শেষ থেকে শুরু পর্ব-বোনাস + ২৮

0
385

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে : লাবণ্য ইয়াসমিন
#বোনাস_পর্ব

জ্ঞান ফিরে হৈমন্তী নিজেকে একটা বন্ধ রুমে আবিস্কার করলো। রুমে মিডিয়াম তাপমাত্রাই এসি চলছে,শীত শীত করছে। দরজা জানালা সব বন্ধ। হৈমন্তীর শরীর বেশ দুর্বল,ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। গায়ে অফিসের পোশাক। হিজাব ছিল মাথায় সেটাও ঠিকঠাক আছে। হৈমন্তী মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কোথায় আছে ঠিক বুঝতে পারছে না।ও কয়েকবার ঢোক গিলে উঠে বসলো। আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো রুমটা। রুমের মালিক বেশ সৌখিন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হৈমন্তী ধীরে ধীরে উঠে বসলো। সবটা মনে হতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। সেই সঙ্গে ভয় ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। হৈমন্তী দৌড়ে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করলো কিন্তু কিছুতেই দরজা খুঁললো না। হৈমন্তী জানালা খোলার চেষ্টা করলো সেটাও বন্ধ। রুমের মধ্যে ওর আওয়াজ প্রতিধ্বনি করে ফিরে আসছে। হৈমন্তী চিৎকার চেচামেচি করতে করতে দরজা ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো। মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। কিভাবে এখানে থেকে বের হবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ খুঁট করে আওয়াজ করে দরজা খুঁলে গেলো। হৈমন্তী অবাক চোখে দরজার দিকে তাঁকিয়ে আছে।একটা মুখ ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলত। হৈমন্তীর সারামুখে ভয় ছাপিয়ে বিরক্তি আর ঘৃণা এসে ভর করলো। কারণ লোকটা ওর প্রাক্তন স্বামী ফরহাদ। এই লোকটাকে ও প্রচণ্ড ঘৃণা করে। হৈমন্তীর ইচ্ছা করলো লোকটাকে খুন করতে। চরিত্রহীন লম্পট। হৈমন্তী দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে কঠিন মুখে বলল,

> ফাজলামি করছেন আমার সঙ্গে? থাপ্পড়িয়ে গাল ভেঙে দিব বেয়াদব। আমাকে যেতে দিন।

ফরহাদের ওষ্ঠে বাঁকা হাসি। কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির আনন্দ। হৈমন্তী জিঞ্জাসু চোখে এখনো তাঁকিয়ে আছে। ফরহাদ হাসিটাকে আরও চাওড়া করে বলল,

> আজ থেকে তুমি আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে থাকবে। বউকে ছাড়া আর কতকাল একা থাকবো বলো?

হৈমন্তীর গা জ্বলে উঠলো ফরহাদের এমন খাপছাড়া কথা শুনে। ডিভোর্স হওয়ার পরে বউ বলতে লজ্জা লাগছে না। হৈমন্তী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

> তুই সত্যিই অমানুষ। লতার প্রেম উবে গেছে? তোর দেওয়া প্রতিটা আঘাত আমার মনে গেঁথে আছে। যদি কখনও মারাও যায় তবুও মনে থাকবে। তোকে ঘৃণা ছাড়া কিছুই করা যায় না।

ফরহাদ মন খারাপ করে বলল,

> ভুলে যাও না কেনো সেসব খারাপ অতীত? আমি ভূল করেছিলাম ক্ষমা চেয়েছি। তোমার উচিৎ আমাকে ক্ষমা করে সংসার করা। তাছাড়া তোমার আম্মাও চেয়েছে তুমি আমার সঙ্গে থাকো।

> কুত্তা, তুই এখুনি আমাকে দিয়ে আসবি নয়তো খুন করবো তোকে। কিসের ক্ষমা? আমি বিবাহিত, মেয়ে আছে স্বামী আছে। আমার সংসার ফেলে তোর সঙ্গে থাকবো কেনো?

