শেষ থেকে শুরু পর্ব-০৮

0
620

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

খাবার টেবিলে সবাই খোঁজ করলো জবার।
কুলসুম বেগম কঠিন কন্ঠে ডাকলেন লতিকা কে। লতিকা ভয়ে ভয়ে সামনে আসলেন।
বাড়িতে মেহমান আছে তাদের সামনে বকা খাওয়ার ভয়ে ভীতু হয়ে রইলো লতিকা।
কুলসুম বেগম বললেন,’ জবা কে ডেকে নিয়ে আসো!’
লতিকা দ্রুত চলে গেলো জবা কে ডাকতে।

বেলী জবার রুমে এসেছিল জবাকে নিতে অথচ রুমের ভেতর থেকে দরজা লাগানো দেখে কয়েকবার ডাকলো। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো। জবার কিছু হয়েছে.? ভাবতে ভাবতে মাথায় আসলো জবা ত প্রেগন্যান্ট ওর কিছু হয়নি ত.? বেলী মাথা থেকে একটা ক্লিপ খুলে খুব সাবধানে দরজা খুলে ফেললো। ভেতরে এসে আরও অবাক হলো কোথাও কেউ নেই। জবা কোথায়.? এর মধ্যে বুঝলো কেউ রুমে আসছে বেলী দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো।

লতিকা দরজা খোলা দেখে রুমে ঢুকে জবা কে ডাকতে শুরু করলো। ওয়াশরুমে পানির শব্দে বুঝলো জবা ওয়াশরুমে লতিকা জবা কে ঢেকে বললো,’ বড় ম্যাডাম বলছে তারাতাড়ি খাওনের টেবিলও আইতেন আমি গেলুম!’

লতিকা চলে যেতেই লম্বা একটা শ্বাস ফেললো বেলী। আজ ত একটা কেলেঙ্কারি ঘটে যেত এখন৷ ভেতর দিয়ে দরজা লাগানো অথচ ভেতরে জবা নেই। কোথায় গেল.? আর কিভাবে.? বেলী ভেতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে ভেতরে জবা সেজে বসে রইলো কেউ জেনো বুঝতে না পারে জবা বাড়িতে নেই। আর অপেক্ষা করতে লাগলো জবার।

দ্রুত পাইপ দিয়ে উঠতে গিয়ে হাত কিছুটা কেটে গেছে জবার তার উপর বাগানে কেউ বলে উঠলো ” চোর!চোর! পাইপ বেয়ে চোর বাড়িতে ঢুকে পরেছে!”

জবা ভয়ে নিজের রুমের ব্যলকনিতে না গিয়ে অভ্রর ব্যলকনি দিয়ে ওর রুমে ঢুকে পরলো।

অভ্র মাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে ভেজা শরীরে। কোমরে ভারী তোয়ালে জড়ানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

জবা এক ঝামেলা থেকে বাঁচতে আরেক ঝামেলায় এসে পরলো। অভ্রর শরীরের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ খিটে এক চিৎকার দিল অভ্র নিজেও ভয় পেয়ে গেলো৷
বাড়িতে চোর ঢুকেছে তাও আবার পাইপ বেয়ে সেই চিৎকার চেচামেচির জন্য কেউ খেয়াল করলো না অভ্রর রুম থেকে মেয়েলী কন্ঠের চিৎকার তবে পাশের রুমটা ত জবার সেখানে বেলী আছে। বেলীর কানে ঠিক গেলো অভ্রের রুম থেকে জবার চিৎকার।

অভ্র জবার মুখ চেপে ধরে আছে। জবা দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে ওর এক হাত দেয়ালে শক্ত করে ধরে আছে অভ্র অন্য হাতে মুখ।

জবা মাথা নাড়তে লাগলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
অভ্র বলে উঠলো, ‘ একদম শব্দ করবে না! এমন বানরের মতো ব্যলকনি দিয়ে কোথায় থেকে এসেছো.?’
জবা রাগী চোখে তাকালো। মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে প্রশ্ন করে তাহলে উত্তর কিভাবে দিব.?’

