শেষ থেকে শুরু পর্ব-২৮+২৯

0
286

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না, আজকাল ত মানুষ মানুষের জন্য থেকে থাকে না সেখানে ত সময় …

নিরুপমা নিজের বাড়িতে চলে গেছে আজ এক সপ্তাহ হলো।বিশাল বড় বাড়ি নয় আবার ছোট ও নয় খুব সুন্দর একটা বাড়ি।
বাড়ির চারপাশে দেয়াল মাঝ খানে বাড়িটা। বাড়ি আর দেয়ালের মাঝে ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ।
কেউ হঠাৎ এই বাড়ির গেইট খুলে ভেতরে আসলে অবাক হয়ে বলে উঠবে ফুলের বাগানের মাঝে ছোট একটা রাজকন্যার বাড়ি। ফুলের বাড়ি,ফুল দিয়ে চারপাশ ঘেরা। বাড়ির ছ্যাদেও বাহারি রঙের ফুলগাছ।
সেই ছোট থেকে নিরুপমা একটু একটু করে নিজের এই ফুলের বাগান তৈরি করেছে। যেখানেই ফুল দেখেছে নিয়ে এসেছে। ওকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো এখানের ৯৯% ফুলের নাম বলতে পারবে না। বিদেশি ফুল গাছ অনেক। ফুল হলেই হলো নাম জেনে কি হবে!?

নিরুপমা ঘুম থেকে হারমোর ভেঙে উঠলো। চোখ পিটপিট করে জানালার দিকে তাকালো।
জানালার পাশে ফুলের গাছের ঢালে বসে একটা কোকিল ডাকছে।
নিরুপমা হাল্কা হেঁসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ শীত শেষে বসন্ত তাহলে এসে গেছে!
গুণ গুণ করে গেয়ে উঠলো ” বসন্ত বহিছে সখী কোকিলা ডাকিল রেএ…”
আজ থেকে প্রতিদিন এই কোকিল এই ঢালে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সুরেলা কণ্ঠে গান গাইবে। নিরুপমার কোকিলের এই মিষ্টি কন্ঠ ভীষণ ভালো লাগে। জানালার পাশে বসে নতুন নতুন ফুলের গাছের সুন্দর সুন্দর ফুলের মাতাল ঘ্রাণ নেওয়া, ফুলের সৌন্দর্য দেখা সাথে কোকিলের মিষ্টি সুর মনের ভেতর অন্য রকম এক আনন্দ দেয়। বসন্তের বাতাসটাও মাতাল করা, অশান্ত মনে শান্তির ছোঁয়া এনে দেয়।

নিরুপমা কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে বারান্দায় বসলো। কিছু সময় মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঘুরে আসলো। ভালো লাগছে না একবার অফিসে যেতে হবে।

নিরুপমা রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে। এই এক সপ্তাহ সে ছুটিতে ছিল।

নিরুপমা বুঝ হওয়ার পর থেকে আলাদা থাকে। ওর আম্মু মারা যাওয়ার ছয় মাস পর ওর আব্বুও মা-রা যায়। ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক করে। তারপর থেকে নিরুপমার দায়িত্ব নেয় ওর মামা মামি। নিরুপমার দুই মামা।

পাঁচ বছর নিরুপমা সেখানে ছিল। কোনো এক কারণে নিরুপমা সেই বাড়ি ছেড়ে দেয়। মামা মামি কম চেষ্টা করেনি ওকে আটকাতে কিন্তু নিরুপমা কারো কথা শুনেনি।
নিরুপমার বড় মামা ছেলে মেয়ে নিয়ে কানাডা থাকে। এক ছেলে দুই মেয়ে। দুই মেয়ে মাঝে মাঝে নিরুপমার কাছে কল দেয়। আর ছেলে সাহেদের সাথে নিরুপমার বেশ ভালো সম্পর্ক।

আর ছোট মামার এক ছেলে কোনো মেয়ে নেই। ছেলেটাকে গুন্ডা বললেও চলে। নিরুপমার মতে সে একটা চরিত্রহীন গুন্ডা।

নিরুপমা কাজের সুবাদে আজ নিজেই থানায় আসতে হয়েছে।

আয়ান ফাইল দেখছিল। বারেক দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’ স্যার স্যার’
আয়ান ফাইল থেকে চোখ তুলে বারেকের দিকে তাকালো,’ কি হয়েছে বারেক.? এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন.? কোনো ভয়ংকর জংলী দেখেছো মনে হচ্ছে! ‘
বারেক মাথা নেড়ে বললো,’ না না স্যার আমি ত এর থেকে ও বড় কিছু দেখে আসছি।’
আয়ান বারেকের এমন কথা শুনে বিরক্ত হলো। বারেক সব সময় এমন করে, ছোট ছোট জিনিস গুলো এমন ভাবে বলবে জেনো বিশাল বড় কিছু হয়ে গেছে।
বারেক কিছু বলার আগেই আয়ানের সামনে এসে হাজির হলো নিরুপমা।