> এটা একদম ঠিক না হৈমন্তী। আমি জানি ওই মেয়েটা তোমার মেয়ে না। মিথ্যা বলোনা। যদিও তোমার মেয়ে বা স্বামী থাকতো তবুও আমার কোনো সমস্যা নেই। উপর থেকে ঠিক করা তুমি শুধু আমার।

ফরহাদের কথাবার্তা শুনে হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। হাতের কাছে ফুলদানি ছিল উঁচু করে ওর গায়ে ছুড়তে গেলো কিন্তু পারলো না। ফরহাদ ছুটে এসে ওকে ধরে ফেলল। হৈমন্তীর সঙ্গে ফুলদানি নিয়ে বেশ ধস্তাধস্তি হলো। শেষমেশ ফরহাদ সফল হলো। হৈমন্তী ক্লান্ত হয়ে বসে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলল। ফরহাদ দাঁত বের করে হাসতে হাসতে ওর ওর সামনে বসে বলল,

> আগের হৈমন্তী কিন্তু এমন ছিল না। আগে কতো লক্ষ্মী হয়ে আমার হুকুম শুনতে। আশেপাশে ঘুরঘুর করতে খুব মিস করি তোমাকে। প্লিজ আগের মতো হয়ে যাও না। খুব ভালোবাসা দিবো বিশ্বাস করো।

হৈমন্তীর গা গুলিয়ে উঠলো ফরহাদের কথা শুনে। ইবলিশ শয়তানকে হার মানিয়ে দিবে এই লোকটা। হৈমন্তী নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে ধাক্কা দিয়ে ফরহাদ কে দরজার ওপাশে ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলল। ওপাশ থেকে বাধা দিলো কিন্তু হৈমন্তীর সঙ্গে পারলো না। ফরহাদ বুঝে উঠার আগেই হৈমন্তী দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি আটকে দিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,

> আমি জানি তুই আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবি না। যতদিন কেউ আমাকে উদ্ধার করতে না আসবে আমি এই রুমেই থাকবো। সহ‍্য করতে না পারলে সুইসাইড করবো তবুও তোর কাছে নিজেকে তুলে দিবো না। তোর থেকে মৃত্যু ভালো।

হৈমন্তী কথাগুলো বলে মেঝেতেই বসে কাঁদতে লাগলো। কাছে ফোনটা ছিল কিন্তু সেটা কোথায় আছে বুঝতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে হৈমন্তীর চোখ বন্ধ হয়ে আসলে। মেঝেতেই ঢলে পড়লো আর অজ্ঞান হয়ে গেলো।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে ফরহাদ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাক্কা দিচ্ছে। হৈমন্তী যে এমন একটা কাজ করবে ওর বুঝতেই পারেনি। মেয়েটার সাহস দেখে ও হতবাক। কিন্তু পাখি কতদিন দানা পানি ছাড়া ঘর বন্দি থাকবে। এক সময় না এক সময় বাইরে আসতেই হবে। তখন কোথায় যাবে? কথাটা ভেবে ও নিচে নেমে আসলো। বাড়িতে শায়লা বানু ছিলেন কিন্তু এখন নেই। তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে এসেছে। আর দেখতে যাওয়া হয়নি। ফরহাদ মায়ের ব‍্যাপারে একদম উদাসীন। যেই মা সন্তানের খুশীর জন্য কতটা বেপরোয়া ছিল সেই মাকে আজ অনাদর অবহেলায় পড়ে থাকতে হচ্ছে। বিধির লিখন আর পাপের শাস্তি খন্ডন করার সাধ‍্য আছে কার?
_____________________
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে তবুও হৈমন্তী বাড়িতে ফিরে আসেনি। জান্নাত মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে। খাওয়া দাওয়া করছে না। হৈমন্তীর ফোন থেকে আরাফাতের ফোনে একটা টেক্সট এসেছে। হৈমন্তী অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে কবে নাগাদ ফিরবে বলা যাচ্ছে না। জান্নাতকে দেখে রাখতে। নেটওয়ার্কের সমস্যা ফোন বন্ধ থাকবে। আরাফাতের কেমন খটকা লাগছে। অরিন আবিরের সঙ্গে কথা বলছিল হঠাৎ জান্নাতের কান্নাকাটি শুনে জিঞ্জাসা করলো,

> ও কাঁদছে কেনো?

