#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আসিফ অভ্রকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
অভ্র এতোদিন পর চোখের সামনে নিজের ভাইকে দেখে এগিয়ে আসলো জড়িয়ে ধরতে অথচ আসিফ সরে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্র! আগে ত আসিফ অভ্র কে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতো। এক সাথে হাজারও স্মৃতি আছে দুই ভাইয়ের, মানুষ এদের দেখলো হিংসে করতো ভাইদের মধ্যে এতো মিল কিভাবে থাকে.? আর আজ সেই ভাই নিজ থেকে সরে গেছে!
আসিফ অভ্র থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জবার দিকে।
সবাই আসিফের দৃষ্টি খেয়াল করে সিঁড়ির দিকে তাকালো।
জবা ঘাবড়ে গেলো সবার এমন তাকানো দেখে।
পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসলো। এই অফিসার আর কেউ নয় আয়ান চৌধুরী। কি দিন আসলো চৌধুরী বাড়ির ছেলের হাতেই বন্দী হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির সম্মান।
শফিক সাহেব বলে উঠলো, ‘ আসিফ তুমি বেঁচে আছো.? এতোদিন কোথায় ছিলে.?’
আসিফ শান্ত দৃষ্টিতে শফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে নিজের মা’য়ের দিকে দৃষ্টি দিল।
মা’য়ের দৃষ্টিতে কি আছে.? ভয়.? অনুতাপ..? নাকি ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ.? না আসিফ কিছুই বুঝতে পারছে না।
‘ আস্তে ছোট আব্বু এতো তাড়া কিসের.? এসেই যেহেতু পরেছি কিছু জানার ত বাকি থাকবেন না।’
শার্লিন বেগম বলে উঠলো, ‘ কিন্তু তোমার সাথে পুলিশ কেন
? আর তুমি বসো আমরা আস্তে ধীরে সবকিছু শুনি। ‘
আসিফ গম্ভীর কন্ঠে বললো,’ আমার কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি আমাকে ইচ্ছে করে মে’রে ফেলার প্লান করা হয়ে ছিল।’
সবাই চমকে একে ওপরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ কে এমন কাজ করলো.? আমাদের শত্রুর শেষ নেই জানি তবে যে এমন কাজ করেছে শুধু একবার বলো, তার নিশ্বাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুর জন্য ছটফট করবে।’
আসিফ আয়ানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললো,’ উনাকে নিয়ে যান’
কুলসুম বেগম সেই আগের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্র একবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আসিফের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,’ ভাই তোমার মাথা ঠিক আছে.? কি করছো.? আম্মুকে কেন নিয়ে যাবে.?’
আসিফ কিছু না বলে সোজা হেঁটে উপরে সেই পুরনো নিজের রুমটায় চলে গেলো।
আয়ান বুক টানটান করে কুলসুম বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এখন আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। চৌধুরী বাড়ির সম্মান বলে হাতে কিছু লাগাচ্ছি না।’
এমনিতেই আয়ানের কুলসুম বেগমের উপর ভীষণ রাগ জমে ছিল। বিয়াটা আয়ান শুধু মাত্র কুলসুম বেগমের জন্য করতে হয়েছে। এই মহিলার হুকুম কেউ অমান্য করতে পারে না৷ আজ আয়ান যেনো সুযোগ পেয়েছে।
অভ্র রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আয়ান আম্মু তোমার বড় আম্মু হয় সম্মান দিয়ে কথা বলো।’
আয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে অভ্রর শার্টের কলার ঠিক করে দিয়ে বললো,’ ছোট ভাই যার সম্মান আছে মানুষ তাকেই ত সম্মান দেয় তাই না.? ‘
অভ্র আয়ানের এমন কথায় থমকে গেলো। এটা আয়ান.? যাকে কুলসুম বেগম সব সময় নিজের ছেলের চোখে দেখে এসেছে.? অভ্র আয়ানের আচরণে মায়ের মুখের দিকে তাকালো।
কুলসুম বেগম আগের মতোই কঠিন কন্ঠে বললো,’ দেরি করছো কেন.? নিয়ে চলো।’
আয়ান কিছুটা রেগে বলে উঠলো, ‘ আস্তে এখন আপনি একজন আসামী।’
কুলসুম বেগম আয়ানের সাথে চলে গেলো। অভ্র পেছন থেকে চোখের শান্তনা দিতে চাইলো মা কে। সে আসবে মা’কে ছাড়াতে ওর আম্মু এমন নয়! নিজের সন্তান কে কখনো মা মারতে কিভাবে চাইতে পারে.?
অভ্র পেছন ফিরে জবার দিকে তাকালো। জবা এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের রংতামাশা দেখছিল। দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল একজনের প্রতি আরেক জনের তিব্র ঘৃণা, তাচ্ছিল্য।
শফিক সাহেব, শরিফ সাহেব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলেন সবকিছু । তারা জেনো কিছুই বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে! আর আসিফ কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো! সে ত নিজের মা কে নিজের থেকেও বাশি ভালোবাসতো আজ নিজেই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিল! অপরাধীর খাতায় নাম দিল কিন্তু কুলসুম বেগম করেছেটা কি.?
