শেষ থেকে শুরু পর্ব-১৪+১৫

0
514

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

জবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাহাড়ের আঁকাবাকা রাস্তা থেকে নিচের দিকে।
ঠিক এ-ই জায়গা থেকে আসিফের গাড়ি নিচে পড়ে ছিল! নিচে জংগল, সবার ধারনা জংগলে আসিফের লাশ পড়ে ছিল রাতে হয়তো জীবজন্তু ওর লাশটা টেনে হেঁচড়ে ছিড়ে খেয়েছে।

এতোদিন সবার মতো জবাও এটাই ভেবে ছিল, তেমন ভালো করে ভেবে দেখেনি।আজ এখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে সবটা একটা বানানো প্লান।

জবা গভীর কিছু ভেবে আলিফ কে বললো,’ তোমার কি মনে হয় আলিফ.? সবটা এক্সিডেন্ট.? ‘
আলিফ জবার পাশেই ছিল, ‘ না ম্যাডাম, মনে ত হয় না’
জবা আর আলিফ এইসব ভাবতে ব্যস্ত তখনি জবার মোবাইল ভেজে উঠলো।
কল রিসিভ করে কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ নিরুপমা নিরু! ‘
‘ ইয়েস’
‘ আমাকে চিনতে পেরেছেন.? ‘
‘ পরিচয় না দিলে কিভাবে চিনব.?’
‘ আমি আয়ান চৌধুরী ‘
‘ আপনি কি কোনো সেলিব্রিটি যে নাম বললেই আমি চিনে ফেলবো!’
‘ তার মানে আপনি শুধু সেলিব্রিটি দের নাম মনে রাখেন.?’
‘ আমার মন এতো বড় এখনো হতে পারেনি যারতার নাম মনে রাখার মতো!’
অপমানে, রাগে আয়ান টেবিলের উপর ফুলের টব শক্ত করে চেপে ধরলো। এই মেয়ে সব সম্ভব অতিরিক্ত এটিটিউড দেখায়।
‘ আপনি কি কিছু বলবেন.? নাকি কল কেটে দিব.?’
‘ আমি পুলিশ অফিসার আয়ান চৌধুরী ‘
নিরুপমার কন্ঠস্বর আগের মতো শোনালো ‘ তা কেন কল দিয়েছেন.?’
‘ কেইসের বিষয় কথা বলতে ‘
নিরুপমার কন্ঠে বিরক্তি ভাব স্পষ্ট, ‘ কি বলবেন পাঁচ মিনিটের ভেতর বলুন’

আয়ানের ইচ্ছে করলো ফোন কেটে দিতে, একটা মেয়ে কিভাবে এমন ধারালো ছুরির মতো কথা বলতে পারে ? কথায় কোনো মায়া নেই, স্বাদ নেই, এটা কেমন মেয়ে.? এর পরিবার একে সহ্য করে কিভাবে.? এর কি বিয়ে হয়েছে.? থুর আমি এইসব কি ভাবছি! এমন কথা শুনলে ছেলেরা দৌড়ে পালাবে বিয়ে পর্যন্ত যেতে হলে ওর মতো একটা দানব মানব লাগবে। রসকষহীন কাঠখোট্টা একটা পাষাণ পুরুষ লাগবে। এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু!

নিরুপমা বিরক্ত হলো। আয়ান অনেক সময় ধরে চুপ করে আছে।

” আপনাকে দেওয়া ৫ মিনিটের মধ্যে চার মিনিট শেষ ”
আয়ান নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি সরি একটা কাজ মনে পরে গিয়ে ছিল’
” কল দেওয়ার পর কেন এতোকিছু আপনাদের মনে পরে ”
আয়ান থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ আপনি এখন এতো প্রশ্ন করে বাকি এক মিনিট শেষ করে দিবেন!’
” শুরু করুন”
” যেই মেয়েটাকে রেপ করা হয়েছে তার কিছু ফ্রেন্ড এসে অনেক ঝামেলা করে গেছে।”
” এইসব আমাকে কেন বলছেন.? ”
” কথা শেষ করি.?”
” জ্বি বলুন।”
” মেয়েটার অবস্থা খুব খারাপ বলা যায় ওখানে একজন ছেলে নয় পাঁচ জন ছেলে ছিল ”
নিরুপমার চোখে জল জমে উঠে চোখের সামনে ভেসে উঠে কিছু পুরনো স্মৃতি।
” নিরুপমা আপনি শুনতে পাচ্ছেন”
” জ্বি”
” এখন মেয়েটার নাম ঈশা, সে বেশি কিছু বলছে না। আমি আজ হসপিটালে গিয়ে ছিলাম। খুব জলদি অপরাধী ধরা না পরলে সব স্টুডেন্ট রাস্তায় বের হবে, সমস্যা বাড়তেই থাকবে।”
” আমি দেখছি।”
” আরেকটা কথা”
” বলুন”
” আমার মনে হচ্ছে আপনার একবার ওর ফ্রেন্ডের বাসায় যাওয়া উচিত লাস্ট ত ও ফ্রেন্ডের বিয়েতে ওদের বাসায় ছিল”
নিরুপমা কিছু একটা ভেবে বললো,’ এড্রেস পাঠিয়ে দেন ‘

