#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#সূচনা_পর্ব
#জেসমিন_জেমি
দেখো পরী আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় আমি রিয়াশাকে ভালোবাসি তোমাকে নয়।
পরী মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। রিজভী মেকি হেসে বললো,
রিয়াশা কে দেখেছো? কত সুন্দর, কতো স্মার্ট, আধুনিক একটি মেয়ে আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করতে চাই।
আচ্ছা তুমি আমায় দেখো। তুমিই বলো তোমার সাথে কি আমার যায়? আমার মতো একজন মানুষের সাথে রিয়াশার মতো ওমন সুন্দরী, স্মার্ট কোনো মেয়েই যায় তোমার মতো মেয়ে না প্লিজ তুমি বোঝার চেষ্টা করো।
মেঝের দিকে তাকিয়ে রিজভীর বলা সব কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো পরী। এবার টলমল চোখে রিজভীর দিকে তাকায় রিজভীর মুখের দিকে তাকিয়ে মেকি হেঁসে পরী চোখের জল মুছে বলে উঠে।
– হাহ সত্যিই তো তোমার সাথে কি আমার যায়? তোমার সাথে আমার মতো এমন কালো, আনস্মার্ট মেয়েকে কি করে মানাবে? তোমার সাথে তো রিয়াশাকেই মানায় কতো মিষ্টি, ফর্সা, সুন্দরী একটি মেয়ে। আমাদের বিয়েটা হচ্ছে না তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।
রিজভীর হেসে বললো,
থ্যাঙ্ক ইউ , থ্যাঙ্ক ইউ পরী।
পরী হেসে বললো,
ভালো থেকো।
পরী দ্রুত পা চালিয়ে ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে আসলো।
___
মাহমুদ শিকদার ও আয়রা বেগমের একমাত্র মেয়ে অদিতি অরিন। ডাকনাম পরী। বাবা ভালোবেসে মেয়েকে পরী বলে ডাকে। পরী এবার অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী।
আর পরী এতোটা সময় যার সাথে কথা বলছিলো তারই ফুফাতো ভাই আরিয়ান রিজভী। পরিবারের সকলের মতামতেই ১ মাস আগে তাদের বিয়ে ঠিক হয় রিজভীও পরীকে বিয়ে করার জন্য রাজি ছিলো। ৪ দিন পরেই হলুদ অনুষ্ঠান অথচ আজ রিজভী কি না তাকে জানাচ্ছে সে বিয়ে করতে পারবে না। কষ্ট হচ্ছে পরীর এ একমাসে রিজভীকে নিজের মনে একটু একটু করে স্থান দিয়েছে। নিজের ভাবতে শুরু করেছে। আজ সেই মানুষটা বলছে তাকে চায় না। সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
—————————
একদৃষ্টিতে গেটের দিকে তাকিয়ে মানুষটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে পরী চোখ দুটো ছলছল করে উঠছে। বার বার চোখের ঘন পাপড়ি গুলো ঝাপটে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে পরী কিন্তু চোখজোড়া কি আর তার কথা শুনে? সব বাধঁ ভেঙে টুপ করে পরীর মন আকাশে বৃষ্টি নেমে এলো। পরীর কষ্ট প্রকৃতি বুঝি ভাগ করে নিলো পরীর সাথে সাথে সেও কেঁদে উঠলো। বৃষ্টির মাধ্যমে ঝরে পরছে তার কান্না গুলো।
পরী বিরবির করে বললো,
আচ্ছা, কালো মেয়েদের কি ভালোবাসতে নেই? তাদের কি কেউ ভালোবাসেনা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
হাহ পরী সবার কথা আর কি বলছিস। নিজের মায়ের কাছে যখন মেয়ের থেকে মেয়ের গায়ের রং ম্যাটার করে বাকি সবার কি দোষ?
