শ্যামাবতী প্রেয়সী পর্ব-২০

0
21

#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্বঃ ২০
#জেসমিন_জেমি

কেটে গেছে কয়েকদিন।
কাল পরী আর এহতিশামের ফ্লাইট। এটা নিয়ে শিকদার বাড়ীর সবার মন খারাপ। হুট করে মেয়েটার বিয়ে হলো। আবার তারা চলেও যাবে। কয়েকমাসের ব্যবধানে বাড়ীর দুটো মেয়ের জীবন পাল্টে গেলো। রিপ্তীর পরিক্ষা শেষ হয়েছে কাল। আমিরা,রিপ্তী নিজের রুমে গল্প করছিলো। আমিরা সেই সকালে এসেছে কিন্তু যার জন্য আসা হলো সেই মহাশয়ের দেখা সে পেলো না এখনো। আমিরা চোখ মুখ কুঁচকে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। সেই মাঝরাতে কল করে ধমকে বলে কিনা এখন এই মুহুর্তে তোমাকে দেখতে চাই এখনি। বের হও।

কত সাহস লোকটার হুটহাট এভাবে অদ্ভুত আবদার করে লোকটা। মেহতাবের মতো একজন মানুষ এমন ছেলে মানুষী ও করতে পারে সে নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতে পারতো না। এমন অদ্ভুত ব্যবহারের কারন আমিরা বেশ বুঝতে পারে। রিপ্তী সেই কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে ইদানীং সে খুবই শান্তিতে আছে। সারাদিন বাড়ীতে মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। আনান নামক মাথা ব্যথাটা সপ্তাহখানেক হলো এ বাড়ীতে আসেনি। আমিরা দরজায় কয়েকবার উঁকি দিয়ে বললো,
থাক আমি পরি আপার সাথে দেখা করে আসি।

রিপ্তী আড়চোখে চাইলো ভ্রু কুঁচকে বললো,
এসেছিস থেকে দেখছি ছটফট করছিস। কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?

আমিরা হাসার চেষ্টা করে ততক্ষণাৎ বললো,
আরে না না। এমনি বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাই।

তখনিই রিপ্তীর ফোন বেজে উঠলো। রিপ্তী স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো আনান কল করেছে। রিপ্তী বড়বড় চোখ করে তাকালো সবে মাত্র লোকটাকে মনে করেছিলো রিপ্তী আর এখনি কল বাব্বাহ। সয়তানের নাম না নিতেই সয়তান হাজির। রিপ্তী ফোন হাতে নিয়ে বললো,
ওকে যা।

আমিরা দ্রুত রুম থেকে বের হলো। মেহতাব তাকে সকাল ৯টায় মেহতাবের সামনে থাকতে বলেছিলো এখন ১০.৪৫।

রিপ্তী রয়েসয়ে কল রিসিভ করতেই অপাঁশ থেকে আনানের কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো,
৫ মিনিট সময় আছে তোর কাছে রেডি হ। প্রয়োজনীয় সব গুছিয়ে নে।

রিপ্তীর মাথার উপর দিয়ে গেলো সব। কি বলছে এই লোক? কিসের সময়? প্রয়োজনীয় সব গুছাবে মানে? রিপ্তী বুঝলো না বললো,
মানে? কি বলছেন?

আনান ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে বললো,
তৈরি হ । প্রয়োজনীয় যা সব কিছু গুছিয়ে নে।

রিপ্তী- কিন্তু কেনো? কোথায় যাবো?

আনান – শশুর বাড়ী।

রিপ্তী – এ্যাঁ

আনান দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো,
সময় ৫ মিনিট এরপর আর সময় পাবি না।
যেভাবে থাকবি ঠিক সেভাবেই আসতে হবে।

রিপ্তি তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো। কোথাও যাবে না সে। এ বাড়ী ছেড়ে কোথাও যাবে না। সে টলমলে চোখে দৌড়ে মায়ের রুমে গেলো।

——–

আমিরা মেহতাবের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বেশ সময় হলো। সে উঁকি ঝুকিও দিলো কয়েকবার কিন্তু রুমে মেহতাবকে দেখলো না।

কি চাই?

