#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
রান্না ঘরের এপাশ ওপাশ ভালো করে দেখে নিলো জবা। সবকিছু খুব সুন্দর করে গুছানো এতো সুন্দর গুছানোর আড়ালে কিছু একটা চোখে পড়লো জবার। ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে কাজে মন দিল।
ক্যামেরার আড়ালে এই হাসি চোখে পরলো না কুলসুম বেগমের। উনি ল্যাপটপে তাকিয়ে আছেন জবার দিকে। রান্না ঘরে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে গিয়ে ছিলেন দেখতে কে জবাকে হেল্প করছে।
এই মেয়ে আশার পর থেকে এক এক করে এই বাড়ির সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষ থেকে শুরু করে সম্পর্ক। অথচ এর দিকে তাকালে মনে হয় সর্গের পরী নেমে এসেছে! কে এই মেয়ে.?
জবা লতিকা কে জিজ্ঞেস করে নিলো কি রান্না করতে হবে।
লতিকা সব বিদেশি রান্নার নাম নিলো। সব কুলসুম বেগমের শিখিয়ে দেওয়া। জবা গ্রামের মেয়ে এইসব রান্নার নাম ত মনে হয় এই জীবনে শুনেনি আর রান্না করা ত দূরেই কথা।
আজ এই একটা বাহানায় কুলসুম বেগম জবা কে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন শায়েলা কিছু বলার সুযোগ পাবে না। হঠাৎ মনে হলো না বের করবে না লতিকার একটা দেবর ছিল যে সারাদিন চুরি করে রাত হলে মদ খেয়ে নেশা করে পরে থাকে। ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে এটাই সবচেয়ে ভালো শাস্তি হবে।
কুলসুম বেগমের মস্তিষ্ক বলে উঠলো, ‘ চৌধুরী বাড়ির বড় বউ কিনা একজন নেশাখোর কে বিয়ে করবে! এত অধপতন কিভাবে হলো এই বাড়ির.? লোক জানলে কি হবে.? মিডিয়া হতে শুরু করে সব তখন এক নিউজ নিয়ে মেতে উঠবে সুযোগ পাবে শত্রু পক্ষে অনেক কিছু ভাবা উচিত ! ‘
কুলসুম বেগম মস্তিষ্কের কথা শুনলো বাদ দিলো লতিকার দেবরের কথা। আবার মনে হলো শায়েলা যদি সত্যি ওকে ছেলের বউ করে রেখে দেয়? আমার ছেলেকে যে খু’ন করেছে তাকে আমি কিভাবে চোখের সামনে সহ্য করবো!.? ওর জন্য, ওর জন্য আজ আমার ছেলে আমার কাছে নেই। ওর ভুলাবালা চেহারার আড়ালে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে আর সেটা কি.? ওর চাহারায় আমি কারো প্রতিচ্ছবি দেখি!
কুলসুম বেগম চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে কারো তীরের মতো ধারালো চোখ, বার বার ঠোঁটের কোনে বিজয়ী হাসি, কথার ছুরি, হাঁটা চলা চোখের সামনে ভেসে উঠলো৷ কুলসুম বেগমের চোখ থেকে নিজের অজান্তে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। বুকের ভেতর জ্বালা পুড়া করছে এক গ্লাস পানি খেয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে চেয়ারে বসে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো। স্পষ্ট ভাবে বলে উঠলো ” মায়া”
জবা রান্না ঘরে এসেই সতর্ক চোখে চারপাশ তাকিয়ে ছিলো সাথে সাথে ছোট ক্যামেরা চোখে পড়েছে। কুলসুম বেগম যে এতোটা বোকা এটা ভাবতেই হাসি পেলো জবার।
জবা নিজের হাতের মোবাইল ঘড়ির সাহায্যে কাউকে কল দিলো।
খুব সাবধানে সবকিছু রান্না শেষ করলো। রান্না শেষ করে হাতের দিকে তাকালো হাত অনেক জায়গা কেটে গেছে, শাড়ির দিকে তাকালো সাদা শাড়ি অথচ এক ফোঁটা ময়লার ছিটেফোঁটা ও নেই। এতো এতো রান্না সে এক হাতে করেছে কেউ দেখলে কখনো বিশ্বাস করবে না।
দুপুরে লতিকা সবার জন্য খাবার টেবিলে সাজালো।
শায়েলা সিদ্দিকী কোথাও গিয়ে ছিলেন দুপুরে এসে টেবিল টেনে সবাই কে ডাকলেন।
শায়েলা সিদ্দিকীর শাশুড়ীর জন্য খাবার উপরে পাঠিয়ে দিলেন। বয়স হয়ে এসেছে সারাদিন নিজের রুমে নামাজ কালাম করেন সাথে যতো আমল করা যায় করার চেষ্টা করেন দিন দুনিয়ার কোনো খবর তেমন তিনি রাখেন না।
শার্লিন বিনুনি ঘুরাতে ঘুরাতে সবকিছু ভালো করে দেখে বললো,’ বড় ভাবি নিশ্চয়ই আজকে আসবেন সবকিছু ঠিকঠাক ত.?’
