শ্যামাবতী প্রেয়সী পর্ব-০২

0
19

#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্ব ২
#জেসমিন_জেমি

পরী কফি হাতে মেহতাবের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজায় টোকা দিয়ে ধীরকন্ঠে ডাকলো,
মেহতাব ভাই।

ভিতর থেকে জবাব এলো,
হুম। দরজা খোলাই আছে।

পরী দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে রুমে উঁকি দিলো।মেহতাব বেডে আধ শোয়া হয়ে মোবাইলে কিছু একটা করছে। পরী পুরো রুমে চোখ বুলালো। মেহতাব বললো,
আয়।

পরী ধীরপায়ে রুমে ঢুকলো। মেহতাব মোবাইল রেখে উঠে এসে পরীর হাত থেকে কফি নিয়ে নিলো। পরীর হাতে দুটো কফি দেখে বললো,
দুটো কেনো?

পরী ধীরকন্ঠে বললো,
বিদেশী বিলাই খাবে না?

মেহতাব ভ্রু কুঁচকালো। ভ্রু নাড়িয়ে বললো,
বিদেশী বিলাই?

পরী ফিক করে হেসে উঠলো। মেহতাব পরীর কপালে ধীরে টোকা দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,
ভীষন দুষ্টু হয়েছিস দেখছি।

পরী চোখ মুখ কুঁচকে কপালে হাত রাখলো। রুমের চারপাঁশে চোখ বুলিয়ে বললো,
তোমার সেই বিদেশী বিলাই কোথায়?

মেহতাব চোখ পাকিয়ে বললো,
পরী মার খাবি?

পরী দাঁত কেলিয়ে বললো,
মেহতাব ভাই মার কেনো খাবো?
লোকটাকে দেখলেই বুঝা যায় সে একটা বিদেশী বিলাই ।

বলেই শব্দ করে হাসলো পরী। মেহতাব কপাল কুঁচকে মেয়েটাকে দেখলো। ভীষন দুষ্টু এই মেয়েটা।

মেহতাব কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো,
এহতিশাম এই কফি খায় না।

পরী বিরবির করে আওড়ালো,
এহতিশাম, এহতিশাম। কি সব নাম বাবা গো বাবা । মানুষের নাম এমন অদ্ভুত হয়? কত কষ্ট করে বলতে হয়। এর থেকে কুদ্দুস, জামাল, কামাল এই নাম গুলোই ভালো। কত সহজেই বলা যায়।

মেহতাব পরীকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
পরী।

পরী হকচকিয়ে উঠলো থতমত গলায় বললো,
হ্যাঁ ভাইয়া৷

মেহতাব – ওটা নিয়ে যা।

তখনি বেলকনি থেকে রুমে আসলো এহতিশাম আয়াশ। এহতিশাম মেহতাব এর বন্ধু। মেহতাবের সাথে আজই বাংলাদেশে এসেছে। এহতিশাম আয়াশের জন্মস্থান কানাডা। বাবা মা বাংলাদেশী হলেও এহতিশামের জন্ম হয়েছে কানাডায়। বাবা মা বাঙালি বলেই এহতিশাম নামে বাঙালি। ছোট থেকে কানাডায় বেড়ে উঠা, সেখানে পড়াশোনা, এবং সেখানেই কর্মক্ষেত্র । এহতিশাম ভীষণ লম্বা, ফরেনারদের মতো ফর্সা। এহতিশামকে দেখলেই যে কেউ বলে দিবে এহতিশাম এদেশের নয়। পরী দুপুরে যখন এই লোকটাকে প্রথমে দেখলো তখনই নাম রেখেছে বিদেশী বিলাই। একটা মানুষ এতো ফর্সা কেনো হবে? কই পরী তো এতো ফর্সা না।

এহতিশাম রুমে আসলে পরী সেদিকে তাকালো ভীষণ ফর্সা ত্বক, লম্বা চওড়া পুরুষালী এক মানব দেহ। শক্ত চোয়ালদ্বরে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। যার পড়নে ব্লু শার্ট, সাদা জিন্স। সিল্কি চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে লোকটা বোধহয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। বৃষ্টির ছিট ফোঁটায় সামনের চুল গুলো কপালে লেপ্টানো। এহতিশাম রুমে ঢুকে পরীকে দেখে ওয়াশরুমের দিকে গেলো পরপর তোয়ালে হাতে মাথা মুছে ফিরলো। এহতিশাম পরীর সামনে আসতেই পরী কফি এগিয়ে দিয়ে বললো,
আপনার কফি।

মেহতাব শব্দ করে হেঁসে উঠলো। এহতিশাম কপাল কুঁচকে কফির দিকে তাকিয়ে রইলো।

পরী পূনরায় মাথা নাড়িয়ে বললো,
কি হলো কফিটা নিন।
কষ্ট করে বানিয়েছি হুহ খেতেই হবে।

এহতিশাম এ পর্যায়ে কফি হাতে নিলো। থমথমে কন্ঠে বললো,
থেঙ্কস।

মেহতাব বললো,
এহতিশাম তুই তো এই কফি খাস না।

এহতিশাম পরীর দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক বসিয়ে নাক মুখ কুঁচকে ফেললো। ফর্সা মুখ বিবর্ণ হয়ে উঠলো। সে এসব দুধ চিনির শরবত কখনো খায় না। এক চুমুকের বেশি মুখে নিতে পারলো না। পরী লোকটার মুখ কুঁচকানো দেখে ফিক করে হেঁসে উঠলো। এহতিশাম চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
ভীষণ বাজে ।

পরী কোমরে হাত গুজে ফুঁসে উঠে বললো,
কি? কি বললেন? বাজে?
আমার বানানো কফি বাজে?

এহতিশামের হাত থেকে কফির মগটা একটানে ছিনিয়ে নিয়ে বললো,

দিন বলছি। আপনার মতো সাদা বিলাই কি করে বুঝবে কোনটা ভালো আর কোনটা বাজে হুহ।

এহতিশাম ভ্রু কুঁচকালো। এই মেয়ে এতো ঝগড়াটে কেনো? নিজেই দিচ্ছে আবার নিজেই ছিনিয়ে নিচ্ছে। কি বলছে তাকে সাদা বিলাই?
এহতিশাম থমথমে কন্ঠে বললো,

হোয়াট রাবিশ! সাদা বিলাই?
হু ইজ সাদা বিলাই?

পরী চটপট জবাব দিলো,
আপনি।

মেহতাব বেডে বসে শব্দ করে হাসলো। এহতিশাম রাগী চোখে মেহতাবের দিকে তাকাতেই মেহতাবের হাসি উবে গেলো। তড়িঘড়ি করে উঠে এসে পরীকে টেনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এহতিশাম সেদিকে তাকিয়ে ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লো। মেয়েটা তাকে সাদা বিলাই বললো? এহতিশাম আয়াশকে সাদা বিলাই বললো? কত সাহস!

চলবে,,,,,,,

(ভুলক্রুটি মার্জনীয় )