> হৈমী বাড়িতে নেই ভাইয়া। অফিসের কাজে বাইরে গেছে কবে ফিরবে জানিনা। টেক্সট করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। মেয়েটা মাকে চাইছে। খুব কেঁদেছে।

> আমি আসছি তুই ওকে গেটের কাছে নিয়ে আসেক।

> কাঁদবে তো।

> কাঁদবে না তুই এখুনি বাইরে আই।

> আচ্ছা।

আবির ফোন কেটে চোখ বন্ধ করলো। হৈমন্তী মেয়েকে ফেলে অফিসে কাজে গিয়েছে কিন্তু কিভাবে সম্ভব? মেহুলের নম্বরে বাধ্য হয়ে ফোন দিলো। মেহুল ফোন রিসিভ করে ঢোক গিলে বলল,

> কেমন আছো আবির?
আবির ভনিতা রেখে সোজাসুজি জিঞ্জাসা করলো,

> তোমাদের অফিস থেকে কাজের জন্য বাইরে গেছে কতজন? কোথায় গেছে?

মেহুল অবাক হয়ে বলল,

> কিসের কাজে আবির? আমাদের এখান থেকে বাইরে কেনো কাজে যাবে? অফিসের শাখা আছে। কোনো দরকার থাকলে ওরাই করে দিয়ে থাকে আমাদের যাওয়া লাগে না। কেনো বলোতো?

> হৈমী এসেছিল অফিসে?

> হুম এসেছিল আবারও চলেও গেছে। বলল জান্নাত কান্নাকাটি করছে তাই তাড়াতাড়ি ফিরে গেছে। কেনো বলতো?

> কিছু না।

> শুনো…

আবির শুনলো না খট করে ফোন রেখে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো। সেক্রেটারি জাবেদকে ফোন দিয়ে হৈমন্তীর নাম্বার দিয়ে বলে দিলো খোঁজ করতে। মেয়েটা এমনি গায়েব হয়নি। গায়েব করা হয়েছে। নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে ইচ্ছে করছে। বেকুবের মতো ভয় পেয়ে ওরে দূরে থাকতে বলে বিপদে পড়তে হলো। মেয়েটা ভালো আছে কি আল্লাহ্ ভালো জানে। আবির আগে জান্নাতকে নিয়ে আসলো। মেয়েটা ওকে দেখলে বেশ শান্ত হয়ে থাকে। আবির বুঝতে পারছে না কথাগুলো আরাফাতকে বলা উচিৎ কিনা। পুলিশের সাহায্য নিলো। কিন্তু বারো ঘন্টা না হলে কিছুতেই কেস নিতে চাইলো না। এক সেকেন্ড টাইম যাচ্ছে না আবার বারো ঘন্টা। বিপদের মধ্যে আরেক ঝামেলা। আরশী ঘনঘন ফোন করছে বাড়িতে ফেরার জন্য। ওর মা বাবা এসেছে কিসের কথাবার্তা বলবে। আবির সাফ জানিয়ে দিলো ফিরবে না। ফোনটা চালু রাখতে হবে।
☆☆
মন খারাপ করে বসে আছে আমেনা বেগম। শরীর ঠিক লাগছে না। বড়মেয়ের বলা কথাগুলো উনাকে আঘাত করেছে। মেয়েকে সুখে রাখতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা মরার মতো বেঁচে আছে। কি করে দিবেন এই পাপের মাশুল? দুটো মেয়ের জীবন উনি নিজ হাতে নষ্ট করেছেন। কথাগুলো ভেবে উনার পেসার হাই হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর ঘামছেন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করছে। ফ‍্যানের বাতাস গায়ে লাগছে না। ছোট মেয়ের জীবনটা উনি তছনছ করেছেন। শুধু ভেবেছেন বড় মেয়ে ভালো আছে ছোট মেয়েকেও বোনের মতো ভালো থাকতে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বড় মেয়েটাই ভালো নেই। যাকে উনি আগে অহংকার ভাবতেন তাকে এখন বিষাক্ত লাগছে। মা হয়ে কিভাবে সন্তানের এমন সর্বনাশ করেছেন নিজের উপরে নিজের ঘৃণা হচ্ছে। বড় মেয়েটা না আসলে তো উনি বুঝতেই পারতেন না উনার সিদ্ধান্তগুলো কতটা খারাপ ছিল। মেয়ে দুটো দাঁতে দাঁত চেপে মায়ের দেওয়া কষ্ট সহ‍্য করে বেঁচে আছে। আর উনি চোখে পর্দা টাঙিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমেনা বেগমের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। চারদিক ঘুরছে। শরীর থরথর করে কেঁপে উনি ধপাস করে পড়ে গেলেন। চয়নিকা শাশুড়ির কাছেই আসছিল হঠাৎ শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখলো আমেনা বেগম উল্টে পড়ে আছে। ও চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডেকে নিলো। রাজীব তাড়াতাড়ি মাকে নিয়ে হাসপাতাল ছুটলো। বয়স হয়েছে হার্ট এটাক হলে রক্ষা নেই।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে : লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৮

