#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
জবা আলগোছে শুয়া থেকে উঠে বসলো।
হাত উঁচু করে এলোমেলো চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে খোঁপা করে সামনে তাকালো।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভ্র।
জবা বিছানার পাশে টি-টেবিলের উপর থেকে ফল কাটার ছুরিটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ছুরিটা হাল্কা করে চেপে ধরলো অভ্রর গলায়।
অভ্র মুচকি হেঁসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জবার দিকে।
জবা চেয়েছে অভ্র ভয় পাক, অভ্রের চোখে সে ভয় দেখতে চেয়েছে অথচ ছেলেটা হেঁসে তাকিয়ে আছে।
‘ তোমার সাহস কি করে হয় পারমিশন না নিয়ে চোরের মতো আমার রুমে প্রবেশ করার!’
অভ্র জবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখন তোমাকে পাক্কা ডাকাত রাণী লাগছে, ডাকাত রাণী কি জানে না চোর চুরি করার আগে পারমিশন নেয় না ‘
জবা বোকার মতো বলে উঠলো, ‘ তাহলে কি চুরি করার পরে নেয়!.? ‘
অভ্র উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠলো, ‘ পারমিশন নিলে এটাকে চুরি কিভাবে বলে..বোকা রাণী.?’
জবা রেগে ছুরিটা আরও একটু চেপে ধরে হয়তো ছুরিটা ধারালো ছিল অভ্রর গলার কিছু অংশ কেটে গেছে হাল্কা রক্ত দেখা যাচ্ছে,’ আমার নাম নিরুপমা নিরু তোমার এইসব ফালতু নামে ডাকবে না। এখনো তোমার আচরণ নিব্বাদের মতো রয়ে গেছে। ‘
অভ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো ‘ তুমি নিব্বি হলে আমি নিব্বার আচরণ করলেই দোষ! এখানে নিব্বাদের মতো কিই বা বললাম.? তুমি যা তাই ত বলছি।’
অভ্র জবার চোখের সামনে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতে হাত বাড়াতেই জবা চোখ রাঙ্গিয়ে বলে উঠলো, ‘ খবর্দার হাত বাড়াবে না, হাত ভেঙে দিব তোমার ‘
অভ্র হাত গুটিয়ে নিল। এমনিতেই গলায় ছুরি ধরে আছে, ছুরির আঘাতে গলায় হাল্কা জ্বলছে। এই মেয়ের উপর বিশ্বাস নেই পাক্কা গুন্ডি মেয়ে, এমনি এমনি ত আর পুরো সিআইডি ডিপার্টমেন্ট একটা মেয়েকে ভয় পায় না!
জবা অভ্র গলা থেকে ছুরি নামিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে আঙ্গুল অভ্রর চোখের সামনে রেখে বললো,’ জবারাণী, ডাকাত রাণী, বোকা রাণী এইসব ফালতু নামে আমাকে ডাকবে না। আমি আজ থেকে শুধু মাত্র নিরুপমা নিরু ‘
‘ জবা নামটা ত আমারি দেওয়া ছিল ‘ রক্তজবা’ শেষ পর্যন্ত আমার দেওয়া নামেই আমার বাড়িতে আশ্রয় নিলে। মনে মনে আমাকে এতো ভালোবাসতে কখনো বলোনি ত!’
‘ তোমাকে ভালোবাসব আমি.? জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছো.? এতোটাও খারাপ দিন আসেনি আমার!’
অভ্র জবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে আমার দেওয়া নামেই কেন নিজেকে রাঙিয়ে রাখো.? কেন চোখ সরিয়ে নাও.?”
‘ শুধু মাত্র নিজের লক্ষে পৌঁছানোর জন্য নামটা ব্যাবহার করেছি, আপনার এইসব ফালতু আলাপ শেষ হলে আসতে পারেন’
” চুলগুলো বেঁধে নাও খুবই ভয়ংকর লাগছে, এলোমেলো শাড়ি খোলা চুল ডাইনী ডাইনী লাগছে।”
ঝগড়া করার মাঝে কখন চুলগুলো ছুটে গেলো!
জবা চুলগুলো খোঁপা করে নিল। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে এই সুন্দর দৃশ্যটা মনে একে নিল অভ্র।
জবা অভ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রেগে বললো,’ তোমার ত নজরও ভালো না বের হও রুম থেকে। না হয় ডাইনী ঘার মটকাতেও খুব ভালো পারে । ‘
অভ্র জবার এমন কথায় থতমত খেয়ে গেলো। সে কখন খারাপ নজরে তাকালো.? সে ত শুধু…
জবা অভ্রর সামনে ছুরি ধরে বলে উঠলো, ‘ যাবে নাকি আবার গলায় ছুরি বসাবো.? অসভ্য ছেলে মাঝ রাতে একটা মেয়ের রুমে আসতে লজ্জা করলো না.? অহ্ কাকে কি বলছি তোমার লজ্জা থাকলে ত করবে।’
অভ্র এক হাত দিয়ে কপাল স্লাইড করে এদিক ওদিক তাকিয়ে জবার হাত ধরে ছুরিটা বুকের বা পাশে ধরলো।
‘ এক কাজ করো তুমি তোমার কথার আঘাতে আমাকে খু’ন না করে ছুরিটাই বুকে বসিয়ে দাও’
‘ একি আল্লাহ তোমার এতো বড় সাহস!’
