শেষ সূচনা পর্ব-১৬

0
301

#শেষ_সূচনা
পর্বঃ ১৬
লেখকঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ

ক্রাইম সিনে ফিতা টানানো ঘেরাও’এর বাইরে উৎসুক জনতার ভিড়। প্রত্যেকের চোখে টলটলে বিস্ময় আর মূল ঘটনা উদঘাটনের এলেবেলে চিন্তা। গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে সাংবাদিকরা ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে যাচ্ছে পটপট করে। পুলিশ, পাশাপাশি শোয়ানো লাশ দুটো গভীর অভিনিবেশে পর্যবেক্ষণ করছে। আপাতদৃষ্টিতে পুলিশের চোখে চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা গেলেও আমি পুলিশ হওয়ার পর বলতে পারলাম কপালে এটি চিন্তার রেখা নয়, খুনের রহস্য উন্মোচন করে প্রমোশন পাবার ধান্দা! জায়গাটা হালদা নদীর বেলাভূমি থেকে খানিকটা দুরে। অন্যমৌসুমে পানি থৈ থৈ করলেও শীতের শুকনো মৌসুম হওয়ায় জায়গাটা বেশ তকতকে। একটু তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আমি অকুস্থলে হাজির হলাম। আপাততঃ এতটুকু জানা গেল, দুই বন্ধু সদ্য বিদেশফেরত। বহুদিন দেশে তাজা মাছ খেতে না পেয়ে নিয়ম ভঙ্গ করে হালদা নদীতে মাছ ধরতে এসেছিল। এই নদীর আশেপাশে সর্বক্ষণ পুলিশের টহল বহাল থাকে। যাতে কেউ মাছ ধরতে না পারে। দু’জনের ভাগ্য খারাপ যে, তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। ধরা পড়লে হয়তো এভাবে খুন হতোনা। যদিচ তাদের মৃত্যুটা উপর থেকেই নির্দিষ্ট করা ছিল।
দৈবাক্রমে একটা সময় এই দুজন আমার এবং স্বর্ণার ক্লাসমেট ও ছিল। চেহারাগুলো পরিচিত হলেও রূপটা খানিক বদলেছে। বীভৎসভাবে ভেতর থেকে প্রাণপাখি ব্রয়লার মুরগির চামড়া ছাড়ানোর মতো টেনে বের করায় পাপী মুখগুলো ত্রিগুণ বেঢপ রূপ ধরেছে। এই দু’টো পশুর প্রাদুর্ভূত খুনে আমি মনে মনে যেমন উচ্ছ্বসিত হয়েছি আবার তেমনি বাতাসে মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মতো চুপসে গিয়েছি। মোদ্দাকথা আমার মনটা এই ঘটনায় দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটা বলছে স্বর্ণাই ঠিক, নিমেষে আরেকটা বিদ্রোহ করে বলছে, ধুরর, তুই কি জানিস? স্বর্ণা ভুল!

ঠিক তখনি বিভ্রমের মতো স্বর্ণাকে দেখলাম জনতার ভিড়ে। তার মুখে বাঁকা হাসি। নির্লিপ্ত চোখের তারায় পর্যায়ক্রমে একবার লাশগুলোর দিকে আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে ক্রূর হেসে আবার জনস্রোতে মিলিয়ে গেল সে। চোখের সামনে আসামী চলে যাওয়া দেখেও আমি টুঁ শব্দ করতে পারলাম না। মনের বিদ্রোহ করা অংশটা সহজেই পর্যুদস্ত হলো।
দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থল পাতিপাতি করে পর্যবেক্ষণ করেও কোন উপযুক্ত ক্লো পাওয়া গেলনা; ঐ DONT লেখা স্টিকার বাদে। লাশ মর্গে নেওয়া হলো। ময়নাতদন্তের পর জানা গেল বারবার অন্ডকোষে আঘাতে ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। এ যুগের ছেলেপেলেরা যে, ‘সো অফ’ বলে একটা কথা বলে সেটাই করা হলো বিভিন্ন মাধ্যমে, খরবের কাগজে,সরকারী-বেসরকারী চ্যানেলগুলোতে। জনসাধারণকে দেখানো হলো তদন্তের গতিবেগ। আদতে ভাগফল শূন্যই রয়ে গেল। আসামি লোকচক্ষুর সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে,সেটা আমি বাদে কে জানে? তদন্ত কমিটি এখান ওখান দৌড়াদৌড়ি ভিন্ন কিছুই হচ্ছে না। আবার সেই উপরমহল হতে কঠিন হুশিয়ারি। আবার আশ্বাস! একই এলাকায় একই কায়দায় একই ফ্রেন্ড সারকেলের চারজন খুন কোনভাবেই প্রত্যাশাযোগ্য নয়।