অভ্র উত্তরের অপেক্ষা করতেই জবা অভ্রর হাতে কামড় বসিয়ে দিল।
অভ্র হাত সরিয়ে নিলো, হাত চেপে ধরে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বললো, ‘জংলী বিড়াল!’

জবা কোমড়ে দুই হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ প্রথম বলেছেন বানর এখন বলছেন জংলী বিড়াল আপনি নিজে কি হে.? নিজে ত একটা.. অভ্রর দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে গেলো।’
‘ কি হলো.? বলো আমি কি.?’
জবা তোতলাতে তোতলাতে বললো,’ আপনি,আপনি একটা নির্লজ্জ বেয়াদব লোক, লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই একটা মেয়ের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন!’
অভ্র হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো দাঁত বসে গেছে। শুধু শুধু ত জংলী বিড়াল বলেনি অভ্র।
অভ্র বুকে দুই হাত বেঁধে বললো, ‘ আচ্ছা আমি নির্লজ্জ তা লজ্জাবতী ম্যাডাম আপনি এতো রাতে ব্যলকনি টপকে একটা নির্লজ্জ ছেলের রুমে প্রবেশ করেছেন কেন.? তাও তার অনুমতি না নিয়ে! আচ্ছা আপনি কি জানেন একটা নির্লজ্জ ছেলে একটা মেয়ের সাথে কি করতে পারে.? তাও রুমে আপনি আমি একাএএ…
লাস্ট কথাটা ফিসফিস করে বললো জবার কানের কাছে এসে। জবা চমকে উঠলো মনে হচ্ছে অভ্র ওর একদম কাছে চলে এসেছে।
জবা চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো, ‘ আমি এখন চিৎকার করবো!’
অভ্র হেঁসে উঠলো।
‘ সত্যি.? ঠিক আছে চিৎকার করো,এতে ক্ষতি কার হবে.? আমি কিন্তু সব সত্যি বলে দিব৷ আমি কিন্তু যাইনি তুমি নিজে এসেছো তাও ব্যলকনি টপকে।

জবা এইবার সাবধানে আরেকটু সরে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে অভ্রের দিকে তাকাতেই অবাক হলো। এই ছেলে শার্ট কখন পরে নিল.?
অভ্র জবাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো, ‘ এখন কে নির্লজ্জ.? তুমি চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাচ্ছ নির্লজ্জ ত তোমাকে বলা উচিত আমার!’
জবা চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে গিলে খাব তাও আমি.? আয়নায় নিজেকে একবার দেখেছেন.?’
‘ সে ত রোজ দেখি’
‘ আপনার সাথে আমি অযথা কথাই কেন বলছি.! আমার রুমে যাওয়া উচিত। ‘
‘ এসেছো নিজের মর্জিতে আর যাবে আমার’
‘ সবার বেলায় এমন চলে.? ‘
‘ মোটেও না, তুমি আর সবাই ত এক না!’
‘ ভুলে যাবেন না আমি আপনার বড় ভাইয়ের বউ’
অভ্র থমকালো পরমুহূর্তেই হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা ‘

জবা অভ্রর ব্যলকনি থেকে চলে গেলো নিজের ব্যলকনিতে। অভ্র পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ সাবধানে ভাবি আপনার সাথে এখন আমার ভাইপো ভাইজ্বির জীবন মরণ জড়িয়ে আছে।

কথাটা যে অভ্র ইচ্ছে করেই ট্রিটকারি করে বলেছে বুঝতে অসুবিধা হলো না বুদ্ধিমতী জবার। জবা নিজের ব্যলকনিতে গিয়ে অভ্রর মুখের উপর ব্যলকনির দরজা শব্দ করে লাগিয়ে দিল।

এক ঝামেলার পর আরেক ঝামেলা যেনো লেগেই আছে জবা পেছন ফিরতেই রুমে বেলীকে দেখে হতাশ হলো। এতো ঝামেলা সে কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এখন একে কি বলে বুঝাবে.?