জবার মুখের রিয়াকশন দেখে অভ্র ভয় পেয়ে গেলো। সে আবার কি বললো.?
‘ কি হয়েছে ‘
‘ তুমি! তুমি আমার হাত কোন সাহসে ধরেছো.?’
অভ্র একটা হতাশার শ্বাস ফেলে জবার হাত ছেড়ে দিল। জবা এখনো ঠোঁট গোল করে, চোখ বড় করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি কালই তোমাকে আমার স্পেশাল থেরাপির রুমে নিয়ে থেরাপি দিব তোমার মাথায় থাকা সকল কুবুদ্ধি বেরিয়ে যাবে।’
‘ জবা কি বলছো তুমি নিজে জানো.? এতো ছোট একটা বিষয় এতো বড় করে কেন দেখছো.? আমার মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরছিল তাই এসে ছিলাম জিজ্ঞেস করতে অথচ তুমি কি থেকে কি ভেবে নিচ্ছ! আমার চরিত্র খারাপ নয়, আমি একজন ডাক্তার অথচ তুমি এমন আচরণ করছো মনে হচ্ছে কোনো ধ*** তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ‘
জবা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বললো, ‘ আজ আপনি এই শহরের এক নম্বার হার্টের ডাক্তার হতে পারেন কিন্তু আজ থেকে ছয় বছর আগের সেই রাতে আপনি একজন ধ**** ছিঃ ভাবতেও আমার ঘৃণা হয়।’
অভ্র রাগে জবার কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। জবার কানে ফিসফিস করে বলে উঠে, ‘ কোনো এক সকালে যদি তোমার চোখে সবটা মিথ্যা মনে হয়.? পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধ পুরুষ, পবিত্র পুরুষ আমাকে মনে হয়..? নিজের এমন চিন্তা ভাবনার জন্য যদি নিজেকে অপরাধী মনে হয়.? তখন যদি এই আমিটা আর না থাকি.? তুমি কি সবকিছুর জন্য আপসোস করবে না.?
জবা অভ্র কে নিজের থেকে ছাড়ানোর জন্য ধাক্কা দেয় তবে কিছুই লাভ হয় না। এক চুলও নড়ে না অভ্র।
‘ না হবে না কারণ তুমি এমনটাই, আমার ভাবনার থেকেও জঘন্য! আর আমার এই ভাবনায় কোনো ভুল নেই। ভেবে ছিলাম ভালো হয়ে গেছো কিন্তু বেলীর সাথে যেটা করলে তারপর থেকে তোমাকে দেখলেই ঘৃণা হয় আমার। এর শাস্তি তোমাকে আমি দিব শুধু অপেক্ষা করো, নারীদের অপমান করা,অসম্মান করা তোমার রক্তে মিশে গেছে। তোমার জন্য একটা মেয়ে বেঁচে আছে তবে ভালো করে খেয়াল করলে দেখবে সে মৃত।
অভ্র বিষাদ ভরা চাহনিতে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি ত তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমাকে কেন খেয়াল করলে না কখনো.? আমি ত তোমার চোখে ঘৃণা দেখেই মরে গিয়ে ছিলাম সেই দিন।’
জবা অভ্র কে ধাক্কা দিয়ে বললো,’ তোমার নাটক শেষ হলে বেরিয়ে যাও’
অভ্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ যাকে এতো ঘৃণা করো তাকেই কাল চুমু খেয়ে ছিলে তাও ঠোঁটে এটা কেমন ঘৃণা! আদরও করো আবার ঘৃণাও ।’
জবা অবাক হয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই অভ্র বড় বড় পা ফেলে চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
জবা রাগে দরজা শব্দ করে বন্ধ করে চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠলো, ‘ অসভ্য পুরুষ! নিজেই খেয়ে ছিল আর এখন আমাকে দোষ দিচ্ছে! ছিঃ বলে নিজের ঠোঁট বার বার ঘষতে শুরু করলো।
_____________
সকাল থেকে বাড়িটা জমজমাট মনে হচ্ছে। অনেকদিন পর মনে হচ্ছে বাড়িটা নিজের আসল রুপে ফিরে এসেছে।
লতিকা কে ফিরিয়ে এনেছে। রান্না ঘরে শার্লিন বেগম আর লতিকা মিলে নাস্তা করছে।
শার্লিন বেগম বেলীর জন্য কফি নিয়ে ওর রুমে গেলো। মেয়েটা কেমন হয়ে গেছে কারো সাথে কথা বলে না, নিচে আসে না সারাক্ষণ রুমে আঁটকে থাকে। বাড়িতে এর মধ্যে একের পর এক ঝামেলা চলছেই। শার্লিন বেগম ভেবেছে ঝামেলা সব মিটে গেলে বেলীকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে।
কুলসুম বেগম সোফায় বসে চা খাচ্ছেন পাশেই শফিক সাহেব পেপার পড়ছে।
বাড়িতে প্রবেশ করলো আয়ান। সে রাতে মায়ের এইসবের জন্য লজ্জায় আর বাড়িতে ফিরেনি। আসিফ, অভ্র কে সে সব সময় নিজের ভাইয়ের মতো দেখেছে সেখানে ওর আম্মু কিভাবে পারলো এমনটা করতে.?