শরিফ সাহেব অভ্রর কাঁধে হাত রেখে বললো,’ আমি এখনি শহরের সবচেয়ে বড় উকিলের সাথে কথা বলছি। ‘
অভ্র কিছু বললো না।
শফিক সাহেব কেমন করে যেনো শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকালো।
শায়েলা সিদ্দিকী এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেনো এখানে কিছুই হয়নি।
শার্লিন বেগম টেনশনে একটু পর পর পানি খাচ্ছে আর শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে কান্নার সুরে বলে উঠলো, ‘ বড় ভাবির কিছু হবে না ত ভাবি! আমার খুব টেনশন হচ্ছে,, আসোনা একবার গিয়ে দেখে আসি, বাসায় আমার মন বসছে না।’
শায়েলা সিদ্দিকী বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ বার বার ঘ্যানঘ্যান করবি না ত আমার কাছে৷ এতো দরদী হলে তুই যা আমার এখন অনেক কাজ। পুরো সংসার ত এখন থেকে আমাকেই সামলাতে হবে। ‘
শার্লিন বেগম বোকার মতো বললো,’ কেন.? তুমি সামলা বা কেন.? ভাবিকি আর আসবে না.?’
শায়েলা সিদ্দিকী তৃপ্তির ঢেঁকু তুলে বললো,’ মনে ত হয় না!’
শার্লিন বেগম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে।
___________________
অভ্র জবার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জবা নিজের হাত ছুটানোর জন্য অভ্রর হাতে ঘুষি দিচ্ছে, এক পর্যায়ে কামড় দিয়ে বসলো।
অভ্র ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিল তাও জবার হাত ছাড়লো না।
জবা যখন দেখলো অভ্রর হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে সে নিজ থেকে কামড় ছেড়ে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকালো।
অভ্রর চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। জবা ভয়ে একদম চুপ হয়ে গেলো।
অভ্র নিজের রুমে জবা কে এনে ছুঁড়ে ফেললো ফ্লোরে
ফ্লোরে পরে জবা হাতের কনুইয়ে ভীষণ ব্যাথা পেলো। ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে রাগী চোখে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আবার ভয়ে জমে গেলো।
অভ্র এতোটা রেগে গেছে দেখে জবা কি করবে বুঝতে পারছে না।
অভ্র জবার সামনে ঝুকে বলে উঠলো, ‘ তুমি করেছো ইচ্ছে করে তাই না.? এখন শুধু অপেক্ষা করো আমি কি করি! আমার মা’য়ের দিকে বিনা কারনে আঙ্গুল তুলা মানুষদের আমি আঙ্গুল ভেঙে দেই আর তুমি কিনা তাকে জেলের ভেতর থেকে ঘুরিয়ে আনছো! আজকের মধ্যে আমি মা’কে ছুটিয়ে আনছি তারপর আসিফ ভাইয়ার সাথে বাকিটা বুঝে নিব। ততক্ষণ তুুমি এই রুমে বন্দী থাকবে।
জবা ফ্লোর থেকে উঠে একটু সাহস জুগিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভুলে যেও না আমি তোমার কে.? তোমার ভাই কিন্তু বাড়িতেই আছে অভ্র, তোমার আমার উপর এমন করার কোনো অধিকার নেই আর তোমার কাছে প্রমাণ কি আমি তোমার আম্মুকে ফাঁসাতে চাচ্ছি!.?
অভ্র জবার দুই বাহু চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ আমার থেকে ভালো তোমাকে কে চিনে.? এইসব কিছু তোমার জন্য হচ্ছে, তুমি আসিফ কে ব্ল্যাকমেইল করে ছিলে এমনটা করতে তাই না.?
জবা অভ্রর চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, ‘ আর আমি এমনটা কেন করবো!.?’