নিরুপমার পাশে আলিফ দাঁড়িয়ে আছে, এটাকে দেখলে আয়ানের মনে হয় নিরুপমার বডিগার্ড, সারাক্ষণ পিছে পিছে ঘুরঘুর করবে।

আয়ান একবার মুখ তুলে নিরুপমার দিকে তাকালো।
সাদা শার্ট ইন করা, জিন্সের প্যান্ট, চুলগুলো বিনুনি করা, হাতে ঘড়ি সাথে সাথে আয়ান চোখ নামিয়ে ফেললো। এমন পোশাকে আয়ান সব সময় নারীদের ঘৃণার চোখে দেখে। ওর পছন্দ না নারীরা কেন ছেলেদের পোশাক পড়বে, কেন ছেলেদের মতো চলবে! নারী হবে নিজের পোশাকে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। অথচ আজ আয়ানের মনে হচ্ছে ওর ধারণা ভুল! নারীদের ও পুরুষের পোশাকে এতো সুন্দর লাগতে পারে.? দেখে একটুও অশ্লীল পোশাক মনে হচ্ছে না, একটুও খারাপ দেখাচ্ছে না মনে হচ্ছে এই পোশাকটা জেনো নিরুপমার জন্য তৈরি।

আয়ান গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,’ বসুন ‘
নিরুপমা বসলো।
আয়ান ফাইলের দিয়ে দৃষ্টি রেখে বললো,’ হঠাৎ এখানে আপনি ? ‘
নিরুপমা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আপনার কাছে আমি ফাইলটা ফিরিয়ে দিয়ে ছিলাম, আমি আপনার কোনো হেল্প করতে পারবো না তাহলে আবার কেন পাঠিয়েছেন.?’
আয়ান শান্ত কন্ঠে বারেক কে বললো তিন কাপ চা সাথে নাস্তা নিয়ে আসো। নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ উপর থেকে আদেশ ‘
নিরুপমা কিছু সময় চুপ করে থেকে বললো,’ উপরের আদেশ আমি বুঝে নিব! এমন ছোট খাটো কেইসে আমাকে ডাকবেন না’
আয়ান অবাক হয়ে তাকালো। এটা ছোট কেইস.? পুরো ডিপার্টমেন্ট এতো চেষ্টা করে চোরাকারখানায় কি হচ্ছে, বাচ্চা উধাও কিভাবে হচ্ছে বের করতে পারছে না আর এই মেয়ের কাছে ছোট খাটো মনে হচ্ছে.? ‘
মনে মনে ভীষণ রাগ হলেও নিজে শান্ত রেখে আয়ান আবার বললো,’ আপনি বড় স্যারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন এখানে আমার হাত নেই। ‘
নিরুপমা ফাইলটা আয়ানের টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’ নিজের কাজ নিজে করতে শিখুন ইন্সপেক্টর আয়ান চৌধুরী ‘
আয়ান হাল্কা হাসলো। সে কিছু করেনি শুধু উপরের আদেশ ছিল। নিরুপমা অল্প বয়সে নিজের বুদ্ধি আর সাহসীকতা দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছি। এখন পুলিশ ও সিআইডি অফিসারের উপর নিজেদের পুলিশটিম থেকে বেশি বিশ্বাস করে। আর এই মেয়ে ভাবছে আয়ান ওকে ইচ্ছে করে হেল্প চেয়েছে। একটু ভুল ভাবলে ভাবতে দেওয়া উচিত।

আয়ান চুপচাপ বললো,’ চা টা?’
নিরুপমা চায়ের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,’ এটা তুলা থাক অন্য একদিন নিজেই চেয়ে নিব’ বুকের উপর থেকে চশমা চোখে দিয়ে নিরুপমা বের হয়ে যেতে নিলে পেছন থেকে আয়ান বলে উঠলো, ‘ আমার অফিসে শায়েলা সিদ্দিকীর কোনো ফাইল নেই, আপনি সব সরিয়ে নিয়েছেন!’

