শেষের পঙক্তি পর্ব-২০+২১

0
537

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
আকাশে ঈদের চাঁদ। ত্রিশ দিন সিয়াম-সাধনার পর মুসলিমদের খুশির ঈদ। আরিফ ও প্রমিতির বিয়ে হয়ে গেলো একটু আগে। প্রমিতির অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না কেন সেটাই চিন্তার বিষয়। ডাক্তাররা প্রমিতির শারিরিক অবস্থা বিবেচনা করে সপ্তাহে দুটো করে ডায়ালাইসিস দিতেও পারছে না। কিডনির সাথে সাথে প্রমিতির র*ক্তেও ইনফেকশন দেখা দিয়েছে যার কারণে প্রমিতি আরও বেশি অসুস্থ। সচরাচর ৮০% কিডনি ড্যামেজ থাকলে রুটিন মাফিক ডায়ালাইসিস, ঔষুধ ও ডায়েট চার্ট মেনে চললে জলদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (আমার দাদীর ৮০% কিডনি ড্যামেজ ছিল। ডায়ালাইসিসও লাগে নি। ঔষুধ নিয়েই ১০ বছরের মতো সুস্থ ছিলেন।)
প্রফেসর আরিফ চাইছে প্রমিতিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবেন। সেখানের স্পেশালিষ্ট দেখাবেন।

________
নাফিহার হাতে মেহেদী পড়াচ্ছে তূর। নীরা ব্যাস্ত প্রতিবেশি একটা মেয়েকে মেহেদী পড়িয়ে দিতে। তূর নাফিহার দুই হাতের এক পিঠ করে মেহেদী পড়িয়ে দিয়ে শেষ করে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরে বলে,

–আমি আর পারবো না। আঙুল গুলো মনে হচ্ছে বাঁকা হয়ে গেছে। আমেরিকায় তো মেহেদী নিজেও পড়তাম না আর কাউকে পড়াতামও না। কতো বছর পর মেহেদীর টিউব হাতে নিয়েছি। আর পারবো না। যা এখন। আমি আগে রেস্ট করবো।

নাফিহা অনুরোধের স্বরে বলে,
–প্লিজ আপু প্লিজ। বাম হাতের তালুতে একটা ফুল আঁকিয়ে দেও শুধু। প্লিজ দেও। একটাই তো। খালি খালি লাগছে। ডান হাতের তালুতে দেয়া লাগবে না। দেও আমার সো’না আপু।

তূর কাঁদো কাঁদো চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
–আমার দুই হাতই খালি। আমার বাম হাতে আমি দিবো আর ডান হাতে নীরা দিয়ে দিবে তারপর আমি নীরার ডান হাতে দিয়ে দিবো। তোর বাম হাতে তুই ঘুমালেও দিয়ে দেওয়া যাবে। যা না বইন।

নাফিহা তূরকে আরও রিকুয়েস্ট করেই চলেছে। শেষে না পেরে তূর বাম হাতের তালুতে পড়িয়ে দিলো। গ্রুপ কল আসছিল কিছুক্ষণ ধরে। তূর রিসিভ করে কথা বলে নেয় বন্ধুদের সাথে। বান্ধুবীরা মেহেদী দিয়ে বসে আছে আবার কেউ পরে দিবে। আর ছেলেরা সবাই নাকি একসাথে ক্যাম্পাস এড়িয়াতে গেছে। কথা বলা শেষে এশার নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে নিজের হাতে মেহেদী দিতে বসে তূর।