আমিরা হকচকিয়ে উঠলো। সে আঁতকে উঠে পিছু ফিরলো। সামনে দু হাত বুকে গুঁজে মেহতাব দাঁড়ানো। আমিরা থতমত খেয়ে বললো,
ইয়ে মানে ভাইয়া আপনি,,,

মেহতাব দু পা এগিয়ে এসে থমথমে কন্ঠে বললো,
আমি তোমার ভাইয়া লাগি??

আমিরা তড়িৎ গতিতে দু দিকে মাথা নাড়লো যার মানে না। মেহতাব ঠোট চেঁপে হাসলো। পরপর থমথমে কন্ঠে বললো,
কি হই?

আমিরা দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় বললো,
কি হোন?

মেহতাব আরো এগিয়ে এলো, সে ভ্রু উচিয়ে বললো,

জানো না?

আমিরা আবারো দুদিকে মাথা নাড়লো। মেহতাব ফের বললো,
তুমি আমার কি হও?

আমিরা ফ্যালফ্যাল চোখ করে তাকিয়ে রইলো। যার মানে সে জানে না। কারন এতো বছর যাবৎ শুনে আসছে সে ভাই হয়। এখন লোকটা যখন বলছে ভাই না তাহলে আমিরা কিভাবে জানবে কি হয়? আমিরা তো জানে ভাই লাগে। আমিরার শরীর কাঁপছে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মেহতাব মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। মেয়েটা তাকে এতো ভয় কেনো পায়? মেহতাব আমিরার কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলো গুঁজে দিলো। আমিরা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মেহতাব শান্তস্বরে বললো,

ভীতুকন্যা।

এতো কাছে একজন সুঠামদেহি পুরুষের উপস্থিতিতে আমিরার পা জোড়া ঠকঠক করে কাঁপছে। মেহতাব না পেরে মেয়েটার থেকে সরে দাড়ালো। আমিরা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মেহতাব সরে যেতেই আমিরা জোড়ে শ্বাস নিলো। মেহতাব দূর থেকেই হেঁসে বললো,
ভয় পেলে তোমাকে সুন্দর লাগে ভীতুকন্যা।

আমিরা গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে রইলো। মেহতাব আমিরার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো, আমিরা মাথা ঘুরে উঠলো। সে কেঁপে উঠলো। মেহতাব সরে গিয়ে বললো,
বুঝে নাও কি হও।

আমিরা আর এখানে দাড়ালো না সে দ্রুত পায়ে নিচে নামলো।

——-

পরী রিপ্তীকে কোলে নিয়ে রিপ্তীর রুমে এসেছে রিপ্ত ঘুমিয়েছে। রুমি বেগম বলেছে ঘুমিয়ে গেলে রিপ্তীর রুমে শুইয়ে দিতে। পরী রুমে ঢুকে দুবার রিপ্তীকে ডাকলো। রিপ্তীর সারা শব্দ না পেয়ে পরী রিপ্তকে বিছনায় শুইয়ে দিলো। দু পাঁশে দুটো কোল বালিশ টেনে দিয়ে ঘুমন্ত রিপ্তর গাল টেনে দিলো। সিলিংফ্যানের সুঁইচ অন করে দিলো। তখনি আনান জোড়ে জোড়ে রেডি হয়েছিস বলতে বলতে রুমে ঢুকলো। পরী হকচকিয়ে উঠলো রিপ্ত কেঁপে উঠলো। পরী রিপ্তর মাথায় হাত রাঁখলো। আনান মোবাইল থেকে চোখ রেখেই বললো,
কথা কানে যাচ্ছে না? কি বলছি শুনছিস না?

