#শেখবাড়ির_বড়ছেলে
৬
আহসান সাহেবের বাড়ি থেকে গ্যারেজের স্যাঁতসেঁতে, পরিচিত পৃথিবীতে ফিরে আসার পর আমার হাতে ধরা ছোট্ট ভিজিটিং কার্ডটাই যেন অমাবস্যার আকাশে এক ফালি চাঁদ হয়ে জ্বলজ্বল করছিল। জীবনটা যে এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি, এই বিশ্বাসটুকু ক্ষীণ আলোর রেখার মতো আমার অন্ধকারের জগতে প্রবেশ করছিল। গফুর চাচা আমার পাশেই বসে ছিলেন, তার মুখে ছিল অদ্ভুত এক তৃপ্তির ছাপ, যেন কোনো বড় দায়িত্ব পালন করে তিনি আজ ভারমুক্ত।
রাতটা আমার নির্ঘুম কাটল। উত্তেজনায়, আশায় আর পুরনো দিনের ক্ষতের তীব্র ব্যথায় বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। একদিকে আহসান কনস্ট্রাকশনসের চাকরির একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা, অন্যদিকে সেই চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেটগুলো উদ্ধার করার দুঃসহ চিন্তা। আমার সব শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ, আমার পরিচয়ের দলিলগুলো রয়ে গেছে আমার আগের অফিসের ড্রয়ারে। সেই মতিঝিলের সুউচ্চ ভবন, যেখান থেকে আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে, আমার আত্মসম্মানকে বুটের তলায় পিষে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ম্যানেজার সারোয়ার সাহেবের সেই বিদ্রূপমাখা হাসি, সহকর্মীদের ফিসফাস, দারোয়ানের তাচ্ছিল্যের চাহনি—সবকিছু যেন দগদগে ঘা হয়ে আমার অস্তিত্বে মিশে আছে। আমি কোন মুখে আবার সেখানে যাব?
পরদিন সকালে দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে আমি গফুর চাচাকে সবটা খুলে বললাম। তিনি মন দিয়ে সব শুনলেন। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল, কিন্তু পরক্ষণেই সেই মুখটা দৃঢ় হয়ে উঠল। তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে সেই পরিচিত ভরসার গলায় বললেন, “সাহেব, যে মাটিতে আছাড় খাইছেন, হেই মাটি ধইর্যাই তো আবার খাড়াইতে হইব। আপনে একা যাইবেন না, আমি আপনার লগে যামু। আপনে কোনো কথা কইবেন না, খালি দরকারি কাগজ নিয়া চইলা আসমু। আপনের হকের জিনিস আপনে আনবেন, এতে শরমের কিছু নাই।”
চাচার কথায় আমি সাহস পেলাম, কিন্তু পরক্ষণেই আমার পরনের পোশাকের দিকে তাকিয়ে মনটা আরও দমে গেল। এই ছেঁড়া শার্ট আর ময়লা প্যান্ট পরে ওই ঝা-চকচকে অফিসে ঢোকার কথা ভাবতেই আমার ভেতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছিল। গফুর চাচা হয়তো আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরেছিলেন।
তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “সাহেব, অফিসে তো আর এই লুঙ্গি-শার্ট পইরা যাওয়া যায় না।
গেলে লোকজন জোকার ভেবে তাকিয়ে থাকবে।
চলেন, বাজার থাইকা একটা শার্ট-প্যান্ট কিনা আনি।”
আমি হতাশ হয়ে বললাম, “কিন্তু চাচা, আমার কাছে তো একটা টাকাও নেই।”
গফুর চাচা আমার কথা শুনে একটু হাসলেন। তিনি উঠে গিয়ে গ্যারেজের কোণায় রাখা তার বহু পুরোনো টিনের ট্রাঙ্কটা খুললেন। ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে পুরোনো কাপড়ের পুঁটলির মধ্য থেকে অতি সাবধানে একটা পলিথিনে মোড়ানো কয়েকটা নোটের বান্ডিল বের করলেন। অনেক দিনের জমানো টাকা, হয়তো গ্রামে পরিবারের কাছে পাঠাবেন বলে রেখেছিলেন। সেই টাকা গুনে তিনি আমার হাতে তিন হাজার টাকা গুঁজে দিলেন।
