শেষ থেকে শুরু পর্ব-৩৬ এবং শেষ পর্ব

0
291

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৩৬ (শেষ পর্ব)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নিরুপমা একটা অন্ধকার রুমে প্রবেশ করতেই এটার ভেতর থেকে কেউ বাঘের মতো গর্জন দিয়ে উঠলো।

নিরুপমা হাতের ইশারায় সাথের সবাই কে বাহিরে থাকতে বললো।
” প্লিজ ম্যাম একা যাবেন না উনার ম্যানটেলি অবস্থা খুবই খারাপ। যাকে সামনে পায় আক্রমণ করে বসে। ”
আলিফ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ উনি কোনো জন্তু জানোয়ার নয় যে আক্রমণ করে বসবে’
মহিলাটা মাথা নিচু করে বললো,’ স্যার উনার আচরণ এখন জন্তু জানোয়ারের থেকে কোনো অংশে কম নয়। হাত পা বাঁধা তাও উনার চিৎকারে আর্তনাদ শুনলে আপনিও ভয় পেয়ে যাবেন।’

নিরুপমা বাঁকা হেঁসে ভেতর থেকে দরজা আঁটকে দিলো। আলিফ বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো, ‘ এটা উনার প্রাপ্য, এমন অবস্থা প্রতিটা বিশ্বাসঘাতক মানুষের হওয়া উচিত জেনো কেউ এর শেষ পরিণতি দেখে এমন করার সাহস না পায়!’

নিরুপমা রুমের লাইট অন করতেই শায়েলা সিদ্দিকীর অবস্থা দেখে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো। শায়েলা সিদ্দিকী নিরুপমা কে দেখেই অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করলো।
কয়দিন গোসল করে না.? ছিহ্ রুম থেকেও বিশ্রী গন্ধ আসছে, চুলগুলো পাটের আষের মতো পেঁচিয়ে আছে চোখে মুখে।

নিরুপমার দিকে তেরে আশার জন্য হাত পা ছুঁড়া ছুড়ি শুরু করলো। দূরেই একটা শক্ত নষ্ট রুটি পরে আছে।

রুমে ক্যামেরা সেট করা।

আজ এক মাস পর আয়ান লাইভে ওর মা কে দেখছে। এমন অবস্থায় ও মা কে চিনতে একটুও ভুল করলো আয়ান। মা ত মা ‘ ই হয়! সে যতোই খারাপ হোক সন্তানের চোখে মা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র নারী। আয়ানের চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে।

নিরুপমার কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল আয়ানকে কখনো তার মা’য়ের সাথে দেখা করতে দেওয়া যাবে না। দেওয়া হয়নি আয়ানকে দেখা করতে।

আয়ান জানে ওর মা যেটা করেছে তার শাস্তি পৃথিবীর কিছু দিয়ে পূরণ করা যাবে না। কতোটা ভয়ংকর মৃত্যুতে আনন্দে মেতে উঠে ছিল শায়েলা সিদ্দিকী নিজের বান্ধবীর যাকে সে সব সময় নিজের বোন ভাবতো। নিজের ছেলের বয়সী একটা নিষ্পাপ ছেলেকে মাসের পর মাস জঙ্গলে বন্ধী করে রেখে ছিল সাথে কতো টর্চার করেছে এতোকিছুর পর আয়ান কিভাবে মা’য়ের জন্য কোনো স্টেপ নিত.?

নিরুপমা লাইভে বলতে শুরু করলো,’ তাকে আমি মৃত্যু কেন দেইনি জানেন.? মৃত্যুটা খুবই সহজ কিছু, মৃত্যুতে কি শাস্তি দেওয়া হয়.? মোটেও না মৃত্যুতে তাদের মুক্তি হয়ে যায়। এতো সহজ মৃত্যু দেখে কাল আপনার বান্ধবী, আপনার বোন আপনার সাথে এমন করবে না কি গ্রান্টি বলেন..? মৃত্যুটা এতোটা কঠিন হওয়া উচিত জেনো কেউ দেখার পর হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে।

নিরুপমা লাইভ শেষ করে শায়েলা সিদ্দিকীর সামনে বসে বললো,’ আমি তোমার এমন অবস্থা করবো যা দেখে তোমার মৃত আত্না ও কেঁপে উঠবে আগে তোমার বোনকে শেষ করে নেই৷ আজ তোমার বোনের সাথে কি করবো জানো.? উঁহু ওইসব নয় যা আমার মায়ের সাথে করেছো, জানোয়ারের ট্রেন্ড ফলো করে আমিও জানোয়ার হতে চাই না, ইউনিক কিছু করা উচিত অপেক্ষা করো তোমার চোখের সামনে করবো। যা শুধু তুমি আর আমি জানবো আর দুনিয়ার মানুষ দ্বিতীয় বার এমন করার আগে হাজার বার ভেবে নিবে।

