শেষ সূচনা পর্ব-২২

0
300

#শেষ_সূচনা
পর্বঃ২২
লেখকঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ

আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাথরে বসে পড়লাম পুনরায়। মাথাটা ফাঁপা লাগছে। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো যেন হঠাৎ নিজেদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে স্তব্ধ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। ঝিমঝিম করে কয়েকবার দোলা দিল আপাদমস্তক সঙ্গে গায়ের প্রত্যেকটা লোমকূপে শঙ্কিত শিহরন কাঁটা দিয়ে উঠল। মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে স্বর্ণা…! নাহ সে বিষয় আমার ভাবনাতীত। কোনমতেই এমনটা ঘটতে পারে না। স্বর্ণা শেষজনকে ওপরে না পাঠিয়ে নিজে একটা ঠুনকো কারণে আত্মহনন করবে বিষয়টা নেহাত হাস্যকর। অনন্ত স্বর্ণার জায়গা থেকে এমন ঘটা অস্বাভাবিক। সুতরাং, স্বর্ণা নিশ্চয় নতুন কোন চাল খেলছে আমাকে নাকাল করার জন্য। ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ালাম আমি। সূর্যের তেজ বেড়েছে ঠিক,কিন্তু গা পোড়ানো তাপ হয় নি এখনো। বদলে দীর্ঘক্ষণ ঝর্ণার পানিতে বসে থাকার ফলে শরীরটা অসাড় হয়ে আসছে আর মৃদু কম্পন শুরু হয়েছে। দুয়েক পা সামনে এগিয়ে ঝুঁকে নিচে তাকালাম সুগভীর ঢালু খাদে। অবিরাম নির্গত ঝর্ণার পানিতে থৈ থৈ করছে নিচটা। পাহাড় নিংড়ানো ঝর্ণার পানিগুলো পশ্চিম দিকের নদীর মোহনার দিকে ধাবমান। বুকের ভিতরটা হাহাকার দিয়ে উঠল আমার। নতুন উদ্যমে অনুরাগ চেপে বসল স্বর্ণার জন্য। মনকে মানাতে পারলাম না কোনমতে। একটি অবোধ ময়নাকে ভোলাতে যতটা-না কষ্ট হয়, সুবোধ মনকে ভোলাতে তারচেয়ে দ্বিগুণ কাঠখড় পোড়াতে হয়। খাদে নামার জন্য উপযুক্ত জায়গার খোঁজে আশেপাশে চঞ্চল চোখ বোলালাম। পূর্ব দিকে একটা বর্ষীয়ান গাছ নিচের দিকে বেঁকে নেমে গেছে কিছুদূর পর্যন্ত। সেদিক থেকে খাদের দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যাবে ভেবে আমি দ্রুত সেদিকে অগ্রসর হলাম। ঠিক তখনি আমার কটিদেশে পেলব অথচ বলীয়ান হাতের প্রচণ্ড জোর ধাক্কা অনুভব করলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় দম বন্ধ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কিঞ্চিৎ কুঁকড়ে পাথর থেকে পা আলগা হয়ে গেল আমার এবং পরমুহূর্তেই শোঁশোঁ করে বাতাস কেটে শূন্যে ভাসলাম। কোমরের পিছনে অদেখা জন্তু কিংবা মানুষটি এখনো আমার কোমর জড়িয়ে আছে। নিচ থেকে খাদের সদম্ভ কলকলানি কানে তালা পড়ার যোগাড়। কয়েক সেকেন্ড পরেই ঝপ করে পানিতে পতিত হলাম আর সঙ্গে ভড়ভড় করে খাদের অতলান্তে চলে গেলাম। নাকে মুখে পানি প্রবেশ করল জোর বেগে। কোমর জড়িয়ে থাকা প্রাণীটি এবার আমার দুই হাতের পেশি আঁকড়ে ধরলো। তখনো আমার চটক খাওয়া মস্তিষ্ক প্রাণীটির সঠিক পরিচয়ের জানান দিল না। আরো কয়েক সেকেন্ড দুর্গম পানির নিচে একচোট নিমজ্জিত হওয়ার পর এবার উপরে ভেসে উঠতে লাগলাম অল্প অল্প। এতেক আমার দু-চোখ ভয়ে, আতঙ্কে ও স্খলনের ফলে বাতাসের দাপটে আধবোজা ছিল। চোখ খুলে দেখলাম, জলনিমগ্ন এক নারীপ্রতিমা, আলুথালু চুলগুলো ক্রমে দুলছে পানির গহনে। স্বর্ণা!আমার মুখে হাসি ছটা ফুটল। স্বর্ণাও হাসল। সঙ্গে জোড়া বুদবুদ পাল্লা দিয়ে আমাদের আগে আগে ছুটল উপরে। একটু পরেই ফুস করে পানির উপরে ভেসে উঠলাম দু’জনে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম আমি। কিন্তু স্বর্ণা স্বাভাবিকভাবেই নিশ্বাস নিতে নিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল মুচকি হাসিসমেত। পা দু’টো পানিতে অনবরত হাঁসের মতো চালিয়ে ভেসে রয়েছি আমরা। স্বর্ণা এখনো আমার দুই পেশি আঁকড়ে ধরে আছে। শক্তির প্রশংসা করতে হয় স্বর্ণার। আট বছরের সাধনা রত্তি পরিমাণ বিফলে যায় নি। তবু এখন লাই দেয়াটা কোনমতেই সমীচীন নয়। কয়েক মিনিট নীরবে প্রকৃতিস্থ হয়ে আমি হাঁপরের মতো হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম,
— এটা কী হলো? জানো কত ভয় পেয়েছিলাম!