আলিফ নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ম্যাডাম আপনার চোখে পানি!’
নিরুপমা চটজলদি চোখ মুছে বলে উঠলো, ‘ চোখে কি জেনো পড়েছে’
কথাটা বিশ্বাস হলো না আলিফের তবুও চুপচাপ এটাই মেনে নিল। সে ত জানে নিরুপমা কেমন”

গাড়ি থেকে আছে একটা বিশাল বড় বাড়ির সামনে।
আলিফ নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ম্যাডাম একা যাবেন.?’
নিরুপমা আলিফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার বাইক কোথায়.?’
আলিফ মাথার চুল চুলকাতে চুলকাতে বললো,’ আনিনি ত ম্যাডাম’
‘ আলিফ তুমি আমাকে আপু বলে ডাকবে, ম্যাডাম ভালো লাগে না ‘
আলিফ খুশি হয়ে গেলো।
নিরুপমা আলিফকে বললো, ‘ পেছনে একটা রিক্সা নিয়ে আমাকে ফলো করবে কেমন!’
আলিফ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

নিরুপমার গায়ে নীল থ্রি পিস সাথে মুখে হাল্কা মেকআপ, ওড়না এক পাশে দেওয়া, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। যে কেউ দেখলে প্রথম দেখায় চোখ সরানো মৃত্যুর মতো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

নিরুপমা বাড়ির ভেতরে এসে আশেপাশে তাকালো। বিশাল বড় বাড়ি হলেও বাড়িতে তেমন কাউকে চোখে পরছে না।
একজন মহিলা চোখ মুখ কুঁচকে এদিকেই আসছে। হঠাৎ নিরুপমার উপর চোখ পরতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ বড় বেগম গো দেইখা যান একখান পরী নাইমা আইছে আমগর বাড়িতে’
এতো বড় চিৎকার ছিল যে বাড়ির ভেতর থেকে একজন মহিলা দ্রুত বেড়িয়ে আসলো। মহিলার পেছন পেছন একটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে বেড়িয়ে আসলো।

সবাই দরজার সামনে এসে থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো নিরুপমার দিকে। মেয়ে দুইটা ফিসফিস করে কি জেনো বলছে।

নিরুপমা একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,’ আসলে একটু পানি…’
মহিলাটা জহুরি চোখে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কে.?’
‘ আমি নিরু নিরুপমা ‘
‘ এখানে কি.?’
‘ এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম ভীষণ পানির পিপাসা পেয়ে ছিল’
মহিলাটা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভেতরে আসো’

চিৎকার করা মহিলাটর দিকে তাকিয়ে বললো,’ ফিরুজা যাও উনার জন্য পানি নিয়ে আসো’
কি আজব! ফিরুজা হা করে এখনো তাকিয়ে আছে নিরুপমার দিকে।
‘ফিরুজা!’
বেগমের ধনকে ধ্যান ভাঙলো ফিরুজার।

নিরুপমার সবার দিকে তাকিয়ে ঈগল চোখে তাকালো সবার পেছন দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে।
ছেলেটা এখনো এক ধ্যানে কেমন চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিরুপমার সারা শরীর দেখছে।

নিরুপমা হেঁসে ভেতরে ঢুকলো। পানি খেয়ে বললো,’ ধন্যবাদ আন্টি এখন আমি আসি’
‘ তোমার বাড়ি কোথায়.? কোথায় থাকো.?’
মহিলার আগ্রহ দেখে মনে মনে নিরুপমা আবারও হাসলো।
মহিলা আবার বলে উঠলো, ‘ আমার ছেলে হিরন বলেই একটা ছেলেকে ঢেকে আনলো। ডাকার প্রয়োজন হয়নি হিরন নাম নিতেই ছেলে হাজির। দরজায় দাঁড়ানো ছেলেটা এটা।
মহিলার মতিগতি নিরুপমা বুঝলো৷ ছেলের বউ করে আনার জন্য এমন আজব আজব কথা বলছে।