অভ্র এক হাতে জবার চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,’ মা’য়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য! শহরের সবচেয়ে বড় উকিল মায়া তালুকদার এর মৃত্যুর প্রতিশোধ! ‘
জবা হাল্কা হাসলো অভ্রর কথা শুনে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো অভ্রের কাছে, একদম কাছে গিয়ে চোখ তুলে অভ্রের দিকে তাকালো।
জবা তাকানো দেখে অভ্রর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল, বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো।
জবার চোখে পানি ছলছল করছে। দেখে মনে হচ্ছে এখনি বুঝি জল গড়িয়ে পরবে অথছ মেয়েটা কতো সুন্দর করে চোখের জল আড়াল করে ফেললো।
অভ্র ঢুক গিলে চোখ বন্ধ করে বললো,’ জবা আমার থেকে একটু দূরে সরে যাও’
জবা যেনো আরও কাছে আসতে চাইলো। এমনিতেই জবার নিশ্বাস অভ্রের ঘাড়ে আছড়ে পড়ছিল। এখন যেনো একজনের হার্টবিট অন্যজন শুনতে পাচ্ছে।
অভ্র নিজেই জবার থেকে দূরে সরে যেতে নিয়ে খেয়াল করলো পেছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই, দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেছে।
অভ্র কাঁপা কন্ঠে বললো,’ জবা সরে দাঁড়াও আমার বের হতে হবে।’
জবা বাঁকা হেঁসে আঙ্গুল রাখলো অভ্রর উন্মুক্ত গলায়। গলার মাঝে আঙ্গুল দিয়ে আঁকাবাকা করতে করতে বললো,’ এতো সহজ ভাবে মায়া তালুকদারের মৃত্যুর শাস্তি কিভাবে দেই বলেন অভ্র.? মায়া তালুকদারের খুনিকে ত আমি নিজ হাতে খু’ন করবো! পুলিশের হাতে কেন তুলে দিব! এমনটা হলে কি এতো কিছু সহ্য করি এতোদিন!.? এতো বোকা কেন আপনি.? ‘
অভ্র যতোটা রেগে জবাকে নিয়ে এসেছিল এখন নিজেকেই ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে এই মেয়ের সামনে।
এই যে শাড়ি পড়া, চুল ছাড়া, চোখে গাড়ো কাজল, সাজগোজ বিহীন মেয়েটাকে এখন মনে হচ্ছে অভ্রর সামনে সদ্য ফোঁটা এক পদ্মফুল! চাইলেও অভ্র তার উপর রাগ করতে পারছে না, কিছু বলতে পারছে না।
জবার আঙ্গুলের ছুঁয়া জেনো অভ্রকে অশান্ত করে তুলছে।
অভ্র না চাইতেও কাঁপা কাঁপা হাত জোড়া চলে গেলো জবার শাড়ির ভাঁজে।
শাড়ির ভাজে কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই জবা কেঁপে উঠল। হুঁশ ফুরলো সে অভ্রর কতোটা কাছে চলে এসেছে! লজ্জায় অভ্রর ঘার থেকে হাত নিয়ে আসতে চাইলে অভ্র চটজলদি জবার হাত চেপে ধরলো।
জবা কিছু বুঝে উঠার আগেই অভ্র হাল্কা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল জবার ঠোঁটে।
জবা লজ্জায়, ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ঠোঁট ছুয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
অভ্র ঠোঁট দুই সেকেন্ডের জন্য ছুয়ে সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো।
জবা ফ্রিজ হয়ে ঠোঁটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
অভ্র আয়নার সামনে গিয়ে আয়নার মাঝে জবার পেছনটা দেখলো।
স্বাভাবিক হাল্কা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আজ তুমি এই রুমে বন্দী থাকো যতক্ষণ না আম্মু ফিরছে। ‘
অভ্র হাতে ঘড়ি, সাদা শার্ট, চোখে চশমা দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বেড়িয়ে গেলো।
জবা শুধু চুপচাপ তার যাওয়া দেখলো। সে বুঝতে পারছে না অভ্রর এমন কাজে সে রাগ করবে নাকি লজ্জা পাবে.? মনে ত হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু কথা ছিল রেগে যাওয়ার!
______________
অভ্র সারাদিন বহু দৌড়াদৌড়ি করেছে, কোনো ভাবেই কিছু করতে পারেনি। পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট একটা কথাই বলছে সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু ম্যামের সাথে কথা বলেন। অথচ অভ্র এই সিআইডি অফিসার কেই খুঁজে পাচ্ছে না। আয়ান চিনেও অস্বীকার করছে সে নিরুপমা নিরু কে চিনেনা।
বারেক অবাক হয়ে কয়েক বার জিজ্ঞেস করলো, ‘ স্যার উনি আপনার বড় আম্মু হয় তাও আপনি এমন আচরণ কেন করছেন.?? আপনি ত অচেনা কাউকেও হেল্প করেন অথচ আপনার আপন মানুষের বিষয় আপনি এমন কেন.?’
আয়ান কিছু বলেনি তবে রাগী চোখে বারেকের দিকে তাকিয়ে বুঝিয়ে দিল আরেকটা কথা বললেও তোমাকেও লকাবে ঢুকিয়ে দিব!
বারেক এতো এতো প্রশ্ন মনে নিয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে তালা দিয়ে রেখেছে।
আসিফ আশার পর একবারও রুম থেকে বের হয়নি।
লতিফার সাহস হয়নি ঢেকে খাবার দেওয়ার।
শায়েলা সিদ্দিকী বেলীকে রাগী কন্ঠে বলেছে,’ এভাবে রুমে শুয়ে বসে আর কতো.? একটু ত কাজে হাত বাড়াতে পারো! এক ত আমার ছেলের উপর ঝেকে বসেছো তার উপর ছেলেটার একটু খেয়ালও রাখছো না! এমন হলে আমি বিপরীত কিছু ভাবতে বসবো।’
বেলী শায়েলা সিদ্দিকী আচরণে অবাক হয়ে বললো,’ আপনি ঠিক আছেন মেঝো আম্মু.? আর বিপরীত কিছু মানে বুঝলাম না!’