স্বর্ণা খিলখিলিয়ে হাসল।
— ভয় কীসে পেয়েছিলে? আমি লাফ দেয়াতে? নাকি তুমি খাদে পড়ে মরবে সেটাতে?
— দুটোতেই!
কয়েক সেকেন্ড কথা কথা হলোনা। একটা বড়সড় ঠেউ ছলাৎ করে মাথার উপর দিয়ে চলে পূর্বদিকের পাড়ের দিকে পালিয়ে গেল। একটু ডুবে আবার ভেসে উঠলাম আমরা। স্বর্ণা মুখভর্তি পানি ঘাড় ফিরে ফেলে বলল,
— জানি নিজের জন্যই ভয় পেয়েছ, আমার জন্য যদি এতো টান থাকতো তাহলে তো আমার সঙ্গেই লাফিয়ে পড়তে।
— উহঃ জীবনটা তো সিনেমা! আমি জানতাম তুমি এভাবে কখনো লাফিয়ে পড়বে না। আমাকে ভয় দেখানোর চক্রান্ত সব।… এখন পানি খেয়ে খেয়ে এসব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। উপরে নেবার ব্যবস্থা কর। -বলে উপরে তাকিয়ে একবার চোখের মাপে দূরত্বটা মেপে বললাম,
— কীভাবে যাবে? পাথর তো বেশ পিচ্ছিল!
স্বর্ণা কপাল কুঁচকে তাকাল উপরে। এরপর তাচ্ছিল্য করে বলল,
— কই বেশি উপরে? ঘরে ভালো না লাগলে আমি প্রতিদিন এখানে আসি গোসল করতে। তোমাকে নিয়ে যেখান থেকে লাফ দিলাম সেখান থেকে লাফ দিই।
এখন আমার অবাক হওয়ার সময় নয়। দুই পা নিঃসাড় হয়ে আসছে নাড়তে নাড়তে। খরস্রোতা জলাশয়ের বিশাল স্রোতে আরো একবার ডুবে গেলাম দু’জনে। পুনরায় ভেসে উটে আমি অতর্কিতে মুখভর্তি পানি স্বর্ণার মুখে ছুঁড়ে মারলাম। স্বর্ণা মুখে কিছু না বলে নাক,কপাল,ঠোঁট একসাথে কুঁচকে অস্ফুটে উচ্চারণ করল, “উঁহুঃ”
আমি সেটা গায়ে না মেখে বিরক্তির সুরে বললাম,
— নিজের গুণকীর্তন পরে গেও। তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো এখান থেকে। গলা দিয়ে আর পানি নামছে না।
— খাও,বিশুদ্ধ পানি… আমার পিঠে চড়তে পারবে?
— মানে?
— মানে আর কি? নাহলে ছেড়ে দিলাম, নিজেই সাঁতরে এসো কেমন?
— না না, কিন্তু আমি তো সাঁতার পারি!