পরী দাঁড়িয়ে পড়লো। সে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো। সে চলে যাওয়ার আগে এ বাড়ীতে আর কোনো ঝামেলা চায় না। পরী পা বাড়াতেই আনান এগিয়ে এসে বললো,
কিরে।

কথা শেষ না করে মুখ তুলে তাকাতেই পরীকে দেখে থমকালো। চোখ ঘুরালো পুরো রুমে পরীকে দেখেও যেনো দেখলো না থমথমে মুখ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। পরী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

______

আনান- বিয়ে করেছিস কেনো?

রিপ্তী চোখ মুখ কুঁচকে বললো,

আমি বিয়ে করেছি? আপনি জোড় করে বিয়ে করেছেন। এখন জোড় করে নিয়ে যেতে চাইছেন৷ আমি যাবো না আপনার সাথে কাল পরি আপা চলে যাবে। আমি এ বাড়ী ছেড়ে কোথাও যাবো না।

আনানের চোয়ালদ্বয় শক্ত হলো। সে বললো,
যেতেই হবে এবং এক্ষুনি।

রিপ্তীর কান্না গলায় বললো,
যাবো না।

আনান রিপ্তীর হাত টেনে রুম থেকে বের হলো। রিপ্তীকে একপ্রকার টেনে নামালো। রিপ্তী চেঁচিয়ে বললো,
যাবো না আমি।

পরী ছুটে এলো। বাড়ীতে মেয়েরা ছাড়া কেউ নেই। জুলেখা বেগম বললো,
কি করছো আনান ? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

আয়রা বেগম – এভাবে তুমি ওকে নিয়ে যেতে পারো না। ওর বাবা চাচারা কেউ নেই এখানে। ওদেরকে না বলে এভাবে নিয়ে যেতে পারো না তুমি।

আনান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বললো,
আমার বউ আমি নিয়ে যাচ্ছি কারো কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য না।

জুলেখা বেগম শক্ত গলায় বললো,
অবশ্যই বাধ্য। কারন ও তোমার বউ হওয়ার আগে আমাদের বাড়ীর মেয়ে তাই আমাদের কাছে কৈফিয়ত দিতে তুমি বাধ্য।

আনান- ওকে দিলাম কৈফিয়ত। বউকে তার শশুর বাড়ী নিয়ে যাচ্ছি।

রিপ্তী চেঁচিয়ে বললো,
যাবো না।

রুমি বেগম মেয়েকে আনানের হাত থেকে ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে বললো,
যাবে না ও দেখছো না যেতে চাইছে না।

আনান – যেতেই হবে।

পরী বললো – যদি না যায়?

আনান রিপ্তীর হাত টেনে এক পা বাড়ালো। মেহতাব বাড়ীতে ঢুকলো তখন। বাড়ীর কর্তিরা আনানের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছিলো। মেহতাব তাকাতেই বুঝলো কি হচ্ছে। রুমি বেগম সবটা খুলে বলতেই মেহতাব আনানের কলার চেঁপে ধরলো। আনানের হয়েছে যত জ্বালা এরা ভালো করলেও কলার চেপে ধরে খারাপ করলেও কলার চেপে ধরে। আনান মেহতাবের হাত সরিয়ে দিলো। মেহতাবের কলার চেপে বললো,
বাড়াবাড়ি করিস না। খুব ঝামেলা হবে বলে দিলাম।

রিপ্তী আনানকে টেনে সরাতে চেয়েও পারলো না। বাড়ীর তিন কর্তী এগিয়ে এসে দুজনকে সরাতে চাইলে কিন্তু পারল না। একপর্যায়ে রিপ্তী বলে উঠলো।
আমি যাবো আপনার সাথে প্লিজ থামুন এবার ।

আনান থামলো রুমি বেগম বললো,
এভাবে মেয়েটাকে নিয়ে যেয়ো না৷ ওর বাবা চাচারা বাড়ীতে ফিরুক।

আনান শার্টের কলার ঠিক করতে করতে সোফায় গিয়ে বসলো,বললো,
বড় ভাইজান আছে তো।

চোখ টিপে মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
ভাইজান আছে না?