নিরুপমা, ‘ আন্টি আমি এখানে নতুন, সামনের মোড়ে আমার বাসা এখন আসি’
” দাঁড়াও ”
নিরুপমা আশেপাশে আবার তাকালো।
মহিলা সেই ছেলেটাকে আবার ডেকে বললো,’ মেয়েটা একা একা বাসায় যাবে তুই একটু এগিয়ে দিয়ে আয়’
যেনো ছেলেটা এমন একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

মনে মনে হাসলো নিরুপমা।

গাড়িতে বসে আছে নিরুপমা আর হিরন।

নিরুপমা গরম লাগছে এমন ভাব করে ওড়নাটা সরিয়ে রাখলো।
হিরন গাড়ি চালানো থেকে বেশি চোখ যাচ্ছে নিরুপমার দিকে।
নিরুপমা মাদক চোখে তাকিয়ে রইলো হিরনের দিকে।
হিরনের মাথা ধরে যাওয়ার মতো নেশা উঠে গেলো।
নিরুপমা ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
হিরন গাড়ি থামিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো।
নিরুপমা একটু ঝুঁকে বললো,’ আপনি ঠিক আছেন.? বাসা ত আরও সামনে। ‘

হিরন নেশা চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ কিন্তু…
হিরন কিছু বলার আগেই নিরুপমা বলে উঠলো, ‘ ইশশশ অনেকটা ঘেমে গেছেন।’
নিরুপমা রুমাল দিয়ে হিরনের কপাল মুছতে এগিয়ে আসলো।
হিরন চোখ বন্ধ করে নিল, চোখ বন্ধ করে নিরুপমার হাতের ছোঁয়া পাওয়ার অপেক্ষা।
নিরুপমা হিরনের কপাল থেকে রুমাল নিয়ে নাকে চেপে ধরলো।
হিরন কিছু বুঝে উঠার আগেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো, চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো৷
অনেক কষ্টে নিরুপমার দিকে আঙ্গুল তক করে বলে উঠলো, ‘ তুমি.. তুমি.. আর কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারায়।’
নিরুপমা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে আলিফ কে কল দিয়ে বলল,’ কাজ হয়ে গেছে গাড়িতে চলে আসলো৷ ‘
আলিফ দ্রুত গাড়িতে এসে দেখে ছেলেটা জ্ঞান হারিয়েছে।

” এটাকে এখন কি করবে আপু.?’
‘ এটাকে নিয়ে হাত পা বেঁধে রাখো রাতে আমি আবার আসবো। তখন এর ব্যাবস্থা করবো’

________

অনেক কষ্টে ব্যালকনিতে আসলো নিরুপমা। প্রতিদিন এভাবে দুই তলায় উঠতে নামতে একদম সহজ হয়ে গেছে এটা কিন্তু আজ মনে হচ্ছে শরীর চলছে না।

নিরুপমা ব্যালকনি থেকে রুমে পা দিবে তখনি পেছন থেকে শুনতে পেলো,’ জবা আপনার বিয়ে কোন কাজী অফিসে হয়ে ছিল.?’
এমন একটা প্রশ্ন শুনতেই পা থমকে গেলো জবার।
অভ্র নিজের ব্যালকনি থেকে প্রশ্ন ছুঁড়েছে জবার দিকে।
জবা পেছন ফিরে বুকে দুইহাত গুঁজে বলে উঠলো, ‘ এটা জেনে আপনার কাজ কি.?’
‘ অবশ্যই কাজ আছে, আমার ভাইয়ের বউ আপনি, ভাইয়ের বিয়ের গল্প সবার শুনতে ইচ্ছে হয়!’
‘ কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না’
‘ অভ্র জবার কথায় ওর দিকে আবার প্রশ্ন ছুড়লো,’ বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে কি কি শর্ত রেখে ছিলেন.?’
জবা ভেতর ভেতর ভীষণ ভয় পেলো তাও সাহস দেখিয়ে বললো,’ শর্ত!.? কিসের শর্ত!.? ‘
‘ সেটা ত আপনি ভালো জানেন’
জবা ভয়ে জমে গেলো, এতোক্ষণ ক্লান্ত শরীর ভয়ে কেমন ঝিমঝিম করছে। তাহলে কি অভ্র সব বুঝে গেছে কিভাবে.? আসিফ আর আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কিছু জানে না।’

