শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব-০২

0
14

#শেষ_চৈত্রের_ঘ্রাণ
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
[০২]


ড্রয়িংরুমে বসে মা, চাচীদের দিকে বিরক্তি চোখে তাকিয়ে আছে শীতল। বিরক্তির ভারে চোখ, মুখ কুঁচকে আছে তার। পায়ের পেশিতে কালশিটে পড়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ব্যথায় পিঠ, পা, অবশ প্রায়। তারমধ্যে এতক্ষণ কান ধরে থেকে কেবলই ছাড়া পেয়েছে সে। ছাড়া পাওয়ামাত্রই সোফায় বসে পা ধরে কাঁদতে শুরু করেছে। তাকে কাঁদতে দেখে সিমিন চৌধুরী বকতে বকতে গেছেন রসূন তেল গরম করতে। কিন্তু সেইই গেছে এখনো ফেরার নাম নাই। থাকবে কিভাবে? রান্নাঘরে তিন জা মিলে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। লাল শাক, পুঁইশাক দেখে পুরনো কিছু কথা মনে পড়েছে তিন জায়ের। উনাদের প্রেগনেন্সির সময় কে কোন জিনিস খেতে পারত না। কার কোনটা খেতে ইচ্ছে করত। কোন খাবার দেখা মাত্রই গা গুলাত এসব কথায় উঠেছে। উনাদের সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছে কাজের বুয়া সাহেলা। ওই মহিলা আরেক গল্পবাজ। যার তার সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়। গল্প করতে করতে বাংলায় গালিও ছুঁড়ে অনায়াসে। উনার এই বদ স্বভাবের কারণে সায়নের কাছে ধমক খেয়েছে বেশ কয়েকবার। ধমক খাওয়ার পর মুখ কাচুমাচু করে বলে, ‘জীবনেও আর গালাইতাম না ভাইজান। যদি গালাই
তাইলে কুত্তার লগে দোস্তি করুম। কুত্তা আমার দোস্ত।’
এরপর দু’দিন ঠিক থাকে তারপর যা কার তাইই। শুদ্ধকে দেখে ভয় পায় বিধায় সে বাড়িতে এলে কম কথা বলে। দূরে দূরে থাকে। শুদ্ধ গেলে যেন
হাফ ছেড়ে বাঁচে। একবার তো বড় মাকে বলেই ফেলেছিল, ‘ মা জননী আপনে ছুডু পুলা এরাম খসখইসা মেজাজের ক্যান? হেই প্যাডে থাকতে কী খুকসা পাতার রস খাইছিলেন?’
সেদিন তার কথা শুনে বড় মাও বিষ্মিত নজরে তাকিয়ে ছিলেন। আসলে কী জবাব দিবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না বেচারি। এইদিকে রান্নাঘরে গল্প আরো জমে উঠেছে। অট্টহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। শীতল ফোঁপাতে ফোপাঁতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে গেল।
বিছানায় শুয়ে বালিশের পেটে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল। সকাল সকাল মুড খারাপ করে দিয়েছে এই পাঁজি শুদ্ধ। সব জায়গায় শুদ্ধ পুরুষগিরি না করলে চলে না তার। ইশ! চ্যালাকাঠ দিয়ে কত জোরে মারল! এভাবে কেউ কাউকে মারে? পুলিশও চোরকে এভাবে পেটায় না বোধহয়। আর কেউ কিছু বলল না। বারণও করল না। শুধু পানিশমেন্ট দেওয়া দেখল।
এখানেই প্রমাণ হয় বাড়ির কেউ ভালোবাসে না তাকে, কেউ না। যখন কেউ ভালোইবাসে না এই মুহূর্তই ম’রে গেলেই ভালো হতো। তখন সবাই বুঝত।
এত মারকাটের কী খুব দরকার ছিল? কি এমন মস্ত বড় পাপ করেছে? শুধু টিকটকই করেছে। অসংখ্য মানুষ টিকটক করে। প্রেম করে। তারা কি মানুষ না? মোদ্দাকথা, প্রেম আর টিকটক এক জিনিস হলো নাকি?