নিরুপমা আয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।

‘ ভয় নেই তাকে একদম মেরে ফেলবো না! এমন বিশ্বাসঘাতক পাপীদের এতো জলদি মৃত্যু দিলে মৃত্যুও রাগ করবে আমার উপর। মৃত্যু হবে ধীরে ধীরে প্রতিদিন নিজের কাছে নিজে মৃত্যু ভিক্ষা চাইবে। দুইদিন পর বাড়িতে পৌঁছে যাবে।’

আয়ান অবাক হয়ে কঠিন থেকে কঠিন হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ গুলো আগুনের মতো লাল হয়ে জ্বলছে। কি ভয়ংকর এক রুপ এই মেয়ের! এমন রুপেও মুগ্ধ হয়ে গেলো আয়ান চৌধুরী।এমন একটা মেয়েটার উপর রাগ করে থাকতে পারে কেউ..? প্রশ্ন জাগলো আয়ানের মনে…

_______________

রাস্তার মধ্যে আলিফ বাইক চালাচ্ছে পেছনে চুপচাপ বসে আছে নিরুপমা। উদ্দেশ্য সিআইডি অফিস।

আলিফ রাস্তার পাশে তাকাতেই ওর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো, থমকে গেলো হাত নিজের এমন অসচেতনার জন্য রাস্তায় বাইক এক্সিডেন করে বসলো দুইজন।
ভাগ্য ভালো ছিল নিরুপমার তেমন ক্ষতি হয়নি। শুধু কোমরে আর হাতে পায়ে লেগেছে আর আলিফের মাথায় বুকে।

হসপিটালে নিয়ে আসা হয় দুইজন কে।

আলিফের কপাল দিয়ে রক্ত পরছে, হাত পা ছিলে গেছে।

অভ্র একবার নিরুপমা ত আরেকবার আলিফের দিকে তাকালো।
আলিফকে ইচ্ছে করে অন্য ডাক্তার ডেকে পাঠিয়ে দিল আর নিরুপমা কে একটা কেবিনে নিয়ে যেতে বলল দুইটা নার্স কে।
নিরুপমা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অভ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বললো,’ আমার তেমন কিছু হয়নি আলিফের মাথা থেকে রক্ত পড়াটা বন্ধ করুন ওর জেনো কিছু না হয়।’
অভ্র রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ বাইক চালানোর সময় হুশ থাকে না.? অবশ্য সাথে মেয়ে বসলে হুঁশ কিভাবে থাকবে!’
অভ্রের মুখে এমন কথা শুনে নিরুপমার বুঝতে বাকি নেই কি বুঝাতে চেয়েছে।
নিরুপমা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ নিজের মাইন্ড চেঞ্জ করুন! এমন ফালতু মাইন্ডের লোককে ডাক্তার কে বানিয়েছে!’
অভ্র নিরুপমার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে বলে উঠলো, ‘ হুশশচ এটা তোমার বাড়ি নয় এটা হসপিটাল। ‘
‘ সেটা ত আপনারও বুঝা উচিত। আমি আপনার কাছ থেকে কোনো চিকিৎসা নিব না!’
অভ্র বুকে দুইহাত রেখে বললো,’ ঠিক আছে তাহলে যাও, এখনি আমার চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যাও’

এদের এমন ঝগড়া দেখে নার্স গুলো ড্যাবড্যাব করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হচ্ছেটা কি..? অভ্র স্যার ত রুগীর সাথে প্রয়োজন ছাড়া বারতি একটা কথাও বলে না সেখানে এভাবে ঝগড়া করছে! অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে আছে নার্স গুলো।

নিরুপমা উঠতে গিয়ে আহ্ মা গো বলে আবার বসে পরলো। কোমরে আঘাতটা ভালোই পেয়েছে, এখন দাঁড়াতেও পারছে না। পা কেমন ছিলে গেছে রক্ত শুকিয়ে গেলেও ব্যাথা করছে অনেক।

অভ্র চোখের চশমা ঠিক করে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি যাও’
নিরুপমা কটমট দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমাকে আমি পরে দেখে নিব। নার্স আর কোনো ডক্টর নেই.?’
একটা নার্স বলে উঠলো, ‘ ডক্টর আদিত্য স্যার আছে’

অভ্র রাগী চোখে নার্সের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ডক্টর আদিত্য ওই ছেলেটার চিকিৎসা করছে। আপনি ওখানে যান।’.
অভ্র কে রেগে যেতে দেখে নার্স গুলো বের হয়ে গেলো।
‘ আপনি এভাবে তাদের রাগ কেন দেখালেন.? ‘

অভ্র হাতা গুটিয়ে ছোট টোলটা টেনে নিরুপমার সামনে বসলো। ওর হাত টেনে নিয়ে শার্টের হাতা উপরে তুলে ক্ষত স্থান দেখে অবাক হয়ে বললো,’ আপনি মেয়ে ত.? প্রতিদিন আমার কাছে কম পেসেন্ট আসে না। মেয়েরা সাধারণ একটু কাটা স্থান নিয়ে কান্না কাটি শুরু করে, ব্যাথায় ছটফট করে আপনি এমন ক্ষত নিয়ে বসে বসে আমার সাথে ঝগড়া করছেন!