_________রোজাদারদের উৎসবের দিন ঈদ-উল_ফিতর। মুসলমানদের দুইটা বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। যা আমাদের ধনী ও গরিবের মধ্যকার ভেদাভেদ ভুলে যাকাত ও ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে এক মাস রোজার পর আনন্দ উৎসব।
ঈদের দিন সকাল থেকে তূর ও নীরা তাদের মা ও চাচির সাথে টুকটাক সাহায্য করে কাজ শেষ করে নেয়। এরপর সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থেকে সন্ধ্যার পর তূর ওর দুই বোন ও তূর্যকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। মিহাল, অর্করাও আসে। মিহাল ও তূর দুজনে একটু টুকটাক কথা ও নজর লুকানোতেই কাটিয়ে দেয়। ঘোরাফেরা শেষে বাড়ি ফিরবে ওরা। মিহাল তূরকে বলেছে, পরশুদিন মিহাল ও তার পরিবার তূরদের বাড়িতে যাবে। তূর নীরাকে এটা জানিয়েছে। নীরা খুশি হয় অনেক কিন্তু তূর ভয় পাচ্ছে। নীরা তূরকে আশ্বাস দিয়ে বলে,

–চিন্তা করিস না। আজকে বাসায় গিয়ে আব্বুকে বলিস শান্তভাবে। মিহাল ভাইয়ার দিকটাও বলিস। আব্বু মানবে দেখিস।

তূর কিছুটা স্বস্থি পেলেও পুরোপুরি নিশ্চিত না। বাসায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ভয়ে নাজেহাল অবস্থা। বাসায় গিয়ে তূর নিজের রুমে দরজা দেয়। নীরা তূরকে কয়েকবার ডাকে যাতে বাবাকে বলে। কিন্তু তূর দরজা খুলছেই না। নীরা ভাবলো ইফতিকে বলবে। ইফতি যদি কিছুটা সাহায্য করে। যেই ভাবা সেই কাজ। ইফতিকে নীরা এই প্রথম নিজ থেকে ফোন করেছে। ইফতি ফোনের স্ক্রিনে নীরার নাম্বার উঠতে দেখে অবাক হয় কিন্তু পরক্ষণেই ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা ফোঁটে। সকালে মেসেজে কথা হয়েছিল ওদের। এরপর এখন নীরা ফোন করলো। ইফতি ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়। নীরাও সালামের জবাব দেয়। নীরার ইতস্তত বোধ হচ্ছে অনেকটা। যার বদৌলতে চুপ করে আছে সে। ইফতি বলে,

–কেমন কাটলো আপনার দিন?

–ভালো।
সরল জবাব নীরার। ইফতি নীরার অস্বস্থি বুঝতে পারে তাই খানিকটা অস্বস্থি আরও দিতে বলে,

–আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না আমার দিন কেমন কাটলো? আচ্ছা সমস্যা নেই। আমিই বলে দিচ্ছি। ঈদের নামাজের পর নাশতা করে তোমার সাথে মেসেজের পর ঘুমিয়ে উঠেছি বেলা তিনটায় তারপর নামাজ পড়ে মুভি দেখতে বসলাম। এর মাঝে আসরের নামাজ পড়ে আবার মুভি। মাগরিবের পর ঘুরতে বের হয়ে এইতো বাসায় ফিরলাম।

নীরা আবারও ছোট করে জবাব দেয়,
–ওহ ভালোই কাটলো।

ইফতি সন্দিহান হয়ে বলে উঠে,
–এখনও কি তোমার কথা বলতে লজ্জা লাগে? তুমি ফ্রিলি কথা বললে আমার ভালো লাগবে। অপরপাশের মানুষটা আনইজি হলে আমাদেরও আনইজি লাগে। কিছু বলবে?

নীরা লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,
–হুম।

–তাহলে বলো। আমার সাথে ফর্মালিটি করার প্রয়োজন নেই। তুমি ফ্রিলি বলো।

ইফতির আশ্বাসবাণীতে নীরা তূরের ব্যাপারটা সংক্ষেপে ইফতিকে জানায়। ইফতি কনফিউজড হয়ে বলে,

–আঙ্কেল কি মানবে? যদিও সবটা পরিস্থির চাপে ঘটেছে। কেউ এতোটা হবে আশা করে নি। কিন্তু মিস তূর তো এর জন্য চার বছর চেনা শহর, পরিবার ছেড়ে দূরে ছিল সাথে উনি অসুস্থ ছিলেন।