শায়েলা সিদ্দিকী সবকিছুর দিকে তাকিয়ে বললো,’ সবকিছু ঠিকঠাক এতো আয়োজন কেউ কি আসবে ভাবির সাথে.? ‘
শার্লিন ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ আজ রান্না কে করেছে জানো.?’
শায়েলা সিদ্দিকী ~ কে.?
শার্লিন ইশারায় জবার রুম দেখিয়ে বললো,’ এই মেয়ে ‘
প্রথমে কথাটা শায়েলা সিদ্দিকীর বিশ্বাস হলো না লতিকা পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ হ মেঝো আপা ছোট সাহেবা ঠিকই বলতেছে।’
শায়েলা অবাক দৃষ্টিতে খাবারের আইটেম গুলোর দিকে তাকালো।
খাবারের টেবিলে সবাই বসে আছে।
বেলী কলেজ থেকে এসেই বলছে ভীষণ খিদে পেয়েছে আম্মু।
বেলী, আয়ান পাশাপাশি বসে আছে অভ্র হসপিটালে।
শার্লিন মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে।
খাবারে কোনো ভুল খুঁজে পেলো না কুলসুম বেগম। খাবার মুখে দিয়ে কিছু সময় চুপ করে রইলেন একবার আড়চোখে তাকালেন শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে।
শায়েলা সিদ্দিকী স্বামীর জন্য খাবার টিফিন করে দিচ্ছেন কাজের ব্যাস্ততার জন্য বাড়িতে আসতে পারেননি।
আয়ান খাবার মুখে দিয়ে বললো,’ যাক লাস্ট পর্যন্ত এই বাড়ির খাবারের স্বাদ ফিরে আসলো। এই কয়েকদিন ত আমার খাবারের রুচিই চলে গিয়ে ছিলো।’
লতিকা মুখে হাসিহাসি ভাব ফুটিয়ে বললো,’ আয়ান বাবাজী আজকার খানা ত আমগো বড় স্যারের বউ বানাইছে।’
আয়ান প্রথম লতিকার কথা বুঝলো না তবে জবার বলা সকালের কথা মনে হতেই বললো,’ রান্না ঘরের দায়িত্ব মানে জবা.?’
লতিকা বত্রিশটা দাত বের করে বললো,’ হ ওই জবা না টবা ওই মাইয়ায়’
বেলী বিরক্ত হয়ে বললো,’ লতিকা তুমি হয় সম্মান দিবে না হয় অসম্মান তবে একবার বড় স্যারের বউ আরেকবার ওই মাইয়া বলে অপমান করো না। আমি তোমাকে সম্মান করি বলে বুঝিয়ে বললাম। শত হলেও সেই ছোট থেকে আমাদের লালন পালন করেছো জবাও আমাদের মতো তোমার সন্তানের বয়সী তার উপর তোমার স্যারের বউ ছিল। আসিফ ভাই তোমাকে অনেক হেল্প করতো। ‘
লতিকা গালে হাত দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তবা তবা বেলী আম্মা বড় স্যারের বউরে আমি অসম্মান করমু এতবড় সাহস আমার! স্যার নাই ত কি হইছে আমার মেলা মায়া লাগে স্যারের বউয়ের লাইগা। এত সুন্দর একটা মাইয়ার দিকে তাকালেই মনডা ঠান্ডা হইয়া যায়…
কথা বলতে বলতে লতিকা চোখ মুছল। লতিকা ভুলেই গেলো সে কুলসুম বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কুলসুম বেগম রাগী চোখে লতিকার দিকে তাকিয়ে আছে। লতিকা ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে রাখলো।
_______
অভ্র এসেছে অনেক রাত করে। আজ প্রথম দিন ওর উপর দিয়ে এতো এতো প্যারা গিয়েছে।
লতিকা দরজা খুলে দিলো।
অভ্র ক্লান্ত শরীরের হেলেদুলে নিজের রুমে যাওয়ার আগে সিঁড়ির পাশে নিষিদ্ধ ঘরটার দিকে তাকালো। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
কুলসুম বেগম ছেলের রুমে এসে রুমটা সুন্দর করে গুছিয়ে বসলেন।
অভ্র মা কে দেখে হাল্কা হাসলো।
কুলসুম বেগম বসে কিছু সময় হসপিটালে কেমন কাটলো প্রথম দিন শুনলেন।
অভ্র মায়ের চোখে আজ সেই কঠিনত্য দেখতে পেলো না। মনে হলো এই মানুষটার চোখে মুখে মায়া ছাড়া আর কিছু নেই।
অভ্র মায়ের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,’ ঠিক আছো আম্মু.?’