নিরুপমা প্রতিদিন শায়লা সিদ্দিকীর শরীরে একটা ইনজেকশন পুশ করেছে যেটার ভেতর বিষাক্ত সাপ আর বাঘের রক্ত দিয়ে বানানো। যার জন্য শায়েলা সিদ্দিকীর আচরণ দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে। নিজের শরীরে এই ইনজেকশন পুশ করার কারনে জ্বালা যন্ত্রণায় সারাক্ষণ ছটফট করে, যাকে দেখে তাকেই আক্রমণ করতে চায়।

নিরুপমা দুইবার তুড়ি মারতেই আলিফ রুমের ভেতর আধমরা শায়েলা সিদ্দিকীর বোন শিলা কে নিয়ে আসলো।

মেয়ে হয়ে চোখের সামনে একটা মেয়েকে এমন করতে দেওয়া নারীদের দেখলে ঘৃণা হয়। এরা নারী নয়, নারী ত এমন নয়!

_______________

বেলী রুমে আসতেই আয়ান অন্য দিকে ফিরে বসলো।
বেলী ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের মতো কাপড় গুলো ড্রয়ারে রাখতে গিয়ে আবার পেছন ফিরে আয়ানের দিকে তাকালো।
বেলীর কিছুটা সন্দেহ হতেই সে আস্তে করে আয়ানের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো। এক পর্যায়ে বিছানার উপর উঠে আয়ানের সামনে এসে বললো,’ কি লোকাচ্ছ.?? ‘

আয়ান নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো,’ কোথায় কি লোকাচ্ছি.? সর ত বিরক্ত করিস না!’
‘ না না কিছু ত হয়েছে ‘ বেলী ভালো করে আয়ানের চোখের দিকে তাকালো।

” তুমি কান্না করেছো.? কিন্তু কেন.?’
” চোখে বেশি দেখিস.? কান্না কেন করবো.?”
আয়ান দ্রুত উঠে যেতে চাইলে বেলী খপ করে আয়ানের হাতটা ধরে বললো,’ কি হয়েছে.? আমাকে বলবে না.?”
বেলীর এমন মায়াবী কথা শুনে আয়ান ফিরে তাকালো না।
বেলী আবার বলে উঠলো, ‘ কেউ কিছু বলেছে তোমাকে.? ‘
‘ আমি ছোট বাচ্চা নই বেলী যে কেউ কিছু বলবে আর আমি বসে বসে কান্না করবো.?’

বেলী চুপ করে রইলো তবে আয়ানের হাত ছাড়লো না। আয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখতেই আয়ান চোখ সরিয়ে নিল।
” মেঝো আম্মুর কথা মনে পরছে.? ”
আয়ান চমকে উঠলো না! ছোট থেকেই এই মেয়ে আয়ানের মুখ দেখেই সব বলে দিতে পারে।

বেলী আয়ানকে কি বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না। ছোট থেকেই আয়ান অনেক বেশি মা ভক্ত ছিল।

বেলী আয়ান কে বিছানায় বসালো। চোক গুলো আগুনের মতো লাল হয়ে আছে কান্না আঁকানোর চেষ্টা করছে বুঝি আয়ান.? আয়ানের মুখ দেখে বেলী ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিল৷

” তুই কেন কান্না করছিস.?”
” তুমি কান্না করছো তাই!”
” আমি কান্না করলে তুইও করতে হবে.?”
” হুম, আম্মু বলেছে স্বামী স্ত্রী একই। এক জনের কষ্টে অন্যজন কষ্ট পেতে হয়!”
আয়ান তাকিয়ে রইলো বেলীর মুখের দিকে, ‘ আচ্ছা আর অভিনয় করতে হবে না। আমি কান্না করছি না ‘
‘ কি বললে.? আমি অভিনয় করছি.? তোমার কষ্টে আমি অভিনয় করছি.? এভাবে বলতে পারলে.?’