ভাসতে ভাসতে আমরা ঝর্ণার নিচ বরাবর খাদ থেকে অল্প একটু দূরে সরে এলাম নিজেদের সুবিধার্থে। স্বর্ণা বলল,
— কেমন জোর ঠেউ দেখেছ? মনে হয় না বেশিদূর যেতে পারবে। আচ্ছা, যতটুকু পারো এসো। বাকিটা আমি দেখছি। আমার পিছু পিছু এসো।
বলে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ডুব সাঁতার দিল স্বর্ণা। ভেড়ার পাল যেভাবে একজন অনুসরণ করে গড্ডলিকা প্রবাহের মতো ছুটতে থাকে লক্ষ্যহীন, আমিও সেভাবে দলচ্যুত বিমূঢ় ভেড়ার মতো স্বর্ণার পিছু পিছু সাঁতার দিলাম। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা এখনো টিপটিপ করে দুলছে উৎকট ত্রাসে। গজ কয়েক এগিয়ে আমি আর এগোতে পারলাম না। মনে হলো আমার দুই পা কেউ দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। স্বর্ণা যেহেতু আমার সামনেই ছিল, আমি একটু কসরত করে দ্রুত সামনে এগিয়ে স্বর্ণার গায়ে গাট্টা মারলাম। কালবিলম্ব না করে স্বর্ণা শাঁই করে ভাসলো; ভাসলাম আমিও। খপ করে আবার দুই পেশি আঁকড়ে ধরলো সে।
— বলেছিলাম না পারবে না। ইঁদুরের প্রাণ নিয়ে পুলিশ হতে এসেছে!
আমি স্বর্ণার গায়ের উপর নিজের সমস্ত ভার সঁপে দিয়ে মিনিট কয়েক বড়বড় নিশ্বাস নিলাম।সেভাবেই নাকে-মুখে নিশ্বাস নিতে নিতে শুধালাম,
— এই কথা কোথায় পেলে? এটাতো!
— জুহির কথা তা-ই তো?- আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে বলল স্বর্ণা।
আমি মাথা নাড়লাম।
— কিভাবে জেনেছি সেটা বলাবাহুল্য। ইগো না দেখিয়ে পিঠে চড়ো এখন নইলে ডুবে মরবে।

আমি আর দ্বিরুক্তি না করে সংকোচে কাদা হয়ে একহাত দুইহাত করে স্বর্ণার গ্রীবা পেঁচিয়ে ধরলাম। স্বর্ণা কঠিন গলায় সতর্কবার্তা দিল,
— খবরদার কোনপ্রকার ফাজলামি করার চেষ্টা করলে পানিতে চুবাব।
আমি ডানে বাঁয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
স্বর্ণা ক্ষিপ্র গতিতে ডুব দিয়ে নিটোল ভঙ্গিতে জল কেটে এগোল। ছেলে হয়ে মেয়ের পিঠে চড়ছি! ভারি লজ্জার কথা বটে। কিন্তু উপায় নেই! জান বাঁচানো ফরজ। এই খবর কোনমতে এই পাহাড়ের বাইরে গেলে আমার লজ্জা ও পরিতাপের সীমা থাকবে না। প্রায় পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর একটা সুশান্ত পাড়ে এসে পৌঁছুলাম। এদিকটায় পানির লহর খানিকটা মন্থর। কাছাকাছি আসতেই আমি নিজ থেকেই নেমে গেলাম। স্বর্ণা ধীরে ধীরে একটা পাথরের উপর বসে বড়বড় নিশ্বাস নিতে লাগল। এবার বেশ জব্দ হয়েছে সে। আশি-পঁচাশি কেজির একজন মানুষকে একটা ধিঙ্গি মেয়ে পিঠে বইয়ে আনা নিতান্তই সহজলভ্য নয়। কাজেই স্বর্ণা এবার নাকানিচুবানি খেয়েছে। কিন্তু চক্ষুলজ্জার কারণে প্রকাশ করতে পারছে না। মেয়েরা আর যাই হোক, বাইরে নিজের ঠাট ঠিকই বজায় রাখে।

ঝর্ণার পাশের পাহাড়ের গা’টা কিছু বড় পাথর আর কিছু লাল মাটি দ্বারা গঠিত। স্বর্ণা তার সুবিধা অনুযায়ী তার চামচাদের দিয়ে খাঁজ কেটেছে পাহাড়ের গায়ে। সেদিক বেয়েই উঠছি আমরা। খিদেয় পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে খানিক পরপর। সকালে খালি ঢলঢলে পেটে চা ভিন্ন আর কিচ্ছুটি পড়ে নি। এর বিরূপ প্রভাবে এখন একটু পরপরই পোড়া ঢেকুর উঠছে গলা বেয়ে। স্বর্ণা কীভাবে আছে কে জানে! নাকি আগে থেকেই খেয়েদেয়ে পেট ঠেসে রেখেছে! হতে পারে। বড়ো ঘোড়েল প্রাণী স্বর্ণা।

পাহাড় বেয়ে পুনরায় ঝর্ণায় ফিরে আসতে খুব বেশি সময় লাগল না। দু’জনে আবার সেই পাথরে এসে বসলাম। আমি ইচ্ছে করেই কঠিন, গুরুতর ভঙ্গিতে বসে রইলাম। স্বর্ণার মেজাজ ফুরফুরে। কথাবার্তা-চালচলনে মনেই হচ্ছে না যে সে একটু আগে একটা নিদারুণ হত্যাযজ্ঞের অংশীদার ছিল। অনর্গল বকে যাচ্ছে সে। হঠাৎ আমার মৌনতা লক্ষ্য করে ক্যাটক্যাট করে বলল,
— কী? চোখমুখ এমন কঠিন করে রেখেছ কেন? দেখে মনে হচ্ছে বউটউ মারা গেছে!