আয়ান একবার ওর আব্বুর দিকে তাকালো। লোকটাকে আয়ান তেমন পছন্দ করে না। মনে হয় না বুঝ হওয়ার পর কখনো এক জায়গায় বসে দুইটা কথা বলেছে উনার সাথে। লোকটার বউ জেলে অথচ তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি এমনো মানুষ হয়! শতহক, যতবড় অন্যায় করুক তার ত স্ত্রী!
আয়ান কুলসুম বেগমের দিকে তাকালো না। মায়ের এমন অপরাধে নিজেকে বাড়ির সবার সামনে ভীষণ ছোট কিছু মনে হচ্ছে।
আয়ান সোজা চলে গেলো নিজের রুমে।
বেলী তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। আয়ান সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় বসলো।
বেলী ধীর পায়ে রুমে আসলো। আয়ান কে দেখে বিরক্ত হয়ে বারান্দায় আবার চলে যেতে ধরলে আয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ বেলী মাথাটা ধরে আছে এক কাপ চা নিয়ে আয়’
বেলীর ইচ্ছে করলো মুখের উপর পারবো না বলে দিতে। মনের কথাটা গলা পর্যন্ত আসতেই গিলে নিল বেলী। আয়ানের এমন গম্ভীর কন্ঠ বলে দিচ্ছে ওর মন মেজাজ তেমন ভালো নেই কথা বাড়াতে আর ইচ্ছে করলো না বেলীর সে বেরিয়ে গেলো।
আসিফ বসে নাস্তা করছে কুলসুম বেগম নিজ হাতে ছেলের সবকিছু এগিয়ে দিচ্ছেন৷ মৃত ছেলে হঠাৎ জীবিত হয়েও ফিরে এসেছে মায়ের কোলে।
অভ্র রেডি হয়ে নিচে আসলো হসপিটাল যাবে। কুলসুম বেগম ওকেও বললো নাস্তা করে যেতে। অভ্র হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,’ সময় নেই আম্মু এমনিতেই লেইট হয়ে গেছে। ‘
আসিফ বললো সেও যাবে অভ্রর সাথে। হসপিটালের রাস্তায় ওর কিছু কাজ আছে।
অভ্র আসিফ বেরিয়ে গেলো।
বেলী চা নিয়ে উপরে আসলো। আয়ান বেলীর থেকে চায়ের কাপ নিয়ে বললো,’ মাথাটা ধরে আছে একটু টিপে দে ত’
বেলীর প্রচন্ড রাগ হলো।
‘ তোমার মাথা ধরে আছে আমাকে কি তোমার কাজের লোক মনে হয়!.?’
আয়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে বেলীর দিকে তাকালো।
‘ তোকে কাজের লোক কেন ভাবতে যাব.? এটা খুবই সাধারণ বিষয় ছিল বেলী!’
‘ তোমার কাছে সব কিছুই সাধারণ মনে হয় তাই না.? ‘
‘ বেলী আমি এখন ঝগড়া করতে চাচ্ছি না’
‘ আর আমি তোমার মুখটাও দেখতে চাচ্ছি না! কন্ঠটাও শুনতে চাচ্ছি না’
আয়ানের মাথার যন্ত্রণায় চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখে পানি ছলছল করছে। অথচ পুরুষের যে কান্না করা নিষেধ! আয়ান যে ভেতর ভেতর একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে সেটা কেন কেউ দেখছে না.? কেন বুঝছে না.? শখের নারী হারালো! চোখের সামনে থেকেও তাকে চাওয়া যে আজ অন্যায়, প্রাণের চেয়েও প্রিয় মায়ের এমন রুপ! এমন সত্যি সামনে আসলো! সত্য এতো ভয়ংকর হয় কেন.? মানুষটাকে ভেতর থেকে ভেঙে চুরমার করে দেয়! তার উপর শখের নারীর আসল পরিচয় সবকিছু জেনো আয়ান কে ভেতর ভেতর ভেঙে চুরে দিচ্ছে। না কাউকে বলতে পারছে আর না কেউ বুঝছে।
বেলী আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।
বেলী কিছু বলার আগেই দরজা থেকে কেউ বলে উঠলো, ‘ বেলী নিচে যাও ছোট তোমাকে ডাকছে’
বেলী দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো কুলসুম বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
বেলী কিছু বলতে চাইলে কুলসুম বেগম ইশারায় আবারও বেরিয়ে যেতে বললো।
বেলী চুপচাপ বেরিয়ে গেলো।
কুলসুম বেগম আয়ানের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,’ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো আসিফ, অভ্রের মতো, আমি টিপে দিচ্ছি।’
আয়ান মাথা নিচু করে আছে।
কুলসুম বেগম ফের বললো,’ তুমিও আমার আরেক ছেলে আয়ান, মা’য়ের কোলে মাথা রাখতে পারো।’
এই সময় হয়তো এইটা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল আয়ানের।
____________
জবা একটা অন্ধকার রুমে প্রবেশ করতেই রুমের লাইট জ্বলে উঠলো।
সেই রুমে একটা ছোট টেবিল আর দুই পাশে দুইটা চেয়ার রাখা।
একটা চেয়ারে বসে আছে শায়েলা সিদ্দিকী।
জবার গায়ে কালো শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট, মাথায় কালো ক্যাপ।
জবা সোজা এসে শায়েলা সিদ্দিকীর বরাবর চেয়ারটায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শায়েলা সিদ্দিকী।
জবা আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’ আমার লোকেরা আপনার আপ্যায়ন ঠিক মতো করেছে ত.? চা, কফি সাথে শরবত কিছুর কমতি পরেছে কি.?
