার বাইরে যাওয়ার নাকি পার্মিশন দিছস?”
“হ্যাঁ!”
“কেনো?আবারকি চাস ওই পোলার হাতে হাত ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষকে প্রেমের নাটক দেখাক?!”
“মা,সূবর্ণার পরিক্ষা!আর মাত্র একমাস বাকি।ওর পরিক্ষা কি বাদ দিবে?”
“পরিক্ষার কথা তুই ভাবতেছিস?ও যে মান-ইজ্জত শেষ করে দিচ্ছে!”
“সূবর্ণা আর ওই ছেলের সাথে কথা বলবে না।সূবর্ণা কাল আমাকে কথা দিয়েছে!”
“তুই বিশ্বাস করতেছিস ওর কথা!?”
“মা প্লিজ বেশি কথা বলো না!তোমরা সবসময় অতিরিক্ত ভাবো!সবকিছুতে!”
শাশুড়ী মা রেগে উঠেন যেন আরো।বলেন,
“এবারের রিস্ক তুই নিবি।আমি এর কিছুই জানি না!”
এ বলে চলে যান সামনে থেকে!এভাবে আরো পনেরোটা দিন কেঁটে যায়!সূবর্ণা স্বাভাবিকভাবেই স্কুল থেকে ফিরছে।আমি বার কয়েক জিজ্ঞেস করেছি…।নিহাল ঝামেলা করতেছে কি না পথেঘাটে,সূবর্ণা “না” জবাব দেয়।তারপর চিন্তামুক্ত হই!তবে বাবাকে কল করে জানতে হবে নিহাল বাসায় আছে কি না!নাকি অন্য কোথাও চলে গিয়েছে!
সন্ধের পর বাবা কল করে নিজেই জানান…যে নিহাল নাকি জেলে আছে!সিগারেট বাকী চাইতে গিয়ে এক দোকানদারের সাথে তর্কাতর্কি হয়।সেই তর্কাতর্কির রেশ ধরে দোকানীর মাথা ফাটাফাটি হয়।মাথা নিহালের ফাঁটে নি।নিহাল ওই দোকানদারের মাথা ফাঁটায়।পুলিশ আসে।হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যায়!আর আগের ওর ইতিহাস ঘেটেঘুটে দেখে সে ভয়ংকরভাবে মাদকাসক্তে আসক্ত!তারউপর মেয়েদের উত্যক্ত! তাই জেলে নিয়ে যায়!বাবা জানেন না কবে ছাড়া পাবে।তবে,পুলিশদের হাবভাবে বুঝা গিয়েছো সহজে ছাড়বে না তাকে।সংবাদ টা জেনে আমার মুখে কেনজানি হাসি ফুটে ওঠে।আমি আকাশের পাশে বসি।আর বিষয়টা বলি।সে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
“তোমার কাজিন জেলে গিয়েছে।আর তুমি খুশি?”
আমি হাসি খালি।আকাশ এবার হাতের ফোনটা নিচে নামিয়ে ঘাড়ে আলতো হাত রেখে বলে ওর,
“তোমাকে আগে বিয়ের আগে খুব জ্বালাতো,না?”
আমি অবাক হলাম ওর কথা শুনে।বললাম,
“তুমি জানো কীভাবে?”
“আমার স্ত্রী তার ইতিহাস আমি জানবো না।এটা হয় নাকি?”
আমি আকাশের বুকে মাথা রাখলাম এবার!বললাম,
“সে ফালতু একটা।এখন কথা হলো..জেল থেকে বের হওয়ার পরও যেন সূবর্ণার দিকে না তাকায় আর।তাহলেই আমার শান্তি!”
——————————————————-
আমি বিকেলের জন্য নাস্তা রেডি করতেছি।শাশুড়ী মা তখন সোফায় বসা।তখন আন্টি শাশুড়ী মায়ের কাছে এসে বলেন,
“সানহা নাকি আর থাকবে না।অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে চাচ্ছে!”
শাশুড়ী মা বলেন,
“গ্রামের বাড়িটা নাকি দেখে আসবি?সেটা দেখে তারপর ফিরে যাস।”
“ও সেখানেও নাকি যাবে না!সোঁজা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরবে।বললাম,বড় আপার বাড়িতেও যাবো একটু।এসেছি পর্যন্ত এখানেই থাকা হলো।ও কোথাও যাওয়ার কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছে না এখন!”
“তাহলে আর কি করার…!”