আমি আগের মতোই স্থিরচোখে তাকিয়ে থেকে একটুখানি হাসলাম। স্বর্ণা খানিক নিঃশব্দে আমার দিকে চেয়ে রইল। মোলায়েম স্বরে বলল,
— এখনো ভয় পেয়ে আছ? এইযে আমি! দিনেদুপুরে আমার আত্মা আসে নি বুঝলে?
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,
— নাহ ভয় পেয়ে নেই।
— তাহলে?- স্বর্ণার গলায় আকুলতা।
সে তখনো নিবিড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দিকে। আমি অদূরে চোখ রেখেই আওড়ালাম,
— তোমার নেক্সট টার্গেট কবে?
— এটাই ভাবছিলে এতক্ষণ? সন্দিহান চোখদুটো আরো গভীর করল সে।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললাম,
— হ্যাঁ এটাই।
স্বর্ণা দুইহাতের তালু পাথরে চেপে আলগা হয়ে বসে তার চরণকমল পা দুটো দুলিয়ে বলল,
— সেটা নিয়ে তোমার ভাবনা কেন?
আমি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললাম,
— কারণ আমি চাই তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অন্ধকার পথ থেকে বেরিয়ে এসো।
— ঠিকাছে আসব। বলেছি তো! সময় হলে সব হবে। কেউ কারো জন্য থেমে থাকবে না। আচ্ছা তুমি ভেবেছিলে আমি সত্যি সত্যি লাফ দিয়েছি?
আমি এবার খানিক বিস্ময় নিয়ে তাকালাম, বললাম,
— হ্যাঁ? কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তুমি উঠে এলে কীভাবে?
স্বর্ণা হাসল খিলখিল করে। সঙ্গে তার আসিক্ত জবজবে শরীরের ভাঁজগুলোও বোধকরি হাসতে ভুলল না। আমি চোখ ফিরিয়ে আবারো দূরের হ্রদে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। স্বর্ণার হাসির শব্দ ঝর্ণার অবিরত বর্ষনের সঙ্গে ধুয়ে ধুয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। হাস্যবিকৃত গলায় স্বর্ণা থেমে থেমে বলল,
— আরে লাফ আমি দিয়েছি ঠিক। কিন্তু ঐ দেখো ছোট একটা গাছের গুড়ি আছে। ওটাতে ভর করে আবার উপরে উঠে এসেছি। আর তুমি ভাবলে কি না…
হাসার গতি বাড়িয়ে দিল স্বর্ণা। সঙ্গে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অসংবৃত শরীরের দোলোনিও! আমি মুখ কড়কে বললাম,
— নিজের দিকে একবার দেখেছ? চলো ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে নেবে। বারবার না করেছি এমন কাপড় পরতে। আগে কত সুন্দর বোরখা-হিজাব পরতে… অকস্মাৎ অকারণ বিরাগে আমার গলা চড়ে গেল। চোখ দিয়ে যেন আগ্নেয়গিরির লাভা ছিঁটকে পড়ছে।

অনুক্ষণ উচ্ছাসে মেতে থাকা মানুষটি যেভাবে ভীতিপ্রদ কোন ঘটনায় শোকাভিভূত হয়ে থ বনে যায় স্বর্ণা ঠিক সেভাবে ডাগর চোখ মেলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। পরক্ষণেই সে নিজের শরীর ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিড়বিড় করে বলল,
— সমীকরণটা মিলিয়ে দিই ওদের। একটু সময় দাও।…

স্বর্ণার সংক্ষিপ্ত কথাটায় আমার বুকের ভিতর একপাল বাজনার দল যেন নিরন্তর ঢাকঢোল পিটানো শুরু করল। যার প্রতিটা আঘাত আমার পাঁজরের হাঁড়কে উপহত করছে। পড়ুক। উনপাঁজুড়ে আমি নই।
………………………………………..