শায়েলা সিদ্দিকী বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে আশা করি আমি বুঝাতে হবে না। আমার বোনের মেয়ে কিন্তু রেডি।’
বেলী শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ কুকুরের পেটে কখনো ঘি হজম হয় না আপনার অবস্থা হয়েছে এখন এমনটা। আপনার ছেলেকে পারলে আজ রাতেই হাজার খানেক মেয়ের সাথে বিয়ে পরিয়ে দেন তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।’
বেলী শায়েলা সিদ্দিকীর মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
শায়েলা সিদ্দিকী রেগে বলে উঠলো, ‘ আজ আমার ছেলে বাড়ি আসুক তোর এই দেমাগ বের করবো আমি! ‘
সবাই জেনো অবাকের উপর অবাক হচ্ছে হঠাৎ শায়েলা সিদ্দিকীর এমন রুপ দেখে। এতোদিন তাহলে কুলসুম বেগমের জন্য সে মুখের উপর আলাদা একটা মুখোশ লাগিয়ে রেখেছিল.?
লতিকা কে কাজ থেকে বের করে দিল। সেই ছোট থেকে লতিকা এই বাড়িতে কাজ করে আসছে আজ একদিনে জেনো শায়েলা সিদ্দিকী সবকিছু পাল্টে দিচ্ছে।
লতিকা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, ‘ আফা আমি কই যামু.? আমি ত বুঝ হওয়ার পর থাইকা এখানেই থাহি’
শায়েলা সিদ্দিকী সোফায় পা ঝুলিয়ে বললো,’ তা আমি কিভাবে জানবো! সারাজীবন ত আর আমরা পালতে পারবো না এখন নিজের আশ্রয় গিয়ে খুঁজো ‘
লতিকা ছলছল নয়নে শার্লিন বেগমের দিকে তাকালো। আজ জেনো চাইলেও শার্লিন বেগম কিছু বলতে পারছে না। হঠাৎ করে এতোকিছু মাথা জেনো কাজ করছে না।
‘ আফা নতুন কাজের মাইয়া রাখলে কি কিছু বুঝবো.?’
‘ নতুন রাখবে তোমাকে কে বলেছে.?’
‘ তাইলে.?’
‘ বাড়িতে এতোগুলা মহিলা থাকতে কাজের মহিলার কি দরকার.? বারতি টাকা খরচ করার কোনো মানে হয় না! ‘
শার্লিন বেগম রেগে নিজের রুমে চলে গেলেন।
________________
মধ্য রাতে অভ্র বাসায় ফিরলো। ক্লান্ত মস্তিষ্ক, ক্লান্ত শরীর। মা জেলের মাঝে কিভাবে থাকবে.? আমি কিভাবে বিছানায় ঘুমাবো.?
অভ্র লাইট জ্বালাতেই জবার মায়াবী মুখটা নজরে আসতেই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।
জবা নিচে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
অভ্র কোমরে হাত রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললো,’ এই ঠান্ডায় মেয়েটা নিচে কেন শুয়ে আছে.? একটুও নিজের খেয়াল রাখে না!’
অভ্র কোলে করে জবাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে হাল্কা কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
অভ্র আসিফের রুমে কড়া নাড়তেই আসিফ দরজা খুলে দিল।
অভ্র কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরলো আসিফের বিছানায়।
আসিফ গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’ এই রুমে কেন.?’
অভ্রর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘ জবা আমার রুমে ঘুমাচ্ছে ‘
আসিফ বেশি কিছু বললো না।
_____________
শায়েলা সিদ্দিকী বসে বসে নাস্তা করছে। বেলী দাঁতে দাঁত চেপে নাস্তা বানাচ্ছে।
শার্লিন বেগম চুপচাপ মেয়েকে হেল্প করছে।
বেলী রাগী দৃষ্টিতে শার্লিন বেগমের দিকে তাকাতেই শার্লিন বেগম বলে উঠলো, ‘ শশুর বাড়িতে কাজ করেই খেতে হয় ‘
বেলীর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। কাল রাতে ভেবেছিল আয়ান আসলে ঝগড়া করবে অথচ আয়ান রাতে বাড়িতে আসেনি।
শায়েলা সিদ্দিকী জবার জন্য রাগে গজগজ করছে।
জবা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।
শায়েলা সিদ্দিকী জবার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ কোথায় ছিলে.? এখন সময় হলো নিচে আসার.?’
জবা বাঁকা হেঁসে শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে বললো,’ শাশুড়ী আম্মা কল দিয়ে বললো আসছে তাই স্পেশাল নাস্তা বানাতে আসলাম সাথে আপনার কিছু লাগবে মেঝো আম্মা!.?’