বেলী জবাকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। জবা খুব সাবধানে ভেবে চিন্তে বলে উঠলো, ‘ বেলী তুমি ত জানো আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয় না আজ আমার ভীষণ ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছিল কাউকে ত তেমন চিনিনা, তোমার খোঁজ করে ছিলাম কিন্তু তুমি বাসায় ছিলে না তাই আমি ব্যালকনি দিয়ে চলে গিয়ে ছিলাম। ‘
‘ হায় সর্বনাশ তুমি কি জানো না ভাবি এই অবস্থায় তোমার এভাবে যাওয়া উচিত হয়নি, বড় আম্মু জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত আজ বাসায় তোমার জায়গা হতো না। যদি তুমি পরে যেতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেত.? তুমি ত জানো শুধু মাত্র এই বংশের প্রদীপ আসবে বলেই তোমাকে রেখেছে বড় আম্মু!

জবা মাথা নিচু করে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,,’ জানি আমি গ্রামের মেয়ে গাছ বেয়ে অভ্যাস আছে শুধু তুমি কাউকে বলো না’
‘ আমি কাউকে বলবো না!’

বেলী জিজ্ঞেস করতে চাইলো তুমি কি অভ্র ভাইয়ের ঘরে গিয়ে ছিলে.? অথচ কথাটা গলায় আসতেই গিলে ফেললো বেলী।

জবা সব ঝামেলা কাটিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসলো। আজ একের পর এক বিপদের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে জবা৷ এমন হলে কোনে কিছুই হবে না সবকিছু, সব পরিকল্পনা বিফলে যাবে।

এক ত আয়ানের হাতে আরেকটু হলেই ধরা পরতো শুধু মাত্র একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল আশায় আয়ান দ্রুত চলে গিয়ে ছিলো৷ না হয় আজ সবকিছু ফাঁস হয়ে যেত।

________

সবার শেষে নেমে আসলো জবা। জবার গায়ে নীল শাড়ি, চুলগুলো বিনুনি করা, হাতে, গলায়,কানে কিছু নেই তাও যে কেউ একবার তাকালেই আঁটকে যাবে…

জবা নিচে আসতেই লক্ষ করলো হানা আন্টি কেমন করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মৌরি রাগে ফুঁসছে, এই মা মেয়ের আবার কি হলো.?
শায়েলা সিদ্দিকী জবাকে দেখে বললেন,’ কই ছিলে জবা মা.? এসো বসো, বড় ভাবি এই মাত্র রুমে গেলো তুমি খাবার শেষ করে বড় ভাবির সাথে দেখা করো, তোমার সাথে নাকি কথা আছে।’
জবা মাথা নেড়ে চেয়ারে বসলো। শায়েলা সিদ্দিকী নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিলেন। উনার এই অতিরিক্ত আদর ভালোবাসা দেখলে অবাক হয় জবা।
শায়েলা সিদ্দিকী খাবার বেড়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার চয়েজ কেমন বল ত হানা.? আমার আয়ানের পাশে একদম ফুটে থাকবে ফুলের মতো তাই না!.?
জবার নাকেমুখে খাবার উঠে গেলো শায়েলা সিদ্দিকী দ্রুত পানি এগিয়ে দিলেন।
মৌরি রাগে শক্ত করে প্লেটের এক কোন ধরে আছে।

সদর দরজা দিয়ে আয়ান প্রবেশ করলো। দেখে মনে হচ্ছে বেশ চিন্তিত।
মৌরি আয়ান কে দেখতেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
অবাক হয়ে আয়ান আশেপাশে তাকালো। তাজ্জব বনে গেলো সে। ওর বুকে এভাবে ঝাপিয়ে পরলো কে..??

আড়চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসলো জবা।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।