নিরুপমা কিছু বলল না। একটা সময় হয়তো সেও ওই মেয়েদের দলের ছিল। মনের আঘাত পেতে পেতে এখন বাহিরের আঘাত আর স্পর্শ করতে পারে না।

হাত, পা ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দিল।

নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার পরিবারের কাউকে কল দিয়ে বলা উচিত আশার জন্য, আপনি একা বাড়িতে যেতে পারবেন না মনে হচ্ছে ‘
নিরুপমা অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। সেভাবেই উত্তর দিল। আমার বিষয় আমি বুঝে নিব। আপনি আপনার কাজ করেছেন এখন আমার যেতে হবে। আলিফ কেমন আছে দেখতে হবে।

অভ্র হঠাৎ বললো,’ এখনো ত শেষ হয়নি ‘
নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই অভ্র বললো,’ পেছন ঘুরেন আপনার কোমরে আঘাত লেগেছে। ‘
নিরুপমা চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, ‘ আমি ঠিক আছি বাকিটা আমি বাড়িতে গিয়ে নিজেই করে নিব’
‘ আমি একজন ডক্টর নিরুপমা আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসার জন্য এটা প্রয়োজন। ‘

‘ ডক্টর বলে সব দেখিয়ে দিব আজব! আমার কোমরের ক্ষত আমি দেখে নিব।’
অভ্র রেগে নিরুপমার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, ‘ কিন্তু আমার জিনিসে একটুও হেয়ালিপনা আমার সহ্য করবো না!’
‘ এক্সকিউজমি আপনার জিনিস মানে.?’
‘ আমাকে জোর করতে বাধ্য করবে না জবা ভালো হবে না বলে দিচ্ছি! ‘
নিরুপমা থমকে গেলো অভ্রর মুখে জবা ডাক শুনে।
জবাকে এমন চুপ হয়ে যেতে দেখে অভ্র নরম কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি একজন ডক্টর জবা। আমি শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করবো এর চেয়ে বেশি কিছু না। ‘
জবাকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র এক হাতে জবার শার্ট একটু উপরে তুললো।
লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো জবা। এমন লজ্জা কেন লাগছে..? মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা এসে ওর শরীরে ভড় করেছে।

অভ্র খুব সাবধানে নিজের কাজ শেষ করে শার্ট নামিয়ে দিল। জবাকে এমন চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস আঁটকে রাখতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো অভ্র। বাহ্ এই মেয়ে লজ্জা পেতেও পারে! আমি ত ভাবতাম আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ছয় বছর আগের জবা লজ্জা পেতে জানতো, কথায় কথায় লজ্জায় কুঁকড়ে যেতো। কিছু বললেই হেঁসে উঠলো সে কি মিষ্টি হাসি,মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো অভ্র। সেই জবা হারিয়ে গেছে, সামনে বসা মেয়েটা সেই জবা নয় একই চেহারা, একই সৌন্দর্য, একই সব কিছু, একই মানুষ তবে ভিন্ন দুইটা সত্তা!

নিজের দিকে অভ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জবা এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করলো।

অভ্র জবাকে এখানে বসে থাকতে বলে বের হয়ে গেলো। কিছু সময় পর ফিরে এসে বললো,’ আলিফের বাসা থেকে ওর আব্বু আম্মু এসেছে। সে এখন ভালো আছে আপনার বাড়িতে চলে যাওয়া উচিত। মেডিসিন গুলো আমি লিখে দিয়েছি সময় মতো খেয়ে নিবেন।

নিরুপমা জানতে চাইলো হসপিটাল বিল কত এসেছে..?
অভ্র কিছু না বলে নিরুপমা কে কোলে তুলে নিল।
নিরুপমা আচমকা এমন হওয়াই কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝে উঠতেই হাত পা ছুটাছুটি শুরু করলো।

‘ আর একবার হাত পা ছুটাছুটি করলে কোল থেকে ফেলে বাকি কোমর ভেঙে ফেলবো চুপচাপ গলা জড়িয়ে ধরে থাকো।

অভ্র বের হতেই নার্সরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ফিসফিস করে একজন আরেকজন কে বলছে, ‘ স্যারের বউ নাকি.?’
আরেকজন বলে, ‘ স্যার ত বিয়ে করে নাই’
‘ তাহলে হয়তো গার্লফ্রেন্ড হবে’
‘ মাইয়াটার দিকে দেখ কতো সুন্দর, স্যারের পাশে মানাবে খুব’
‘ হুম ঠিক বলছিস, মেয়েটার চুলগুলো আমি ত প্রথম দেখে চোখ সরাতে পারছিলাম না’
‘ আমিও, মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম’