শায়েলা সিদ্দিকী জবার কথার পিঠে বাঁকা হেঁসে রুমের চারপাশে তাকিয়ে বললো,’ আমাকে এখানে নিয়ে আশার কারণটা কি.? আমি ত পুলিশের হেফাজতে থাকার কথা।’
জবার পাশে আলিফ দাঁড়িয়ে আছে। জবা শায়েলা সিদ্দিকীর টেবিলের উপর একটা ডায়েরি রেখে বলে উঠলো, ‘ আপনি ত আমার শিকার, আমার শিকার কে আমি পুলিশের উপর ছেড়ে দেই কিভাবে.? ওই সব আইনকানুন আমি নিজেই তৈরি করি। আমার নিজের নির্দিষ্ট আদালত, উকিল,জর্জ, শাস্তির মঞ্চ আছে।
শায়েলা সিদ্দিকী জবার কথা শুনে রেগে টেবিলের উপর দুই হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ তুমি আসলে কি চাচ্ছ!.? সবটাই আমাকে এই পর্যন্ত আনার জন্য তোমার প্ল্যান ছিল তাই না!.? আগুন নিয়ে খেলছো মেয়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে!’
জবা শায়েলা সিদ্দিকীর কথা শুনে উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। হাসি থামিয়ে ডায়েরির দিকে ইঙ্গিত করে বললো,’ বেশি কিছু চাচ্ছি না আপাতত শুধু আমার মায়ের খুনিদের চাচ্ছি! দেখি কতোটুকু পুড়তে পারি আর কতোটুকু পুড়াতে পারি!’
শায়েলা সিদ্দিকী ভ্রু কুঁচকে ডায়েরির দিকে তাকালো। উপরে সুন্দর করে রঙিন কলমে খুদাই করে লেখা ” মায়া তালুকদার ”
সাথে সাথে শায়েলা সিদ্দিকী চোখ মুখ ভয়ে রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
দেখ বেলী মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ তার উপর তোর প্যানপ্যানে মাথা ধরে গেছে।
বেলী রেগে কোমরে দুইহাত দিয়ে আয়ানের সামনে দাঁড়ালো। একটু ঝুঁকে আয়ানের মুখের সামনে আঙ্গুল দিয়ে শাসিয়ে বলে উঠলো, ‘ দেখো..
বেলী আর কিছু বলার আগেই আয়ান বললো,’ কি দেখবো.? তোর মতো পেত্নী কে দেখার থেকে ওই যে দেখছিস, চোখের ইশারায় জানালার পাশের একটা আমড়া গাছ দেখালে যেটার পাতা ঝড়ে গেছে শুধু মাত্র ঢাল দেখা যাচ্ছে সেখানে ঢালের উপর একটা কালো কুচকুচে কাক বসে আছে।
আয়ান সেই কাক কে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ তোকে দেখার থেকে আমি বরং এই কাক কে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে সর সামনে থেকে। আসছে চোখ রাঙ্গিয়ে ফালতু আলাপ করতে।’
বেলী চোখ ছোট ছোট করে, বন্ধ ঠোঁট জোরা হাতে করে রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি আমাকে অপমান করলে.? আমি তোমার থেকে হাজার গুণ সুন্দর আছি, তামাটে একটা গায়ের রং নিয়ে এতো ভাব দেখাচ্ছ! ওই কাকের সাথে আমার না তোমার তুলনা করা যায়। ‘
হয়েছে তোর.? এইবার বের হ।
~আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোমার উপর যে সং সেজে সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলবো!
আয়ান মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে সোজা বেলীর দিকে তাকিয়ে কাটকাট কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ তাহলে এভাবে আমার উপর ঝুঁকে কেন আছিস.?