নীরা অনুনয় করে বলে,
–প্লিজ যদি আপনি বাবাকে একটু জানাতেন। আপু ভয় পাচ্ছে। একবার বলেছিল নাকি। তখন বাবার কথাবার্তাতে আপুর মনে হয়েছিল বাবা হয়তো রাজি হবে না। আপনি নাহয় ইনডাইরেক্টলি বলবেন। শুধু বোঝার চেষ্টা করবেন বাবার রিয়াকশন।

ইফতি সম্মতি দিয়ে ফোন রেখে নীরার বাবাকে ফোন করে। নীরার বাবা ফোন রিসিভ করলে ইফতি খোশমেজাজে বলে,

–আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। ঈদ মোবারক। কেমন আছেন?

নীরার বাবা সালামের জবাব দিয়ে বলেন,
–আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি। তা তুমি কেমন আছো?

ইফতি বলে,
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো। সকালে আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলেছিলেন তখন আমি ছিলাম না।

–হ্যাঁ শোনলাম। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।

ইফতি ইতস্তত করে বলে,
–আসলে আঙ্কেল যা বলতে ফোন করেছিলাম। আমার ফুফিরা কালকে দেশে আসবেন। ফুফি চাইছিলেন, আকদটা হয়ে যেত।

নীরার বাবা বলেন,
–হ্যাঁ, তোমার বাবা-মা বলেছেন আমাকে। আমি ভেবে বলবো বলেছি।

ইফতি এবার মনে সাহস এনে আসল কথাটা বলার চেষ্টা করে,
–আমি জানি, আপনি তূরফা আপুর বিয়ে নিয়ে টেনশনে আছেন। নীরার থেকে শুনেছিলাম, তূরফা আপু কাউকে পছন্দ করেন। শুনেছি ছেলেটা ভালো। তূরফা আপু যদি…

নীরার বাবা বলেন,
–তূর যাকে পছন্দ করে তার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক। তাই সে ব্যাপারে সম্ভব না।

ইফতি বলে,
–না। বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন উনি। বিয়ে ভাঙার জন্য এতো বছর লেগে গেছে। সেও তূরফা আপুকে পছন্দ করে।

নীরার বাবা সন্দেহের স্বরে বলে,
–তুমি জানো কিভাবে? আমি তো জানি না। তূরও বলে নি।

ইফতি পাশে থাকা টিসু বক্স থেকে টিসু নিয়ে কপালের ঘামের বিন্দুগুলো মুছে ক্ষীণ স্বরে বলে,

–নীরাই জানিয়েছে। আপনি তূরফা আপুকে ডেকে সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন। উনি হয়তো আপনাকে জানাতে ভয় পাচ্ছেন। রাখি ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

নীরার বাবা সম্মতি দিলে ইফতি ফোন কে*টে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্বগোতক্তি করে বলে,
“শ্বশুরের সাথে কথা বুঝে বলতে হয়। বেঁফাস বলে দিলে শেষ! এটা যে প্রিপ্লানেড তা না বুঝলেই হলো।”

এদিকে তূরের বাবা তূরকে ডেকে পাঠায়। সেদিন তূরের বলা কথাগুলো চিন্তা করছেন উনি।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
গুরুগম্ভীর আবহাওয়া বিরাজমান কক্ষের আনাচে কানাচে। তূর কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে যেন তার সব সাহস হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো বাতাসে মিলিয়ে যায়। তূরের বাবা তূরের ভীতু মুখশ্রী অবলোকন করে বললেন,

–কথাটা তুমি নিজে এসেও আমাকে বলতে পারতে। ইফতিকে দিয়ে বলানোর কি ছিল?

