#শেখবাড়ির_বড়ছেলে
#এ_এইচ_স্পর্শ
#পর্ব-১
বিয়ের পরদিন ভোর হতে না হতেই মা লোক জড়ো করে এক বিচার-সালিশ ডাকলেন এবং আমাকে আলাদা করে দিলেন। সালিশে আমাকে বলা হলো, প্রতি মাসে মাকে চার হাজার টাকা দিতে হবে, আর যে ঘরে আমি থাকছি, সেই ঘরের ভাড়া বাবদ আরও দুই হাজার টাকা দিতে হবে, নয়তো বাসা ছেড়ে দিতে হবে।
মায়ের এই কথাগুলো শোনার পর মনে হলো আমার পায়ের নিচের মাটিটুকু নেই। আমি যেন পাতালে নেমে যাচ্ছি।
ভোরের আবছা আলো তখনো চারপাশ স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। পাখিরা সবেমাত্র ঘুম ভেঙে কিচিরমিচির শুরু করেছে। নতুন জীবনের প্রথম সকালটা আমার জন্য এমন এক অভিশাপ নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমার পাশে বসা রিয়া, আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী, ফ্যাকাশে মুখে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার উঠোনে জড়ো হওয়া গম্ভীর মুখের মানুষগুলোর দিকে। তার চোখে রাজ্যের বিস্ময় আর ভয়। গতকালই এই মানুষগুলো হাসিমুখে আমাদের বরণ করে নিয়েছিল, আজ তাদের চোখেমুখে বরফশীতল কঠোরতা।
উঠোনের মাঝখানে একটা মোড়ায় বসে আছেন আমার মা। তার মুখ পাথরের মতো কঠিন। আমাদের পাড়ার সবচেয়ে বয়স্ক মুরুব্বি, খালেক চাচা, তার পাশে বসে আছেন। আরও কয়েকজন প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজন এমনভাবে বসে আছেন, যেন কোনো গুরুতর অপরাধের বিচারসভা বসেছে। আমি অপরাধী। আমার অপরাধ? আমি বিয়ে করেছি।
খালেক চাচা তার ভারী গলায় রায় ঘোষণা করলেন, “শোনো রাদিফ, তোমার মা যা বলেছেন, তাই চূড়ান্ত। তিনি তোমার জন্মদাত্রী। তার প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে। প্রতি মাসে মায়ের ভরণপোষণের জন্য চার হাজার টাকা আর এই ঘরে থাকার জন্য ভাড়া বাবদ দুই হাজার টাকা, মোট ছয় হাজার টাকা তোমাকে দিতে হবে। যদি না পারো, তাহলে নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নিতে হবে।”
কথাগুলো আমার কানে ঢুকছিল, কিন্তু মস্তিষ্ক তা প্রক্রিয়া করতে পারছিল না। ছয় হাজার টাকা! আমার মাথায় যেন কেউ সজোরে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করল। একটা তীব্র ঝিমঝিম শব্দে আমার কান বন্ধ হয়ে এলো। মনে হলো, পায়ের নিচের মাটিটুকু হঠাৎ করেই সরে গেছে। আমি আর দাঁড়িয়ে নেই, কোনো অবলম্বন ছাড়াই এক অতল গহ্বরের দিকে তলিয়ে যাচ্ছি। এই আর্থিক চাপের ধাক্কাটা যত না বড়, তার চেয়েও অনেক বেশি ভারী ছিল মায়ের এই নির্মমতা। যে মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, তিনি কীভাবে আমার নতুন জীবনের শুরুতেই এমন একটা খড়্গ ঝুলিয়ে দিতে পারলেন?