এরপর অনেকদিন কেটে গেল।
সেদিন বিকেলে বিষণ্ণ হয়ে ফিরেছিলাম সিলেটে নিজ বাসস্থানে। ফেরার ইচ্ছে অবশ্য ছিল না। তবুও নিরুপায় হয়ে আসতে হলো। থানায় নানান অযুহাত দেখিয়ে কোন কাজই হলো না। একগাদা নীতিকথা আর জরিমানা গুনতে হয়েছিল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে। এতো কথা অবশ্য গায়ে মাখি নি আমি। মাথা নত করে সব শুনে গেছি। এই উচ্চপর্যায়ের মানুষদের কাজই বড়বড় কথা বলা। কাজের বেলায় আমাদেরই দৌড়াদৌড়ি করে হয়রান হতে হয়,আমাদেরই সমস্তকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। সে যাইহোক, পরের দিন ভিন্ন একটি থানার পুলিশ রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে আলতাফের লাশ উদ্ধার করল। গলায় ঝুলানো সেই একই DONT স্টিকার। দেশ উত্তাল আবারো। মিডিয়া আবারো তোলপাড়। আবারো চ্যানেলে চ্যানেলে সত্য-মিথ্যা শিরোনাম আর দেশি পণ্ডিতদের বৈঠক। সাধারণ জনগণ এবার আর গঞ্জনা, ভর্ৎসনা করছে না। উল্টো বাহবার হুল্লোড় উঠছে জায়গায় জায়গায়। হত্যাকরীর জয়জয়কারে পঞ্চমুখ বাংলাদেশের আনাচকানাচ সহ দেশের বাইরেও। নিজেদের ওপর ব্যভিচারকারী পশুদের সাজা না পাওয়ার সত্বেও তৃপ্তির হাসি ফুটছে হাজারো নারীর মুখে। এর সুযোগে এবারো তদন্ত চলছে বলে হাতপা গুটিয়ে বসে রইল পুলিশবাহিনী। কিন্তু উপরমহল থেকে চাপ এলো র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব)উপর। গত খুনের সময়ও পড়েছিল দায়িত্ব, কিন্তু কোন ফল মেলেনি এতে।অনেকটা মশা মারতে কামান দাগার মতো বিষয়টা! সাধারণ জনগন থেকে কোন চাপ না থাকার সত্ত্বেও বিষয়টা হেলাফেলা করে ছেড়ে দিতে চাইছে না র‌্যাব। স্বর্ণা তবুও কোনো আতান্তরের ধার না ধরে বাহিনীগুলোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড় থেকে ঝুমুকে স্বর্ণার পরিচিত একটা হিন্দু পরিবারে স্থানান্তর করা হলো এবং স্বর্ণা নিজেও সেখান থেকে গা ঢাকা দিল অল্পকিছুদিনের জন্য।

জুহি কিন্তু সেদিন বেশ অভিমান করে বসেছিল। অন্যদের সঙ্গে সদা স্বাভাবিক হলেও আমার সঙ্গে দস্তুরমতো একপ্রকার ভারিক্কি নিয়ে চলল কয়েকদিন। তবে তার অভিমান ভাঙানোর জন্য আমি বসে ছিলাম না। আমার পক্ষ থেকে যখন কোনপ্রকার মান ভাঙানো সুধাবাক্য তার কাছে পৌঁছাল না তখন সে নিজ থেকেই সকল অনুরাগ ধুয়ে-পুছে আমার সঙ্গে কথা বলতে এলো। সেদিন রাত বোধহয় দশটা পেরোল। রন্ধনকর্ত্রী মহিলাটি আসে নি সেদিন। আমি ল্যাপটপে মুভি দেখছিলাম সোফার উপর উপুড় হয়ে। সারাদিন ডিউটি করা শেষে ন্যুনতম শক্তি ছিল না নিজে গিয়ে রান্না করার জন্য। মুভি দেখে রাত কাবার করে দেবার চিন্তাভাবনা ছিল। একদিন না খেলে কিচ্ছু হবে না! মুভির দারুণ রোমান্টিক একটা দৃশ্য চলছিল আর আমি জড়িত চোখে বুঁদ হয়ে সেই দৃশ্য গিলছিলাম। ঠিক সেই সময় কলিংবেলের শব্দে হৃৎপিণ্ডটা ধড়াস করে আছাড় খেয়ে পড়ল। আমি তাকে শান্ত করে একইসাথে উৎসাহ ও অসন্তোষ ভাব নিয়ে দরজা খুললাম আস্তেধীরে।
— আসতে পারি? জুহির কণ্ঠস্বর চিনলাম ঠিকই,কিন্তু তার এই রূপ আমার সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত। পরনে লালপেড়ে শাড়ি। ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক। চোখে ঈষৎ লেপটানো কাজল। চুলগুলো খোঁপা করার সত্ত্বেও বিশেষ আঙ্গিকে স্কন্ধের দুইপাশে ছড়ানো। ফর্সা মুখে হালকা প্রসাধন। হাতে একটা টিফিন ক্যারি। আমি দরজার সঙ্গে হাত ঠেস দিয়ে ইচ্ছে করে সম্মোধন পরিবর্তন করে বললাম,
— আরে বাহ্! এতো সাজসজ্জা করে কোথায় যাচ্ছিলেন? ভুল করে এসে পড়েছেন বুঝি?