মোটেও না! শয়তানে যখন নাড়ে মানুষ তখন প্রেমে পড়ে। প্রেম করতে
ডগমগ করে উতলে প্রেমের খাদে। সেই খাদে একা একাই হাবুডুবু খায়।
তারপর যখন হুঁশ আসে তখন বুঝে প্রেম কি জিনিস! আর মনের খুশির জন্য করে টিকটক। নেচে, গেয়ে, বিনোদন দেয় নিজেকে এবং নিজের মর্জিকে।তাই তার ভাষ্যমতে প্রেমের জায়গায় প্রেম ;টিকটকের জায়গায় টিকটক। মূলত একথা ভেবে প্রেম আর টিকটক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া মাত্র টিকটক করে মনের দুঃখ কমাতে পারে। তাছাড়া কষ্টের গানগুলো নাকি ছ্যাকা না খেলে ঠিকঠাক মতো অভিনয়
করা যায় না। করলেও খামতি থেকে যায়। এইতো তাদের পাশের বাড়ির ডিভোর্সী মেয়ে রুণিয়া আপুও টিকটিক করে। তার লদলদে গতর নিয়ে ঝাকানাকা গানে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচে। কখনো বা প্রাক্তন স্বামীর কথা ভেবে ভিডিও অন করে খুব কাঁদে। এতো স্বামীকেও স্মরণ করা হয় টিকটকও করা হয়। আবার তাদের ক্লাসের মেকাব সুন্দরী মিলি টিকটক করে। পড়াশোনায় পুরাই ডাব্বা। কলেজ ব্যাগে বই বাদে মেকাব সামগ্রী নিয়ে ঘুরে। পথে, ঘাটে, সুযোগ পেলেই টিকটক করতে শুরু করে। এসব করে সমান তালে টাকা কামাচ্ছে। আইফোন কিনতে নাকি বিদেশ যাবে।
দেশে আসা আইফোন প্রায় নকল হয় তাই সরাসরি বিদেশ গিয়ে চোখে দেখে, পরখ করে, আইফোন কিনবে। কি সৌভাগ্য তার! নিজের টাকায় শখের জিনিস কেনার মতো সুখ পৃথিবীতে আছে নাকি? না নেই তো। এ সুখ অনিন্দ্য! নিষ্কলঙ্ক! বাস্তব সত্য হলো, টাকা থাকলে সবাই উড়ে উড়ে ভালোবাসতে আসে। আদর করে, কিছু হলে বলার আগে কিলকিল করে যত্ন করে আসে। আর যার টাকা নেই তার সন্মানের পরদ একদম শূন্যের কোঠায়। গুরুতর কিছু হলেও গুরুত্ব মিলে না। যত্ন মিলে না৷ এ বাড়িতে
জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে তার কথাখানায় ধরা যাক, তার টাকা নেই, ছোটো খাটো ইনকামের সোর্স’ও নেই, এজন্য কেউ দেখতেও পারে না। ভালোওবাসে না। মাসে মাসে মোটা টাকা কামানো ঘাওড়া শুদ্ধই সবার চোখের মনি। কয়লার খনি। ওর সামান্য জ্বর এলেও সবাই তাকে আদরে আদরে গদগদ করে মাথায় তুলে রাখে। অথচ তার বেলায় যেন লবডঙ্কা।
অন্যকে কি বা বলবে? নিজের আপন মায়েরই কোনো পাত্তা নেই। গুরুত্ব নেই। থাক, লাগবে না, কারো পাত্তা লাগে না, পায়ের ব্যথাতেই ম’রে ভূত হয়ে এখানে এভাবে পড়ে থাকুক। আর সবাই শুদ্ধ পুরুষকে নিয়ে ভালো থাকুক।

এমন মনগড়া অভিযোগ করতে করতে শীতল একপর্যায়ে ঘুমিয়ে গেল।