মেহতাবের চোয়ালদ্বয় শক্ত। আনান রিপ্তীকে বললো,
আবারো ৫ মিনিট।

রিপ্তী এবার দৌড়ে রুমে গেলো। ওর পিছু পিছু পরীও গেলো। শিকদার মহলে নেমে এলো আবারো ও অশান্তি। এক মেয়ে ভোর হতে না হতেই চলে যাবে সুদূর কানাডায় আরেক মেয়েকে কিনা এখনি চলে যেতে হবে। তিনকর্তীর মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠলো৷ জুলেখা বেগম ছেলেকে শান্ত হতে বললো মেহতাব গটাগট পায়ে চলে গেলো।

———-
রিপ্তী পরীকে জড়িয়ে হাওমাউ করে কাঁদছে। পরী সারাটা দিন মনমরা হয়ে বসেছিলো। যখন শুনেছে সে চলে যাবে এই পরিবার ছেড়ে, বাবা মাকে ছেড়ে এই বাংলাদেশ ছেড়ে। পরীর এতো খারাপ লাগছে যে সে এটা বুঝাতে পারবে না। রিপ্তী পরীর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদলো। পরী বললো,
আমায় ক্ষমা করিস রিপী।

রিপ্তী মুখ তোলে তাকালো। পরী বললো,
আমার জন্য তোকে ওই লোকটাকে বিয়ে করতে হয়েছে। শুধু মাত্র আমার জন্য ওই লোকটাকে বিয়ে করেছিস। আমার জন্য তুই তোর জীবনটাকে নষ্ট করেছিস। কেনো করলি এমন? কেনো করলি?

রিপ্তীর কান্নার বেগ বাড়লো। সে পরীকে জড়িয়ে বললো,
কারন আমি চাই তুমি সব সময় ভালো থাকো।

রিপ্তী ফুঁপিয়ে কাঁদলো পরী রিপ্তীর কপালে শব্দ করে চুমু খেলো।

আসলে পৃথিবীতে আপনাকে ঘৃণা করার মানুষ যেমন আছে, তেমনি নিশ্বার্থ ভালোবাসার মানুষও আছে হয়তো তা কমসংখ্যক তবুও আছে।

আনান বিকেল বেলায় রিপ্তীকে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় রিপ্তী পরীর সে কি কান্না। রুমি বেগম ও ডুকরে কেঁদে উঠলো। রিপ্তী পরীকে বলে গেলো সে কাল আসবেই।
——–
পরেরদিন শিকদার বাড়ীতে আত্নীয় স্বজনের আনাগোনা। সাইদা বেগম আর তার ছোট মেয়ে, খাদিজা বেগম আমিরাও এসেছে । পরী আর এহতিশামের ফ্লাইট দুপুরে। মেয়ে আর মেয়ের জামাই চলে যাবে। এহতিশাম মেহতাব ভীষন ব্যস্ত । পরী নিজের ঘরেই ছিলো আয়রা বেগম মেয়ের মাথায় হাত রাখলো। পরী মা কে দেখে কেঁদে উঠলো। আয়রা বেগম টলমলে চোখে পরীকে জড়িয়ে নিলো। মেয়ে এতোদিন কাছে ছিলো অজানা রাগে মেয়েটাকে মে/রে/ছে এখন যখন মেয়েটা চলে যাবে বুকটা হু হু করছে। পরী কান্নাগলায় বললো,
আম্মা আমি যাবো না তোমাদের ছেড়ে।