— ভুল করে না। ঢুকতে দিবেন? নাকি এখানে দাঁড় করে রেখে সব শুনবেন?
আমি কপট অভ্যর্থনা করে দ্রুত সরে গিয়ে ভেতরে হাত দুটো প্রসারিত করে বললাম,
— প্লিজ।
জুহি নাকের পাটা ফুলিয়ে ফুঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভেতরে প্রবেশ করল। ঘরে ডিম লাইটের মৃদু আলো জ্বলছিল। সুইচবোর্ড হাতিয়ে লাইট জ্বালালাম। জুহি ঢকঢক করে হেঁটে ডাইনিং টেবিলের সামনে গেল। টিফিন ক্যারিটা ডাইনিং-এ রাখতেই আমি বললাম,
— ওটা করে বোমা টোমা আনলে নাকি? হয়তো আমার কথার উত্তর দিতেই জুহি পেছনে ফিরছিল। ওমনি আচমকা তার চনমনে চোখ সোফার ওপর রাখা ল্যাপটপের উপর দারুণভাবে আটকে গেল। দেখাদেখি আমি সেদিকে তাকিয়ে জিভ কাটলাম ছোট করে। মনে মনে বললাম,” এবার তো ফেঁসে গেলাম” জুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় ল্যাপটপ দেখিয়ে বলল,
— ওও… এসব দেখেন বসে বসে?
আমি ব্যাক্কল বনে গেলাম। নিজের ওপর নিজের লজ্জায়, ঘৃণায় গর্ত খুঁড়ে ঢুকে যেতে ইচ্ছে হল আমার। কোনো মতে তেলতেলে হেসে বললাম,
— কিছু নাহ্, মুভি আরকি! মুভির মধ্যে এরকম দু’একটা সিন তো থাকেই না?
জুহি ঘুরে দাঁড়িয়ে টিফিন ক্যারিটা খুলতে খুলতে বলল,
— হ্যাঁ, আর আপনি সেগুলো বারবার টেনে টেনে দেখেন। পুরুষদের স্বভাবই এমন।
আমি টিপ্পনী কেটে বললাম,
— আর মেয়েরা রাতে রাতে এসে ছেলেদের স্বভাবের মাঝে মধ্যস্থতা করে।
জুহি ব্যথিত চোখে তাকাল,
— ডিস্টার্ব করলাম? ওকে আপনি টেনে টেনে দেখতে থাকুন। আমি গেলাম। খাবারগুলো পারলে খেয়ে নিবেন। না খেলে কুকুরকে খাইয়ে দিবেন।
শেষের কথাটা টিট শোনাল জুহির। গনগনে উত্তাপ যেন মুখ নিঃসৃত বাক্যের সঙ্গে ফুলকি দিয়ে বেরোচ্ছে।
আমি আতালিপাতালি করে এগিয়ে বললাম,
— আরে আরে কুল কুল। বসো। এতো চটে যাওয়ার কিছু হয় নি। তুমি একটা কথা বললে আমি সেই সমান উত্তর দিলাম শুধু।
বলে ল্যাপটপটা বন্ধ করে একটা চেয়ার টেনে বসলাম জুহির বিপরীতে।
জুহি ক্ষিপ্ততার সঙ্গে বসে পড়ল এবং কয়েক মুহূর্ত পরেই জ্বাজ্জল্যমান অগ্নিশিখা বিপরিণত হয়ে আগের রূপ ধারণ করল। আমি প্রশ্ন করলাম,
— তা বলো। তুমি হঠাৎ এই বেশভূষা নিয়ে?