কিন্তু এই ধাক্কাটা আমার জন্য একেবারে নতুন নয়। এর চেয়েও বড় একটা ধাক্কা আমি সামলে উঠেছি মাত্র দুই দিন আগে। সেই ধাক্কার কথা এই বিচারসভায় উপস্থিত কেউ জানে না। শুধু একজন জানেন—আমার মা।
ঘটনাটা বিয়ের ঠিক দুই দিন আগের। অফিসের শেষ দিনে আমি ফাইলপত্র গোছাচ্ছিলাম। মনে একটা ফুরফুরে আনন্দ। পরশু আমার বিয়ে, জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। রিয়াকে আমি ভালোবাসি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের সম্পর্কটা পরিণতি পেতে চলেছে। অফিস থেকে সপ্তাহখানেকের ছুটিও মঞ্জুর হয়ে গেছে। সহকর্মীরা সবাই হাসিমুখে অভিনন্দন জানাচ্ছিল। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং সহকর্মী সবুজ এসে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, “দোস্ত, জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করছিস। কোনো চিন্তা করিস না, অফিসের দিকটা আমি সামলে নেব।”
সবুজের এই আন্তরিকতায় আমার মনটা ভরে গেল। কিন্তু আমি জানতাম না, এই আন্তরিকতার পেছনে কী ভয়ংকর এক ছোবল লুকিয়ে আছে।
বিকেলের দিকে বসের ঘর থেকে ডাক পড়ল। আমি হাসিমুখেই প্রবেশ করলাম। ভেবেছিলাম, বিয়ের অগ্রিম শুভেচ্ছা বা বোনাস জাতীয় কিছু একটা দেবেন। কিন্তু তার গম্ভীর মুখ দেখে আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। টেবিলের ওপর কয়েকটা ফাইল ছড়ানো। তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই শীতল গলায় বললেন, “রাদিফ, এই টেন্ডারের কাগজগুলোতে তুমিই তো সই করেছো?”
আমি ফাইলগুলোর দিকে ঝুঁকে তাকালাম। হ্যাঁ, সইটা আমারই। বললাম, “জি স্যার।”
“এই প্রকল্পে আর্থিক হিসাবে বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে। প্রায় পনেরো লাখ টাকার একটা ঘাপলা। সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করে তুমি এই টাকাটা আত্মসাৎ করেছো বলে অভিযোগ এসেছে।”
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। “স্যার, আপনি কী বলছেন এসব! আমি এর বিন্দুবিসর্গও জানি না।”
“জানবে কী করে? কাজটা তো করেছো খুব ঠান্ডা মাথায়। তোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণও আমরা দেখেছি। গত সপ্তাহে তোমার অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা জমা হয়েছে।”
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার অ্যাকাউন্টে টাকা? কীভাবে সম্ভব! আমি তো বেতনের টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা… হঠাৎ আমার সবুজের কথা মনে পড়ল। গত সপ্তাহে সে আমার কাছ থেকে কিছুক্ষণের জন্য আমার চেক বইটা চেয়ে নিয়েছিল। বলেছিল, তার এক ক্লায়েন্টকে জরুরি একটা পরিশোধ দেখাতে হবে, তার নিজের চেক বই আনতে ভুলে গেছে। আমি সরল বিশ্বাসে তাকে দিয়েছিলাম। সে কি আমার সই জাল করে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করার বদলে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে তারপর এই নাটক সাজিয়েছে? কিন্তু কেন?
আমার বুঝতে বাকি রইল না, পদোন্নতির দৌড়ে আমি তার চেয়ে এগিয়ে ছিলাম। সেই আক্রোশ থেকেই সে আমাকে ফাঁসানোর এই নিখুঁত জাল বুনেছে। দুর্নীতির দায়ে আমাকে বিদ্ধ করে সে নিজের পথ পরিষ্কার করতে চেয়েছে।
আমি মরিয়া হয়ে বসকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, “স্যার, বিশ্বাস করুন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। সবুজ আমার সই জাল করেছে। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
কিন্তু আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করল না। ততক্ষণে অফিসের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকও এসে হাজির। তাদের চোখে আমি একজন প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ। কোনো প্রমাণ ছাড়াই, শুধু পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে আমাকে বরখাস্ত করা হলো। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো চাকরিচ্যুতির চিঠি। আমার বহু বছরের সততা, পরিশ্রম—সবকিছু এক মুহূর্তে ধুলোয় মিশে গেল।