স্বর্ণার কোন খোঁজ নেই দুইদিন ধরে। কথা ছিল প্রতিদিন একবার হলেও ফোন করার। কিন্তু চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পরপরই সে যে এমন আকাম করে বসবে সেটা কে জানতো? কাজেই তার ফোন বন্ধ থাকাই যুক্তিযুক্ত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বর্ণার DONT পেইজ থেকে আপলোড হওয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সবার হাতে হাতে। পুলিশ পেইজের এডমিনের খোঁজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সব পথ স্বর্ণার দিক হতেই বন্ধ। লোকজন আন্দোলন শুরু করল। রাজপথ কাঁপিয়ে অবরোধ করে বিচার চাইল। একজনের হাতে পরপর চারজন খুন! অথচ দেশে কোন আইন নেই?

খুনের দিনই অনিক আর তার স্ত্রী কক্সবাজারে পাড়ি দিয়েছে। বাঁধা দেওয়ারও কোন উপায় নেই। বাধ্য হয়ে যেতে হলো। কিছুদিন পর কথামতো বাবা-মা এসে হাজির হলো সেই পুরোনো বাড়িতে। গ্রামে এসেই এই ঘটনায় শুনে দু-জনেই বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মা একটু বেশি-ই। হারানো রত্ন খুঁজে পেলে সেটার যত্ন তো একটু বাড়ারই কথা! রাতে ডিওটি শেষে ঘরের চৌকাঠ পার হতেই মা পিছু পিছু এসে আমার রুমে বসলেন। অনেক্ক্ষণ নিরুদ্যম হয়ে নৈঃশব্দ্যকে আপন করে নিয়ে তিনি আপন মনে কি যেন আঁকিবুঁকি করলেন। আমি কাপড় চেঞ্জ করতে করতে বললাম,
— কিছু বলবে?
— এসেই কি সব শুনলাম! ভয় লাগছে।তুই…
আমি মায়ের কথায় মধ্যস্থে অন্তরায় হয়ে বললাম,
— কিছু হবেনা। আমিতো আছি!
মা মুখখানা বিষণ্ণ করে বলল,
— দেশটা রসাতলে যাচ্ছে। এই অজপাড়াগাঁয়ে এমন খুন খারাবি তো মানা যায়না! তোমাকে আমি বলেছিলাম পুলিশের চাকরি না করতে। কিন্তু তুমি উল্টো কথা শুনিতে দিয়েছিলে। এসব চাকরিতে রিস্ক বেশি। চারিদিকে শত্রু ওঁৎ পেতে থাকে। কিছু একটা হয়ে গেলে?
দুশ্চিন্তায় মা ছটফট করছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কোথাও স্থির হতে পারছে না পুরোনো দিনের ফ্যানটা মাথার ওপর বেগার্ত হয়ে ঘোরার পরও মায়ের কপালে বিন্দু বিন্দু নিদাঘ জমে টলটল করছে। সর্বাঙ্গে বেচয়েন ভাব। আমি সব কথা হজম করে বললাম,
— অবশ্য আমারো ইচ্ছে ছিলনা। আপনজন তো কেউ ছিলনা। তাই ভাবলাম এসব করেই কাটিয়ে দিব৷… যাক সমস্যা নেই যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
মা বাচ্চাদের মতো অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বললো,
— হ্যাঁ আমরা তো আর আপন না!
আমি ঢিমে হাসলাম শুধু।
………………………………………….
খুনের তৃতীয় দিনে DONt পেইজ থেকে একটা স্ট্যাটাস এলো। সঙ্গে সঙ্গে সেটির গায়েও ভাইরালের তকমা লাগানো হলো। এর আগে দিক্বিদিকে ছড়িয়ে পড়া খুনের ভিডিওটি আমি দেখিনি। দেখার স্পৃহাও ছিলনা অবশ্য। কিন্তু বিভিন্ন আলোচনা, সমালোচনা দেখে পেইজে গিয়ে লেখাটা পড়লাম। স্ট্যাটাসটি হলো এই,
” আমি একজন নারী। একজন মেয়ের কাছে সবচেয়ে যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো স্ব সতীত্ব, নিজের সম্মান, সম্ভ্রম। যখন সেই সম্ভ্রমে আঘাত করা হয়, তখন? আমি যা করেছি, ভুল কিছু করিনি। আজ থেকে আট বছর আগে তারা আমার সম্মানহানি করেছিল। কিন্তু আমি কোন বিচার পাইনি! বিভীষিকাময় মৃত্যুই তাদের উপযুক্ত শাস্তি। এখনো এই দেশে নারীরা নিরাপদ না। এই আকাট মূর্খের দেশে কখনো ন্যায় বিচার কেউ পায়নি । আমিও পাইনি। আরো দু’টো উইকেট বাকী। সেগুলো পড়ে গেলেই আমি ক্ষান্ত হবো। আমার এই উদ্দেশ্য বালির বাঁধ নয়! সুতরাং তার আগে পুলিশ, র‌্যাব দিয়ে আমাকে খুঁজে নিজেদের পায়ের শক্তি নষ্ট করবেন না। ফেইসবুকে, রাজপথে আন্দোলন করেও নিজেদের পায়ের শক্তি নষ্ট করবেন না। তার চেয়ে বরং নিজের পরিবারকে দেখুন,ভাইবোনকে দেখুন। ধর্ষককের বিরুদ্ধে আন্দোলন করুন। যারা মরছে ধর্ষকই মরছে। তাদের খুনের বিচার চেয়ে নিজেদের পবিত্র মুখ নষ্ট করবেন না।”
~ DONT