তবে তার অজানায় রয়ে গেল, সে ঘুমানোর পর তার মা, বড় মা এসে পায়ের ব্যথা কমানোর স্প্রে করেছে। ঠিকঠাক শুইয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়েছে। পাগল মেয়েটা কতশত অভিযোগ করল। অথচ এটাও অজ্ঞাত
রইল, তার মা পায়ের কালশিটে দেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে আলতো করে হাত বুলিয়েছেন স্নেহমাখা স্পর্শে। কপালে আদর এঁকে অশ্রুভেজা
চোখ মুছে দিয়েছেন মমতামাখা আঁচলে। আর বড় মা ওর পায়ের অবস্থা দেখে শুদ্ধকে আরেকদফা ঝেড়েছে।
-_____-_______-_________-__

সময় তখন দুপুর একটা বেড়ে আটচল্লিশ মিনিট,
এসময় চৌধুরী নিবাসের কর্তারা বাসাতে থাকে না বললেই চলে। অফিস থেকে বাসায় ফিরে লাঞ্চ সারা সম্ভব হয়ে উঠে না। ব্যস্ততা থাকে। কখনো মিটিং থাকে। হিসাব নিকাশের ব্যাপার থাকে। মোদ্দাকথা সময়ের সঙ্গেও পেরে উঠা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শারাফাত ও সাফওয়ান চৌধুরীর ছোটো ভাই শাহাদত চৌধুরী ছুটিতে এলে তিন ভাই একসঙ্গে খেতে বসে।
তখন যত ব্যস্ততায় থাকুক তিনবেলা একসঙ্গে একটেবিলে খেতে ঠিকই সময় বের করে নেন। তখন ভাইয়ের থেকে কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। কারণ শাহাদাত চৌধুরী বাড়ি বাইরে থাকেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস একা একা খান। পরিবারকে কাছে পান না, সময় দিতে পারেন না। উনার নিশ্চয়ই পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ইচ্ছে করে,
গল্পের পসরা খুলে খাওয়ার পর্ব সারতে ইচ্ছে করে। তাছাড়া একটেবিলে
খেতে বসলে কত কথা হয়, কত মজা হয়, রাগ-অভিমান, দুষ্টুমি-খুনশুটি সবই হয়। আর এগুলো বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে। সম্পর্ক মজবুত করে।
ছোটো ভাইয়ের দিকটা মাথায় রেখে শারাফাত চৌধুরী আদেশে যে’কটা দিন উনি বাড়িতে থাকেন সবাই খাওয়ার সময় ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।

নিয়ম অনুযায়ী আজও সবাই একে একে খাওয়ার টেবিলে এসে হাজির। অথচ সবার মধ্যে শীতল অনুপস্থিত। তার কথা জিজ্ঞাসা করায় সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। কেউ জানে না তার কথা। সকালের পর তাকে নিচে দেখা যায় নি। রুম থেকেও বের হয় নি। এমনকি সকালেও খায় নি।
