#শেহনাজ _____{ ৪ }
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ
ভালোবাসা দিনক্ষণ দেখে হয় না। শেহনাজ ও অত ভেবেটেবে প্রেমে পড়েনি। এই কলেজে যখন শেহনাজ নতুন ভর্তি হয়েছিল, তখন একটু ভয়েই ছিল। নতুন কলেজ, নতুন বন্ধুবান্ধব, নতুন পরিবেশ। সব মিলিয়ে খুব অগোছালো লাগছিল নিজেকে। ক্লাস করতে পারবে কিনা এ নিয়েও বেশ আতংকে ছিল। কিন্তু শেহনাজের এই ভয় স্থায়ী হয়নি। সে দেখতে সুন্দর। ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় সকলের নজর কাড়ে। লেখাপড়ায় অত ভালো না হলেও মোটামুটি। সকলের সাথে সহজেই মিশে যেতে পারে বলে বন্ধুর অভাব নেই। কলেজের স্যারদের সাথে আগে থেকেই শেহনাজের আব্বুর ভালো সম্পর্ক ছিল। তাই কলেজে এসে শেহনাজ তার টিচারদের থেকে এক্সট্রা এটেনশন পেয়েছে। সকলের সাথে অনায়াসে মিশে গিয়েছে সে। তখন থেকেই শেহনাজ সবার মুখে এমিরের কথা শুনতো। সুদর্শন, প্রতিভাবান ছেলে এমির। পড়াশোনার জন্য সব স্যার ম্যামদের মুখে মুখে এমিরের নাম। উল্লেখ করে বলা হয়, ” এমিরকে দেখে শিখো। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ওর নখদর্পণে। এই প্রতিভাবান ছেলের জন্যই সুনাম বয়ে বেড়াতে পারছি”। এছাড়া সবার সব সমস্যায় হাজির হয় বলে খুব খ্যাতি ছিল এমিরের।
শেহনাজের বয়স তখন আরো কম। আবেগী আর কৌতুহলী মন এমিরের প্রাধান্য চাইতো। এমিরকে নিজেদের কলেজে দেখলে শেহনাজ ওর সামনাসামনি হতো। বাক্য বিনিময় করতো। কথা বলতে চাইতো বারবার। অগোছালো ভাবটা কাটিয়ে গোছালো হতে চাইতো। তার এই কৌতুহল কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হলো, বুঝতেই পারেনি শেহনাজ। একসময় শেহনাজ গভীর ভাবে অনুধাবন করল এমিরকে না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ লাগে। এমিরের একদিন খোঁজ না পেলে চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না। চোখ বুজলেই এমিরের মুখটা ভেসে ওঠে। তারপর? তারপর থেকেই এমিরের পিছু পিছু ঘুরে সে। এমির বিষয়টা বুঝতে পারায় হঠাৎ কঠিন হয়ে যায়। শেহনাজের ধারেকাছেও থাকে না। তেজ দেখিয়ে কথা বলে। শেহনাজের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে সর্বদা।
গতকাল দিনে যেমন গরম ছিল আজ তা একেবারেই নেই। আজ প্রকৃতি কোমল। শীতল বাতাস বইছে ধরনীতে। বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝমিয়ে। গতকাল থেকে এখনো অবধি বৃষ্টি পড়ছেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টির বেগ একটু কমলেও পুরোপুরি কমেনি। ভিজে একাকার হয়ে প্রায় সবাই কলেজে এসেছে। ছাতা সাথে থাকলেও ইউনিফর্মের নিচের অংশ বাতাসের ঝাপটায় ভিজে গেছে সবার।
কলেজে এসেই শেহনাজ এমিরের খোঁজ করতে ভার্সিটির দিকে অগ্রসর হলো। সবসময় ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে এমির। ক্লাসের বাইরে দিয়ে গেলেই এমিরকে দেখা যায়। আজ এমিরকে ক্লাসে দেখল না শেহনাজ। পরপর তিন বার ক্লাসের সামনে দিয়ে ঘুরল সে। এমিরকে পেল না কোথাও। লোকটাকে না দেখে মন খারাপ হলো শেহনাজের। গতকাল যে ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরল। জ্বর এলো না তো? নাকি ছাতা নেই এমিরের কাছে?