কুলসুম বেগম হাল্কা হাসলেন। ছেলের হাতে হাত রেখে বললো,’ তোমার মা ভীষণ কঠিন মানুষ তাই না.? খুবই খারাপ!
অভ্র~ এমনটা কেন বলছো আম্মু.?
~ আমি ত তেমনি তাই না অভ্র.? তোমার বাবাও ত সেই জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে ছিলো আর আমার আসিফ, তোমার ভাই ও ত অভিমান করে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে আমি আমার ছেলেকে শেষ একটু ছুঁয়েও দেখতে পারলাম না! এই হাত গুলো দিয়ে তাকে মানুষ করে ছিলাম, ছোট ছোট হাত পা নাড়িয়ে সে কোলে উঠতে চাইত,মা মা বলে গলায় জড়িয়ে ধরতো। সেই ছেলেটা বড় হলো আমার বাধ্য ছেলেটা কেমন অবাধ্য হয়ে গেলো তাও সে থেকে যেত! সে মা কে না বলে ত বের হতো না, সেই ছেলে মা কে ভুলে বউকে সেই জায়গা দিয়ে বসলো৷ আমি বুঝলাম আমার ছেলে আর আমার নেই কাউকে বলতে পারছিলাম না, সহ্য করতে পারছিলাম না তাও যদি সে থেকে যেতো। ওই মেয়েটা আমার ছেলেকে জাদু করে ছিল তাই না অভ্র.? চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে কুলসুম বেগমের।
অভ্র সারাদিনে ভীষণ ক্লান্ত ছিলো মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,’ তুমি আজ মেডিসিন কেন খাওনি.? মেডিসিন খেলে এইসব উল্টা পাল্টা চিন্তা মাথায় ঘুরতো না। চলো মেডিসিন খেয়ে লক্ষী মায়ের মতো ঘুমিয়ে পড়বে।’
কুলসুম বেগম চোখ মুছে বললো, ‘ আমি ঠিক আছি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি.?’
‘ তুমি ঠিক আছো আমিও দেখতে পাচ্ছি তবে এখন তোমার রেস্ট দরকার। ‘
কুলসুম বেগম কিছু কথা বলে নিজেই চলে গেলেন।
অভ্র বিছানার শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে পরলো সকালের সেই চাহনি, মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া দৃশ্য।
আয়ান আজ সেই দুপুরে চলে এসে ছিল জবা কে নিয়ে বের হবে। প্রথম দেখায় সে জবার প্রেমে পড়েছে।
দুইদিন আগে ভাবিকে মায়ের জায়গায় বসানো ছেলে আজ তাকেই বউ বানানোর জন্য ছটফট করছে কি আজব তাই না.??
আয়ান সিঁড়ি দিয়ে চুপিচুপি নেমে জবার রুমের সামনে দাঁড়াতেই দরজা খুলে গেলো। জেনো জবা অপেক্ষায় ছিল, সে জানতো আয়ান আসবে।
আয়ান অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
জবার চুল বিনুনি করা, সাদা শাড়ি, মুখে কোনো সাজসজ্জা নেই কি স্নিগ্ধ শান্ত একখানা মুখ। যার দিকে তাকালে হাজার বছর তাকিয়ে থাকা যায় ক্লান্তি আসে না।
আয়ান হ্যা করে তাকিয়ে রইলো। কি আজব একজন পুলিশ অফিসার এভাবে থমকে যায়! কিছু বলতে গিয়ে গলায় আঁটকে যায়! ভয় হয়৷ এই শান্ত মুখটার দিকে তাকালে ভুলে যায় সে কি বলতে এসেছিল!