অভ্র নিরুপমা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো। পাশে নিরুপমা।
‘বাড়ির ঠিকানা বলো। ‘
নিরুপমা সিটে মাথা হেলিয়ে চুপ করে রইলো। এতোক্ষণ যন্ত্রণা না বুঝলেও আসতে আসতে মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে, কোমরের যন্ত্রণা একটু বেশিই করছে, হাত পা ম্যাচ ম্যাচ করছে। কথা না বাড়ির নিরুপমা বাড়ির ঠিকানা বলে দিল। বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন তারপর এই লোককে বিদায় করতে হবে।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

অন্ধকারের পরই আলো আসে। প্রতিটি দুঃসময় কেটে গিয়ে নতুন সুযোগ আসে, শুধু অপেক্ষা করতে হয়।

নিরুপমার অবস্থা এখন এই অপেক্ষার মতো। সে অপেক্ষা করছে নিজের সুস্থ জীবনের জন্য।
কোমরের ব্যাথা বেড়েছে, পায়ের ক্ষত জ্বলছে, হাতের কাটা জায়গা গুলো ব্যাথা করছে। সারা শরীরের অসহ্য ব্যাথায় জ্বর চলে এসেছে নিরুপমার।

নিরুপমা একবার আঁড়চোখে তাকালো ছোট্ট টেবিলের পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা মেডিসিন গুলোর দিকে।

অভ্র বিছানায় যেভাবে শুইয়ে দিয়ে গিয়ে ছিল নিরুপমা এখনো সেই ভাবে শুয়ে আছে। ব্যাথার যন্ত্রণায় চোখ মুখ খিঁচে মাথার বালিশ খামচে ধরে রেখেছে চোখ থেকে পানি পড়ছে।

বিছানা থেকে নেমে যে কিছু খেয়ে মেডিসিন খাবে এমন শক্তি টুকুও শরীরে নেই। সে এখানে একা থাকে তাই কেউ যে ওর যত্ন নিবে তেমনও নেই।

ব্যাথায় নিরুপমা বাচ্চাদের মতো বিরবির করে মা কে ডাকছে। মনে হচ্ছে ওর পাশে ওর মা এসে বসেছে। ভালোবেসে মাথায় হাত রাখছে নিরুপমা ধরতে চায় সেই হাত কিন্তু পারে না, চোখ মুখ খিঁচে শুয়ে থাকে।

সময় যায় ব্যাথা কমে না, শরীরে মনে হয় কেউ বিষ ঢেলে দিয়েছে৷ নিরুপমা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। এমন একটা সময় তার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মেয়ে মনে হয়। কেউ নেই! নেই! নেই! নেই কোথাও কেউ নেই নিরুপমার। মা নেই, বাবা নেই এত বড় দুনিয়ায় নিজের বলতে কেউ নেই। এমন একটা সময়ে কারো ভালোবাসার হাত নেই।

নিরুপমার চোখে ভেসে উঠে অভ্রর মুখটা। মানুষটা একবার এসে দেখে গেলো না! নিজের এমন চিন্তার উপর রাগ হলো। নিরুপমা কারো দয়া, মায়া কিছুই চায় না। রাতটা কেটে গেলে সকালে হয়তো সে সুস্থ হয়ে যাবে। এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে।

সারা বিকেল হসপিটালে বিজি ছিল অভ্র। রাত আটটা দশ বাজে। বেশি রাত হয়নি অভ্রর ভাবনায় আসলো নিরুপমা কেমন আছে?? মেডিসিন গুলো ঠিক মতো খেয়েছে ত.? মেডিসিন খেলে তেমন কোনো ব্যাথা থাকবে না কিন্তু যদি না খায়.? ভাবতেই অভ্রর মন কেমন করে উঠলো সে নিরুপমার নাম্বারে বেশ কয়েকটা কল দিলো৷ কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।

অভ্রর রাগ হলো। সে ত রাত জেগে প্রেম করতে কল দেয়নি শুধু জিজ্ঞেস করতে কল দিয়ে ছিল কেমন আছে.? মেডিসিন খেয়েছে কিনা.? অথচ এই মেয়ে এখনো ওকে ইগ্নোর করছে আজব!!

অভ্র মোবাইল টেবিলের পাশে রাখলো। আর কল দিবে না দিবে না বলেও আবার কল দিলো।

নিরুপমার টেবিলের উপর মোবাইলটা বাজছে। নিরুপমা ব্যাথায় তখন প্রায় জ্ঞান শূন্য। মোবাইলের শব্দে আরও মাথা ধরে আসছে। জ্বর হয়তো বেড়েছে।

অভ্র মোবাইল পকেটে রাখলো, দ্রুত বেরিয়ে গেলো হসপিটাল থেকে। ওর মন বলছে নিরুপমা ঠিক নেই। পেছন থেকে অভ্রর এসিস্ট্যান্ট ডাকতে লাগলো, ‘ স্যার আপনার আরও অনেক পেসেন্ট অপেক্ষা করছে। আপনি কোথায় যাচ্ছেন.? ‘
অভ্র কোনো উত্তর না দিয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলো।