বেলী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ এই জন্যই লোকে পুলিশ কে কাঠখোট্টা, পাষান, কসাই বলে’
আয়ান হাই তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলিশ খুঁজে বেলীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, ‘ একটা কথা ভুল বললি। কসাই হলো তোর ক্রাশ বলিস আর প্রেমিক পুরুষ বলিস অথবা না হওয়া হবু জামাই ও বলতে পারিস।’
বেলী মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে বলে উঠলো, ‘ আমার যাই হোক তোমার মতো ত জবা জবা করে পিছু পিছু নির্লজ্জের মতো ঘুরঘুর করিনি। ‘
বেশ চটে গেলো আয়ান। রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ দেখ বেলী বেশি বেশি বললে গালে কয়েকটা লাগিয়ে দিব । এমনিতেই বলেছি মন মেজাজ ঠিক নেই৷ এক ত তোর জন্য আমার পুরো লাইফটা নষ্ট হয়ে গেছে আবার এখন আসছিস আমাকেই কথা শুনাতে.?’
বেলীও কম যায় না দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমাকে বলেছি আমাকে বিয়ে করতে.? আজ তুমি বিয়ে না করলে অভ্র ভাই বাড়ি ফিরলে বড় আম্মু আমাদের বিয়ে দিয়ে দিত।’
আয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগে গজগজ করতে করতে বেলীর দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ যার জন্য চুরি করেছি সেই বলে চুর! এতো মানুষের সামনে কিভাবে এই মুখটা দেখিয়ে বেড়াতি.? বাড়ির, কোম্পানির কতো বড় ক্ষতি হতো.? ‘
বেলী ব্যাথায় ছটফট করছে।
আয়ান ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো বেলীকে।
বেলী অশ্রু টলটল চোখে বলে উঠলো, ‘ সমাজ, বাড়ি, কোম্পানি এইসবের জন্য আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিলে.? আমার ভালোবাসা, আমার মানুষটা এক বাড়িতে থেকেও আমার না, সম্পর্কে সে আজ আমার দেবর। এইসব আমি কিভাবে সহ্য করে বেঁচে আছি!’
আয়ান কিছু বলতে গিয়েও বেলী অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। বেশ মায়া হলো নিচে পরে থাকা মেয়েটার জন্য । এই সম্পর্কের বাহিরেও ত এই মেয়েটার সাথে আয়ানের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। ছোট থেকেই এরা একজন আরেকজন কে সহ্য করতে পারে না, দেখলেই ঝগড়া, না দেখা হলেও নিয়ম করে একজন আরেকজনের রুমে গিয়ে একটা না একটা ঝামেলা পাকিয়ে আসবেই। এটাকে ওরা সুন্দর একটা নাম দিয়ে ছিল ” গভীর শত্রুতামু.. বলা যায় শত্রু শত্রু খেলা” আয়ানের ছোট বোন, আয়ান ত সব সময় ছোট বোনের মতোই দেখে এসেছে। ” ছোট বোন যাকে ভেবেছে সে আজ বউ!”
ভাবতেই আয়ান মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সে বেলীর হাত ধরে এক টানে দাঁড় করিয়ে টেনে নিয়ে রুম থেকে বের করে দিল।
কয়েক সেকেন্ডে কি হয়ে গেল! বুঝে উঠার আগেই আয়ান বেলীর মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় এসে বসলো। পাশেই অবহেলায় তোয়ালেটা পরে আছে।
আয়ান খুব ভালো করেই জানে বেলী এতোটা রেগে কেন এসে ছিল। তোয়ালেটা নিয়েই ঝগড়া করতে এসে ছিল উল্টো কি থেকে কি হয়ে গেলো।
এরা কি কখনো অন্য স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক হতে পারবে..? এই গভীর শত্রু শত্রু খেলা শেষ হয়ে কি কখনো একজন আরেকজনের গভীর প্রেমে পড়বে.?
______________
নিরুপমা শিকারী চোখে তাকিয়ে আছে শায়েলা সিদ্দিকীর ঘাবড়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে।
শায়েলা সিদ্দিকী মায়াভরা দৃষ্টিতে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ জবা..
আর কিছু বলার আগেই নিরুপমা কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি জবা নই, আপনার সামনে সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু তালুকদার। ‘
শায়েলা সিদ্দিকী আশেপাশে তাকিয়ে থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ তুমি অকারণে আমাকে এখানে এনেছো, আমাকে আর জিজ্ঞেস করার মতো কিছুই নেই এই কেইসে। আমি নিজেই আসিফ কে অপহরণ করেছি, সবকিছু আমি মেনে নিচ্ছি।’
নিরুপমা বাকা হেঁসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নিরুপমার এই নিরবতা বুঝিয়ে দিচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। আলিফ নিরুপমার নিরবতা দেখে মনে মনে বলে উঠলো, ‘ এই মহিলার সাথে কিসের শত্রুতামী হতে পারে বড় ম্যামের.? এই দ্বিতীয় বার এখানে নিরুপমা শায়লা সিদ্দিকী কে এনেছে।
আলিফ সিআইডি অফিসে জয়েন হয়েছে আজ চার বছর। চার বছরে দ্বিতীয় বার নিরুপমা দ্বিতীয় বার এই রুমের দরজা খুলেছে।
প্রথম খুলে ছিল আজ থেকে দুই বছর আগে । কি ভয়ংকর মৃত্যু দিয়ে ছিল ওই লোকটাকে ভাবলে এখনো আলিফের গায়ের পশম খাঁড়া হয়ে যায়।
লোকটার দোষ ছিল এই একই। আলিফ ওইদিন ও দেখেছে নিরুপমা কে এই ডায়েরিটা বের করতে । কি আছে এই ডায়েরি তে.? ‘ মায়া তালুকদার ‘ কে.? কি হয়ে ছিল উনার সাথে.?