জবার কঠিন মুখে হাল্কা হাসি ফুটলো।
এই প্রথম মনে হলো আয়ান কারো হাসি দেখেছে! বুকে হাত দিয়ে বুঝলো হার্টবিট বেড়ে গেছে হার্ট অ্যাটাক করে বসবো না ত!.?
আয়ান নিজেও বোকা বোকা হাসি দিয়ে একটা চকলেট জবার দিকে এগিয়ে দিলো।
‘ আমাকে বাচ্চা মনে হয়.?’
আয়ান বোকার মতো চকলেটের দিকে তাকিয়ে বললো,’ মেয়েরা ত সব সময় বাচ্চা থাকে, বাচ্চাদের চকলেট, চিপস এটাসেটা খেতে চায়’
‘ বাহ্ মেয়েদের বিষয় ত ভালোই জানেন’
আয়ান চকলেট টা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো, ঘার ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি সত্যি মেয়েদের বিষয় তেমন জানিনা। একমাত্র বেলীর সাথেই একটু কথা ঝগড়া হয় আর তেমন কোনো মেয়ের সম্পর্কে জানানেই।’
জবা কিছু বলার আগেই আয়ান জবার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, ‘ তবে আপনাকে জানতে চাই!’
অভ্র রুম থেকে বের হয়ে ছিলো ফ্রিজ থেকে পানি নিতে। নিচে এসে জবা আর আয়ান কে এক সাথে দেখে জবার দিকে তাকিয়ে রইলো।
জবা অভ্র কে দেখেও তেমন কোনো রিয়াকশন দেখালো না। অচেনা কেউ,ভীষণ অচেনা কখনো দেখা হয়নি এমন ভাবে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল, আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার চকলেট.? ‘
কি আজব একটু আগে বাচ্চা নই বলা মেয়েটা এখন চকলেট খুঁজছে। একটা মানুষের রুপ কয়টা.? এই জন্যই বুঝি বলা হয় ” নারী তুমি বহুরূপী! ”
আয়ান জলদি পকেট থেকে চকলেট বের করে জবার হাতে দিলো।
জবা আয়ানের সামনে চকলেট ছিঁড়ে মুখে দিলো।
অভ্র হাতের মুঠোয় শক্ত করে গ্লাসটা ধরে রেখেছে।
বাড়িতে এসেছে অভ্র আজ দশদিন অথচ একবার এক মুহূর্তের জন্য জবার সাথে কথা হয়নি। বলা কি উচিত.? জবা কে দেখে ত মনে হয় জবা ওকে চিনে না! জবা কি ভুলে গেছে ? মনে রাখারও ত কথা নয়! ওর রক্তজবার সাথে এই জবার ত কোনো মিল নেই। ওর রক্তজবার মুখের রক্তাক্ত হাসি কারো হৃদয় রক্তাক্ত করার ক্ষমতা রাখে।
অভ্র আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আয়ান এতো রাতে এখানে.? ‘
আয়ান অভ্রর থেকে সাত দিনের বড়। অথচ আয়ান মনে করে এটা সাত বছরের।
আয়ান চোর ধরা পরার মতো অভ্রর পাশে এসে দাড়ায়।
জবা আস্তে করে অভ্রর চোখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিলো।
এই চোখেই বুঝি সবার সর্বনাশ লেখা!.?
___________
সেই ফজরের নামাজ পড়ে নাস্তা বানানো শুরু করেছে জবা। একা হাতে অথচ চোখে মুখে ক্লান্তি নেই! চোখে মুখে শুধু নিরবতা…
শায়েলা সিদ্দিকী কয়েকবার চেয়েছেন হেল্প করতে। কুলসুম বেগমের উপর ভীষণ রাগ হলেও কিছু বলতে পারছেন না।
বেলী মায়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ আমার শাশুড়ী যদি এমন হত এতদিনে একদম সোজা করে ছেড়ে দিতাম। ‘
অথচ মনে মনে বলে উঠলো, ‘ একবার অভ্রর সাথে আমার বিয়ে হোক এই দজ্জাল শাশুড়ী কে যদি আমি সোজা না করছি আমার নামও বেলী না। জবাকে দিয়ে করানো সবকিছুর সুধআসলে নিব!’