আমি আঁতকে উঠে বললাম, “না না চাচা, এ আপনি কী করছেন! এ আপনার জমানো টাকা। আমি এটা নিতে পারব না।”
আমার হাতটা সরিয়ে দিতেই তিনি আমার হাতটা আরও শক্ত করে ধরলেন। তার চোখে ছিল এক বাবার স্নেহ আর অধিকার। তিনি বললেন, “সাহেব, বাপে কি পোলারে কিছু দিলে হিসাব করে? আপনে আমার পোলার মতো। আপনে একটা ভালো চাকরি পাইলে আমার এই টাকার দাম উইঠা যাইব। এই টাকা দিয়া ভা্লো দেইখা একজোড়া কাপড় কিনা লন। বাপের উপর কথা কইতে নাই।”
তাঁর গলার স্বরে এমন এক আবেগ আর অধিকার ছিল যে আমার সব প্রতিবাদ উড়ে গেল। আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল। যে মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, তিনি আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন, আর এই প্রায়-অচেনা মানুষটা নিজের সর্বস্ব দিয়ে আমাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। আমি কাঁপাকাঁপা হাতে টাকাটা নিলাম। আমার গলা ধরে আসছিল, কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।
সেদিন সকালেই আমরা বাপ-বেটা মিলে নিউমার্কেটের দিকে গেলাম। একটা সাধারণ দোকান থেকে আমি ফর্মাল শার্ট আর প্যান্ট কিনলাম। অনেকদিন পর নতুন কাপড়ের গন্ধ আমার নাকে এসে লাগল। এই কেনাকাটার মধ্যে কোনো আভিজাত্য বা বিলাসিতা ছিল না, ছিল কেবল হারিয়ে যাওয়া আত্মসম্মানটুকু ফিরে পাওয়ার এক চেষ্টা।
পরদিন সকালে নতুন পোশাকে নিজেকে আয়নায় দেখে আমি নিজেই চমকে গেলাম। পোশাকেই যেন মানুষের অর্ধেক আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। গফুর চাচা আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, তার মুখে ছিল গর্বের হাসি। যেন আমি তার নিজের সন্তান, আজ কোনো বড় অভিযানে চলেছি।
আমরা চাচার রিকশায় চড়েই মতিঝিলের সেই সুউচ্চ বিল্ডিংটার দিকে রওনা দিলাম। রিকশাটা যখন আমার পুরনো অফিসের সামনে এসে থামল, আমার হৃৎপিণ্ডটা ধক ধক করে লাফাচ্ছিল। আমি ভেতরে ঢুকতে ইতস্তত করছিলাম। গফুর চাচা আমার হাতটা ধরে বললেন, “ডরাইয়েন না, সাহেব। আল্লাহ ভরসা।”
আমরা ভেতরে ঢুকতেই রিসেপশনের মেয়েটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। তার চোখে রাজ্যের প্রশ্ন আর তাচ্ছিল্যের বদলে ছিল এক ধরনের দ্বিধা। আমি তাকে এড়িয়ে সরাসরি লিফটের দিকে এগিয়ে গেলাম। লিফটের দরজা খুলতেই পরিচিত পারফিউম আর কফির গন্ধ নাকে এসে লাগল। কিছুই বদলায়নি, বদলে গেছি শুধু আমি আর আমার পরিস্থিতি। আমার ফ্লোরের সহকর্মীরা আমাকে আর আমার সাথে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরা গফুর চাচাকে দেখে কানাঘুষা শুরু করে দিল। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সোজা আমার বসের, জনাব শফিকুর রহমান সাহেবের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। আজ ম্যানেজার রুমে আমি আর যায়নি। উনি মানুষটা কেমন যেন?
দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে সেই পরিচিত গম্ভীর গলা ভেসে এল, “আসুন।”
ভেতরে ঢুকতেই শফিক সাহেব ফাইল থেকে মুখ তুলে তাকালেন। আমাকে দেখে তার চোখের মণি স্থির হয়ে গেল। তার বিস্ময় দ্বিগুণ হলো আমার পাশে দাঁড়ানো গফুর চাচাকে দেখে। তিনি প্রায় লাফিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
“রাফিদ! তুমি! আল্লাহ্! কোথায় ছিলে তুমি?” তার গলায় কোনো ভর্ৎসনা ছিল না, ছিল রাজ্যের বিস্ময় আর এক ধরনের স্বস্তি, যা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
আমি কিছু বলার আগেই তিনি বলে উঠলেন, “আরে বোসো, আগে বোসো। আর ইনি?” তিনি গফুর চাচার দিকে ইশারা করলেন।
আমি নিচু গলায় বললাম, “আমার চাচা। আমি শুধু আমার কিছু সার্টিফিকেট নিতে এসেছিলাম, স্যার। আপনার ড্রয়ারে ছিল…”
আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই শফিক সাহেব তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা বড় খাম বের করলেন। সেটার উপর আমার নাম লেখা। তিনি খামটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “তোমার সবকিছু এখানেই আছে, রাফিদ। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলেন, “জনাব রাফিদ সাহেব, আমরা সত্যিই দুঃখিত। সেদিন তোমার কোনো দোষ ছিল না, তোমাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছিল। সব দোষ ছিল অ্যাকাউন্টসের সবুজের। সে-ই ক্লায়েন্টের টাকাটা সরিয়েছিল আর দোষটা তোমার ঘাড়ে চাপানোর জন্য নকল কাগজপত্র তৈরি করেছিল। সিসিটিভি ফুটেজ আর ইন্টারনাল অডিটে সব ধরা পড়েছে। সে এখন জেলে আছে।”
আমি স্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম। আমার কান দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। তাহলে আমি নির্দোষ! আমার ভেতরকার সব অভিমান, ক্ষোভ আর অপমান যেন এক মুহূর্তে বরফগলা জলের মতো বেরিয়ে আসতে চাইল। আমার মাথাটা ঘুরছিল, আমি চেয়ারের হাতলটা শক্ত করে ধরলাম। আর বললাম তখন আমি বলেছিলাম। আমি নির্দোষ।
সেই জন্য সত্যিই আমি নিজে থেকে ক্ষমা চাইছি।
শফিক সাহেব বলে চললেন, “আমরা এটা জানার সাথে সাথেই তোমার নাম্বারে অসংখ্যবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ পেয়েছি। উপায় না দেখে তোমার শেখ বাড়ির ঠিকানায় লোক পাঠিয়েছিলাম। তোমার মা বললেন, তুমি নাকি অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছো। কোথায় আছো, তা তিনি জানেন না। ভালোই হলো আজ তোমাকে পেয়ে গেলাম। আমি জানি, তোমার যে মান-সম্মান হানি হয়েছে, তা আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না।”
তিনি একটু থামলেন। তারপর আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললেন, “তবে তোমার চাকরিটা আমরা ফিরিয়ে দিতে চাই। সাথে দুই লাখ টাকার একটা চেকও দিচ্ছি। আমাদের অফিস থেকে তোমার সম্মানহানি হওয়ার জন্য এই সামান্য ক্ষতিপূরণ। আমি জানি, এই টাকা তোমার সম্মানের কাছে কিছুই নয়, তবুও রাখলে আমরা খুশি হব। আর শুধু তাই নয়, তোমার হারানো সম্মানটুকু জনসমক্ষে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা দেশের প্রথম সারির একটা পত্রিকায় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তোমার সততার কথা প্রকাশ করে দেব, যাতে সবাই তোমার সম্পর্কে সত্যিটা জানতে পারে। আর… তোমাকে আমরা আগের পোস্টে নয়, মার্কেটিং বিভাগের হেড হিসেবে প্রমোশন দিচ্ছি। আশা করি তুমি আমাদের ফিরিয়ে দেবে না। কী বলো, রাফিদ সাহেব?”