রক্তাক্ত বটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে হৈমন্তী। চোখে আছে নেশা। এ নেশা যেমন তেমন নেশা না কাউকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে খুন করে ফেলার নেশা। হৈমী দাঁতের সঙ্গে দাঁত চেপে পায়ের আঙ্গুল দিয়ে মেঝেতে আঁকিবুকি করছে। ওর সামনে মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে ফরহাদ। লোকটাকে আরও কয়েকটা কোপ বসিয়ে দিতে পারলে শান্তি লাগতো কিন্তু হৈমী এতোটা নিষ্ঠুর না। লোকটা মরবে নিশ্চয়ই মরবে। জেনে বুঝে কোপাকুপি করা ওর সাজে না। হৈমন্তী মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে এখুনি পুলিশ আসবে ওকে ধরে নিয়ে যাবে আর ওর ফাঁসি হবে। মেয়েটার মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। মানুষ খুন করার মতো মহা পাপ টা করতে ওর একটুও বিবেকে বাঁধেনি। ধুঁকে ধুঁকে মরার চাইতে একবারে মরে যাওয়ায় ভালো মনে হচ্ছে। এতে যন্ত্রণা কম হবে। লোকটা ওর জীবনটাকে নরক বানিয়ে ছেড়েছে। শুধু নিজের ছেলেটার জন্য আফসোস হচ্ছে। ছেলেটা যদি বড় হয়ে সব জানতে পেরে ওকে ভূল বুঝে?হৈমন্তী হাতের মুঠো শক্ত করে নিজেকে বোঝালো ওর তো ফাঁসি হবে। মারা গেলে এসব এসব ভাবা অর্থহীন। ছেলে বড় হয়ে জানবে পশুর মতো অধম পিতাকে ওর মা খুন করে ফাঁসিতে ঝুলেছে। এলোমেলো চিন্তা করে ধুপ করে লোকটার পাশে বসে পড়লো হৈমন্তী। বাড়িতে কেউ নেই। নির্জন ডাইনিং রুমের মেঝেতে দুজন মানব মানবি পড়ে আছে। একজন মৃত্যু পথযাত্রী আরেকজন তার হত্যাকারী। মানুষ হয়ে মানুষকে খুন করার মতো পাপ করে ফেলেছে হৈমন্তী কথাটা মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপরে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু ওতো খুনটা এমনি এমনি করেনি। নিজের বাঁচাতে করেছে। লোকটার অপবিত্র হাতের ছোঁয়া থেকে নিজের সম্মান রক্ষা করেছে। এতে ওর কোনো দুঃখ নেই। ওতো চুপচাপ রুমেই পড়েছিল। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,