অভ্র জবার দিকে একটা আপেল ছুড়ে মেরে বললো,’ খেয়ে নিন ঝিমঝিম করা মাথা ঠিক হয়ে যাবে ‘
জবা আপেল হাতে নিয়ে অভ্রের দিকে ছুড়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ আমাদের বিষয় থেকে দূরে থাকেন, এইসব আপনার ভাবতে হবে না’
‘ ভাবতে কে চায় বলেন.? কিন্তু ভাবতে ত হয়.!! ভাবি বলে কথা’
‘ ভাবি… বউ নই ওকে.?’
‘ হতে কতক্ষণ! ‘
অভ্রের এমন কথায় জবা আরও রেগে গেলো,’ আপনার বউ হওয়ার থেকে মরে যাওয়া ভালো’
অভ্র ব্যালকনিতে একটু ঝুঁকে বলে উঠলো, ‘ তাহলে মরে যান আমার উপর, দাফন করে নিব আমার বুকে’
জবা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ ফালতু’

অভ্র বুকে হাত দিয়ে বললো,’ ইশশশ বুকে এসে লেগেছে এতো সুন্দর করে কেউ ফালতু বলে’
জবা বুঝলো ওর সাথে বকবক করে লাভ নেই, জবা আরও কথার জালে ফেঁসে যাবে।

জবা ভেতরে চলে যায়, পেছন থেকে অভ্র আবার বলে, ‘ আপনাদের কাজীর সাথে আজ দেখা হলো’

জবা নিজের রুম থেকে একটা বই অভ্রের দিকে ছুড়ে বলে উঠে, ‘ বেয়াদব ছেলে’

অভ্র হু হু করে হেসে বললো।

জবা মনে মনে বলে উঠলো, ‘ কাজীর সাথে দেখা করেছে! হুহ্ বিয়ে করলে ত কাজী আসবে আজব!’

অভ্র হয়তো জবার মনের কথাটা বুঝতে পারলো। সে আরও শব্দ করে হেঁসে উঠলো।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

কুলসুম বেগম গম্ভীর মুখে বসে আছে ড্রয়িং রুমে।
জবা বেলীর সাথে কথা বলছে আর সিঁড়ি দিয়ে নামছে। জবা কি জেনো বলছে আর বেলী খিলখিল করে হেঁসে উঠছে।

কুলসুম বেগম অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জবার মুখের দিলে।
দুধে আলতা গায়ের রং, চোখ টানাটানা, ঠোঁটের পাশে ছোট একটা তিল, হালকা হাসি দিলে গালে টোল পরে, চুল গুলো হাঁটুর নিচ পর্যন্ত, হাইট কতো হবে.? ৫.৫ ইঞ্চি ত হবেই!!
কুলসুম বেগম চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে কিছু সময় বসে রইলেন।

বেলী কুলসুম বেগমের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ বড় আম্মু তুমি ঠিক আছো.?’
কুলসুম বেগম চোখ খুলে বেলীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বলে উঠলো, ‘ আমি ভালো আছি, তোমার বড় আম্মুকে কখনো খারাপ থাকতে দেখোছো.?’

ওদের সোফার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল জবা।
” অসুস্থ বলে কয়ে আসে না, আল্লাহ কখন কাকে কি করে কেউ বলতে পারে না আর জানেন ত আল্লাহ যাদের উপর ভীষণ খুশি হয়ে থাকেন তাকেই অসুস্থ করে পরীক্ষা নেন। ”

কুলসুম বেগম এক দৃষ্টিতে টেবিলের দিকে তাকিয়ে জবার কথা গুলো শুনলো। চোখ না তুলেই চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো, ‘ আর যাদের অসুস্থ করেন না তাদের পছন্দ করেন না.?”
‘ বিষয়টা তেমন না আল্লাহ ভালো জানেন। মাঝে মাঝে একটু আল্লাহ কে স্মরণ করে তার কাছে মাথা নত করা উচিত ‘

কুলসুম বেগম বেশ চালাক মহিলা জবা কি বুঝাতে চেয়েছে কুলসুম বেগম খুব ভালো করেই বুঝলেন, লাস্ট কবে সিজদাহ্ করে ছিলেন জায়নামাজে উনি ভুলে গেছেন। দুনিয়া নিয়ে এতোই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন ভুলেই গেছেন এই দুনিয়া কিছুই না এটা শুধু একটা পরীক্ষার হল, অথচ আমরা ভুলে যাই রেজাল্টের জন্য আরেকটা পৃথিবী আছে যার শুধু আছে শেষ নেই।

কুলসুম বেগম লজ্জায় পড়লেন যেনো বেলী জবার সামনে।

কুলসুম বেগম উঠে সোজা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে গেলেন।