একথা শুনে শারাফাত চৌধুরী নিজেই গেলেন অভিমানী মেয়েটার রাগ ভাঙাতে। উনি না গেলে তাকে কেউ আনতেও পারবে না একথা কারোও অজানা নয়। বাবাকে যেতে দেখে শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে তাকাল। এত আহ্লাদে আরো ফাজিল হয়েছে সে। শাষণ, শাসণই! একটা মেরেছে কী না তাতে না খেয়ে, কেঁদে কেটে, ঢংয়ের পসরা খুলে বসেছে। বাবা গেল, এরপরও
যদি না আসে তাহলে আরেদফা মার হবে তার। সকালে চ্যালাকাঠ দিয়ে দিয়েছে এবার হাতই যথেষ্ট। থাপ্পড়ে মাড়ির দাঁত যদি না নড়িয়েছে তার নামও শোয়াইব চৌধুরী শুদ্ধ নয়! এদিকে ক্ষুধার চোটে শীতলের সাধের ঘুম ভেঙে গেছে অনেক আগে। কিন্তু মনে জেদ পুষে উঠছে না, খেতেও যাচ্ছে না। খালি এপাশ-ওপাশ করে সময় কাটাচ্ছে। ফোনটাও তো নেই
যে, স্বর্ণ আপুকে ফোন করে বলবে চুপিচুপি কোনো খাবার দিয়ে যেতে।
তার রাগের আবার আরেক জ্বালা, মানুষের রাগ উঠলে নাকি ক্ষুধামন্দা হারিয়ে যায়। আর তার পেটে রাক্ষুসে ক্ষুধা এসে হাজির হয়। ইচ্ছে করে দুনিয়া সুদ্ধ খেয়ে ফেলবে। একথা কোনো কথা? এমন হলে রাগ দেখাবে কি করে? আর রাগ না দেখালে বুঝাবে কিভাবে সেও বড় হয়েছে। তাকে যখন তখন মারা যাবে না, বকাও যাবে না। কিন্তু কেউ খেতে ডাকছে না
কেন? কিছুক্ষণ আগে বাবা, মেজো চাচ্চু, বড় মা, শখ আপু ডেকেছিল, সে রাগ করে যায় নি। অভিমানের পারদ আকাশচুম্বী কি না! যাবেও না, খাবেও না, ভেবে দরজা আঁটকে ঘাপটি মেরে বসেছিল। ঘুম ভাঙার পর
তার রাগ পড়ে গিয়েছিল কিছুটা কিন্তু তাদের ডাকাডাকি শুনে শুদ্ধ রুম থেকে বেরিয়ে খ্যাকখ্যাক করে বলেছে,
-‘ এত ডাকাডাকির কি আছে? খাবে না ভালো কথা। এক বেলা না খেলে কেউ মরে না।’
ওই লাউয়ের বাচ্চা কদু একথা বলে তার রাগটাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সে পারত না নিজে এসে সুন্দর করে ডাকতে? একবার বললে কি বা হতো,’ সরি, আর মারব না। খেতে আয়।’
কিন্তু সে উল্টে ত্যাড়া কথা বলে রাগ চড়িয়ে দিয়েছে। মেজাজের উপর কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তখন থেকে তার মেজাজও
চাঙ্গে উঠে আছে। আপাতত বি’শ্রী মেজাজ ঠান্ডা করতে শাওয়ার নিয়ে এলো সে। শুদ্ধকে বকা চলমান রেখে ভেজা চুল মুছতে মুছতে কে যেন নক করল রুমের দরজার। খ্যাক করে উত্তর দেওয়ার আগে ভেসে এলো বড় বাবার গলা। সে জলদি দরজা খুলে দেওয়া মাত্রই শারাফাত চৌধুরী স্নেহমাখা হাসি উপহার দিলেন। শীতল সব রাগ ভুলে গেল। অভিমানের পারদ গলেও চুরচুর। এই মানুষটার প্রতি একটু বেশিই দূর্বল সে। উনার কোনো কথা ফেলতে পারে না। কারণ বাবাকে সে কতদিন কাছে পায়?