☆ হৈমন্তীর রুমের দিকে তাঁকিয়ে একের পর এক মাদক দ্রব নেশাযুক্ত তরল গলাই ঢেলে নিচ্ছে ফরহাদ। আধা ঘন্টার মধ্যে তিন বতল মদ শেষ করেছে। ভেবেছিল হৈমন্তী নিজ ইচ্ছায় বেরিয়ে আসবে কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। মেয়েটা বের হলো না। ফরহাদ বুঝে গেলো মেয়েটা জেদি,ভাঙবে তবু মচকাবে না। ওকে বাগে পেতে হলে নিজেকেই কিছু করতে হবে। অনেক কিন্তু করে ভেবে শেষমেশ নোংরা একটা বুদ্ধি মাথায় খেলে গেলো। চরম উত্তেজনাই হাত পা কাঁপাকাঁপি করছে। ঠোঁটে চোখেমুখে দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করছে। ফরহাদ একটুও সময় নষ্ট করলো না। দরজা ভাঙা কি এমন কঠিন কাজ। পাশে থাকা লোহার রডটা তুলে নিয়ে টলতে টলতে হৈমন্তীর ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। কোনো চিন্তা ভাবনা না করে অনবরত দরজায় আঘাতে পর আঘাত করতে শুরু করলো। প্রচণ্ড শব্দ শুনে অচেতন হৈমীর জ্ঞান ফিরে আসলো। ও দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসলো। ফরহাদ এমন কিছু করবে বুঝতে পারেনি। এই ভয়ঙ্কর লোকের হাত থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এক ঘন্টা পরিশ্রমের ফলাফল হিসেবে হৈমন্তীর সামনে দরজা ভেঙে পড়ে গেলো। ফরহাদের শরীর বেঁয়ে দরদর করে ঘাম বয়ে যাচ্ছে। হৈমন্তী দরজার পাশেই ছিল লোকটা ভেতরে গিয়ে বাঁকা হেসে ওকে ধরতে চাইলো। হৈমন্তী রুমের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করলো। ফরহাদ থাবা দিয়ে ওর হিজাব খুঁলে নিয়েছে। হৈমন্তী মাথায় হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে গেলো ততক্ষণে ও ফরহাদের হাতে বন্ধি। লোকটা ওর চুলের মুঠি ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে দাপট নিয়ে বলল,

> কিভাবে পালিয়ে বাঁচবি আমার হাত থেকে? ভেবেছিলাম আদর যত্ন করে তোকে কাছে রাখবো কিন্তু তুই তো ভালো কথার মানুষ না। এমন হাল করবো না তুই মুখ দেখানোর অবস্থায় থাকবি না। এসব তোর ভাইদেরকে দেখিয়ে বলল তুমি ইচ্ছে করেই আমার সঙ্গে এসে এসব করেছিস। বুঝতে পারছিস কি বলতে চাইছি?

হৈমন্তীর চুলে ব‍্যাথা লাগছে কিন্তু লোকটার বলা কথাগুলোর চাইতে অনেক কম। মানুষ কিভাবে এতোটা নিচ হতে পারে ওর ধারণার বাইরে। হৈমন্তী মনে মনে আল্লাহ্কে স্মরণ করছে। এই কঠিন সময়ে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে? কথাগুলো ভেবে ওর চোখের কোনা বেঁয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বেঁয়ে পড়লো। ফরহাদ চুল শক্ত করে ধরে নিজের মুখের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

> যত ছটফট করবি ততই কষ্ট পাবি। আপোসে কিছুই হলো না। তোর অর্ধ নগ্ন ছবিগুলোও দেখাবো তোর ভাইদেরকে। এতে কি হবে বলতো? এসবের জন্য তুই না পারবি মরতে না পারবি আমার থেকে দূরে থাকতে। তোর শেষ ঠিকানা হবে আমার পায়ের কাছে।কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। আমাকে তেজ দেখানোর চেষ্টাও করবি না। বহুদিন অপেক্ষা করেছি আর না। পেছনে পেছনে ঘুরছি বলে খুব তেজ হয়েছে।

এসব নোংরা কথা শুনে হৈমন্তী লোকটাকে ধাক্কা দিলো কিন্তু সরাতে পারছে না। চুলে টান পড়ছে তাছাড়া ফরহাদ পুরুষ মানুষ ওর কাছে শক্তিতে ও পারবে কিভাবে? যদি হঠাৎ আক্রমণ করা যায় সেটা আলাদা বিষয়। হৈমন্তী ভয় পাচ্ছে তবুও মুখ কঠিন করে উত্তর দিলো,

> তোর মতো পশুর কাছে এর চাইতে ভালো ব‍্যবহার আশা করাই যায়না। মেরে ফেলবি তো মেরে ফেল আমি তোর মতো অধমের কাছ থেকে মুক্তি পাই। আর কতভাবে মারবি আমাকে?