আয়রা বেগম কিছু বলল না। কি বলবে সে? যেয়ো না? তোমাকে যেতে হবে না? কিন্তু মেয়েকে তো যেতেই হবে বিয়ে হয়েছে। স্বামী যেখানে নিয়ে যাবে সেটাই এখন তার ঘর। আয়রা বেগম মেয়ের কপালে চুঁমু একে দিলো। মাহমুদ শিকদার দরজায় এসে দাড়িয়েছেন কেবল মা মেয়েকে দেখে এগিয়ে গেলো পরী বাবাকে দেখে কাঁদলো। আয়রা বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে সরে গেলো।

অবশেষে ঘনিয়ে এলো বিদায় মুহুর্ত। মেহতাব ব্যস্তহাতে সবগুলো লাগে গাড়ীতে তুলছে। মাহমুদ শিকদার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। বিয়ের এতোদিন পর পরীর মনে হচ্ছে পরীর বিয়ে হয়েছে। এতো গুলো দিন তার কখনো মনে হয়নি তার বিয়ে হয়েছে। এ বাড়ীর মেয়ে থেকে সে এখন মেহমান। সবার চোখ টলমলে। পরী রিপ্তকে কোলে তোলে নিলো রিপ্তও কাঁদছে। বাচ্চাটাও বুঝতে পেরেছে তার পরী আপা চলে যাচ্ছে। আমিরা পরীকে জড়িয়ে কাঁদলো। শিকদার বাড়ীর সামনে রিজভীকে দেখা গেলো। সাইদা বেগম ছেলেকে দেখে কেঁদে উঠলো গিয়ে জড়িয়ে নিলো। এতোগুলো দিন পরে ছেলেকে দেখছে একি হাল ছেলের? এ কেমন অবস্থা? রিজভী এগিয়ে এসে মামার কাছে ক্ষমা চাইলো। সাইদা বেগম হাতজোড় করে বললো,
ভাইজান আমার ছেলেরে মাফ করেন।

মাহদুল শিকদার রিজভীর কাঁধে হাত রাখলো। রিজভীর চোখে টলমলে সাইদা বেগম কান্নাশিক্ত চোখে হাসলো। রিজভী একে একে সবার কাছে ক্ষমা চাইলো। পরীর কাছে আবার ও ক্ষমা চাইলো। এহতিশামের দিকে তাকিয়ে বললো,
ভালো থেকো। খুব সুখী হও।

পরী গেটের বাইরে চোখ রাখলো রিপ্তী এলো না। আনান নামক সয়তান মানুষটা তাকে আসতে দেয়নি। পরী তার চঞ্চল পাখিটাকে দেখতে পেলো না। সবার থেকে বিদায় নিয়ে পরীদের গাড়ী শিকদার মহল ত্যাগ করলো। পরী গ্লাস ভেদ করে শিকদার বাড়ীর দিকে চেয়ে রইলো। এ বাড়ীতে তার সুখের স্মৃতি, দুঃখের স্মৃতি। এ বাড়ীর মানুষগুলো। তার বাবা মা সবাইকে রেখে তার চলে যেতে হচ্ছে। মেয়েদের জীবন কত অদ্ভুত। আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে হুট করে একজনের হাত ধরে ছাড়তে হয় নিজের বাড়ী। শিকদার বাড়ী অদৃশ্য হয়েছে অনেক আগে অথচ পরী এখনো বাইরে তাকানো। এহতিশাম পরীর হাত চেঁপে ধরলো। পরী নিঃশব্দে কাঁদছে।মাঝে মাঝে ফুপিয়ে উঠছে। এহতিশাম পরীকে বুকে টেনে নিলো পরী ছোট পাখিদের মতো আনানের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদলো।
——–