এসিস্ট্যান্ট বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ এমনিতেই সপ্তাহে মাত্র একদিন আলাদা ভাবে রুগী দেখেন। অতিরিক্ত রুগী হয় কখনো কখনো রাতের এগারোটা বেজে যায় তাও রুগী শেষ হয় না আজ কিভাবে এতো এতো রুগী কে কিভাবে বুঝাবে..? স্যার ত বলেও গেলেন না আর আসবেন কিনা! টেনশনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে হসপিটালের ভেতর গেলো এসিস্ট্যান্ট।

আস্তে করে গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো অভ্র। পুরো বাগান আর বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে। মোবাইলে ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে দরজার কাছে আসতেই অভ্রর হৃদপিণ্ড চমকে উঠলো। যেমন দরজা বন্ধ করে গিয়ে ছিল অভ্র এখনো দরজা ঠিক সেভাবেই আছে।

অভ্র দ্রুত ভেতরে আসলো। নিরুপমার রুমে গিয়ে প্রথম লাইট জ্বালিয়ে নিল।

মেয়েটা কেমন হাত পা গুটিয়ে ছোট হয়ে শুয়ে আছে।
অভ্র আস্তে করে কয়েকবার নিরুপমা কে ডাকলো। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভয়ে নিরুপমার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
মুখটা লাল হয়ে গেছে, চোখ গুলো বন্ধ, ঠোঁট জোড়া কাপছে।
মুখে হাত দিতেই মনে হলো অভ্রর হাত পুড়ে যাচ্ছে। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে মেয়েটার শরীর। একবার কল করতে পারতো অভ্র কে৷ এমন অবস্থায় ওর বাড়ির লোকজন কোথায়.?

অভ্র টেবিলে মেডিসিন গুলো পরে থাকতে দেখেই বুঝে নিলো সবকিছু।

বেলীর কাছে কল দিয়ে বললো,’ লোকেশন পাঠাচ্ছি জলদি চলে আয় ‘
বেলী কোনো প্রশ্ন করার আগেই অভ্র খট করে কল কেটে দিলো।
বেলী জানে কোনো কারণ ছাড়া অভ্র ওকে শুধু শুধু ডাকবে না।

অভ্র সবচেয়ে প্রথম নিরুপমার মাথায় পানি দিল। তারপর কোমরের ব্যাথা কমার জন্য একটা ইনজেকশন দিল। হাত পায়ে ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দিল।

কিচেনে গিয়ে খুঁজে খুঁজে স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসলো।

নিরুপমা আধো আধো চোখ খুলে তাকালো। অভ্রর মুখ দেখে আবারও চোখ বন্ধ করে রাখলো।
অভ্র আদুরে হাতে নিরুপমার মুখে স্যুপ তুলে দিয়ে বললো,’ একটু খেয়ে নাও’

নিরুপমার মনে হচ্ছে চোখের পাপড়ি গুলোর ওজন এক পাহার সমান। টেনে চোখ খুলতে পারছে না। সবকিছু মনে হচ্ছে স্বপ্ন সে একটা ঘোরের মধ্যে আছে।

নিরুপমা কে একটু স্যুপ খাইয়ে জ্বরের মেডিসিন খাইয়ে দিলো। ব্যাথার মেডিসিন ও খাইয়ে দিলো অভ্র সাথে ঘুমের।

কিছু সময় যেতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো নিরুপমা।

অভ্র এক লম্বা শ্বাস ফেলে তাকালো নিরুপমার মুখের দিকে। কি মায়াবী লাগবে তার রক্তজবাকে। রক্তের মতো লাল ঠোঁট জোড়া দেখেই ত প্রথম নাম দিয়ে ছিল অভ্র রক্তজবা।

অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার রক্তজবার দিকে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট জোড়া শান্ত হয়ে গেছে, চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আছে, তেজি মেয়েটাকে কেমন কাবু করে ফেললো এই অসুস্থতা! অথচ অভ্র ডাক্তার হয়েও এই মায়াবতী কে কাবু করতে পারলো না আজও! সে আজ থেকে ঘৃণা করে অসুস্থতা কে। ও ছাড়া ওর রক্তজবা কে অন্য কেউ কেন কাবু করবে.? কত বড় সাহস এই অসুস্থতার! আজ থেকে অভ্র যার শরীরে এই অসুস্থতা কে দেখবে তার শরীর থেকে টেনে হেঁচড়ে বের করে আনবে কারণ এই অসুস্থতা আজ থেকে ওর শত্রু।

বেলী এসে নিরুপমার রুমের আশেপাশে তাকালো।
‘ ভাই এই জায়গা এমন ভিজে আছে কেন.? আর নিরুপমা! এ্যাই তুমি নিরুপমার সাথে কি করেছো.?’
অভ্র বেলীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘ এখন তুই আমাকে জবাবদিহি করবি.? এতো খারাপ দিন আমার আসলো!’
বেলী মাথা নিচু করে বললো,’ ভাই আমি বলতে চাচ্ছি নিরুপমা আপু এভাবে ঘুমিয়ে কেন আছে.? আর আপনি এখানে কেন.?