তূর অবাক হয়। তূর অজ্ঞাত ছিল ইফতির বিষয়ে। তূরের বাবা আবারও বললেন,
–তুমি রায়হানের সাথে বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার পরেই বুঝতে পেরেছিলাম, তুমি এখনও ভুলতে পারো নি। হাজার হাজার মাইল দূরত্বে তাকে ভুলতে গেলেও তোমার সেই প্রচেষ্টা শূণ্য। তুমি আমার মেয়ে। তোমার খারাপ কখনও চাই না। আর আমি এও বুঝতে পারছি, তুমি ফিরেছ নিজের অতীতকে আরও একবার সুযোগ ও পুনঃপরীক্ষা করতে।

তূর কিছুই বলছে না। তার বাবা মিথ্যে তো বলছে না। সত্যি তো সে শেষ বারের মতো কষ্টদায়ক অতীতের সম্মুখীন হতেই এসেছিল। ভালো খারাপ যাই হতো সে এরপর নিজের মনকে স্বান্তনা দিতে পারবে ভেবেছিল। তূরের চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রুজল টুপ করে পরলো ওর হাতের উপর। পরপর আরও এক ফোঁটা অশ্রু বিন্দুর পতন ঘটলো। তূরের বাবা সেটা দেখলেন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করলেন,

–মিহালের বিয়েটা মিহাল ভেঙে দিয়েছে?

তূর মা*থা নাড়ায় হ্যাঁ বোধক। তূরের বাবা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন,
–মিহালের ফ্যামিলি কি বিয়ে ঠিক করেছিল?

তূর পূর্বের ন্যায় জবাব দেয়। তূরের বাবা তৃতীয়বারের মতো প্রশ্ন করেন,
–মিহালের পরিবার কি অসন্তুষ্ট না এতে? তোমাকে কি তারা মেনে নিবে? তাছাড়া মিহাল তোমাকে একবার রিজেক্ট করেছে নিশ্চয়ই তার ফ্যামিলির জন্য? এখন যদি তার ফ্যামিলি রাজি না থাকে তবে আমি চাইবো না তুমি অনিশ্চিত দিকে আগাও। পরবর্তীতে এমনও হতে পারে আবারও সে ফ্যামিলির কনসেন্ট মেনে তোমাকে মাঝপথে ছেড়ে দিলো! একজন বাবা হিসেবে এগুলো আমার জানা অত্যাবশ্যকীয়। কখনোই চাইবো না তুমি একই কষ্ট দ্বিতীয়বার পাও।

তূর সংক্ষেপে জবাব দেয়,
–তার পরিবারে সবাই রাজি। এতো বছর আন্টি রাজি ছিলেন না। এখন তিনিও রাজি।

তূরের বাবা কিছুটা সন্তুষ্ট হলেন। তারপর ইশারায় তূরকে যেতে বললেন। তূর এক ইশারাতেই চলে যায়। তূর যাওয়ার পর তূরের মা তার স্বামীর পাশে বসলে তূরের বাবা বলে উঠলেন,

–ভাবছি মিহালের পরিবার এলে রাজি হয়ে যাবো। নাহলে মেয়ে আমার কবে বিয়ে করবে নাকি করবে না বলা যায় না। এদিকে নীরার হবু শ্বশুরবাড়ির মানুষজন চাইছে অন্তত আকদটা করে রাখতে। বড় মেয়েকে রেখে মেঝো মেয়েকে বিয়ে দিতে মন সায় দেয় না। পরবর্তীতে যদি তূরের বিয়ে নিয়ে ঝামেলা হয়? আমি ভাবছি, দুই মেয়ের একসাথে বিয়ে দিবো।