রিপ্তীকে নিয়ে আসা হয়েছিলো হসপিটালে । আনানের দাদি অসুস্থ সে চেয়েছিলো আনানের বউ দেখতে তাই ওকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিলো। রিপ্তী ভীষণ রেগে ছিলো কিন্তু যখন জানলো তাকে হসপিটালে মার্জিয়া বেগমের সাথে দেখা করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তখন রাগটা একটু কমলো। রিপ্তী হসপিটালে যেতেই দেখলো হসপিটালের কড়িডোরে লোকজনের ভীড়। রিপ্তীকে দেখেই সাদিয়া বেগম এগিয়ে এলো। কতগুলো দিন পর দেখছে মেয়েটাকে। আনানের বাবা আর ছেলের এসব অপকর্মের জন্য ও বাড়ীতে যাওয়া হয়নি তার আদর করা হয়নি তার আদরের ভাইজিদের। রিপ্তী ফুফুকে অনেকদিন পর পেয়ে তার কাছে তারই ছেলেকে নিয়ে অভিযোগ করলো। আনান পাশে দাঁড়িয়ে চোখ কুঁচকে সব শুনলো। আনানের দাদু বাড়ীর সবাই এগিয়ে এলো বউ দেখতে আনানের বড় ফুফু বললো,
মাশ আল্লাহ বউ তো মেলা সুন্দর ।

রিপ্তী লজ্জা পেলো। সাদিয়া বেগম হাসলো। আনান চোখ কুঁচকে বললো,
সুন্দর? ফুফু তোমার চোখ কি গেছে?

রিপ্তী চোখ পাকালো। সাদিয়া বেগম ছেলের মাথায় গাট্টা মারলো। সবার দেখা হলে রিপ্তীকে নিয়ে যাওয়া হলো কেবিনে । আনানের দাদি কথা বলতে পারে না। শুধু ডাকলে চোখ মেলে দেখে কে এসেছে। আনান গিয়ে ডাকলো,
এই বুড়ি নাও চোখ ধন্য করো।

রিপ্তী চোখ কুঁচকালো, দাতে দাত পিষে বলো,
কি অসভ্য। এভাবে কে কথা বলে?

আনান – আমি বলি তোর সমস্যা?

রিপ্তী মুখ বাকিয়ে বললো,
অবশ্যই! এমন অভদ্র লোক দুটো দেখেনি।

আনান চোখ টিপে বললো,
দেখবি কিভাবে আনান ওয়ান পিস।

রিপ্তী চোখ কুঁচকে ফেললো। মার্জিয়া বেগম চোখ ইশারায় রিপ্তীকে ডাকলো রিপ্তী গিয়ে মার্জিয়া বেগমের পাঁশে বসলো।

——–

এয়ারপোর্টে গাড়ী থামলো। পরী গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়ালো। পরীর পড়নে কালো বোরকা। এহতিশাম ঘড়ি দেখলো তাদের কাছে সময় বেশি নেই। পরী আঁশেপাঁশে নজর বুলালো। রিপ্তী বলেছিলো বাড়ীতে না এলেও এয়ারপোর্টে দেখা হবে । হলোও তা দূর থেকে ছুটে আসলো রিপ্তী পড়নে সালওয়ার কামিজ। তার পেছনে আনান । রিপ্তীকে দেখে হেসে উঠলো পরী। রিপ্তী জড়িয়ে নিলো পরীকে। বললো,
বলেছিলাম আসবো।

পরী হেঁসে বললো,
হু।

আনানও এগিয়ে এলো। এহতিশাম ঘড়ীতে সময় দেখলো। রিপ্তী এহতিশামকে বললো,
আমার পরি আপাকে সব সময় ভালো রাখবেন। খবরদার যদি কাঁদিয়েছেন।

এহতিশাম হেঁসে উঠলো, বললো,
নিজের প্রাণকে কাঁদানোর সাধ্য কার?

পরী আড়চোখে চাইলো। রিপ্তী খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
বাব্বাহ।

তখনি পাঁশে এসে দাড়ালো আনান, রিপ্তী আনানকে চোখ ইশারায় কিছু বললো। আনান বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে রইলো। রিপ্তী এবার আনানের হাত টেনে বললো,
বলুন বলছি।

আনান চোখ কুঁচকালো। পরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
স্যরি।

পরী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

চলবে,,,,