অভ্র নিরুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ যত প্রশ্ন আছে তোর আপুর থেকে সকালে জেনে নিস। আজ রাতে ওর সাথে থাক। রাতে ও জেগে গেলে আমাকে জানাবি কল করে। আমি বাড়িতে জানিয়ে দিব তুই জবার সাথে আছিস ‘

বেলী আর প্রশ্ন করলো না। জানে প্রশ্ন করলেও উত্তর আসবে না।

অভ্র চলে যেতেই বেলী গেইট, দরজা লাগিয়ে বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখলো। বেশ পরিপাটি, বাড়িতে বারতি তিনটা রুম তবে রুম গুলোর দরজায় তালা ঝুলানো।

ড্রয়িং রুমটা ছোট তবে বেশ সুন্দর। এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস পত্র, ফুল বেলী মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখছে। নিরুপমা আপুর চয়েস অনেক সুন্দর।

____________

সকালে বিরক্তিকর কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো নিরুপমার।

চোখের পাতা গুলো এখনো বেশ ভারি ভারি লাগছে। চোখ খুলে পাশে তাকাতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো নিরুপমা।
নিরুপমার চিৎকার শুনে সদ্য ঘুমিয়ে পড়া বেলী লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
ওর দিকে তাকিয়ে বেস্ত গলায় বললো,’ আপু তুমি ঠিক আছো.? কি হয়েছে.? ‘
নিরপমা ভিতু চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ তততুমি এখানে.?’
বেলী নিরুপমা কে শান্ত হতে বলে গতরাতে অভ্র কল করে এনেছে বললো।

নিরুপমা শান্ত হলো। বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ চোখ এমন লাল কেন তোমার.? ‘

বেলী মিনমিন করে বললো,’ ভাই যাওয়ার আগে বলে গেছে রাতে আমি ভুল করেও ঘুমালে আমাকে জঙ্গলে ছেড়ে আসবে। সাথে রাতে একটু পর পর কল দিয়েছে। একটু আগেও কল দিয়ে ছিল তুমি জেগেছো কিনা জানতে।

নিরুপমা রাতের কথা মনে করতে চেয়ে ছিল কিন্তু কিছুই মনে আসলো না। বেলী কে বললো ঘুমিয়ে পড়তে সারারাত মেয়েটা জেগে ছিল! এই অভ্রর কি কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই.? মেয়েটাকে শুধু শুধু রাত জাগিয়ে রাখলো!

বেলী নিরুপমার কথা শুনলো না। বিছানা থেকে নেমে কিচেনে গিয়ে হাল্কা নাস্তা বানিয়ে আনলো।
নিরুপমা নিষেধ করার পরও নাস্তা করিয়ে সব মেডিসিন খাইয়ে দিল। একটু পর অভ্র এসে হাত পা ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দিবে।

বেলী এবার বললো,’ বলো এমনটা কিভাবে হলো.?’
‘ তুমি আগে সুন্দর একটা ঘুম দিয়ে উঠো তারপর বলছি। ‘
‘ না না আগে বলো না হয় ঘুম আসবে না’
বেলীর কথা শুনে হাল্কা হেঁসে নিরুপমা শুরু থেকে সবটা বললো।
সবটা শুনে বেলী মন খারাপ করে বললো,’ এতো কষ্ট সহ্য করলে অথচ একটা কল করলে না.? এতোটা পর মনে করো আমাকে.?’
ওদের কথার মাঝে আবার কলিং বেল বাজলো বেলী ভাবলো অভ্র এসেছে।

দরজা খুলে অপরিচিত ছেলে দেখে বেলী থতমত খেয়ে গেলো। সে ত কিছুই চিনেনা।
ছেলেটা বেলীর দিকে তাকিয়ে আবার রজায় খোদাই করে লেখা মায়া তালুকদার হাউজ লেখাটার দিকে তাকালো। না সে ত সঠিক বাড়িতে এসেছে অথচ এই প্রথম এই বাড়িতে দ্বিতীয় নারীর দেখা মিললো।

ছেলেটাকে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেলী অস্বস্তিতে দরজা থেকে সরে গেলো।