তূরের মা খুশি হলেন। তিনি তার স্বামী ও সন্তান উভয়ের খুশিতে চিন্তা মুক্ত।

_______

ভোরের আবহে প্রকৃতি রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। শিতল আবহাওয়া ও ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাত থেকে ভারী বর্ষণের রূপ নিয়েছে সাথে ঝড়ো হাওয়া তো আছেই। গ্রীষ্মঋতুর প্রচণ্ড তাপদাহে এক পশলা স্বস্থি নিয়ে এসেছে প্রকৃতি। এ যেন বর্ষার আগমনী বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি বহু আগে থেকে। ঘুম প্রিয় মানুষদের জন্য দারুন একটা পরিবেশ।
তূর প্রচণ্ড ঘুম কাতুরে। গতকাল রাতে সে মোটামোটি নিশ্চিত তার বাবা সবটা মেনে নিবেন। তূরের বাবা কোনো কিছুতে সম্মত হলে পজেটিভ সিগনাল দেন যা তূর কালকে অনুভব করেছে। ভোরে হালকা শীত শীত অনুভূত হওয়াতে ঘুম ভেঙে গেছিলো। ফজরের নামাজটা পড়ে নিয়ে এখন আবার ঘুমাবে। পুনরায় ঘুমানোর আগে বৃষ্টির ছটায় সিক্ত ব্যালকনির মেঝেতে ন*গ্ন পা রেখে কেঁপে উঠলো তূরের স্নায়ুকোষ। শরীরের পশম গুলোও কাঁ*টা দিয়ে উঠছে। বৃষ্টির ছটা গায়ে এসে লাগছে। ক্রমান্বয়ে বৃষ্টির রেশ বাড়ছে। তূর বুক ভরে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ঘুমোতে চলে গেলো।

এদিকে মিহালও সকালে বৃষ্টির জন্য মসজিদে না গিয়ে বাসায় নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে নেয়। দুই দিন পর অফিসে ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাবে। আর এই মে মাসের আর মাত্র কিছু দিন বাকি তারপর অফিস থেকে বিদায় নিবে।

দেখতে দেখতে দুইটা দিন কে’টে যায়। দুইদিন পর,,
মিহালের পরিবার তূরদের বাড়িতে এলো বিয়ের কথা বার্তা বলতে। তূরের পরিবার তাদের আপ্যায়নে ত্রুটি রাখে নি। দুই পক্ষের কুশল বিনিময়ের পর বিয়ের কথা তোলে। দুই পরিবার রাজি। যেহেতু তূর ও মিহালের আমেরিকার ফ্লাইট আর বারো-তেরো দিন পর তাই এরই মধ্যে বিয়ের কার্যকর্ম শেষ করতে চায়। এখন ইফতিদের সাথে কথা বলে নিতে হবে। মিহাল ও তূরকে একসাথে কথা বলতে দেয়। ওরা ছাদে যায় কথা বলতে।
ছাদের একপাশে কিছু ফুলের গাছ আছে। রঙিন ও রঙহীন উভয় ধরনের ফুল গাছ। বেলি, গন্ধরাজ, গোলাপ, গাঁধা ইত্যাদি। বেলি ও গন্ধরাজ ফুল ফুটে আছে। তূর সেগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মিহালও পাশে গিয়ে দাঁড়ায় পকেটে হাত গুঁজে। মিহাল ফর্মাল গেটআপে আছে। আজ সে অফিস থেকে দেড় ঘন্টা আগে ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছে। অফিসের কাজ গুলো ব্রেক টাইমে করে ফেলেছে। সাদা শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা ও কালো প্যান্ট। শার্টের সাথে ঝুলানো টাইটার নট মিহাল ছাদে এসে ঢিলা করছে। বিকেলের শেষ প্রহর। রক্তিম সূর্য তার শেষ দ্যুতি ছড়াতে ব্যাস্ত। তূর আড়চোখে মিহালকে দেখছে। কাকতালীয় ভাবে তূরও সাদা রঙের জর্জেটের থ্রিপিস পড়েছে। দুজনের ড্রেসের রঙ মিলে গেছে। মিহালের সামনের চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে আছে। চেহারাতে সূক্ষ্ম ক্লান্তির ছাঁপ। মিহাল নিরবতা ভাঙতে শব্দ করে,

–উহুম উহুম।

তূর চোখের মণি ঘুরিয়ে পাশে তাকায়। মিহাল আবারও একই রকম ভাবে শব্দ করলে, তূর হুট করে বলে উঠে,

–তোমার যক্ষা হয়েছে? এভাবে কাঁশছো কেনো?

মিহাল হতভম্ব হয়ে গেলো। এইসময় এধরনের কথা আদৌ কী মানানসই? মিহাল তূরকে উদ্দেশ্য করে অসহায় কন্ঠে বলে,

–কথা বলার কিছু পাচ্ছো না বলে এভাবে!