হাটে হাঁড়ি ভাঙার মতো ছোট এই লেখাটি রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেল। এবার দেশের হুজুগে জনগণ স্রোতের বিপরীতে কথা বলতে শুরু করল। বাহবা দিতে লাগল খুনিকে। কোথাও কোথাও ধর্ষিতার হাতে ধর্ষক খুনের খুশিতে মিষ্টিও বিতরণ করা হলো। সংবাদ মাধ্যমগুলো সরব হয়ে সংবাদ প্রচার করা শুরু করল। এই তো তাদের কাজ! তাদেরও তো একটা পেট আছে! সেটাও তো চালাতে হয়!

সেদিন রাতে আননওন নাম্বার থেকে ফোন এলো। আমি দেরি না করে চট করে রিসিভ করে ফোন কানে দিয়ে মন দরাজ করে একটা নিশ্বাস ফেললাম। কারণ হিসেবে থাকছে, আমার ফোনের আননওন নাম্বার মানেই স্বর্ণার ফোন। স্বর্ণার ফোনও কখনো বলেকয়ে আসেনা এবং তার সমাবর্তনও হয় একি ধাঁচের। মেয়েটা বোধহয় সবকিছুতেই আচমকা মানুষকে চমক লাগিয়ে ঘোল খাওয়াতে বড্ড ভালোবাসে?
— এতোদিন পর মনে পড়ল? এদিকে তোমার কারণে….
— থামো থামো। ফোন ধরতে না ধরতেই এমন ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছ কেন?
জ্বাজ্জল্যমান উনুনে পানি ছিঁটকে দিলে যেমন অনিকেত ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকাতে পাকাতে নিষ্প্রভ হয়,ঠিক তেমনি মনের জ্বলন্ত কথাগুলো পলকে স্বর্ণার কথায় হতাশার কুণ্ডলী পাকিয়ে উবে গেল। ক্ষীণ গলায় বললাম,
— দেখা করতে পারবে এখন?
— কেন?… আচ্ছা ঠিক আছে চলে এসো।
— কোথায়? -আমার প্রশ্ন।
— আমি শহরের দিকে আছি৷ খুলশি ১ নং এলাকায় বিহারী আছে না? ঐ রাস্তায় চলে এসো। এসে ফোন দিও এই নাম্বারে।
— ঠিক আছে, আসছি।

ঘর থেকে যখন বেরোলাম ঘড়ির কাটায় রাত তখন দশটা। গ্রামাঞ্চলেও আজকাল এই সময়ে দোকানপাট খোলা থাকে। গাড়িঘোড়ার সংখ্যা যদিও কম কিন্তু একেবারে নগণ্যও নয়। কোনমতে হাটহাজারী পর্যন্ত যেতে পারলে সেখান থেকে গাড়ির জন্য আর চিন্তা নেই। হাটহাজারী পৌঁছে সেখান থেকে রওনা দিলাম গন্তব্যে।