শায়েলা সিদ্দিকী অবাক হয়ে থমথমে মুখে বললো,’ শাশুড়ী আম্মা মানে.? ‘
‘ সে কি আপনি আমার শাশুড়ী আম্মাকে চিনেন না.? আচ্ছা আমি চিনিয়ে দিচ্ছি দরজার দিকে তাকান।’
শায়েলা সিদ্দিকী দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো কুলসুম বেগম প্রবেশ করেছে। কুলসুম বেগমের হাটায় সব সময় রাজ্যকীয় ভাব থাকে।
কুলসুম বেগম কে ফিরে আসতে দেখে শায়েলা সিদ্দিকী জবার দিকে তাকালো।
জবা শায়েলা সিদ্দিকীর কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ আপনার খেলা এখানেই শেষ ! ‘
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
জবা ফিসফিস করে শায়েলা সিদ্দিকীর কানে বললো,” আপনার খেলা শেষ! ”
শায়েলা সিদ্দিকী চমকে উঠলেন! ইনোসেন্ট মুখে জবার দিকে তাকিয়ে বললেন,’ কি বলছো বউমা.? তোমার শাশুড়ী ফিরে এসে উনাকে শরবত দাও তা না কি সব বলছো!.?’
জবা শায়েলা সিদ্দিকীর কথা শুনে হেঁসে উঠলো। শায়েলা সিদ্দিকী ঘাবড়ে গেলেন।
জবা বাঁকা চোখে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’ লতিকা কোথায়.?’
শায়েলা সিদ্দিকী আমতা আমতা করে কুলসুম বেগমের দিকে তাকালো।
কুলসুম বেগম পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসেছেন।
বেলী গিয়ে কুলসুম বেগমের পেছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে, ‘ কোনো সমস্যা হয়নি ত বড় আম্মু.?’
শায়েলা সিদ্দিকী জবার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, ‘ এখন তুমি আমার উপর জবাবদিহি করবে.? এইদিন ও আমার দেখতে হলো.?’
ন্যাকা কান্না করে শায়েলা সিদ্দিকী কুলসুম বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বড় ভাবি সব সময় ঠিক বলতেন এইসব ছোটলোকদের বসতে দিলে শুতে চায় ‘
কুলসুম বেগম কে কিছু বলতে না দেখে শায়লা সিদ্দিকী আরও একটু সাহস পেলো।
কুলসুম বেগমের পাশে বসে বলতে শুরু করলো , ‘ লতিকার গ্রামে একটা কাজ পরেছে তাই চলে গেছে ভাবি, আমি অনেক বুঝিয়ে ছিলাম লাভ হয়নি। এখন তোমার ছেলের বউ আমার কাছে এসে জবাবদিহি করছে! তুমি এর শাস্তি দিবে না.? ‘
কুলসুম বেগম শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের পানির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
বেলী বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এটা ত দেখি ওইটার চেয়েও বেশি ডেঞ্জারাস! ভালোই জমবে দজ্জাল শাশুড়ী! নিজে তারিয়ে দিয়ে মিথ্যা নাটক করছে ‘
কুলসুম বেগমের কিছুই বলতে হয়নি এর আগেই কিছু লোক সাথে পুলিশ আবারও প্রবেশ করলো চৌধুরী বাড়িতে।
শায়েলা সিদ্দিকী ভেতর ভেতর ভীষণ ঘাবড়ে গেলেন।
উপর থেকে আসিফ, অভ্র নেমে আসলো।
জবা হাতের ইশারায় শায়েলা সিদ্দিকীকে দেখিয়ে বললো,’ উনার ড্রামা শেষ হলে নিয়ে চলুন!’
শায়েলা সিদ্দিকী ভীতু মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাবি আপনার বউ এইসব কি বলছে.? এতোদিন দুধ কলা খাইয়ে আমি কালসাপ পেলেছি.? আমাকে বিনা কারনে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছে!’
জবা দুইহাত বুকে গুঁজে বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ এটা ত একটু পর বুঝা যাবে কে কাকে দুধ কলা খাইয়ে পেলেছে!’
আয়ান জবার উপর রেগে গেলো। আয়ান কে উপর মহল থেকে কল দিয়ে বলা হয়েছে চৌধুরী বাড়িতে নিজের টিম নিয়ে আসতে এখানে সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু আছে।
আয়ান বেশ অবাক হয়ে ছিল। কুলসুম বেগম কে ত পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে তাহলে আবার কি.? আর এখানে এসে নিরুপমা নিরু বা উনার কোনো টিম ম্যাম্বার কে দেখা যাচ্ছে না, আবার কুলসুম বেগম ছাড়া পেল কখন.? আর কিভাবে.? জবা কেন ওর আম্মুর সাথে এমন বেয়াদবি করছে.?