আলিফের ভাবনার মাঝে ঘর কাটিয়ে হেঁসে উঠলো নিরুপমা। কি ভয়ংকর অদ্ভুত হাসি.. ঘা ছমছম করে উঠলো। এই মাঝ রাতে চারপাশে নিরবতা, রুমে শুধু হাল্কা ডিম লাইট জ্বলছে তার মাঝে নিরুপমার এমন ভয়ংকর হাসি।
শায়েলা সিদ্দিকী অবাক নয়নে তাকালো নিরুপমার দিকে। সেই সকালের শাড়িটা পড়নে, শায়েলা সিদ্দিকী শাড়িটা চিনে। চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে চেয়ারে বসার কারনে ফ্লোরে এই লম্বা চুলগুলো হেলদোল খাচ্ছে, বড় বড় টানাটানা চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে, ফর্সা মুখটায় নিরুপমা কে দেখতে কি ভয়ংকর লাগছে।
শায়েলা সিদ্দিকী নিরুপমা কে তেমন গুরুত্ব হিসেবে নিলো না৷ পুরো একটা বছর নিজ বাড়িতে মেয়েটা কে দেখেছে। লাজুক, ভীতু একটা মেয়ে। হঠাৎ প্রশ্ন জাগলো শায়েলা সিদ্দিকী মনে নিরুপমা এতোদিন মিথ্যা পরিচয়ে কেন থেকেছে ওই বাড়িতে.? উদ্দেশ্য কি.?
শায়েলা সিদ্দিকী হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ তুমি আসলে কে.?’
নিরুপমা খুব শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল ‘ মায়া তালুকদারের মেয়ে নিরুপমা তালুকদার ‘
যা ভেবে ছিল তাই সত্যি হয়ে গেলো!.? নিরুপমা কে ওই বাড়িতে প্রথম দিন দেখেই শায়েলা সিদ্দিকীর এমনটাই মনে হয়ে ছিল। কিন্তু এতো একটা গুরুত্ব দেয়নি।
নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে ঝুকে বললো,’ চিনতে পেরেছেন.?’
শায়েলা সিদ্দিকী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন, ‘ আ…আমি কিভাবে চিনবো.?’
নিরুপমা টেবিলের উপর ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বললো,’ সে কি প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর মেয়েকে না চিনতে পারেন তাকে ত চিনার কথা’
কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো শায়েলা সিদ্দিকী, ‘ কে আমার বান্ধবী.? আমার কোনো বান্ধবী নেই।’
হঠাৎ নিরুপমার কি হলো কে জানে। নিরুপমা আলিফের পাশ থেকে একটা ছুরি নিয়ে বসিয়ে দিলো শায়েলা সিদ্দিকীর হাতের উপর।
গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো শায়েলা সিদ্দিকী। ব্যাথায় মনে হচ্ছে এই বুঝি দেহ থেকে রুহটা বের হয়ে যাবে।
নিরুপমা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ মিথ্যা কথা এখানে যত ইচ্ছে বলতে পারো তার পরিবর্তে প্রতিটা মিথ্যা কথার জন্য এমন গিফট ও রেডি থাকবে। কথা বলার আগে নেক্সট ভেবেচিন্তে বলবে, এখানে মে’রে ফেললেও কেউ আসবে না তোমাকে বাঁচাতে। তোমার ছেলেও না।
শায়েলা সিদ্দিকী চিৎকার বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ তুমি আমাকে মারবে না সেটা আমি জানি’
নিরুপমা আলিফের কাছ থেকে পিস্তল নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাে বললো, ‘ আচ্ছা তাই নাকি.?’