ভাবনায় পড়ল শেহনাজ। নিজের ছাতা আর তানিয়ার ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পরল মেসের উদ্দেশ্যে। সে জানে তাকে দেখে এমির খুব রাগ করবে। তাকে বকবে। হয়তো অপমান ও করবে। কিন্তু শেহনাজের যে মন মানে না। এমিরকে দেখার তৃষ্ণা তাকে জড়িয়ে রাখে। হাঁসফাঁস লাগে যে। কিভাবে খোঁজ না নিয়ে থাকবে শেহনাজ? সে ব্যস্ত পায়ে ছুটে চলল মেসের দিকে। কলেজ থেকে মেসে পৌঁছাতে দশ মিনিট ও লাগে না। তাই শেহনাজের সাহস হলো যাবার। পাজামা উঁচু করে খুব সাবধানে হেঁটে মেসের দিকে ছুটল। রাস্তা পিচ্ছিল। কাঁদায় শুভ্র জুতো নোংরা হয়ে গেছে। ওর হাতে বাড়তি ছাতা থাকায় হাঁটতে বেগ পেতে হচ্ছে। বাতাসের ঝাপটায় দুলে উঠছে মাথার উপরের ছাতা। নাকানিচোবানি খাচ্ছে শেহনাজ।
মেসের সামনে এসে সে ইতস্তত বোধ করে। এমির নিশ্চয় আজ তাকে খুব বকবে। না জানি কি সব বলবে? কতটা বলবে? ভয়ে নাজেহাল অবস্থা হলো শেহনাজের। দ্বিধা আর আতংক গ্রাস করলো তাকে।
তবে শেহনাজকে ভিতরে যেতে হলো না। এমিরদের ঘরের জানালাটা খোলাই দেখল। এই মেসটা খুব ছোটখাটো। ভবন আকারে নয় বলে মেসের ভাড়া কম। জানালা নিচে হওয়ায় নাগাল পেল শেহনাজ। লোহার সেই জানালার কাছে এসে সে উচ্চস্বরে ডাকল,
-” এমির ভাই। আছেন আপনি”?
প্রথমে উত্তর এলো না। থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হলো। শেহনাজের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে উঠল। আবার ডাকবে কিনা ভাবল। ভয়-ভীতি দূরে ঠেলে পরবর্তীতে আরো দুবার ডাকল শেহনাজ। অতঃপর পায়ের শব্দ শোনা গেল। এমির শার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। ছেলেটার অবয়ব ভিষণ তেজী, দৃঢ়। শেহনাজকে এখানে দেখে নিশ্চয়ই চটেছে। বৃষ্টির সপসপ শব্দের মাঝেও এমিরের ভারি কণ্ঠ শেহনাজের শ্রবণে পৌঁছাল।
-” অ্যাই! তুমি এখানে কেন? আশ্চর্য! কত্ত বড় সাহস তোমার। তুমি মেসে এসেছো। আবার আমাকে ডাকছো”?
শেহনাজ এমিরের রাগের ধার ধারল না। ছাতাটা ভালোমতো মাথায় এঁটে চেঁচিয়ে বলল,
-” আপনি ভার্সিটিতে যান নি কেন? আপনাকে নিতে এসেছি”।
নিজেকে সংযত করল এমির। দপদপ করে জ্বলে ওঠা মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করল। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
-” আমি যাবো না। তুমি চলে যাও”।
-” কেন? আমি আপনাকে নিয়েই যাবো। আপনি কি অসুস্থ? যাচ্ছেন না কেন ভার্সিটিতে”?
এমিরের সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না আর। জানালা থেকে সরে গেছে বোধহয়। শেহনাজ কি করবে ভেবে পেল না। দাঁড়িয়ে রইল খানিকক্ষণ। দু মিনিটের মাথায় এমির বেরিয়ে এলো বাইরে। মুখশ্রীতে স্পষ্ট রাগের আভাস। এই বুঝি শেহনাজকে ধরে আছড়ে মেরে ফেলবে। ছাউনির নিচে এসে কোমড়ে দু হাত রেখে শেহনাজের নিকটে এসে দাঁড়াল এমির। গম্ভীর হয়ে শেহনাজের দিকে চেয়ে রইল। শেহনাজ ভীত হয়ে কিছুটা দুরত্ব বাড়াল। এমির সাথে সাথে জিজ্ঞেস করল,
-” তোমার সমস্যা কি? বলেছি না আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে? আর কিভাবে বললে তুমি আমার পিছু ছাড়বে বলো তো”?