আয়ান বেলীর শরীরটা এক টানে নিজের পাশে এনে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে বললো,’ এতো বড় সাহস কি আমার আছে..?’
বেলী ছুড়াছুড়ি করলো না চুপটি করে আয়ানের বুকে মাথা রেখে বললো,’ আমিও মেঝো আম্মুকে অনেক মিস করি আয়ান ভাইয়া’
” ভাইয়া.?”
” ওপ্স সরি তুমি ত আমার একটা সময় ভাই হতে তাই না.?”
আয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,’ একটা সময় হতাম এখন ত জামাই হই তাই না.? দ্বিতীয় বার ভাই জেনো না শুনি!’
বেলী হেঁসে মাথা হেলিয়ে বললো,’ আচ্ছা ভাইয়া’
আয়ান রাগী মুখ করে তাকাতে গিয়েও বেলীর দুষ্টুমি দেখে হেঁসে ফেললো।

‘ এই ত গুড বয়,গুড হাসবেন্ড এভাবে হাসবে তোমাকে হাসিতে মানায়!’

আয়ান বেলীর চুলগুলো কানের পেছন গুঁজে দিয়ে বললো, ‘ এমন একটা বউ থাকলে কি মন খারাপ করে থাকা যায়.? ”

______________

অভ্র বার বার নিরুপমা কে কল দিচ্ছে জলদি একটা এড্রেস দিয়েছে সেখানে আসতে।
নিরুপমা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো। ভেতরে অভ্র একটা মেয়ের সাথে বসে আছে।
নিরুপমা গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আরও রেগে গেলো।

মেয়েটা আর কেউ নয় সেই ছয় বছর আগের হোটেলের মেয়েটা।
মেয়েটার সাথে একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে।

অভ্র ইশারা করলো নিরুপমা কে বসতে।

মেয়েটা হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিল নিরুপমার দিকে, ‘ হ্যালো আপু আমি মেঘা”
” হায় আমি উনি নিরুপমা নিরু ”
মেয়েটা মুগ্ধ চোখে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে আছে।

অভ্র কফি অর্ডার দিল। নিরুপমা শান্ত দৃষ্টিতে একবার মেয়েটার দিকে ত আরেক বার অভ্র দিকে তাকিয়ে আছে।

মেঘা বাচ্চাটা কে দেখিয়ে বললো,’ আমার মেয়ে তৃণা ‘
নিরুপমা হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটার গালে হাত রাখলো। বাচ্চাটার বয়স পাঁচ কিংবা ছয় হবে।

আমার সাথে অভ্রর পরিচয় দশ বছরের উপরে হবে। আমি অভ্রর ফ্রেন্ড রাকিবের গার্লফ্রেন্ড ছিলাম। রাকিব আমাকে নিয়ে হোটেলে উঠে ছিল আমি আমার বিয়ে থেকে ওর সাথে পালিয়ে এসে ছিলাম। বলে ছিল কয়দিন সময় লাগবে বিয়ে করতে আমি সময় দিলাম। ভালোবাসার মানুষ বলে বিয়ের আগেই ওর ডাকে সারা দিয়ে আমরা স্বামী স্ত্রীর মতো থাকতে শুরু করলাম। সময় গেলো, মাস গেলো একদিন সকালে উঠে দেখি হোটেলে রাকিব নেই। দিন গেলো রাত গেলো আমি শুধু অভ্রকেই চিনতাম ওকে কল দিয়ে সবটা বলতে সে আসলো রাকিব কে খুঁজতে কিন্তু!

মেয়েটা চুপ হয়ে গেলো চোখে পানি টলমল করছে।
নিরুপমা মেয়েটার হাতে হাত রেখে বললো,’ আপনি জানেন আপনি কি করেছেন.? এটা পাপ!”

মেয়েটার চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। , ‘ আমি জানি পাপ সেই পাপের সাজা আজও পাচ্ছি! ‘

‘ অভ্র রুমে আসতেই অভ্রর মাথায় পেছন থেকে আঘাত করা হয় সাথে আমার পানিতে ঘুমের মেডিসিন । চোখ খুলতেই দেখি পুরো হোটেলের মানুষ ছিঃ ছিঃ ছিঃ করছে আমার রুমে আমার পাশে অভ্র শুয়ে আছে তাও ওর অবস্থা.. ‘

মেয়েটা উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে বললো,’ তুমি হয়তো অভ্র কে ভুল বুঝে ছিলে। ভুল বুঝার মতো অবস্থা দেখলে ভুল বুঝারই কথা। এই কাহিনীর পর আমি বাড়ি ফিরে যাই মা বাবা বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি হাতে পায়ে ধরে থাকার জন্য একটা রুম পেয়ে ছিলাম। তখন জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট আব্বু আম্মু মানসম্মানের ভয়ে মালেশিয়া আপুর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ছিল আজ আমি উকিল।