অফিস থেকে যখন বের হচ্ছি, তখন আমার পা চলছিল না। চারপাশটা কেমন যেন ঝাপসা লাগছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও যে পৃথিবীটা আমার কাছে রঙিন ছিল, তা এক নিমিষে ধূসর হয়ে গেল। পরশু আমার বিয়ে। রিয়াকে আমি কী বলব? তার পরিবারকে কী জবাব দেব? এই মুহূর্তে বিয়েটা ভেঙে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
কিন্তু আমি তা পারিনি। রিয়াকে হারানোর ভয় আমার আত্মসম্মানের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আপাতত কাউকে কিছু জানাবো না। বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর ধীরে সুস্থে একটা উপায় বের করা যাবে। নতুন একটা চাকরি খুঁজে নেব। রিয়াকে আমি কষ্ট পেতে দিতে পারি না।
সেই রাতে বাসায় ফিরে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। কাকে বলব আমার এই সর্বনাশের কথা? পৃথিবীতে আমার আপনজন বলতে তো শুধু মা আর ছোট ভাই রাহাত। রাহাত থাকে ইতালি। তাকে এসব বলে চিন্তিত করতে চাইনি। বাকি রইল মা।
আমার মা, আমাদের দুই ভাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসাটা ছিল অদ্ভুত রকমের পক্ষপাতদুষ্ট। আমি রাদিফ, বড় ছেলে। আর আমার ছোট ভাই রাহাত। বাবা বেঁচে থাকতেও দেখতাম, তাদের সবটুকু স্নেহ আর ভালোবাসা যেন রাহাতের জন্যই তোলা থাকত। রাহাত ছিল তাদের চোখের মণি। ছোটবেলায় একটা মাছ ভাজলে, বড় টুকরোটা সব সময় রাহাতের পাতেই যেত। ঈদে নতুন জামা রাহাতের জন্য দুটো কেনা হলে, আমার জন্য বরাদ্দ থাকত একটা। আমি ভালো ফল করলে বাবা-মা বলতেন, “ঠিক আছে।” আর রাহাত পাশ করলেই বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করা হতো।
এই বৈষম্য আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি। তবু মা তো! আমি ভেবেছিলাম, আমার এই চরম বিপদের দিনে অন্তত তার কাছে একটু আশ্রয় পাব, একটু সান্ত্বনা পাব।
রাতে খাওয়ার পর আমি মায়ের ঘরে গেলাম। তিনি তখন রাহাতের পাঠানো টাকায় কেনা নতুন দামি শাড়ি ভাঁজ করে আলমারিতে রাখছিলেন। আমার ফ্যাকাশে মুখ দেখে তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, “কী হয়েছে? এমন মরাকান্না করছিস কেন?”
আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে সবটা খুলে বললাম। কীভাবে সবুজ আমাকে ফাঁসিয়েছে, কীভাবে আমার চাকরিটা চলে গেছে—সব। আমি ভেবেছিলাম, মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবেন। বলবেন, “ভয় নেই বাবা, আমি তো আছি।”
কিন্তু তার বদলে তিনি যা করলেন, তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি আমার থেকে দুই পা পিছিয়ে গেলেন। তার চোখে কোনো সমবেদনা ছিল না, ছিল রাজ্যের বিরক্তি আর শীতল হিসাব-নিকাশ। তিনি শান্ত কিন্তু কঠিন গলায় বললেন, “তাহলে এখন তোর কোনো চাকরি নেই?”
আমি ভেজা চোখে মাথা নাড়লাম।
তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “তোর বিয়ের কী হবে? এই অবস্থায় তুই বিয়ে করবি কী করে? মেয়ের পরিবারকে কী বলবি?”
“মা, আমি বিয়েটা ভাঙতে পারব না। আমি রিয়াকে খুব ভালোবাসি। আমি কথা দিচ্ছি, খুব তাড়াতাড়ি একটা নতুন চাকরি খুঁজে নেব। কিছুদিন শুধু তোমরা আমাকে…।”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মা থামিয়ে দিলেন। “কিছুদিন মানে? তোর আর তোর নতুন বউয়ের দায়িত্ব এখন কে নেবে? রাহাতের টাকায় তো আমাদের সংসার চলে। তার টাকায় তোদের দুজনের ভরণপোষণ আমি চালাতে পারব না।”
মায়ের কথাগুলো আমার বুকে ছুরির মতো বিঁধল। আমি নিজে না খেয়ে, টিউশনি করে, খণ্ডকালীন কাজ করে ভাইকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমার রক্ত পানি করা টাকায় সে আজ ইতালি প্রবাসী। তার পাঠানো টাকায় আজ আমার মা সচ্ছল জীবনযাপন করেন। আর আজ আমার বিপদের দিনে তিনি বলছেন, রাহাতের টাকায় আমার আর আমার স্ত্রীর জায়গা হবে না!