— শুনন তবে। আজ আমার জন্মদিন ছিল। গতকাল একটা চিঠি পেয়েছিলাম যে এই সময়ে তুমি সেজেগুজে ঘর থেকে বেরোবে। তো আমি এক্সাইটেড হয়ে চিঠিমতো কাজ করলাম। পরে দেখি একটা ছোকরা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে। বুঝে গেলাম, এই সেই ছেলে যে আমাকে চিঠি দিয়েছিল সেজেগুজে রেডি থাকার জন্য। আমার মেজাজ হলো খারাপ। তবুও নামলাম নিচে। হাতে ডিউটির লাঠিটা নিয়ে গেলাম। কেমন লাগে বলো? যেই নামলাম নিচে ওমনি সে হাঁটু গেড়ে বসে আবোলতাবোল বকা শুরু করল। মেজাজ গেল চটে। দিলাম ডান্ডার বাড়ি। পরে কোনমতে হামাগুড়ি দিতে দিতে পালিয়ে গেল সেখান থেকে। ভাবলাম কে আর আসল কে। ধু—র
আমি ঘর ফাটিয়ে একচোট হেসে নিলাম। জুহি ক্রুদ্ধ স্বরে জানতে চাইল,
— হাসছেন কেন? হাসার কি আছে?
— হাসার অনেক কিছুই আছে? আর কাকে আশা করেছিলে তুমি?
—— কাকে আর করব? যাক বাদ দেন। নীরস মুখে বলল জুহি।
আমি দুই হাতের কবজি ঘুরিয়ে বললাম,
——ঠিক আছে দিলাম বাদ। শুভ জন্মদিন।
—— ধন্যবাদ
জুহির আহ্লাদিত নুইয়ে পড়া ‘ধন্যবাদ’ আমার কানে কিছু ঢুকল আর কিছু ঢুকল না। আমি মাথায় বইছে ভিন্নধারা চিন্তা। আচ্ছা স্বর্ণার জন্মদিন কবে? পেরিয়ে গেল? না সামনে? যদিও এই নিয়ে স্বর্ণার কোন মাথাব্যথা নেই,কোনকালে ছিল না। থাকবে বলেও আশা করা যথার্থ নয়। তথাপি একমাত্র কাছের মানুষ হিশেবে আমার কাছে স্বর্ণার এইটুকু পাওনা তো রয়েছেই। আমাদের পুনশ্চ দেখা হয়েছে আজ দুই বছর হতে চলল। দিন গেল, মাস গেল, দু’টো বছও গেল। দুইটা বছরে আমি স্বর্ণার মনের পূনর্বাসন করাতে সক্ষম হলেও আমার একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে স্বর্ণাকে কখনো প্রফুল্ল করতে পারি নি। আজ আমার সেই বাল্যকালের অতিপ্রিয় মানুষটার জন্মদিনটাও মনের আঙ্গিনা থেকে বারবার ঝাঁটে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিস্মৃত হতে চলেছে। স্বর্ণা না-হয় নিজের ধোঁয়াচ্ছন্ন কলুষিত জীবনের বাঞ্ছিত লক্ষ্যের প্রতিক্ষা-তিতিক্ষায় দিন গুনতে গুনতে পরিবার ছেড়েছে, সমাজ ছেড়েছে, ছেড়েছে ভালো-খারাপ সকল সংস্রব। এতোকিছুর গ্রাসে সে না-হয় আমারটা ভুলেই গেল। কিন্তু আমি কি করে ভুলে গেলাম! ধিক মিনহাজ,ধিক তোমার ভালবাসাকে। নিজস্ব কষ্ট বিদ্রোহ হয়তো-বা আমারো ছিল। কিন্তু স্বর্ণার পাহাড়সম সমস্যার সামনে আমারগুলো অতি নগণ্য। বিস্তৃত বালুকাবেলায় যেভাবে ঝপঝপ করে ঊর্মি আছড়ে পড়ে তেমনি মনের ভেতরে যেন বাঁধভাঙা উদ্বেল ঢেউ আছড়ে পড়ছে।
তড়িৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজের রুমে গেলাম। পেছন থেকে জুহি ডাকল বারকয়েক। বহু আগে ডাইরিতে লেখা স্বর্ণার জন্মদিনটা দেখে তবেই ফিরলাম। দুমাস পরেই স্বর্ণার জন্মদিন। বেশ করে একটা চটক লাগাতে হবে তাকে। পুনরায় এসে বসলাম জুহির সামনে। জুহি ততক্ষণে টিফিন ক্যারি থেকে খাবার সাজিয়ে রেখেছে প্লেটে। আমাকে দেখে বলল,
— কী হল? এভাবে হুট করে কই চলে গেলেন?
আমি দ্বিধাহীন মিথ্যা বললাম,
— বাথরুমে।
জুহি আর জবাবের জায়গা খুঁজে পেল না। খাবার সাজতে লাগল একমনে৷ আমি বললাম,
— তারপর কী হল?