শেহনাজ বিচলিত হয় না। কষ্ট পায় না। এসব কথা শোনার জন্য সে প্রস্তুত ছিল। মুচকি হেসে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
-‘ আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না আপনি অসুস্থ। ভার্সিটিতে যান নি কেন? দেখুন আমি ছাতা নিয়ে এসেছি। ক্লাস এখনো শুরু হয়নি। চলুন”।
এমির হতাশ হয়। কাকে কি বলছে সে? কেনই বলছে। সময় গুলো নষ্ট করছে শুধু শুধু। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলে,
-” তোমার আব্বুকে কি আমি বিচার দিবো শেহনাজ। মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছো”?
-” কিসের বিচার? আমি কি করেছি”?
-” কি করেছো বুঝতে পারছো না”?
-” আমি ভালোবেসেছি। ভালোবাসা বুঝি অপরাধ?
-” অবশ্যই অপরাধ। এক তরফা ভালোবাসা তোমার শেহনাজ। এ সম্পর্ক হবার নয়। তোমার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই”।
-” আচ্ছা। সে পরে দেখা যাবে। আপনি চলুন তো। নইলে ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে”।
-” যাবো না আমি। কণ্ঠে তেজ এমিরের”।
-” বেশ। আপনি না গেলে আমিও যাবো না। এখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো”।
এমির চোখ বুজে নেয়। কি করবে ভেবে পায় না। ঘরে গিয়ে ব্যাগটা কাঁধে চেপে শেহনাজের থেকে ছাতা নিয়ে এগিয়ে যায় সম্মুখে। হাসে শেহনাজ। মনে মনে খুশি হয় খুব। এমিরের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। গুনগুন করে গান গায়,
“সাজিয়েছি ছোট্ট এক ফালি সুখ, রাজি আছি আজকে বৃষ্টি নামুক।
তুমি আমি ভিজবো দুজনে খুব, বর্ষা দিনেএএ”।
_____
সাদাত চাকরি পেয়েছে। এর চেয়ে আনন্দের বিষয়বস্তু আপাতত নেই। ছেলেটার চোখদুটো চকচক করছে। হাসি সরছেই না মুখ থেকে। বাকিরাও খুব খুশি। এমির ঘরে ফেরা মাত্র খবরটা পেল। আজ সাদাত ভার্সিটিতে যায়নি। সকালেই ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিল। ক্লাস শেষ করে নয়ন আর হাসান মেসে ফিরেছিল। এমিরের কাজ থাকায় খানিক পরে ফিরেছে সে। বন্ধুর এহেন সাফল্যে এমির গর্বিত বোধ করল। বলল,
-” সোহাকে বলেছিস
জবটার কথা?
সাদাত নড়চড়ে বসে। হাসি মুখটায় খানিক বিষণ্ণতা ঘিরে বসে। নির্লিপ্ত হয়ে বলে,
-” সোহা আমার সাথে কথা বলেনি সেদিন থেকে”।
অবাক হয় এমির। বলে,
-” ঝামেলা ঠিক হয়নি?
-” নাহ্।
চিন্তায় পরে যায় এমির। বন্ধুকে আশ্বস্ত করে বলল,
-“আমি দেখছি বিষয়টা। চিন্তা করিস না”।
_____
এমিরের ফোন বাজছে। বারবার ফোনটা কেটে দিচ্ছে এমির। পড়ানোর সময় সে ফোন ধরে না। ফোনটা সাইলেন্ট করে টেবিলে রাখতেই শেহনাজ ফোনের দিকে উঁকি মারল। ভ্রূ কুঁচকাল এমির। ক্ষিপ্ত হলো বেশ। শেহনাজকে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হলো ওর। কারো পার্সোনাল বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা একদম পছন্দ নয় এমিরের। শেহনাজের এহেন অভিব্যক্তি ও তার পছন্দ নয়। খানিক উচ্চস্বরেই এমির বলল,
-” এভাবে উঁকি দেওয়ার মানে কি? অন্যের পার্সোনাল ফোনে নজর দিচ্ছো? ম্যানার্স নেই তোমার”?