স্যারের কথাগুলো আমার মাথায় পারমাণবিক বোমার মতো ফাটছিল। চাকরি? প্রমোশন? টাকা? পত্রিকায় বিবৃতি? যে অফিস থেকে আমাকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই আজ আমার জন্য এমন প্রস্তাব! আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমার ভেতরটা দ্বিধায় দুলছিল। একদিকে আহসান সাহেবের দেওয়া সুযোগ, অন্যদিকে এই ফিরে পাওয়া সম্মান। আমি অসহায়ভাবে পাশে দাঁড়ানো গফুর চাচার দিকে তাকালাম।
গফুর চাচা আমার অবস্থা বুঝতে পারছিলেন। তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব ধীরে, কিন্তু স্পষ্ট ইশারায় মাথা নাড়লেন। তার চোখ বলছিল, ‘সুযোগটা লন, সাহেব। এইটা আপনার হকের পাওনা, আপনার অধিকার।’
আমি স্যারের দিকে তাকালাম। আমার গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছিল না। অনেক কষ্টে বললাম, “আমি… আমি রাজি, স্যার।”
শফিক সাহেবের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল। তিনি চেকটা আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা আমার হাতে তুলে দিলেন। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, আমি যেন এক নতুন মানুষ। যে অপমান মাথায় নিয়ে আমি এই বিল্ডিংয়ে ঢুকেছিলাম, বের হওয়ার সময় তার বদলে মাথায় ছিল ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাসের মুকুট।
রাস্তায় নেমে আমি দুই লাখ টাকার চেকটার দিকে তাকালাম। আমার কাঁপা কাঁপা হাত থেকে চেকটা নিয়ে গফুর চাচা খুব যত্ন করে তার পাঞ্জাবির পকেটে রাখলেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “চাচা, চলেন ব্যাংকে যাই। এই টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আপনার।”
গফুর চাচা আঁতকে উঠে বললেন, “না না সাহেব, এই কী কন! এইটা আপনার সম্মানের টাকা। এইখানে আমার কোনো হক নাই”।
আমি তার হাতটা ধরলাম। আমার গলা ধরে আসছিল। বললাম, “চাচা, আপনি না বললে আমি আপনার আপন ছেলের মতো? তাহলে ছেলের টাকায় কি বাবার হক থাকে না? আপনি পাশে না থাকলে, আমাকে সাহস না দিলে, এমনকি এই শার্ট-প্যান্টটা কিনে না দিলে তো আমি এই পর্যন্ত আসতেই পারতাম না। এই টাকা আমি একা নিতে পারব না। আপনি না নিলে আমিও এই চেক ভাঙাব না।”
আমার জেদ আর আবেগের কাছে চাচার প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল। তার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। তিনি আর কোনো কথা বললেন না।
ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা জোর করে চাচার হাতে গুঁজে দিলাম। বাকি টাকা থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় হিসাবে রাখলাম। আর বাকি টাকা দিয়ে অফিসের পাশেই, একটা মোটামুটি ভালো টু-বেডরুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। বাড়িওয়ালাকে তিন মাসের অগ্রিম দিয়ে চাবিটা হাতে নিয়ে আমার মনে হলো, শেখ বাড়ির সেই বিশাল খাঁচাটার চেয়ে এই ছোট্ট আশ্রয়টা অনেক বেশি আপন, অনেক বেশি নিরাপদ।
সেদিন সন্ধ্যায় আমি গফুর চাচাকে বললাম, “চাচা, কাল থেকে আপনি আমার সাথে এই নতুন ফ্ল্যাটে থাকবেন। এতো বড় ফ্ল্যাটে আমি একা কী করব?”
গফুর চাচা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন। তারপর শিশুর মতো হেসে বললেন, “আমি আপনার লগে থাকুম, সাহেব? কিন্তু আমার রিকশা…”
“আপনার রিকশা আর চালাতে হবে না, চাচা। আপনি অনেক খেটেছেন। এখন আপনার আরাম করার সময়। আপনি আমার সাথে থাকবেন, বাবার মতো। আমার নতুন জীবনের অভিভাবক হয়ে,” আমি বললাম।
চাচার গাল বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তিনি কিছু না বলে শুধু আমার মাথায় হাত রাখলেন। এই স্পর্শে ছিল হাজারো আশীর্বাদ।
নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার পর মনে হলো, আমার জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো আমি আবার উড়তে চলেছি, তবে এবার আমার ডানা অনেক বেশি শক্তিশালী, কারণ এই ডানার নিচে আছে গফুর চাচার মতো একজন মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আশ্রয়। শেখ বাড়ির পরিচয় মুছে গেছে, কিন্তু আমি একজন বাবা পেয়েছি। যে বাবা রক্তে আমার কেউ নন, কিন্তু অনুভবে, আত্মায় আমার সবকিছু।
ভুল মাফ করবেন।