হৈমন্তী কাঁদছে। নেশায় বুদ হয়ে থাকা ফরহাদের কাছে সেই কান্নার কোনো দাম নেই। ওতো এই মেয়েটাকে নিজের করে পেতে চাই তার জন্য যা করার ও তাই করবে। যতটা নিচে নামা যায় নেমে যাবে। কথাটা ভেবে ফরহাদ নিজের ডান হাতটা হৈমীর মুখটা আলতো করে ধরলো। চুলের গোছা একটু আলগা হয়েছে। ফরহাদ একটু একটু করে হৈমন্তীর মুখের দিকে নিজের মুখটা সরিয়ে আনতেই হৈমী ফরহাদের পায়ে শক্ত করে একটা লাথি বসিয়ে দিলো। ফরহাদ আগেই টলছিল তাই এবার আর তাল সামলাতে পারলো না। হৈমন্তী ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে আসলো। সিঁড়ি পেরিয়ে ডাইনিং রুমে চলে এসেছে কিন্তু মেইন দরজায় তালা দেওয়া। বাইরে এসে খুব একটা লাভ হলো না। ফরহাদ ততক্ষণে দৌড়ে ওর পিছু ছুঁটে আসলো। হৈমন্তী পেছনে ফিরে কিছুক্ষণ ভেবে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু পেলো না। খোঁজাখুঁজির পরে একটা ধাঁরালো বটি পেলো সেটাই তুলে নিলো হাতে। ফরহাদ ভেবেছিল হৈমন্তীর মতো মেয়ে আর যাইহোক ওকে কোপ দিতে পারবে না। হৈমন্তীও ভেবেছিল শুধু ওকে ভয় দেখিয়ে পিছিয়ে দিবে কিন্তু লোকটা ভয় পেলো না। ওর দিকে এগিয়ে আসলো। হৈমন্তীর পিছিয়ে যেতে যেতে শেষপর্যন্ত কোপটা ফরহাদের কাধ বরাবর বসিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা ফ্লোরে পড়ে গেলো। হৈমন্তীর ইচ্ছা ছিল আরো কয়েকবার কপ দেওয়ার কিন্তু সাহস করতে পারলো না। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না।

বতর্মান হৈমন্তী এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে ফরহাদের দিকে। এতো দিনের দুঃখ যন্ত্রণার মূল হোতাকে নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছে। হৈমন্তী বটিটা পাশে রেখে হাত দুটো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। হাতে কোনো রক্ত নেই তবে সাদা পোশাকে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাঁগ। ফ্লোরে রক্তের স্রোত। লোকটা মরছে না কেনো হৈমন্তী বুঝতে পারছে না। তবে ওর চোখেমুখে বাঁচার জন্য আকুতি। হঠাৎ দরজা ভাঙার শব্দে হৈমন্তী নড়েচড়ে বসলো। তবে উঠলো না যেভাবে ছিল সেভাবেই বসে থাকলো। আসুক পুলিশ হৈমন্তী সবাইকে সবটা বলে দিবে। ফাঁসির ভয় পাচ্ছে না হৈমী।
☆☆
দরজা ভেঙে ভেতরে এসে হতবাক আবির। হৈমন্তী সামনে ফরহাদ ছটফট করছে। মেয়েটা বটি হাতে নির্বাক মুখে বসে আছে। মনে হচ্ছে ওর চোখদুটো ফরহাদের দিকে আটকে গেছে। এলোমেলো চুলগুলো পিঠের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পোশাকের ঠিক নেই। আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। বিষয়টা বুঝতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। মেয়েটার গায়ে ওড়না নেই। আবির দ্রুত গিয়ে হৈমন্তীর হাত থেকে ধারালো অস্ত্রটা ফেলে দিয়ে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলো। হৈমন্তী প্রতিবাদ করলো না। চুপচাপ আবিরের বুকের সঙ্গে মিশে থাকলো।মনে হচ্ছে মেয়েটার কোনো আবেগ অনুভূতি নেই। চোখের পাতা পযর্ন্ত নড়ছে না। দূরে দাঁড়িয়ে আছে জাবেদ। ওর চোখ বিস্ময়। হৈমন্তীকে এভাবে দেখবে আশাকরেনি। আবির হৈমন্তীকে দাঁড় করিয়ে জাবেদকে ঈশারা করে ডেকে নিয়ে বলল,

> দ্রুত ব‍্যবস্থা করো। প্রমাণ যেনো না থাকে।

জাবেদ মাথা নাড়িয়ে বলল,

> মনে হচ্ছে মরেনি। কাঁধে লেগেছে হাসপাতালে নিলে বাঁচানো যাবে তবে পরে সমস্যা হতে পারে। কি করবো?