অভ্র বলে উঠলো, ‘ জবা তুমি নিজের রুমে যাও, আম্মুর সামনে মেঝো আম্মুর সাথে তুমি বেয়াদবি করছ।’
জবা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে পেছন ফিরে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আচ্ছা তাই নাকি.?’
জবা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে কুলসুম বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি বুঝি বেয়াদবি করছি.?’
কুলসুম বেগম এই প্রথম মুখে হাসি ফুটিয়ে জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ মোটেই না সুইটহার্ট ‘
এক একজনের চোখ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা! ‘
শার্লিন বেগম অধৈর্য হয়ে মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে বলে উঠলো, ‘ এইসব নাটক বন্ধ করো সবাই আর আসলে এখানে হচ্ছেটা কি.?’
ইতিমধ্যে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে শফিক সাহেব ও। শফিক সাহেব ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এখানে কি হচ্ছে.? আর ভাবি কখন ছাড়া পেলেন.? আমি জানতাম আপনি কখনো এমন কিছু করতেই পারেন না! সেই ছোট থেকে আপনাকে দেখে এসেছি। তবে মনে হয়ে ছিল বিষয়টা খুব বেশি জটিল এতো চেষ্টা করেও দেখাটুকু আপনার সাথে করতে দেয়নি বলে আড়চোখে আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান কম বেয়াদবি কাল করেনি। এতো কিসের রাগ আয়ানের কুলসুম বেগমের উপর.?
শফিক সাহেব কোর্ট খুলে সোফায় বসতেই কুলসুম বেগম বলে উঠলো, ‘ কেন আমাকে দেখে খুশি হওনি.?’
‘ কি বলছেন ভাবি সারারাত আমি আর অভ্র একটুও ঘুমাইনি, অনেক ঘুরেছি কিন্তু আপনার দেখা পাওয়া সম্ভব হয়নি, আজ ভেবে ছিলাম এখন অভ্র কে নিয়ে আবার যাব।’
জবা আয়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,’ আপনাকে আরও আধাঘন্টা আগে বলা হয়েছে শায়েলা সিদ্দিকী কে নিয়ে যেতে।’
আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে জবাকে বলে উঠলো, ‘ নিজের হুঁশে আছো.? কি বলছো তুমি.? তোমার কথায় আমি আম্মুকে কেন ধরে নিয়ে যাব.? আম্মুর অপরাধ কি.?’
জবা আয়ানের রাগ দেখে গম্ভীর মুখে বলে উঠলো, ‘ কারণ আমি সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু ‘
জবার এই একটা কথা বজ্রপাতের মতো লাগলো সবার কানে।
আয়ানের কান মনে হয় ভুল শুনেছে সে আবার বলে উঠলো, ‘ কি!.?’
‘ হ্যা যা শুনেছেন তাই, আমিই নিরুপমা নিরু যার নকল নাম জবা ‘
আয়ান কোমরে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলে উঠলো, ‘ ঠিক আছে নিরুপমা নিরু কিন্তু কোনো অপরাধ ছাড়া আমি আম্মুকে কেন ধরে নিয়ে যাব!.?’
নিরুপমা বুঝলো আয়ান নিরুপমার কথা মজা হিসেবে নিচ্ছে সিরিয়াস হচ্ছে না।
নিরুপমা নিজের আসল রুপে ফিরে গেলো। রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আয়ান চৌধুরী ভুলে যাবেন না আপনি এখন ডিউটিতে আছেন! এখানে কেউ আপনার বোন, মা, ভাই নয়, অপরাধী কে অপরাধীর চোখে দেখবেন।’
আয়ান কিছু বলার আগেই ওর মোবাইলে কল আসলো।
‘ জ্বি স্যার…’
…….
‘ ইয়েস স্যার..’
আয়ান ফোন রেখে ছলছল চোখে মায়ের হাতের দিকে তাকালো। লজ্জায় চোখের দিকে তাকাতে পারলো না। নিজের উপর লজ্জা হচ্ছে, লজ্জা হচ্ছে নিজের এই পোশাকের উপর, লজ্জা হচ্ছে দ্বায়িত্বের উপর , নিজের মায়ের হাতে হাতকড়া পড়ানো কতোটা কষ্টের তা আজ জেনো আয়ান অনুভব করতে পারছে। আজকের পর সে আর এই চাকরি করবে না যা ওর মার সম্মানে আঘাত করেছে।
শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখে জেনো এখন এক ফোঁটা ভয়ের রেশ নেই। রাগী দৃষ্টিতে একবার তাকালো জবার দিকে।
জবা কিছুটা হেঁসে বললো,’ যাওয়ার আগে জেনে যাবেন না কিভাবে কুলসুম চৌধুরী ছাড়া পেয়েছেন.?’
শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখে কোনো কৌতুহল কিংবা আগ্রহ দেখা গেলো না। তাও জবা বলতে শুরু করলো
, ‘ আজ থেকে ছয় মাস আগে এক এক্সিডেন্টে মা-রা যায় আসিফ চৌধুরী, আমরা ত সবাই জানতাম আসিফ চৌধুরী মারা গেছে তাই না.? অথচ সবটাই ছিল সাজানো প্লান! আর এটা কার প্লান ছিল জানেন.? সবাই এইবার বেশ আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জবার দিকে।
জবা আঙ্গুল তুললো শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে।
শায়েলা সিদ্দিকী বুক টানটান করে রাগী দৃষ্টিতে এখনো তাকিয়ে আছে জবার দিকে।
জবা আবার বলতে শুরু করলো।
আসিফ কে গাড়িতে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করা হয় তারপর জঙ্গলের গভীরে একটা ভাঙা বাড়িতে হাত পা বেঁধে রেখে প্রতিদিন বলা হতো ‘ তুই নিজের পছন্দে বিয়ে না করলে আজ তোর মা এমনটা করতো না। মায়ের কথা শুনলে আজ এই জঙ্গলে পশুর শিকার হয়ে পরে থাকতে হতো না। মোট কথা এটাই বুঝানো হতো মায়ের বিপরীতে গিয়ে বিয়ে করার জন্য আজ কুলসুম বেগম তাকে এই শাস্তি দিয়েছে সাথে সপ্তাহে দুইদিন শুধু ভাত দেওয়া হতো বাকিদিন শক্ত রুটি। আর সবচেয়ে অমানুষের কাজ যেটা প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে দেওয়া হয়েছে পশুর ভেকসিন জেনো আসিফের আচরণ পশুতে পরিণত হয়। এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিজের জন্মদাত্রী মা কে খু’ন করে। ‘
অভ্র জবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,’ কিন্তু আসিফের সাথেই কেন.?’
‘ কারণ তখন আপনি দেশের বাহিরে ছিলেন। আসিফ কুলসুম বেগম কে খুন করলে ওর জেল,ফাঁসি হয়ে যেত তারপর আপনাকে সরানো তেমন কোনো বিষয় ছিল না।’
” সবকিছু মিথ্যা বলছে এই মেয়ে, আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে!”
শায়েলা সিদ্দিকীর কথা শুনে জবা এগিয়ে এসে বললো,’ আচ্ছা তাই নাকি.? এই যে দেখছেন প্যানড্রাইভ এটার মধ্যে সবকিছুর প্রমাণ আছে, সবগুলো সন্ত্রাসীর জবানবন্দি আছে। আপনি কোনটা মিথ্যা করবেন.? আপনার জন্য আরও সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার নিজস্ব আদালতে। ”
আয়ান বলে উঠলো, ‘ আম্মু এমনটা কেন করবে জবা.? এতে আম্মুর লাভ কি.?’
‘ জবা আয়ানের কাছে এসে বললো,’ পুলিশ হয়েছেন তবে চিন্তা ভাবনা এখনো পুলিশের মতো হতে পারেনি৷ এতে অবশ্য আপনার আম্মুর লাভ নেই সব লাভ আপনার! ‘
‘ আমার.?’
‘ হ্যা আপনার সব সম্পত্তির অধিকারী তখন আপনি হবেন। ‘
আসিফ এগিয়ে এসে শায়লা সিদ্দিকীর সামনে বলে উঠলো , ‘ সম্পত্তির লোভ মানুষ কে অমানুষ বানিয়ে দেয় তাই না মেঝো আম্মু.?’
শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখে কোনো অনুতপ্ত নেই, নিজের কাজের জন্য ভয়, লজ্জা কিচ্ছুটি নেই।
জবা হেঁসে বললো,’ আমি নিরুপমা এখানে এসেছিলাম নিজের কাজে অথচ ফেঁসে গেলাম আপনাদের ঝামেলায়! তবে কি জানেন কেঁচো খুড়তে এসে আমি সাপ পেয়ে গেছি!’
আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল আসিফ বেঁচে আছে। একদিন আমি আর আলিফ জঙ্গলে ঠিক সেই জায়গায় গেলাম যেখানে আসিফের গাড়ি পরে ছিল। জঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে একজন লোককে জঙ্গলের ভেতর জেতে দেখে আমরা তার পিছু নেই তারপর সবকিছু দেখতে পাই। সুযোগ বুঝে নিজেদের টিম নিয়ে গিয়ে আসিফ কে উদ্ধার করি তারপর এক মাস ওর ট্রিটমেন্ট চলে আস্তে আস্তে আসিফ সুস্থ হয়ে উঠে।
কাল এটা আসিফ আর আমার প্লান ছিল। প্লান করে আসিফকে দিয়ে কুলসুম বেগম কে নিয়ে যেতে বলি যেনো শায়েলা সিদ্দিকীর আসল রুপ কিছুটা সবার সামনে আসে।
জবা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে, ‘ আপনি যখন নিজের রুমে আমাকে আঁটকে গিয়ে ছিলেন, আপনি হয়তো ভুলে গিয়ে ছিলেন আমি নিরুপমা নিরু! সাধারণ কেউ নই প্রতিদিন পাইপ বেয়ে আশা যাওয়া করি দরজা ত আমার জন্য নয়। আপনি বের হয়ে যাওয়ার পর আমি ব্যালকনি দিয়ে নেমে গিয়ে ছিলাম আর সাররাত কুলকুল চৌধুরী আমার হেফাজতে ছিল। সেই জন্য কেউ হাজার বার চেষ্টা করেও উনার দেখা পায়নি।
জবা বলেই একটা লম্বা শ্বাস ফেললো।
আয়ান মা’য়ের এমন কাজে লজ্জায় চোখ মিলালো না কারো সাথে। চুপচাপ হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেলো রোবটের মতো।
জবা একবার সবার দিকে তাকিয়ে নিজেও চলে গেলো রুমের দিকে। সিঁড়ির ঘোরায় এসে সবার দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ আর কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে সন্ধার পর করে ফেলবেন আমি সকালে চলে যাচ্ছি। ‘
বেলী আঁতকে ওঠে বলে উঠলো, ‘ কোথায় যাচ্ছেন.?’