তিনি আরও বললেন, “যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন আর এসব নিয়ে কান্নাকাটি করে লাভ নেই। বিয়ে যখন ঠিক করেছিস, বিয়েটা কর। কিন্তু বিয়ের পর নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। আমার ওপর কোনো আশা রাখবি না।”
সেদিন রাতে আমি মায়ের আসল রূপটা দেখেছিলাম। যে মা এতদিন আমার কাছে মমতাময়ী ছিলেন, তিনি আসলে কতটা স্বার্থপর আর হিসেবী, তা আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, বেকার ছেলের বোঝা না জানি তার ঘাড়ে এসে পড়ে। তার আদরের ছোট ছেলে রাহাতের পাঠানো টাকায় ভাগ বসাতে হয়। তাই তিনি আগে থেকেই দেয়াল তুলে দিচ্ছিলেন।
বিচারসভার কোলাহলে আমার ঘোর কাটল। খালেক চাচা আবার তাগাদা দিলেন, “কী রাদিফ, চুপ করে আছিস কেন? মায়ের কথায় রাজি আছিস তো?”
আমি শূন্য দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নেই। তার দৃষ্টি দূরে কোথাও নিবদ্ধ। আমি বুঝতে পারলাম, এই সালিশ ডাকার উদ্দেশ্য আমাকে অপমান করা নয়, এর উদ্দেশ্য হলো একটা আইনি বা সামাজিক চুক্তি তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে আমি তার কাছে কোনো দাবি নিয়ে যেতে না পারি। তিনি জানতেন, আমার চাকরি নেই। তিনি জানতেন, এই মুহূর্তে ছয় হাজার টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তিনি জেনেশুনেই এই বিচার ডেকেছেন, যাতে আমি স্বেচ্ছায় এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। যাতে আমার আর আমার নতুন বউয়ের দায়িত্ব তার আদরের ছোট ছেলের আয়ের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে না পারে।
আমার ভেতরটা দুঃখে, অপমানে আর অভিমানে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল। যে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ গড়তে আমি নিজের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছিলাম, আজ তারই টাকায় গড়া সংসারে আমি একজন অবাঞ্ছিত অতিথি।
আমি রিয়ার দিকে তাকালাম। মেয়েটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। তার এই অসহায় মুখটা দেখে আমার ভেতরের সব দ্বিধা কেটে গেল। আমি এই বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকতে পারব না। যেখানে আমার মায়ের ভালোবাসা নেই, ভাইয়ের প্রতিদান নেই, সেখানে শুধু টাকার বিনিময়ে থাকা যায় না।
আমি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। আমার শিরদাঁড়াটা যেন সোজা হয়ে গেল। সবার দিকে তাকিয়ে শান্ত কিন্তু দৃঢ় গলায় বললাম, “ঠিক আছে। আমি আমার মায়ের সব শর্ত মেনে নিলাম। তবে আমি এই বাড়িতে আর থাকব না। আজই আমরা চলে যাব।”
আমার কথায় সবাই যেন একটু অবাক হলো। আমার মা হয়তো ভেবেছিলেন আমি কান্নাকাটি করব, পায়ে ধরে ক্ষমা চাইব। কিন্তু আমার এই শান্ত প্রতিরোধে তিনি কিছুটা বিচলিত হলেন।
আমি আর কারো দিকে না তাকিয়ে রিয়ার হাত ধরে বললাম, “চলো।”
আমার ঘরটাতেও আমি আর ঢুকলাম না। যে দুটো শার্ট-প্যান্ট আমার পরনে ছিল, সেটাই আমার সম্বল। রিয়ার হাত ধরে আমি সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম, যে বাড়িতে আমি জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি। পেছনে পড়ে রইল আমার শৈশব, আমার কৈশোর, আমার ভাইয়ের জন্য করা আমার ত্যাগ আর এক মায়ের নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা।
রাস্তায় ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। কিন্তু আমার চোখের সামনে তখন নিকষ কালো অন্ধকার। এই অচেনা শহরে, একজন বেকার আমি, আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে কোথায় যাব, কী খাব, কিছুই জানি না। শুধু জানি, এক নতুন এবং কঠিন লড়াই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যে লড়াইয়ে আমি একা, একেবারেই একা।
চলবে।