> সদর হাসপাতালে না।ওকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নাও। বিষয়টা একদম গোপন রাখবে। পরে ভাবা যাবে ওকে দিয়ে কি করবো। দ্রুত করো জাবেদ। আমি আসছি।

আবির আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত হৈমন্তীর হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে আসলো। মেয়েটার পায়ের সঙ্গে পা লেগে যাচ্ছে তবুও আবির শুনছে না। সিনেমার মতো কোলে নিয়ে দৌড় দিতে পারলে ভালো হতো কিন্তু সেটা সম্ভব না। আবির ওকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পড়লো। আপাতত মেয়েটাকে স্বাভাবিক করতে হবে। অতিরিক্ত রক্ত দেখে ভয় পেয়েছে। আবির অবাক হচ্ছে একটা মেয়ে কতটা নিরুপায় হলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের সন্তানের পিতাকে খুন করতে চাই। ভাবতে পারলো না। হৈমন্তী গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। আবির ড্রাইভ করছে আর কিছুক্ষণ পরপর হৈমন্তীর মুখের দিকে তাঁকিয়ে দেখছে। জাবেদ সিসি ক‍্যামের ফুটেজ আর হৈমন্তীর ফোনের লোকেসন দেখে জানানোর পরে দুজন মিলে এখানে ছুটে এসেছে। জান্নাতকে ঘুম পাড়িয়ে অফিসের একটা রুমে রেখে এসেছে। রাতে মেয়েটা তেমন সজাগ হবে না তবুও পাশে একটা লোক রেখে এসেছে। হোটেলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সময় পাইনি তার আগেই এখানে আসতে হলো। গাড়ি চলছে অফিসের দিকে আপাতত নিরাপদ স্থান বলতে ওর অফিস ছাড়া কিছু পাচ্ছে না। আফিসের সঙ্গেই একটা ফ্লাট আছে যেটা আবির কয়েকদিন হচ্ছে ঠিক করেছে। আপাতত সেখানেই হৈমন্তী থাকবে। আবির ওকে নিয়ে রুমে চলে আসলো। রাস্তায় থাকতেই অফিসের সামনে থাকা সিসি ক‍্যামেরাটা বন্ধ করতে অর্ডার দিয়ে দিয়েছিল। মেয়েটার পোশাকের কথা ভেবে একজনকে একটা কাপড় কিনতে পাঠিয়েছিল কিন্তু হৈমন্তীর গায়ের সঠিক মাপ জানেনা বিধায় শাড়ি কিনে দিয়ে গেছে।

☆☆
এলোপাথাড়ি শাড়ি পড়েছে হৈমন্তী। হাত কাঁপছিল তাই ভালো করে পরা হয়নি। কোনোরকমে জড়িয়ে রেখে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে হৈমন্তী। আবির ওর সামনে বসে এক দৃষ্টিতে হৈমন্তীকে দেখছে। মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা উচিত কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। হৈমন্তী নিজ থেকে কিছুই বলছে না মেয়েকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে উঠছে। চোখ দিয়ে পানির ঝরছে আর মাঝেমাঝে নিজের হাতটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। আবির আর চুপ থাকতে পারলো না ভ্রু কুচকে বলল,

> শয়তানের মরন নেই এতো হাত দেখার কিছু হয়নি। বেঁচে আছে এখনো। মরবে না।

হৈমন্তী অবাক চোখে আবিরের দিকে তাঁকালো। আবির চোখের পাঁপড়ি নেড়ে বলল,

> অবাক হওয়ার কিছু হয়নি। জাবেদ ফোন দিয়েছিল, একটা কোপে মরার মতো লোক ফরহাদ না। তবে বেশ ভুগভে। চিন্তা করোনা ওকে বাঁচতেও দিবো না আবার মরতেও দিবো। ভেবেছিলাম সেবারের ধোলাই খেয়ে মাথা থেকে ভূত নেমে গেছে। ভেবো না আমি সব সামলে নিব।

হৈমন্তী কিছু বললো না। ফরহাদের বলা প্রতিটা কথা ওর মনের মধ্যে গেঁথে আছে। লোকটা মরলেই ভালো হতো। ঘৃণা হচ্ছে নিজের উপরে। দুমাস ওই লোকটার সঙ্গে কিভাবে ছিল আল্লাহ্ ভালো জানে। চোখ দুটো জ্বলছে। পেটে দানা পানি পড়েনি। আবির বাইরে থেকে খাবার নিয়ে ওর সামনে রেখে বলল,