অভ্র আমাকে খুঁজে বের করেছে শুধু মাত্র তোমার জন্য। ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে নিরুপমা।

নিরুপমা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এর বাবার খুঁজ.? ”
” আমি দেশে ফিরেছি এক মাস হলো তবে আমি এইবার ভেবে নিয়েছি ওকে খুঁজে বের করবো কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিব। ”

বাচ্চা মেয়েটা এতো মিষ্টি আর চুপচাপ প্রকৃতির নিরুপমা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো অথচ এই মেয়ে যখন বড় হয়ে জানতে পারবে তার মা বাবার কোনো বৈধ সম্পর্ক ছিল না, তাদের পাপের ফল সে তখন তার জীবনটা কেমন হবে.? তার আশেপাশের মানুষ যখন বলবে তোমার বাবার পরিচয় কি.? বাবার নাম কি.? সে ঠিক কি উত্তর দিবে.? কিছু আবেগে শরীর ভাসিয়ে দেওয়া মেয়েদের জন্য তাদের সন্তান কোনোদিন সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারে না।

বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আজ নিরুপমার মনটা ভীষণ ভালো।

বাসায় এসে দেখলো বেলী আর ফাইজা বসে টিভি দেখছে আর হাসছে।
ফাইজা নিরুপমা কে দেখতেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
নিরুপমা খুশিতে ফাইজ কে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বললো,’ জানো আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না! না বলে তুমি চলে আসবে!’

” তোর কথা খুব বেশি মনে পরছিল ত কি করবো.!’
” জিজু কোথায়..?’
ফাইজার মুখের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। নিরুপমা ফাইজার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কি হয়েছে.? ‘
ফাইজা আবার সোফায় গিয়ে বসে বললো, ‘ ওর সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে! ‘

বেলী মাঝখান থেকে বলে উঠলো, ‘ আপু দেখে আমি একটুও ভাবিনি বিবাহিত, আমার থেকে ছোট মনে হয়’
ফাইজা হেঁসে বললো,’ আমি বয়সে নিরুর থেকে এক বছরের বড়’
নিরুপমা এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজার মতো মেয়েকেও কেউ ছেড়ে দিল.? কিন্তু কেন.?

ফাইজা নিরুপমার এতো অবাক মুখ দেখে পাশে বসতে ইশারা করে বললো,’ ইউরোপের পুরুষদের একটা বউ থাকে
আরেকটা গার্লফ্রেন্ড থাকে, কিন্তু সে ভালোবাসে তার গার্লফ্রেন্ড কে ।’

বেলী রেগে বললো, ‘ বউ থাকার পর এদের গার্লফ্রেন্ড কেন লাগে.? এদের কে ত জেলে পাঠানো উচিত বাংলাদেশে এমন হলে আমি আয়ান কে দিয়ে সবগুলো কে সারাজীবনের জন্য জেলে পাঠিয়ে দিতাম। ‘

বেলীর কথা শুনে নিরুপমা হেঁসে বললো,’ তখন তোমার আয়ানও একই কাজ করতো মনা’
বেলী চিন্তায় পরে গেলো। আয়ান এমন নয় তখনও এমন হতো না।

নিরুপমা ফািজা কে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না কারণ সে জানে ফাইজা মানুষ আগলে রাখার জন্য কেমন করে যে ফাইজা কে ছেড়ে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গ দিল সে জেনো হিরা হাতে পেয়েও হারিয়ে ফেললো।

বেলীকে এতো চিন্তা করতে দেখে ফাইজা বলে উঠলো, ‘ বেলী সব দেশ এক নয়! এই যে দেখো আমেরিকার পুরুষদের একটা বউ থাকে আরেকটা গার্লফ্রেন্ড থাকে, কিন্তু সে ভালোবাসে তার বউ কে ‘

“আবারও গার্লফ্রেন্ড!..? ‘

ফাইজা হেঁসে বললো,’ সৌদি আরবের পুরুষদের কোনো গার্লফ্রেন্ড থাকে না, বউ থাকে চারটা, কিন্তু সে ভালোবাসে তার ঊট কে। ‘

” যাক বাবা গার্লফ্রেন্ড নাই এমন দেশ পাওয়া গেলো কিন্তু এতো গুলো বউ থাকতে ঊট কেন.?”