সেখানে পৌঁছালাম রাতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ। আসাবিক এলাকায় হওয়ায় পুরো এলাকাটায় তখন নিঝুম রাত নেমেছে। পাকদণ্ডীর মতো উঁচু নিচু বিটুমিন দিয়ে ঢালাই করা পথ এই তল্লাটের। হয়তো কোন একটা সময় পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে এই অঞ্চলটা। দূরে অবশ্য কিছু পাহাড়ের দেখাও ক্বচিৎ মেলে। ঘনধূসর কুয়াশার মিহি জালে আচ্ছন্ন সুমুখের পুরোটা পথ। সোডিয়াম আলোও এই ঘনীভূত কুজ্ঝটিকার কাছে ধরাশায়ী। দু’ধারে সুবিন্যস্ত গাছের পাতাগুলো থেকে টপটপ করে কুয়াশাবিন্দু ঝরে পড়ছে রাস্তার বুকে। অনেকটা গভীর রাতের মতো পরিবেশ হওয়ায় এদিক থেকে কোন রিক্সা পাওয়া গেল না৷ অগত্যা গলির মুখ থেকেই গন্তব্যে হাঁটা শুরু করলাম। অল্প কিছুদূর হাঁটার পর সহসাই দূরে একটা নারী অবয়বী আমার চোখে যেন বিভ্রম সৃষ্টি করল। প্রথম দর্শনেই আমার ষষ্ঠইন্দ্রীয় সংকেত দিল স্বর্ণা আসছে। দূর থেকে তার দৃঢ় মূর্তি আর চতুর্দিকের ঢিমে আলোয় আধো উদ্ভাসিত অবয়বটা আমার কাছে চিত্রশিল্পীর আঁকা কোম ঐন্দ্রজালিক দৃশ্য বলে মনে হল। কখনো কখনো সোডিয়ামের আলোই তার এলো চুলের একাংশ জ্বলজ্বল করছে। আবার কখনো সেকেন্ডের জন্য তার কঠিন মুখখানা আবির্ভূত হচ্ছে। আমার গতিটা মন্থর হয়ে এলো। স্বর্ণা খুব দ্রুত হেঁটে এলো আমার সামনে।
— কী হল ফোন দিতে বলেছিলাম, দাওনি কেন?
স্বর্নার কপালে একটা ক্লান্তির ভাঁজ। পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বললাম,
— মাত্রই দিতাম। ওমনি দেখলাম তুমি এসে পড়েছ।
স্বর্ণা আবার ফিরতি উল্টোপথে হাঁটা শুরু করল। আমিও পা মিলিয়ে সঙ্গ দিলাম তার সাথে। কথার অভাবে চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম দু’জনে। অথচ ভালো-মন্দ কতো কথাই না জমে ছিল মনের সিন্দুকে। সেগুলো বুক খুলে উজাড় করে দেওয়ার জন্যই তো এতো রাত্রে এতদূর পাড়ি দেওয়া। তা সত্ত্বেও কথাগুলো যেন গলার কাছে এসে বাসা বেঁধেছে। এখন বাসা ছাড়তে চাইছেনা। মায়া লেগে গেছে। থাকনা কিছু উহ্য কথা! মনের অজান্তেই অনেক্ক্ষণ ধরে স্বর্ণাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম আমি। তার পরনে সাদা-কালো মিশেলে একটা ফুটফুটে চাদর। চাদরের ভিতরেই তার হাতদুটো গুঁজানো। মাথার চুলগুলো অযত্নে অবহেলায় আলুথালু। এতেই যেন মায়াটা দ্বিগুণ বেড়েছে। স্বর্ণার চেহেরায় বিকার নেই। সে সটান হয়ে হেঁটেই চলেছে নিরবচ্ছিন্ন। হঠাৎই সে ফচ করে হেসে বলল,
— বড়োই অদ্ভুত তাইনা? যে আমাকে এ্যারেস্ট করার কথা সে আমাকে তা না করে আমার পাশে পাশে হাঁটছে।
— সত্যিই অদ্ভুত। আচ্ছা,আমি যদি তোমার সবকিছু ফাঁস করে দিই! তখন কী করবে?
— দাও! হাজার ফাঁস করলেও আমি দমে যাচ্ছিনা। বাকীদুটো উইকেট ফেলে তবেই সবকিছুর ইতি টানব৷… উলটো ফাঁস করলে তুমিই বিপদে পড়বে।
— ভয় দেখাচ্ছ?
— নাহ, ভয় দেখাব কেন? ভেবে দেখো একবার ঘটনার প্রবাহটা। আমাকে ধরার ক্ষমতা তোমার পুলিশের নেই, যদিনা আমি ধরা দিই!
আমি হেসে বললাম,
— এতো ওভার কনফিডেন্স?
— হ্যাঁ, তোমার পুলিশের এক বছরের ট্রেনিং। আর আমি দেশ বিদেশে আট বছর ট্রেনিং নিয়েছি। শত্রু মারা, শত্রুর হাত থেকে বাঁচা উভয়ই রপ্ত করেছি। ধরা আমি অবশ্যই দিব। কিন্তু খেলা শেষ না করে মাঠ ছেড়ে নামে কেউ? আমিই তো মূল খেলোয়াড়!
আমি কিছু বলতে পারলাম না। কথাগুলো সমুচিত জবাব বোধহয় আমার কাছে নেই। তাই চুপ করেই উদ্দেশ্যহীন হয়ে হাঁটতে লাগলাম স্বর্ণার পাশাপাশি। কোন জবাব না পেয়ে সে আবার বলল,
— শেষ দুজনকে বেশ কষ্ট দিয়ে মারব৷ এরাই মূল হোতা। খুব দুরালভ হবে অবশ্য। আমি চাই তারা পালিয়ে বেড়াক। সহজেই মরে গেলে মজাটা কোথায়?
আমার অনেক আগেই বোঝা শেষ হয়েছিল এই মেয়েটা নিজের দুরভিপ্রায়ের কথা বলতে রত্তি পরিমাণ সংকোচ করেনা। এবার উত্তরোত্তর এসব কথা শুনে মেজাজটা আমার কেমন বিগড়ে গেল।
বিরক্তির স্বরে বললাম,
— তোমার এসব কঠিন মুখের কথা ছাড়বে প্লিজ? এগুলো আলাপ করার জন্য তো আসিনি।
স্বর্ণা আমার দিকে কপট আদুরে গলায় টেনে টেনে বললো,
— তাহলে কি আদর করে করে কথা বলতে হবে বুঝি?
আমি একি স্বরে বললাম,
— না তা করতে হবে কেন?
ঠিক তখনি ফোনটা বেজে উঠল তারস্বরে। প্রায় গভীর নিশিতে শুনশান নীরবতা ভাঙা যান্ত্রিক শব্দটি বড্ড বেয়াড়া শোনালো সেই সময়। ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে স্পষ্ট গলায় সালাম এলো। আমি সালামের জবাব দিয়ে বললাম,
— কে বলছেন?
অপরপ্রান্ত থেকে কোন কথা এলোনা কয়েক মুহূর্ত। পরক্ষণেই অভিমানী কণ্ঠে শোনা গেল,
— ওমা, এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? আমি জুহি।
— ওও জুহি? তা হঠাৎ! নাম্বার কোথায় পেলে?
— নাম্বার জোগাড় করলাম। অনেকদিন তো কথা হয়না তাই আরকি ভাবলাম একবার ফোন দিয়ে দেখি।
আমি স্বগোতক্তি করে বললাম,
— অনেকদিন? এক সপ্তাহ আগেই না তোমার বাসায় থেকে এলাম?
জবাবে একটুকরো মৃদু হাসিসমেত সলজ্জ কণ্ঠে ভেসে বলল,
— এক সপ্তাহ তো অনেকদিন বলে মনে হলো আমার কাছে।
আমি দায়সারা গলায় বললাম,
— হতেই পারে। তুমি একা মানুষ সিলেটে থাকো তো তাই।
জুহি ‘হুমম’ বলে চুপ করে গেল। এরপর হঠাৎ বলে ফেলল,
— আচ্ছা আমাকে আপনার মনে পড়েনা?
আমি সময় না নিয়ে চট্ করে উত্তর দিলাম,
— পড়ে, কিন্তু অতোটা পড়েনা। যখন খুব বেশি পড়বে তখন তোমার চিঠি খুলে দেখব, ঠিক আছে?
— ঠিক আছে।…কী করছেন আপনি?
আমি এক পলক তাকালাম স্বর্ণার দিকে। একটু চমকালাম। স্বর্ণা তার লম্বা পক্ষ্মযুগল মেলে নিমিষহারা চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হাঁ করে গিলছে আমার মুখনিঃসৃত কথাগুলো। কে জানে কি ভাবছে সে। আমি সন্ত্রস্ত হয়ে চোখ দুটো নামিয়ে নিয়ে বললাম,
— রাস্তায় হাঁটছি…
জুহি যেন আমার মুখ থেকে বুলি ফোঁটার অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে ছিল। তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল,
— এতো রাতে হাঁটছেন! একা?
— নাহ্ স্বর্ণা আছে পাশে। বলে আড়চোখে একবার তাকালাম স্বর্ণার দিকে। স্বর্ণা তখনো আমার দিকে নিষ্কপট চেয়ে আছে।
জুহি আবারো কয়েকসেকেন্ট নিশ্চুপ থেকে বলল,
— স্বর্ণা! ওনাকে পেলেন কোথায়? ওনি কি আগের মতোই আছেন? নাকি আপনি চেঞ্জ করে দিয়েছেন।