> খেয়ে নাও। তোমার নাম্বার থেকে আরাফাত ভাইয়াকে টেক্সট করা হয়েছিল তুমি অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছো। জান্নাত কান্নাকাটি করছিল তাই ওকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছি। আমার সন্দেহ ছিল তাই মেহুলের থেকে জানতে পারলাম তুমি কোথাও যাওনি। তারপর খোঁজ নিয়ে বুঝলাম ফরহাদের কাজ।

হৈমন্তী ছলছল চোখে বলল,

> লোকটা খুব নোংরা। আমাকে বাজে বাজে কথা বলছিল বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে এসব করিনি। ও আমার সঙ্গে জোরজবরদস্তি করছিল। বলছিল আমার খারাপ ছবি তুলে ভাইয়াদেরকে….

আবির ভ্রু কুচকে মুঠো শক্ত করে বলল,

> যা হয়ে গেছে সেসব বলে কি লাভ? ভূলে যাও তোমার সঙ্গে কিছু হয়েছিল।

আবির খাবার রেখে বাইরে বেরিয়ে গেলো। দরজা ধপাস শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেলো। হৈমন্তী আরেক দফায় হু হু করে কেঁদে উঠলো। কপালে দুঃখ ছাড়া সুখের দেখা কি কখনও মিলবে না? এতকিছুর পরেও কেনো দুঃখ ওর পিছু লেগে আছে কে জানে। হৈমন্তীর মনে প্রথমবার ভয় করে উঠলো আবির কি ওকে ভূল বুঝলো? আবির তো ভাবতেই পারে লোকটা ওর সঙ্গে খারাপ কিছু করছে। কথাটা ভেবে ও অস্থির হয়ে উঠলো। খাবার মুখে যাচ্ছে না। কয়েক মিনিট পরে আবির হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে এসে বসলো। চুপচাপ প‍্যাকেট থেকে খাবার নামিয়ে হৈমীর সামনে এসে বসলো। হৈমন্তী বুঝতে পারলো না আবিরকে কথাটা কিভাবে বলবে। ওর ধ‍্যান ভাঙলো চোখের সামনে খাবার দেখে। আবির ওর মুখের সামনে ভাত মেখে ধঁরে রেখেছে। হৈমন্তী উপায়ন্তর না দেখে মুখে পুরে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

> লোকটার আমার সঙ্গে অসভ্যতামি করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। আমি ওকে কাছে আসতেই দেয়নি। যখন ও…

আবির চোখ বড়বড় করে ধমক দিয়ে বলল,

> শুনতে চেয়েছি? বারবার সেই এক কথা। হৈমী আমি নাবালক না বুঝি সব। তাছাড়া আমাকে তুমি অল্প বয়সী ছেলে ছোকরা পেয়েছো? আমার বিশ্বাস এতোটা ঠুনকো না এসব আজেবাজে চিন্তা আমি ভাবতেও পারিনা। পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা আবিরের আছে। শুনো পৃথিবী বড়ই কঠিন জায়গা। ভালো থাকার ইচ্ছা না থাকলে ভালো থাকা যায়না। তুমি কখনও চেষ্টা করেছো বলে তো মনে হয় না। চেষ্টা করো ভালো থাকার আর আশেপাশের মানুষকে ভালো রাখার। খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে যাবে আমার কাজ আছে।

আবির একদমে কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তী আর কথা বললো না। চুপচাপ খেয়ে জান্নাতকে নিয়ে বিছানায় চলে গেলো। আবির সব গুছিয়ে নিয়ে ল‍্যাপটপ হাতে নিয়ে বাইরে বের হলো। মাথায় নানারকম চিন্তা ঘুরছে। ফরহাদ কি আসলেই ওর বাবার খুনি? ফরহাদ তো শুধু হৈমন্তীকে চেয়েছিল তাহলে ওর বাবাকে মারার পেছনে ওর কি স্বার্থ ছিল? তাও আবার ওর বাড়িতে গিয়ে । প্রশ্ন :এসবের পেছনে কার হাত, ফরহাদ নাকি অন‍্য কেউ?

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।