পায় না বললেই চলে। যখন বাবাকে প্রয়োজন হয় এই মানুষটাই তাকে আগলে রাখে। ভরসা দেয়। সাহস জোগায়। এমনকি পৃথিবীতে আসার পরপর সে সবার প্রথমে কোলে চড়েছে এই মানুষটারই। ওর বাবা তখন কোনো একটা মিশনে গিয়েছিল। এমনিতেও সে জানে উনি সবার থেকে
তাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন। কারণ শীতল নাকি মায়ের পেট থেকে আধমরা হয়েছিল। অনেকদিন হসপিটালে থেকে সুস্থ হয়েছিল। দেখতে এত আদুরে হয়েছিল খুব সহজে তার উপর সবার মায়া পড়ে গিয়েছিল।
একটু বড় হয়ে বাবার আঙুল না পেয়ে বড় বাবার আঙুলটাকে আঁকড়ে ধরেছিল সে। বাড়ির অন্যান্য ছেলে-মেয়েরা উনার রাগী রাগী মুখ দেখে ভয় পেতো। খুব একটা কাছ ঘেঁষতো না। এখনো তাই। অথচ সবকিছুতে শীতলের উনাকেই চায়। এখনো তাই। রুমের দরজায় বড় বাবাকে দেখে কিছু বলতে হলো না সে বিনাবাক্যে নিচে নেমে এলো।চেয়ার টেনে খেতে বসল। আজ দুপুরে স্পেশাল টাইটেম সর্ষে ইলিশ। অন্যান্য পদও আছে।
এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে শুদ্ধ ইলিশ খায় না। তাই শুধু তার জন্য সিঁতারার হাতের স্পেশাল ডিম ভুনা। শীতলও জানে, ডিম ভুনা শুদ্ধের জন্য। তবুও সে ভাত নিয়ে ডিমটাই পাতে তুলে নিলো। কেউ যেন ফেরত দেওয়ার কথা বলতে না পারে তাই ডিমটাই আগে মুখে পুরে দিলো। বলা বাহুল্য, সে এভাবে মনের রাগ মিটাল। মেয়ের ছেলেমানুষি দেখে সিমিন
দাঁতের দাঁত চেপে বলল,
-‘একি তুই শুদ্ধর ডিম খেয়ে নিলি কেন?’
-‘ ডিমের গায়ে কারো নাম ধাম লেখা দেখলাম না তো। আমি কী জানব এটা কার ডিম? মুরগির ভেবেই তো খেলাম।’
একথা বলে সে সরাসরি শুদ্ধর দিকে তাকাল। তারপর জিজ্ঞেস করল,
-‘ শুদ্ধ ভাই, এটা আপনার ডিম?’
শুদ্ধ একেবারে নিশ্চুপ। বড়রা শুনেও না শোনার ভাণ করে খেতে ব্যস্ত।
তবে স্বর্ণ আর শখ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। মার খেয়েও দুষ্টামি কমে না এই পাজি মেয়ের। এখন যদি শুদ্ধ ভাই উঠে চটাস্ করে
থাপ্পড় দেয় তখন কি হবে? দুটো মার খেয়ে তো সকাল থেকে বিছানাগত হয়ে পড়েছিল। আরেকচোট খেলে দুই চোখে সর্ষে ফুল দেখবে। তাছাড়া
কেউ যদি বারবার যেচে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায়, তাহলে কি বা করার? অথচ শীতলের কথা শুনে শারাফাত চৌধুরী মুখ টিপে হাসলেন। তবে সেই হাসিটা ঠোঁটে কোণেই অদৃশ্য রয়ে গেল। কথায় বলে, হাতির গায়ে শক্তি বেশি হলেও পিঁপড়েও কম যায় না। সেও মরার আগ পর্যন্ত দাঁত বসিয়ে কামড়ে ধরে থাকে। বিপক্ষ দলকে বোঝায় হেরে যাওয়ার
পাত্র সে নয়। সহজে হার মানে ভীতুরা। শুদ্ধ নিজের মতো খেতে ব্যস্ত। অল্প অল্প ভাত মুখে দিয়ে সুন্দর করে খাচ্ছে সে। শীতলের কান্ড দেখেও নির্বাক। এমনকি তার কথার জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করল না সে। কারণ পাগলরা তো কত কি বলে সব কথা কী আর ধরতে আছে? বোধবুদ্ধি থাকলে বলত না নিশ্চয়ই? অথচ শীতল মনের সুখে ডিমটার
খেয়ে সর্ষে ইলিশ দিয়ে তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে শুদ্ধ দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মুখে ভাতের লোকমা তুলে মনে মনে চিৎকার করে বলছে, ‘এ্যাই শুদ্ধ ভাইয়ে খাওন এত স্বাদ ক্যা?’
বড় জায়ের ইশারার সিমিন মেয়েকে আর কিছু বলল না। বরং গজগজ করে তাড়াতাড়ি ডিম ভেজে শুদ্ধর প্লেটে তুলে দিলো।

চলবে…