আচমকা নিশীথনিবিড় রাতে জুহি বোধহয় এই নামটা আমার মুখে প্রত্যাশা করে নি। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে উক্ত কথাটি উচ্চারণ করল সে।
বলা দরকার, জুহি এবং অনিক আমার এবং স্বর্ণার অতীত জানলেও পুরো ঘটনা আমি তাদের বলিনি। স্বর্ণা যে পুরো দেশকে একা নাড়া দিয়ে আমার পাশে নিষ্কণ্টকভাবে হাঁটছে সেই খবর কেউ জানেনা। আমি গড়িমসি করে উত্তর দিলাম,
— আছে আরকি, কোনমতে।
— আচ্ছা, আপনাদের বোধহয় ডিস্টার্ব করলাম। এক্সট্রিমলি স্যরি। এখন রাখছি। অন্য সময় ফোন দিব। আসসালামু আলাইকুম। তড়িঘড়ি করে কথাটি বলে ফোন রেখে দিল জুহি৷
আমাদের মাঝে জুহি যে কাবাব মে হাড্ডি হতে চায়না সেটাই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়ে গেল সে। আমি ধীরে ধীরে ফোনটা পকেটে পুরে স্বর্ণার দিকে তাকালাম। স্বর্ণার একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা স্থির ঠোঁটযুগল হঠাৎ নড়ে উঠে বলল,
— মেয়েটা কে? এমন আমোদ করে কথা বলছো!
আমি ফোঁড়ন কেটে বললাম,
— কেন? জ্বলছে বুঝি?
স্বর্ণা ঠোঁট চেপে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
—- কি আজব! জ্বলবে কেন?
—- সেটাই তো স্বাভাবিক! – সাবলীল কণ্ঠে বললাম আমি।
স্বর্ণা টরটরে গলায় বলল,
— না স্বাভাবিক নয়।
জেদ দেখে আমি শব্দ করে হাসলাম। শব্দটা জনশূন্য পথের এখানে ওখানে প্রতিধ্বনি তুলে আবার নিজের কানে ফিরে এলো। মনে হলো, হরর মুভির কুহকী কোন শব্দ! আমি হাসি থামিয়ে বললাম,
— নাহ,তেমন কিছু না। মেয়েটা আমার জুনিয়র। ক্যাম্পেই পরিচয়। বড় ন্যাওটা আমার।
স্বর্ণা আগের মতোই গোঁ ধরে বলল,
— ন্যাওটা না ছাই! এতো রাতে ফোন দেয়ার মানে কি?
— তুমিতো দাও-ই না। অন্যজন নাহয় দিক। -খোঁচার সুরে বললাম আমি।
তবে খোঁচাটা জায়গা বরাবর লাগল কি না ঠিক বোধগম্য হলোনা। লক্ষ্যহীন হাঁটতে লাগল সে। প্রতিত্তোরে কিছুই বলল না।