আড়ালে ভেংচি কাটে শেহনাজ। দু ঘাড় নাড়িয়ে বাচ্চাসূলভ আচরণ করে,
-” আমি আপনার ফোনে দেখছিলাম ক’টা বাজে। আপনার পার্সোনাল কল দেখতে নয়”।
-” ঘরের দেয়ালে এত বড় ঘড়ি থাকতে আমার ফোনে সময় দেখতে হবে তোমার”?
শেহনাজ বোকা হাসে। মিথ্যে বলে,
-” এ ঘড়িটা মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য আপনার ফোনে সময় দেখতে চেয়েছিলাম”।
এমির তর্কে জড়াল না। শেহনাজের নিকট অহরহ মিথ্যে যুক্তি আছে। সেসবের কাছে তার সত্য কথার কোনো পরোয়া নেই। ঘন্টাখানেক পড়িয়ে এমির বেরিয়ে এলো। সন্ধ্যা নেমেছে তখন। চাঁদ উঠেছে বড়সড়। শেহনাজ এমিরকে এগিয়ে দিতে এলো মেইন গেটের কাছে। আকাশের গোলাকার চাঁদটাকে মনোযোগ সহকারে দেখল সে। আকাশ পানে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে শেহনাজ বলে উঠল,
‘- চাঁদটা সুন্দর না”?
এমির তাকায় চাঁদের পানে। অজস্র তারার ভিড়ে চাঁদটাকে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। রাগ, দ্বন্দ্ব ভুলে যায় সে।
-” হ্যাঁ সুন্দর”।
-‘ আপনিও ভিষণ সুন্দর এমির”।
এমির ঘাড় ফিরিয়ে শেহনাজের পানে তাকায়। সন্ধ্যের নিভু নিভু আলোতে শেহনাজের উজ্জ্বল অবয়ব এমিরকে নরম করে। আলতো হেসে বলে,
-” পৃথিবীর সব মানুষ-ই সুন্দর শেহনাজ”।
শেহনাজ না সূচক মাথা নাড়ল।
-” পৃথিবীর সব পুরুষকে তো আমার ভালো লাগে না। আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে”।
-” ভালো লাগা আর ভালোবাসার মাঝে বিরাট তফাৎ আছে শেহনাজ। যেদিন তুমি এটা বুঝতে পারবে, সেদিন আমাকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে না”।
________
কারেন্ট নেই। গরমে নাজেহাল অবস্থা সবার। জানালার দুটো অংশ খোলা। মৃদ্যু বাতাস বইছে। ছোটখাটো চার্জার লাইটের চার্জ শেষের দিকে। আলো কম ঘরটাতে। মশার তাণ্ডবে টিকে থাকা দায়। কয়েল জ্বলছে তবুও মশা কমছে না। সকালেও বৃষ্টি ছিল। তখন প্রকৃতি কিছুটা সহ্যকর ছিল। এখন গরম পড়েছে। ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে সকলের গা।
নয়ন গেঞ্জি টেনে খুলে ফেলল গা থেকে। ছুঁড়ে মারল বিছানায়। পিঠ চুলকে বলল,
-” শালার কারেন্ট। শীতকালে ভালোই থাকে। গরম পড়লেই নাটক শুরু হইয়া যায়। এই গরমে কি বাঁচন যায়”?
হাসান বয়াম থেকে টোস্ট বিস্কিট খাচ্ছিল। বিস্কিট গুলো সবাইকে সাধল সে। নয়ন হাত পেতে নিল। অতঃপর হাসান বিস্কিট মুখে নিয়েই বলে,
-” একটা চার্জার ফ্যান এবার কিনতেই হবে। নইলে বিদ্যুতের যে অবস্থা, রাতে আর পড়াশোনা হবে না। সেমিস্টার নির্ঘাত বাজে হবে”।
সাদাত চমৎকার হাসল। অত্যন্ত পুরুষ সূলভ ভঙ্গি করল। বলল,
-” চাকরিটা তো পেয়ে গেছি। দেখি সামনের মাসে বেতনটা পেলেই একটা ফ্যান কিনবো”।
নয়ন ভারী খুশি। লাফ দিয়ে সাদাতের একদম কাছে চলে এলো সে। জড়িয়ে ধরে চুমু খেল সাদাতের ডান গালে। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
-” তুই আমাগো জানের দোস্ত। এইবার আমি মন দিয়া পড়মু যা”।
এমির নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সকলের দিকে। গম্ভীর অথচ মোলায়েম কণ্ঠে বলে,
-” সাদাতের একার টাকায় কিছু হবে না। আমরাও যেহেতু পাখাটা ব্যবহার করবো সেহেতু টাকা আমাদের ও দিতে হবে। বেচারা একা কেন এত টাকা দিবে”?