বেলী বলে উঠলো, ‘ পাশে বসো’
জবা বসলো।
বেলী জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমাকে শাড়ি পড়া শিখাবে.? ‘
‘ আচ্ছা’
‘ তোমার শাড়ি পড়ার স্টাইল খুব সুন্দর ‘
‘ আচ্ছা আচ্ছা শিখিয়ে দিব’
‘ ছোট থেকে শাড়ি পরতে.?’
‘ না’
‘ কবে থেকে.? ‘
‘ তোমাদের বাড়িতে এসে প্রথম ‘
বেলী চোখ বড় বড় করে মুখে এক হাত দিয়ে অবাক ভঙ্গিতে বললো,’ কি!!..???’
জবা হাসলো।
বেলী আবার বলে উঠলো, ‘ ভাই শিখিয়েছে তাই না.? হে হে বলো বলো? ‘
বেলী দুষ্টু হেঁসে জবাকে ধাক্কা মেরে বলে চোখ ছোট ছোট করে মিটিমিটি হাসছে।

জবা এক হাতে কানের পেছনে চুলগুলো গুঁজে বলে উঠলো, ‘ তেমন কিছু না বেলী’
জবাকে লজ্জা পেতে দেখে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো বেলী।
‘ আরে আরে লজ্জা পাচ্ছ.? লজ্জা পেও না পিওও এভাবে লজ্জা পেয়ে গাল লাল করে কানের পেছনে চুল গুঁজলে আমি নিজেই ক্রাশ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাব’
বেলীর ফ্লার্ট করা দেখে জবা হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,’ তুমি ত ফ্লার্ট খুব ভালো করতে পারো কয়জন পটালে.?’
বেলী থুতনিতে আঙ্গুল রেখে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ হবে ত অগণিত… ‘
‘ কি বলো বেলী সত্যি.? ‘
‘ হ্যা চলো একটা সিক্রেট বলি.? ‘
‘বলো’
‘ আমার এখন রানিং বয়ফ্রেন্ড আছে আটটা’
জবা চোখ বড় বড় করে বেলীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
‘ এভাবে তাকিও না সবগুলো ফেসবুকে ‘
‘ ওদের ঠকানো হচ্ছে বেলী’
‘ একদম না আমি জানি এরাও আরও চার পাঁচটা করে করে।’
‘ কেউ যদি সিরিয়াল হয়ে যায় তখন কি করবে.?’
‘ হোক তাতে আমার কি.? ‘
‘ কষ্ট পাবে’
‘ পাক, আমি বাধ্য করিনি ওরা প্রেমে পড়েছে, প্রপোজ ওরা করেছে নিষেধ করলে কষ্ট পাবে আমি একজন মানুষের মনে নিষেধ করে জেনেশুনে কষ্ট দিতে পারি না ‘
‘ এতো মানবতার ফেরিওয়ালী হয়ে একটা সময় নিজেই বাঁশ খাবে’
‘ উঁহু বাঁশ খাওয়ার আগেই বিয়ে করে নিচ্ছি’
‘ কাকে.?’
বেলী লাজুক হেঁসে বলে উঠলো, ‘ তুমি জানো না.?’
‘ নাত জানি না’
‘ আচ্ছা শুনো মিষ্টি নিয়ে তোমার রুমে গিয়ে আগে মিষ্টি খাওয়াব তারপর সুখবর ‘
‘ আচ্ছা তোমার ইচ্ছে ‘

ওদের কথার মাঝে এসে উপস্থিত হলো আয়ান।
আয়ান আড়চোখে প্রথম জবার দিকে তাকালো, ‘ কি নিয়ে তোদের এতো হাসাহাসি হচ্ছে ‘
‘ তোকে কেন বলতে যাব.?’
‘ সব সময় বাঁকা বাকা উত্তর না দিলে তোর পেটের ভাত হজম হয় না..?’
‘ না হয়না সেই জন্যই বলি না, আমার না হলেও বাকা বাঁকা কথা বলে তোর পেটের ভাত হজম করার চেষ্টা করি’
‘ তোর সাথে ঝগড়া করার আমার মুড নেই’
‘ কেন প্রেমিকা ব্রেকআপ করে দিছে নাকি.?’
‘ আমার প্রেমিকা আসবে কই থেকে.?’
‘ না শুনেছি ব্রেকআপের পর ছেলেদের মুড খারাপ থাকে’
‘ তোর মতো সারাদিন ফেসবুক আর ছেলে নিয়ে আমি পড়ে থাকি না। ভালো কথা তুই আমার বন্ধু রাফির সাথে নাকি রিলেশনশিপে গেছিস.?’
বেলী চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, ‘ ওই কালা চেংরা পোলাডা.?’
‘ হুম ‘
‘ ছিঃ আমার নজর এতোটাও খারাপ নয়!’
‘ ওর ফেক আইডি দিয়ে তোকে নক দিয়ে ছিল আসল আইডিতে সমস্যা ছিল তাই’