তূর ভাব নিয়ে বলে,
–তাও তো আমি কথা শুরু করলাম। তুমি তো যক্ষা রোগীর মতো বারবার কাশি দিয়েই যাচ্ছো। এমন ভাব করছো যেন আজ আমাদের প্রথম দেখা!

মিহাল ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
–ঘাট হয়েছে আমার। তা বলো কেমন আছো?

তূর বলে,
–আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো? আর বাসায় যেহেতু গিয়েছিলে তাহলে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করে সন্ধ্যার পর আসলেও পারতে।

মিহাল হালকা হেসে বলে,
–তোমার শাশুড়ি ও ননদ তো আমাকে অফিস থেকে ফেরার পথেই ফোন করে করে পাগল করে দিচ্ছিলো। ওদের জন্য আজ আমাকে সব কাজ খুব দ্রুত সারতে হয়েছে। বাসায় জলদি এসেছি তারপর আমাকে ফ্রেশ হতে দশ মিনিটের বেশি সময় দেয় নি। কায়রা আপু ও মা তোমাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে যাচ্ছিলো। তুমি তো দেখলেই, আপু এসে সবার আগে তোমার রুমে তোমাকে দেখতে চলে গেছিলো।

তূর হেসে বলে,
–আপু এসে আমার সাথে একটু কথা বলছিল কিন্তু তার আগেই রিয়ানা (কায়রার মেয়ে) আমার কোলে এসে গলা জড়িয়ে ধরে আধো বুলিতে “মামি” ডাকছিল। বাচ্চাটা মাশাআল্লাহ অনেক কিউট।

মিহাল রিয়ানার কার্যকলাপ শুনে হাসে। রিয়ানার বয়স দুই বছর। কায়রা তাকে ‘মামি’ ডাকটা শিখিয়ে ফেলেছে তা মিহাল জানে কারণ আসার পথে রিয়ানা মিহালের কোলে বসে বসে “মামি যাবো” বুলি বারবার আউরাচ্ছিল। মিহাল বলে,

–সে খুব এক্সসাইটেড। আমাদের বাসায় আসলে আমি যদি বাসায় থাকি তবে সে আমার কাছ থেকে সরবেই না। তোমাকে পেলে মনে হয় আমাকে ভুলে যাবে।

তূর হাসে। মিহালের হুট করে কিছু মনে পরে। মিহাল আচানক তূরের পায়ের কাছে বসে পরে। আর তা দেখে তূর সরে যেতে নিলে মিহাল তূরের ডান পায়ে হাত দিয়ে আটকে দেয়। আর সরে যেতে পারে না তূর। তূর মুখে বলে,

–তুমি পায়ে হাত দিচ্ছো কেনো? পা ছাড়ো প্লিজ।

মিহাল নিজের পকেট থেকে এক জোরা রূপার নুপুর বের করে। নুপুরটাতে তিনটা ঝুনঝুনি তাও হুকের কাছে আর পুরো নুপুরটাতে ছোট থেকে বড় চেইন কে’টে কে’টে ঢেউ খেলানো ডিজাইন। তূর অবাক হয় নুপুর জোরা দেখে। মিহাল তূরের ডান পা নিজের হাঁটুর উপর নিতে চাইলে তূরের ব্যালেন্স হারাতে নিয়েও মিহালের কাঁধে হাত রেখে সামলে নেয়। মিহাল নুপুর পড়াতে পড়াতে বলে,

“তোমার পদচারণা আমার পৃথিবীতে শুভ হোক। ওষ্ঠকোনে হাসির রেখা অম্লিন হোক। সকল গ্লানি পেছোনে ফেলে নব সাঁজে আসো প্রিয়া। ”

তূর লজ্জাবতী লতার ন্যায় নুইয়ে যায়। তার ভালোবাসা আজ তার দুয়ারে ভালোবাসার পসরা সাঁজিয়ে হাজির হয়েছে। জীবনে দুঃখ চিরস্থায়ী না।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।