শায়েলা সিদ্দিকী মুখে ঝুলে আছে শয়তানি হাসি। হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ আমার কাছ থেকে তোমার অনেক কিছু জানার আছে। তাই তুমি আমাকে মারতে পারবে না।’
হাত থেকে গড়িয়ে রক্ত পরছে।
নিরুপমা পিস্তল রেখে শায়েলা সিদ্দিকী দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাহ্ আমার সম্পর্কে ভালোই বুঝে ফেলেছো,গুড গুড।’
শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখে একটুও ভয় নেই। নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আলিফ ওদের নিয়ে আসো’
আলিফ মিনিট দুয়েকের মধ্যে একটা হাত, মুখ বাঁধা মেয়েকে নিয়ে এসে উপস্থিত হলো।
শায়েলা সিদ্দিকী অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ ওকে কেন এনেছো..? ‘
নিরুপমা ঝুকে এসে শায়েলা সিদ্দিকীর কানে কানে ফিসফিস করে বললো,’ এক জানোয়ারের মুখ থেকে সত্য কথা বের করতে। ‘
” মৌরি!” হ্যা নিরুপমা মৌরিকে ধরে এনেছে তাতে একটু ভয় পেলেও পর মুহূর্তে শায়েলা সিদ্দিকী মুখে আবার সেই বিশ্রী হাসি ঝুলিয়ে রাখলো।
নিরুপমা অবাক না হয়ে পারলো না। শায়েলা সিদ্দিকী কোনো কিছুতেই ভয় পাচ্ছে না। যতটা সহজ ভেবে ছিল শায়েলা সিদ্দিকীর মুখ থেকে কথা বের করতে পারবে নিরুপমা এখন মনে হচ্ছে তার থেকে অনেক কঠিন হবে।
শায়েলা সিদ্দিকী জানে মুখ খুললেও তার মৃত্যু, না খুললেও মৃত্যু তাহলে সে বলবে কেন.? সে কিছুতেই কিছু বলবে না। বলবে না সে কি করে ছিল মায়া তালুকদারের সাথে।
নিরুপমা বসা থেকে দাঁড়িয়ে আবার টেবিলের উপর দুই হাতের ভর ছেড়ে দিয়ে শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ কালকের জন্য তৈরি হয়ে নাও। কাল তুমি নিজ মুখেই বলবে মায়া তালুকদারের সাথে কি হয়ে ছিল। ‘
শায়েলা সিদ্দিকী শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে নিরুপমার যাওয়ার দিকে। মনে হচ্ছে সর্গের কোনো পরী হেঁটে যাচ্ছে, হাঁটায়ও এতো তেজ!
নিরুপমা যেতে যেতে একজন লোককে ইশারা করে বলে উঠলো, ‘ এর হাত থেকে ছুরিটা বের করে কাপর বেঁধে দাও কাল পর্যন্ত ত বেঁচে থাকতে হবে। এক ফোঁটা পানিও দিবে না হাত, পা, মুখ বেঁধে এক কোনায় ফেলে রাখো আর সামনে যত ধরনের সুগন্ধি খাবার আছে ফেলে রেখো এতে খিদে বাড়বে তবে চোখের সামনে খাবার থেকেও খেতে পারবে না।
আলিফ মাথা নিচু করে বললো,’ আর এই মেয়ের কি করবো!.?’
নিরুপমা মৌরির ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ পাশের রুমে আঁটকে রাখো। ‘
_____________
নিরুপমা হেলেদুলে আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
সোফায় মনে হচ্ছে কেউ বসে আছে। জলজন্তু চোখ গুলো দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে।
নিরুপমা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনটার কাটা ছুইছুই।
নিরুপমা হেঁটে সোজা সিঁড়ির গোড়ায় চলে আসতেই হাওয়ার বেগে কেউ একজন এসে নিরুপমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
নিরুপমা এমনিতেই বেশ ক্লান্ত তার উপর অভ্রর এমন আচরণে রেগে গেলো।
~ সমস্যা কি.?
~ কোথায় ছিলে এতো রাত অবদ্ধি.?
~ সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
~ এই বাড়িতে থাকতে হলে বাড়ির বাহিরে পা দেওয়ার আগে আমার পারমিশন নিতে হবে। ভদ্র বাড়ির মেয়েরা রাত তিনটায় বাড়ি ফিরে না।
নিরুপমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,’ না আমি এই বাড়ির কেউ আর না এই বাড়িতে থাকার আমার কোনো ইন্টারেস্ট আছে। আমি এমনিতেও কাল চল যাচ্ছি।
নিরুপমার এমন কথা শুনে অভ্রর এতক্ষণ জ্বলতে থাকা আগুন চোখে নেমে আসলো আমাবস্যা। সত্যি নিরুপমা চলে যাচ্ছে.? ‘
নিবে যাওয়া রাগটা আবার মাথা চড়া দিয়ে উঠলো। অভ্র নিরুপমার দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ এখনি চলে যাচ্ছ না কেন.? তোমাকে জেনো আর কখনো আমার চোখের সামনে না দেখি!’
অভ্র রেগে নিরুপমা কে রেখেই গটগট করে চলে গেলো।
ফর্সা গাল দুটো কেমন লাল টকটকে হয়ে গেছে অভ্রর আঙ্গুলের আঘাতে। অথচ তেজি নিরুপমা একটা টু শব্দ ও করলো না!.
নিরুপমা সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। রান্না ঘরের টুংটাং শব্দ আসছে। চোখ খুলে কোনো রকম রান্না ঘরে উঁকি দিলো। এতো রাতে রান্না ঘরে কে.? অভ্র ত চলে গেছে।
আসিফ খাবার গরম করে নিরুপমাকে ডাকলো।
নিরুপমার পেটে প্রচুর খিদে ছিল। আসিফ কিভাবে বুঝলো.? এই ছেলেটা কে কিছু বলতে হয় না সে এমনিতেই বুঝে যায় সবকিছু!