বেলী মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো কাল রাতে একটা রাফি নামের ছেলে প্রপোজ করে ছিল প্রোফাইলে হ্যান্ডসাম একটা ছেলের ছবি দেখে সাথে সাথে একসেপ্ট করে নিয়ে ছিল। জবার কথা কি সত্যি হতে যাচ্ছে.? বাঁশ তাহলে রেডি!’

বেলীর মুখ দেখে জবা মুখ টিপে হেঁসলো আর আয়ান বিরক্ত মুখে তাকিয়ে রইলো।

বেলী কাদু কাদু মুখ করে বলে উঠলো, ‘ এখন কি হবে.? আমি ত ভাবছি অন্য কেউ! প্রোফাইলে ত কতো সুন্দর হ্যান্ডসাম একটা ছেলের ছবি ছিল’
‘ কিছু করার নেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে বলেছে’

বেলী হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে বললো, ‘ পানি! পানি জলদি পানি দাও আমি হার্ট অ্যাটাক করবো!’
আয়ান টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে বেলীর মুখের উপর ঢেলে দিল।
‘ কুত্তা এটা কি করলি.?’
‘ তুই ত বললি!’
বেলী রাগে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।
আয়ান কিছুই হয়নি এমন ভাবে সোফায় বসে বলে উঠলো, ‘ কেমন আছেন জবা ম্যাম.?
জবা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো ” ম্যাম ” বলাতে।
হাল্কা হেঁসে বললো,’ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি.? ‘
‘ এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না এখন একদম ভালো ‘
জবা কি উত্তর দিবে খুঁজে পেল না। আয়ান আবার বলে উঠলো, ‘ একটু কাজের চাপ বেশি তাই আপনার সাথে অনেকদিন দেখা করতে পারি না, কিছু কথা ছিল আপনার সাথে ‘
‘ জ্বি বলুন’
আয়ান বলার জন্য প্রস্তুত হতেই এসে হাজির হলো মৌরি। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে এসে বললো,’ তোমরা আমাকে ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছ!.?
মৌরির রাগ করা কে তেমন কেউ পাত্তা দিল না।
মৌরি আয়ানের পাশে বসে বললো,’ আমাকে দেখে তোমরা এভাবে চুপ কেন হয়ে গেলে.?’
জবা জিজ্ঞেস করলো,’ তোমার পায়ের কি অবস্থা.? ‘
মৌরি মুখ কালো করে বলে উঠলো, ‘ কেমন দেখতেই ত পাচ্ছ’
ওরা টুকটাক কথা বলতে শুরু করলো তবে এর আগমনে আয়ানের আর কিছু বলা হলো না।

ওদের আড্ডার মাঝে শায়েলা সিদ্দিকী হাতে কিছু ফল, দুধ আর ডিম এনে জবার সামনে রেখে বললো,’ অনেক আড্ডা দিয়েছো এইগুলো খেয়ে নাও’
জবা আশেপাশে সবার দিকে তাকালো। সবাই কথা বন্ধ করে তাকিয়ে আছে জবা আর শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে।
‘ আন্টি আমার এখন ইচ্ছে করছে না। ‘
‘ ইচ্ছে করবে না এই সময় তাও নিজের জন্য না হোক বাচ্চার কথা ভেবে খেতে হবে’

মৌরি রাগী দৃষ্টিতে জবার দিকে তাকিয়ে আছে। শায়েলা সিদ্দিকীর এই আদর, কেয়ারিং মৌরির বিষের মতো লাগছে।

মৌরি বলে উঠলো, ‘ এতো নাটক না করে খেয়ে নাও, আর ফুপিমণি তোমার এইসব আদিখ্যেতা দেখানোর এতো কি আছে.? প্রেগন্যান্সির সময়টা এতো আহামরি কিছু নয়!’

‘ তুমি কি এর আগে প্রেগন্যান্ট হয়ে ছিলে.? না মানে কিভাবে বুঝলে আহামরি কিছু নয়!.?’