আচম্বিতে এই প্রথম খেয়াল করলাম স্বর্ণা খালি পায়ে বেরিয়েছে। নাঙ্গা চরণকমলে টিপটিপ পা টিপে হাঁটছে সে। কিছু একটা বলতে গিয়েই থেমে গেলাম আমি। শীতটা ভালোই জেঁকে বসেছে। গাঢ় শার্ট আর সেন্টু গেঞ্জি কায়া ডিঙিয়ে সরাসরি শরীরে আঘাত হানছে বরফশীতল বাতাস। একটু পরপরই ‘হিহি’ করে কেঁপে উঠছি। কাঁপা দেখে স্বর্ণা একটু ফিরে তাকালেও পরমুহূর্তে আবার চোখ ফিরিয়ে চাদরটা ভালো করে টেনে নিয়ে সোজাসুজি হেটে চলেছে। আমার লঘু মস্তিষ্কে একটা জিনিস কোনভাবেই প্রবিষ্ট করতে পারছিনা, স্বর্ণা কি আসলেই শোধরাবে? নাকি সবকিছুর ইতি টেনে শোধরাবে বলে আমাকে ব্যবহার করছে? এটা বলাও অনুচিত অবশ্য। আমাকে ব্যবহার না করেও সে সব অনায়াসে করার ক্ষমতা রাখে। তবুও মনটা যেন কোন প্রকার শান্তনা শুনতে নারাজ। এটুকু সঠিক যে আমাকে সে পূনরায় ফিরে পেয়ে আবার হারাতে চায়না। আমার সংস্পর্শ সে মনে মনে কামনা করে। তবু তার দীর্ঘ আট বছরের লক্ষ্যে জলাঞ্জলিও সে দিতে পারেনা। এক কথায় সে সম্পূর্ণ নিরুপায়! নিজের অভীষ্ট লক্ষ্য ষোল কলা পূর্ণ না করে ক্ষান্ত সে হবেনা। পারতপক্ষে আমাকে চিরতরে আলবিদা বলার মানস ও সাধ্যও তার নেই।