— তারপর? তারপর ভাবলাম সাজগোজ যখন করেই ফেলেছি। আপনাকে একবার দেখা দিয়ে আসি। জন্মদিনে তো উইশ করলেই না। ইভেন, জানেন না পর্যন্ত! হুহ! কপাল আমার। ভেবেছিলাম সিলেট শহরে একটা কাছের মানুষ আছে। তাও দেখি কপালপোড়া!… তারপর বাসা থেকে যখন বেরোলাম, আপনার বাসার বুয়াকে দেখলাম বেশ অসুস্থ হয়ে মেয়েসহ ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। ওনার নাকি ডায়রিয়া হয়ে যায়যায় অবস্থা। পরে মনে হলো রান্না হয়নি আপনার বাসায়। তাই টিফিনে নিয়ে এলাম। ভালো করেছি না?
একটানা অনেকগুলো কথা বলে থামল জুহি। আমি ডানে বাঁয়ে মাথা নেড়ে বললাম,
— খুব ভালো করেছ। পেটের খিদেয় মুভি দেখছিলাম বসে বসে।
— তাই নাকি? খুশি হয়েছেন? নিন খান। শিং মাছের আর গরুর মাংস রান্না করেছিলাম।
— শিং মাছ পেলে কই?
— আমাদের বাড়িওয়ালা গ্রাম থেকে এনেছিল। অনেকগুলো দিয়ে গেল আমাকে। দুইহাত প্রসারিত করে মাছের কল্পিত পরিমাণ বোঝানোর চেষ্টা করল জুহি। এরপর হাত গুটিয়ে স্মিত হেসে খাবারের প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিল সে। আমি পুছলাম,
— তুমি খেয়েছ?
জুহি সুর করে বলল,।
— হ্যাঁ— আমি খেয়ে এসেছি।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মনোনিবেশ করলাম। গুরুজনদের নীতিকথা, খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই। ইদানীং আমার লঘুমস্তিষ্ক যেকোনো সময় এঁড়েচিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকে। খেতে খেতেও অযাচিত চিন্তা দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর টপকাতে পারল না। আচ্ছা, জুহির মনে কি কোন দুরভিসন্ধি ঘুরছে? রাত দশটার সময় কেন তার আসতে হবে? অযুহাতগুলো কি যথার্থ? নাকি ছলনামাত্র? উপরন্তু এতো রাতে একজন মেয়েলোককে একা পুরুষের ঘরে ঢুকতে দেখে আপাতদৃষ্টিতে সমাজের মানুষ কি মনে করবে সেটা মনে হতেই নিজের অভ্যন্তরে একটা অস্বস্তি দানা বাঁধছে। তবুও এই মেয়েটার উপর একটা অন্তর্নিহিত দুর্বলতা রয়েছে আমার। যেটা না প্রেম, না কামনার আর না একান্ত বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণ! কিছুই না। শুধু অর্ধবছরের একাকিত্বের অবিস্মৃত মায়া।

—— তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য এসেছি। জুহির কথায় আমার খাওয়ায় এবং নিষ্প্রয়োজন ভাবনায় বাঁধা পড়ল ।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,
— কী কথা?
— কঠিন কথা! হজম করতে সময় লাগবে। আগে খেয়ে নাও। ধূর্ত হেসে বলল জুহি।
— এটা কেমন কথা ভাই? তাহলে একেবারে খাওয়া শেষ হলে বললেই পারতে? জুহির ওপর অপ্রসন্ন হয়ে খাবারের গতি বেড়ে গেল আমার। এটা আমার জন্মগত অভ্যাস। খাবার সময় কোনো অনিয়ম হলে ডানহাতটা বিরামহীন মুখের কাছে আসাযাওয়া করে আমার। এখনো হচ্ছে তাই। জুহি খোঁচা দেওয়া গলায় বলল,
— এখন কি খাবার গলা দিয়ে নামবে না?
— নামবে না কেন? এই যে দিব্যি নামছে।
আসল রূপটা পকেটে পুরে নির্লিপ্তভাব ধরে বললাম আমি।
— নামলেই ভালো। আমার প্রথম কথাটা হলো… স্বর্ণার সঙ্গে কেমন কাটালে পাহাড়ে? শুনলাম দুইদিন দারুণ কাটিয়েছ!
আমি হুট করে বিষম খেয়ে গেলাম। ঢকঢক করে গলায় পানি ঢেলে ধাতস্থ হবার ক্লান্ত চেষ্টা করলাম। আশ্চর্য! জুহি তবে সব জানে? স্বর্ণার অজানা কথাও? আলতাফ খুনের কথা?

চলবে…