জবার এমন কথা শুনে মুখ টিপে হেসে উঠলো বেলী আর আয়ান।

মৌরি রাগে দুঃখে হাত চেপে ধরে বসে রইলো।

লতিকার আম্মা এসে জানালো কুলসুম বেগম জবাকে ডাকছে।

জবা দাঁড়িয়ে আছে কুলসুম বেগমের রুমের সামনে।

‘ ভেতরে আসো’

জবা এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এই রুমে পা রাখলো। একবার চোখ ঘুরিয়ে পুরো ঘর দেখে নিল।

কুলসুম বেগম লতিকার আম্মাকে দুই কাপ কফি আনতে বলে জবার মুখোমুখি সোফায় বসলো।
‘ দেখো আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলতে চাইনা সোজাসাপটা বলছি। ‘
‘ বলুন’
‘ মায়া তোমার কে হয়.?’
ভয়ে বুক কেঁপে উঠল জবার,’ মা…মায়া কে.?’

কুলসুম বেগম রেগে জবার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো,’ তোমার কাছে মায়ার ডায়েরি কি করছে.? কে হয় তোমার!.? ‘

তারপর আর কিছু শোনানো হয়নি এখানে, কি কথা হয়ে ছিল তাদের মাঝে তারাই জানে।

_____

মধ্য রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে জবা, চোখে পানি চিকচিক করছে।

খুব সাবধানে ওর পাশে এসে দাড়ালো কেউ।
জবা কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো পাশে, অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।

” আচ্ছা জবা আকাশ কি কারো দুঃখ কমাতে পারে.? ‘
‘ আকাশ কারো দুঃখ কমায় না, আকাশের গভীরে দুঃখরা বাসা বেঁধে থাকে। এই যে মধ্য রাতে মানুষ আকাশের মাঝে দুঃখ উড়িয়ে বেড়ায়! দীর্ঘ শ্বাসে দুঃখ উড়িয়ে শান্তি খুজে। দুঃখরা আকাশে উড়ে গিয়ে বাসা বাধে। কখনো বৃষ্টি হয়ে জড়ে কারো ঘরে, মনে, সম্পর্কে আবার কখনো কালো মেঘ হয়ে পুরো আকাশ জুড়ে রাজত্ব করে বেড়ায়!’

‘ আর পাপ.? পাপ কি কমাতে পারে.? ‘

‘ পাপ! পাপ কিভাবে আকাশ কমাবে.? মধ্য রাতে নিজের পাপ কি আকাশে লুকিয়ে বেড়ানো যায়.? পাপ হলো তাঁরার মতো, পাপ একদিন ঠিক নিজের আকাশে ঝলমল করে উঠবে তা লুকিয়ে বেড়ানো অসম্ভব! লোকের কাছে লুকিয়ে বেড়ালেও তা রাতের আকাশ হোক আর মনের আকাশে তাঁরার মতো যে ঝলমল করে উঠে আর আগুনের মতো পুড়ায়!’

‘ জবা সময় মানুষ সবকিছু এতো বদলে কেন যায়.? মানুষ কেন অতীত ভুলে যায়.? ভুলে যায় নিজেকে.? ‘

‘ সময় অতীত হয় মানুষ না! তাকে বদলাতে বাধ্য করা হলে সে কি করবে.? নিজেকে ভুলে নতুন কাউকে নিজের মাঝে তৈরি করে নিতে হয় এই দুনিয়ায় ভালো মানুষের দাম কোথায়? ‘

আপনি সেই আগের জবা হয়ে যান না, সেই আমার রক্তজবা!’

” কিছু মানুষ নামের পশুদের মানুষ বানাতে হলে আমাকে যে আরও দূর যেতে হবে! তবে আপসোস কি জানেন.?’
‘ কি.?’
‘ কুকুরের লেজ যেমন কখনো সোজা হয় না কিছু মানুষ নামের পশুও মানুষ হয় না এরা আজীবন পশুই থেকে যায় তাই তাদের এই দুনিয়ায় বেশি দিন বাঁচতে দেওয়া উচিত নয়!’

‘ আমার জবা ত লজ্জায় তাকাতে পারতো না, একটা কথা বলতে গিয়ে দশবার ঢুক গিলতো এতোটা কঠিন কবে হলে.?’