জবা হেঁসে বললো,’ বেলী আমি এখনো তোমার কাছে সেই আগের জবা আপনি করে বলো না পরপর লাগে। ‘
বেলী জবার কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ তুমি চলে যাবে.?’
জবা বেলীর মাথায় হাত রেখে চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,’ আমার এখানে থাকার আসল উদ্দেশ্য ত আমি পেয়ে গেছি শুধু এই সমাজের সামনে তুলে ধরা বাকি, আগামীকাল এটাও শেষ করে ফেলবো পাপ কখনো গোপন থাকে না তা আকাশের উজ্জ্বল তাঁরার মতো জ্বলজ্বল করে বেলী। আমি আমার সকল পাপীদের শাস্তি নিজ হাতে দিয়ে নিজের ঠিকানায় চলে যাব। একদিন ত যেতেই হতো।’
কুলসুম বেগম জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার আসল পরিচয় কি আমরা কেউ জানতাম না! এখনো তুমি কি সেটা আমাদের কাছে বড় বিষয় না, বড় বিষয় হলো তুমি আসিফের বউ। আর আসিফ ফিরে এসেছে তুমি কোথাও যাচ্ছ না।’
জবা আসিফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিন্তু আন্টি আসিফের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্কে নেই সবটাই একটা সাজানো প্লান ছিল এই বাড়িতে থাকার যা আসিফ আমাকে বন্ধু হয়ে হেল্প করেছে।’
দ্বিতীয় বারের মতো আবারও উপস্থিত সবার হৃদয় ভাঙলো। আজ বুঝি একের পর এক হৃদয় ভাঙার দিন.? প্রথম আপন হয়ে শায়েলা সিদ্দিকীর এই ভয়ংকর আড়ালে চলা প্ল্যান সবার হৃদয় ভেঙেছে, জবার সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু হওয়া সবাই কে অবাকের উপর অবাক করেছে,। সবার মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে কেন নিরুপমা জবা সেজে আসিফের হাত ধরে এই বাড়িতে পা রেখেছে.? এতো অত্যাচার কেন সহ্য করে পরে ছিল এখানে.? তার উপর সে আসিফের সম্পর্কে কেউ নয়! মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কারণ কি.? নিরুপমার আসলে উদ্দেশ্য কি.? সে কেন এসেছে..? এতো এতো প্রশ্ন সবাই কে ভাবিয়ে তুলে ছিল।
এইসব ভাবনার মাঝে একজনের মুখে হাসি ছিল। সে ত প্রথম থেকেই সবকিছু জানতো।
এদিকে নিরুপমা আস্তে ধীরে সবাই কে চিন্তায় ফেলে শান্তির ঘুম দিতে নিজের রুমে চলে গেলো৷ কাল যে ওর অনেক কাজ নাকি। নিজের মা’য়ের পাপীদের নিজ হাতে নিজের আদালতে ঝুলানো বাকি। নিরুপমা যে আইন বলতে নিজের আইন বুঝে, আদালত বলতে নিজের তৈরি আদালত কে বুঝে যেখানে সে নিজেই উকিল, নিজেই জর্জ আবার নিজেই শাস্তিদাতা। নিজের হাতে যত্ন করে সে সবগুলো নরপশুর দেহ থেকে হৃদপিণ্ডটা আলাদা করবে।
আগামীকাল যে ওর অনেক কাজ এখন একটা শান্তির ঘুম প্রয়োজন। ওদের শাস্তি দেওয়ার আগে কি শান্তির ঘুম আসবে.?? জবা চোখ বন্ধ করতেই অনুভব করলো ও ছাড়াও রুমে দ্বিতীয় কেউ আছে। জবা বাকা হেঁসে মনে মনে বলে উঠলো, ‘ বোকাপুরুষ তার পারফিউমের ঘ্রাণ যে জবার খুব চেনা!’
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।