নিরুপমা মাঝখানে থেকে বেলীর এতো এতো প্রশ্ন শুনে বলে উঠলো,’ এতো দেশের কাহিনী জেনে কি করবে.? নিজের দেশের পুরুষদের বউ থাকে একটা, গার্লফ্রেন্ড থাকে চারটা’

বেলী দৌড়ে ফ্রিজ থেকে বরফ নামিয়ে মাথায় দিয়ে চুপ করে বসে রইলো। এতো এতো প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে আজ আয়ান আসুক ওকে জিজ্ঞেস করবে ওর কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে! নিশ্চয়ই ওর চারটা গার্লফ্রেন্ড আছে সেই জন্যই ত বেলীকে এখনো টাচও করেনি।

ফাইজা নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ বিয়ের পর ত আরও বেশি সুন্দর হয়ে গেছিস৷! ‘
নিরুপমা হেঁসে বললো,’ তোমার মতো মায়াবতী ত হতে পারিনি’
ফাইজা নিরুপমার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,’ দেখ কে মায়াবতী কোথায় আমি শ্যামবর্ন আর কোথায় তুই দুধে আলতা গাঁয়ের রং।’

নিরুপমা ফাইজার গালে হাত রেখে বললো,’ দেখো মায়াবতী কাকে বলে! শ্যামবর্ণ মানেই মায়াবতী যাদের দিকে তাকালেই মায়া মায়া লাগে। ‘

” এইসব গল্প উপন্যাসে মানায় বুঝলি.? বাস্তবে ত তোদের কে মায়াবতী বলে নিরু। আজ মায়াবতী নই বলেই ত নামের পাশে ডিভোর্সী বসে গেলো। ভাবছি আর ফিরবো না দেশেই সাংবাদিকতা করবো। কাল সকালে ছোট চাচ্চুর বাসায় যাচ অনিকের সাথে অনেক হিসাব নিকেশ বাকি ”

নিরুপমা হাসলো ফাইজার কথা শুনে। এক সময় অনিকের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল ফাইজা। ফাইজা বলতেই অনিক পাগল ছিল। সেই সময় যদি ফাইজা ওর ভালোবাসা বুঝত তাহলে হয়তো আজ জীবনটা অন্য রকম হতো। দেখা যাক সামনে কি হয়! ফাইজা কে দেখে অনিক কি করে!

নিরুপমা জানে অনিকের চোখে ফাইজার সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারীও ফেল.।

______________

মধ্য রাত তুমুল ঝগড়া চলছে ডান পাশের রুম থেকে।

বেলী বার বার বলছে ” তোমার অনেক গুলো গার্লফ্রেন্ড আছে তাই না.? সেই জন্য আমাকে পছন্দ করো না!’
” তোর কেন মনে হলো আমি তোকে পছন্দ করি না.?’
” পছন্দ করলে আমাকে কখনো ছুঁয়েও দেখোনি কেন.?”

আয়ান বেলীর কথা শুনে দুষ্টু হেঁসে বললো,’ তুই কি চাস আমি তোকে ছুঁই.? ”

বেলীর হুঁশ ফিরলো সে কি বলেছে। লজ্জায় পেছন ফিরে বললো, ‘ না! না আমি ত এমনি কথার কথা বললাম’
আয়ান বেলীর পেছনে দাঁড়িয়ে বললো,’ মনের কথাই এমনি বের হয়ে যায় চল আজ…’
” চুপ! চুপ একদম কাছে আসবে না!”
” আরেএ আমি এখনো শুরুই করলাম না!!”

___________

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে অভ্র নিরুপমা। অভ্র নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার হাতটা দিবে.?”
নিরুপমা রাগ দেখিয়ে বললো,’ আমি তোমার বউ তুমি যখন তখন জড়িয়ে ধরতে পারো, হাত ধরতে পারো এতো জিজ্ঞেস করার কি আছে.?’

অভ্র নিরুপমার কানে ফিসফিস করে বললো,’ চাইলে কি একটা দুইটা চুমুও খেতে পারি.?’
নিরুপমা লজ্জায় অভ্রর শার্টে মুক লুকালো।

পাহাড়ি রাস্তার মুড়ে এক টং দোকানে বসে চায়ের কাপ হাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এক যুবক চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ ওহে চাঁদ তোমার মতো আমিও যে বড্ড একা! মায়াবতীর পাশে আজ তার সখের পুরুষ আর আমার চোখে মায়াবতীর স্মৃতি! ”

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।