“সেটাই আপা।”
সত্যি সত্যি চলে গেলো সানহারা সপ্তাহ খানেক আগে।তবে সানি যাওয়ার সময় আমাকে ধরে অনেকক্ষণ ছিল।কিন্তু সানহার আমার উপর কেমনজানি একটা চাপা রাগ ছিলো।তবে আমার উপর তার রাগ করার কারণ বুঝলাম না!প্রায় তিনটা বছর এভাবেই কেঁটে গেলোমসংসারে!আকাশের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না বলে এক মুহূর্তের জন্যেও খারাপ লাগে নি!বিয়ের পরের যেই ভালোবাসাটা আমার উপর বর্ধিত, আমানের আড়াই বছর পার হওয়ার পরও তা সেরকম!তবে বাসায় অনেককিছুই চেইঞ্জ হয়েছে!সূবর্ণাকে ডেইলি পাত্রপক্ষরা দেখতে আসে!সূবর্ণা বিয়ে করবে না এত তাড়াতাড়ি।বারবার বিয়েতে নাখোশ করে।কিন্তু শাশুড়ী মায়ের সেই তেজি এবং রুক্ষ মুখের কাছে চেপে যেতে হচ্ছে আজও!সূবর্ণা বিকেলে আমার রুমে এসে খাটের উপর ধপাস করে।আর মুখ ভার করে বলে,
“আমান কোথায় ভাবী?”
“বেলকনিতে হয়তো খেলছে!”
“নিয়ে আসো একটু। ”
“তুই গিয়ে নিয়ে আয় তোর ভাইপো কে।দেখতেছিস না আমি কাজ করতেছি…।”
“ভাবী তোমাকে একটা কথা বলি?”
“হু,বল?”
“তুমি আমাকে এখন তুই তুই করে বলো কেনো?আমি কি অনেক বড় হয়ে গেছি?”
“নাহহ হোস নি!”
“তাহলে মা কেনো আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে!?”
আমি বুঝলাম,মেয়েটার মন ভালো নেই।কথার গোচ খুঁজে পাচ্ছে না!আর মন ভালো হওয়ার ই বা উপায় কোথায়?সে তো চায় পড়াশুনা করতে।আকাশও সাপোর্ট করে।কিন্তু শাশুড়ী মায়ের জেদের কাছে আর কে কি বলতে পারে!এমন সময় আমান রুমের ভেতর ঢুকে।আমাকে বলে,
“মাম্মাম,সাঁপ সাঁপ!”
সূবর্ণা বলে,
“সাপ তোর বাপ!”
আমি সূবর্ণাকে বলি ওমনি,
“এই সূবর্ণা… আমার ছেলেকে তুই করে বলিস কেনো!”
“তুমি আমাকে তুই করে বলো কেনো?এই পুচকা,তুই আসার কারণে আমার প্রতি তোর মায়ের ভালোবাসা কমে গিয়েছে!”
বলেই ওমনি আমানকে কোলে তুলে নেয়।আর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মেয়েটার পাগলামো দেখে আমার হাসি চলে আসে খুব।মেয়েটা অনেক বড় হয়েছে ঠিকই,কিন্তু এখনো বাচ্চা।
সকাল থেকে পুরো বাসায় একটা হৈচৈ হৈচৈ রেশ।বাসায় আজকে বিকেলে সুবর্ণাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে।পাত্র বড় আন্টির জায়ের ছেলে।আমেরিকা থেকে ডক্টরেট পাশ করে এসেছে!আর বিয়ের পরই বউকে সাথে করে আমেরিকা নিয়ে যাবে!ছেলে বড় আন্টির জায়ের ছেলে।কিন্তু কথা হলো..শাশুড়ী মা সেই তিনবছরের রাগ পুষে রেখে বড় আন্টির সাথে দীর্ঘ তিন বছর কথা বলেননি।অবশ্যি তাই বলে যে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে তা না।আকাশ, আমি এবং সূবর্ণা কথা ফোনে যোগাযোগ রেখেছি।কিন্তু গতকাল রাতেই শাশুড়ী মায়ের সব রাগ-ক্ষোভ-অভিমান পিষে যায় শুধু মাত্র সূবর্ণার বিয়ের সম্বন্ধটার কথা শুনেই।আর তারউপর ছেলে আমেরিকায় সেটেল!না পারেন ফোনের মধ্যেই বোনকে জড়িয়ে চুমু খান।তাই আর দেরী না করে পাত্রপক্ষকে আজই আসতে বলেন সূবর্ণাকে দেখে যেতে।আকাশও অফিসে যায় নি আজ।সূবর্ণা কাঁদতেছে আমার রুমে এখন বসে বসে।চোখমুখ লাল হয়ে গেছে সূবর্ণার!আমি যতই বুঝানোর চেষ্টা করতেছি বুঝতেছে না!খালি কাঁদতেছে! এমন সময় আকাশ এলো রুমে।আমান আকাশের কোলেই!আমাকে উদ্দেশ্য করল বলে,
“সূবর্ণা কে একটু পর নিয়ে এসো।উনারা এসেছে।”
সূবর্ণা ওমনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আর বলে,
“আমি যাবো না সামনে!যাবো না প্লিজ!আমি তোমাদের কি খুব বেশি বোঝা হয়ে গেছি!কেনো আমাকে বের করে দিচ্ছ!”
আমি আকাশের দিকে নিথর মুখে তাকিয়ে থাকি।আকাশ ইশারা করে বুঝায়,টেনশন নিও না।দেখি পরে কি করা যায়!
চলবে……