জবা অদ্ভুত ভাবে হেঁসে উঠলো।

‘ হাসছেন কেন.?’
‘ হাসছি এটা ভেবে আমি আপনার ছিলাম কবে.? আপনারা ছেলেরাও না!’
‘ তোমার মনে এতো ঘৃণা!.? ‘
‘ কার জন্য.? চোখে মুখে এক পৃথিবী মুগ্ধতা আর মনে.? মনের ভেতর অন্য নারীর শরীর ছোঁয়ার আকাঙ্খা! এই পুরুষের প্রতি ঘৃণা রেখে তাকে মনে রাখবো এতো বড় মনের অধিকারী এখনো হতে পারিনি।
‘ ওটা একটা… ‘
‘ কি.? আমাদের চোখের ভুল.? সবার চোখ ভুল দেখে ছিল.? ঠিক আছে সবাই ভুল দেখেছে কিন্তু আমি! আমি যে একই ঘরে দুজনকে খুবই জঘন্য অবস্থায় দেখে ছিলাম! ওই মেয়ে মিথ্যা বলে ছিল.? কিন্তু কেন.? কেন একটা মেয়ে নিজের চরিত্রে মিথ্যা বলে দাগ লাগাবে!.?’

অভ্র মাথা নিচু করে বললো,’ এই জন্য আমার ভাইকে মে’রে ফেলবে.? ওই বেচারার ত কোনো দোষ ছিল না!’
‘ আপনার মন মানুষিকতা সেই নিচুস্তরের রয়ে গেছে আজও! ছিঃ একজনের শাস্তি অন্য কেউ কেন পাবে.? আর যেখানে সেই মানুষটাকেই শাস্তি দেওয়া যেত।’

‘ কখনো যদি জানতে পারো সবকিছু মিথ্যা ছিল! আমাকে ফাঁসানো হয়ে ছিল আপসোস হবে না.? আপসোস হবে না আমাকে একটা বার বিশ্বাস না করার জন্য.? ‘
‘ ছয় বছর হয়ে গেছে এখনো এটাই সত্যি হয়ে আছে মিথ্যা হলে ওই সময় প্রমাণ হতো আর এভাবে চোরের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন না!’

‘ আমি পালিয়ে যাইনি আমি বাধ্য করা হয়েছিল’
‘ আপনি ছোট বাচ্চা নন! কেউ আপনাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে ত কেউ আপনাকে বাধ্য করে ছিল দেশ ছাড়তে এইগুলো হাস্যকর নয়.? যাই হোক এইসবে আমার মাথাব্যাথা নেই সময় আর অতীতের স্মৃতি মনে রাখতে নেই।’
‘ আর অতীতের মানুষ!.? ‘
‘ মানুষ কি অতীত হয়.?’
‘ হয় না.?’
‘ না! মানুষ হয় ইতিহাস যা কিছুটা ঘৃণা আর কিছুটা ভালোবাসায় বেঁচে থাকে’

কিছু সময় এখানে নিরবতা চলে। জবা চলে যেতে নিলে অভ্র ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন আলতো তবে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার ভাইয়ের মৃত্যুর খুনি আপনি হলে সত্যি আমাকে ভুলে যাব কখনো আপনি আমার হৃদয়ের রাণী ছিলেন আবার রক্তজবা! আমি সর্বোচ্চ করবো আপনার শাস্তির জন্য! ‘

শান্ত কন্ঠে হুমকি ছিল এটা.?

জবা হাল্কা হেঁসে চোখ লাল করে তাকিয়ে বললো,’ আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য এই পরিবারের কেউ দায়ী হলে আল্লাহর কসম আমি তাকে নিজ হাতে খু’ন করবো! কাউকে ছাড়বো না! একজনকেও না! আমার মায়ের চিৎকার আর্তনাদ আমাকে আজও ঘুমাতে দেয় না, আমি এমন একটা অসহায় মেয়ে ছিলাম আলমারির পেছনে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি এই অপরাধ বোধ আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে, আমি আমার মায়ের ইজ্জত বাঁচাতে পারিনি ওরা সাত আটজন ছিল! আমি সামনে গিয়েই বা কি করতে পারতাম..? ওদের শাস্তির জন্য যে আমাকে বাঁচতে হতো! আমার মায়ের আর্তনাদ ওদের কান পর্যন্ত পৌছায়নি আপনাদের মতো জানুয়ার যে ওরা। আমাকে যে কিছু জানোয়ার কে মানুষ বানানোর জন্য বাঁচতে হতো! আমি কাউকে ছাড়বো না…!’

জবার এইসব আবলতাবল কথা কিছু বুঝতে পারলো না অভ্র! জবার আম্মু কে.? আর এই বাড়ির কেউ কেন উনার খুনি হবে.? জবার কথায় বুঝা যাচ্ছে উনার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়ে ছিল!

অভ্র জবাকে শান্ত করার জন্য জবার গালে হাত রেখে বললো,’ শান্ত! শান্ত হও জবা!’

জবা অভ্র কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমাকে ছুঁবে না!’

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।