বলেই চোখ মুছে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
রুমে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বের হয়ে আসে।
অনেক কাজ পরে আছে তার কিচেনে। কিচেনের দিকে পা বাড়াতেই চোখ পড়ে তার বিছানার উপর রাখা গিফ্টের প্যাকেট দিয়ে মোড়ানো বেশ বড়সর একটি বক্স ,পরী ভ্রু কুচকে আঁশেপাঁশে তাকায় নাহ রুমে তো কেউ নেই। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বিছানার দিকে বক্সের কাছে যেতেই চোখে পড়ে বক্সের গায়ে ছোট করে লেখা,
পরী।
নিজের নাম দেখে পরী কিছুটা অবাক হয়ে তাকায় বক্সটার দিকে, বেশ কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখলো। যেহেতু পরির নাম লেখা তাই কিছু না ভেবে বক্সটা খুলে ফেললো। বক্সটা খুলতেই আরেক দফা অবাক হয় পরী।
কয়েক রঙের শাড়ী, শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করা রেশমী চুড়ী, বেলি ফুলের মালা,, আর কিছু অর্নামেন্টস। পরী চোখ দুটো বের হওয়ার উপক্রম। চোখ বড় বড় করে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। শাড়ীগুলো পাঁশে রাখা একটি নীল রঙা চিরকুট । পরী চিরকুটটা হাতে তুলে নিলো। চিরকুটে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা ,,,,,,,
“শ্যামাবতী তোমার জন্য।”
পরী ভাবনায় পরে যায় তাকে কে এইসব পাঠাবে? পরীর ভাবনায় ছেদ পড়ে নিচ থেকে আয়রা বেগমের ডাকে,
বক্সটা আলমাড়ীতে রেখে দৌড়ে নিচে চলে যায়।
____
কিচেনে টুকটাক কাজ করছিলেন আয়রা বেগম পরীকে দেখেই রাগীস্বরে বলে উঠলেন,,,
কি ব্যাপার কতগুলো কাজ পড়ে আছে কিচেনে তুই রুমে গিয়ে বসে আছিস ? হাতে হাতে সাহায্য তো করতে পারিস।
পরী মিউয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠে,,
আমি করে নিচ্ছি।
তখনি কিচেনে ঢুকলো জুলেখা বেগম। আয়রা বেগম বড় ভাবিকে দেখে বললো,
ভাবি কিছু লাগবে?
জুলেখা বেগম বললো,
হ্যাঁ ছেলেটা সেই কখন কফি চেয়েছিলো।
আয়রা বেগম পরীকে ধমকে বললো,
পরী এভাবে দাঁড়িয়ে রইলি কেনো?
যা মেহতাবকে কফি দিয়ে আয়।
জুলেকা বেগম বললো,
আরে থাক না আয়রা মেয়েটা সারদিন অনেক খেটেছে আমি নিয়ে যাচ্ছি। সারাদিন কম কাজ করেনি আয়রা মেয়েটা একটু রেস্ট নিক।
পরী তুই রুমে যা মা।
আয়রা বেগম গরম চোখে মেয়েকে ইশারা করে বললো,
যাচ্ছিস না কেনো?
পরী তড়িঘড়ি করে জুলেখা বেগমকে জড়িয়ে হেসে বললো,
আহ বড় মা তুমি জানো না পরী কখনো ক্লান্ত হয় না? পরী এখনো সারারাত কাজ করতে পারবে। আমি একমিনিটে কফি বানিয়ে দুই মিনিটে দিয়ে আসবো। তুমি যাও তো।
জুলেখা বেগম হেসে উঠে বললো,
আচ্ছা তুই একমিনিটে কফি করে দুইমিনিটে মাহতাবের রুমে দিয়ে আসবি।
পরী হেসে বললো,
ওকে ওকে।
আয়রা বেগমের হাতের কাজ গুলো শেষ হতেই মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললো,
মাহতাবকে কফি দিয়ে খেয়ে নিস।
পরী মাথা নেড়ে কফি বানাতে লাগলো।
আয়র বেগম আর কিছু না বলে রুমের দিকে চলে গেলো। এই মূহুর্তে তার খুব টায়ার্ড লাগছে তার। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। কতদিন পর বাড়ীর বড় ছেলে বাড়ীতে ফিরেছে। বাড়ীর মেয়ের বিয়েতে কানাডা থেকে শিকদার বাড়ীর বড় ছেলে মেহতাব শিকদার ফিরেছ। শিকদার মহল খুশিতে মেতে উঠেছে। শিকদার বাড়ীর তিন ছেলে। বড় ছেলে মাহদুল শিকদার, মেঝো ছেলে মাহমুদ শিকদার আর ছোট ছেলে মিরাজ শিকদার। শিকদার বাড়ীর দু মেয়ে। বড় মেয়ে সাদিয়া শিকদার আর ছোট মেয়ে সাইদা শিকদার। সাদিয়া শিকদারের দুই ছেলে। সাইদা শিকদারের এক মেয়ে এক ছেলে। ছেলে রিজভী চৌধুরী, মেয়ে রেজবা চৌধুরী৷ শিকদার বাড়ীর বড় মেয়ের পরীর বিয়ে আর বড় ছেলে মেহতাব শিকদার এর বাড়ীতে ফেরায় সবাই আজ একসাথে হয়েছে। শিকদার মহল আজ আনন্দে পরিপূর্ণ। তবে এই আনন্দ কতক্ষণ থাকবে? সবাই যখন জানবে বিয়েটা হচ্ছে না তখন কি হবে?
চলবে,,,,