অনেক্ক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ স্বর্ণা বলে ওঠল,
— তোমার ঠাণ্ডা লাগছেনা? শুধু শার্টে কি শীত মানে?
স্বর্ণার কণ্ঠ পূর্ববৎ নিষ্কলুষ। বোঝা গেল মনের দেয়ালে ক্ষণিকের জন্য জমানো শ্যাওলাগুলো সময়ের সঙ্গেই উঠে গিয়েছে। নির্জন রাতের অভিমান বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। রাতের নীরবতায় অভিমানের পাল্লাটাকে অনিবিড় হতে থাকে অনবরত। কাজেই মান ভাঙানোর জন্য নিভৃত নিশীথিনীই উৎকৃষ্ট সময়।

আমি জোর করে হেসে বললাম,
— নাহ,সমস্যা নেই। ঠিক আছি আমি।
স্বর্ণা চোখ ঘুরিয়ে মুখে অস্ফুট ‘উঃ’ শব্দ করে বলল,
— হ্যাঁ দেখতেই পাচ্ছি কেমন ঠিক আছো! কাছে এসো।
আমি টিপ্পনী কেটে বললাম,
— কাছে কেন? কুমিল্লায় যেটা দিয়েছিলে সেটা ফেরত দেওয়ার জন্য?
স্বর্ণা মুখমণ্ডলে এক ছটা হাসির রেখাসমেত সহর্ষ কণ্ঠে বলল,
— সবসময় ঐ একি ধান্দায় থাকো কেন হ্যাঁ?
— ধান্দা বলছো কেন? পাওনা জিনিস তো মিটিয়েই দিতে হয়।
— নাহ্ আমার চাইনা।… এতো কথা বলোনা। আসো চাদরে ঢুকো। নাহয় ঠাণ্ডায় জমে যাবে একেবারে।
স্বর্ণা একরোখা হয়ে কথাটি বলে চাদরখানার এক পাশ মেলে ধরল। আমি আর দ্বিরুক্তি না করে স্বর্ণার মেলে ধরা চাদরে কুঁকড়িমুকড়ি হয়ে ঢুকে পড়লাম। চাদরটা বেশ বড়ো। দুজনে অনায়াসে এঁটে গেলাম। আমি তার কানে কানে ফিসফিস করে বললাম,
— দিয়ে দিলে তো মিটে গেল। কিন্তু না দিয়ে দিব দিব বলে জ্বালানোর মধ্যে আলাদা একটা স্বাদ আছে।
— তাহলে তোমার দেওয়ার পাল্লাটা ভারী করি আরো? দিবেই না যখন একটু ভারী হলে দোষ কী?
স্বর্ণা বললো একি স্বরে; কিন্তু তার কণ্ঠে স্পষ্ট মাদকতা পরিলক্ষিত।
আমার চলার গতি শ্লথ হলো। মোহাবিষ্ট চোখে তাকালাম স্বর্ণার দিকে। স্বর্ণা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে ফিচেল হেসে বলল,
— হিঃহিঃহিঃ থাক। মজা করলাম একটু।
জবাবে আমিও একটু হেসে আবার হাঁটা শুরু করলাম। স্বর্ণা বাঁ হাতে বুকের উপর চাদরটা জাপটে ধরে একহাত পিঠ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আমার জঠরের কাছে এনে রেখেছে আলতো করে। আমিও ঠিক একইভাবে তাকে পেঁচিয়ে ধরতেই সে লাফিয়ে উঠে বলল,
— ছাড়ো সুড়সুড়ি লাগছে। আমি ধরেছি বলে তোমারও ধরতে হবে কেন?
আমি তাকে আরো গাঢ় করে কাছে টেনে চাদরে ঢুকিয়ে বললাম,
— তিড়িংবিড়িং করোনা। চুপচাপ হাঁটো।
স্বর্ণা চোখ বড় করে শাসিয়ে বলল,
— ঠিকাছে, হাত যেন পেটের কাছেই থাকে। উপরে নিচে হয়েছে তো খবর আছে।
আমি ঠোঁট-কপাল একসঙ্গে ভাঁজ করে বললাম,
— ইশশ্ কিচ্ছু বাঁধে না তোমার মুখে?
স্বর্ণা হয়তো এই কথার উত্তরটা মুখে নিয়েই বসে ছিল। আমার মুখ থেকে কথাটা বের হতে না হতেই বলে ওঠে,
— নাহ্, বাঁধেনা। নষ্ট মেয়ের কাছে এতো বাছবিচার থাকতে নেই।