হতাশ নয়ন। বন্ধুর এহেন কথায় মন ভাঙল তার।
-” দিলি তো মা*রা খাওয়াইয়া। ভাবছিলাম বন্ধুর পকেট কাইটা হাওয়া খামু। হেই সুযোগ তুই কাইড়া নিলি”।
নয়নের পিঠে জোরে কিল বসাল এমির।
-” শালা বাটপার”
______
গোছগাছ চলছে। কলেজ থেকে পিকনিকে নেওয়া হবে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। অনার্স ফাইনাল ইয়ার এবং সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থীদের জন্যই অসময়ে এমন পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে। কলেজ ড্রেসের ইউনিফর্ম পড়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে শেহনাজ। তাদের সামনেই আট-দশটা বাস দাঁড়িয়ে। শেহনাজের মুখে স্বভাবসুলভ হাসি। কাঁধে কলেজ ব্যাগ। ব্যাগে সে কিছু টাকা আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েছে। এমির বাসের ভিতর। গাড়িতে সে বক্স সেট করছে অন্যদের সাথে। এমিরের কাঁধেই সবকিছুর ভার তুলে দেওয়া হয়েছে নিশ্চিন্তে।
এমির নোটে নাম অনুযায়ী সিরিয়াল করে সবাইকে ডেকে ডেকে বাসে তুলতে আরম্ভ করেছে। শেহনাজের নাম নিতেই শেহনাজ তড়িৎ বেগে এমিরের সম্মুখে এসে দাঁড়াল। হাসি হাসি মুখে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে রইল এমিরের দিকে। ভ্রূ বাঁকাল এমির।
-” আপনি কোন বাসে যাবেন”?
এমির চোখ ছোট করে। ঘর্মাক্ত শার্টটাকে পেছনে টেনে পাত্তা না দেওয়ার ভঙিতে নোটে চোখ রাখে।
-” তোমাকে বলতে যাবো কেন? আমি স্যারদের সাথে যাবো”।
-” আমাদের বাসে যাবেন না”?
শেহনাজের মুখ মলিন হয়ে ওঠে। আনন্দ গুলো খানিক নিভে যায়। এমির বাধবাকি সবাইকে বাসে উঠায়। শেহনাজ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বাসের কাছে। এমির এবার রেগে যায়। কঠোর হয়ে শেহনাজের সম্মুখে এসে শুধোয়,
-” যদি না যেতে চাও তবে বাড়ি যাও। এখানে থেকে টাইম ওয়েস্ট করো না”।
শেহনাজ দু ঘাড় নাড়ায়। ততক্ষণাৎ বলে,
-” না না আমি যাবো তো”।
শেহনাজ ব্যাগ কাঁধে চেপে বাসে উঠে প্রায় শেষের দিকের তানিয়ার পাশের সিটে এসে বসে। একটু পরেই বাসে উঠে হাসান। শেহনাজ উঠে দাঁড়ায় হন্তদন্ত হয়ে হাসানের নিকট ছুটে আসে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” ভাইয়া আপনি এই বাসে যাবেন”?
মুচকি হাসে হাসান। সরল কণ্ঠে উত্তর দেয়,
-” হ্যাঁ। তুমি এ বাসেই যাচ্ছো”?
-” এমির ভাইয়া কোন বাসে যাচ্ছে”?
হাসান গভীর হাসে। মেয়েটার এই সহজ প্রেম তাকে বরাবরই মুগ্ধ করে।
-” এমির চার নম্বর বাসে যাচ্ছে। দাঁড়াও ওই বাসে তোমার সিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি”।
শেহনাজ খুশি হয় ভিষণ। হাসি হাসি মুখে বলে,
-” আপনি খুব ভালো ভাইয়া। উনিও যদি আপনার মতো আমাকে বুঝতো”।
চলবে?