নিরুপমা হাল্কা হেঁসে টেবিলে গিয়ে বসলো। আসিফ নিজে খাবার বেড়ে দিলো।
প্রচুর খিদে থাকায় নিরুপমা চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো। আসিফ অন্য চেয়ারে বসে চুপচাপ নিরুপমার খাওয়া দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
নিরুপমা খাওয়া বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলো, ‘ হাসছো কেন.?’
আসিফ চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে বললো,’ এমনি’
নিরুপমা খাওয়া শেষ করে বললো,’ জিজ্ঞেস করবে না কোথায় ছিলাম.?’
আসিফ কপালের সামনে পরে থাকা চুলগুলো পেছনে ঠেলে বললো,’ আমি জানি কোথায় ছিলে’
নিরুপমা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো, আমার উপর নজর রাখছো.?’
আসিফ হাল্কা হেঁসে বললো,’ আমি না অন্য কেউ ‘
নিরুপমার কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না নিজের রুমে চলে গেলো। আসিফ ছেলেটা অদ্ভুত, সব সময় মুখে হাসি-হাসি ভাব থাকবেই, ভীষণ কেয়ারিং, তাকে কিছু বলতে হয় না মুখ দেখেই বুঝে যায়, শান্তস্বভাবের একটা মিশুক ছেলে, মেয়েরা যাকে এক কথায় বলবে পারফেক্ট আর অভ্র এর সম্পূর্ণ উল্টোটা। নিরুপমা বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,’ তাতে আমার কি!.?’
______________
শায়েলা সিদ্দিকীর সামনে পায়ে পা তুলে বসে আছে নিরুপমা।
শায়েলা সিদ্দিকীর ঠোঁটে সেই আগের মতো হাসি তবে দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত তবুও নিরুপমা কে বুঝতে দিচ্ছে না। এতো অহংকার!..
নিরুপমা মনে মনে হাসলো। আর একটু পর তারপর নিজ থেকেই সবকিছু বলতে বাধ্য হবে।
নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর মুখের দিকে তাকিয়ে আলিফ কে বললো, ‘ নিয়ে আসো.. ‘
আলিফ শায়লা সিদ্দিকীর সামনে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আসলো শায়লা সিদ্দিকীর বোন ” শিলা ” কে। মৌরি নিজের আম্মুকে দেখে ডুকড়ে কেঁদে উঠলো।
নিরুপমার চোখের ইশারায় এই রুমের সামনে একটা রুম ছিল সেই রুমে শিলা কে পাঠিয়ে দিল।
শিলার রুমে পাঁচ ছয় জন কালো কালো বিশ্রী লোক পাঠিয়ে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মৌরি চিৎকার করে কান্না করার চেষ্টা করছে তবে হাত মুখ ত বাঁধা।
শায়েলা সিদ্দিকীর মনে মনে ভয় পেলেও মুখের হাসি সরলো না।
নিরুপমার ঠোঁটে ক্রুদ্ধ হাসি।
শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের সামনে তার প্রাণ প্রিয় ছোট ভাইকে বাধা অবস্থা নিয়ে আসলো আলিফ।
নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এর হাত, পা, শরীরে ছুরি দিয়ে ছোলে ফেলো তারপর লবন মরচ লাগিয়ে দাও।
বুক কেঁপে উঠল মৌরির আর হাত পা বেধে রাখা পুরুষটির।
শায়েলা সিদ্দিকী তখনো চুপ। ভেতর থেকে শিলার চিৎকার বাহিরে আসছে। ওর সাথে ওই পুরুষ গুলো কি করছে.? এক একটা চিৎকার মনে হচ্ছে এই বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। কি ভয়ংকর! কি ভয়ংকর এই নিরুপমা! কি ভয়ংকর তার শাস্তির নিয়ম!
এইবার নিরুপমা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেঁসে বললো নিয়ে আসো।
রুমে প্রবেশ করলো আসিফ ওর সাথে হাত পা বাধা, মুখে কাপড় দিয়ে রাখা ছেলেটা কে দেখেই শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখের হাসি উড়ে গেলো।
” আয়ান!”
আয়ানের অবস্থা দেখে শায়েলা সিদ্দিকী ততক্ষণাত নিরুপমার দিকে তাকালো।
নিরুপমা ঠোঁট ছড়িয়ে হেঁসে উঠলো, হাসতে হাসতে বললো, ‘ একে কি করা যায় বলুন ত মিসেস শায়েলা সিদ্দিকী.. .?
একটা গাড়ির ফুটেজ ভেসে উঠলো ওই রুমের দেয়ালে।
গাড়িটা চিনতে ভুল হলো না শায়েলা সিদ্দিকীর। এটা ত শফিক সাহেবের গাড়ি।
গাড়িতে বোম ফিট করে রাখা।
শায়েলা সিদ্দিকী চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ সব কিছু বন্ধ করো, আর সহ্য করা যাচ্ছে না আমি সবকিছু বলছি।’
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।