আরো মিনিট কয়েক হেঁটে স্বর্ণার বর্তমান অবস্থানরত বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। স্বর্ণার মতে বাড়িটা তার বস এর। দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে কথা! জায়গায় জায়গায় তাদের বাড়িঘর না থাকলে চলে কি করে! আশ্চর্য ব্যপার হলো স্বর্ণার সার্বক্ষণিক চ্যালাগুলো ইতিমধ্যে এই বাড়িতে আস্তানা গেড়ে নিয়েছে। এই লোকগুলো যেখানেই যাই সেখানেই গিয়ে হাজির হয়।
সত্যিই অদ্ভুত! আচমকা মনে একটা অযাচিত প্রশ্নের উদয় হলো, স্বর্ণা এদের মাসে কত টাকা দেয়! মাঝে মধ্যে নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে যাই আমি। এতো অযাচিত ভাবনাও বুঝি একজন পুলিশ এস আই এর মাথায় থেকে উদ্রেক হয়?
রাতে আমাকে একটা রুমে থাকতে দেওয়া হলো। আমিও ভদ্র ছেলের মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এখন আমার আসাটাই বৃথা বলে মনে হচ্ছে। কেনই বা এখানে আসা। আর কেনই বা এই ঘরে থাকা! তারচে নিজের ঘরে আরো ভালো ঘুম দেয়া যেতো।
………………………………………

পরেরদিন সকালে স্বর্না থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে এলাম। আজ ডিউটি ছিল না। ঘাটে বসে নিবিষ্টচিত্তে একখানা বই পড়ছিলাম। অবসর যদিও খুব একটা মেলেনা, মিললেও অবসরে বই পড়াই আমার একমাত্র কাজ। যখন একা ছিলাম, তখন সারাক্ষণ বই,মদ,সিগারেট নিয়েই পড়ে ছিলাম। একসময় কবিতাও লিখতাম। কিন্তু কালের গর্বে সব অনুভূতিরা বজ্রপাতে ছিন্নভিন্ন মরা গাছের মতোই থিতিয়ে গেল। উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহে নাক ডুবিয়ে বইটা পড়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনি মা এসে হাজির হলো। বিছানার কাছে দাঁড়িয়েই জরুরি গলায় বলল,
— স্বর্ণার বাবা- মা এসেছে তোমার সঙ্গে দেখা করতে।
শুনে আমার বুকের ভিতরটা যেন উদ্বেল ঢেউয়ের তোড়ে খানখান হয়ে গেল। হকচকিয়ে বইটা বিছানায় উপুড় করে রাখলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
— ওনারা কোত্থেকে?
— আমি কি জানি। গিয়ে দেখ না।
আমি পূনরায় বইটা হাতে নিয়ে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বললাম,
— যেতে পারবনা। চলে যেতে বলো ওদের। আমাদের এখান থেকে তাড়িয়ে কি তাদের শান্তি হয়নি? একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেও কি…
কথাটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেলাম আমি। মা বলল,
— হুমমম জানি,লুকাতে হবে না। গ্রামে এসেই সব শুনেছি আমি। আমিতো আরো ভেবে রেখেছিলাম স্বর্ণার সঙ্গে তোমার বিয়ে… । সেটা আর হলোনা। তোমার দাদীর কাছেই শুনেছিলাম তুমও স্বর্ণাকে পছন্দ করতে।… যাকগে, একবার দেখা করে আসো। কি বলে অন্তত শুনে তো আসতে পারো।
ইচ্ছে না থাকার সত্বেও বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে দ্রুত এগিয়ে গেলাম বসার ঘরে।
মানুষদুটো অপরাধীর মতো মুখ করে বসে আছে সোফায়। আমার মনে হলো এই দু’জন মানুষের আগমনে আমার ঘরের প্রতিটি বালুকণা অক্লান্ত ভর্ৎসনা করে যাচ্ছে এদের। ইচ্ছে হলো, গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিই এই দুই পাপীকে। কিন্তু প্রাণপণে রাশ টেনে ধরলাম আমি। তাদের সুমুখের সোফায় দপ করে বসতেই একসঙ্গে চমকে উঠল দু’জনে। আমি না তাকিয়েই বললাম,
— বলুন কী চাই আপনাদের।
বুড়ো-বুড়ি সন্দিগ্ধ চোখে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একবার।

চলবে…