জবা নাস্তা বানানো শেষ করে রান্না ঘর থেকে বের হতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
লতিকা ত চিৎকার চেচামেচি করে সবাই কে ডাকতে শুরু করলো। ভয় পেয়ে গেলো কুলসুম বেগম। উনি শুধু প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে কারো মৃত্যু নয়!
আয়ানও নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলো। শায়লা সিদ্দিকী জবার চোখে মুখে পানি ছিটা দিলেন কোনো লাভ হলো না।
আয়ান কোলে নিতে চাইলে কোথায় থেকে এসে অভ্র জবাকে কোলে নিয়ে চলে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্য।
পুরোটা সময় সবাই তাকিয়ে রইলো কেউ কিছু বলার সুযোগ ও পেলো না। কুলসুম বেগম থমথমে মুখে বসে রইলেন সোফায়।
জবা কে নিয়ে ফিরলো অভ্র সাথে বেলী, আয়ান ও আছে।
শায়েলা সিদ্দিকী জবাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ এখন কেমন আছো.?’
জবা কোনো উত্তর দিলো না সোজা নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
রাগে জ্বলে উঠলো শার্লিন বেগম।
‘ দেখলেন ভাবি মেয়ের তেজ কেমন! শুধু শুধু ত বড় ভাবি এরে সহ্য করতে পারে না! ‘
‘ আহ্ ছোট এখনো তোর ওর পিছে লেগে থাকতে হবে,হয়তো ভালো লাগছে না তাই চলে গেছে’
শার্লিন মুখ ভেংচি মেরে বললো,’ আহ্ যত আদর ভালোবাসা তোমার! একদিন না এই আদর ভালোবাসা তোমার কাল হয়ে দাঁড়ায়! ‘
অভ্র মায়ের সামনে একটা কাগজ রেখে বললো,’ পড়ে নাওও’
কুলসুম বেগম রেগে ছিলেন। হসপিটাল নিতে হলে অন্য কেউ ছিল!
তাও একবার কাগজের দিকে তাকিয়ে দ্রুত হাতে তুলে নিলে সেখানে স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে ” জবা প্রেগন্যান্ট!.? ”
কুলসুম বেগম মাথায় হাত দিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলেন,’ অভ্র মেয়েটা প্রেগন্যান্ট!.? ‘
কুলসুম বেগমের দিকে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
আর আয়ান.? আয়ানের মনে হলো দুনিয়াটা ঘুরে গেছে.. সদ্য প্রেমে এত বড় ছ্যাখা.?
কুলসুম বেগম কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো কাগজটার দিকে। কাল রাতে অভ্রর সাথে লাস্ট কথাগুলো জবাকে নিয়ে ছিলো। উনি বলেছিলেন লতিকার দেবরের সাথে জবার বিয়ে দিবেন এই ঝামেলা আর কাঁধে রাখতে চান না এর বিপরীতে অভ্র কিছুই বলেনি। অভ্র লতিকার দেবরের বিষয় সবকিছু জানতো তাও বলেছে তোমার ইচ্ছে আম্মু, তোমার উপর কারো কথা নেই অথচ আজ শুনছে উনার নাতি-নাতনী আসতে চলেছে। এতো এতো কঠিনত্বরের সত্যেও কুলসুম বেগমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
” আমার আসিফ বাবা হবে অভ্র ”
অভ্র কিছু না বলে মায়ের পাল্টে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। কঠিন মানুষটা এই একটা কথায় কেমন বরফের মতো গলে গেছে, চোখে মুখে আনন্দ জ্বলজ্বল করছে।
মানুষ এমন কেন.? এই যে ছেলের বউ মানতে রাজি নয়! অন্যের মেয়ের প্রতি এতো নিষ্ঠুরতার আচরণ অথচ নিজের বংশের প্রদীপ আসবে শুনতেই চোখেমুখে এতো আনন্দ! তাকে মানতে রাজি নয় অথচ তার ভেতরের মানুষটাকে আপন করে নিতে কোনো আপত্তি থাকে না!
অভ্র এতোকিছু ভাবতে ভাবতে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আর একবার কাগজের দিকে তাকালো, তাকালো বন্ধ হয়ে থাকা নিষিদ্ধ দরজার দিকে…
ফিসফিস করে বলে উঠলো ” সরি আম্মু, আজ এমনটা না করলে তোমার একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নিজেই আপসোস করতে হতো আমৃত্যু, হয়তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতে না আমি ছেলে হয়ে মায়ের এমন ভুল কিভাবে করতে দেই!”
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।