ছেলেটা ভেতরে এসে বললো, ‘ মিস আপনি কে.? আর নিরুপমা কোথায়.?’
‘ আপু আপুর রুমে’
‘ প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা পাইনি’
‘ আ… আমি আপুর এক বোন’
‘ আরেহ্ বাহ্ ওই রাক্ষসী টাইব মেয়ে আবার বোন কবে থেকে বানাতে শিখলো, যাই হোক ওর চয়েস খারাপ না’

বেলী ছেলেটার এমন তাকানো দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিল।

ছেলেটা নিজ থেকেই বললো, ‘ আমি ওর ছোট মামার একমাত্র পুত্র আর ওর ভাই। কিন্তু তুমি ভুলেও আমাকে ভাই ভাবতে যেও না কারণ তুমি স্পেশাল। ‘
বেলী বুঝলো ছেলেটা প্রয়োজনের থেকেও বেশি কথা বলে। এই বাড়িতে আর কে কে থাকে.? ছেলেটা অদ্ভুত..

ভেতর থেকে ধীর পায়ে বের হয়ে আসলো নিরুপমা।

ছেলেটাকে দেখেই নিরুপমা বিরক্তি কন্ঠে বললো,’ অনিক তুই.?’
অনিক হাসি হাসি মুখে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুই যে এতো রূপবতী মেয়েদের বোন বানিয়ে এনেছিস বলিস নি ত কখনো!.? ছ্যাহ্ নিরুপমা এমনটা আশা করিনি তোর থেকে..!

নিরুপমা চোখ মুখে রাগ ফুটিয়ে বললো,’ কেন এসেছিস সেটা বল! দেখ টাকার জন্য আসলে আগে থেকেই বলে রাখছি সোজা আমার লকাবে ঢুকিয়ে দিব আজ তোকে’

অনিক আড়চোখে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ ছ্যাহ্ আমি তোর বড় তোর থেকে কেন টাকা নিব.? আম্মু পাঠিয়ে ছিল তুই ঠিক আছিস কিনা জানতে আর বলেছে একবার গিয়ে দেখা করে আসতে। তোর কনো প্রয়োজন হলে বলতে পারিস আমি টাকা নিয়ে এসেছি!’
নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এই ছেলের কি মাথার স্ক্রু এলোমেলো হয়ে গেছে.? দুইদিন পর পর টাকা নিতে আসে আর আজ উল্টো গান গাইছে মতলব ত ভালো ঠেকছে না!’

‘ কি হল কি ভাবছিস.? মেহমান আসলে যে বসতে দিতে হয় সেটাও ভুলে গেছিস.? অন্তত এক কাপ চা!’
বেলী অবাক হল। এ কেমন কাজিন.? নিরুপমা এতো অসুস্থ দেখতে পাচ্ছে তাও কিছু জিজ্ঞেস করছে না।

‘ আপনি বসুন ভাইয়া আমি নিয়ে আসছি’
‘ প্লিজ ভাইয়া বলো না আমার বুকে ব্যাথা হয় ‘
‘ এইটা নিশ্চয়ই গ্যাস্টিকের ব্যাথা যাওয়ার সময় ডাক্তার দেখিয়ে নিস!’

নিরুপমার এমন কথায় অনিক ঠোঁট ছড়িয়ে হেঁসে বললো,’ ডাক্তার ত রান্না ঘরে গেছে ‘

গেইটে আয়ানের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আজ বেলীর এক্সাম ছিল কিন্তু সে ভুলেই গেছে।

আয়ান কল দিয়ে বললো, ‘ আমি দাঁড়িয়ে আছি গেইটের সামনে। আমি সবকিছু জেনে নিয়েছি অভ্রর কাছ থেকে। ও একটু পর আসছে তুই চলে আয় তোকে কলেজে দিয়ে আমি ডিউটিতে যাব। আবার এক্সাম শেষ হলে সোজা এখানে চলে আসবি।

বেলী নিরুপমা কে বলে বেড়িয়ে আসলো। বেলীর পেছন পেছন অনিক ও বেড়িয়ে আসলো।

বেলী গিয়ে আয়ানের পাশে বসে পরলো। আয়ান গেইটের সামনে তাকাতেই অনিক হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনি নিশ্চয়ই বেলীফুলের ভাই.? ভবিষ্যত শালা সাবধানে নিয়ে যাবেন আপনার বোনকে আমানত রইলো আপনার কাছে’

আয়ান থমথমে মুখে একবার ছেলেটার দিকে ত আরেকবার বেলীর দিকে তাকালো।
বেলী বোকার মতো অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে। বলতে ইচ্ছে করছে ইনি আমার ভাই নয় হাসবেন্ড অথচ মন বললো তুই কেন বলবি.? আয়ান নিজে বলুক তুই ওর কে!?

আয়ান বেলীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,’ এই বলদ কে.?’

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।